ডাকঘর নাটকে অমলের মন যে কল্পনা প্রবণ তার স্বপক্ষে একটি যুক্তি দেখাও। ডাকঘর। দ্বাদশ শ্রেণী
![]() |
প্রশ্ন:-অমলের মন যে কল্পনাপ্রবণ তার স্বপক্ষে কয়েকটি যুক্তি-দেখাও।
উত্তর : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর' নাটকে পিতৃ-মাতৃহারা অমল শৈশবাবস্থা থেকেই রোগাক্রান্ত। শারীরিকভাবে দুর্বল হলেও তার মন কল্পনাপ্রবণ। তাকে বড়োরা অনুশাসনে বেঁধে ঘরের মধ্যে আটকে রাখতে চাইলেও তারমন বাইরের পৃথিবীর পানে মুক্ত বিহঙ্গের মতো কল্পনার পাখায় নিজেকে মেলে ধরতে চায়। এই কল্পনার মধ্য দিয়েই হয়তো সে তার শরীরে বাসা বাঁধা দুরারোগ্য অসুখের যন্ত্রণা ভুলে থাকতে চেয়েছে। শরীরের অসুস্থতা তার কল্পনাশক্তিকে তীব্র করে তুলেছে, সেই কল্পনা তাকে একস্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে যায়। সে কল্পনায় অনুভব করতে পারে, “পৃথিবীটা কথা কইতে পারে না, তাই অমনি করে নীল আকাশে হাত তুলে ডাকছে। অনেক দূরের যারা ঘরের মধ্যে বসে থাকে তারাও দুপুরবেলা একলা জানালার ধারে বসে ওই ডাক শুনতে পায়।” অমলকে সারাক্ষণ ঘরের মধ্যে বদ্ধ হয়ে থাকতে হয়। সে যেন জানালার পাশে বসে সমগ্র পৃথিবীর সৌন্দর্য-চিত্র দেখতে পায়। সে মনে মনে দূর পাহাড়ের কাছে চলে যেতে চায়। কল্পনাপ্রবণ মন দিয়ে দইওয়ালার গ্রামের প্রায় নিখুঁত ছবি এঁকে নেয়। পাঁচমুড়া পাহাড়, শ্যমলী নদী, লাল রঙের রাস্তা, লাল শাড়ি পরা মেয়েদের সবই যেন জানালার পাশে বসে দেখতে পায়। তার কল্পনাশক্তি পরিপূর্ণ স্ফূর্তি পায় যখন প্রহরী খেলাচ্ছলে রাজার চিঠির কথা তাকে বলে। তার ঘরের কাছাকাছি রাজার 'ডাকঘর' বসেছে, সেই ডাকঘর থেকে অমলের কাছে রাজার চিঠি আসার কল্পনায় তার দিন কাটে। অমল কল্পনার পাখায় ভর করে চলে যেতে চায় অজানা দেশে— “সে-দেশ বুঝি কেউ দেখে আসেনি? আমার ভারি ইচ্ছে করছে, ওই সময়ের সঙ্গে চলে যাই—যে দেশের কথা কেউ জানে না, সেই অনেক দূরে।” সেই কল্পনার পাখায় ভর করতে করতে সে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে, ঘুমের মধ্য দিয়ে যেন কাঙ্ক্ষিত দেশে পৌঁছে যায়। সে অজানা দেশ থেকে আর ফিরে আসে না।
