কি করে বুঝব || অষ্টম শ্রেণী || হাতে কলমে প্রশ্নের উত্তর || KI KkORE BUuJHBO || class 8 || question answer - school book solver

Thursday, 9 October 2025

কি করে বুঝব || অষ্টম শ্রেণী || হাতে কলমে প্রশ্নের উত্তর || KI KkORE BUuJHBO || class 8 || question answer

 


অষ্টম শ্রেণীর বাংলা
অধ্যায় ১৫
কী করে বুঝব
আশাপূর্ণা দেবী


উৎস: 'কী করে বুঝব' ছোটোগল্পটি আশাপূর্ণা দেবীর 'কিশোর গল্প সংগ্রহ’ নামক সংকলন গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।

লেখিকা পরিচিতি: বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখিকা আশাপূর্ণা দেবী ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ৮ জানুয়ারি কলকাতার পটলডাঙায় মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হরেন্দ্রনাথ গুপ্ত, মাতা সরলাসুন্দরী দেবী। স্বামীর উৎসাহেই আশাপূর্ণা দেবীর পড়াশোনা ও সাহিত্যচর্চা এগিয়ে চলে। তাঁর প্রথম বই 'ছোটঠাকুরদার কাশীযাত্রা' ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। তাঁর অজস্র রচনার মধ্যে 'প্রথম প্রতিশ্রুতি', 'সুবর্ণলতা', 'বকুলকথা', 'অগ্নিপরীক্ষা', 'ওনারা থাকবেনই', 'সুখের ঠিকানা', 'শশীবাবুর সংসার', 'পথ জনহীন', 'কত কান্ড রেলগাড়ীতে' প্রভৃতি  উল্লেখযোগ্য। তিনি 'জ্ঞানপীঠ 'পুরস্কার', 'রবীন্দ্র পুরস্কার' ও 'সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করে- ছিলেন। 'পদ্মশ্রী' ও 'দেশিকোত্তম' উপাধিতে ভূষিত এই বিখ্যাত লেখিকার ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যু হয়।


বিষয়সংক্ষেপ: ছ-বছরের বুকু বাড়ির বাইরে রোয়াকে বসে খেলছিল। তখন হঠাৎই ছেনুমাসি, বেণুমাসি আর তার ছেলে ডাম্বল উত্তরপাড়া থেকে
ভবানীপুরে তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। দু-তিনবার বাস বদলে, তারপর রিকশায় চড়ার ধকল সামলে তাঁরা এসেছিলেন বুকুর মা নির্মলার
সাথে দেখা করতে। কিন্তু অসময়ে বাড়িতে লোক বেড়াতে আসার ব্যাপারটিকে নির্মলা একেবারেই ভালোভাবে নেননি। তা ছাড়া সেদিন স্বামী-পুত্র সহ তাঁর সিনেমায় যাওয়ারও কথা ছিল। বুকু তিনতলায় ছুটে গিয়ে মাকে অতিথিদের আসার কথা জানিয়ে আসে। নির্মলা অতিথিদের অভ্যর্থনা জানালেও বুকু প্রকৃত সত্যটি অর্থাৎ নির্মলা যে অসন্তুষ্ট হয়েছেন তা তাঁদের সামনে প্রকাশ করে দেয়। এতে অতিথিদের অস্বস্তি বাড়ে, বুকুর মা-ও। অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। ক্রমশ দেখা যায়, ডাম্বল ও বুকু তাদের সরল, সত্য, অকপট বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বড়োদের দ্বিচারিতাকেই গল্পে স্পষ্ট করে
তুলেছে। ডাম্বলকে স্কুলে ভরতি না করানোর প্রসঙ্গে সে তার বাবার যুক্তির কথা বলে। ডাম্বলের কথা শুনে ‘বেণুমাসির মুখ চুন হয়ে যায়'। অপরদিকে বেণুমাসির মুখে বুকুর কীর্তির কথা শুনে নির্মলার মনে হয়, সত্যিই তাকে ভূতে-টুতে পেল নাকি! এই সময়ই ডাম্বল হুড়মুড় ঝনঝন শব্দে টেবিল ল্যাম্প ভেঙে চুরমার করে। বুকু অতিথিদের খাবার পরিবেশন করে। অতিথি আসার খবর বুকুর বাবাকে জানাতে বললে সে জানায় তার বাবা 'চটেমটে লাল হয়ে বসে আছেন।' অতিথিরা বিদায় নিলে রণচণ্ডী মূর্তি নিয়ে নির্মলা ছেলেকে শাসনের নামে পেটাতে শুরু করেন। তাঁর স্বামীও সব শোনার পর একসময় এসে তাতে যোগ দেন। অন্য লোকের সামনে অপমানিত আর অপদস্থ হওয়ায় রাগে তাঁরা উন্মত্ত হয়ে ওঠেন। কারণ বুকুর বলা সত্যি
কথাগুলিই লোকের সামনে তাঁদের মুখে চুনকালি' মাখিয়েছে। “বল, বল কেন ওসব বললি ?”—এই প্রশ্নের জবাবে অসহায় বুকু ডুকরে কেঁদে ওঠে। সে বলে যে, সে তো এই শিক্ষাই পেয়েছে যে সবসময় সত্যি কথা বলতে হয়, কারও কাছে কিছু লুকোতে নেই। ওই শিক্ষা অনুযায়ীই সে আচরণ করেছে। আর তাতেই ঘটেছে বিপত্তি। তার প্রতি নেমে এসেছে নিষ্ঠুর আঘাত! গল্পের শেষে তাই চোখের জলে ভাসতে ভাসতে বুকু বলে ওঠে—“কী করে বুঝব, আসলে কী করতে হবে?”
নামকরণ: যে-কোনো সাহিত্যসৃষ্টির ক্ষেত্রেই নামকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামের মধ্য দিয়েই সাহিত্যিক তাঁর পাঠকদের সামনে রচনাটির
বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি ধারণা গড়ে তোলেন। আশাপূর্ণা দেবী রচিত 'কী করে বুঝব গল্পে ভবানীপুরে নির্মলার বাড়িতে উত্তরপাড়া থেকে
বেণুমাসি, ছেনুমাসি আর ডাম্বল একদিন দুপুরে বেড়াতে আসে। নির্মলার ছ-বছরের ছেলে বুকু বাড়িতে যেসব কথা শুনে থাকে বা প্রায়ই ঘটতে দেখে, তা শিশুসুলভ সরলতায় অতিথিদের সামনে বলে ফেলে। ফলে সে মা-বাবার রোষের মুখে পড়ে। অতিথিদের সামনে যথেষ্ট লজ্জিত ও অপ্রস্তুত হওয়ার বদলা নিতে এবং অভদ্র বুকুকে শাস্তি দিতে নির্মলা তৎপর হয়ে ওঠেন। বুকুকে সহবত শেখানোর শাসন-প্রক্রিয়ায় ক্রমে তার বাবাও শামিল হন। উভয়ের তীব্র শাসন আর মারধর অনেকক্ষণ গোঁ ধরে চুপ করে সহ্য করে বুকু। তবে সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যেতেই সে ডুকরে কেঁদে ওঠে সে বলতে থাকে, “নিজেই তো দুপুরবেলা একশোবার করে বললে- সবসময়ে সত্যি কথা বলবি, কারো কাছে কিছু লুকোবি না; এখন আবার নিজেই মারছ? কী করে বুঝব, আসলে কী করতে হবে ?” আলোচ্য গল্পের নামকরণের ক্ষেত্রে মুখ্য চরিত্র শিশু বুকুর সেই জিজ্ঞাসাটিই প্রকাশিত হয়েছে। হতচকিত বুকুর সেই অসহায়তার বোধটুকুই নামকরণের মাধ্যমে
স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। তাই বলা চলে এই গল্পের নামকরণ সার্থক ও যথাযথ হয়েছে।

'হাতেকলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর

১. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
১.১ আশাপূর্ণা দেবীর লেখা দুটি উপন্যাসের নাম লেখো।

উত্তর: আশাপূর্ণা দেবীর লেখা দুটি উপন্যাস হল ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি' এবং 'বকুলকথা'।

১,২ আশাপূর্ণা দেবী তাঁর সাহিত্যকৃতির জন্য কোন্ কোন্ বিশেষ পুরস্কার লাভ করেন ?
উত্তর: আশাপূর্ণা দেবী তাঁর সাহিত্যকৃতির জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার প্রভৃতি অর্জন করেছেন।

২.একটি বাক্যে উত্তর দাও ।
২.১ বুকু কোথায় বসে খেলা করছিল ?
উত্তর: ‘কী করে বুঝব’ গল্পে ছ-বছরের ছোট্ট ছেলে বুকু বাড়ির বাইরের রোয়াকে বসে খেলা করছিল।
২.২ রিকশা থেকে কারা নামলেন ?
উত্তর: বুকুদের বাড়ির সামনে রিকশা থেকে দুজন মোটাসোটা ভদ্রমহিলা আর প্রায় বুকুরই বয়সি একটি স্বাস্থ্যবান ছেলে নেমে এল।

২.৩ ডাম্বল আলমারি ভেঙে কার বই নামিয়েছিল।
উত্তর: ‘কী করে বুঝব' গল্পে ডাম্বল আলমারি ভেঙে বুকুর সেজোকাকার বই নামিয়েছিল।

২.৪ বুকুর মা-র কী কেনা ছিল?
উত্তর: 'কী করে বুঝব গল্পে বুকুর মা-র সিনেমার টিকিট কেনা ছিল।

২.৫ বুকু আর বুকুর সেজো খুড়িমা অতিথিদের জন্যে কী কী খাবার নিয়ে আসে ?
উত্তর: বুকু আর তার সেজো খুড়িমা অতিথিদের জন্যে চা, বড়ো বড়ো রাজভোগ, ভালো ভালো সন্দেশ, শিঙাড়া আর নিমকি নিয়ে আসে।

২.৬ বুকু কোন্ স্কুলে ভরতি হয়েছিল ?
উত্তর: বুকু যে স্কুলে ভরতি হয়েছিল, তার নাম ‘আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান'।

৩. নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও ।
৩.১ বুকু খেলতে খেলতে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায় কেন?
উত্তর: বুকুর অবাক হওয়ার কারণ: আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘কী করে বুঝব গল্পে ছ-বছরের ছোট্ট ছেলে বুকু একদিন বাড়ির বাইরের রোয়াকে বসে
খেলছিল। তখন রাস্তার দিকে হঠাৎ তাকিয়ে সে অবাক হয়ে গেল। একটি রিকশা থেকে তার সামনে নেমে এলেন দুজন খুব মোটাসোটা মহিলা, আর একটি মোটা ছেলে। কীভাবে রিকশার এতটুকু খোলের মধ্যে ওই চেহারার এতজনের জায়গা হয়েছিল—তা ভেবে বুকু অবাক হয়ে যায়।

৩.২ “সিঁড়ি ভেঙে আর উঠতে পারব না বাবা”–কারা এ কথা বলেছেন? তাঁরা সিঁড়ি ভেঙে উঠতে পারবেন না কেন?
উত্তর: বক্তা: আশাপূর্ণা দেবীর কী করে বুঝব' গল্পে সুদূর উত্তরপাড়া থেকে ভবানীপুরে নির্মলার বাড়িতে আগত অতিথি ছেনুমাসি আর বেণুমাসি নির্মলার ছেলে বুকুকে এ কথা বলেছেন।
সিঁড়ি ভাঙতে না পারার কারণ : সিঁড়ি ভেঙে উঠতে না পারার কারণ হিসেবে ছেনুমাসি ও বেণুমাসি দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার ক্লান্তিকেই
দায়ী করেছেন। উত্তরপাড়া থেকে ভবানীপুরে আসতে তাঁদের দু-তিনবার বাস বদল করতে হয়েছে। শেষ অবধি রিকশায় চড়ে তাঁরা নির্মলার বাড়িতে পৌঁছেছেন। এরপর ভারী চেহারা নিয়ে তাঁরা সিঁড়ি ভেঙে তিনতলা অবধি ওঠার ধকল নেওয়ার আর সাহস পাননি।

৩.৩ ও কী! কী কাণ্ড করেছ তুমি”– কে, কী কাণ্ড করেছে?
উত্তর: কান্ডের বিবরণ: আশাপূর্ণা দেবী রচিত 'কী করে বুঝব’ গল্পে ছ-বছরের ছেলে বুকু প্রায় তারই সমবয়সি ডাম্বলকে এ কথা বলেছিল।
ডাম্বল উত্তরপাড়া থেকে ভবানীপুরে বুকুদের বাড়িতে বেড়াতে আসে।
সেখানে দেয়াল-আলমারির পাল্লা ধরে ডাম্বল এমন হ্যাঁচকা টান মারে যে, কলটা চাৰিবন্ধ অবস্থাতেই পাল্লার সঙ্গে খুলে বেরিয়ে আসে। সাজানো-গোছানো সুন্দর বইয়ের সারি থেকে তিন-চারটে বই সে নামিয়ে আনে। এরপর “দূর ছাই, ছবি নেই” বলে বইগুলোকে সে মাটিতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে দেয়।

৩.৪ বুকু অবাক হয়ে ফ্যালফেলিয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল কেন ?
উত্তর: অবাক হওয়ার কারণ: আশাপূর্ণা দেবীর লেখা 'কী করে বুঝব’ গল্পে বুকু অতিথিদের আসার কথা তার মাকে জানায়। বুকুর ডাকে তিনতলা থেকে নেমে এসে তার মা বেণুমাসি আর ছেনুমাসিকে দেখতে পেয়েই হইহই করে অভ্যর্থনা করেন। তিনি বলেন, এতদিন পরে মাসিদের যে তাঁকে মনে পড়েছে, তা তাঁর সৌভাগ্য। কথায় আবেগ এনে তিনি আরও বলেন, “সত্যি কতকাল পরে দেখা—কী আনন্দ যে হচ্ছে কী করে বলব।” অথচ একটু আগে বুকু তার মাকে অতিথিদের আসার খবরটা দিতেই তিনি বলেছিলেন যে, খবরটা শুনে তাঁর গা জ্বলে যাচ্ছে। অসময়ে লোকের বেড়াতে আসা তিনি একেবারেই পছন্দ করেননি। একই বিষয়ে মাকে দু-বার দু-রকম কথা বলতে শুনে বুকু অত্যন্ত অবাক হয়ে যায়। একারণেই সে ফ্যালফেলিয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।

৩.৫ “ছেলের কথা শুনেই বুকুর মা-র মাথায় বজ্রাঘাত”- -ছেলের কথা শুনে বুকুর মা-র মাথায় বজ্রাঘাত হল কেন ?

উত্তর: বজ্রাঘাতের কারণ: উত্তরপাড়া থেকে ভবানীপুরে নির্মলার বাড়িতে হঠাৎ উদয় হওয়া ছেনুমাসি, বেণুমাসি ও ডাম্বলকে বুকুর মা সামনাসামনি সাদর অভ্যর্থনা জানান। কিন্তু তাঁদের আগমনকে তিনি মন থেকে মোটেই ভালোভাবে নেননি। এ কথা তিনি তাঁর ছেলের সামনে বলেও ফেলেছিলেন। এরপর অতিথিদের সামনে হইহই করে অভ্যর্থনার অভিনয় করার পরই বুকু সত্য কথাটি তাদের বলে দেয়। আর তখনই অপমানে, লজ্জায় বুকুর মা-র মাথায় যেন বজ্রাঘাত হয় ।

৩.৬ ডাম্বলকে ইস্কুলে ভরতি করা হয়নি কেন ?
উত্তর: স্কুলে ভরতি না করার কারণ: কী করে বুঝব’ গল্পে বুকুদের বাড়িতে আসা বেণুমাসির ছেলে ডাম্বলকে বুকুর মা নির্মলা কথা প্রসঙ্গে
জিজ্ঞাসা করেন যে, সে স্কুলে ভরতি হয়েছে কি না। এই প্রশ্নের উত্তরে বেণুমাসি কিছু বলার আগেই ডাম্বল বলে ওঠে যে, তার বাবার কিপটেমির কারণেই তাকে এখনও ইস্কুলে ভরতি করা হয়নি। সাত বছরের ছেলের পড়াশোনার জন্য সাত টাকা মাইনে তিনি দিতে পারবেন না। তিনি আরও বলেন ডাম্বলের লেখাপড়ার দরকার নেই—“প্রয়োজনে চাষবাস করে খাবে”। এমনভাবেই ডাম্বলের বাবা নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। তাই ডাম্বলকে স্কুলে ভরতি করা হয়নি।

৩.৭ “কে জানে পাগলা-টাগলা হয়ে যাবে নাকি”–কার সম্পর্কে এই মন্তব্য করা হয়েছে? এমন সন্দেহের কারণ কী ?
উত্তর: উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘কী করে বুঝব’ গল্পে ছ-বছরের ছেলে বুকুর সম্পর্কে মা নির্মলা আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
সন্দেহের কারণ: উত্তরপাড়া থেকে ভবানীপুরে বুকুদের বাড়িতে বেড়াতে আসে ডাম্বল । দুরন্ত ডাম্বল বুকুর সেজোকাকার আলমারির পাল্লা
ভেঙে বের করা তিন-চারটি বই ঘেঁটেও ছবি না পেয়ে সেগুলি মেঝেতে ফেলে রেখেছিল। বুকু তা দেখতে পেয়ে তার সেজোকাকার কথা বলে ডাম্বলকে ভয় দেখায়। পরে বেণুমাসিরা বুকুর সেই ব্যবহারের কথা বললে তার মা নির্মলা লজ্জা পেয়ে যান। নিজের ছেলের এই অসভ্যতার জন্য তাকে ভূতে পেয়েছে কি না এমন সংশয়ও তাঁর কথায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তখনই তিনি আলোচা কথাটি বলেন।

২.৮ “দুজনে মিলে চেঁচান, 'বল, বল কেন ওসব বললি ? বুকু কেন ওসব বলেছিল।
উত্তর: 'এসব' কথা বলার কারণ : যার উদ্দেশ্যে এ কথা বলা হয়েছে সে, অর্থাৎ বুকু নেহাতই শিশু। সে পারিবারিক কিংবা সামাজিক বিষয়ের কিছুই বোঝে না। তার মা তাকে সবসময় সত্যি কথা বলতে শিখিয়েছিলেন। অথচ এই আদর্শটি বাস্তবজীবনে যে পালন করা কতখানি কঠিন, তা বুকুর মা নিজেও বুঝতে পারেননি। তাই বুকুর সামনেই তিনি নানা সময়ে দু-রকম আচরণ করে ফেলেছেন। বুকু তাই বুঝতে পারেনি তার আসলে কী করা উচিত। অতিথিদের আগমনে অসন্তুষ্ট মায়ের আড়ালে প্রকাশ করা বিরক্তি সে সহজসরলভাবেই পৌঁছে দিয়েছিল অতিথিদের কানে। কারণ সে জানত সবসময় সত্যি কথা বলাই উচিত। অথচ এই কারণেই সে বাবামায়ের কাছে প্রচণ্ড মার খেয়েছিল।
৪. নীচের প্রশ্নগুলির নিজের ভাষায় উত্তর দাও ।

৪.১ গল্পে বুকুর আচরণ তার মাকে অতিথিদের সামনে অস্বস্তিতে ফেলেছিল। বুকুর এই আচরণ কি তুমি সমর্থন করো? বুকু কেন অমন আচরণ অতিথিদের সামনে করেছিল ?
উত্তর: আমার মত: আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘কী করে বুঝব’ গল্পে ভবানীপুর নিবাসী নির্মলার ছ-বছরের ছেলে বুকুর আচরণ তার মাকে
অতিথিদের সামনে চরম অস্বস্তিতে ফেলেছিল। তাই বুকুর এই ধরনের আচরণ আমি পুরোপুরি সমর্থন করতে পারি না।
সমর্থন না করার কারণ: গল্পে উত্তরপাড়া থেকে তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসা বেণুমাসি, ছেনুমাসি ও ডাম্বলের সঙ্গে বুকু যে আচরণ করেছিল, তার মধ্যে শিশুসুলভ সরলতার চেয়ে তার অসভ্যতাই
প্রকাশ পেয়েছে। রিকশা থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই অতিথিদের বিশাল চেহারা দেখে তার মন্তব্য “এত মোটা কাউকে দেখিইনি কখনো।” একে
অভদ্রতা ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। এরপরেও কখনও ডাম্বলকে ‘হাতির মতো চেহারা', ‘হাতির মতো বুদ্ধি' ইত্যাদি বলে অপমান করেছে
বুকু, কখনো-বা নিজের বাবা-মায়ের একান্তে বলা কথা অতিথিদের সামনে বলে তাঁদের বেকায়দায় ফেলেছিল। এ কারণেই আমি বুকুর এই আচরণকে সমর্থন করতে পারি না।
বুকুর আচরণের কারণ: বুকুর এই আচরণের পিছনে যেসব কারণ রয়েছে বলে মনে হয়, তার মধ্যে প্রধান হল আচরণগত সমস্যা। বয়সে
ছোটো ও অনভিজ্ঞ সে বটেই; কিন্তু বড়োদের সব কথার মধ্যে যে নাক গলানো উচিত নয়, সেই প্রাথমিক শিক্ষাটুকুও তার হয়নি। এতে তার
অভিভাবকদের দায়ও অস্বীকার করা যায় না। শিশুর সামনে কোন্ কথা বলা উচিত, কোনটা নয়—-সেই ভাবনাচিন্তা তাঁদের মধ্যে আসা উচিত ছিল। অতিথিদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা উচিত, তা বুকুর মতো শিশুর পক্ষে জানা সম্ভব নয়। সেই শিক্ষা বুকুর অভিভাবকদের তাকে দেওয়া উচিত "ছিল। তাই বলা যায়, উপযুক্ত শিক্ষার অভাবেই বুকু অতিথিদের সামনে অভব্য আচরণ করেছিল।

৪.২ বাড়িতে অতিথি এলে তাঁদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা উচিত সে সম্পর্কে বন্ধুকে একটি চিঠি লেখো
উত্তর- নিজে করো।

৪.৩ “কী করে বুঝব, আসলে কী করতে হবে”—গল্পে বুকু এই কথা বলেছিল। আসলে কী করা উচিত বলে তোমার মনে হয় ?

উত্তর: আমার মত : মা-বাবার হাতে প্রচণ্ড মার খেয়ে ডুকরে কেঁদে উঠ বুকু প্রশ্নে উদ্ধৃত কথাটি বলেছিল। ছ-বছরের ছোটো ছেলে বুকু মার থেকে
এই শিক্ষাই পেয়েছিল যে, সবসময় সত্যি কথা বলতে হবে। কারও কাছে কিছু লুকোনো যাবে না। এই শিক্ষাটি যথাযথ। কিন্তু বুকুর মনে রাখা উচিত
ছিল অতিথিদের সঙ্গে নম্রভাবেই কথা বলা উচিত। এই কথা ভুলে যাওয়ার জন্যই সে তার বাবা-মায়ের সমস্যার কারণ হয়েছিল। তাই আমার মনে হয়, বড়োদের সব কথার মাঝখানে ছোটোদের কথা বলাও উচিত নয়। মনে রাখতে হবে, বড়োদের জগৎ আলাদা। তাঁরা যা বলেন বা করেন তা ছোটোদের ক্ষেত্রে শোভা পায় না। তবে এ কথাও ঠিক যে, বড়োদেরও
উচিত ছোটোদের সামনে সব কথা না বলা। তাতেও ছোটোদের মানসিকতার উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে।

৪.৪ গল্পে দুটি ছোটো ছেলের কথা পড়লে—বুকু আর ডাম্বল। দুজনের প্রকৃতিগত মিল বা অমিল নিজের ভাষায় লেখো

উত্তর: প্রকৃতিগত মিল: আশাপূর্ণা দেবীর লেখা 'কী করে বুঝব' গল্পে দুটি শিশুচরিত্রের সাক্ষাৎ মেলে—নির্মলার ছেলে বুকু আর বেণুমাসির ছেলে
ডাম্বল। গল্পে উল্লিখিত দুটি শিশুই অত্যন্ত স্পষ্টভাষী। শুধু তাই নয় তারা বেশ দুষ্টুও। স্বাভাবিকভাবেই সাত আর হয় বছরের এই দুটি শিশুর মন থেকে সরলতাও হারিয়ে যায়নি। বুকু সত্যি কথাটি স্পষ্ট করে অতিথিদের সামনে বলে দিয়ে তার মাকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। আবার ডাম্বলের খাওয়া দেখে বুকু যেসব উক্তি করেছে, তা শিশু হিসেবে তার মুখে বেমানান মনে হয়। একইভাবে ডাম্বল ইস্কুলে ভরতি হওয়ার প্রসঙ্গে নিজের বাবাকে হাড়কেপ্পন' বলে মা অর্থাৎ বেনুমাসিকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। আসলে কোন কথায় কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তা নিয়ে তাদের শিশুমনে কোনো ভাবনাই নেই।
প্রকৃতিগত অমিল: প্রকৃতিগত এই মিলটুকু ছাড়া উভয়ের মধ্যে অমিলও নেহাত কম নয়। পরিবার থেকে পাওয়া শিক্ষায় বুকু সচেতন, ডাম্বল তার বিপরীত। আত্মীয়ের বাড়ি এসেও কনুইয়ের ধাক্কায় চেয়ার উলটে, টেবিল-ঢাকা কুঁচকে টেনে ঝুলিয়ে, খাতাপত্র এলোমেলো করে, আলমারির পাল্লা খুলে সাজানো বই মেঝেতে ছড়িয়ে ডাম্বল খুবই বিশ্রী আচরণ করেছে। তার মায়ের কিংবা মাসির প্রশ্রয় না পেলে এটা করা তার পক্ষে আদৌ সম্ভব হত না। দরকারি বা বড়োদের জিনিসে ছোটোদের যে হাত দিতে নেই—এই শিক্ষা বুকুর থাকলেও ডাম্বলের নেই। বুকুর সেজোকাকার ভয়ের ধারও ধারেনি ডাম্বল। আবার, বুকুর মুখে তাদের নিন্দে করার কথা শুনে ভাম্বলের ঘুসি পাকিয়ে আসার মধ্যেও তার রাগ এবং প্রতিহিংসাপরায়ণতার পরিচয় পাওয়া যায়। এইরূপ আচরণ বুকুর মধ্যে একেবারেই ছিল না

৪.৫. গল্পটি পড়ে বুকুর প্রতি তোমার সমানুভূতির কথা ব্যক্ত করে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করো।
উত্তর: বুকুর প্রতি সহানুভূতি : আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘কী করে বুঝব’ গল্পটি পড়ে পল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র বুক্ত সম্পর্কে আমি সমানুভূতিশীল না হয়ে পারি না। বাড়িতে অতিথি আসার খেলা ছেড়ে সে ছুটে গিয়ে মাকে ডেকে নিয়ে এসেছিল। সেই অতিধিরাই যখন বিদায় নিলেন, তখন তাকে।প্রচণ্ড মার খেতে হল। অথচ এই বুকুই ভাম্বলের হাত থেকে সেজোকাকার বইগুলো রক্ষা করেছে, সেজোকাকিমার সঙ্গে চা ও মিষ্টি এনে অতিথিদের আপ্যায়ন করেছে। সর্বোপরি, সে যা সত্যিই ঘটতে দেখেছে, তা আপনজন মনে করে অতিথিদের সেসব হুবহু বলেছে। কোন্ ভুলের জন্য যে তাকে শাস্তি পেতে হল, তা সে শেষ অবধি বুঝে উঠতেই পারেনি। তাই এই ছ-বছরের ছেলেটির জন্য সত্যিই আমার খুব কষ্ট হয়েছে। বুকুর জায়গায় আমি থাকলে আমিও বোধহয় একইরকম কাজ করতাম। আসলে বুকুকে সুশিক্ষা দিয়ে তার বাবা-মা বড়ো করে তুলতে চেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু নিজেদের আচরণে সেই বাতি পরিবর্তন তারা ঘটাতে পারেননি। অনুসরণ করার মতো আদর্শ ব্যক্তিত্বের সন্ধান না পাওয়াই এক্ষেত্রে বুকুর প্রধান সমস্যা। তবে বুকুর সব আচরণই আমি সমর্থন করতে পারি না। বুকু যতই সত্যিকথা বলুক, বড়োদের কথার মধ্যে কথা না বললে তার বাবা মাকে বিব্রত হতে হত না। তবে এ কথাও উল্লেখ করা দরকার যে, বুকুর মতো ছোটো ছেলেমেয়েদের সামনে সব কথা বা আলোচনা করা উচিত নয়। তাই সবদিক ভেবে বলা যায়, সামান্য অপরাধে বুকু মার খাওয়ায় আমি দুঃখিত হয়েছি।

৫. একই অর্থযুক্ত শব্দ গল্প থেকে খুঁজে নিয়ে লেখো: সংবাদ,
পুস্তক, সন্তুষ্ট, কোমল, আপ্যায়ন ।

উত্তর:। সংবাদ—খবর
কোমল—মোলায়েম
পুস্তক —বই সন্তুষ্ট—প্রসন্ন
আপ্যায়ন—অভ্যর্থনা

১৬ নীচের শব্দগুলির সন্ধি বিচ্ছেদ করো: ইত্যবসরে, বজ্রাঘাত, ব্যাকুল, নিশ্চয়, রান্না, দুরন্ত, সন্দেশ ।
উত্তর:। ইত্যবসরে = ইতি + অবসরে
বজ্রাঘাত = বজ্র + আঘাত
ব্যাকুল = বি + আকুল
রান্না = রাঁধ + না
সন্দেশ = সম্ + দেশ
নিশ্চয় = নিঃ+ চয়
দুরন্ত = দুঃ + অন্ত

৭. নীচের শব্দগুলির কোটি বিশেষ্য এবং কোটি বিশেষণ খুঁজে নিয়ে লেখো। এরপর বিশেষ্যগুলির বিশেষণের রূপ
এবং বিশেষণগুলির বিশেষ্যের রূপ লেখো: মন, শিক্ষা, অবস্থা, গম্ভীর, শাসন, শয়তান, লাল, সর্বনেশে, ঘর, সুন্দর, দুরন্ত, মুখ, কথা হ্যাংলা।

উত্তর: মন (বি)—মানসিক (বিণ)
→ শিক্ষা (বি)—শিক্ষিত (বিণ)
→ গম্ভীর (বিণ)—গাম্ভীর্য (বি).
→ শয়তান (বিণ)—শয়তানি (বি)
→ সর্বনেশে (বিণ)—সর্বনাশ (বি)
→ অবস্থা (বি)—অবস্থিত (বিণ)
শাসন (বি)—–শাসিত (বিণ)
লাল (বিণ)—লালিমা (বি)
ঘর (বি) – ঘরোয়া (বিণ)
সুন্দর (বিণ) – সৌন্দর্য (বি)
মুখ (বি)—মৌখিক (বিণ)
দুরন্ত (বিণ)—দুরন্তপনা (বি)
কথা (বি)—–কথ্য (বিণ)
হ্যাংলা (বিণ) –হ্যাংলামো (বি)

৮. নীচের প্রতিটি উপসর্গ দিয়ে পাঁচটি করে নতুন শব্দ তৈরি করে
লেখো: অ, বি, বে, আ, ধ, অব
উত্তর: অ-অবেলা, অসীম, অচেনা, অজয়, অকাজ
→ ৰি—বিবাদ, বিকাশ, বিদেশ, বিমুখ, বিচার
→ ৰে বেছাল, বেকায়দা, বেনিয়ম, বেহায়া, বেদম
→ আ আচার, আবাদ, আসমুদ্র, আকর্ষণ, আগমন
→ প্র—প্রচার, প্রবাদ, প্রকৃষ্ট, প্রখ্যাত, প্রকাশ
> অৰ—অবহিত, অবলীলা, অবনমন, অবতরণ, অবনত