কেন এলো না গল্পের প্রশ্নের উত্তর দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা
![]() |
কেন এলো না
সুভাষ মুখোপাধ্যায়।
দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা।
কিছু প্রশ্নের উত্তর
উৎস:-যত দূরেই যাই কাব্যগ্রন্থ থেকে পাঠ্য কেন এলো না কবিতাটি সংকৃত হয়েছে এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে।
কেন এলো না কবিতার ভাব বস্তু:- প্রতিদিন ঘটে যাওয়া কোনো আপাত সাধারণ ঘটনাও যে কতটা গভীর ব্যঞ্জনা বহন করে, তারই পরিচয় ‘কেন এল না' কবিতাটি। মানুষের অনেক
স্য প্রত্যাশা থাকে কিন্তু তা পূরণ হয় না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। প্রত্যাশা আর বাস্তবতার মধ্যে এই ব্যবধান অনেক সময়েই আমাদের জীবনকে দাঁড় করিয়ে দেয় ভয়ানক সংকটের সামনে। প্রত্যাশা পূরণের অক্ষমতা অসময়েই কেড়ে নিতে পারে অনেক সবুজ প্রাণকেও। চলমান সভ্যতার এমন ঘটনা প্রায় সময়েই দেখতে পাই আমরা।
পুজোর কেনাকাটা বাকি। মাইনে নিয়ে বাবা ফিরে আসবেন সকাল সকাল। বাবা এলেই খোকা তার সাধ পূরণ করবার সুযোগ পাবে। এমন
প্রত্যাশা খোকার মনকে খুব প্রভাবিত করে। কিন্তু বাবার ফিরতে দেরি হয়। শিশুমন গভীর আলোড়িত হতে থাকে বাবার অনুপস্থিতিতে। ফলে অস্থিরতা বৃদ্ধি পায় শিশুচিত্তের। পাঠে মন বসে না; অক্ষরগুলিকে মনে হয় হিজিবিজি ,আর বড্ড একগুঁয়ে, পড়া এগোয় না। শুধু তাই নয়, স্বামীর নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ি না-ফেরা স্ত্রীর মনকে প্রভাবিত করে। মা-ও তাই ভুল করেন কাজে। মন হয়ে ওঠে এলোমেলো-উতলা। তিনি স্বামীর না-ফেরার প্রশ্নে কোনো জবাব দিতে পারেন না ছেলেকে। নিজের মনকেও সান্ত্বনা দিতে অক্ষম তিনি। অস্থিরতা গ্রাস করে স্ত্রীকেও। অন্য দিনের তুলনায় তাঁর হাতের খুন্তিটা বেশিই নড়ে, বুননে ভুল হয় খুব। অস্থিরতার স্বীকার হন ‘মা’ এবং ‘খোকা” উভয়েই। ঘটে বিপত্তি।
পরিবারের কোনো ব্যক্তির নির্দিষ্ট সময়ে ঘরে ফিরে না-আসা, পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মনে গভীরভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে অধিক- দোলায়িত হয় শিশুচিত্ত। ফলে বিপন্নতা নেমে আসে শিশুর জীবনে। আলোচ্য কবিতার 'খোকা'-র ঘরে না-ফেরা সেই ইঙ্গিতকেই বহন করছে।
প্রার্থনা কবিতার প্রশ্নের উত্তর দেখুন
কেন এলো না কবিতার বিষয়বস্তু:
পদাতিক কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত 'যত দূরেই যাই' কাব্যগ্রন্থের একটি উল্লেখযোগ্য কবিতা হল 'কেন এল না'। চলমান সময়ের বাস্তব চিত্র
এই কবিতার মধ্যে তুলে ধরেছেন কবি। আমাদের প্রত্যাশা আর বাস্তবের মধ্যে তফাত থেকে যায় অনেকক্ষেত্রেই এবং প্রত্যাশা পূরণের তাগিদ বিপর্যস্তও করে তোলে জীবনকে। এমন ঘটনারই সাক্ষ্য বহন করছে আলোচ্যমান কবিতাটি।
একটি শিশু খুশিতে, আনন্দে সময় কাটিয়েছে সারাদিন ধরে। কারণ বাবা কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরে আসবে সকাল সকাল আর তারপরে পুজোর কেনাকাটা সেরে ফেলতে হবে। কিন্তু দিনের আলো নিভে যাবার পরেও বাবার দেখা নেই। শিশুমন অস্থির হয়ে ওঠে। সে বারবার মাকে প্রশ্ন করে “বাবা কেন এল না, মা?” ছেলের প্রশ্নের উত্তর দিতে অক্ষম মা। তিনিও বুঝতে পারেন না তাঁর স্বামীর অনাকাঙ্ক্ষিত দেরির কারণ। তিনি বুঝতে পারেন না—“ব’লে গেল।/সেই মানুষটা এখনও এল না” কেন? অস্থিরতা ধীরে ধীরে গ্রাস করতে থাকে তাঁর মনকেও। তাই কড়ার গায়ে খুন্তিটা বেশিই নড়ে, ফ্যান গালতে গিয়ে পা যায় পুড়ে অথবা বুনতে বসে কেবলই তার ঘর ভুল হয়। এদিকে পড়ায় মন বসে না শিশুটির—ইতিহাসের পাতা খোলা পড়ে থাকে।
ঘড়ির কাটার টিকটিক শব্দটা বেশি করে কানে আসে। পুজোর জামাকাপড় না-কেনা পর্যন্ত অক্ষরগুলিকে যেন হিজিবিজি মনে হয় শিশুটির। অস্থির শিশুটি ব্যাকুলভাবে একসময় বাড়ির বাইরের রাস্তাটায় বেরোয়—–বাবার অপেক্ষায়। রাস্তার মোড়ে ভিড়, একটা কালো গাড়ি দাঁড়িয়ে, ফুটছে বাজি। অতিশয় ব্যাগ্রতায় শিশুমন ধাবিত হয় সেদিকে। রাত গভীর হয়। বারুদের
গন্ধ ভেসে আসে। অলি-গলি ঘুরে মৃত্যুর পাশ কাটিয়ে অনেক রাত্রে বাবা পরে ফিরে এলেও ছেলেটি আর ফিরে আসতে পারে না ঘরে।
শিশুমনে আলোড়িত হয় বাবার নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ি ফিরে না-আসার ঘটনা। ফলে অস্থির হয়ে ওঠে শিশুচিত্ত। তার প্রভাবে যে ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্ট হতে পারে, তারই ইঙ্গিত রয়েছে কবিতার শেষাংশে – “বাবা এল।/ ছেলে এল না।”
কেন এলো না কবিতার নামকরণ:-
‘নামকরণ’ কবিতার বিষয়বস্তুর পরে যাবে সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল নামকরণ। মূলত নামকরণের মাধ্যমেই রচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে আগাম ধারণা লাভ করা যায়। নামকরণ নানাপ্রকারের হতে পারে যেমন—বিষয়প্রধান, চরিত্রপ্রধান, ব্যঞ্জনাধর্মী ইত্যাদি। এবার আলোচনা করে দেখা যাক সাহিত্যিক সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত 'কেন এল না' কবিতার নামকরণ কতখানি সার্থক হয়েছে।
প্রত্যাশা পূরণের অক্ষমতা কেড়ে নিতে পারে সবুজ প্রাণও। বাবা অফিস থেকে ফিরে আসবেন, খোকার মনের সাধ পূরণ হবে। পুজোর কেনাকাটা বাকি। খোকা যাবে বাবার সঙ্গে কেনাকাটা করতে। ফলে এই প্রত্যাশা ছেলের মনকেও প্রভাবিত করে প্রবলভাবে। তাই শিশুমনের গভীরে আলোড়িত হত থাকে বাবার উপস্থিত না-হওয়ার ঘটনাটি। পড়ায় মন বসে না। অক্ষরগুলিকে একগুঁয়ে, হিজিবিজি বলে মনে হয়। বইয়ের পাতা খোলাই থাকে— পড়া এগোয় না। বাবার ফিরে আসার প্রতীক্ষায় ব্যাকুলা মা-কে বারবার প্রশ্ন করে “বাবা কেন এল না, মা?” মা খোকার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন না। তিনিও বুঝতে পারেন না যে স্বামীর আসতে কেন বিলম্ব হচ্ছে। সকাল সকাল ফিরে আসার কথা ছিল তাঁর স্বামীর, কিন্তু তা না-হওয়ায় তিনিও ভাবিত—“ব’লে গেল।/সেই মানুষ এখনও এল না।” অস্থিরতা গ্রাস করে তাঁকেও। তাই কাজে ভুল হতে থাকে তাঁর। অস্থিরচিত্ত খোকা দরজা খুলে বাইরে যায়।
রাস্তার মোড়ে ভিড়, কালো গাড়ি, বাজি ফুটছে—অতি উৎসাহী খোকা বিষয়টা দেখার জন্য এগিয়ে যায়। ক্রমে রাত বাড়তে থাকে। অনেক রাতে মৃত্যুর পাশ কাটিয়ে বাবা ফিরে আসেন কিন্তু ছেলে আর ফিরে আসে না।
সমগ্র কবিতাটি আলোচিত হয়েছে ‘কেন এল না' এই প্রশ্নটিকে কেন্দ্রে রেখে। এই প্রশ্নটি আলোড়িত করেছে কখনও ‘ছেলে’-টির মনকে আবার ি
কখনও ছেলেটির মা-এর মনকে। কিছুতেই শিশুটি এবং তার মা অন্য কাজে মনস্থির করতে পারছেন না। কারণ তাদের আপনজন (শিশুটির বাবা বা শিশুর মা-এর স্বামী) কেন বাড়িতে তখনও ফিরছেন না, কবিতায় অন্তত তিনবার “কেন এল না” শব্দগুচ্ছ ব্যবহৃত হওয়া থেকেই বোঝা যায় “কেন এল না” প্রশ্নটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই শব্দগুচ্ছ শুধু শিশুটি এবং শিশুটির মা-কেই বিব্রত করেনি—বর্তমান সমাজের কাছেও যেন “কেন এল না”
শব্দগুচ্ছ ইঙ্গিতপূর্ণ প্রশ্ন রেখেছে। এভাবেই “কেন এল না” শব্দগুচ্ছ ব্যঞ্জনাময়।হয়ে উঠেছে এবং কবিতার নামকরণটিও সার্থক হয়ে উঠেছে।
প্রশ্ন: “ছেলেটা বই নিয়ে বসল”– ছেলেটির বই নিয়ে বসার ভঙ্গিমাটি লেখো।
উত্তর : সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘কেন এল না' কবিতায় উল্লিখিত ছেলেটির কাব্য এখানে বলা হয়েছে। ছেলেটি বাবার অপেক্ষায় থেকে থেকে বিষাদগ্রস্থ মনে জানালার দিকে মুখ করে বই নিয়ে বসেছিল মাদুরের ওপরে। বইয়ের পাতা খোলা থাকলেও পড়ায় ছিল না তার মন। বাবার প্রতীক্ষায় তার মন ছিল ব্যাকুল, তাই তার দৃষ্টি বই অপেক্ষা জানালার বাইরেই হয়তো বেশি ছিল।
প্রশ্ন: “সামনে ইতিহাসের পাতা খোলা -” – এমন ঘটনা কীসের ইঙ্গিত বহন করছে?
উত্তর : বাবার আসার প্রতীক্ষায় ব্যাকুল ছেলেটি জানালার দিকে মুখ করে পড়তে বসলেও, পড়ায় তার মন ছিল না মোটেই। তাই ইতিহাসের পাতা
খোলাই থেকে যায়। বইয়ের পাতা খোলা অথচ পড়ায় নেই কোনো মন। পড়া এগোয় না। এ থেকেই বোঝা যায় ছেলেটি ছিল আনমনা বা পাঠে অসচেতন। বাবা কেন ফিরে আসছেন না সেই ভাবনা তার মনকেও আচ্ছন্ন করেছে। সেই ইঙ্গিতই কবি দিতে চেয়েছেন প্রশ্নের উক্তিটির মাধ্যমে।
প্রশ্ন: “নড়বে না।”–কে, কেন নড়বে না?
উত্তর : কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত 'কেন এল না' কবিতায় বর্ণিত ছেলেটি ইতিহাস বইয়ের পাতা খুলে রেখেছিল কিন্তু পড়া সামান্যও এগোচ্ছিল না। বইয়ের পাতার হিজিবিজি অক্ষরগুলি নড়ছিল না। হিজিবিজি অক্ষরগুলি না নড়ার কারণ হচ্ছে পুজোর জামা কেনা হয়নি। যতক্ষণ পর্যন্ত খোকার পুজোর জামা কেনা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত হিজিবিজি অক্ষরগুলি স্থান থেকে নড়বে না।
প্রশ্ন: “কেবলি ঘর ভুল করছে।”—এমন হওয়ার কারণ কী?
উত্তর: সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের 'কেন এল না' কবিতায় স্বামী বলে গিয়েছিলেন মাইনে নিয়ে সকাল সকাল বাড়ি ফিরে আসবেন। সন্ধে গড়িয়ে রাত নেমে এলেও স্বামী বাড়ি ফেরেননি। এমন অবস্থায় বুনতে বসেছেন স্ত্রী। তাঁর মন তখন বোনার দিকে ছিল না। অস্থির মন স্বামীর অপেক্ষায় ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল। হয়তো নানা আশঙ্কা তাঁর মনকে গ্রাস করেছিল। এই কারণেই বুনতে বসলেও বারবারই ঘর ভুল হচ্ছিল খোকার মায়ের তথা স্বামী ব্যাকুলা স্ত্রীর।
প্রশ্ন: “মা, আমি খোকা।”— বক্তা কখন এমন উক্তি করেছে?
উত্তর : সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত 'কেন এল না' কবিতায় বর্ণিত ছেলেটি প্রশ্নোদৃত উক্তিটির বক্তা। বাবার অপেক্ষায় প্রহর গুনতে গুনতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল ছেলেটি। একসময় অতি ব্যাকুলতায় দরজার ছিটকিনি খুলে সে বাইরে বেরোতে যায়। তখনই ছিটকিনি খুলতে গিয়ে ‘খুট’ করে শব্দ হলে খোকার মা 'কে?' বলে প্রশ্ন করে। মায়ের প্রশ্নের জবাবে ছেলেটি প্রশ্নোত উক্তিটি করেছে।
প্রশ্ন: “এখন রেডিওর খবর বলছে।”- উক্তিটির প্রসঙ্গা নির্দেশ করো।
উত্তর : প্রশ্নোকৃত উক্তিটি কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘কেন এল না' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। ছেলেটির বাবা সন্ধে গড়িয়ে গেলেও বাড়ি ফেরেননি। ছেলেটির মা-এর মনেও স্বামীর বাড়ি ফিরতে বিলম্বের কারণে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। ধীরে ধীরে সময় এগিয়ে যেতে থাকে। মানবজীবনে সমস্যা দেখা দিলেও সময় তার নিজের নিয়মেই এগিয়ে যায়। এই প্রসঙ্গেই কবি উক্তিটি করেছেন।
প্রশ্ন: “একটু এগিয়ে দেখবে ব'লে”– কে, কী দেখার আকাঙ্ক্ষা করেছিল ?
উত্তর : একটু এগিয়ে দেখতে চেয়েছিল সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘কেন এল না' কবিতায় বর্ণিত ছেলেটি। সারাদিন সে আনন্দে কাটিয়েছে বাবা অফস থেকে সকাল সকাল ফিরে এসে পুজোর কেনাকাটা করতে বেরোবেন বলে। কিন্তু দিন শেষ হয়ে অন্ধকার নামলেও বাবাকে ফিরতে না-দেখে ব্যাকুল হয়ে পড়ে ছেলেটি। তখন বাবা আসছে কিনা তা দেখার আকাঙ্ক্ষাতেই ছেলেটি
এগিয়ে গিয়েছিল।
প্রশ্ন: “ছেলেটা দেখে আসতে গেল।”—ছেলেটা কী দেখতে গিয়েছিল।
উত্তর : কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত 'কেন এল না' কবিতায় উল্লিখিত ছেলেটির কথা এখানে বলা হয়েছে। বাবার প্রতীক্ষায় দিন কাটানো ছেলেটি রাত নেমে এলে দরজার ছিটকিনি খুলে বাইরে এসে দাঁড়ায়। রাস্তায় গিয়ে দেখল রাস্তার মোড়ে ভিড়, একটা কালো গাড়ি দাঁড়িয়ে, খুব বাজি ফাটছে। ছেলেটি ভাবল তখন কীসের পুজো হতে পারে। প্রকৃত ঘটনাটা কী?—তা দেখতে গিয়েছিল ছেলেটি।
প্রশ্ন: ভিড়', 'কালো গাড়ি, ‘বাজি ফুটছে’–এগুলি কীসের ইঙ্গিত?
উত্তর : কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় ‘কেন এল না' কবিতায় প্রশ্নে উল্লিখিত শব্দগুলি ব্যবহার করেছেন। কোনো ঘটনা ঘটলে, সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোথাও ভিড় জমে ওঠে। ‘কালো গাড়ি’ সাধারণত পুলিশের গাড়িকে ইঙ্গিত
করা হয়। ‘বাজি ফুটা' (ফাটা) আনন্দের অনুষ্ঠানেও হয় তবে এখানে সামাজিক কিছু অনাচারের ইঙ্গিতই বহন করছে। অর্থাৎ ভয়ংকর কোনো অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতির ইঙ্গিত বহন করছে উদ্ধৃত শব্দগুলি।
প্রশ্ন:- কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নামোল্লেখ করে 'কেন এল না' কবিতাটি কোন্ কাব্যের অন্তর্গত লেখো।
উত্তর : কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম হল 'পদাতিক'।
এটি প্রকাশিত হয় ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে।
‘কেন এল না' কবিতাটি ‘যত দূরেই যাই' (১৯৬২) কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
প্রশ্ন: “সারাটা দিন ছেলেটা নেচে নেচে বেড়িয়েছে”–উদ্ধৃতাংশের উৎস উল্লেখ করে ছেলেটির পরিচয় দাও।
উত্তর : প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটির উৎস পদাতিক কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত "যত দূরেই যাই” কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত 'কেন এল না' কবিতাটি।
আলোচ্য অংশে ‘ছেলেটা' বলতে কবিতায় উল্লিখিত ‘খোকা’তথা ছেলেটির কথা বলা হয়েছে, যে বাবার বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় ব্যাকুল হয়ে উঠেছিল।
প্রশ্ন: “বলে গেল”–কে, কী বলে গেল?
উত্তর : কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত 'কেন এল না' কবিতায় উল্লিখিত ‘খোকা” তথা ছেলেটির বাবা বলে গিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে মাইনে নিয়ে সকাল সকাল বাড়ি ফিরে আসবেন এবং পুজোর কেনাকাটা এইবেলা সেরে নেবেন।
প্রশ্ন: “এইবেলা সেরে ফেলতে হবে।”—উক্তিটির প্রসঙ্গ নির্দেশ করো।
উত্তর : প্রশ্নোদ্ভূত উক্তিটি নেওয়া হয়েছে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘কেন এল না” কবিতা থেকে। কবিতায় বর্ণিত ‘ছেলেটি’-র বাবা বাড়িতে বলে গিয়েছিলেন মাইনে নিয়ে সকাল সকাল' ফিরে আসবেন। কারণ পুজোর কেনাকাটা বাকি রয়ে গেছে। খোকাও সারাদিন নেচে নেচে বেরিয়েছে এই ভেবে যে, বাবা বাড়িতে ফিরলেই পুজোর কেনাকাটায় বেরোতে পারবে। প্রশ্নের উক্তিটি এই প্রসঙ্গেই করেছেন কবি।
প্রশ্ন: “খুন্তিটা আজ একটু বেশি রকম নড়ছে।”—এমন কেন হচ্ছে?
উত্তর : সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘কেন এল না' কবিতায় বর্ণিত খোকার মায়ের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেছে। তাঁর স্বামী সকাল সকাল অর্থাৎ তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বাড়ি ফিরবেন বলে গিয়েছিলেন। সন্ধে গড়িয়ে রাত নামলেও তিনি
বাড়ি ফিরলেন না। ফলে খোকার মায়ের মানসিক অস্থিরতা ক্রমে বৃদ্ধি পেতেই থাকে। তারই প্রভাব পড়ে রান্নার কাজেও। সেই অস্থিরতার কারণেই প্রশ্নোকৃত ঘটনাটি ঘটেছে।
প্রশ্ন: “পা-টা পুড়ে গেল।”-কার, কেন পা পুড়ে গিয়েছিল?
উত্তর : পা পুড়েছিল সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের 'কেন এল না' কবিতায় বর্ণিত ছেলেটির মা-এর। স্বামী মাইনে নিয়ে সকাল সকাল বাড়ি ফিরে আসবেন বলে গিয়েছিলেন। অথচ সন্ধে গড়িয়ে রাত এগিয়ে আসছে, তিনি এখনও ফিরে আসছেন না। এমন অবস্থায় খোকার মায়ের মনের অস্থিরতা ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে। ছেলের প্রশ্নের উত্তর তিনি দিতে পারছেন না। মানসিকভাবে তিনি অশান্ত হয়ে ওঠেন। এই অবস্থায় ফ্যান গালতে গিয়ে অসচেতনতার কারণেই ফ্যান পড়ে তাঁর পা-টা পুড়ে যায়।
প্রশ্ন: “কিসের পুজো আজ?”—কার মনে কেন এই প্রশ্ন জেগেছিল?
উত্তর : কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘কেন এল না’ কবিতায় খোকার মনে উদ্ধৃতাংশে আলোচিত প্রশ্ন জেগেছিল। বাবা ফিরছেন না দেখে ব্যাকুল খোকা বাড়ির বাইরে পা বাড়াতে গিয়ে দেখে রাস্তার মোড়ে ভিড়, একটা কালো গাড়ি দাঁড়িয়ে, বাজি ফুটছে খুব। খোকা ভাবে পুজো বা অনুষ্ঠান হলেই ভিড়, লোকজন, বাজি ফাটে কিন্তু এইসময় তেমন কিছু আছে বলে তা নেই। তাই বিস্মিত খোকার মনে উক্ত প্রশ্নটি জেগেছিল।
প্রশ্ন: “বারুদের গন্ধে ভরা রাস্তা” বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর : প্রশ্নের উদ্ধৃতাংশটি কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘কেন এল না কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। বেতন নিয়ে সকাল সকাল বাড়িতে ফিরে আসবেন বললেও খোকার বাবা পরিবারের সকলের মনকে অস্থির তুলে যখন বাড়ি ফিরছেন তখন অনেক রাত। সমস্ত রাস্তাটায় উপছে পড়ছে বারুদের গন্ধ। কোনো অসামাজিক ঘটনার সাক্ষ্য বহন করছে এই বারুদের গন্ধ। সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কথা বোঝাতেই কবি প্রশ্নের
শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করেছেন।
প্রশ্ন: “বাবা এল।”–বাবা কীভাবে এল?
উত্তর : পদাতিক কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের 'কেন এল না' কবিতায় আমরা দেখি বাবার অপেক্ষায় থেকে থেকে মানসিক অস্থিরতায় ছটফট করতে
করতে ছেলেটি রাস্তায় বেরোয়। ধীরে ধীরে সময় গড়িয়ে যায়, ক্রমে রাত বৃদ্ধি পায়। অনেক রাতে বারুদের গন্ধে ভরা রাস্তা দিয়ে, অনেক অলিগলি ঘুরে, মৃত্যুর পাশ কাটিয়ে ফিরে আসেন খোকার বাবা।
প্রশ্ন: “ছেলে এল না”—উক্তিটি কীসের ইঙ্গিত বহন করছে?
উত্তর : প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি সাহিত্যিক সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘কেন এল না' নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। সারাদিন বাবার ফিরে আসার প্রত্যাশায় থেকেও বাবাকে বাড়ি ফিরতে না-দেখে ব্যাকুল হয়ে ‘খোকা” রাস্তায় পা বাড়ায়। অনেক রাতে বাবা ফিরলেও ছেলে ফেরে না। ছেলের না-ফেরার জন্য সামাজিক অস্থির পরিবেশই দায়ী। ভয়ংকর কোনো বিপদের ইঙ্গিত দিয়েছেন কবি।
প্রশ্ন: কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কয়েকটি কাব্যগ্রন্থের নাম লিখে, তাঁকে পদাতিক কবি আখ্যা দেওয়ার কারণ লেখো।
উত্তর : কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হল—'পদাতিক' (১৯৪০), ‘অগ্নিকোণ' (১৯৪৮), ‘চিরকূট’ (১৯৫০), 'কুলফুটুক' (১৯৫৭), ‘যত দূরেই যাই’ (১৯৬১), ‘একটু পা চালিয়ে বাই' (১৯৭৯), 'কাল মধুমাস' (১৯৬৬), ‘যারে কাগজের নৌকা'
(১৯৮৯) ইত্যাদি।
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'পদাতিক' প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে কাব্যটি জনসমাজে খুব সমাদর লাভ করে। কাব্যটি বাংলা সাহিত্য সমাজে কবিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে। তাই উক্ত কাব্যের নামানুসারে কবিকে
‘পদাতিক কবি' বলে আখ্যা দেওয়া হয়।
প্রশ্ন: সাহিত্যিক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের দুটি গদ্য রচনার নাম লিখে, তার ভাষারীতির বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর : সাহিত্যিক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের দুটি গদ্য রচনা হল—
(১) 'ঢোল গোবিন্দের আত্মদর্শন',
(২) ‘আমার বাংলা'।
গদ্য রচনা দুটির ভাষারীতির বৈশিষ্ট্য :
১. সাহিত্যিক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের রচনার ভাষা সহজসরল ও নিরলংকৃত।
২. গদ্য, পদ্য উভয় ক্ষেত্রেই তিনি ছোটো ছোটো বাক্য ব্যবহার করেন।
৩. চলিত শব্দের প্রয়োগ দেখা যায় তাঁর রচনায়।
৪. তাঁর রচনায় সংগ্রামী মানুষের জীবনচিত্র প্রতিফলিত হয়।
৫. প্রতিবাদ প্রবণতা ও সমাজবাস্তবতার প্রকাশ ঘটে তাঁর রচনায়।
৬. চলিত শব্দের প্রয়োগ ও সহজসরল বাক্যবিন্যাসের ফলে তাঁর লেখা সুখপাঠ্য ও সকলের গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।
প্রশ্ন: “এখনও/বাবা কেন এল না, মা?”—উদ্ধৃতাংশে ‘এখনও’ শব্দটির প্রয়োগের তাৎপর্য লেখো।
উত্তর : প্রশ্নোক্ত উদ্ধৃতিটি কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘কেন এল না কবিতা থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। কবিতায় উল্লিখিত ছেলেটি বাবার জন্য অপেক্ষা করে আছে অনেকক্ষণ। সারাদিন সে মনের মধ্যে লালন করেছে। একটি আকাঙ্ক্ষা– বাবা ‘মাইনে' নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবেন, তারপর তারা পুজোর কেনাকাটার জন্য বেরোবে। অপেক্ষা করে করে ব্যাকুল ছেলেটি মাককে উল্লিখিত প্রশ্নটি করে। ‘এখন’ হল ঠিক ‘এই মুহূর্ত' বা একেবারে বর্তমান। আর ‘এখনও’ কথাটির মধ্যে লুকিয়ে থাকে সময়ের এক চলমনতা, যা
অতীতে শুরু হয়ে বর্তমানেও ঘটে চলেছে। বাবার জন্য ছেলেটির অপেক্ষা অনেকক্ষণের, যার শুরু দিনের শেষেই। কিন্তু অন্ধকার নামলেও অপেক্ষার অবসান হয়নি। এখানেই ‘এখনও' শব্দটি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
প্রশ্ন: “ব'লে গেল।/সেই মানুষ এখনও এল না।”—উদ্ধৃতাংশে কার, কোন্ মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে?
উত্তর : প্রশ্নোক্ত উদ্ধৃতাংশটি সাহিত্যিক সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘কেন এল না' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। উদ্ধৃতাংশে ছেলেটির মায়ের চিন্তামগ্ন মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে। ছেলেটির বাবা বলে গিয়েছিলেন 'মাইনে' নিয়ে তিনি সকাল সকাল বাড়ি ফিরবেন কারণ পুজোর কেনাকাটা বাকি, এইবেলা তা কিনে নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে, রাস্তার আলোগুলি জ্বলে উঠেছে অনেক আগেই। স্বাভাবিকভাবেই খোকার বাবার ফিরতে এত দেরি হওয়ার কথা নয়। ফলে খোকার মায়ের মনে স্বামীর জন্য চিন্তার ছাপ পড়ে। বিশেষ করে তার স্বামী বলে গেছেন দ্রুত ফিরবেন। ঘরের মানুষ বাইরে থেকে যতক্ষণ ঘরে ফেরেন না ততক্ষণ প্রিয়জনের মনে আশঙ্কা ঘোরাফেরা করতে থাকে। প্রশ্নোক্ত অংশে খোকার মায়ের মনের সেই চিন্তাযুক্ত অস্থির
মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে।
প্রশ্ন : “ঘড়িতে টিকটিক শব্দ।/কলে জল পড়ছে।”—উদ্ধৃতাংশের প্রাসঙ্গিকতা লেখো।
উত্তর : প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি সাহিত্যিক সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘কেন এল না' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। কবিতাটি আধুনিক শহুরে জীবনের যেন এক জীবন্ত দলিল। মানুষের প্রত্যাশা এবং তা অপূরণের হতাশাময় দিনলিপি কবিতাটি। কবিতায় বর্ণিত ছেলেটি এবং তার মা—দুজনেই অপেক্ষা করে আছে ব্যাকুলভাবে, কখন তাদের প্রিয়জন বাড়ি ফিরে আসবেন। দিন গড়িয়ে সন্ধে, সন্ধে গড়িয়ে রাত নেমে আসে প্রকৃতির বুকে। অস্থিরতার অদৃশ্য পাথর চেপে বসতে থাকে খোকা আর তার মায়ের মনের ওপর। সময়ের কালমানতা থমকে থাকে না, কার জন্য তার অপেক্ষা নেই। সে এগিয়ে চলে আপন ছন্দে। ঘড়ির টিকটিক শব্দ বা কলের জল পড়া—সময়ের সেই প্রবহমানতাকেই নির্দেশ করছে। অর্থাৎ ব্যক্তিজীবনে যাই ঘটুক না কেন সময়ের প্রবহমানতায় তার কোনো প্রভাব ফেলে না। এই প্রসঙ্গেই কবি উদ্ধৃতাংশের প্রয়োগ ঘটিয়েছেন।
প্রশ্ন : “হিজিবিজি অক্ষরগুলো একগুঁয়ে/অবাধ্য—”—উৎস সহ উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য আলোচনা করো।
উত্তর : প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটির উৎস হল কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘কেন এল না' কবিতাটি।
আলোচ্য অংশের মাধ্যমে এক অস্থিরতাময় পরিস্থিতিকে তুলে ধরেছেন কবি। কবিতায় বর্ণিত 'খোকা' সারাদিন আনন্দে কাটিয়েছে এই ভেবে যে, তার বাবা মাইনে নিয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরবেন এবং পুজোর কেনাকাটা সেরে' ফেলার জন্য তৎপর হবেন। কিন্তু সারাদিন কেটে গিয়ে সন্ধ্যা নামলেও মা খোকার বাবা বাড়ি ফেরেনি। ব্যাকুলচিত্ত খোকা শেষপর্যন্ত বই নিয়ে বসে।
কিন্তু পাতায় তো তার মন বসেনি। ইতিহাসের পাতা খোলাই পড়ে থাকে। একটি অক্ষরও মন থেকে পড়ে না ছেলেটি, তার মন পড়ে থাকে বাবার ফেরার পথের দিকে। বাপের আদরে বিগড়ে যাওয়া ছেলে যেমন একগুঁয়ে হয়ে উঠে রীতিনীতিকে তোয়াক্কা না-করে অবাধ্য হয়ে থাকে, আজ ছেলেটির সাথে বইয়ে লেখা অক্ষরগুলিও সেইরূপ বিরুদ্ধতা করছে যেন। অক্ষরগুলি
চা যেন এলোমেলোভাবে বিন্যস্ত হয়ে আছে। অক্ষর পুস্তকের অক্ষরগুলি আজ চলনহীন- খোকার মনে আশ্রয় পেতে অসমর্থ তারা। উদ্ধৃতাংশের মাধ্যমে কবি এ কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।
প্রশ্ন : “ছেলেটা রাস্তায় পা দিল।” কোন ছেলেটি, কেন রাস্তায় পা দিয়েছিল?
উত্তর : সাহিত্যিক সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত 'কেন এল না' কবিতায় উল্লিখিত ছেলেটার কথা এখানে বলা হয়েছে। কবিতায় বর্ণিত ছেলেটির বাবা বাড়িতে বলে গিয়েছিল যে, 'মাইনে' নিয়ে সকাল সকাল অর্থাৎ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসবেন। কারণ পুজোর কেনাকাটা এইবেলাই সেরে ফেলা দরকার। বাবার এমন উক্তি শিশুমনকে দারুণভাবেই প্রভাবিত করেছিল। সারাদিন এই আনন্দে সে নেচে নেচে বেড়িয়েছে; আর মনের মধ্যে কৌতূহল নিয়ে অপেক্ষা করেছে বাবার ফেরার। কিন্তু শেষে সন্ধে, সন্ধে গড়িয়ে রাত নামে। রাস্তার বৈদ্যুতিক আলোগুলি জ্বলে ওঠে। ছেলেটির বাবা তখনও বাড়ি ফেরেন না। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও বাবাকে দেখতে না-পেয়ে বিচলিত হয় শিশুচিত্ত। বাবা এখনও কেন ফিরল না—এই প্রশ্নই আলোড়িত করতে থাকে তার মাকে। সে ভাবে বাইরেচলে গেলে হয়তো বাবার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটতে পারে। এই ভেবে সে প্রথমে ছিটকিনি খুলে গলির দরজায় দাঁড়ায়। তারপর ব্যাকুল চিত্তে একটু এগিয়ে দেখার ইচ্ছাতেই রাস্তায় পা বাড়ায় ছেলেটি।
প্রশ্ন : “তারপর অনেক রাত্তিরে” – “তারপর' বলতে কোন্ ঘটনা প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে?
উত্তর : প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি সাহিত্যিক সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত এলে না' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
কবিতায় বর্ণিত ছেলেটি সারাদিন আনন্দে কাটিয়েছে এই ভেবে যে, বাবা মাইনে নিয়ে সকাল সকাল বাড়ি ফিরে আসবেন, তারপর পুজে
কেনাকাটায় বেরোবেন। অথচ বিকেল গড়িয়ে সন্ধে হলেও বাবা ফিরছেন দেখে ছেলেটির মন অস্থির হয়ে ওঠে। বারবার সে মাকে প্রশ্ন করে, বা
না-আসার কারণ জানতে চায় কিন্তু কোনো উত্তর পায় না। রাত নেমে আসে। ব্যাকুল ছেলেটি ছিটকিনি খুলে গলির দরজায় এসে দাঁড়ায়। রেডিওতে তখন রাতের খবর চলছে। একটু এগিয়ে দেখার আকাঙ্ক্ষায় ছেলেটি রাস্তায় পা রেখে দেখতে পায় রাস্তার মোরে ভিড়, কালো গাড়ি দাঁড়িয়ে আর খুব বাজি ফাটছে। এসবের কারণ কী, তা বুঝতে পারে না ছেলেটি। তার মনে প্রশ্ন জাগে “কিসের পুজো আজ?” কৌতূহলী মানসিকতায় ছেলেটি তখন সামনে
এগিয়ে দেখে আসতে গেল প্রকৃত ঘটনা। ‘তারপরে’ বলতে উক্ত ঘটনার প্রতিই ইঙ্গিত করেছেন কবি।
প্রশ্ন:- “রাস্তায় আলো জ্বলেছে অনেকক্ষণ”--- প্রসঙ্গসহ উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : প্রসঙ্গ : প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি সাহিত্যিক সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত 'কেন এল না' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোচ্যমান কবিতায় কবি
শিশুমনের প্রত্যাশা আর প্রত্যাশা অপূরণের ফলে হৃদয়-মনে যে মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয় তারই বাস্তবচিত্র অঙ্কন করেছেন। একটি ছেলে অপেক্ষা করে আছে, তার বাবার বাড়িতে ফিরে আসার জন্য এবং তা ছেলেটির মনকে উদবেল করে তুলছে—সেই প্রসঙ্গেই কবি উক্তিটি করেছেন।
তাৎপর্য : আলোচ্য কবিতায় বর্ণিত ছেলেটির বাবা বাড়িতে বলে গিয়েছিলেন যে, 'মাইনে' নিয়ে তিনি 'সকাল সকাল' অর্থাৎ তাড়াতাড়িই বাড়িতে ফিরে আসবেন। কারণ পুজোর কেনাকাটা এইবেলা সেরে ফেলতে হবে। বাবার এমন প্রতিশ্রুতি শিশুমনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। শিশুরা স্বাভাবিকভাবেই পুজোর কেনাকাটার কথা শুনতে বড়ো উৎসাহী হয়ে ওঠে, তাদের মন আলোড়িত হয় নতুন নতুন পোশাকের কথায়। ফলে আলোচ্য কবিতার ছেলেটিরও শিশুমন ব্যাকুল হয়ে ওঠে, কখন তারা পুজোর কেনাকাটায় বেরোবে সেই ভাবনায়। পোশাকের প্রত্যাশায় সারাটা দিন সে আনন্দে সময় কাটিয়েছে। দিন শেষ হয়ে সন্ধ্যা নামে, ক্রমে অন্ধকার ঘন হতে থাকে। বাবা তখনও ফেরেন না বাড়িতে। স্বাভাবিকভাবেই শিশুমন অস্থির ও ব্যাকুল হতে থাকে বাবার অদর্শনে। তার মনে প্রশ্ন তৈরি হয়—বাবা কেন এখনও আসছে না। ধীরে ধীরে রাস্তার আলোগুলো জ্বলে উঠেছে অনেকক্ষণ আগেই। অর্থাৎ সময় গড়িয়ে গেলেও শিশুর প্রত্যাশা অপূর্ণই রয়ে যায়। প্রশ্নোদ্ধৃত অংশের মাধ্যমে কবি এ কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।
প্রশ্ন; “বুনতে ব’সে/কেবলি ঘর ভুল করছে।”—যার এমন হচ্ছে তার মানসিকতার পরিচয় দাও।
উত্তর : উদ্ধৃতাংশটি সাহিত্যিক সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত 'কেন এল না' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। কবিতায় বর্ণিত ছেলেটির মা বুনতে বসে বারবার ঘর ভুল করছিলেন।
কবিতা অনুসরণে দেখা যায় ছেলেটির বাবা বলে গিয়েছিলেন মাইনে নিয়ে তাড়াতাড়ি ফিরে আসবেন অথচ বিকেল গড়িয়ে অন্ধকার নেমে এলেও তিনি ফিরছেন না। এমন অবস্থায় স্বামীর চিন্তায় খোকার মা-র মানসিক অস্থিরতা
ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে। অনেকক্ষণ আগেই রান্না শেষ করে, গা ধোয়াও হয়ে গেছে তাঁর। এখন অবসর সময়ে তাই সেলাই নিয়ে বসেছেন।
কিন্তু মনের মধ্যে ক্রিয়াশীল রয়েছে স্বামীর ফিরতে দেরি হওয়ার ঘটনাটি।
তিনি তো জানেন না—কেন স্বামীর ফিরতে দেরি হচ্ছে। তাই নিজের মনকেও বোঝাতে পারছেন না কিছু, বাবার দেরি সম্পর্কে ছেলের প্রশ্নেরও সদুত্তর দিতে পারছেন না তিনি। মানসিক অস্থিরতা কাজেও প্রভাব ফেলেছে, তাই বুনতে বসে ঘর ভুল হচ্ছে বারবার। এমনই এক চিন্তাকূল, অস্থিরতাময় মানসিকতার শিকারে পরিণত হয়েছেন ছেলেটির মা।
প্রশ্ন: “খুট করে একটা শব্দ—”—শব্দটা কীসের এবং কোন্ ঘটনার ইঙ্গিতবাহী এই শব্দ?
উত্তর : উদ্ধৃতাংশটি কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘কেন এল না' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোচ্যমান কবিতায় বর্ণিত ‘ছেলেটা’ দরজার ছিটকিনি খুলেছিল। অর্থাৎ, খুট করে শব্দটা ছিটকিনি খোলার।
ছেলেটা সারাদিন খুব আনন্দে কাটিয়েছে এই ভেবে যে, তার বাবা ‘মাইনে নিয়ে সকাল সকাল বাড়ি ফিরবেন, তারপর পুজোর কেনাকাটায় বেরোনো হবে। কিন্তু বিকেল গড়িয়ে সন্ধে, আবার সন্ধে গড়িয়ে রাতের অন্ধকার গাঢ় হয়ে আসছে; বাবা ফিরছেন না তবুও। ছেলেটা বই নিয়ে বসেও পড়ায় মন দিতে পারে না। ছেলেটার শিশু-হৃদয় ব্যাকুল হয়ে ওঠে, তাই সে বাড়ির বাইরে গিয়ে দেখতে চায় তার বাবা বাড়ির কাছাকাছি এসে গেছেন কিনা!
উক্ত ঘটনাপ্রবাহের ইঙ্গিতবাহী হয়ে উঠেছে ছিটকিনি খোলার ‘খুট’ শব্দটি।
প্রশ্ন : “গলির দরজায় ছেলেটা দাঁড়িয়ে।”—ছেলেটির দাঁড়িয়ে থাকার প্রেক্ষাপট আলোচনা করো।
উত্তর : প্রশ্নোদ্ভূত উক্তিটি সাহিত্যিক সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘কেন এল না' কবিতা থেকে গৃহীত হয়েছে। কবিতায় বর্ণিত ছেলেটি সারাদিন বেশ আনন্দেই কাটিয়েছে, কারণ তার বাবা বেতন নিয়ে সকাল সকাল বাড়ি ফিরে আসবেন। তারপর সকলের জন্য পুজোর কেনাকাটা করতে বেরোবেন। এইবেলা এটা সেরে ফেলা দরকার। দিনের পর সন্ধ্যা নেমে আসে কিন্তু ছেলেটির বাবা এখনও ঘরে ফেরেননি। ক্রমে অস্থিরতা ঘিরে ধরে ছেলেটির মানসিকতাকে। তখন পড়াতেও তার মন বসে না। জানালার দিকে মুখ করে বই নিয়ে বসে, বইয়ের পাতা খোলাই পড়ে থাকে। অক্ষরগুলিকে হিজিবিজি একগুঁয়ে বলে মনে হয়, কিছুতেই তারা শিশুচিত্তকে প্রভাবিত করতে পারে না। ছেলেটির মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে—বাবা আসতে কেন এত দেরি করছেন এমন ভাবনায়। ভীষণ রকমের মানসিক অস্থিরতা গ্রাস করে ছেলেটাকে। এমনই অস্থির এক প্রেক্ষাপটে ছেলেটি ছিটকিনি খুলে গলির দরজায় দাঁড়ায়।
প্রশ্ন: “কড়ার গায়ে খুন্তিটা/আজ একটু বেশি রকম নড়ছে।” –কথনএমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির মানসিক অবস্থার পরিচয় দাও।
উত্তর : পরিস্থিতির সৃষ্টি : প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি সাহিত্যিক সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘কেন এল না' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। উল্লিখিত ঘটনা ঘটেছে আলোচ্য কবিতায় বর্ণিত ছেলেটির মা-এর ক্ষেত্রে। তাঁর স্বামী বলে গিয়েছিলেন মাইনে নিয়ে সকাল সকাল বাড়ি ফিরবেন। পুজোর কেনাকাটা এইবেলা সেরে ফেলতে হবে। কিন্তু সন্ধে গড়িয়ে অন্ধকার নেমে আসলেও তাঁর স্বামী বাড়ি ফিরছেন না। রাস্তার আলোগুলো জ্বলে উঠেছে অনেকক্ষণ আগে। এই অবস্থায় রান্না করার সময় প্রশ্নোক্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল।
উদ্দিষ্টের মানসিক অবস্থা : ঘরের মানুষ যখন বাইরে কোনো কাজে ব্যাস্ত থাকে, তখন ঘরের লোক চিন্তায় থাকে, নানা প্রকার ভাবনায় অধীর
হয়ে ওঠে ঘরের লোক। আর নির্দিষ্ট সময়ে যদি আপনজন ঘরে ফিরে না আসে, তবে তো অসহ্য মানসিক চাপ তাকে গ্রাস করে। আলোচ্যমান 'কেন এল না' কবিতাটিতে তারই প্রতিফলন ঘটতে দেখা যায়। ছেলেটির বাবা বলে গিয়েছিলেন তাড়াতাড়ি ফিরবেন। অথচ রাতের অন্ধকার নেমে আসলেও তিনি ফিরছেন না—এমন ঘটনা ছেলেটির মায়ের মনকে অস্থির করে তুলেছে। তাঁর মানসিকতায় নানা নেতিবাচক ছাপ ফেলেছে। তাই রাতের রান্নার সময়ও তার প্রভাব পড়েছে ছেলেটির মায়ের কাজে। নিজের মনের অস্থিরতার কারণেই হয়তো অন্য দিনের তুলনায় কড়ার গায়ে খুন্তির নড়াচড়াটা বেশিই হেচ্ছে আসলে তাঁর ব্যাকুলতা, মানসিক চাঞ্চল্য ফুটে উঠেছে প্রশ্নোক্ত উদ্ধৃতাংশের মাধ্যমে।
་་
প্রশ্ন : "ও-বাড়ির পাঁচিলটা থেকে লাফিয়ে নামল/একটা গোঁফঅলা বেড়াল' - কবি কোন্ প্রসঙ্গে উক্তিটি ব্যবহার করেছেন? উক্তিটির তাৎপর্য লেখো।
উত্তর : প্রসঙ্গ : অংশটি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘কেন এল না' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশের মাধ্যমে কবি এ কথাই বোঝাতে চেয়েছেন যে-শিশুমনের প্রত্যাশা এবং তা অপূরণের ফলে যে অস্থির মানসিকতা সৃষ্টি হয়, আলোচ্য কবিতায় তা বর্ণিত হয়েছে। কবিতায় বর্ণিত ছেলেটির বাবা বলে গিয়েছিলেন মাইনে নিয়ে সকাল সকাল ফিরে আসবেন বাড়ি কিন্তু অনেকটা সময় অতিক্রান্ত হলেও তিনি বাড়িতে ফেরেননি। বাবার ফিরতে দেরি হওয়ায় ব্যাকুল হয় শিশুমন। পাঠেও মন বসে না তার। ছেলেটির তৎকালীন অস্থির মানসিকত বা অন্যমনস্কতা প্রসঙ্গই কবি উক্তিটি করেছেন।
তাৎপর্য : সময় কখনও কারও জন্য অপেক্ষা করে থাকে না। সে এগিয়ে চলে ভাবীকালের দিকে। তবে সময় মানুষের হৃদয়ে নানাভাবে প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। মানুষকে ভাবায়, চিন্তাগ্রস্ত করে। ছেলেটির বাবা সময়মতো বাড়িতে ফিরতে পারেননি বলে ছেলেটির মনে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। শুধু সে-ই নয়, তার মায়ের মনেও ব্যাকুলতা সৃষ্টি করে সেই ঘটনা। ছেলেটির সারা মনজুড়ে ছিল আনন্দ– বাবা আসবে, পুজোর কেনাকাটা এইবেলা সেরে নেওয়া হবে। কিন্তু বাবার ফিরতে দেরি হওয়া তাকে উতলা করে তুলেছে।
ইতিহাসের পাতা সামনে খোলা পড়ে, পড়ায় মন নেই খোকার। ঘরি টিকটিক সময় জানিয়ে দিচ্ছে, সময় গড়িয়ে চলেছে। কলে জল পড়া ও বাড়ির পাঁচিলটা থেকে বিড়ালের লাফিয়ে নামা – সবই সময়ের প্রবহমানতাকেই ইঙ্গিত করছে। অর্থাৎ প্রকৃতি তার আপন ছন্দে বিরাজমান, কেবল মানুষের মন নানা ঘটনায় বিধ্বস্ত।
প্রশ্ন:- যতক্ষণ পুজোর জামা কেনা না হচ্ছে/নড়বে না।”— প্রসঙ্গসহ উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য আলোচনা করো।
উত্তর : প্রসঙ্গ : প্রশ্নোকৃত অংশটি কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘কেন এল না” কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। বাবা ফিরলে পুজোর কেনাকাটা সেরে ফেলা হবে। বাবা মাইনে'-টা নিয়ে তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরবেন এমনটাই জানিয়েছেন। তাই সারাদিন আশায় বুক বেঁধে আনন্দ করেছে ছেলে। কিন্তু দিন গড়িয়ে রাত নেমে এলেও বাবা ফিরছে না দেখে ছেলেও অস্থির হয়ে ওঠে। প্রতিদিনের মতোই পড়তে বসে কিন্তু পাঠে তার মন বসে না। বইয়ে ছাপা অক্ষরগুলিও তখন তার দুর্বোদ্ধ ও হিজিবিজি বলে মনে হয়। তার মনজুড়ে অবস্থান করছে—বাবা কখন ফিরবেন, কখন তারা পুজোর
কেনাকাটায় বেরোবে। এই প্রসঙ্গেই কবি উক্তিটি করেছেন।
তাৎপর্য : আলোচ্যমান অংশের মাধ্যমে এক অস্থিরতাময় পরিবেশকে তুলে ধরেছেন কবি। কবিতার বর্ণিত 'ছেলেটা অনেক আশায় বুক বেঁধে
আনন্দে কাটিয়েছে সারাদিন। পুজোর জামা কিনতে বেরোবার প্রত্যাশায় অধীর হয়ে অপেক্ষা করেছে বাবার। দিন শেষে তার প্রত্যাশা অপূর্ণ থেকে গেছে। তার মনের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অস্থির পরিবেশ। অন্ধকার নেমে এলে অন্যান্য দিনের মতোই বই নিয়ে বসে সে। আজ বসেছে জানালার
দিকে মুখ করে, বাবাকে দেখার আকাঙ্ক্ষায়। ইতিহাসের পাতা খোলাই পড়ে থাকে। পড়া একটুও এগোয় না। বাপের অতিরিক্ত আদরে বিগড়ে যাওয়া ছেলে যেমন একগুঁয়ে হয়ে উঠে কোনোকিছুকে তোয়াক্কা করতে চায় না, বইয়ের অক্ষরগুলিও ছেলেটির মনে স্থান পেতে আজ অক্ষম। মনে আজ একটাই চাহিদা—পুজোর জামা চাই, না-হলে অক্ষরগুলি আজ চলচ্ছক্তিহীন হয়ে পড়েছে। শিশুমন তো অনেক কিছু বোঝে না। পরিবেশ-পরিস্থিতি সে জানতে চায় না। তার কাছে বাস্তব কেবল পুজোর জামা কেনার আনন্দটাই। সেই প্রত্যাশায় ব্যাঘাত ঘটেছে, তাই অন্য সব কিছু তার কাছে হিজিবিজি, এলোমেলো মনে হয়। উদ্ধৃতাংশের মাধ্যমে কবি এ কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।
প্রশ্ন: “বারুদের গন্ধে-ভরা রাস্তা দিয়ে/অনেক অলিগলি ঘুরে/মৃত্যুর পাশ কাটিয়ে/বাবা এল।/ছেলে এল না।।”—উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য আলোচনা করো।
প্র
উত্তর : প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি সাহিত্যিক সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত 'কেন এল না' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। সামাজিক অস্থিরতাময় পরিবেশের ইঙ্গিত প্রসঙ্গেই কবি উদ্ধৃতাংশটির অবতারণা করেছেন।
আলোচ্য কবিতায় বর্ণিত ছেলেটির বাবা মাইনে নিয়ে সকাল সকাল ফিরে আসবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে ঘটল অন্য ঘটনা। তিনি বাড়ি ফিরতে দেরি করেছিলেন। অনেকক্ষণ মনকে অবদমিত করে রাখা ছেলে নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। দরজা খুলে সে বাইরে
বেরিয়ে আসে। অনেক রাতে বাড়ি ফেরেন ছেলেটির বাবা। তখন সমস্ত রাস্তা ভরে গেছে বারুদের গন্ধে। এই ঘটনা প্রমাণ করে কোনো অসামাজিক কাজকর্ম সেখানে হয়েছে। তাই অনেক কৌশলে নিজের প্রাণকে রক্ষা করে মৃত্যুর পাশ কাটিয়ে বাবা ফিরে আসেন নিজ গৃহে। বারুদের গন্ধ, মৃত্যুর পা কাটানো—শব্দগুচ্ছই প্রমাণ করে পরিবেশ-পরিস্থিতি অস্বাভাবিক আকার ধারণ করেছিল। সেখান থেকে কোনোক্রমে নিজের প্রাণটুকু রক্ষা করে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন ছেলেটির বাবা। ফিরতে পারল না ছেলেটি। হৃদয়ে ক্ষুদের গন্ধ' মেখে ছেলেটি হারিয়ে গেল পৃথিবী থেকে। ছেলেটির বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা ছিল না, আর সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অসময়ে তাকেই চলে যেতে হল পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে। বাবার পক্ষে যেভাবে সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব ছেলেটির পক্ষে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তাই সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার শিকার হয়েছে ছেলেটি। তার পুজোর জামা কেনার আকাঙ্ক্ষা অপূর্ণই থেকে গেছে।
উদ্ধৃতাংশের মাধ্যমে কবি সমাজের এই ভয়াবহ ছবিটিই তুলে ধরতে চেয়েছেন।
প্রশ্ন:- “কেন এল না" কবিতার মাধ্যমে কবি সমাজের বুকে কোন বার্তা পৌঁছে দিতে চেয়েছেন আলোচনা করো।
উত্তর : আমাদের প্রতিদিনের জীবনে কত ঘটনাই আমাদের ঘটে চলে অজ্ঞাতসারে। অথচ তাদের প্রভাব আমাদের জীবনকে নাড়া দেয় ভীষণভাবে, যা আমাদের জীবনকে একধাক্কায় বেসামাল করে দেয়। মানুষের অনেক প্রত্যাশা থাকে কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণ হয় না অনেক ক্ষেত্রেই। প্রত্যাশা এবং তা পূরণের ব্যর্থতা জীবনে ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘কেন এল না’ কবিতাটিও যেন সেই বার্তাই
বহন করছে। বাবা তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবেন, পুজোর কেনাকাটা সেরে ফেলবেন, ছেলের মনের সাধ পূরণ হবে। সেই আশায় ছেলে সারাদিন অপেক্ষা করে। কিন্তু রাত নেমে আসলেও বাবার বাড়িতে ফিরতে দেরি হওয়া ছেলের মনকে অস্থির করে তোলে। আবার শুধু ছেলের মনই অশান্ত হয়নি, ছেলেটির মায়ের মনও
অস্থির হয়ে ওঠে স্বামীর ফিরতে দেরি হওয়াতে। তাই তাঁর অস্থির মনের ছাপ পড়েছে কাজের ক্ষেত্রেও। কখনও তাঁর পায়ে ফ্যান পড়ে যায়, আবার কখনও বুনতে বসে ঘার ভুল হয়। তবে শিশুমন বেশি চঞ্চল, তাই ছেলেটি বাবার প্রতীক্ষায় ঘরে বসে থাকতে না-পেরে রাস্তায় বের হয়। রাস্তায় লোকে ভিড়, কালো গাড়ি, বাজি কাটার শব্দে বিস্মিত হয়ে ব্যাপারটা অনুধাবন করে এগিয়ে যায়, রাত বাড়ে। অনেক রাতে বাবা ফিরে এলেও ছেলেটির আর বাড়ি ফেরা হয় না।
এখানেই কবি সমাজের এক অস্থির পরিবেশের ইঙ্গিত দিয়েছেন। বারুদের গন্ধে ভরা রাস্তা তো স্বাভাবিক নয়। অর্থাৎ রাজনৈতিক সামাজিক তথা অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। বাবা কৌশলে সেই বিপদ এড়িয়ে যেতে পারলেও ছেলেটি পারেনি, কবির
কথায় “মৃত্যুর পাশ কাটিয়ে/বাবা এল।/ ছেলে এল না।” আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, আমরা সর্বদাই আমাদের জীবনকে হাতের মুঠোয় চলেছি। নানা কারণে মুঠো একটু আলগা হলেই মৃত্যুর গহন অন্ধকারে তলিয়ে যেতে হবে। এই বার্তাই কবি দিতে চেয়েছেন আলোচ্য কবিতার মাধ্যমে ।
প্রশ্ন: “মৃত্যুর পাশ কাটিয়ে/বাবা এল।/ ছেলে এল না।।”—সমগ্ৰ কবিতার প্রেক্ষাপটে উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য আলোচনা করো।
অথবা, “মৃত্যুর পাশ কাটিয়ে/বাবা এল।/ ছেলে এল না।।”—উদ্ধৃতাংশের আলোকে কোন্ দুর্যোগের ইঙ্গিত কবি পাঠকের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছেন আলোচনা করে বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি পদাতিক কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘যত দূরেই যাই' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘কেন এল না' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
আলোচ্য কবিতায় শহুরে জীবনের প্রাত্যহিক এক সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার ইঙ্গিত তুলে ধরতে চেয়েছেন কবি।
আলোচ্যমান কবিতায় বর্ণিত ছেলেটি সারাদিন খুবই আনন্দে কাটিয়েছে এই ভেবে যে, তার বাবা ‘মাইনে’ নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসবে, তারপর তারা পুজোর কেনাকাটায় বেরোবে। দিনের আলো নিভে অন্ধকার নেমে এলেও বাবা বাড়ি ফিরছে না দেখে ছেলেটির মন অস্থির হয়ে ওঠে। মা-কে বারবার প্রশ্ন করে, বাবা না-আসার কারণ জানতে চাইলেও সদুত্তর সে পায় না। এদিকে তার মায়ের মনেও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। কাজে ভুল হয় তাঁর। তাঁর মনেও প্রশ্ন উকি দেয় ব'লে গেল ।/ সেই মানুষটা এখনও এল না।” ছেলের দরজায় ছিটকিনি খোলার শব্দে একটু চমকে ওঠেন তিনি। রেডিওতে খবর পড়া চলতে থাকে। তাঁর মনের অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়---“মানুষটা এখনও কেন এল না?"
ব্যাকুল ছেলেটি গলির দরজায় এসে দাঁড়ায়। একটু এগিয়ে দেখার আকাঙ্ক্ষায় রাস্তায় পা রেখে সে দেখে রাস্তার মোড়ে ভিড়, কালো একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে, খুব বাজি ফাটছে—এসবের কারণ বুঝতে কৌতূহলী মানসিকতায় ছেলেটি সামনে এগিয়ে যায়। তবে সে আর ফিরে আসতে পারে না। অনেক রাত বারুদের গন্ধে ভরা রাস্তা দিয়ে, এ গলি-সে গলি ঘুরে, মৃত্যুর পাশ কাটিয়ে ছেলেটির বাবা ফিরে আসেন। এই ঘটনাই সামাজিক অস্থিরতার ইঙ্গিত বহন করে আনছে। রাস্তার মোড়ে ভিড়, কালো গাড়ি ইঙ্গিত করে পুলিশের গাড়িকে। 'বাজি' এখানে কোনো আতসবাজিকে চিহ্নিত করছে না-এ কথা খুব সহজেই বোঝা যায়। বারুদের গন্ধে ভরা বায়ু নিশ্চিত করেই কোনো রাজনৈতিক তথা সামাজিক গোলযোগকেই চিহ্নিত করছে। অর্থাৎ সামাজিক অনাচার পরিবেশকে অসহনীয় ও চঞ্চল করে তোলে। সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার কোনো নিশ্চয়তা নেই। মানুষ যেন প্রাণ হাতে নিয়ে রাস্তায় বেরোয়। আর সেই সামাজিক অনিশ্চয়তার কারণেই বলি যেতে হয় কবিতায় বর্ণিত ছেলেটির মতো কতশত সবুজ-সতেজ প্রাণ। আলোচ্যমান কবিতায় কবি এমনই এ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অস্থিরতার নির্মম চিত্র উপস্থাপন করেছেন।
প্রশ্ন: 'কেন এল না' কবিতাটি নামকরণ কতখানি সার্থক হয়েছে তা আলোচনা করো।
উত্তর : উত্তরের জন্য আগে 'নামকরণ' অংশটি দেখো।
প্রশ্ন: 'কেন এল না' কবিতার প্রেক্ষাপটে ছেলেটির মায়ের মানসিকতার পরিচয় দাও।
উত্তর : তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবে বলেও তাড়াতাড়ি ফিরতে না পারা, আধুনিক শহুরে জীবনে প্রতিদিনের ঘটনা। তবে সেই ঘটনাই যে কতটা তাৎপর্যময় হয়ে উঠতে পারে, তারই বাস্তব দলিল-চিত্র হয়ে উঠেছে সাহিত্যিক সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত 'কেন এল না' কবিতাটি।
আলোচ্য কবিতায় বর্ণিত খোকার বাবা বলে গিয়েছিলেন "মাইনে।নিয়ে তিনি সকাল সকাল বাড়িতে ফিরবেন কারণ এইবেলা পূজোর কেনাকাটা সেরে ফেলতেই হবে। বাস্তবে দেখা গেল খোকার বাবা ফিরতে দেরি করছেন।
আর এমন ঘটনা প্রথমে বিচলিত করে তুলেছে খোকাকে এবং ধীরে ধীরে খোকার মা-কেও। খোকার মা প্রথমেই ততটা বিচলিত হননি, কারণ তিনি।অনুভব করতে পারেন রাস্তার নানান সমস্যায় বাড়িতে ফিরতে দেরি হতে পারে তাঁর স্বামীর। কিন্তু দেরি হওয়ার সীমা অতিক্রান্ত হলে একসময় তিনিও অস্থির হতে শুরু করেন। কারণ দিনের আলো নিভে গেছে অনেক আগেই । রাস্তার বাতিগুলি জ্বলে গেছে। খোকা এসে মা-কে প্রশ্ন করে জানতে চাইছে বাবার না-ফেরার কারণ। তখন খোকার মায়ের মনও আর নিশ্চিন্ত থাকতে পারে না। তিনিও ভাবতে শুরু করেন—“ব’লে গেল।/সেই মানুষ এখনও না। এমন ভাবনা তাঁর মনকেও গ্রাস করতে থাকে। ধীরে মানসিক অস্থিরতা ধরা পড়ে কাজের মধ্যেও। স্বামীর চিন্তায় তিনি আনমনা হয়ে পড়েন। তাই অন্যরকম পরিস্থিতির শিকার হন তিনি- “কড়ার গায়ে খুন্তিটা আজ একটু বেশি রকম নড়ছে। ফ্যান গালতে গিয়ে, পা-টা পুড়ে গেল।" দরজায় ‘খুট' করে শব্দ হলেও তিনি চমকে ওঠেন। রাতের রান্না সমাপ্ত করে গা ধুয়ে বুনতে বসেন। কিন্তু বারবার তিনি ঘর ভুল করেন। একসময় রেডিওতে খবর বলা শুরু হয়, তখনও স্বামী ফিরে আসেননি। এমন অবস্থায় তাঁর মনে প্রশ্ন দেখা দেয়—“মানুষটা এখনও কেন এল না।” এমনভাবেই স্বামীর বাড়ি ফিরতে দেরি হওয়া খোকার মায়ের মনে নিদারুণ অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল।
