চারিদিকে সমস্তই যে বন্ধ। খুলে দাও, খুলে দাও, যত দ্বার জানলা আছে, সব খুলে দাও । উক্তিটি ব্যাখ্যা করো। ডাকঘর নাটক দ্বাদশ শ্রেণী - school book solver

Saturday, 22 November 2025

চারিদিকে সমস্তই যে বন্ধ। খুলে দাও, খুলে দাও, যত দ্বার জানলা আছে, সব খুলে দাও । উক্তিটি ব্যাখ্যা করো। ডাকঘর নাটক দ্বাদশ শ্রেণী

 


প্রশ্ন: “চারিদিকে সমস্তই যে বন্ধ! খুলে দাও, খুলে দাও যত দ্বার জানালা আছে সব খুলে দাও!”-ব্যাখ্যা করো।

উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ডাকঘর' নাটকে এ কথা বলেছেন রাজকবিরাজ।
এ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র অমল। শারীরিক ব্যাধির কারণে কবিরাজ তাকে।বাইরে বেরোতে বারণ করেছেন। কারণ বাত, পিত্ত, শ্লেষ্মা ওইটুকু শরীরে এমনভাবে প্রকূপিত যে শরতের রৌদ্র ও হাওয়া' দুই-ই ওই বালকের পক্ষে ‘বিষবৎ” অথচ মুক্ত পৃথিবী অমলকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। শরতের মধ্যে যে চলি চলি ভাব তার প্রতিচ্ছবি দেখা যায় অমলের মধ্যেও। নীল আকাশের
অনেক দূর থেকে পাখির ডাক, পাহাড়ের ডাক, বয়ে যাওয়া ঝরনার কলধ্বনি তাকে বাইরে আসতে বলে। এভাবেই যখন অমল পরম মুক্তির পথে চলে তখন আর একবার কবিরাজ তাকে পার্থিব বন্ধনে ধরে রাখার বৃথা চেষ্টা করেন, অমলের ঘরে আলো বাতাস আসার সব পথ বন্ধ করেন। অথচ অমলের ব্যাধির সঠিক নিরাময়ের একমাত্র রাস্তা জানেন রাজকবিরাজ।
বিশ্বপ্রকৃতিতে যিনি আনন্দ স্বরূপ, তাঁর সঙ্গে মিলিত হতে পারলেই তো মুক্তি ঘটে, বাহ্যিক রোগের উপশম হয়। দ্বার রুদ্ধ করে মুক্তি ঘটে না বরং মুক্ত আত্মা সেখানে হাঁফিয়ে ওঠে। রাজকবিরাজ এখানে রাজদূত। যিনি অমলের সঙ্গে বিশ্বাত্মার মিলনের পথটি সুগম করে দিলেন। সমস্ত বাঁধন গেল টুটে—আর“প্রথম রৌদ্রের আল সর্বদেহে হোক সঞ্চারিত শিরায় শিরায়”
রাজকবিরাজ এসেছেন রাত্রিবেলা; ধ্রুবতারার ভাষায় যেখানে আঁকা রয়েছে গমন পথের নিশানা। অমলের সব রোগব্যাধির নিরসন ঘটেছে। পরম মুক্তির সন্ধান পেয়েছে সে।

প্রশ্ন :- “সুধা তোমাকে ভোলেনি”—উদ্ধৃত অংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর' নাটকে এ কথা বলছে সুধা। নাটকের শেষে দেখা যায় অমল পরম মুক্তির পথে – মৃত্যু তাকে হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে পরম প্রেমময় ঈশ্বরের কাছে। সমস্ত বাঁধন আজ খুলে গেছে, রুদ্ধ ঘরের দেয়াল গেছে টুটে। আর ঠিক এইসময় সুধা একরাশ ফুল নিয়ে এসেছে। ঠিক এর আগের দৃশ্যে দেখি সুধার দেওয়া প্রতিশ্রুতি, অমলকে সে ভুলবে না এবং তারজন্য সে ফুল নিয়ে আসবে।
ডাকঘর’ তত্ত্বনাটক। এ নাটকে সুধা মূর্তিমতী প্রেম; অমলের সঙ্গে পার্থিব জীবনের চিরবিচ্ছেদের পথে সে একমাত্র বাধা। অমলের মিলন ঘটেছে পরমাত্মার সঙ্গে কিন্তু এখানেই শেষ নয়। পরমাত্মার সঙ্গে মিলিত হলেই জীবাত্মার বিলোপ ঘটে না। এই রূপ, রস, গন্ধ, বর্ণ পরিবৃত প্রেমময় ধরনিতেই চলে তার নবলীলা। সে অসীমের আহ্বান শুনবে তথাপি তা চেতনায় নয় অচেতনে, ঘুমের ঘোরে। ঘুম ভাঙলে সে সুধা ধরনিকেই আবার নতুন করে পাবে। তার শিয়রে জাগ্রত থাকবে চিরন্তন প্রেম—সুধা যার প্রতীক। তাই অমর আত্মা আর চিরন্তন প্রেম, একে অপরকে ভুলবে না কোনোদিন।