হওয়ার গান || অষ্টম শ্রেণী || হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর || HAYORGAN || class viii || question answer
অষ্টম শ্রেণীর বাংলা
অধ্যায় ১৪
হাওয়ায় গান
বুদ্ধদেব বসু
উৎস: কবি বুদ্ধদেব বসু রচিত 'হাওয়ার গান' কবিতাটি তাঁর 'শ্রেষ্ঠ কবিতা” নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
নামকরণ: যে-কোনো সাহিত্যসৃষ্টির মতোই কবিতার ক্ষেত্রেও নামকরণের একটি বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। নামকরণের মধ্য দিয়েই কবিপাঠকদের কবিতার বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দিয়ে থাকেন । ‘হাওয়ার গান' কবিতাটিও এর ব্যতিক্রম হয়। ‘হাওয়ার গান’ কবিতায় কবি তাঁর মানসকল্পে রূপহীন, আকারহীন হাওয়ার আকুল কান্না শুনতে পেয়েছেন। হাওয়া পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে বয়ে যায়। এই যাযাবর স্বভাবের মধ্যেই কবি হাওয়ার আশ্রয়হীনতা খুঁজে পেয়েছেন। দিনরাত বয়ে চলা উদ্দাম বাতাস জলে, স্থলে, পর্বতে, অরণ্যে, প্রান্তরে ঘুরে বেড়ায় আশ্রয়ের খোঁজে। 'হাওয়ার গান' কবিতায় কবি বেশ কিছু উপমা ব্যবহার করেছেন। শিশু দোলনায়, কুকুর কার্পেটে, যাত্রীরা জাহাজে এবং চাঁদ আকাশের মেঘের অন্তরালে আশ্রয় পায়। কিন্তু বাতাস সর্বত্র উপস্থিত থাকলেও তার স্থায়ী কোনো বাসস্থান নেই।
“আমাদের বাড়ি নেই, দেশ নেই, শেষ নেই / কেঁদে কেঁদে মরি শুধু বাইরে”—হাওয়ার এই কান্নাই কবির কাছে গান হয়ে ধরা দিয়েছে। গভীর দুঃখ থেকে জন্ম নেওয়া সংগীতই মধুরতম। 'হাওয়ার গান' কবিতায় ছাত্রছাত্র হাওয়ার এই আশ্রয়হীনতার বেদনাই প্রকাশিত হয়েছে। এই কারণে 'হাওয়ার গান' নামকরণটি সার্থক ও যথাযথ হয়েছে বলা যায়।
কবি পরিচিতি। বর্তমান বাংলাদেশের কুমিল্লায় ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে বুদ্ধদের বসু জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন ভূদেবচন্দ্র বসু। জন্মের সময়েই বৃদ্ধদেব বসু তাঁর মাকে হারান। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন এবং প্রথম বিভাগে পঞ্চম হন। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা ইনটারমিডিয়েট কলেজ থেকে তিনি আইএ পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ইংরেজি সাহিত্যে বিএ এবং এমএ পাস করেন বুদ্ধদেব। কর্মসূত্রে তিনি কলকাতার রিপন কলেজ, পেনসিলভেনিয়ার কলেজ ফর উইমেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়-সহ আরও বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। দীর্ঘদিন তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।
প্রসিদ্ধ সাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসু কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সম্পাদক ও সাহিত্য সমালোচকরূপে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি 'কবিতা' নামের একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। 'প্রগতি' ও 'কল্লোল' পত্রিকার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাঁর লেখা গ্রন্থগুলির মধ্যে 'বন্দীর বন্দনা', 'পৃথিবীর পথে', 'দ্রৌপদীর শাড়ি', 'বসন্তের উত্তর', 'হঠাৎ আলোর অলকানি', 'গোলাপ কেন কালো', 'বিদেশিনী', 'কঙ্কাবতী’, 'যে আঁধার আলোর অধিক" ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ, উপন্যাস, নাটক ও প্রবন্ধগ্রন্থ উল্লেখযোগ্য। তপস্বী ও তরঙ্গিনী' নাটকের জন্য তিনি ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে "সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার তাঁকে 'পদ্মভূষণ' উপাধিতে সম্মানিত করেন। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে লখনউতে এই মহান সাহিত্যিকের মৃত্যু হয়। এই বছরই 'স্বাগত বিদায়' গ্রন্থের জন্য তিনি মরণোত্তর রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন।
সারসংক্ষেপ: হাওয়ার গান কবিতায় কবি বুদ্ধদেব বসু কান পেতেয ঘর-খুঁজে ফেরা বাতাসের কান্না শুনেছেন। হাওয়াদের বাড়ি নেই, কোথাও
সু-দন্ড স্থির হয়ে বিশ্রাম নেওয়ার অবকাশ বা অবসর নেই তাদের। তারা কেবল কেঁদে কেঁদে আশ্রয় খুঁজে ফেরে। হাওয়ারা যেন চিরকালের জন্যই গৃহহীন।
হাওয়ারা পৃথিবীর সব জলাভূমিতে, নদীর তীরে, পাহাড়-পর্বতে, বন্দরে- বন্দরে, নগরের ভিড়ে, বনে-বনান্তরে, শূন্য প্রান্তরে-তেপান্তরে বাসা খোঁজার বৃথা চেষ্টা করেছে। পার্কের বেঞ্চে ঝরা পাতার শব্দে, জানালার কাচের কেঁপে ওঠার শব্দে, দেয়ালের পাঁজরে, চিমনির শব্দে, বনের কান্নায় তারা নিজেদের উপস্থিতির জানান দিয়ে গেছে। তারা সবাইকে প্রশ্ন করেছে যে, তাদের বাসা কোথায়। দোলনায় আশ্রয় পাওয়া ছোটো শিশুর নিরাপদ নিশ্চিন্ত ঘুমে, আবছা আলোয় কার্পেটে ঘুমন্ত কুকুরের বিশ্রামে ফুটে উঠেছে এক সুখী গৃহকোণের ছবি। হাওয়ার চোখে সেই ছবি ধরা পড়েছে। সেই পরে মোমের মৃদু আলোয় রচিত হয়েছে স্বপ্নের পরিবেশ। কিন্তু হাওয়া সেখানেও তার স্বস্তির আশ্রয় খুঁজে পায়নি। অন্ধকার অকুল সমুদ্রে জাহাজ ভেসে চলে, মাস্তুলে জ্বলতে থাকা আলো তার উপস্থিতি বুঝিয়ে দেয়। জাহাজের যাত্রীরা কেউ চলচ্চিত্রের বিনোদনে মেতে ওঠে, কেউ নাচে, কেউ-বা গান গায়। তাদের সকলেরই নিশ্চিন্ত আশ্রয় সেই ভাসমান জাহাজ। হাওয়া সেখানেও তার বিশ্রামের জায়গা খুঁজে পায় না। সমুদ্রের ঢেউয়ে ঢেউয়ে তারা আশ্রয় খুঁজে ফেরে। জাহাজের সব স্বর থেমে গেলেও উত্তাল সমুদ্রের গর্জনে তাদের আশ্রয়হীনতার আর্তনাদ প্রবলভাবে জেগে ওঠে। আকাশের বাঁকা চাঁদও মেঘের কোলে আশ্রয় খুঁজে পায়। শুধু বাতাসেরই কোনো বাড়ি নেই,
দেশ নেই, আর তাদের এই আশ্রয় সন্ধানেরও শেষ নেই। হাওয়াদের আশ্রয়ের জন্য আকুল কান্না আর না পাওয়ার হাহাকার যেন ছন্দের মাধ্যমে এই কবিতায় প্রকাশ লাভ করছে। বাসা খোঁজার এই মরিয়া চেষ্টার কারণেই চিরকাল বাতাস উত্তাল হয়ে রয়েছে। কোথায় গেলে তারা নিজেদের বাসা খুঁজে পাবে, এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তাদের কাছে নেই। কবি সম্ভবত হাওয়াদের এই ঘর খুঁজে না পাওয়ার বেদনার সঙ্গে সমাজের গৃহহীন অসহায় মানুষদের যন্ত্রণার মিল খুঁজে পেয়েছেন। তাই কবি যখন বলেন “আমাদের বাড়ি নেই, দেশ নেই”, তখন মনে হয় সারা বিশ্বের আশ্রয়হীন মানুষদের কান্নার সঙ্গে যেন হাওয়ার কান্না মিশে গেছে।
হাতেকলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর
১. নীচের প্রশ্নগুলি উত্তর দাও।
১.১ বুদ্ধদেব বসু রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর: বুদ্ধদেব বসু রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থ হল 'বন্দীর বন্দনা' ও 'দ্রৌপদীর শাড়ি।
১.২ তিনি কোন্ পত্রিকা সম্পাদনা করতেন?
উত্তর: কবি বুদ্ধদেব বসু 'কবিতা' পত্রিকা সম্পাদনা করতেন।
২. নীচের প্রশ্নগুলির একটি/দুটি বাক্যে উত্তর দাও।
২.১ দুর্বার ইচ্ছায় হাওয়া কী কী ছুঁয়ে গেছে?
উত্তর: কবি বুদ্ধদেব বসু রচিত 'হাওয়ার গান' কবিতায় হাওয়ার দুর্বার ইচ্ছাটি হল বাসস্থান খুঁজে পাওয়ার ইচ্ছা। এই দুর্বার ইচ্ছায় তারা বারবার পৃথিবীর সব জলভাগ এবং তীর অর্থাৎ স্থলভাগ ছুঁয়ে গেছে।
২.২ তার কথা হাওয়া কোথায় শুধায় ?
উত্তর: হাওয়া তার বাসস্থানের কথা পৃথিবীর সব জলভাগে, সব তীরে, পাহাড়ে, বন্দরে, নগরে, অরণ্যে, প্রান্তরে, পার্কের বেঞ্চে ঝরা পাতায়,
শার্সিতে, দেয়ালে, চিমনির শব্দে, বনের কান্নায় জিজ্ঞাসা করেছে।
২.৩ মাস্তুলে দীপ জ্বলে কেন?
উত্তর: ‘মাস্তুল' শব্দের অর্থ হল পাল তুলে দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কাঠের স্তম্ভ, যা স্টিমার বা জাহাজে আটকানো থাকে। জলের মধ্যে অকূল অন্ধকারে জাহাজ চলার সময় তার উপস্থিতি বা অবস্থান বোঝানোর জন্যই মাস্তুলে দীপ জ্বলে।
২.৪ পার্কের বেঞ্চিতে আর শার্সিতে কাদের উপস্থিতির চিহ্ন রয়েছে?
উত্তর: পার্কের বেঞ্চিতে ঝরা পাতার মধ্যে কিংবা শার্সি অর্থাৎ কাচের জানালার কেঁপে ওঠার মধ্যে হাওয়ারই উপস্থিতির চিহ্ন রয়েছে।
২.৫ নিশ্বাস কেমন করে বয়ে গেছে?
উত্তর: ‘হাওয়ার গান' কবিতায় হাওয়ার নিশ্বাস সারা দিন-রাত ধরে বুক- চাপা কান্নার উত্তাল ও অস্থিরভাবে বয়ে গেছে।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর সংক্ষেপে লেখো।
৩.১ হাওয়ার চোখে ঘরের যে ছবি পাওয়া যায়, তা কবিতা অনুসরণে লেখো।
উত্তর: কবি বুদ্ধদেব বসু রচিত 'হাওয়ার গান' কবিতায় হাওয়ার দৃষ্টিতে দেখা ঘরের যে ছবি পাওয়া যায়, সেখানে দেখা যায় দোলনায় একটি সুন্দর শিশু আরামে ঘুমিয়ে রয়েছে। ঘরের আবছা আলোয় দেখা যাচ্ছে, কার্পেটের উপরে শুয়ে রয়েছে একটি তন্দ্রাচ্ছন্ন কুকুর। আর সেই শান্ত, নিস্তব্ধ ঘরে স্বপ্নের মতো মায়াবী আলো ছড়িয়ে দিয়ে মৃদুভাবে একটি মোমবাতি জ্বলছে। এমন সুখী গৃহকোণের ছবিটি দেখেও হাওয়ার শান্তি বা স্থিরতা নেই। এর কারণ, নিজের ঘর-ই সে এখনও খুঁজে পায়নি, যেখানে দু-দণ্ড বিশ্রাম নিতে পারে।
৩.২ সমুদ্রে জাহাজের চলার বর্ণনা দাও।
উত্তর। কবি বুদ্ধদেব বসু রচিত 'হাওয়ার গান' কবিতায় কূল-কিনারাহীন গভীর সমুদ্রে পাড়ি দেওয়া জাহাজের কাছেও হাওয়া এই প্রশ্নই রেখেছে যে তার বাড়ি কোথায়। বিরাট, বিপুল জাহাজের যাত্রীরা নানান অবসরমূলক বিনোদনে মেতেছেন। কেউ চলচ্চিত্রে মশগুল, কেউ নাচে, কেউ বা গানের সুরে মাতোয়ারা। অন্ধকার গভীর রাতেও মাস্কুলে আলো জ্বেলে অবিরাম পথ চলেছে জাহাজ।
৩.৩ পৃথিবীর কোন্ কোন্ অংশে হাওয়া ঘুরে বেড়ায় লেখো।
উত্তর: কবি বুদ্ধদেব বসু রচিত 'হাওয়ার গান' কবিতায় সর্বত্রগামী হওয়া সত্ত্বেও হাওয়ার কোনো 'বাড়ি' বা আশ্রয় না থাকার বেদনা ফুটে উঠেছে।
হাওয়া পৃথিবীর সমস্ত স্থলভূমি, জলভূমি, নদী-সমুদ্রতীর, পাহাড়-পর্বত, বন্দর, নগর, অরণ্য, প্রান্তর, তেপান্তর সর্বত্রই অবিরাম তার বাসস্থানের সন্ধান করে চলেছে। কিন্তু সে খুঁজে পায়নি তার কোনো বাসা।
৪. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর বিশদে লেখো।
৪.১ হাওয়াদের কী নেই? হাওয়ারা কোথায় কীভাবে তার খোঁজ করে?
উত্তর: হাওয়াদের যা নেই: প্রসিদ্ধ কবি বুদ্ধদেব বসু রচিত হাওয়ার গান" কবিতায় হাওয়াদের বাড়ি না থাকার প্রসঙ্গটিই বারবার উচ্চারিত হয়েছে।
হাওয়াদের সন্ধান: সারাদিন, সারারাত হাওয়া তার বাসা না পাওয়ার দুঃখ, যন্ত্রণা, অস্থিরতা নিয়ে পৃথিবীর জলে, স্থলে, কূলে, অরণ্যে, পাহাড়- পর্বতে, নগরে-বন্দরে-প্রান্তরে-তেপান্তরে সেই বাসাকেই খুঁজে বেড়ায়।
৪.২ “চিরকাল উত্তাল তাই রে”–কে চিরকাল উত্তাল'? কেন সে চিরকাল উত্তাল হয়ে রইল ?
উত্তর: পরিচয়: কবি বুদ্ধদেব বসু রচিত ‘হাওয়ার গান' কবিতায় অস্থির হাওয়াকে ‘চিরকাল উত্তাল' বলা হয়েছে।
উত্তালের কারণ: নিজের বাড়ি খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত, ব্যর্থ বাতাস যেন সারাদিন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছে। তার কোনো বাড়ি নেই—হাওয়াকে এই দুঃখ সারা দিন-রাত বয়ে বেড়াতে হয়। পৃথিবীর সব জল, স্থলকে বাসা বানানোর দুর্বার ইচ্ছায় স্পর্শ করে গেলেও সেই স্বপ্ন তার সফল হয়নি। তাই চিরকাল
হাওয়াকে এমনই অস্থির এবং উত্তাল হয়ে থাকতে হয়।
৪,৩ কবিতাটির নাম ‘হাওয়ার গান' দেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী যুক্তি কবির মনে এসেছিল বলে তোমার মনে হয়?
উত্তর: ‘হাওয়ার গান’ কবিতায় কবি বুদ্ধদেব বসুর আলোচ্য কবিতার নামকরণের পিছনে যে যুক্তিগুলি কাজ করেছিল বলে আমার মনে হয়,
সেগুলি হল—(ক) হাওয়ার চিরন্তন আশ্রয়হীনতা। এই কারণেই হাওয়া কোথাও স্থির নয়। সে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ক্রমাগত যাতায়াত
করে। (খ) আশ্রয়হীন মানুষ যেমন দুঃখী, হাওয়ার বয়ে যাওয়ার শব্দেও কবি সেই দুঃখের দীর্ঘশ্বাস শুনতে পেয়েছেন। (গ) শিশুর আশ্রয় দোলনায়, কুকুরের আশ্রয় কার্পেটে, যাত্রীর আশ্রয় জাহাজে, এমনকি চাঁদের আশ্রয় আকাশে— এদের দেখে কবির মনে হয়েছে হাওয়া যেন এ কারণেই নিজের নিরাশ্রয় হওয়ার যন্ত্রণা বেশি করে উপলব্ধি করেছে। (ঘ) হাওয়া বিশ্বের সর্বত্র ঘুরে বেড়ালেও তার কোনো নির্দিষ্ট স্থায়ী বাসস্থান নেই। কবির কল্পনায়, হাওয়ার বয়ে যাওয়ার শব্দ তার কান্নারই প্রতিধ্বনি।
৫. নীচের পক্তিগুলির মধ্যে ক্রিয়াকে চিহ্নিত করো এবং অন্যান্য শব্দগুলির সঙ্গে তার সম্পর্ক দেখাও।
৫.১ ঘরে ঘরে জ্বলে যায় স্বপ্নের মধু মোম।
উত্তর: জ্বলে যায়—ক্রিয়াপদ, ঘরে ঘরে-অধিকরণ কারক, মোম— কর্মকারক, স্বপ্নের—–সম্বন্ধপদ।
৫.২ আধারে জাহাজ চলে।
উত্তর: চলে—ক্রিয়াপদ, জাহাজ কর্তৃকারক, আঁধারে—অধিকরণকারক।
৫.৩ শাসিতে কেঁপে ওঠা দেয়ালের পঞ্জর।
উত্তর: কেঁপে ওঠা—ক্রিয়াপদ, পঞ্জর—কর্তৃকারক, শার্সিতে —অধিকরণকারক, দেয়ালের সহ্যপদ।
৫.৪ অকূল অন্ধকারে ফেটে পড়ে গর্জন।
উত্তর: ফেটে পড়ে—ক্রিয়াপদ, অকূল—বিশেষণ পদ (ক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক নেই), অন্ধকারে—অধিকরণকারক, গর্জন—কর্তৃকারক।
৬. "বন্দর, বন্দর, নগরের ঘন ভিড়”–পত্তিটির প্রথমে একই শব্দ দু-বার ব্যবহার করা হয়েছে। এইরকম আরও চারটি পক্তি উদ্ধৃত করো। কবিতার ক্ষেত্রে এই ধরনের শব্দ ব্যবহারের কৌশল অবলম্বনের কারণ কী ?
উত্তর: কবিতার মধ্যে একই শব্দ দু-বার ব্যবহৃত হয়েছে এমন চারটি পঙ্ক্তি হল—[১] ধরে ধরে জ্বলে যায় স্বপ্নের মৃদু মোম [২] কেঁদে-কেঁদে মরি শুধু বাইরে [৩] খুঁজে খুঁজে ঘুরে কিরি বাইরে [৪] সুরে-সুরে ব’লে যাই-নেই রে
- কবিতার ক্ষেত্রে ক্লিয়ার ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার ব্যবহারের দক্ষতার উপর নির্ভর করে কবিতার গতি ও চলন। একই শব্দ দু বার ব্যবহারের মধ্য দিয়ে অসমাপিকা ক্রিয়া তৈরি করা হয়েছে এবং একই সঙ্গে তৈরি হয়েছে কোনো কাজের পুনরাবৃত্তির আমেজ। সাধারণ অসমাপিকা ক্রিয়ার চেয়ে এই দু-বার ব্যবহৃত শব্দ নিঃসন্দেহে শ্রুতিমধুর এবং তা বক্তব্যের গুরুত্বও বাড়ায়, তাই কবিতায় এই ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হয়।
৭. ধ্বনি পরিবর্তনের দিক থেকে শূন্য অংশগুলি পূর্ণ করো:
উত্তর: [চন্দ্র] > চন্ন > [চাঁদ] ;
[রাত্রি] > রাত্রির;
পঞ্জর > [পাঁজর]
৮ 'হাওয়ার গান' কবিতায় ব্যবহৃত পাঁচটি ইংরেজি শব্দ লেখো। এই শব্দগুলির বদলে দেশি/বাংলা শব্দ ব্যবহার করে পক্তিগুলি আবার লেখো ।
উত্তর: ‘হাওয়ার গান' কবিতায় ব্যবহৃত পাঁচটি ইংরেজি শব্দ হল—চিমনি, ডেক, কার্পেট, পার্ক, সিনেমা।
মূল বাক্য > পরিবর্তিত বাক্য
পার্কের বেঞ্চিতে ঝরা পাতা ঝর্ঝর। > উদ্যানের বেঞ্চিতে ঝরা পাতা ঝর্ঝর।
যাত্রীরা সিনেমায়, কেউ নাচে, গান গায়। > যাত্রীরা চলচ্চিত্রে, কেউ নাচে, গান গায়।
চিমনির নিস্বনে, কাননের ক্রন্দনে। > ধূম্রনালীর নিস্বনে, কাননের ক্রন্দনে।
অবশেষে থামে সব, ডেক হয় নির্জন। > অবশেষে থামে সব, জাহাজের পাটাতন হয় নির্জন।
আবছায়া কার্পেট কুকুরের তন্দ্রায়। > আবছায়া গালিচা কুকুরের তন্দ্রায় ৷
