মাধব দত্ত অমলকে কোন কোন বিষয়ে নিষেধ করেছেন ? ডাকঘর নাটক || দ্বাদশ শ্রেণী - school book solver

Thursday, 20 November 2025

মাধব দত্ত অমলকে কোন কোন বিষয়ে নিষেধ করেছেন ? ডাকঘর নাটক || দ্বাদশ শ্রেণী

 



প্রশ্ন :  মাধবদত্ত অমলকে কোন্ কোন্ বিষয়ে নিষেধ করেছেন? 
উত্তর : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ডাকঘর' নাটকে অমলের পালক-পিতা মাধবদত্ত সন্তানের দীর্ঘায়ু কামনায় কবিরাজের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করেছেন। অমল যখন মাধবদত্তের কাছে জানতে চায়—“আমি কি ওই উঠোনটাতেও যেতে পারব না” বা “যেখানে ভাঙা ডালের খুদগুলি দুই হাতে তুলে নিয়ে লেজের ওপর ভর দিয়ে বসে কাঠবিড়ালি কুটুস কুটুস করে খাচ্ছে—ওখানে আমি যেতে পারব না?” এখানে অমল যা যা বলেছে সবই ঘরের বাইরে যাওয়ার কথা। মাধবদত্ত একটাই উত্তর দিয়েছেন 'না বাবা'। অর্থাৎ অমলকে বাঁচিয়ে রাখার একমাত্র উপায় যেহেতু শরতের রৌদ্র আর বাতাস থেকে বাঁচিয়ে ঘরে বন্ধ করে রাখা, সেজন্য স্বাভাবিকভাবেই উত্তর এসেছে 'না'।

অমলের একমাত্র ইচ্ছা পৃথিবীর যত সৌন্দর্য আছে সবই দেখে বেড়াবে, কিন্তু পিসেমশায়-এর ইচ্ছা বড়ো বড়ো পুথি পড়ে নামকরা পণ্ডিত বানাবে। তাঁরা যেহেতু ঘরের মধ্যে থেকে সারাক্ষণ বই পড়ে, সেজন্য অমলকে দিয়ে বই পড়ানো হবে, পাশাপাশি ঘরে বন্দি করে রাখাও যাবে। অমলের ইচ্ছা পাহাড় পার হয়ে অজানা সৌন্দর্যের টানে চলে যেতে, কিন্তু মাধবদত্ত সেখানেও বাদ সেজেছেন। তিনি বলেন - "পাহাড়টা যখন মস্ত
বেড়ার মতো উঁচু হয়ে আছে তখন তো বুঝতে হবে ওটা পেরিয়ে যাওয়া বারণ—নইলে এত বড়ো-বড়ো পাথর জড়ো করে এত বড়ো একটা কাণ্ড করার দরকার কী ছিল।” অমলের প্রকৃতির সাথে একাত্ম হওয়ার ভাবনার বিষয়েও বাধা দিতে চেয়েছেন।


প্রশ্ন: “আমার মতো খেপা আমি কালকে একজনকে দেখেছিলুম। -অমলের দেখা খেপা মানুষটির বর্ণনা দাও। 
উত্তর : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ডাকঘর' নাটকে অমলের প্রশ্নগুলি শুনে মাধবদত্তের মনে হয়েছে, অমলকে ঘরে আটকে রাখার জন্য তার খেপামি বেড়ে গিয়েছে। সেই খেপামির চোখ দিয়ে সে অপর একজন মানুষকে খুঁজে পেয়েছে। তার বর্ণনা দিতে গিয়ে অমল বলেছে লোকটির কাঁধে একটি বাঁশের লাঠি, লাঠির আগায় একটি পুঁটুলি বাঁধা এবং বাঁ হাতে একটি ঘটি। তার পাথে
পুরোনো একজোড়া নাগরা জুতো, সেটা পায়ে দিয়েই ডুমুরগাছের তলা দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝরনার কাছে লাঠিসহ পুঁটুলি নামিয়ে হাত পা ধুয়ে নিয়ে পুঁটুলি থেকে ছাতু বার করে জল দিয়ে মেখে খেয়ে নিল। খাওয়া শেষ করে আবার পুঁটুলি বেঁধে ঘাড়ে নিয়ে পায়ের কাপড় গুটিয়ে ঝরনার জলের ভিতর নেমে জল কেটে কেটে এক সময় পার হয়ে চলে গেল। অমলও ওই মানুষটির মতো করতে চায়। তার ইচ্ছা, “কত বাঁকা বাঁকা ঝরনার জলে আমি পা ডুবিয়ে ডুবিয়ে পার হতে হতে চলে যাব”—দুপুরবেলায় সবাই যখন ঘরের দরজা বন্ধ করে শুয়ে আছে তখন আমি কোথায় কতদূরে কেবল কাজ খুঁজে খুঁজে বেড়াতে বেড়াতে চলে যাব”—অর্থাৎ পুঁটুলি বাঁধা বাঁশের লাঠি কাঁধে লোকটির মতো কোনো নিরুদ্দেশের পথে কাজ খুঁজতে চলে যাব। অমলও চায় লোকটির মতো প্রকৃতির কোলে কাজ করতে।