সবুজ জামা || অষ্টম শ্রেণী || হাতে কলমে প্রশ্নের উত্তর || SABUJ JAMA ||class 8 bangla || question answer
![]() |
অষ্টম শ্রেণী
সবুজ জামা
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
অধ্যায় ৫
উৎস: 'সবুজ জামা' কবিতাটি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘উলুখড়ের কবিতা”
গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।
নামকরণ: যে-কোনো সাহিত্যসৃষ্টির ক্ষেত্রেই নামকরণের একটি বিশেষ ভূমিকা আছে। নামকরণের মধ্য দিয়েই কবি তার পাঠকদের কবিতার বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা দিয়ে থাকেন। 'সবুজ জামা' কবিতায় কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সমাজ ও প্রকৃতিতে সবুজের সমারোহ দেখতে চান। সবুজ রং শুধু প্রকৃতির নয়, প্রাণেরও প্রতীক। এই কবিতায় প্রাণবন্ততা বোঝানোর জন্য কবি তোতাই নামের শিশুটিকে বেছে নিয়েছেন। পুথিগত শিক্ষার বদলে সে প্রকৃতির রূপকে ভালোবাসতে শিখবে, নিজের মধ্যে প্রকৃতিকে উপলব্ধি করতে শিখবে। দাদুর চশমার মতো নকল চোখে সে পৃথিবীকে দেখতে চাইবে না। স্বাভাবিকতাই হবে তার পছন্দ।
কৃত্রিম ও রংহীন সমাজের পরিবর্তে সে এক প্রাণবন্ত, সৃজনশীল সমাজের প্রতিনিধি হয়ে উঠবে। তাই কবিতার ‘সবুজ জামা' নামটি অর্থপূর্ণ ও সার্থক হয়ে উঠেছে।
কবি পরিচিতি: আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। প্রকৃতি, মানুষ ও
তুচ্ছাতিতুচ্ছ নানা ঘটনা তাঁর কবিতায় প্রাণ পেয়েছে। সমাজসচেতন কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতায় সমাজের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতার প্রকাশ লক্ষ করা যায়। রাজনৈতিক আন্দোলনে যোগ দিয়ে তিনি কারাবরণও করেছেন। অজস্র কাব্যগ্রন্থের প্রণেতা বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভক্তেরযোগ্য বইগুলির
মধ্যে রয়েছে— গ্রহচ্যুত',, রাণুর জন্য', 'লখিন্দর', 'ভিসা অফিসের সামনে' , 'মহাদেবের দুয়ার', মানুষের মুখ' , 'ভিয়েতনাম: ভারতবর্ষ' প্রভৃতি। এ ছাড়াও তিনি বহু কাব্যগ্রন্থের অনুবাদ করেছেন এবং পঁচিশেরও বেশি কবিতা-বুলেটিন সম্পাদনা করেছেন। তথাকথিত ‘ছোটো পত্রিকা'র কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কখনও বড়ো প্রতিষ্ঠানের সহায়তা না পেলেও বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তাঁর সমস্ত কবিতাই সংক্ষিপ্ত ও
সংকেতময়। ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে এই বিখ্যাত সাহিত্যিকের মৃত্যু হয়।
সারসংক্ষেপ: সবুজ জামা' কবিতায় কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রাণচঞ্চল এক নতুন যুগের শিশুদের গল্প শুনিয়েছেন। সেই নতুন যুগের শিশুদের প্রতিনিধি হল ছোট্ট ছেলে তোতাই। পুথিগত শিক্ষায় নয়, সে বেড়ে উঠতে চায় প্রকৃতির মাঝে, প্রকৃতির নিজস্ব শিক্ষায়। তাই সবুজ জামা গায়ে দিয়ে ছোট্ট তোতাই হয়ে উঠতে চায় গাছের মতো সবুজ ও তরতাজা। দাদুর মতো।চোখে চশমা দিয়ে সে দুনিয়াকে দেখতে চায় না। যা কিছু সহজ, স্বাভাবিক, তাকেই সে আপন করে পেতে চায়। এই কবিতায় বলতে চাওয়া হয়েছে, নকল মুখোশ খুলে প্রকৃতির সাথে নিজেকে মিলিয়ে নিতে পারলেই মানুষের জীবন সহজসরল, অনাবিল আনন্দে ভরে উঠবে। প্রকৃতির মতো মানুষও
নতুন সৃষ্টি করতে শিখবে।
'হাতেকলমে' অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর
১. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
১.১ বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কত খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
১.২ তাঁর রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো ।
উত্তর: বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থ হল 'গ্রহচ্যুত' ও 'ভিসা অফিসের সামনে।
২. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও।
২.১ তোতাইবাবুর সবুজ জামা চাই কেন?
উত্তর: তোতাইবাবু গাছের মতো সবুজ ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে চায়, তাই তার সবুজ জামা চাই।
২.২. সবুজ গাছেরা কোন্ পতঙ্গ পছন্দ করে ?
উত্তর:: সবুজ গাছেরা প্রজাপতি বা প্রজাপতির মতো রঙিন পতঙ্গ পছন্দ করে।
২.৩ সবুজ জামা আসলে কী ?
উত্তর: গাছেদের সবুজ পাতা যেমন তাদের প্রাণধারণে সাহায্যকারী, তেমনই তোতাইবাবুর সবুজ জামা হল তার প্রাণশক্তির প্রতীক।
২.৪ “এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তো খেলা”—এখানে কোন্ খেলার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: এখানে গাছেদের এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার সঙ্গে তুলনা করে শিশুদের একপায়ে ছুটে ছুটে খেলার কথা বলা হয়েছে।
২.৫ তোতাই সবুজ জামা পরলে কী কী ঘটনা ঘটবে ?
উত্তর: তোতাই সবুজ জামা পরলে তার কাছে প্রজাপতি এসে বসবে আর তার কোলে ঝরে পড়বে একটা, দুটো, তিনটে লাল-নীল ফুল ।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো ।
৩.১ “দাদু যেন কেমন, চশমা ছাড়া চোখে দেখে না।”—এই পক্তির মধ্যে ‘যেন' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে কেন? এইরকম আর কী কী শব্দ দিয়ে একই কাজ করা যায় ?
উত্তর: 'যেন' শব্দটি ব্যবহারের কারণ: সাধারণত তুলনামূলক অব্যয় হিসেবে ‘যেন' শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এখানে 'যেন' অব্যয় ব্যবহার করে কবি বোঝাতে চেয়েছেন, দাদু সেইসব মানুষের দলে, যারা চশমা ছাড়া কিছুই দেখতে পায় না। কবির মতে, এইসব মানুষ সহজ ও স্বাভাবিকভাবে
কোনো কিছুই গ্রহণ করতে পারে না।
> এইরকম শব্দের তালিকা: এইরকম অন্য তুলনামূলক শব্দগুলি হল:
মতো, ন্যায়, ইত্যাদি। যেমন, ভুতের মতো দাঁড়িয়ে আছ কেন? তিনি বৃক্ষের ন্যায় সহনশীল।
৩.২ 'সবুজ জামা' কবিতায় তোতাইয়ের সবুজ জামা চাওয়ার মাধ্যমে কবি কী বলতে চাইছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: 'সবুজ জামা' কবিতায় তোতাইয়ের সবুজ জামা চাওয়ার মাধ্যমে কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নতুন যুগের শিশু ও প্রকৃতির মধ্যে এক চমৎকার বন্ধন তৈরি করতে চেয়েছেন। তোতাইবাবু এখানে নতুন যুগের প্রতিনিধি সে সবুজ জামা গায়ে দিয়ে গাছের মতোই প্রাণবন্ত ও সৃজনশীল হয়ে উঠতে চায়। এর মধ্য দিয়ে কবি বোঝাতে চেয়েছেন, পুথিগত শিক্ষায় নয়, আগামী প্রজন্ম বেড়ে উঠুক প্রকৃতির মাঝে, প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মে। চোখে গতানুগতিকতার ঠুলি এঁটে তারা যেন দুনিয়াকে না দেখে। বরং তারা কৃত্রিমতার মুখোশ খুলে তাদের চারপাশের পৃথিবীর সঙ্গে সহজসরল সম্পর্ক গড়ে তুলুক, এটাই কবির কাম্য। তবেই এই পৃথিবী প্রজাপতি আর ফুলেদের মতো রঙিন হয়ে উঠবে। প্রকৃতির মতো মানুষও হয়ে উঠবে সৃজনশীল।
৪. নির্দেশ অনুসারে উত্তর দাও।
৪.১ 'ইস্কুল' শব্দটির ধ্বনিতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা লেখো এবং একইরকম আরও দুটি শব্দ লেখো।
উত্তর: ইংরেজি 'স্কুল' শব্দের শুরুতে যে যুক্তব্যঞ্জন আছে, উচ্চারণের সুবিধার জন্য তার আগে 'ই' স্বরধ্বনি এসেছে, অর্থাৎ এখানে 'আদিস্বরাগম' ঘটেছে।
স্কুল > ইস্কুল-এইরকম আরও দুটি উদাহরণ—
১. স্টেশন > ইস্টিশন, ২. স্টিমার > ইস্টিমার।
৪.২. ‘চোখ' শব্দটিকে ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করে অন্তত তিনটি বাক্য লেখো।
উত্তর: “চোখ” শব্দটিকে ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করে লেখা তিনটি বাক্য হল:
১. নজরে রাখা অর্থে > পরীক্ষার সময় স্কুল শিক্ষকরা সকলকে চোখে চোখে রাখেন।
২. ইশারা অর্থে > কাকু চোখ টিপতেই আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম।
৩. পছন্দ বা ঘৃণা অর্থে > প্রাইভেট কামাই করলে প্রাইভেটের মাস্টার অন্য চোখে দেখেন।
