ডাকঘর নাটক অনুসরণে দইয়ালার গ্রামের পরিচয় দাও। ডাকঘর| || দ্বাদশ শ্রেণী
প্রশ্ন: ‘ডাকঘর' নাটক অনুসরণে দইওয়ালার গ্রামের পরিচয় দাও।
উত্তর : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর' নাটকে অমলের সাথে বাইরের যে-সমস্ত মানুষের পরিচয় হয়েছে, তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম পরিচয় হয় দইওয়ালার।
ডাকঘর নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যের শুরুই হয়েছে অমল ও দইওয়ালার কথোপকথন দিয়ে। দইওয়ালার পেশা গ্রামে গ্রামে দই ফেরি করা। রাস্তার পাশের ঘরের
জানালায় বসে অমল যখন শুনতে পায় ‘দই-দই-ভালো দই।' তখনই তাকে ডাক দেয় । প্রথমে তাদের ক্রেতা-বিক্রেতাধর্মী কথাবার্তা থেকে পরিচয়ের জগতে চলে আসে। দইওয়ালা বহুদূর গ্রাম থেকে রোজ দইয়ের পসরা নিয়ে আসে। তাদের গ্রামটি পাঁচমুড়া পাহাড়ের তলায়, শামলী নদীর ধারে। পাহাড়ের গায়ে সবুজ খেতে গোরুগুলি চরে বেড়ায়। তাদের পাড়ার নাম গোয়ালাপাড়া। এই নামটির সাথে দুধের সম্পর্ক জড়িত। গোয়ালাপাড়ার মেয়েরা শামলী নদী থেকে কলসিতে জল ভরে মাথায় করে বাড়ি নিয়ে যায়। অমলের কথা অনুযায়ী গোয়ালাপাড়ার মেয়েরা সবাই লাল শাড়ি পরে তা ঠিক নয়। তাদের গ্রামের রাস্তা লাল মোরামের, রাস্তার দু-পাশে পুরোনো কালের বড়ো বড়ো গাছ সারিবদ্ধভাবে আছে। দইওয়ালার কথা থেকে অনুমান করা যায় গ্রামের মেয়েরা ঘর-গৃহস্থালির কাজকর্ম করে, আর পুরুষেরা দূরের দূরের গ্রামে দই বেচে বেড়ায়। অমলের কল্পচোখে দইওয়ালার গ্রামের চিত্র অনেকটাই ফুটে ওঠে, কিন্তু কল্পনা ও বাস্তব দুটো একেবারে সমার্থক নয়। তাই বাস্তবের পথ দিয়ে দইওয়ালা তার গ্রামের বর্ণনা দিয়েছে। তাদের গ্রামের গোরুগুলিকে দাঁড় করিয়ে দুধ দোয়া হয় এবং তা থেকেই মেয়েরা সন্ধেবেলা দই পাতে। অর্থাৎ গ্রামের সমস্ত মানুষ দুগ্ধজাত পণ্যের কারবারে যুক্ত। দইওয়ালার গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, তার সামাজিক অবস্থান এবং অর্থনৈতিক চিত্র এভাবেই ‘ডাকঘর' নাটকটিতে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশ্ন: “আমাকে তোমার মতো ঐ রকম দই বেচতে শিখিয়ে দিয়ো৷”—অমল দই বেচা শিখতে চায় কেন ?
উত্তর : কবিগুরুর ‘ডাকঘর' নাটকের অমল প্রতিভাবান, মনোবিজ্ঞানে যাকে বলে gifted child। এসব শিশুর বৈশিষ্ট্যই হল সব কিছুতে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ করা। অমল এবং দইওয়ালার কথোপকথনের সময় অমল বেশ কিছু সূক্ষ্ম জিনিস কল্পনায় অনুভব করে। অমল যেহেতু রোগাক্রান্ত শিশু, কবিরাজ তাকে সারাদিন ঘরের মধ্যে বসে থাকতে বলেছে। কিন্তু অমল চায় ‘বিহঙ্গশিশুর’ মতো সর্বত্র ঘুরে বেড়াতে। দইওয়ালার কাজ গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়ানো। সারাদিন তার কাটে প্রকৃতির মধ্যে, নতুন নতুন মানুষের সাথে, যা অমলের ঐকান্তিক ইচ্ছা। সেই ইচ্ছাকে রূপায়িত করতে গেলে দই বেচতে শিখতে হবে বলে অমলের মনে হয়েছে।
দইওয়ালা যখন ‘দই-দই-ভালো দই' বলে ডাকতে ডাকতে যায়, সেই ডাকটা অমলের খুব ভালো লাগে। ওই ডাকের মধ্যে এক রকমের সুর আছে সেটাই শেখার; এটা সাধারণ মানুষের ধারণাতেও আসে না যে, কেজো কথার মধ্যেও
শিক্ষণীয় কিছু থাকে বলে। অমল যেহেতু অতি-কল্পনাপ্রবণ, তাই তার ধারণাতে ওই ডাকের আলাদা মাধুর্য বহন করে আনে। অমল সেটাও শিখতে চায়। অমল যদি দইওয়ালা হতে পারত তাহলে সে রোজগার করতে পারত। পাহাড়ের কোলে, নদীর পাড়ে, সবুজে ঘেরা গ্রামের প্রকৃতির কোলে নিজেকে মেলে ধরতে পারত। তাই অমলের একান্ত ইচ্ছা দই বেচতে শেখা, যা তার বদ্ধ জীবন থেকে মুক্তির আনন্দ বয়ে আনতে পারে।
