ছন্দে শুধু কান ডাকো || অজিত দত্ত || সপ্তম শ্রেণী বাংলা || হাতে কলমে প্রশ্নের উত্তর
![]() |
সপ্তম শ্রেণি বাংলা
ছন্দে শুধু কান রাখো
অজিত দত্ত
প্রশ্ন- 'ছন্দে শুধু কান রাখো' কবিতার নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো।
উত্তর-মনুষ্যসমাজের মতো সাহিত্যসৃষ্টির ক্ষেত্রেও নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামকরণের মধ্য দিয়েই কবিতা-গল্প কিংবা নাটকের মূল বিষয়বস্তুটিকে আন্দাজ করা যায়।
কবি অজিত দত্ত রচিত 'ছন্দে শুধু কান রাখো' কবিতাটিতে কবি প্রথমেই মন্দ কথায় কান না দিয়ে ছন্দে মনোনিবেশ করতে বলেছেন। কারণ, মনের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকলে ছন্দ শোনা যায় না। কবি বলেছেন, এই ছন্দ প্রকৃতির মধ্যেই আছে। ঝড়-বাদল-জ্যোৎস্নায় কিংবা পাখি, ঝিঁঝিঁর ডাকের মধ্যেও ছন্দ শোনা যায়। নদীর স্রোতের ছন্দ হল সবচেয়ে মধুর। আবার, রেলগাড়ি, মোটরগাড়ি কিংবা নৌকা-জাহাজ-ও ছন্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। ঘড়ির
কাঁটার ছন্দে রাত্রি-দিন বাঁধা আছে। কিন্তু, এই সমস্ত ছন্দকে শুনতে পাওয়া সহজ নয়। অনুভূতিসম্পন্ন মন আর দূরদৃষ্টি থাকলেই, এগুলি উপলব্ধি করা যায় এবং জীবন হয়ে ওঠে ছন্দের তালে পদ্যময় ।
এইভাবেই কবি সমগ্র কবিতায় প্রকৃতির তথা জীবনের ছন্দের প্রতিই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন, ছন্দের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। সেই কারণেই কবিতার ম ‘ছন্দে শুধু কান রাখো' সার্থক হয়ে উঠেছে।
১.অনধিক দুটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
১.১ “মন্দ কথায় কান দিয়ো না”–মন্দ কথার প্রতি কবির কীরূপ মনোভাব কবিতায় ব্যক্ত হয়েছে ?
উত্তর- → মন্দ কথা মনের মধ্যে ঝগড়া, কলহ, বিবাদ ও সংঘাতের সৃষ্টি করে। তাই মন্দ কথায় কান দিলে জীবনের অপরূপ ছন্দকে শোনা ও বোঝা যায় না—এভাবে কবি মন্দ কথার প্রতি বিরূপ মনোভাব ব্যক্ত করেছেন।
১.২ “কেউ লেখেনি আর কোথাও”-কোন্ লেখার কথা এখানে বলা হয়েছে ?
উত্তর-নদীর স্রোতের কলধ্বনিতে প্রতিনিয়ত যে-ছন্দময় ছড়া রচিত হচ্ছে, তা লেখার কথাই এখানে বলা হয়েছে। এমন ছড়া কেউ কোথাও লেখেনি।
১.৩ “চিনবে তারা ভুবনটাকে”—কারা, কীভাবে ভুবনটাকে চিনবে ?
উত্তর- পৃথিবীর সব কিছুই ছন্দময়। এই ছন্দ যারা কান পেতে আর মন দিয়ে শুনতে পায় এবং হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারে, তারাই ভুবনটাকে’ চিনতে পারবে।
১.৪ “পদ্য লেখা সহজ নয়”-পদ্য লেখা কখন সহজ হবে বলে কবি মনে করেন ?
উত্তর-পদ্য ছন্দে লিখতে হয়, তা মোটেই সহজ কাজ নয়—তার জন্য বিশেষভাবে ছন্দ শুনতে, জানতে ও উপলব্ধি করতে হয়। সেই ছন্দ উপলব্ধি করতে পারলেই পদ্য লেখা সহজ হবে বলে কবি মনে করেন।
১.৫ “ছন্দ শোনা যায় নাকো”—কখন কবির ভাবনায় আর ছন্দ শোনা যায় না ?
উত্তর- যখন মানুষের মন ঈদ, ঝগড়া, কলহ, বিবাদ এইসব সংকীর্ণতার মধ্যে ডুবে থাকে, তখনই কবির ভাবনায় আর ছন্দ শোনা যায় না।
২.বিশেষ্যগুলিকে বিশেষণে ও বিশেষণগুলিকে বিশেষ্যে পরিবর্তন করো এবং বাক্য রচনা করো :
[ ঝড়, মন, ছন্দ, দিন, সুর, সংকেত, দ্বন্দ্ব, মন্দ,ছন্দহীন, পদ্যময়, সহজ।]
উত্তর- ঝড় (বি) > ঝোড়ো (বিণ) - আজ সকাল থেকেই ঝোড়ো হাওয়া বইছে।
মন (বি) > মানস (বিণ) -ভ্রমণকাহিনি পড়ে অনেকেই মানস ভ্রমণ করে।
ছন্দ (বি) > ছন্দময় (বিণ) - প্রকৃতির ছন্দময় ভাষ সকলে বুঝতে পারে না।
দিন (বি) > দৈনিক (বিণ) -মামার বাড়িতে দৈনিক দুটো করে খবরের কাগজ আসে।
সুর (বি) > সুরেলা (বিণ) - গান সুরেলা না হলে শুনতে ভালো লাগে না।
সংকেত (বি) > সাংকেতিক (বিণ) - পাঠ্য বিষয়ের সাংকেতিক চিহ্ন বুঝে নাও।
দ্বন্দ্ব (বি) > দ্বান্দ্বিক (বিণ)-শত্রুতা একটি দ্বান্দ্বিক বিষয়।
মন্দ (বিণ) > মন্দত্ব (বি) - মন্দত্ব ঘুচিয়ে শুভকার্যের সূচনা করতে হয়।
ছন্দহীন (বিণ) > ছন্দহীনতা (বি) - মাঝে মাঝে কবিরা ছন্দহীনতায় ভোগেন।
পদ্যময় (বিণ) > পদ্য (বি) - ভাবুক ছেলেটি পদ্য লেখায় ব্যস্ত।
সহজ (বিণ) > সহজতা (বি) - বিনয়ী মানুষের মনে আছে।
৩. নীচের শব্দগুলিকে আলাদা আলাদা অর্থে ব্যবহার করে দুটি করে বাক্য লেখো :
[ মন্দ, দ্বন্দ্ব, তাল, ডাক, বাজে, ছড়া, মজা, নয়।]
উত্তর- মন্দ (খারাপ)–মন্দ বিষয়ে কান দিতে নেই।
মন্দ (হালকা)—মৃদু-মন্দ বাতাসে ঘুম এসে গেল ৷
দ্বন্দ্ব (মিল)—মিলনজাত সমাসকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে।
দ্বন্দ্ব-(কলহ)—বন্ধুদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকা অনুচিত।
তাল (ফল বিশেষ)—ভাদ্র মাসে তাল পাকে।
তাল (ছন্দ)—সুর তাল মিলেই গান তৈরি হয়।
ডাক (আহ্বান)—দূর থেকে সমুদ্রের ডাক শুনছি।
ডাক (চিঠিপত্র পাঠানোর মাধ্যম)—আজকের ডাকে বাবার চিঠি পেলাম ।
বাজে (আওয়াজ হয়)—দুর্গাপুজোয় ঢাক বাজে।
বাজে (খারাপ)—অমল ছেলেটি বাজে হয়ে যাচ্ছে।
ছড়া (গুচ্ছ)— পুজোর জন্য এক ছড়া কলা লাগবে ।
ছড়া (ছন্দময় মজার পদ্য) যোগীন্দ্রনাথ সরকারে ছড়াগুলি বেশ মজার।
মজা (আনন্দ)—বাবা আসবে বলে রীতার খুব মজা।
মজা (নষ্ট হওয়া)— আমার বাড়ির পাশে একটা মজা পুকুর আছে।
নয় (সংখ্যা) নয় টাকায় এখন কিছু হবে না।
নয় (না)—ওখানে একা একা যাওয়া তোমার উচিত নয়।
৪. নীচের শব্দগুলি কোন মূল শব্দ থেকে এসেছে লেখো :
[ জোছনা, চাকা, কান, দুপুর, ঝিঁঝি।]
জোছনা < জ্যোৎস্না।
চাকা < চক্র।
কান < কর্ণ।
দুপুর < দ্বিপ্রহর।
ঝিঁঝি < ঝিল্লি।
৫ . কবিতার ভাষা থেকে মৌখিক ভাষায় রূপান্তর করো:
৫.১ ছন্দ আছে ঝড়-বাদলে।
উত্তর-> ঝড়-বৃষ্টিতেও ছন্দ আছে।
৫.২ ছন্দে বাঁধা রাত্রি-দিন।
উত্তর→ রাত্রি-দিন ছন্দে আবদ্ধ।
৫.৩ কিচ্ছুটি নয় ছন্দহীন ।
উত্তর→ কোনো কিছুই ছন্দহীন নয়।
৫. ৪ চিনবে তারা ভুবনটাকে/ছন্দ সুরের সংকেতে।
উত্তর-ছন্দ ও সুরের সংকেতে তারা ভুবনকে চিনবে।
৫.৫ কান না দিলে ছন্দে জেনো/পদ্য লেখা সহজ নয়।
উত্তর - ছন্দে কান না-দিলে পদ্য লেখা সহজ হবে না।
‘কান’ শব্দটিকে পাঁচটি বিশেষ অর্থে ব্যবহার করে বাক্য লেখো :
→ কান–(কর্ণ) কান পেতে নদীর ছন্দ শোনো।
→ কানমলা—(শাস্তি)—গুরুমশাইরা পড়া না-পারলে কানমলা দিতেন।
> কানপাতলা (কথা চেপে রাখতে পারে না এমন) > কানপাতলা লোকের সঙ্গে পরামর্শ করা ঠিক হবে না।
> কান দেওয়া – (শোনা)—স্যার পড়াচ্ছে—এখন অন্যদিকে কান দিয়ো না।
> কানকাটা (নির্লজ্জ) পাশের বাড়ির দীপক একদম কানকাটা লোক।
৫.'ঝড়-বাদল'-এমনই সমার্থক বা প্রায়-সমার্থক শব্দ দিয়ে তৈরি পাঁচটি শব্দ লেখো :
উত্তর- নদ-নদী, খাল-বিল, বন-জঙ্গল, খাতা-পত্র, দীনদরিদ্র।
৭. তোমার পরিচিত আর কোন্ কোন্ যানবাহনের চলার মধ্যে নির্দিষ্ট ছন্দ রয়েছে ?
> সাইকেল, ঘোড়ার গাড়ি, গোরুর গাড়ি, ভ্যান, রিকশা ইত্যাদির চলার মধ্যে ছন্দ রয়েছে।
১০ সমার্থক শব্দ লেখো:
দিন, রাত্রি, নদী, ভুবন। জল, দিন,
> জল—সলিল, নীর, বারি, জীবন, অম্বু, পানি, অপ, উদক
> দিন—দিবস, দিবা, দিনমান, অহ, অহ্ন, বার।
> রাত্রি—রাত, রজনি, নিশা, শর্বরী, রাত্তির, নিশীথ, যামিনী, বিভাবরী।
> নদী—তটিনী, প্রবাহী, স্রোতস্বিনী, নদ, সরিৎ, বহা, বাহিনী, প্রবাহিনী।
> ভুবন—পৃথিবী, জগৎ, বিশ্ব, দুনিয়া, নিখিল, ধরা,
অবনী, মেদিনী।
১১. শব্দযুগলের অর্থপার্থক্য দেখাও :
[ দিন, মন, সুর ,সকল, দীন মণ শূর শকল ]
দিন—দিবস।
দীন—গরিব ।
সুর-দেবতা।
শুর—বীর।
মন—চিত্ত।
মণ—চল্লিশ সের।
সকল- সব।
শকল—মাছের আঁশ।
১২. ‘যারা তারা’র মতো তিনটি সাপেক্ষ শব্দজোড় তৈরি করো।
উত্তর- যখন-তখন, এখানে-ওখানে, যদি তবে।
১৩. কবিতা থেকে খুঁজে নিয়ে তিনটি সর্বনাম লেখো।
১৩. চিনবে তারা ভুবনটাকে ।
উঃ > তারা।
১৩. কেউ লেখেনি আর কোথাও।
উঃ > কেউ।
১৩.৩ সকল ছন্দ শুনবে যারা।
উঃ > সকল, যারা ।
১৪ কবিতায় রয়েছে এমন চারটি ‘সম্বন্ধ পদ' উল্লেখ করো।
১৪.১ দিন দুপুরে পাখির ডাকে।
উঃ > পাখির।
১৪.২ নদীর স্রোতের ছন্দ।
উঃ > নদীর।
১৪.৩ মনের মাঝে জমবে মজা।
উঃ > মনের।
১৪.৪ ঝিঁঝির ডাকে ঘোর রাতে।
উঃ > ঝিঁঝির ৷
১৫ নীচের বাক্য/বাক্যাংশের উদ্দেশ্য ও বিধেয় অংশ আলাদাভাবে দেখাও ।
১৫. ১ ছন্দ আছে ঝড়-বাদলে।
উদ্দেশ্য.-ঝড়-বাদলে
বিধেয় .-ছন্দ আছে।
৫.২ দেখবে তখন তেমন ছড়া/কেউ লেখেনি আর কোথাও।
উদ্দেশ্য.-
বিধেয় -
৫.৩ জলের ছন্দে তাল মিলিয়ে/নৌকো জাহাজ দেয় পাড়ি।
উদ্দেশ্য.-নৌকো জাহাজ
বিধেয় -জলের ছন্দে নৌকো জাহাজ দেয় পাড়ি।
৫.৪ চিনবে তারা ভুবনটাকে ছন্দ সুরের সংকেতে।
উদ্দেশ্য.-তারা
বিধেয় -চিনবে ভুবনটাকে ছন্দ সুরের সংকেতে।
১৬. নিম্নরেখ অংশগুলির কারক-বিভক্তি নির্দেশ করো :
১৬ ১ ছন্দে শুধু কান রাখো।
উত্তর-অধিকরণ কারকে 'এ' বিভক্তি।
১৬.২ ছন্দ আছে ঝড়-বাদলে।
উত্তর- অধিকরণ কারকে 'এ' বিভক্তি।
১৬ ৩ .দিন দুপুরে পাখির ডাকে।
উত্তর-অধিকরণ কারকে 'এ' বিভক্তি।
১৬.৪ ছন্দে চলে রেলগাড়ি।
কর্মকারকে শূন্য বিভক্তি
১৬.৫ . চিনবে তারা ভুবনটাকে।
> কর্তৃকারকে শূন্য বিভক্তি ।
হাতে কলমে বাইরে আরো কিছু প্রশ্ন
সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো :
★ ছন্দ শুনতে গেলে (দ্বন্দ্ব/ধন্দ/দ্বান্দ্ব) ভুলতে হবে।
উত্তর- দ্বন্দ্ব।
★ঘোর রাতে (পাখি/জোনাকি/ঝিঁঝি) ডাকে ৷
উত্তর-ঝিঝি
★জগতে কোনো কিছু (ছন্নছাড়া/ছন্দহীন/ছন্দময়) নয়।
উত্তর-ছন্দহীন।
■ ছন্দ শুনতে হলে (চোখ-কান / চোখ-মন / কান-মন) পাততে হবে।
উত্তর- কান-মন।
★ ছন্দে কান দিলে (গদ্য/পদ্য/নাটক) লেখা সহজ হবে।
উত্তর- পদ্য
একটি বাক্যে উত্তর দাও :
প্রশ্ন:- 'ছন্দ' কী ?
উত্তর-‘ছন্দ' বলতে সাধারণ অর্থে ঝোঁক বা প্রবৃত্তিকে বোঝায়।
প্রশ্ন:- ''গদ্য' না 'পদ্য'--কোন্ বিষয়ের সঙ্গে ছন্দ কথাটি আসে ?
উত্তর-'পদ্য' বিষয়ের সঙ্গে ছন্দ কথাটি আসে।
প্রশ্ন:- ' গানের নির্দিষ্ট ছন্দে মনে কী আসে ? তার ফলে তোমাদের কী করতে ইচ্ছে করে ?
উত্তর- গানের নির্দিষ্ট ছন্দে মনে আনন্দ, উল্লাস, পুলক আসে। তার ফলে আমাদের নেচে উঠতে ইচ্ছে করে।
প্রশ্ন:- ' গান ছাড়া আর কীসের ছন্দে মন আন্দোলিত হয় ?
উত্তর- গান ছাড়া ঢাকের বাদ্য, তাসার বাজনার ছন্দে মনআন্দোলিত হয়।
প্রশ্ন:- '. কবি কোথায় কান রাখতে বলেছেন ?
উত্তর-কবি ছন্দে কান রাখতে বলেছেন।
প্রশ্ন:- 'মনের মাঝে নদীর ছন্দ শুনতে পেলে কী বোঝা যাবে ?
উত্তর-মনের মাঝে নদীর ছন্দ শুনতে পেলে বোঝা যাবে যে, তেমন ছড়ার ছন্দ কেউ লেখেনি।
প্রশ্ন:- ' নৌকো-জাহাজ কীসের ছন্দে তাল মেলায় ?
উত্তর-নৌকো-জাহাজ জলের ছন্দে তাল মেলায়।
প্রশ্ন:- ' ছন্দে কে, কে চলছে বলে কবি উল্লেখ করেছেন ?
উত্তর-ছন্দে রেলগাড়ি, ঘড়ির কাঁটা চলছে বলে কবি উল্লেখ করেছেন।
প্রশ্ন:- ' “চিনবে তারা ভুবনটাকে”- “ভুবন' কথার অর্থ কী ? কারা কীভাবে ভুবন চিনবে ?
উত্তর- ‘ভুবন’ কথার অর্থ হল ‘জগৎ' বা ‘পৃথিবী’।
> যারা পৃথিবীর ছন্দ শুনতে পারে, তারাই ভুবন চিনবে। ভুবন চেনার অর্থ হল, পৃথিবীর সবকিছুকে উপলব্ধি করা। তার গতিপ্রকৃতি, স্বভাব-সৌন্দর্য জানা।
আর এটি করতে গেলে আত্মোপলব্ধির প্রয়োজন।
তাই যেসব মানুষের অন্তর্দৃষ্টি আছে, তারাই কেবল উপলব্ধির মাধ্যমে ভুবন চিনতে সক্ষম হয়।
প্রশ্ন:- ' মানুষের জীবনে ছন্দ শোনার প্রভাব সম্পর্কে কবি কী বলেছেন ?
উত্তর- প্রকৃতি সবসময়ই ছন্দময় । মানুষও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে মানুষের বিচারক্ষমতা ও বোধশক্তি থাকায় মন বিক্ষিপ্ত থাকে। মনের মধ্যে দ্বন্দ্ব কাজ করে বলে, মানুষ প্রকৃতির সব ছন্দ ধরতে পারে না। তাই কবি ছন্দে শুধু বলেছেন, দ্বন্দ্ব ভুলে মন-কান পেতে ছন্দ শুনতে
পারলে বিশ্বভুবন সাংকেতিক রূপে ধরা দেবে। মানুষ সৃষ্টিকর্মে উদ্দীপ্ত হয়ে উঠবে। বিশ্বজগতের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনও ছন্দময় হবে।
প্রশ্ন:- '“কিচ্ছুটি নয় ছন্দহীন”—উক্তিটির মর্মার্থ লেখো।
উত্তর- কবির মতে, পৃথিবীর কোনো কিছুই ছন্দহীন নয়।
পৃথিবীতে জীবজগতের মধ্যে যেমন প্রাণের ছন্দ রয়েছে, তেমনই জড় পদার্থের মধ্যেও রয়েছে ছন্দের প্রবাহ। প্রকৃতির অঙ্গনে অবস্থানকারী
সবকিছুর মধ্যেই ছন্দের প্রবাহকে লক্ষ করে কবি বলেছেন—“কিছুটি নয় ছন্দহীন"।
প্রশ্ন:- ' কবি অজিত দত্ত তাঁর 'ছন্দে শুধু কান রাখো” কবিতায় কোন কোন জিনিসের মধ্যে ছন্দের প্রকাশ লক্ষ করেছেন ?
উত্তর- কবি অজিত দত্ত তাঁর 'ছন্দে শুধু কান রাখো’ কবিতায় ছন্দের প্রকাশ লক্ষ করেছেন—ঝড়-বাদলে, জ্যোৎস্নার আলোয়, দিন-দুপুরে পাখির ডাকে, গভীর রাতে ঝিঁঝির ডাকে, নদীর স্রোতের মধ্যে, মোরের চাকায়, রেলগাড়ির চলায়, জাহাজের ভেলে যাওয়ার শব্দে, এমনকি ঘড়ির কাঁটার চলার মধ্যেও। পৃথিবীর সব কিছুর মধ্যেই তিনি ছন্দের প্রকাশ লক্ষ করেছেন।
প্রশ্ন:- ' পৃথিবীর সব কিছু ছন্দময়—এটি বুঝতে হলে কী করতে হবে ?
উত্তর- পৃথিবীর সব কিছু ছন্দময় – এটি বুঝতে হলে অনুভূতি শক্তির দরকার। আর এই অনুভূতিকে জাগ্রত করতে গেলে পরিবেশের সমস্ত পরিবর্তন লক্ষ করতে হবে। বুঝতে না-পারলে অনুভূতি সম্পন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।
প্রশ্ন:- 'কারা ছন্দে বাঁধা আছে ?
উত্তর-রাত্রিদিন ছন্দে বাঁধা আছে।
প্রশ্ন:- ' কারা ভুবনটাকে চিনতে পারবে ?
উত্তর- যারা প্রকৃতির সব ছন্দ শুনতে পায়, তারাই ভুবনটাকে চিনতে পারবে।
প্রশ্ন:- 'ছন্দ শুনতে পেলে মনে কী জমবে ?
উত্তর-ছন্দ শুনতে পেলে মনের মাঝে মজা জমবে।
প্রশ্ন:- ' কখন পদ্য লেখা সহজ হবে ?
উত্তর- ছন্দ জানা থাকলে পদ্য লেখা সহজ হবে।
প্রশ্ন:- ' জীবন কখন পদ্যময় হয়ে উঠবে ?
উত্তর; মনের মধ্যে মজা অর্থাৎ, আনন্দ থাকলে জীবন পদ্যময় হয়ে উঠবে।
প্রশ্ন:- '“ছন্দ আছে জোছনাতে”-কার লেখা, কোন কবিতার পক্তি ? জোছনার ছন্দ থাকা ব্যাপারটি বুঝিয়ে দাও ।
উত্তর- কবি অজিত দত্তের লেখা 'ছন্দে শুধু কান রাখো'
কবিতার পঙক্তি।
> জোছনা হল—চাঁদের আলো। এই আলোয় সমগ্র জগৎ হেসে ওঠে। তার প্রভাবে প্রকৃতি-সহ সমস্ত মানুষ মনে আনন্দ অনুভব করে। সেই আনন্দ থেকেই মানুষ প্রকৃতিকে জানার রসদ পায়। আর এখানেই বোঝা যায় জোছনার ছন্দ আছে।
প্রশ্ন:- '“দেখবে তখন তেমন ছড়া/কেউ লেখেনি আর কোথাও।”–কোন্ প্রসঙ্গে কবি এ কথা বলেছেন ? এ কথার মধ্য দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন ?
উত্তর- নদীর স্রোত নির্দিষ্ট গতিভঙ্গিমায় চলে এবং তাতে জলকল্লোল ওঠে। জলের এই কল্লোলধ্বনি মানুষকে মোহিত করে। তাদেরকে আবিষ্ট করে রাখে। মানুষও তাই প্রবহমান জলের শব্দ ছেড়ে উঠতে চায় না। নদীর সেই স্রোতধ্বনি প্রসঙ্গে কবি এ কথা বলেছেন।
> এ কথার মধ্য দিয়ে কবি বোঝাতে চেয়েছেন—প্রকৃতিরছন্দই শ্রেষ্ঠ ছড়া, তেমনটি লেখা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন:- ' জলের ছন্দ কী ? এই ছন্দের কার্যকারিতা দেখাও।
উত্তর- জলের ছন্দ হল তার প্রবহমানতা—অর্থাৎ, জনের স্রোত ও তার ধ্বনি।
> জলের ধ্বনি মানুষকে, বিশেষ করে প্রকৃতিপ্রেমিককে আহ্বান করে। তাই তারা সমুদ্রের কাছে ছুটে যায়। নদীর পাড়ে বসে। সেখানে দীর্ঘক্ষণ বসে জলের কল্লোলধ্বনি শোনে। সমুদ্রের গর্জন স্রোতকে বয়ে নিয়ে আসে। সেই স্রোত পাড়ে এসে ধাক্কা মারে।
মানুষ সেগুলিও উপভোগ করে। এভাবেই জলেরছন্দ কার্যকারিতা পায় ৷
