পথের পাঁচালী || তৃতীয় পরীক্ষা প্রশ্নের উত্তর
![]() |
পথের পাঁচালী
তৃতীয় পরীক্ষা
অষ্টম শ্রেণী
প্রশ্ন:- ভোর হতে না হতেই দুর্গার অসুখের বাড়াবাড়ির কারণে সর্বজয়া কাকে ডাকতে গিয়েছিল ?
উত্তর- ভোর হতে না হতেই দুর্গার অসুখের বাড়াবাড়ির কারণে সর্বজয়া নীলমণি মুখুজ্যেকে ডাকতে গিয়েছিল।
প্রশ্ন:- কে তার খাতায় অপুকে গল্প লিখে দিতে বলেছিল ?
উত্তর- ভুবন মুখুজ্যের মেয়ে রানি একখানা ছোটো বাঁধানো খাতা অপুর হাতে দিয়ে তাকে তাতে গল্প লিখে দিতে বলেছিল।
প্রশ্ন:- দুর্গা কী রোগে মারা গিয়েছিল ?
উত্তর- দুর্গা দীর্ঘদিন ম্যালেরিয়া জ্বরে ভুগে পথ্যহীন, চিকিৎসাহীন অবস্থায় থেকে অবশেষে হার্টফেল করে মারা গিয়েছিল।
প্রশ্ন:-সর্বজয়া কোথায় কইমাছ পেয়েছিল?
উত্তর- রাতে প্রবল বৃষ্টির পরদিন সর্বজয়া বাঁশতলায়, একটা ভেসে-আসা কইমাছ পেয়েছিল।
প্রশ্ন:- চড়কপূজা কী?
উত্তর- চৈত্রমাসের সংক্রান্তিতে শিবের গাজন উৎসব উপলক্ষ্যে চড়কপূজা হয়, যা অপুদের গ্রামে মেলার আকার ধারণ করে।
প্রশ্ন:- অপু ইন্দুলেখার সঙ্গে কার মিল খুঁজে পেয়েছিল ?
উত্তর- অপু ইন্দুলেখার সঙ্গে তার দিদি দুর্গার মিল খুঁজে পেয়েছিল।
প্রশ্ন:- অজয় কোন্ পালাতে ‘নিয়তি' সাজত ?
উত্তর- অজয় 'পরশুরামের দর্প-সংহার' পালাতে নিয়তি সাজত।
প্রশ্ন:- অপু কীসের পার্ট করবে ভেবেছিল?
উত্তর- অপু জরির মুকুট মাথায় পরে তলোয়ার ঝুলিয়ে যুদ্ধরত সেনাপতির পার্ট করবে বলে ভেবেছিল।
প্রশ্ন:-“রইল ওইখানে, কেউ জানতে পারবে না কোনো কথা, ওখানে আর কে যাবে”–এখানে কোন জিনিসের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর- প্রশ্নে উদ্ধৃত জিনিসটা ছিল সেজোঠাকরুনের বাড়ি থেকে চুরি যাওয়া ছোট সোনার সিঁদুর কৌটো, যা অপু দুর্গার মৃত্যুর পর খুঁজে পেয়ে জঙ্গলের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
প্রশ্ন:- চড়কপুজোর আগের রাতে কোন পুজো হয় ?
উত্তর- চড়কপুজোর আগের রাতে হয় নীলপুজো।
প্রশ্ন:- বাবাকে অপু কৃপার পাত্র হিসেবে বিবেচনা করে কেন?
উত্তর- গ্রামে এত বড়ো যাত্রাদল আসছে কিন্তু অপুর বাবা সে বিষয়ে কিছুই জানে না, তাই সে বাবাকে কৃপার পাত্ররূপে বিবেচনা করে।
প্রশ্ন:- অপু কোথায় মাছ ধরতে বসে ?
উত্তর- সোনাডাঙা মাঠের নীচে ইছামতী নদীর ধারে ছাতিম গাছের তলায় অপু মাছ ধরতে বসে ।
প্রশ্ন:- “... অপেক্ষা মাত্র।”—অপুর একমাত্র অপেক্ষা কীসের জন্য ?
উত্তর- অপুর একমাত্র অপেক্ষা বড়ো হয়ে ওঠার জন্য। বড়ো হয়ে অপু জগৎ-জানার, মানুষ-জানার, মানুষ চেনার আনন্দ যজ্ঞে যোগ দেবে, মনে মনে তারই অপেক্ষায় থাকে সে।
প্রশ্ন:- অপু যাত্রাদলে কত টাকা মাইনে পেতে পারে বলে অজয় মনে করেছিল ?
উত্তর- অজয় মনে করেছিল অপু তার গানের গলার জন্য যাত্রার দলে অনায়াসে পনেরো টাকা মাইনে পেতে পারে।
প্রশ্ন:- দুর্গা মারা যাওয়ার আগে অপুর কাছে কোন্ ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল?
উত্তর- মারা যাওয়ার আগে দুর্গা তার আদরের ভাই অপুর কাছে রেলগাড়ি দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল।
প্রশ্ন:- দুর্গা টিনের বাক্সের খেলা না দেখে চলে যাচ্ছিল কেন?
উত্তর- দুর্গার কাছে খেলা দেখার পয়সা ছিল না বলে সে টিনের বাক্সের খেলা না দেখে চলে যাচ্ছিল।
প্রশ্ন:- হরিহর বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রথমে কোথায় গিয়েছিলেন?
উত্তর- হরিহর বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রথমে নদিয়ার গোয়াড়ি কৃল্পনগরে গিয়েছিলেন।
প্রশ্ন:- দুর্গার কোন্ শক্তির উপর অপুর শ্রদ্ধা ছিল না ?
উত্তর- দুর্গা অর্থাৎ তার দিদির শিল্পানুভূতি শক্তির উপর অপুর কোনো কালেই শ্রদ্ধা ছিল না।
প্রশ্ন:- “সর্বজয়া আর কোনোমতো চাপিতে পারিল না ... কাঁদিয়া উঠিল।”সর্বজয়া কার কাছে কীসের জন্য কাঁদিয়া উঠিল?
উত্তর- সর্বজয়া হরিহরের কাছে দুর্গার মৃত্যুসংবাদ প্রকাশ করে কেঁদে উঠেছিল।
প্রশ্ন:- “আমি কী করব, আমি তো আর বলিনি যাবার কথা ?”- কে কাকে কথাগুলি বলেছিল ?
উত্তর- অপু রানিকে প্রশ্নের উত্তরে উদ্ধৃত কথাগুলি বলেছিল।
প্রশ্ন:- রামকবচ লিখে হরিহর কার কাছ থেকে কত টাকা পেয়েছিল?
উত্তর- 'রামকবচ' লিখে হরিহর বেহারি ঘোষের শাশুড়ির কাছ থেকে তিন টাকা পেয়েছিল।
প্রশ্ন:- অপু হরিহরকে কোন্ বই বারবার কিনে আনতে বলেছিল।
উত্তর- অপু হরিহরকে 'পদ্মাপুরাণ' বইটি কিনে আনতে বলেছিল।
প্রশ্ন:- অজয় অপুর মাকে কোন্ গানটা শুনিয়েছিল।
উত্তর- অজয় অপুর মাকে 'কোথা ছেড়ে গেলি এ বন-কাস্তারে প্রাণপ্রিয় প্রাণ সাথি রে’গানটি শুনিয়েছিল।
প্রশ্ন:- অপুর দফতরের চরিত্রমালা' বইটির লেখক কে?
উত্তর- অপুর দফতরের চরিতমালা' বইটির লেখক হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
প্রশ্ন:- নীলমণি রায়ের বড়ো ছেলের নাম কী? সে কোন্ শ্রেণিতে পড়ে?
উত্তর- নীলমণি রায়ের বড়ো ছেলের নাম সুরেশ।
সুরেশ পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।
প্রশ্ন:- হরিহর রানাঘাটের রাজারে অপুর জন্য কী বই কিনেছিল ? তার মূল্য কত ছিল?
উত্তর- হরিহর রানাঘাটের বাজারে অপুর জন্য 'সচিত্র চণ্ডী মাহাত্ম্য বা। কালকেতু উপাখ্যান' বইটি কিনেছিল।
উল্লিখিত বইটির মূল্য ছিল ছয় আনা।
প্রশ্ন:- “রাজপুত্রের প্রতি সেনাপতির বিশ্বস্ততার নিদর্শন দেখা গেল না।”-রাজপুত্র এবং সেনাপতির প্রকৃত নাম কী কী ছিল ?
উত্তর- "পথের পাঁচালী' উপন্যাসে উল্লিখিত রাজপুত্রের প্রকৃত নাম ছিল অজয় এবং সেনাপতির প্রকৃত নাম ছিল কিশোরী।
প্রশ্ন:- 'পথের পাঁচালী' উপন্যাসে দুর্গাকে জ্বরের সময় সর্বজয়া কী পথ্য দিয়েছিলেন?
উত্তর- 'পথের পাঁচালী' উপন্যাসে দুর্গাকে জ্বরের সময় সর্বজয়া পথ্য হিসেবে নিমছাল সেদ্ধ দিয়েছিলেন।
প্রশ্ন:- নবাবগঞ্জ থেকে দুর্গাকে কোন্ ডাক্তার দেখতে এসেছিলেন ?
উত্তর- নবাবগঞ্জ থেকে দুর্গাকে শরৎ ডাক্তার দেখতে এসেছিলেন।
প্রশ্ন:- 'পথের পাঁচালী' উপন্যাসে সর্বজয়া নাপিতের বউয়ের কাছে কী বিক্রি করতে গিয়েছিল?-
উত্তর- 'পথের পাঁচালী' উপন্যাসে সর্বজয়া নাপিতের বউয়ের কাছে তার বিয়ের দান হিসেবে পাওয়া কাসার রেকাবি বিক্রি করতে গিয়েছিল।
প্রশ্ন:- অপু রাজকুমার অজয়কে কী কী গান শুনিয়েছিল ?
উত্তর-;অপু রাজকুমার অজয়কে দাশু রায়ের পাঁচালির গান 'শ্রীচরণে ভার একবার গা তোলো হে অনন্ত' এবং অন্য একটি গান 'খেয়ার পাশে
বসে রে মন ডুবল বেলা খেয়ার ধারে' শুনিয়েছিল।
প্রশ্ন:- “নীলমণি মুখুজ্যের স্ত্রী আশ্চর্য হইয়া বলিলেন—দুগগা? কেন কী হয়েচে দুগ্গার ?”-
"-এ কথার উত্তরে সর্বজয়া কী বলেছিল ?
উত্তর- নীলমণি মুখুজ্যের স্ত্রীর প্রশ্নের উত্তরে সর্বজয়া বলেছিল যে, কদিন থেকেই দুর্গার জ্বর আসছিল-যাচ্ছিল। দুর্গার ম্যালেরিয়া হয়েছিল,
সন্ধ্যে থেকে জ্বর বেড়েছে। তার ওপর রাতে প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি। চিন্তায় দিশাহারা হয়ে তাই সর্বজয়া নীলমণি মুখুজ্যেকে ডাকতে এসেছিল।
প্রশ্ন:- “নিবারণের মা স্বীকার হইয়া গেল।”— নিবারণের মা কোন্ কাজের ক্ষেত্রে তার সম্মতি জানিয়েছে?
উত্তর- সর্বজয়া নিবারণের মায়ের কাছে বৃন্দাবনী চাদরের পরিবর্তে আধকাঠা চাল চেয়েছিল—এতে নিবারণের মা সম্মতি জানিয়েছিল।
প্রশ্ন:- শরৎ ডাক্তার কোথা থেকে এসেছিলেন ?
উত্তর- শরৎ ডাক্তার নবাবগঞ্জ থেকে এসেছিলেন।
প্রশ্ন:- হরিহর শ্যামাবিষয়ক গান গেয়ে কত টাকা প্রণামী পেয়েছিল ?
উত্তর- হরিহর একটি কাঠের গোলাতে শ্যামাবিষয়ক গান গেয়ে এক টাকা প্রণামী পেয়েছিল।
প্রশ্ন:- চড়কের দিন কে মারা গিয়েছিল?
উত্তর- চড়কের দিন গ্রামের আতুরি বুড়ি মারা গিয়েছিল।
প্রশ্ন:- অপুর চড়কের মেলা দেখার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
উত্তর- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত 'ছোটোদের পথের পাঁচালী' উপন্যাসে চড়কের মেলার বর্ণনা আছে। এই চড়কের অভিজ্ঞতা
অপুর জীবনে ভিন্ন রকমের ছিল। দিদি মারা যাওয়ার পর এ বারের চড়ক তার কাছে খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল। আগের বছরও দুর্গা পট
কিনে আনন্দ করেছিল। কিন্তু এবার আর সে নেই। মেলার গোলমালে বাঁশির সুর শুনে পিয়ে বাঁশি কেনে অপু। এ ছাড়াও চিনিবাস ময়রার
কাছ থেকে সে দু-পয়সার তেলেভাজা খাবার কেনে। সে দেখে নানা রঙিন কাপড়, জামা, কোরা শাড়ি পরে, বাঁশি ও নানারকম খেলনা কিনে বাড়ি ফিরছে। পরদিন অপুরা গ্রাম ছেড়ে চলে যাবে, তাই অপু ঠিক করে নতুন জায়গায় যদি চড়ক না হয় তাহলে বাবাকে বলে সে নিশ্চিন্দিপুরে মেলা দেখতে আসবে।
প্রশ্ন:- অপুর যাত্রা দেখার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
উত্তর- 'পথের পাঁচালী' উপন্যাসে আমরা অপুর যাত্রা দেখার অভিজ্ঞতার বিবরণ পাই। যাত্রার দিন সন্ধে থেকেই অপু যাত্রার আসরে গিয়ে বসে। যাত্রা আরম্ভ হলে পুরো জগৎসংসার অপুর কাছে মুছে যায়। শুধুমাত্র যাত্রার ম৭টি ছাড়া সে আর কিছু দেখতে পায় না। কোনো দিকেই তার আর খেয়াল থাকে না। বেহালার সুর, রাজা, মন্ত্রীর আনাগোনা তার মনকে মাতিয়ে দেয়। বাবা এই যাত্রা দেখল না বলে অপু মনে মনে আপশোশ করে। পরে বাবা এসেছে দেখে সে ভীষণ খুশি হয়। রাজার কার্যকলাপ, মন্ত্রীর চক্রান্ত, রাজপুত্র অজয়, রাজকুমারী ইন্দুলেখার কষ্ট, ইন্দুলেখার মৃত্যুতে, অজয়ের হাহাকার অপুকে মুগ্ধ করে। যাত্রার চরিত্রদের দুঃখে অপুর মনও ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে।
প্রশ্ন:- “অপু তাহাকে সঙ্গে করিয়া নদীর ধারের দিকে বেড়াইতে গেল।”—অপু কাকে সঙ্গে নিয়ে নদীর ধারে গেল? সে কী কী গান গেয়েছিল?
উত্তর;- উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: অপু যাত্রার দলের অভিনেতা অজয়কে সঙ্গে নিয়ে নদীর ধারে গেল।
গীত গান: নদীর ধারে গিয়ে অজয় অপুকে গান গাইতে অনুরোধ করে। অপুর গান গেয়ে বাহাদুরি নিতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু যাত্রাদলের ছেলের সামনে গান গাইতে তার মনে ভয় হয়। শেষে অনেক কষ্টে লজ্জা কাটিয়ে সে বাবার মুখে শোনা দাশুরায়ের পাঁচালি থেকে শ্রীচরণে তার একবার গা তোলো হে অনন্ত' গানটি শোনায়। অজয়ের প্রশংসায় উৎসাহিত হয়ে সে দিদির কাছে শেখা—'খেয়ার
পাশে বসে রে মন ডুবল বেলা খেয়ার ধারে' গানটিও করে।
প্রশ্ন:-. দুর্গার কী হয়েছিল? তাকে কোন্ ডাক্তার দেখেছিল এবং কী বলেছিল?
উত্তর- দুর্গার অসুস্থতা: দুর্গার ম্যালেরিয়া জ্বর হয়েছিল। সেই সঙ্গে অনিয়ম, জলে ভিজে ভিজে কচু শাক তোলা, ওষুধপথ্যের অভাব ও জ্বরকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। দুর্গার জ্বর ভীষণ বেড়ে গেলে নীলমণি মুখুজ্যের ছেলে ফণী নবাবগঞ্জ থেকে শরৎ ডাক্তারকে ডেকে আনে। ডাক্তার দেখেশুনে ওষুধ দেন। জ্বর বেশি হলে জলপটি দেওয়ারও নির্দেশ দেন। পরদিন ঝড়বৃষ্টি থামে, রোদ ওঠে। দুর্গা একটু সুস্থ হয়ে করুণ স্বরে দু-একটা কথাও বলে। কিন্তু পরের দিন দুর্গা মারা যায়। তখন শরৎ ডাক্তার এসে জানায়, ম্যালেরিয়ার শেষ পর্যায়ে, খুব জ্বরের পর যখন বিরাম হয়েছে তখনই দুর্গা হার্টফেল করেছে।
৫. মৃত্যুর পূর্বে দূর্গা অপুর কাছে কী দেখানোর অনুরোধ করেছিল? অপু তাকে উত্তরে কী বলেছিল ?
উত্তর- দুর্গার অনুরোধ: বৃষ্টিবাদলার মধ্যে নীলমণি মুখুজ্যের উদ্যোগে শরৎ ডাক্তার এসে ওষুধপত্র দেওয়ার পর দুর্গা আস্তে আস্তে সুস্থ হতে থাকে। অপু সর্বদা দিদির কাছে বসে থাকে। এরকমই এক সকালে দুর্গা অপুকে ডাকে ও তার কাছে রেলগাড়ি দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে।
অপুর উত্তর: উত্তরে অপু তাকে জানায় যে দুর্গা সেরে উঠলেই বাবাকে বলে তারা সকলে মিলে রেলগাড়িতে চড়ে গঙ্গা নাইতে যাবে।
প্রশ্ন:- “দিন নাই, রাত নাই, সর্বজয়া শুধুই স্বপ্ন দেখে।”—সর্বজয়া কী স্বপ্ন দেখত ?
উত্তর- সর্বজয়া স্বপ্ন দেখত, একদিন তারা আর গরিব থাকবে না। জীবনে কোনও কষ্ট থাকবে না তাদের। পাড়ার একপাশে খড়ের দু-তিনখানা
ঘর থাকবে। গোয়ালে গোরু থাকবে, গোলাভরতি ধান থাকবে। তার বাড়িটিকে ঘিরে থাকবে সবুজ প্রকৃতি, চারপাশ ভরে থাকবে পাখির
ডাকে। অপু সকালে দুধমুড়ি খেয়ে পড়তে বসবে। দুর্গা আর ম্যালেরিয়ায় ভুগবে না। পাড়ার সবাই তাদের সম্মান করবে।
প্রশ্ন:- "ছেলেমেয়ে ঘুমাইয়া পড়িলেও সর্বজয়ার ঘুম আসে না।” সর্বজয়ার ঘুম আসে না কেন ?
উত্তর- ছেলেমেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেও নানা দুশ্চিন্তায় সর্বজয়ার ঘুম আসে না। এক ঘন বর্ষার রাতে প্রচণ্ড বৃষ্টিতে অপু-দুর্গাকে নিয়ে সর্বজয়ার খুব ভয় হয়। হরিহরও তখন বাড়িতে ছিলেন না। এক অজানা আশঙ্কায় সর্বজয়ার বুকের ভিতরটা কেঁপে ওঠে। টাকা-পয়সার চেয়েও বাড়ির বাইরে থাকা হরিহরের জন্য তার বেশি চিন্তা হয়।
প্রশ্ন:- আতুরি বুড়িকে সবাই কী বলত? সে মারা যাওয়ার পর অপুর কী মনে হয়েছিল ?
উত্তর- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত 'ছোটোদের পথের পাঁচালী' থেকে জানা যায় আতুরি বুড়িকে গ্রামের সবাই ডাইনি বলত।
উত্তর- আতুরি বুড়ি মারা যাওয়ার পর অপুর মনে হয়েছিল, আতুরি বুড়ি আসলে ডাইনি নয়। গ্রামের একধারে লোকালয়ের বাইরে সে একা থাকত। সে ছিল দরিদ্র ও অসহায়। তার নিজের বলতে কেউ ছিল না।
প্রশ্ন:- সতু অপুকে কোন্ শর্তে বই দিতে রাজি হয়েছিল ? অপুর মা তাকে কী বলে বকেছিল ?
উত্তর- সত্তুর শর্ত: সতুদের বাড়ির আলমারিতে প্রচুর বই ছিল। অপু একটা বই পড়তে চেয়েছিল বলে সতু তাকে শর্ত দিয়েছিল যে, তাদের মাঠের পুকুরে রোজ মাছ চুরি হয়ে যাচ্ছে। তাই তার জ্যেঠামশায় তাকে বলেছে দুপুরে পাহারা দিতে। অপু যদি সেখানে তার বদলে যেতে রাজি থাকে তবে সে তাকে বই পড়তে দেবে। অপু বই পড়ার লোভে এই শর্তে রাজি হয়েছিল।
অপুর মায়ের তিরস্কার : অপুর মা সর্বজয়া তার বই পড়ার কাহিন শুনে তাকে বকেছিল ‘হাবলা ছেলে' বলে। একটা বই পড়ার লোভে সে পরের মাছ পাহারা দেয়, এতে সর্বজয়া তাকে বোকা বলেছিল।
প্রশ্ন:- হরিহর স্ত্রী-পুত্র-কন্যার জন্য কী কী উপহার কিনে এনেছিল ?
উত্তর- হরিহর কন্যা দুর্গার জন্য একটি লালপাড় কাপড় ও আলতার পাতা, পুত্র অপুর জন্য ‘সচিত্র চন্ডীমাহাত্ম্য বা কালকেতুর উপাখ্যান' ও টিনের রেলগাড়ি এবং স্ত্রী সর্বজয়ার জন্য কাঠের চাকি-বেলুন ও অন্যান্য গৃহস্থালির জিনিস এনেছিল।
প্রশ্ন:- যাত্রাপালায় অজয়কে দেখে অপুর কী মনে হয়েছিল ?
উত্তর- যাত্রাপালায় অজয়কে দেখে অপু মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার মনে হয়েছিল, টুকটুকে এই রাজপুত্র অজয়কেই এতদিন সে মনে মনে
চেয়েছিল। মায়ের মুখে শোনা রূপকথার কাহিনি, শৈশবের কল্পনায় যে রাজপুত্রকে তার প্রাণ চেয়েছে, সেই রাজপুত্র অজয় ছাড়া আর
কেউ নয়। তার চোখ, মুখ, গলার স্বর—সবকিছুই বড্ড কাছের, বড্ড চেনা বলে মনে হয়েছে তার।
প্রশ্ন:- "দুর্গার অশান্ত, চঞ্চল প্রাণের বেলায় জীবনের সেই সর্বাপেক্ষা বড়ো অজানার ডাক আসিয়া পৌঁছিয়াছে।”—দুর্গার জীবনের সকরুণ পরিসমাপ্তির ছবি কীভাবে 'ছোটোদের পথের পাঁচালী'-তে অঙ্কিত হয়েছে, তার পরিচয় দাও।
উত্তর- বিভূতিভূষণ তাঁর মানসকন্যা দুর্গার মৃত্যুর যে চিত্র ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী' গ্রন্থে এঁকেছেন, তা অত্যন্ত করুণ ও বেদনাবিধুর।
ম্যালেরিয়ায় কাবু দুর্গার জ্বর আগেরদিন সন্ধ্যা থেকেই খুব বাড়াবাড়ি হয়। সেদিন রাতে প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টিতে তাদের ভাঙা ঘরে আতঙ্কের প্রহর কাটে। ভোরে দুর্গার অবস্থা খুবই খারাপ হওয়ায় নবাবগঞ্জের শরৎ ডাক্তারকে ডেকে আনা হয়। সেদিন বিকেলে দুর্গার জ্বর ছেড়ে যায়। কিন্তু পরদিন বেলার দিকে হার্টফেল করে সে মারা যায়।
প্রশ্ন:- “মাছ ধরিবার শখ অপুর অত্যন্ত বেশি।”-অপুর মাছ ধরার শখের কথা ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী'-তে কীভাবে ফুটে উঠেছে?
উত্তর;- অপুর মাছ ধরার খুব শখ ছিল। সোনাডাঙা মাঠের নীচে ইছামতী নদীর ধারে কাঁচিকাটা খালের মুখে ছিপে প্রচুর মাছ ওঠে বলে সে সেখানে গিয়ে একটা বড়ো ছাতিম গাছের তলায় মাছ ধরতে বসে। মাছ খুব কম ধরা পড়ে, ঘণ্টার পর ঘন্টা জলে ফাতনা স্থির হয়ে
থাকে। অপু অধৈর্য হয়ে এদিক ওদিক ঘুরে এসে অনেকক্ষণ পরে হয়তো ফাতনা একটু একটু নড়তে দেখে। মাছ না পেলে ছিল গুটিয়ে
বাড়ির দিকে হাঁটা দেয়।
প্রশ্ন:- “ছেলের এত আদরের জিনিসটা জোগাইতে না পারিয়া তাহার বুকের ভিতর বেদনায় টনটন করে। ”-কোন্ জিনিসের কথা বলা হয়েছে? হরিহরের বুকের ভিতর বেদনায় টনটন করত কেন ?
উত্তর ;-উদ্দিষ্ট বন্ধু: আলোচ্য উক্তিতে সাপ্তাহিক 'বঙ্গবাসী' পত্রিকার কথা বলা হয়েছে।
হরিহরের বেদনার কারণ: অপু পড়তে খুব ভালোবাসত। তাই
ছেলে বড়ো হয়ে পড়বে ভেবে হরিহর অনেক 'বঙ্গবাসী' পত্রিকা সযত্নে বান্ডিল বেঁধে তুলে রেখেছিলেন। এই পত্রিকাটির জন্য অপু পাগল ছিল। তাই শনিবার সকালবেলা খেলা ফেলে সে ডাকবাক্সের কাছে অপেক্ষা করত। পত্রিকাটির প্রতি অপুর এত ভালোবাসার কথা হরিহর জানতেন। পত্রিকার দাম দিতে না পারায় হরিহরের বাড়িতে বঙ্গবাসী দেওয়া বন্ধ করেছিল কাগজওয়ালা। অর্থের অভাবে ছেলেকে তার আদরের পত্রিকাটি কিনে দিতে পারতেন না বলে হরিহর খুব কষ্ট পেতেন।
প্রশ্ন:- “আর একটু বড়ো হইলে সে এ-দল ছাড়িয়া দিবে”-এ কথা কার মনে হয়েছিল ? কেন মনে হয়েছিল ?
উত্তর;- এ কথা যাত্রাদলের কিশোর অভিনেতা অজয়ের।
অজয় যে যাত্রাদলের অভিনেতা, সেই দলের অধিকারী নীলমণি হাজরা অজয়কে খুব মারে। এ ছাড়া আশু পালের যাত্রা দলে খুব সুখে থাকা যায়। সেখানে রোজ রাত্রে লুচি খেতে দেয়। না খেলে তিন আনা পয়সা খোরাকি দেয়। এ কারণেই অজয় ভেবেছে যে, একটু বড়ো হলেই সে নীলমণি হাজারার দল ছেড়ে দেবে।
প্রশ্ন:- “এরূপ অপরূপ বসন্তদৃশ্য অপু জীবনে এই প্রথম দেখিল।”- বসন্ত দৃশ্যটির বর্ণনা দাও।
উত্তর;- হির গাড়োয়ানের গাড়িতে অপু বাবা মায়ের সঙ্গে নিশ্চিন্দিপুর ছেড় চলে যাচ্ছিল। পড়ন্ত রোদে তাদের গাড়ি সোনাডাঙার মাঠ পেরোচ্ছিল। মাঠের এখানে ওখানে বনঝোপ, শিমুল, বাবলা আর খেজুর গাছ। চারিদিকে শোনা যাচ্ছে পাপিয়ার বউ কথা কও ডাক। বিরাট মাঠটির মাথার ওপরে তিসির ফুলের মতো রঙের ঘন নীল আকাশ উপুড় হয়ে পড়েছে। সবুজ ঘাসে মোড়া মাঠটির কোথাও চাষবাসের চিহ্ন নেই। শুধু গাছপালার সবুজ রং ছেয়ে গেছে। সামনের চওড়া মাটির রাস্তাটা দেখে মনে হয় যেন উদাস বাউল। মাঠ পেরিয়ে তাদের সামনে পড়ল মধুখালির বিল। প্রাচীনকালের শুকিয়ে যাওয়া নদী এই মধুখালির বিলে ফুটে আছে অজস্র পদ্মফুল। অপু গাড়িতে বসে মাঠ ও চারধারের অপূর্ব আকাশের রংটা দেখছিল। বসন্ত যেন চৈত্র-বৈশাখের মাঠ-বন- বাগানকে অদ্ভুত আনন্দে ভরিয়ে তুলেছে। কোকিলের এলোমেলো ডাকে, নাগকেশর ফুলের ভারে, বনফুলের গন্ধ ভরা জ্যোৎস্নারাতের দখিনা বাতাসে বসন্ত যেন আনন্দনৃত্য শুরু করেছে। অপু বন্ডের এমন অপরূপ রূপ জীবনে যেন প্রথমবার দেখল।
প্রশ্ন:- অপু ফ্রান্স দেশটি সম্বন্ধে কী জেনেছি ?
উত্তর;- সুরেশদার ইংরেজি ম্যাপে অপু ভূমধ্যসাগর দেখেছিল। সে জানত, ভূমধ্যসাগরের ওপারে অবস্থিত ফ্রান্স দেশ । বহুদিন আগে ফ্রান্সকে বিদেশি সৈন্যরা দখল করে নিয়েছিল। ফ্রান্স তখন বিপন্ন, রাজা শক্তিহীন এবং চারিদিকে
অরাজকতা, লুঠতরাজ চলছে। দেশের এই খারাপ সময়ে লোরেন প্রদেশের এক অজপাড়াগাঁয়ে এক চাষির মেয়ে ভেড়া চরাতে যেত। সে তার নীল চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেশের দুঃসময়ের কথা চিন্তা করত। অনেকদিন ধরে এই কথা ভাবতে ভাবতে তার সরল মনে যেন কার গলার আওয়াজ শুনতে
পেল সে। কেউ যেন তাকে বলছে, তুমিই ফ্রান্সকে রক্ষা করবে। তুমি রাজসৈন্য জড়ো করে অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধ করো। দেশের মুক্তির ভার তোমার হাতে। দেবী মেরি তাকে উৎসাহ দেন। স্বর্গ থেকে তাঁর আহ্বান শুনতে পায় মেয়েটি। তারপর তারই নেতৃত্বে নতুন উৎসাহে ফরাসি সৈন্যরা শত্রুদলকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়। সেই ভাবুক কুমারী মেয়েটি নিজে অস্ত্র ধরে দেশের রাজাকে সিংহাসনে বসায়। কিন্তু তার দেশের কুসংস্কারাছন্ন মানুষ সেই মেয়েটিকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে। অপু বই পড়ে ফ্রান্স দেশ সম্বন্ধে এইসব কথা জেনেছিল।
প্রশ্ন:- বর্ষা অপুদের দারিদ্র্যকে কীভাবে প্রকট করেছে তোমাদের পাঠ্য অংশ অনুযায়ী আলোচনা করো।
উত্তর। গ্রামে বর্ষার রূপ : হরিহর কাজের খোঁজে যখন বাইরে ছিলেন সেইসময় নিশ্চিন্দিপুর গ্রামে প্রবল বর্ষা নামে। নদীর জল বাড়তে থাকে, পথঘাট জলে ভরে ওঠে। অপুদের বাড়ির বাঁশতলা, গ্রামের তেঁতুলতলাতে একহাঁটু করে জল জমে যায়। গ্রামের একধারের জীর্ণ কোঠাবাড়িতে অপু-দুর্গাকে নিয়ে সর্বজয়া নিঃসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ে।
অপুদের চরম দারিদ্র্য: নিজে উপবাসী থেকে কয়েকদিন ছেলেমেয়েকে ওলশাক, কচুশাক প্রভৃতি খাওয়ানোর পর সর্বজয়ার ঘরে আর কিছুই ছিল না। একদিকে প্রবল বৃষ্টি ও দুর্গার জ্বর এবং অন্যদিকে বাইরে থাকা স্বামীর জন্য চিন্তা সর্বজয়ার অসহায়তাকে বাড়িয়ে তোলে। সংসারের অভাব চরমে ওঠে। ঘরের জিনিস বিক্রি করে দিয়ে কিছুটা চাল জোগাড়ের চেষ্টা করে সর্বজয়া। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে ঘরের ফুটো ছাদ দিয়ে সর্বত্র জল পড়তে থাকে।
দুর্গার অসুস্থতা: খাবার ও ওষুধের অভাবে দুর্গার জ্বর বাড়তে থাকে। বৃষ্টির জল যত বেশি ঘরে ঢোকে, অপুদের দারিদ্র্য তার থেকেও বেশি প্রকট হয়ে ওঠে। প্রবল বৃষ্টিতে অপুদের বাড়ির রান্নাঘরের দেয়াল পড়ে যায়। দুর্গার মৃত্যু: এক সময় ঝড়বৃষ্টি থেমে গেলেও দুর্গার জ্বর কমে না। নবাবগঞ্জ থেকে ডাক্তার এসে দেখে যান।
শেষপর্যন্ত ম্যালেরিয়ায় দুর্গার মৃত্যু হয়। এভাবেই ঝড় ও বৃষ্টির দাপট হরিহর ও সর্বজয়ার অভাবের সংসারকে সবদিক দিয়েই আরও বেশি দরিদ্র করে দিয়ে যায়।
