ঘরে বসে থাকলেই বা এত কিসের দুঃখ ? উক্তিটি তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। ডাকঘর নাটক || দ্বাদশ শ্রেণী - school book solver

Wednesday, 19 November 2025

ঘরে বসে থাকলেই বা এত কিসের দুঃখ ? উক্তিটি তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। ডাকঘর নাটক || দ্বাদশ শ্রেণী

 



প্রশ্ন:  “ঘরে বসে থাকলেই বা এত কিসের দুঃখ”-- উক্তিটির তাৎপর্য লেখো।

উত্তর : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ডাকঘর' নাটকে ঠাকুরদা অমলকে এই কথাগুলি বলেছিলেন। বদ্ধ জীবন থেকে অমল বাইরের চলমান জগতের সঙ্গী হতে চায়, কিন্তু শারীরিক ব্যাধির কারণে তাকে ঘরে আটকে থাকতে হয়—তখন অত্যন্ত কষ্ট অনুভব করে সে। চার দেয়ালের বাঁধন যখন তার কাছে কারাগার স্বরূপ মনে হয় তখন এই বন্দিদশা থেকে মানসমুক্তির পথ দেখান ঠাকুরদা। অমল মুক্ত মানবাত্মা। সে পরমাত্মার সঙ্গে মিলিত হতে চায়। এ মিলনেই তার কাঙ্ক্ষিত মুক্তি। কিন্তু “সহস্র বন্ধন মাঝে লভিব মুক্তির স্বাদ” অর্থাৎ মুক্তির আস্বাদ পেতে গেলে বন্ধনকেও স্বীকার করতে হবে। অসীমের আস্বাদ পেতে গেলে সীমার অনুভব দরকার। আর এ ভাবনা—অমলকে ভাবতে শেখান ঠাকুরদা। ঘরে বসে থাকাটাই যে দুঃখজনক নয়—তার মধ্যেও যে আনন্দ আছে তাই অমলকে বোঝান ঠাকুরদা। বন্ধন ও মুক্তির মধ্যে, সীমা ও অসীমের মধ্যে।সামঞ্জস্যের বক্তব্য বারবার রবীন্দ্রনাথের এই নাটকে প্রতিধ্বনিত হয়েছে 
প্রশ্ন;: “আকাশের তারাটির থেকে আলো আসুক”—‘ডাকঘর’ নাটকের আলোকে বক্তব্যটি পরিস্ফুট করো।
উত্তর : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের 'ডাকঘর' নাটকে 
কবিরাজ এ কথা বলেছেন । “ডাকঘর” নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে শয্যাগত অমলকে দেখার জন্য স্বয়ং রাজা রাজকবিরাজকে পাঠিয়েছেন। রাজকবিরাজের কোনো নামকরণ করেননি। রাজকবিরাজ এসেই অমলের ঘরের সমস্ত দরজা-জানালা খুলে দিয়েছেন, সমস্ত বদ্ধতার বন্ধন ছিন্ন করে দিয়েছেন। রাজকবিরাজের আগমনেই অমল যেন ভালো হয়ে উঠেছে, সে যেন ‘অন্ধকারের ওপারকার সব তারা' দেখতে পাচ্ছে। অর্থাৎ অমলের সমস্ত বন্ধন ছিঁড়ে মুক্ত হওয়ার সময় এসেছে, আর তার সেই পথ তৈরি করার জন্যই যেন রাজকবিরাজের আগমন। রাজা কখন আসবেন সে কথাও অমলকে রাজকবিরাজ জানান এবং এও জানান, “অর্ধরাত্রে যখন রাজা আসবেন তখন তুমি বিছানা ছেড়ে উঠে তাঁর সঙ্গে বেরোতে পারবে?” নাটকের শেষে যখন অমল সান্নিধ্য পেয়েছে রাজকবিরাজের, সমস্ত দরজা-জানালা খুলে দেওয়া হয়েছে, নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে সমস্ত আলো, তখন অমলের ঘুম এসেছে, পরম শান্তির ঘুম। ‘ডাকঘর' তত্ত্বনাটক; অমল এখানে রুদ্ধ

জীবাত্মা, সে মহামুক্তির পথযাত্রী। আনন্দময় পরমাত্মার ডাক এসেছে-মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অমল এবার পৌঁছে যাবে আনন্দলোকে। যেখানে যাওয়ার জন্য পার্থিব প্রদীপের আলো নিষ্প্রয়োজন। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নক্ষত্ররাজির যে পথে গমনাগমন—সেই পথে সেই আলোতে এখন অমলও যাত্রা শুরু করায় তাকে আলো যোগাবে আকাশের গ্রহরাজি। তাই দূর আকাশের তারার আলো আসবে তার পার্থিব কুঁড়েঘরে, দিব্যদৃষ্টি না-থাকলে যে আলোকে পথ চেনা যায় না। তাই কবির মনে হয়েছে আকাশের তারাটির থেকে আলো আসুক।