ডাকঘর নাটক অবলম্বনে ক্রৌঞ্চদ্বীপের বর্ণনা দাও । ডাকঘর নাটক ||★ দ্বাদশ শ্রেণী
প্রশ্ন' ‘ডাকঘর' নাটক অবলম্বনে ক্রৌঞ্চদ্বীপের বর্ণনা দাও।
উত্তর : বাস্তব পৃথিবীতে ক্রৌঞদ্বীপ নামের কোনো দ্বীপ আছে বলে জানা নেই । এটি একটি পুরাণ কথিত দ্বীপ। মেরু পর্বতের পশ্চিম দিকে অবস্থিত এই দ্বীপটি পঞ্চপাণ্ডবের জ্যেষ্ঠপুত্র যুধিষ্ঠিরের শাসনাধীন ছিল। তার চারপাশে ক্ষীরোদ সাগর। বড়ো-ছোটো নানারকম পাহাড় আছে, সেসব পাহাড় রত্নখচিত। এদের কয়েকটির নাম মহাক্রৌঞ, গোমন্ত, বামন, অন্ধকার, মৈনাক, গোবিন্দ-নিবিড় প্রভৃতি। বেশ কিছু নদীর নাম পাওয়া যায়, যেমন—অভয়া, অমৃতৌঘা, আর্যকা, তীর্থবতী, রূপবতী, পবিত্রবতী এবং শুক্লা। যদিও পরবর্তী ক্ষেত্রে নামগুলি এক এক পুরাণে নানারকম পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।‘ডাকঘর' নাটকে ঠাকুরদার বলা ক্রৌঞ্জদ্বীপের বর্ণনা পুরাণ কথিত ক্রৌঞদ্বীপের তুলনায় অন্য তাৎপর্য বহন করে আনতে পারে। ঠাকুরদা তাঁর ভ্রমণ পিপাসু মন আর বাস্তবের সম্ভাব্য তার সূত্রে এক কল্পজগৎ গড়ে তুলতে পারেন। ‘ক্রৌঞ’শব্দের একটি অর্থ কোঁচবক পাখি। আবার, রামায়ণে আছে—
ক্রৌঞকে শরবিদ্ধ করার সূত্রেই বাল্মীকির মুখে প্রথম শ্লোকের জন্ম হয়েছিল।
রবীন্দ্রনাথ কি এইসব অনুষঙ্গের সূত্র ধরে আমাদের নিয়ে যাচ্ছেন কল্পনার সেই অতিরেকের দিকে।
“আমি চঞ্চল হে
আমি সুদূরের পিয়াসী”—
এই সুদূরের পিপাসাই ‘ডাকঘর' নাটকটির মূলসুর আর অমল সেই বিদেহী সুরের অশ্রুতে সংগীত। সুদূরের প্রতি তীব্র আকুতি রবীন্দ্র সাহিত্যের অন্যতম সুর। গৃহকোণে নয় তাই অচলায়তনের প্রাণচঞ্চলতার প্রতীক পঙ্গুকের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়— দূরে কোথায় দূরে দূরে মন বেড়ায় গো ঘুরে ঘুরে।' আর অমল সুদূরের প্রতি তীব্র ব্যাকুলতা প্রকাশ করে। দূরের পথিকদের পথপানে সে পথ চেয়ে বসে থাকে। বিদেশিদের তার ভারী ভালো লাগে। তার নিহিত কারণটি হল বিদেশিদের মধ্যে একটা সুদূরের গন্ধ আছে। অমলের এই সুদূর পিপাসার চোখ এড়ায় না ঠাকুরদার-তার রোগজ্বালা পীড়িত বাস্তবে তাই। ঠাকুরদা মুক্তির হাওয়া বহন করে আনেন। কঠোর শাসনবেড়া বাস্তব থেকে। যাকে কল্পিত ক্রৌঞ্চদ্বীপে নিয়ে যায়। দূর সমুদ্রের ধারে যে ক্রৌঞ্চদ্বীপ সেখানে নীলরঙা পাহাড় আর অজস্র পাখির মেলা। লক্ষণীয় পাখি, নীলপাহাড় দুটিই মুক্তির অনুষঙ্গ বহনকারী। সূর্যাস্তের রক্তিম আভা, পাহাড়ের নীল, পাখির. শ্যামলিমা সব মিলিয়ে রংবাহারী সেই দ্বীপে কল্পচারণায় অমলের ধূসর জীবনও রঙিন হয়ে ওঠে। অমল নিজের অবচেতনায় ওই দ্বীপের পাখিগুলির সঙ্গে নিজেকে একীভূত করে। পাখি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে সে।
