চুপ কর অবিশ্বাসী । ডাকঘর নাটক অবলম্বনে উক্তিটি ব্যাখ্যা কর ডাকঘর নাটক।। দ্বাদশ শ্রেণী - school book solver

Sunday, 23 November 2025

চুপ কর অবিশ্বাসী । ডাকঘর নাটক অবলম্বনে উক্তিটি ব্যাখ্যা কর ডাকঘর নাটক।। দ্বাদশ শ্রেণী

 



প্রশ্ন:  “চুপ করো অবিশ্বাসী”-‘ডাকঘর' নাটক অবলম্বনে ব্যাখ্যা করো।

উত্তর : বিশ্ববরেণ্য কবি-লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর' নাটকে এ কথা বলেছে ঠাকুরদা, মাধবদত্তকে লক্ষ করে। অমল যখন পরম মুক্তির পথে, রাজকবিরাজের সান্নিধ্যে যখন তার সব আগল টুটে গেছে, বন্ধ ঘরের দরজা-জানালা খুলে গেছে, তখন ঘরে প্রদীপের আলো নিভিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা চলছে কারণ—
“একেলা যেতাম যে প্রদীপ হাতে,
নিভেছে তাহার শিখা
জানি মনে তারার ভাষাতে
রয়েছে ঠিকানা লিখা”
অমলের মুক্তির এই রহস্য, মাধবদত্তের মতো বৈষয়িক লোকের পক্ষে বোঝার কথা না। আনন্দময় বিশ্বাত্মার সাথে মিলিত হওয়ার যে আনন্দ তা উপলব্ধি করার মতো মন তার নেই, সাংসারিক লাভ-ক্ষতির হিসাব মেলাতেই সে ব্যস্ত। তার সাধারণ দৃষ্টিতে রাজা আসবেন অতএব তাঁর কাছে ভালোমতো কিছু পার্থিব চাওয়া চেয়ে নিতে হবে, এই অবধি জানে সে। তাই শাস্তিহারা, দুঃখহারা, প্রাণভরা মৃত্যু যখন অমলকে আলিঙ্গন করে, তখন ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে মাধবদত্ত। লক্ষণগুলিতে অমঙ্গলের ছায়াপাত দেখে সে, তাই দিব্যদৃষ্টির অধিকারী ঠাকুরদা তাকে অবিশ্বাসী বলে তিরস্কার করে। ঠিক একই কথা শোনা যায় স্বয়ং নাট্যকারের মুখেও। ‘ডাকঘর’ রচনার দীর্ঘ সাতাশ বছর পর এক চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লেখেন—“ডাকঘরের অমল মরছে বলে সন্দেহ যারা করে তারা অবিশ্বাসী—রাজবৈদ্যের হাতে কেউ মরে না—কবিরাজটা ওকে মারতে বসেছিল বটে।”
আসলে ‘ডাকঘর’-এর শেষে অমলের মৃত্যু প্রতীকী। এ মৃত্যু আনন্দময় ঈশ্বরের সঙ্গে মিলিত হওয়ার পথ মাত্র।


প্রশ্ন: “মনে হচ্ছে যেন সব বেদনা চলে গেছে।”—এমন কথা বলার কারণ কী?
উত্তর : রবীন্দ্রনাথের 'ডাকঘর' নাটকের শুরুতেই দেখি কবিরাজের কঠোর নিদানে ওষ্ঠাগত প্রাণ অমলের তীব্র মুক্তিপিপাসা। তার এই মুক্তিপিপাসা, ঠাকুরদার অজানা যাদুমন্ত্রে ধীরে ধীরে প্রশমিত হয়। বাত, পিত্ত, শ্লেষ্মা তার শরীরে চরমাকার ধারণ করে। কিন্তু রাজার চিঠির প্রত্যাশায় সে এতটাই ব্যাকুল যে পার্থিব জ্বালাযন্ত্রণা রোগব্যাধি সকলই তার অতন্দ্র প্রত্যাশার কাছে হার মানে। সে নিজ লক্ষ্যে এতটাই অনড় যে ব্যাকুল চিত্তে ফকিরকে প্রশ্ন করে বসে—“রাজার চিঠি কী আসবে না”। অবশেষে কবিরাজের আগমন ঘটে।
কবিরাজ অমলকে প্রশ্ন করে “সে কেমন বোধ করছে”। অমল জানায় এখন তার মধ্যে আর কোনো বেদনা নেই। পরমাত্মার সন্ধানে সংসারের নানান শাসন ও বাধার পীড়নে ক্লান্ত অমল এখন জীবন্মুক্ত। তাই কোনো বেদনা নেই। কোনো ক্লান্তি নেই—পরম পাওয়ার সন্ধানে সে পরমানন্দ—তাই এত বেদনা সবই আজ ফাঁকি। সব বেদনা চলে যাওয়ার লক্ষণ ভালো নয় বলে কবিরাজের মনে হয়েছে এবং ফলশ্রুতি অমল চির ঘুমের দেশে চলে গেছে।