রাজা কে বলব অন্ধকার আকাশের ধ্রুবতারাটিকে চিনিয়ে দাও। উক্তিটি মর্মার্থ ব্যাখ্যা করো। ডাকঘর নাটক || দ্বাদশ শ্রেণী - school book solver

Friday, 28 November 2025

রাজা কে বলব অন্ধকার আকাশের ধ্রুবতারাটিকে চিনিয়ে দাও। উক্তিটি মর্মার্থ ব্যাখ্যা করো। ডাকঘর নাটক || দ্বাদশ শ্রেণী

 


প্রশ্ন: “রাজাকে বলব অন্ধকার আকাশের ধ্রুবতারাটিকে চিনিয়ে দাও।”—মমার্থ ব্যাখ্যা করো।


উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ডাকঘর' নাটকের কেন্দ্রে আছে এক কল্পনাবিলাসী বালক অমল। নাটকের শুরু থেকেই দেখি বাত, পিত্ত, শ্লেষ্মা শরীরে গৃহবন্দি অমল মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় ব্যাকুল। গৃহের বন্ধনে হাঁফিয়ে উঠেছে অমল; তাই
5 যারা মুক্ত পৃথিবীতে অবাধে বিচরণশীল, তাদের সকলেরই প্রতিরূপ হয়ে উঠতে চায় অমল। কখনও সে কাঠবিড়ালী হতে চায়, কখনও-বা কাজ খুঁজতে যাওয়া পথিক — আবার কখনও দইওয়ালা, ভিক্ষুক, ডাক-হরকরা; এমনকি ফকির বর্ণিত ক্রৌপদ্বীপের পাখি হতেও স্বপ্ন দেখে সে। কিন্তু ফকিরের বাধনবিহীন বাঁধনের মায়ামন্ত্রে সে ধীরে ধীরে ঘরের কোণে বসে থাকার দুঃখ ভুলে যায়, রাজার চিঠি আসবে; শুরু হয় প্রতীক্ষার প্রহর গোনা—“সে অপেক্ষা এত মধুর, এত সুন্দর যে-সে কথা মনে করলেই আমি খুব খুশি হয়ে চুপ করে বসে থাকতে পারি।” অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান ঘটে, রাজকবিরাজ ও দূতের আগমন বহন করে আনে রাজার আবির্ভাব বার্তা, মহাযাত্রার যাত্রী আজ অমল, অসীমের সন্ধানে পরম রাজাকে সঙ্গী করে সে যাত্রার সূচনা।
পার্থিব সব আলো মুছে গিয়ে সে যাত্রার সূচনা — অন্ধকারের ধ্যানতন্ময়তাতে হবে মহামিলন; আর সেই মহাযাত্রার সাক্ষী হয়ে থাকবে ধ্রুবতারা। তাই রাজকবিরাজ যখন জানতে চেয়েছে রাজার সঙ্গে বেরোতে পারবে কিনা, তখন অমল অকপটে জানিয়েছে পারবে। রাজার চোখ দিয়ে ধ্রুবতারা অর্থাৎ চিরন্তন সত্যের খোঁজ নেবে অমল। সে সত্য বোধহয় কতবার তার সামনে এসেছে কিন্তু সে চিনতে পারেনি। আজ চিনে নেবার সময় এসেছে—তাই চিনে নেবে সে।

প্রশ্ন:  “অমন করে ডাকাডাকি করছ কেন? আমাকে ভয় কর না তুমি?”—তাকে ভয় করার কারণ কী?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ডাকঘর' নাটকে প্রহরী অমলকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলেছে। অমলের সঙ্গে দ্বিতীয় যে ব্যক্তির পরিচয় হয় সে হল প্রহরী। তাকে ভয় পাওয়ার দুটি কারণ ভাবা যেতে পারে।
প্রথমত : প্রহরী রাজকর্মচারী। 'ডাকঘর' নাটক যখন লেখা হচ্ছে তখন ইংরেজ আমল। ইংরেজদের অধীনস্ত কর্মচারীরাই দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। সাধারণ মানুষের ওপর তাদের অত্যাচারের সীমা ছিল না। 'ডাকঘর' রচনাকালে ইংরেজদের সর্বময় কর্তা ছিলেন রাজা পঞ্চম জর্জ। ইংরেজরা অঞ্চলের খবরাখবর পাওয়ার জন্য প্রহরী বা চৌকিদার-এর মতো কর্মচারী নিযুক্ত করত। তাদের কাজই হল কোথায় কী হচ্ছে সে খবর পৌঁছে দেওয়া। সে কারণে এহেন কর্মচারীদের মানুষজন সমীহ করে চলতেন এবং এক অর্থে তোয়াজ করে চলতেন। কোনো ভুলচুক হলেই প্রহরী রাজার কাছে নালিশ করত। অমলকে সেরকম ভয় দেখিয়েছে প্রহরী, “একেবারে রাজার কাছে যদি নিয়ে যাই?” প্রহরী আশা করেছিল অন্য সবাই যেমন তাকে ভয় পায়, তেমনই এ শিশুটিও তাকে ভয় পাবে।
দ্বিতীয়ত : এই প্রহরী যেন স্বয়ং ভগবানের দূত। প্রহরা দেওয়ার কাজই করে এমন নয়, তার প্রধান কাজ প্রহরে প্রহরে ঘণ্টা বাজিয়ে মানুষজনকে সময় সম্পর্কে সচেতন করে দেওয়া। অমলের কথার সূত্রে জানতে পারি, সারাদিন ধরে তাকে এই কাজ করতে হয়। দুপুরবেলা সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে অথবা ঘরের প্রদীপ নিভে যাওয়া রাত্রিবেলায়ও তার ঘণ্টা বাজে। ঘণ্টা সবসময় বেজে চলেছে, কিন্তু এই ঘণ্টার আওয়াজ সবাই সবসময় শুনতে পায় না, যার কানে এই ঘণ্টার আওয়াজ পৌঁছোয় তাকে ইহজনমের সমস্ত কাজ ফেলে যেতেই হবে অন্যলোকে। সে যেন ভগবান অর্থাৎ যমরাজের দূত। মৃত্যুকে কোনো মানুষ ভয় পায় না, সেকারণে প্রহরী ও তার ঘণ্টার আওয়াজকে ভয় পায় অমল ভয় পায় না, সে মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছে, কামনা করছে। তার পক্ষেই তো প্রহরীকে ভয় না পাওয়াই স্বাভাবিক। অমল নিজেই চায় “নিয়ে যাও না আমাকে।” এ কারণেই অমল প্রহরীকে ভয় পায় না।