মন ভালো করা || শক্তি চট্টোপাধ্যায় || ষষ্ঠ শ্রেণি || হাতে কলমে প্রশ্নের
![]() |
মন-ভালো-করা
শক্তি চট্টোপাধ্যায়
ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা
প্রশ্ন- মন ভালো করা কবিতায় সারসংক্ষেপ আলোচনা করো।
উত্তর-কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় তাঁর মন-ভালো করা শীর্ষক কবিতায় মাছরাঙা পাখির গায়ের রঙের সঙ্গে মন ভালো করা রোদের আশ্চর্য মিল লক্ষ করে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কবির মনে হয়েছে, মন ভালো করা এই রোদ্দুর কেন মাছরাঙার পায়ের মতো এত বর্ণময়, এত সুন্দর। এবং কেনই উজ্জ্বল রোদ্দুরের রঙের সঙ্গে মাছরাঙাটির গায়ের রঙের এত মিল। দিনের নানা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রোদ্দুর যেমন লাল,হলুদ, সবুজ আভাযুক্ত নানান রং ধরে, মাছরাঙা পাখির গায়েও তেমনই নানান রং দেখতে পাওয়া যায়। মাছরাঙা পাখিটির রঙিন পায়ে আলো পড়ে পিছলে যায়। এই সময় অল্প হাওয়াতে গাছের পাতাও নড়ে ওঠে। তাঁর মনে হয়, সেই হাওয়ার ছোঁয়া যেন মাছরাঙার শরীরেও লাগে।
প্রশ্ন - মন ভালো করা কবিতায় নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো।
উত্তর: নামকরণ কবিতার একটি বিশেষ অংশ। আলোচ্য কবিতাটি কবি শক্তি চট্টোপাধায় একটি মাছরাঙা পাখির সৌন্দর্যকে অবলম্বন করে লিখেছেন। কবি বলেছেন যে, সূর্যের ঝলমলে আলো যেমন মন ভালো করে দেয়, তেমনই মাছরাঙার বর্ণময় সৌন্দর্য ও।মনকে আনন্দ দেয়। সূর্যের আলো বা রৌদ্রে সাতটা রং থাকে। মাছরাঙা পাখিও বহু রঙে রঙিন। এই রং কোথাও তীব্র আবার কোথাও স্নিগ্ধ। গাছের পাতারা যেমন বাতাসে দোল খায়, তেমনই মাছরাঙা
পাখিটার গায়েও বাতাস লেগে তাকে দুলিয়ে দেয়। তখন মাছরাঙার রঙের বাহার কবির মনকে ভরিয়ে তোলে। কবিতাটির কেন্দ্রে রয়েছে মাছরাঙা পাখিটি। তবু প্রকৃতির রঙের বাহার কেমন করে কবির মন ভালো করে দেয়—তা-ই এই কবিতায় প্রধান হয়ে উঠেছে।
কবিতাটিতে তিনবার মন ভালো করা' শব্দগুলির ব্যবহার কবির সেই মনোভাবকেই ফুটিয়ে তুলেছে। তাই আলোচ্য কবিতাটির 'মন ভালো-করা' নামটি যথাযোগ্য ও সার্থক বলে মনে হয়।
‘হাতেকলে প্রশ্নের উত্তর
১.নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
১.১ শক্তি চট্টোপাধ্যায় কোন কলেজের ছাত্র ছিলেন?
উত্তর: শক্তি চট্টোপাধ্যায় কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র ছিলেন।
১.২ তাঁর রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর: তাঁর রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থ হল 'ধর্মে আছি জিরাফেও আছি' এবং ‘যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো?'।
২. নীচের শব্দগুলির বিপরীতার্থক শব্দ লিখে তা দিয়ে বাক্য রচনা করো: হ্রস্ব, খর, শান্ত ।
উত্তর:
শব্দ > বিপরীত শব্দ
হ্রস্ব > দীর্ঘ > সকালবেলায় ছায়া দীর্ঘ হয় ।
খর > মৃদু > মৃদু আলোতে। ভালো দেখা যায় না।
শান্ত > চঞ্চল > রিমি খুব চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে
৩. নীচের শব্দগুলি কোন্ মূল শব্দ থেকে এসেছে।লেখো: রোদ্দুর, গা ।
উত্তর: রোদ্দুর—রৌদ্র (মূল শব্দ) > রোদ্দুর।
গা—গাত্র (মূল শব্দ) > গা।
করে
৪......স্বাধীন বাক্যে প্রয়োগ করো ।
উত্তর:
চলাফেরা দীর্ঘদিন ধরে চলাফেরা না করার ফলে বৃদ্ধ অতুলবাবু এখন হাঁটতেই পারেন না।
মাথামুণ্ডু রাজুর কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বোঝা যায় না।
বৃষ্টিবাদল বৃষ্টিবাদলের দিনে বাড়ি থেকে ছাতা নিয়ে বেরোনো উচিত। নদনদী বর্ষাকালে নদনদীর জল বেড়ে যায়।
সঙ্গীসাথি ছোটোবেলার সঙ্গীসাথিরা সবাই এখন দূরে চলে গেছে।
৫ 'মন-ভালো-করা', 'নীল-নীলান্ত'-র মতো একাধিক শব্দবন্ধ তৈরি করো ।
উত্তর: ‘মন-ভালো-করা'-র মতো শব্দবন্ধের উদাহরণ—‘ঘর-আলো- করা’, ‘মুখ-ভার-করা’, ‘চোখ-বড়ো-করা’, ‘হাড়-হিম-করা’ ইত্যাদি।
→ ‘নীল-নীলান্ত’র মতো শব্দবন্ধের উদাহরণ—শাপ-শাপান্ত, বাপ- বাপান্ত, দূর-দূরান্ত, ভর-ভরন্ত ইত্যাদি।
৬. গদ্যে লেখো: “মন-ভালো-করা রোদ্দুর কেন / মাছরাঙাটির গায়ের মতন?”
উত্তর: মন-ভালো-করা রোদ্দুর মাছরাঙাটির গায়ের মতন কেন?
৭. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো ।
৭.১ কবিতায় কবিমনে কোন্ কোন্ প্রশ্ন জেগেছে তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: আলোচ্য কবিতাটিতে মন-ভালো-করা রোদ্দুরকে দেখে কবির মনে হয়েছে মাছরাঙার উজ্জ্বল রঙের কথা। প্রথমেই তাঁর মন প্রশ্ন জেগেছে, মন-ভালো-করা রোদ্দুর কেন মাছরাঙার গায়ের মতন। আসলে কবি জানেন, রোদ্দুর বা সূর্যের আলোই প্রকৃতির সব রঙের উৎস। সেই জন্য কবি সহজেই মাছরাঙার গায়ের রঙে সূর্যের আলোর উপস্থিতি অনুভব করতে পেরেছেন। এভাবেই তিনি মন-ভালো-করা রোদ্দুর আর মাছরাঙার গায়ের রঙের মধ্যেকার এত মিলের কার খুঁজে পেয়েছেন। এই সূত্রেই তাঁর মনে অন্য একটি প্রশ্ন জেগেছে। তাঁর মনে হয়েছে, রোদ্দুরের মধ্যে যেমন কখনও তীব্রতার কখনও স্নিগ্ধতার প্রকাশ, তেমনই মাছরাঙার গায়ের রংও কখনও উজ্জ্বল কখনও স্নিগ্ধ কেন? কেন তাতে লাল, নীল, হলুদ, সবুজের সমারোহ? এভাবেই মাছরাঙার সৌন্দর্য আর মন ভালো করা রোদ্দুরের নানান মিল কবির মনকে নানান প্রশ্নে আলোড়িত করেছে।
৭.২ এই মন ভালো-করা রোদ্দুরকে কবি কীসের সঙ্গে তুলনা করেছেন?
উত্তর: কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় ‘মন ভালো করা’ কবিতায় রোদ্দুরকে মাছরাঙা পাখির গায়ের রঙের সঙ্গে তুলনা করেছেন। মাছরাঙা পাখির
রঙের বাহার যেমন মনকে ভালোলাগায় ভরিয়ে দেয়, তেমনই রোদ্দুরের শোভাও কবির মন ভালো করে দেয়। মাছরাঙার গায়ের রং যেমন একইসঙ্গে উজ্জ্বল ও শান্ত, রোদ্দুরের তীব্রতাও তেমনই কখনও বেশি কখনও কম। মাছরাঙার গায়ের পালকে যেমন লাল- হলুদ-সবুজ রঙের আশ্চর্য সমারোহ, তেমনই রোদ্দুরেও রয়েছে অনেক রং।
৭.৩ মাছরাঙা পাখির রং কবির চোখে কীভাবে ধরা পড়েছে?
উত্তর: মাছরাঙা পাখির গায়ের রঙের বাহারি সৌন্দর্য আমাদের সকলেরই দেখা। কবির দৃষ্টিতে মাছরাঙার গায়ের রং রোদ্দুরের মতোই উজ্জ্বল ও শান্ত রূপে ধরা দিয়েছে। ছোটোবড়ো পালকে ঢাকা মাছরাঙার শরীরে লাল-নীল-হলুদ সবুজ রঙের সমাবেশ লক্ষ করেছেন কবি। কবির মনে হয়েছে, মাছরাঙার গায়ে আলো ও হাওয়া পড়ে তাকে আরও সুন্দর করে তুলেছে।
৭.৪ গাছের ডালে বসা মাছরাঙা পাখিটি কীভাবে কবিকল্পনাকে প্রভাবিত করেছে তা বুঝিয়ে দাও ৷
উত্তর: আলোচ্য কবিতায় কবি মন-ভালো-করা রোদ্দুরের সঙ্গে মাছরাঙা পাখির গায়ের রঙের তুলনা করেছেন। দিনের বিভিন্ন সময়ে রোদের উত্তাপ বাড়ে-কমে, পরিবর্তন আসে আলোছায়ার খেলাতেও।
সেরকমই মাছরাঙার শরীরের রং কখনও উজ্জ্বল আবার কখনও স্নিগ্ধ দেখায়। কবিকল্পনায় মাছরাঙার গায়ের রং রোদ্দুরের রঙের সঙ্গে
তাল মিলিয়ে বদলায়। রোদ্দুর যেন রঙের বাহারে মাছরাঙার পালকের লাল-নীল-হলুদ-সবুজ রঙের সঙ্গে সমানভাবে পাল্লা দেয়। কবি রোদ্দুরকে কখনও সাজতে দেখেছেন লাল রঙে, কখনো-বা হলুদে, আবার কখনো-বা বনের সবুজ স্নিগ্ধতায়। এইভাবে কবির কল্পনায় গাছের ডালে বসে থাকা মাছরাঙা পাখির গায়ের রং আর রোদ্দুর একাকার হয়ে গেছে।
আর ও কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন: - ‘হ্রস্ব' কথাটির অর্থ কী?
উত্তর- 'হ্রস্ব' কথাটির অর্থ ছোটো।
প্রশ্ন: -. মন-ভালো-করা রোদ্দুর কার গায়ের মতো ?
উত্তর- মন-ভালো-করা' রোদ্দুর মাছরাঙা পাখির গায়ের মতো।
প্রশ্ন: - শক্তি চট্টোপাধ্যায় কী কী পুরস্কার পেয়েছেন?
উত্তর- কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় আনন্দ পুরস্কার ও সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন।
প্রশ্ন: -'মন ভালো করা' কবিতায় কী কী রঙের উল্লেখ আছে?
উত্তর- মন-ভালো-করা' কবিতার নীল, লাল, হরিদ্রা (হলুদ), সবুজাভ বা সবুজ আভাযুক্ত—এই চারটি রঙের উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রশ্ন: - ‘মন ভালো করা’ কবিতায় মাছরাঙাটির গায়ের রং কীরকম?
উত্তর- মন ভালো করা' কবিতায় মাছরাঙা পাখিটির গায়ের রঙের মধ্যে রয়েছে নীল, লাল, সবুজ ও হলুদ রঙের মিশেল। এক কথায়, ‘মন-ভালো করা’ রোদ্দুরের মতোই।
প্রশ্ন: - ‘মন-ভালো-করা’ কবিতাটি কার লেখা?
উত্তর- মন-ভালো-করা' কবিতাটি কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের লেখা।
প্রশ্ন: - রোদ্দুরকে মন-ভালো-করা বলে কেন উল্লেখ করেছেন কবি?
উত্তর- সাতটি রঙে রঙিন সূর্যের আলো বা রোদ্দুরের স্পর্শে মন সতেজ ও আনন্দময় হয়ে ওঠে। সেজন্যই কবি রোদ্দুরকে মন ভালো করা বলে উল্লেখ করেছেন।
প্রশ্ন: - মন-ভালো-করা রোদ্দুরকে কার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর- মন ভালো করা রোদ্দুরকে মাছরাঙা পাখির গায়ের রঙের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
প্রশ্ন- দুটি করে সমার্থক শব্দ লেখো: মাছ, রাত, আঁখি,
পৃথিবী।
উত্তর: মাছ—মৎস্য, মীন
→ আঁখি — চোখ, নয়ন
ব্যাখ্যা ও প্রয়োগের সামর্থ্য
→ রাত—নিশি, রজনি
→ পৃথিবী—ধরা, বসুন্ধরা
