কুমোরে পোকার বাসাবাড়ি || ষষ্ঠ শ্রেণি || হাতে-কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর
![]() |
কুমোরে-পোকা বাসাবাড়ি
গোপাল চন্দ্র ভট্টাচার্য
ষষ্ঠ শ্রেণী
বিষয়সংক্ষেপ
কুমোরে-পোকা দেখতে কালো ও লিকলিকে। এদের শরীরের মাঝখানে বোঁটার মতো হলুদ রঙের সরু একটি অংশ থাকে। কুমোরে-পোকা ঘরের কোণে বা দেয়ালের গায়ে লম্বাটে ধরনের এবড়ো-খেবড়ো বাসা বানায়। কুমোরে-পোকার এই বাসা বানানোর রীতিটি বেশ অদ্ভুত। শুধু ডিম পাড়ার সময় হলেই এরা বাসা বানায়। তবে এদের এই বাসা বানানোর পদ্ধতিটি খুব একটা সরল নয়। এর জন্য
তাদের বেশ পরিশ্রম করতে হয়। বাসা বানানোর জন্য প্রথমেই এরা উপযুক্ত একটি জায়গার খোঁজ করে। জায়গা পছন্দ হওয়ার পর এরা দেখে নেয়, বাসা বানানোর জন্য কতদূর থেকে কাদামাটি আনতে হবে। সাধারণত চল্লিশ-পঞ্চাশ গজ দূর থেকে এরা মাটি সংগ্রহ করে থাকে।
তবে দরকার হলে এরা দেড়শো-দুশো গজ দূর থেকেও মাটি সংগ্রহ করে থাকে। কাদামাটির খোঁজ পেলে এরা সেই জায়গা থেকে বাসা তৈরির জায়গায় যাতায়াত করে রাস্তা চিনে নেয়। এরপর তারা বাসা তৈরি করতে শুরু করে। বাসা তৈরির পরে এদের বাসা যদি কেউ ভেঙে দেয়, তবে তারা ওই জায়গাতেই আবার বাসা বানাতে শুরু করে, অন্য কোথাও চলে যায় না। বাসার একটা কুঠুরি তৈরি হয়ে গেলেই তার মধ্যে প্রয়োজনমতো খাদ্যবস্তু রাখে। তারপর তাতে একটা মাত্র ডিম পেড়ে কুঠুরির মুখটা বন্ধ করে দেয়। এরপর তারই গা ঘেঁষে আর একটি নতুন কুঠুরি তৈরি করে। এদের বাসা তৈরির পদ্ধতি দেখে মনে হয় যে, এরা ইচ্ছেমতো ডিম পাড়ার সময় ঠিক করতে পারে।
মাটি সংগ্রহের সময় তারা ভালো করে দেখেশুনে মাটি পছন্দ করে নেয়। পছন্দ হলে ছোটো ছোটো মাটির ডেলাগুলিকে মুখে করে এনে চোয়ালের সাহায্যে চেপে দেয়ালের গায়ে বসিয়ে দেয়। একটার পর একটা ডেলা এনে ক্রমশ লম্বা করে প্রায় সওয়া ইঞ্চি দৈর্ঘ্য পর্যন্ত গেঁথে চলে। এরপর কুমোরে-পোকা কুঠুরির ভিতরে প্রবেশ করে দেয়ালের গায়ে একপ্রকার লালারস মাখিয়ে দেয়ালটিকে মসৃণ করে দেয়।
কুমোরে-পোকা কেবল ঘুরে বেড়ানো মাকড়সাই শিকার করে। মাকড়সা দেখতে পেলে তাদের কামড়ে, হুল ফুটিয়ে অসাড় করে দেয় এবং কুঠুরির মধ্যে নিয়ে আসে। তারপর সেই অসাড় মাকড়সার পেটের এক পাশে তারা লম্বাটে ধরনের ডিম পাড়ে। এইভাবে তারা এক-একটি কুঠুরিতে দশ-পনেরোটা মাকড়সা এনে ডিম পাড়ার পর কুঠুরির মুখ বন্ধ করে দেয়। তারপর বাচ্চা জন্মানোর অপেক্ষা না করেই বাচ্চাদের জন্য খাদ্য জমিয়ে রেখে কুমোরে-পোকা ইচ্ছামতো অন্য জায়গায় চলে যায়।
দ্রষ্টব্য : পোকামাকড় সংক্রান্ত চর্চাকে বলা হয় ‘হেলমিনথোলজি’ (Helminthology)। এটি জীববিদ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা ।
নামকরণ
প্রবন্ধকাররা সাধারণত নামকরণের
মধ্য দিয়ে আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে পাঠকদের একটা আগাম ধারণা দিয়ে থাকেন। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও প্রবন্ধকার গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের ‘কুমোরে-পোকার বাসাবাড়ি' প্রবন্ধেও নামকরণের ক্ষেত্রে আলোচ্য বিষয়ের একটি ধারণা দেওয়া হয়েছে। 'কুমোরে-পোকার বাসাবাড়ি’ প্রবন্ধে লেখক একটি ক্ষুদ্র পতঙ্গের বাসাবাড়ি তৈরির প্রচেষ্টা, নির্মাণকৌশল, তাদের বংশবিস্তারের সঙ্গে বাসাবাড়ি নির্মাণের সম্পর্ক, শিকারের পদ্ধতি, খাদ্যসঞ্চয় ও আচার-আচরণ সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্য সহজসরল ভাষায় লিখেছেন। লেখকের পর্যবেক্ষণ শক্তি ও অনুসন্ধানের ইচ্ছা আলোচ্য প্রবন্ধটিতে প্রকাশিত হয়েছে। একটি
ক্ষুদ্র প্রাণীর জীবনের নানান বিষয়কে তিনি সুন্দরভাবে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। তাই বলা যায়, কুমোরে-পোকার বাসাকে কেন্দ্র করে
লেখা এই প্রবন্ধটির নামকরণ যথাযথ ও সার্থক হয়েছে।
১.নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
'হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর
১.১ গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য বাংলা ভাষায় কী ধরনের লেখালেখির জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন ?
উত্তর: গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য বাংলা ভাষায় প্রকৃতি ও প্রাণীজগতের ওপর বিজ্ঞান বিষয়ক লেখালেখির জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন।
১.২ তাঁর লেখা একটি বইয়ের নাম লেখো।
উত্তর: গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের লেখা একটি বই হল 'বাংলার কীটপতঙ্গ'।
২ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো ।
২.১ কুমোরে-পোকার চেহারাটি কেমন?
উত্তর:: কুমোরে-পোকার শরীর লিকলিকে সরু হয়। এদের শরীরে মাঝখানের বোঁটার মতো সরু অংশটি হলুদ হলেও সমগ্র গায়ের রং মিশমিশে কালো।
২.২ কুমোরে-পোকা কী দিয়ে বাসা বানায়?
উত্তর:: কুমোরে-পোকা ভেজা মাটি বা কাদামাটি দিয়ে বাসা বানায় ।
২.৩ কোনো অদৃশ্য স্থানে কুমোরে-পোকা বাসা বাঁধছে—তা কীভাবে বোঝা যায় ?
উত্তর: কুমোরে-পোকা বাসা বাঁধার সময় ভিজে মাটির ডেলাগুলিকে বাছাই করা জায়গায় লম্বা করে চেপে বসিয়ে দেয়। ওই সময় তারা
তীক্ষ্ণস্বরে একটানা গুনগুন শব্দ করতে থাকে। এই শব্দ শুনেই বোঝা যায়, কুমোরে-পোকা নিশ্চয় কাছাকাছি কোথাও বাসা বাঁধছে।
২.৪ মাকড়সা দেখলেই কুমোরে-পোকা কী করে ?
উত্তর: মাকড়সা দেখলেই কুমোরে-পোকা ছুটে গিয়ে তার ঘাড় কামড়ে ধরে, কিন্তু তাকে একেবারে মেরে ফেলে না। মাকড়সার
শরীরে হুল ফুটিয়ে তারা এক ধরনের বিষ ঢেলে দেয়। একবার হুল ফুটিয়েই কুমোরে-পোকা কিন্তু ক্ষান্ত হয় না। কোনো কোনো মাকড়সাকে পাঁচ-সাতবার পর্যন্ত হুল ফোটাতে থাকে। এর ফলে মাকড়সাটির মৃত্যু না হলেও মাকড়সাটি একেবারে অসাড় হয়ে যায়।
এরপর ওই অসাড় মাকড়সাটিকে কুমোরে-পোকা তার তৈরি করা কুঠুরির মধ্যে নিয়ে এসে চিত করে রাখে। তারপর তার পেটের একপাশে লম্বাটে ধরনের একটি ডিম পাড়ে।
৩. নীচের বিশেষ্য শব্দগুলিকে বিশেষণ এবং বিশেষণ শব্দগুলিকে বিশেষ্য করো: লম্বাটে, স্থান, নির্বাচিত, নিৰ্মাণ, সঞ্চিত ।
উত্তর: লম্বাটে (বিণ) – লম্বা (বি)
স্থান (বি)—স্থানীয় (বিণ)
নির্মাণ (বি) নির্মিত (বিণ)
নির্বাচিত (বিণ) – নির্বাচন (বি)
সজ্জিত (বিণ) – সঞ্চয় (বি)
৪. নীচের বাক্যগুলি থেকে অনুসর্গ খুঁজে বের করো।
৪.১ বাসা তৈরির জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজতে বের হয়।
উত্তর: অনুসর্গ—জন্য।
৪.২ সেই স্থান থেকে নির্বাচিত স্থানে যাতায়াত করে রাস্তা চিনে নেয়।
উত্তর: অনুসর্গ—থেকে।
৪,৩ সেই স্থানে কাদামাটি চাপা দিয়ে দেখেছি।
উত্তর: অনুসর্গ—দিয়ে।
৫. উপযুক্ত প্রতিশব্দ পাঠ থেকে খুঁজে লেখো: নির্মাণ, উপযোগী, ভর্তি, সন্ধান, ক্ষান্ত ৷
উত্তর: নির্মাণ—তৈরি
উপযোগী—উপযুক্ত
ভর্তি—পূর্ণ
সন্ধান—অন্বেষণ
ক্ষান্ত—নিরস্ত
৬. তুমি প্রতিদিন পিঁপড়ে, মৌমাছি, মাকড়সা প্রভৃতি কীটপতঙ্গ তোমার চারপাশে দেখতে পাও। তাঁদের মধ্যে কোনো একটিকে পর্যবেক্ষণ করো, আর তার চেহারা, স্বভাব, বাসা বানানোর কৌশল ইত্যাদি খাতায় লেখো ।
উত্তর: আমি আমার চারপাশে যে কীটপতঙ্গগুলি দেখেছি, তাদের মধ্যে মৌমাছিকে পর্যবেক্ষণ করে নীচের তথ্যগুলি পেয়েছি—
কীট-পতঙ্গের নাম- মৌমাছি।
কোথায় দেখেছ-বাড়ির পাশে কলকে ফুল গাছে।
চেহারা/ গায়ের রং- মৌমাছির গায়ের রং বাদামি, তার সঙ্গে কালোও মেশানো থাকে। এদের তিন জোড়া পা, দু-জোড়া ডানা থাকে। একটি হুল থাকে।
কীভাবে চলে - মৌমাছি তার ডানার সাহায্যে উড়ে চলে।
কী খায় - ফুলে ফুলে ঘুরে ঘুরে ফুলের মধু খায়।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য- মৌমাছি দল বেঁধে বসবাস করে। এরা সারাদিন অক্লান্তভাবে ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করে এবং বাসায় এনে বিশেষ পদ্ধতিতে জমা করে।
বাসাটি দেখতে কেমন- বাসাটি দেখতে ছয়কোণবিশিষ্ট, লম্বাটে হয় এবং
গাছের ডাল বা বাড়ির কোনো অংশ থেকে
ঝুলে থাকে। বাসাটি আকৃতিতে বেশ বড়ো,
সেখানে অসংখ্য কুঠুরি থাকে। এদের
বাসাকে 'মৌমাছির চাক' বলা হয়।
কীভাবে বাসা বানায় - কোনো স্থানে বাসা বাঁধতে হলে মৌমাছিরা দলবেঁধে একসঙ্গে ঘুরে ফিরে দেখে জায়গাটি পছন্দ করে। তারপর তাদের
মুখনিঃসৃত একপ্রকার মোমজাতীয় সাদাটে
পদার্থ দিয়ে বাসা তৈরির কাজ শুরু করে।
বাসাটিতে অসংখ্য কুঠুরি থাকে, যাতে তারা মধু জমিয়ে রাখে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে
মৌমাছির সংখ্যা বাড়তে থাকে। ফলে
তাদের বাসাও আকারে বড়ো হতে থাকে।
৭. গঠনগতভাবে কোনটি কী ধরনের বাক্য লেখো।
৭.১ ইতিমধ্যে মাটি শুকিয়ে বাসা শক্ত হয়ে গেছে।
উত্তর: সরল বাক্য।
৭.২ একবার হল ফাটিয়ে নিরস্ত হয় না।
উত্তর: সরল বাক্য।
৭. কাজেই এ থেকে মনে হয় যে, কুমোরে-পোকা ইচ্ছামতো ডিম পাড়বার সময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
উত্তর: জটিল বাক্য।
৭.৪ ভিজা মাটির উপর বসে এবং লেজ নাচাতে নাচাতে এদিক- ওদিক ঘুরেফিরে দেখে।
উত্তর: যৌগিক বাক্য।
৮. নীচের প্রশ্নগুলির নিজের ভাষায় উত্তর লেখো।
৮.১ কুমোরে-পোকার বাসাবাড়িটি দেখতে কেমন ?
উত্তর: বাইরে থেকে কুমোরে-পোকার বাসাবাড়িটি দেখতে অনেকটা লম্বাটে শুকনো মাটির ডেলার মতন। কুমোরে-পোকার বাসাটি লম্বায় প্রায় সওয়া ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। বাসার ভিতরের দিকে লম্বাটে ধরনের কুঠুরি থাকে।
৮.২ কুমোরে-পোকা বাসা বানানোর প্রস্তুতি কীভাবে নেয় ?
উত্তর: কুমোরে-পোকার ডিম পাড়ার সময় উপস্থিত হলেই তারা বাসা তৈরির প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। দু-চার দিন ধরে ঘুরে ঘুরে তারা বাসা তৈরির উপযুক্ত জায়গা খুঁজে বের করে। কোনো-একটি বিশেষ জায়গা মনে ধরলে তারা বারবার এসে সেই জায়গাটিকে ভালো করে পরীক্ষা করে দেখে। তারপর কিছুটা দূর পর্যন্ত উড়ে গিয়ে ফিরে এসে আবার ওই জায়গাটিকে পরীক্ষা করে দেখে। জায়গাটি পছন্দ হলে বাসা তৈরির জন্য কুমোরে-পোকার কাদামাটির প্রয়োজন হয়। যতটা কাছাকাছি সম্ভব জায়গা থেকে কাদামাটি জোগাড় করে এক একটি কুটুরি তৈরি করতেও কুমোরে-পোকার দু-দিন কেটে যায়। কোনো জায়গায় কাদামাটির খোঁজ পেলে তারা সেখান থেকে বাসা তৈরির জন্য বেছে নেওয়া জায়গাটিতে বারবার যাতায়াত করে রাস্তাটি ভালোভাবে চিনে নেয়।
৮.৩ কুমোরে-পোকার বাসা বানানোর প্রক্রিয়াটি নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: শুরুর কথা: কুমোরে-পোকার বাসা বানানোর পদ্ধতিটি বেশ কষ্টকর ও সময়সাপেক্ষ। এটি বেশ কয়েকটি ধাপের মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণ হয়ে থাকে।
উপযুক্ত জায়গা খোঁজা: একটি কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, কুমোরে-পোকা শুধু ডিম পাড়ার সময় হলেই বাসা তৈরি করে। বাসা তৈরির শুরুর দিকে তারা উপযুক্ত জায়গা খুঁজে
নেয়।
কাদামাটি সংগ্রহ: পছন্দসই জায়গা পাওয়ার পর তারা মোটামুটি চল্লিশ-পঞ্চাশ গজ কিংবা সর্বোচ্চ দেড়শো-দুশো গজ দূরত্বের মধ্যের নালা, জলাশয় প্রভৃতি জায়গা থেকে কাদামাটি সংগ্রহ করে। মাটির ডেলা বসানো: কুমোরে পোকারা কাদামাটি সংগ্রহের সময় ছোট্ট ছোট্ট মটরদানার মতো মাটির ডেলাগুলিকে মুখে করে নিয়ে আসে। তারপর তারা চোয়ালের সাহায্যে সেগুলিকে চেপে ধরে দেয়ালের গায়ে আধখানা চাকার আকারে একটার পর একটা।বসিয়ে দেয়।
কুঠুরি গাঁথা: এইসময় তারা একরকম তীক্ষ্ণ গুনগু আওয়াজ করতে থাকে। এইভাবে প্রায় সওয়া এক ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের এক- একটি কুঠুরি গেঁথে তোলা হয়।
মুখের লালা দিয়ে মসৃণ করা: কুঠুরি তৈরি হলে কুমোরে-পোকা তার ভেতর দিকটি মুখের লালা দিয়ে মসৃণ করে তোলে।
মাকড়সা শিকার: এরপর তারা মাকড়সা শিকার করে এনে কুঠুরিতে রেখে সেই অসাড় মাকড়সাটি।পেটের একপাশে ডিম পাড়ে। ডিম পাড়া হলে তারা কুঠুরির মুখ বন্ধ করে দেয়।
৮.৪ “এইসব অসুবিধার জন্য অবশ্য বাসা নির্মাণে যথেষ্ট বিলম্ব ঘটে।”—কোন্ অসুবিধাগুলির কথা এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে?
উত্তর: (কুমোরে-পোকার বাসাবাড়ি' রচনায় বিজ্ঞানী গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য কুমোরে-পোকার জীবনযাত্রা, বাসাবাড়ি তৈরি, শিকার ধরা
এসব নানান খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরেছেন। লেখক কুমোরে-পোকাদের অত্যন্ত খুঁটিয়ে লক্ষ করে দেখেছেন, যদি কোনো কারশে
কুয়োরে-পোকার প্রায় তৈরি হয়ে যাওয়া বাসাটিকে বারবার সরিয়ে দেওয়া হয় বা তা নষ্ট হয়ে যায়, তবে তারা কাদামাটি নিয়ে এসে
আবার ওই একই জায়গায় বাসা তৈরি শুরু করে। এর ফলে বাসা।তৈরিতে তাদের অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। লেখকের মনে হয়েছে, কুমোরে-পোকা এরকম করে থাকে হয় সংস্কারের বশে নয়তো বুদ্ধি।কম থাকার জন্য। লেখক এগুলিকেই কুমোরে-পোকার বাসা তৈরির।ক্ষেত্রে অসুবিধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
৮.৫ কুমোরে-পোকার শিকার ধরার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করো। শিকারকে সে কীভাবে সংগ্রহ করে ?
উত্তর: শিকার ধরার উদ্দেশ্য: কুমোরে-পোকা অন্যান্য।কীটপতঙ্গের মতো নিজের খাদ্যসংগ্রহের জন্য শিকার করে না। এরা শিকার করে তাদের ভবিষ্যৎ বাচ্চাদের খাবার জোগানোর জন্য।
শিকার সংগ্রহের পদ্ধতি: মাকড়সা দেখলেই কুমোরে-পোকা।ছুটে গিয়ে তার ঘাড় চেপে ধরে বারবার হুল ফুটিয়ে বিষের সাহায্যে সেটিকে সম্পূর্ণ অসাড় করে দেয়। এরপর মাকড়সার সেই অসাড় দেহটিকে কুঠুরিতে নিয়ে আসে। নিজেদের তৈরি এক-একটা।কুঠুরিতে তারা প্রায় দশ-পনেরোটা করে মাকড়সা এনে জমা করে।
৮.৬ “বাসার আর কোনো খোঁজখবর নেয় না।”—কখন কুমোরে- পোকা তার বাসার আর কোনো খোঁজখবর নেয় না ?
উত্তর:: কুমোরে-পোকা প্রথমে কুঠুরি তৈরি করে সেখানে একটি অসাড় মাকড়সাকে চিত করে রেখে মাকড়সাটির পেটের একপাশে একটি ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার পরেই সে আবার নতুন করে মাকড়সা শিকারের জন্য বের হয়। এইভাবে দশ-পনেরোটা মাকড়সা শিকার করে কুঠুরির মধ্যে জমা করে কুমোরে-পোকা কুঠুরিটির মুখ বন্ধ করে দেয়। এরপর সেই কুঠুরির গায়েই দু-এক দিনের মধ্যে সে আর- একটি কুঠুরি নির্মাণ করে। একইভাবে সে ওই কুঠুরিটিতেও প্রায় দশ-
পনেরোটা মাকড়সা সংগ্রহ করে সেটির মুখ বন্ধ করে দেয়। একই।পদ্ধতিতে কুমোরে-পোকা তৃতীয় কুঠুরিটির নির্মাণও সম্পূর্ণ করে।
এইভাবে তারা এক-একটি বাসার মধ্যে তিন-চারটি কুঠুরি তৈরি করে।
শেষের কুঠুরিতে ডিম পাড়া হয়ে গেলে তারা আর বাচ্চা জন্মানোর।জন্য অপেক্ষা করে না, বাচ্চাদের জন্য খাবার মজুত রেখেই অন্য জায়গায় উড়ে চলে যায়। এরপর কুমোরে-পোকারা ওই বাসার আর।কোনো খোঁজখবর নেয় না ।
হাতে কলমের বাইরে আরও কিছু প্রশ্ন
১.নিচের প্রশ্নগুলি উত্তর দাও।
প্রশ্ন- কুমোরে-পোকার বাসাবাড়ি' রচনাংশটির লেখক হলেন— ক) গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য খ) গোপালচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (গ) গোপালচন্দ্র দে
উত্তর- গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য
প্রশ্ন- কুমোরে-পোকা বাসা নির্মাণের জন্য কতদূর থেকে মাটি সংগ্রহ করে থাকে?
(ক) ২০-৩০ গজ ₹খ) ৪০-৫০ গজ
৫০-৬০ গজ
উত্তর- ৪০-৫০ গজ
প্রশ্ন- কুমোরে-পোকা বাসা বাঁধে ক) গাছের ডালে (খ) বাড়ির দেয়ালে (গ)বাড়ির ছাদে
উত্তর- বাড়ির দেয়ালে
প্রশ্ন- কুমোরে-পোকার গায়ের রং- ক) সাদা খ লাল হলুদ ঘ) কালো
উত্তর- কালো
প্রশ্ন- কুমোরে-পোকার শরীরের মধ্যস্থলের বোঁটার মতো সরু অংশের রং সবুজ / সাদা / নীল / হলুদ
উত্তর- হলুদ
প্রশ্ন- কুমোরে-পোকার বাসা তৈরির প্রধান উপকরণ কী?
উত্তর- কুমোরে-পোকার বাসা তৈরির প্রধান উপকরণ হল কাদামাটি।
প্রশ্ন-কুমোরে-পোকা কখন বাসা তৈরি করে?
উত্তর-- ডিম পাড়ার সময় হলে কুমোরে-পোকা বাসা তৈরি করে।
প্রশ্ন- কুমোরে-পোকা একটি কুঠুরিতে ক-টি করে ডিম পাড়ে ?
উত্তর- কুমোরে-পোকা একটি কুঠুরিতে একটি মাত্র ডিম পাড়ে।
প্রশ্ন-একটি বাসার মধ্যে কুমোরে-পোকা সাধারণত কটি কুঠুরি নির্মাণ করে?
উত্তর-- একটি বাসার মধ্যে কুমোরে-পোকা সাধারণত চার-পাঁচটি কুঠুরি নির্মাণ করে।
প্রশ্ন- কুমোরে-পোকাগুলো দেখতে কেমন?
অথবা-কুমোরে-পোকার গায়ের রং কেমন হয় ?
উত্তর- কুমোরে পোকাগুলির দেহ মিশমিশে কালো রঙের ও লিকলিকে সরু, মাঝখানের বোঁটার মতো অংশটি হলদে।
প্রশ্ন- একটি কুঠুরি তৈরি হওয়ার পর সাধারণত কুমোরে-পোকা কী করে?
উত্তর- একটি কুঠুরি তৈরি হওয়ার পর কুমোরে-পোকা সেখানে উপযুক্ত পরিমাণ খাদ্য অর্থাৎ পোকামাকড় ভরতি করে। তাতে একটি ডিম পেড়ে কাদা দিয়ে ওই কুঠুরির মুখ বন্ধ করে দেয়। এরপর পাশ দিয়ে একটি নতুন কুঠুরি তৈরি করতে শুরু করে।
“প্রশ্ন- ডিম পাড়বার সময় হলেই এরা বাসা তৈরি করার জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজতে বের হয়।”–‘এরা কারা? তারা উপযুক্ত স্থান কীভাবে নির্বাচন করে ?
উত্তর- গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের লেখা 'কুমোরে-পোকার বাসাবাড়ি’ রচনাংশে ‘এরা’ বলতে কুমোরে-পোকাদের বোঝানো হয়েছে।
কুমোরে-পোকারা ডিম পাড়ার জন্য উড়ে উড়ে বিভিন্ন জায়গা দেখে তাদের বাসা বানানোর স্থান নির্বাচন করে। এর জন্য তারা বারবার ঘুরে স্থানটি পরীক্ষা করে।
প্রশ্ন- কুমোরে-পোকার বাসাবাড়িটি দেখতে কেমন হয় ? একটি বাসাবাড়ি নির্মাণ করতে তাকে কীরকম পরিশ্রম করতে হয় তা লেখো।
উত্তর- ঘরের আনাচেকানাচে বা দেয়ালের গায়ে নির্মিত কুমোরে-পোকার বাসাবাড়িটি এবড়ো-খেবড়ো শুকনো মাটির ডেলার মতো দেখতে হয়। কুমোরে-পোকা বাসা বাড়ি তৈরি করতে এদিক-ওদিক খুঁজে মনের মতো স্থান নির্বাচন করে। তারপর তারা তার আশেপাশে ঘুরে জায়গাটা পরীক্ষা করে। তারা আশেপাশে চল্লিশ-পঞ্চাশ গজ, কখনো-কখনো দেড়-দুশো গজের মধ্যে থেকে কাদামাটি সংগ্রহ করে বাসা নির্মাণ করে।
প্রশ্ন- কোন ঘটনা থেকে বোঝা যায় কুমোরে-পোকা ইচ্ছেমতো তাদের ডিম পাড়ার সময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে?
উত্তর→ কুমোরে-পোকা একটি কুঠুরি তৈরি হয়ে গেলেই উপযুক্ত খাদ্য ভরতি করে তাতে ডিম পাড়ে এবং তার মুখ বন্ধ করে দেয়। তারপর আর-একটি কুঠুরি নির্মাণ করে তাতে আর-একটি ডিম পাড়ে। এভাবে চার-পাঁচটি কুঠুরি নির্মাণ করে সে গুলিতেও ডিম পাড়ে। এর থেকেই বোঝা যায় যে কুমোরে-পোকা ইচ্ছেমতো তাদের ডিম পাড়ার সময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
.
প্রশ্ন- কুমোরে পোকা কিভাবে শিকার ধরে?
উত্তর- কুমোরে-পোৱা কোনো মাকড়সা দেখতে পেলেই ছুটে গিয়ে তার ঘাড় কামড়ে যারে। কিন্তু সেটাকে একেবারে মেরে ফেলে না। শরীরে হুল ফুটিয়ে চেলে নেয়। এভাবে সে পাঁচ-সাতবার হুল ফোটায়। এরপর সে সেই অসাড় মাকড়সাটাকে নিয়ে নতুনবানানো কুচুরির মধ্যে হাজির হয়।
