সময় বসে নেই । সময় কেবলই চলে যাচ্ছে। উদিত অংশটি তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। ডাকঘর নাটক। দ্বাদশ শ্রেণী - school book solver

Friday, 21 November 2025

সময় বসে নেই । সময় কেবলই চলে যাচ্ছে। উদিত অংশটি তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। ডাকঘর নাটক। দ্বাদশ শ্রেণী

 



প্রশ্ন: “সময় বসে নেই, সময় কেবলই চলে যাচ্ছে।”—উদ্ধৃত অংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তর : কবিশ্রেষ্ঠ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর' নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে অমল ও প্রহরী কথা বলার সময় অমল প্রহরীর কাছে “তোমার ঘণ্টা কেন বাজে” জানতে চাইলে প্রহরী উদ্ধৃত উক্তিটি করেছিল। সময় কারও জন্য বসে থাকে না, সে অবিরাম গতিতে অনন্তকাল ধরে বয়ে যাচ্ছে। মানুষ শুধুমাত্র সময়ের তালে তালে তাল মেলাতে চেষ্টা করে, যখনই তাল মেলাতে পারে না তখনই দলছুট হয়ে যায়। অর্থাৎ ইহজনমের সময়ের সাথে পা মেলানোর তামিল শেষ হয়ে যায়।
সময় কারও জন্য অপেক্ষা করে না, বরং সময়ের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হয়। সময়ের কাজ সময়ে শেষ করা উচিত, নইলে আমরা পিছিয়ে পড়ি। যারা পিছিয়ে পড়ে তাদেরকেই যেন প্রহরী প্রহরে প্রহরে ঘণ্টা বাজিয়ে সময় সম্পর্কে সচেতন করে। প্রহরী সারাদিন ধরে সময়ের কাজ সময়ে করে। দুপুর বেলা সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে, অথবা ঘরের প্রদীপ নিভে যাওয়া রাত্রিবেলায়ও তার ঘণ্টা বাজে। সময়ের তালে তালে তার ঘণ্টা বেজে যায়।
প্রশ্ন: পৃথিবীটা কথা কইতে পারে না, তাই অমনি করে নীল আকাশে হাত তুলে ডাকছে।”—উদ্ধৃত অংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ডাকঘর' নাটকের প্রথম দৃশ্যে অমল এবং মাধবদত্ত দু-জন কথা বলছে, তখন অমল তার পিসেমশায় অর্থাৎ মাধবদত্তকে উদ্দেশ্য করে এমন মন্তব্য করেছে।
অমল রোগাক্রান্ত বলে বড়োরা তাকে ঘরে বদ্ধ করে রেখেছে, কিছু মে চায় মুক্ত পৃথিবীর মধ্যে মিলিত হতে। বিশ্বের বাধাহীন, বন্ধনহীন, সীমাহীন
চরাচরের মধ্যে নিজেকে মিশিয়ে দেওয়ার একান্ত ইচ্ছা মানবাত্মার সহজাত আকাঙ্ক্ষা। এই মিলনের মধ্য দিয়ে তার অসীমত্ববোধ পূর্ণ হয়, তার মধ্য থেক খুঁজে পায় সার্থকতার পথ। সমস্ত সৃষ্টি পরমাত্মার আনন্দ স্বরূপ, নিখিল বিশ্ব তার বিচিত্র সৌন্দর্যের মহা-মহোৎসব ক্ষেত্র। এই আনন্দরূপ পরমাত্মার সাথে মিলিত হতে পারলেই মানবাত্মার চরম আধ্যাত্মিক সফলতা। নিষ্পাপ, নবীন অমলিন মানবাত্মা এটাকেই ভীষণভাবে আকাঙ্ক্ষা করে। তাই অমল বিশ্বে বিচিত্র আনন্দময় প্রকাশের মধ্যে অনির্বচনীয় কৌতূহল ও রহস্যের সন্ধান পায়, এদের সাথে নিজেকে মিলিয়ে দেওয়ার জন্য তার নিরন্তর কামনা। বয়স্করা তাকে ঘরে বন্ধ করে রেখেছে ঠিকই, কিন্তু অমলের মন পড়ে আছে বাইরের পৃথিবীর পানে। নীল আকাশ যেন তাকে ডাকে, অনেক দূরে গৃহকোণে তাকে বদ্ধ করে রাখলেও সে ডাক অমল যেন শুনতে পায় তার জানালার পাশে বসে। এ কথার প্রতিধ্বনি শোনা যায় 'ছিন্নপত্র'-এর একটি পত্রে–“এক সময় যখন আমি এই পৃথিবীর সঙ্গে এক হয়েছিলুম, যখন আমার উপর সবুজ ঘাস উঠত, শরতের আলো পড়ত, সূর্যকিরণে আমার সুদূরবিস্তৃত শ্যামল অঙ্গের প্রত্যেক রোমকূপ থেকে যৌবনের সুগন্ধি উত্তাপ উত্থিত হতে থাকত, আমি কতো দূরদূরান্তর দেশদেশান্তরের জলস্থল পর্বত ব্যাপ্ত করে উজ্জ্বল আকাশের নিচে নিস্তব্ধভাবে শুয়ে পড়ে থাকতুম, তখন শরৎসূর্যলোকে আমার বৃহৎ সর্বাঙ্গে যে একটি আনন্দরস, যে একটি জীবনীশক্তি অত্যন্ত অব্যক্ত অর্ধচেতন এবং অত্যন্ত বৃহৎভাবে সঞ্চারিত হতে থাকত, তাই যেন খানিকটা মনে পড়ে।”