ছন্নছাড়া || অষ্টম শ্রেণী || হাতে কলমে প্রশ্নের উত্তর || chhanna chhara || classic bangla || question answer - school book solver

Saturday, 11 October 2025

ছন্নছাড়া || অষ্টম শ্রেণী || হাতে কলমে প্রশ্নের উত্তর || chhanna chhara || classic bangla || question answer

 


অষ্টম শ্রেণীর বাংলা
অধ্যায় ১২
ছন্নছাড়া
অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত

উৎস: ‘ছন্নছাড়া' কবিতাটি কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের ‘পুব-পশ্চিম' গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
নামকরণ: নামকরণ হল সাহিত্যের বিষয়ে প্রবেশের চাবিকাঠি। কার নামকরণই পাঠককে সাহিত্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে প্রাথমিক পরিচয় করা অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের ‘ছন্নছাড়া' কবিতাটি একদিকে বেকার যুবকদের প্রতি সমাজের অবহেলা, অবজ্ঞা, ঘৃণা, অন্যদিকে কবির সহানুভূতি।দুয়ের মিশ্রণেই রচিত। কবিতাটি গল্পের আদলে লিখিত। কবিতায় দেখানো হয়েছে, যেখানে এই কিছুই-না-পাওয়া বেকার যুবকরাও একটা বেওয়ারিশ ভিখারির প্রাণ বাঁচাতে লড়াই করে, সেখানে শিক্ষিত সব পাওয়া মানুষ
সহজেই সব সামাজিক দায় এড়িয়ে যায়। এই যুবকদের সম্বন্ধে সমাজের আপাত ধারণার কথাই উঠে এসেছে কবিতার নামকরণে। আসলে এই
নামকরণটি বিশেষভাবে প্রতীকী। কবির প্রশ্ন, সমাজ যাদের ছন্নছাড়া বলে, তারা কি আদৌ ছন্নছাড়া? এই কবিতাটির মাধ্যমে সমাজের কাছে তিনি এই প্রশ্নটিই তুলে ধরতে চেয়েছেন। কবিতার 'ছন্নছাড়া' নামকরণ তাই অনেকাংশেই প্রাসঙ্গিক। সুতরাং বলা যায়, গতানুগতিক নামকরণের
পরিবর্তে এই নামকরণ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
কবি পরিচিতি। অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান বাংলাদেশের নোয়াখালিতে জন্মগ্রহণ করেন। মুনসেফ হিসেবে কর্মজীবন
শুরু করে শেষপর্যন্ত তিনি জেলা জজ পদে উন্নীত হন। ১৩২৮ বঙ্গাব্দে 'প্রবাসী' পত্রিকায় 'নীহারিকা দেবী' ছদ্মনামে তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় এবং সে বছরই তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেন। কবির প্রথম উপন্যাস 'বেদে' বাংলা সাহিত্যে খুব জনপ্রিয়। তাঁর লেখা জীবনীগ্রন্থ 'পরমপুরুষ শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ' আর-একটি উল্লেখযোগ্য বই। এ ছাড়াও তিনি প্রায় শতাধিক বই লিখেছেন, যার মধ্যে 'বিবাহের চেয়ে বড়', 'প্রাচীর ও প্রান্তর' এবং 'অমাবস্যা', 'আমরা', 'নীল আকাশ'-এর মতো কাব্যগ্রন্থগুলি তাঁর নিজস্বতার চিহ্ন বহন করে। তাঁর লেখা 'কল্লোল যুগ' বইয়ের মাধ্যমে 'কল্লোল' পত্রিকার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা ধরা পড়েছে। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে এই বিখ্যাত সাহিত্যিকের মৃত্যু হয়।

সারসংক্ষেপ: ‘ছন্নছাড়া' কবিতাটি বেকার যুবকদের প্রতি কবির।সহানুভূতির নিদর্শন। এই কবিতায় একটি গাছকে তিনি প্রতীক হিসেবে
ব্যবহার করেছেন। প্রথমে দেখা যায়, এই গাছটি জীর্ণ, শুষ্ক, লতাপাতাহীন ও।ছাল-বাকলহীন। এই সব-কিছু-হারানো গাছের প্রেতচ্ছায়াকে তিনি বেকার সর্বহারা যুবকদের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করেছেন। সিনেমার টিকিট থেকে হাসপাতালের বেড, কলেজের সিট থেকে অনুসরণ করার মতো নেতা, প্রেরণা জাগানো প্রেম কিংবা মধ্যবিত্ত বাড়ির ফালতু একচিলতে রক—কোনো কিছুই এদের জন্য নয়। অথচ একটা নিরীহ বেওয়ারিশ ভিখারি গাড়িচাপা পড়লে তাকে বাঁচানোর জন্য লড়াই চালায় এরাই। ভিখারির মতো সমাজের চোখে নগণ্য একটা প্রাণের প্রতি এদের মর্যাদাবোধ কবিকে মুগ্ধ করে। এই বেকার যুবকরা প্রাণহীন নয়, তারা আশাবাদী। জীবনের ও প্রাণের মর্ম তারা বোঝে। সমাজ তাদের যতই বাঁকা চোখে দেখুক না কেন, এরাই প্রবল প্রাণশক্তি নিয়ে শেষপর্যন্ত সমাজের অবহেলিত মানুষদের পাশে দাঁড়ায়। কবিও অনুভব করেন, ছন্নছাড়া ছেলের দল যখন "প্রাণ আছে, এখনও প্রাণ আছে” বলে চিত্কার করে ওঠে, যেন সেই আবেগে জেগে ওঠে প্রকৃতিও। তাই কবিতার শেষে প্রাণের প্রতীক হিসেবে কবি আবার গাছটিকেই ফিরিয়ে আনেন। দেখা যায়, সেই।রুক্ষ, রিঙ্ক, জীর্ণ গাছটিই ভরে উঠেছে পাতায় পাতায় ফুলে। সবুজে সবুজে
সেজে উঠেছে সে। আসলে এই কবিতায় মৃতপ্রায় ভিখারিটির সম্বন্ধে বলা 'প্রাণ আছে' কথাটিই সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। মৃতপ্রায় গাছটির আবার
পাতা, ফুলে ভরে ওঠার মধ্য দিয়ে সেই প্রাণেরই প্রকাশ দেখা গেছে। এভাবেই মানুষ আর প্রকৃতি এই কবিতায় একই প্রাণসত্তার মধ্যে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।


'হাতেকলমে’ অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর
১. নীচের র প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
১.১ অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা দুটি বইয়ের নাম লেখো।
উত্তর: অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা দুটি বই হল 'অমাবস্যা' ও 'কল্লোল যুগ।

১.২, তিনি কোন পত্রিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন ?
উত্তর: অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত 'কল্লোল' পত্রিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন।

২ . নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর একটি বাক্যে লেখো।
২.১ কবি প্রথমে গাছটিকে কেমন অবস্থায় দেখেছিলেন?
উত্তর: কবি প্রথমে গাছটিকে সবুজের লেশমাত্রহীন জীর্ণ, শীর্ণ, রুক্ষ, শুষ্ককঙ্কালসার অবস্থায় দেখেছিলেন।

২.২ “ড্রাইভার বললে, ওদিকে যাব না।”—ওদিকে না যেতে চাওয়ার কারণ কী ?
উত্তর: রাস্তার মাঝখানে কয়েকটি বেকার যুবকদের আড্ডা দিতে দেখে। ট্যাক্সি-ড্রাইভার সেই পথ দিয়ে গাড়ি নিয়ে যেতে চায়নি, কারণ তার মতে ওই যুবকরা হয়তো তার গাড়িতে উঠতে চাইবে এবং ঘুরে বেড়ানোর মতলব করবে।

২.৩ “তাই এখন পথে এসে দাঁড়িয়েছে সড়কের মাঝখানে। -সড়কের মাঝখানে, পথে এসে দাঁড়ানোর কারণ কী ?
উত্তর: ছন্নছাড়া যুবকদের সড়কের মাঝখানে এসে দাঁড়ানোর কারণ হল ঘরে তাদের স্থান নেই, খেলার জন্য মাঠ নেই, আড্ডা দেওয়ার জন্য
মধ্যবিত্ত বাড়ির একচিলতে রকটাও ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

২.৪ “আমি বললুম, না ওখান দিয়েই যাব।”—কবির 'ওখান' দিয়েই যেতে চাওয়ার কারণ কী?
উত্তর: ওখান দিয়ে গেলে পথ কম হয়, অর্থাৎ ওই শখটি দিয়ে গেলে সময় বাঁচে বলে কবি ওই পথ দিয়েই যেতে চেয়েছেন।

২.৫. “ওই দেখতে পাচ্ছেন না ভিড়?”- ওখানে কীসের ভিড় ?
উত্তর: 'ওখানে' অর্থাৎ প্রশ্নে উল্লিখিত স্থানে একটা বেওয়ারিশ ভিখারি গাড়িচাপা পড়েছিল, আর সেটা দেখতেই লোকের ভিড় জমে গিয়েছিল।

২.৬ “কে সে লোক?”- লোকটির পরিচয় দাও।
উত্তর: প্রশ্নে উল্লিখিত লোকটি হল একটি নিরীহ বেওয়ারিশ ভিখারি।

২.৭ “চেঁচিয়ে উঠল সমস্বরে "কী বলে তারা সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠল?
উত্তর: তারা অর্থাৎ রাস্তায় আড্ডা-দেওয়া বেকার যুবকের দল সমস্বরে
চেঁচিয়ে বলে উঠল, “প্রাণ আছে, এখনও প্রাণ আছে।”

২.৮ “আমি নেমে পড়লুম তাড়াতাড়ি”—কবি তাড়াতাড়ি নেমেপড়লেন কেন?
উত্তর: গাড়িচাপা পড়া ভিখারির রক্তের দাগ পাছে কবির জামাকাপড়ে লেগে গিয়ে তাঁর ভব্যতা ও শালীনতার ব্যাঘাত ঘটায়, তাই তিনি গাড়ি
থেকে তাড়াতাড়ি নেমে পড়লেন।

২.৯ “ফিরে আসতেই দেখি”–ফেরার পথে কবি কী দেখতে পেলেন?
উত্তর: কবি যখন ফিরে এলেন তখন তিনি দেখলেন, গলির মোড়ের সেই শুকনো গাছটা হাজার হাজার সোনালি কচি পাতা, সুগন্ধ ছড়ানো গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল এবং রং-বেরঙের পাখিতে ভরে গেছে।
২.১০ “অবিশ্বাস্য চোখে দেখলুম” – কবির চোখে অবিশ্বাসের ঘোর কেন ?
উত্তর: কিছুক্ষণ আগে দেখা প্রাণহীন, শুষ্ক, রুক্ষ গাছের মধ্যে অনন্ত প্রাণের প্রকাশ দেখে কবির অলৌকিক ঘটনা বলেই মনে হয়, তাই তাঁর চোখে
অবিশ্বাসের ঘোর লাগে।

৩.নির্দেশ অনুসারে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
৩.১ “ওই পথ দিয়ে/জরুরি দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি করে।”—কবির যাত্রাপথের অভিজ্ঞতার বিবরণ দাও।
উত্তর: যাত্রাপথের অভিজ্ঞতার বিবরণ: কবি ট্যাক্সি করে যে পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন, সে পথেই গলির মোড়ে তিনি লতা-পাতাহীন শুকনো মৃতপ্রায় একটি গাছ দেখেন। একটু দূরে পথের মাঝখানে একদল ছন্নছাড়া যুবক আড্ডা দিচ্ছিল। ট্যাক্সি-ড্রাইভারের কথায়, এরা যখন-তখন হাওয়া খাওয়ার, জন্য গাড়ি থামিয়ে লিফ্ট চায়। তাই ড্রাইভার সে পথে যেতে চায়নি। কিন্তু কবি প্রায় জোর করেই সে-পথে যান। শেষপর্যন্ত ওই ছন্নছাড়া যুবকেরা গাড়িচাপা পড়া এক ভিখারির দলা পাকানো রক্তাক্ত দেহ ওই ট্যাক্সিটিতে তুলে নেয়। কবি ভিখারির রক্তের দাগ থেকে নিজেকে বাঁচাতে ট্যাক্সি থেকে নেমে পড়েন। যাওয়ার পথে তিনি গলির মোড়ে একটি জীর্ণ, শুষ্ক গাছ দেখেন। অথচ, ফেরার পথে একই গাছের কিশলয়-সজ্জা তাঁর যাত্রাপথের
অভিজ্ঞতাকে অনন্য করে তুলেছে।
এই “গলির মোড়ে একটা গাছ দাঁড়িয়ে/গাছ না গাছের প্রেতচ্ছায়া- 

৩.২"একটি গাছ দাঁড়িয়ে আছে বলেও কেন পরের পদ্ধতিতে তাকে 'গাছের প্রেতচ্ছায়া' বলা হয়েছে তা বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: গাছ বলতে যা বোঝায় অর্থাৎ পাতা- ফুল-সতেজতা-সরসতা-এ সবের কোনো কিছুই কবির দেখা গাছটিতে ছিল না। বরং সেটি ছিল শুরু, রুক্ষ, রিক্ত ও জীর্ণ—যেন কাঠি দিয়ে সাজানো কোনো গাছের কঙ্কাল। গাছটিতে লতাপাতা, ছাল-বাকল কিছুই ছিল না, ছিল না একটুও সবুজের ছোঁয়া। তাই কবির মনে হয়েছে, তাকে গাছ না বলে 'গাছের প্রেতচ্ছায়া' বলাই যুক্তিসংগত হবে।

৩.৩ “ওই পথ দিয়ে/জরুরি দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি করে।”—এভাবে কবিতায় উত্তম পুরুষের রীতি কীভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, অন্তত পাঁচটি পক্তি উদ্ধৃত করে বুঝিয়ে দাও ।
উত্তর: কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ‘ছন্নছাড়া' কবিতাটি উত্তম পুরুষের রীতিতেই লিখেছেন। কবিতায় থাকা এই রীতিতে লেখা পাঁচটি পক্তি
হল—
[১] “ওই পথ দিয়ে/জরুরি দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি করে।”
[২] “আমি বললুম, না ওখান দিয়েই যাব।”
[৩] “ওদের কাছাকাছি হতেই মুখ বাড়িয়ে/জিজ্ঞেস করলুম,”
[৪] “আমি নেমে পড়লুম তাড়াতাড়ি।”
[৫] “ফিরে আসতেই দেখি”

৩.৪ “কারা ওরা?”—কবিতা অনুসরণে ‘ওদের' পরিচয় দাও।
উত্তর: কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত রচিত ‘ছন্নছাড়া' কবিতায় উল্লিখিত ‘ওদের' পরিচয় হল—ওরা আমাদের দেশের হাজার হাজার বেকার
যুবকদের কয়েকজন। কবিতায় এই ছন্নছাড়া যুবকদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে যে, তারা নীতিহীন, আদর্শহীন। তাদের ভদ্রতাবোধ নেই, তারা শ্লীলতা-।শালীনতা বোঝে না। এদের জন্য কলেজে সিট নেই, অফিসে চাকরি নেই। কারখানায় কাজ নেই, ঘরে বাইরে কোথাও কোনো জায়গা নেই, এদের প্রতি কারোরই মনে প্রেম বা দরদ কিছুই নেই। এমনকি সামান্য আড্ডা দেওয়ার জন্য মধ্যবিত্ত বাড়ির যে রকটি বরাদ্দ ছিল, সেটিও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তাই কবির মতে, ওরা হল ‘নেই রাজ্যের বাসিন্দে’।

৩.৫ “ঘেঁষবেন না ওদের কাছে।”—এই সাবধানবাণী কে উচ্চারণ করেছেন? 'ওদের' বলতে কাদের কথা বোঝানো হয়েছে? ওদের
কাছে না ঘেঁষার পরামর্শ দেওয়া হল কেন ?

উত্তর: সাবধানবাণী উচ্চারণকারী: কবি যে ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন তার ড্রাইভার এই সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছিলেন।
> 'ওদের' পরিচয়: 'ওদের' বলতে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আড্ডা দেওয়া একদল ছন্নছাড়া বেকার যুবককে বোঝানো হয়েছে, যাদের পরনে।চোঙা প্যান্ট, চোখা জুতো, আর মেজাজ রুক্ষ।
→ পরামর্শের কারণ: কবিতায় উল্লিখিত এই যুবকরা ছন্নছাড়া, নীতিহীন, বিনয়-ভদ্রতাহীন এক 'নেই রাজ্যের' বাসিন্দা। ওরা নাকি গাড়ি থামিয়ে লিফ্ট চায় এবং এভাবে ড্রাইভার ও যাত্রীকে উত্যক্ত করে। তাই ট্যাক্সি- ড্রাইভার কবির প্রতি এই ধরনের সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছিলেন।

৩.৬ “তাই এখন এসে দাঁড়িয়েছে সড়কের মাঝখানে। ” – এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের জীবনের এমন পরিণতির কারণ
কবিতায় কীভাবে ধরা পড়েছে তা নির্দেশ করো।

উত্তর: উদ্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত রচিত ছন্নছাড়া' কবিতায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আড্ডা দেওয়া একদল ছন্নছাড়া বেকার যুবকের কথা বলা হয়েছে।
> ছন্নছাড়া পরিণতির কারণ: বেকার যুবকদের জীবনের এই পরিস্থিতির প্রধান কারণ, শিক্ষার শেষে কাজের সুযোগ না পাওয়া। এদের জীবনে কিছুই নেই। কলেজের সিট থেকে আরম্ভ করে খেলার টিকিট, হাসপাতালের বেড, বাড়িতে ঘর, খেলার মাঠ, অনুসরণযোগ্য নেতা, প্রেরণা জাগানো প্রেম কিছুই নেই। এমনকি আড্ডা দেওয়ার জন্য মধ্যবিত্ত বাড়ির একচিলতে রকটুকুও নেই। সেটিও ভাঙা পড়েছে। এ ছাড়া বেকার যুব সম্প্রদায়ের অন্ধকার ভবিষ্যতের পিছনে রাষ্ট্রব্যবস্থার কর্মসংস্থানের অপারগতাও অনেকখানি দায়ী। কাজেই আক্ষরিক অর্থেই রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছে যুব সম্প্রদায়। সেখানেই তাদের আড্ডাস্থল।

৩.৭ “জিজ্ঞেস করলুম/তোমাদের ট্যাক্সি লাগবে?”—প্রশ্নবাক্যটিতে প্রশ্নকর্তার কোন্ অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে? তাঁর এই প্রশ্ন ছুঁড়ে
দেওয়ার পর কীরূপ পরিস্থিতি তৈরি হল?

উত্তর: প্রশ্নকর্তার অনুভূতি : ট্যাক্সি-ড্রাইভার যে অর্থে যুবকদের ছন্নছাড়া ভেবেছিলেন, কবিতার কথক সেই অর্থে তাদের সমাজের কাছে
অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করেননি। বরং এই যুবকদের প্রতি তাঁর যথেষ্ট সহানুভূতিই ছিল।
→ উদ্ভূত পরিস্থিতি: কবিতার কথক উদ্ধৃত প্রশ্নটি করার পর তিনজন যুবক গাড়িতে চেপে বসে। কিছুদূর গিয়ে তারা গাড়িচাপা-পড়া এক
বেওয়ারিশ ভিখারিকে চিকিৎসার জন্যে ওই গাড়িতে তুলে নেয়। আর দুর্ঘটনাগ্রস্ত ভিখারির রক্তের দাগ যাতে কবির জামায় না লাগে, তার জন্য তাঁকে ট্যাক্সি থেকে নেমে যেতে হয়।

৩.৮ “প্রাণ আছে, এখনও প্রাণ আছে।”—এই দুর্মর আশাবাদের তপ্ত শঙ্খধ্বনি' কবিতায় কীভাবে বিঘোষিত হয়েছে তা আলোচনা করো।
উত্তর: আশাবাদের ঘোষণা: কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত তাঁর ‘ছন্নছাড়া' কবিতাটির মধ্য দিয়ে প্রাণের আশাবাদ এবং ‘এক প্রত্যয়ের তপ্ত
শঙ্খধ্বনি' ব্যক্ত করেছেন। সর্বহারা অছাড়া: কবিতায় বর্ণিত তথাকথিত 'নেই রাজ্যের বাসিন্দে রোখা মেজাজের বেকার যুবকরা সমাজে ছন্নছাড়া হিসেবেই পরিচিত। তারা বিনয়ী নয়, তাদের ভদ্রতা-শালীনতা নেই। তাদের জন্য সর্বত্রই ‘না’।
পরোপকারী যুবকেরা: কিন্তু আপাতভাবে ছন্নছাড়া এই যুবকরাই রাস্তায় পড়ে থাকা এক বেওয়ারিশ ভিখারির মরণাপন্ন অবস্থায় তার পাশে এসে দাঁড়ায়। ভিখারিটির প্রাণ বাঁচিয়ে তুলতে তারা তৎপর হয়। চারপাশের প্রতিবন্ধকতা ও নিরাশার মধ্যেও তারা প্রাণের সন্ধান করে।
প্রাণের হদিশ: শুষ্ক লতাপাতাহীন গাছটির সোনালি কচিপাতা, ফুল-ফল।এবং রং-বেরঙের পাখিতে ভরে ওঠার মধ্য দিয়ে তাদের এই ইতিবাচক ।মানসিকতার প্রতিফলন ঘটেছে। অর্থাৎ সমস্ত নিরাশা এবং বাধার মধ্যেও অমরত্বের বাণী ব্যক্ত হয়েছে।  মনুষ্যত্বের সন্ধান: মনুষ্যত্ব হারিয়ে যায় না। বরং মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মধ্যেই প্রাণকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদ অনুভব করা যায়। কবি এই ব্যাপারে আশাবাদী। তাই তাঁর কণ্ঠে প্রত্যয়ের তপ্ত শঙ্খধ্বনি শোনা যায়।

৩.৯ কবিতায় নিজের ভব্যতা ও শালীনতাকে বাঁচাতে চাওয়া মানুষটির ছন্ন'ছাড়া'-দের প্রতি যে অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে তা বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: ‘ছন্নছাড়া'-দের প্রতি কবির অনুভূতি; ছন্নছাড়া' কবিতার কথক তথাকথিত শিক্ষিত, সভ্য, শালীন সমাজের প্রতিনিধি। তাই ছন্নছাড়া
হিসেবে পরিচিত যুবকের দল যখন সমস্ত প্রতিবন্ধকতা ও নৈরাশ্যের মধ্যেও বেওয়ারিশ ভিখারিটির প্রাণ বাঁচাতে তৎপর হয়েছে, তখনই সভ্য, শিক্ষিত কথক সেই পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছেন। কিন্তু দূর থেকে যুবকদের প্রতি কথকের শুধু সহানুভূতিই নয়, গভীর শ্রদ্ধার
মনোভাবও প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর মনে হয়েছে, এই যুবকেরা যে ‘নেই।রাজ্যে'-র বাসিন্দা, সে-কথা হয়তো ঠিক। কিন্তু চারপাশের এত প্রতিবন্ধকতা ও নিরাশার মধ্যেও তাদের মনুষ্যত্ববোধ একেবারেই হারিয়ে।যায়নি। বরং সফল মানুষদের তুলনায় তা অনেক বেশিই আছে। সর্বহারা, উপেক্ষিত ও নিরীহ এক ভিখারির প্রাণ বাঁচানোর প্রয়াসের মাধ্যমে তাদের সেই মনুষ্যত্ববোধেরই প্রকাশ ঘটেছে।

৩.১০ কবিতায় ‘গাছটি' কীভাবে প্রাণের প্রতীক হয়ে উঠেছে তা।আলোচনা করো।
উত্তর: প্রাণের প্রতীক হিসেবে গাছ: অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত তাঁর।‘ছন্নছাড়া’ কবিতায় দু-বার গাছের প্রসঙ্গ এনেছেন। প্রথম যখন গাছটিকে কবি দেখেন, তখন সেটিকে তাঁর গাছের ‘প্রেতচ্ছায়া' বলে মনে হয়েছিল।।লতাপাতাহীন, রুক্ষ, জীর্ণ, সরু কাঠির মতো ডাল নিয়ে সে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু যখন এক বেওয়ারিশ ভিখারির সামান্য প্রাণটুকুকে মর্যাদা দিয়ে
ছন্নছাড়ারা তাঁকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করল, তখনই আবার কবির চোখে পড়ল সেই গাছটিকে। কবি দেখলেন, সেই প্রেতচ্ছায়া-রূপ গাছটিই অজস্র।সোনালি কচিপাতা আর সুগন্ধি ফলে ভরে উঠেছে। রং বেরঙের পাখি গানে ভরে উঠেছে পরিবেশ ।
তাই এই গাছটির দুটি প্রতীকী রূপ ধরা পড়েছে কবিতাটিতে। প্রথমে ওই গাছটি হল দয়াহীন, আশাহীন, রুক্ষ্ম ও ছন্নছাড়া বাস্তব সমাজের প্রতীক।
দ্বিতীয় ক্ষেত্রে তার পাতা-ফুল-ফলে সজ্জিত মধুর রূপটি হল মানুষের অন্তহীন মনুষ্যত্ব, তার আশা, অদম্য প্রাণশক্তি আর সুকুমার প্রবৃত্তির প্রতীক।

৩.১১ “এক ক্ষয়হীন আশা/এক মৃত্যুহীন মর্যাদা।”—“প্রাণকে’ কবির।এমন অভিধায় অভিহিত করার সংগত কারণ নিজের ভাষায়
বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: প্রাণকে অভিধা প্রদানের কারণ: কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত।তাঁর ‘ছন্নছাড়া’ কবিতায় একটি ঘটনার মাধ্যমে দুটি দিক উন্মোচন করার চেষ্টা করেছেন। কবি একদল যুবকের কথা বলেছেন যাদের জীবনে কিছুই নেই। খেলার টিকিট থেকে শুরু করে কলেজের সিট, হাসপাতালের বেড বা প্রেরণা জাগানো প্রেম কোনো কিছুই এদের জন্য নয়। এরা যেন রুক্ষ, রুষ্ট,।কর্কশ এক পৃথিবীতে বাস করে। কিন্তু এই যুবকরাই প্রাণের মর্ম বোঝে। যতক্ষণ প্রাণ, ততক্ষণই যে আশায় বুক বাঁধা যায়, তা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারে এই যুবকরা। মানবিকতার গুণে সমৃদ্ধ তারা। তাই বাইরে থেকে এদের অশালীন, অসভ্য বা রুক্ষ বলে মনে হলেও এরাই।শেষপর্যন্ত সেইসব মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে যাদের পাশে কেউ নেই। এরাই প্রাণের মূল্য বোঝে। তাই এদের মতো আর কেউই প্রাণকে
এমনভাবে শ্রদ্ধা ও মর্যাদার সঙ্গে বরণ করে নিতে পারে না।
৪. নীচের প্রতিটি শব্দের দল বিভাজন করে দেখাও :
এলোমেলো, ছন্নছাড়া, নৈরাজ্যে, বাসিন্দে, শালীনতা, আত্মীয়তা, শঙ্খধ্বনি, পত্রপুঞ্জে।

উত্তর: এলোমেলো—এ (মুক্ত) · লো (মুক্ত). মে (মুক্ত). লো (মুক্ত)
ছন্নছাড়া-ছন্ (রুদ্ধ) . নো (মুক্ত). ছা (মুক্ত) - ড়া (মুক্ত)
নৈরাজ্যেনৈ (মুক্ত) রাজ (রুদ্ধ) · জে (মুক্ত)
বাসিন্দে-বা (মুক্ত) · সিন্ (রুদ্ধ) . দে (মুক্ত)
শালীনতা—শা (মুক্ত) . লী (মুক্ত) - (মুক্ত), তা (মুক্ত)
আত্মীয়তা—আৎ (রুদ্ধ) - তী (মুক্ত) · য় (মুক্ত) · তা (মুক্ত)
শঙ্খধ্বনি—শ (রুদ্ধ) - খো (মুক্ত) - ধ্ব (মুক্ত) নি (মুক্ত)
পত্রপুঞ্জে-পৎ (বুদ্ধ) - রো (মুক্ত) - পুন্ (রুদ্ধ) · জে (মুক্ত)

৫ . নীচের প্রতিটি শব্দের ব্যুৎপত্তি নির্ণয় করো : বর্তমান, ভদ্রতা, সম্ভাষণ, গতি, ভিখিরি, ভব্যতা, রুষ্ট, জিজ্ঞেস, পিছে ।
উত্তর: বর্তমান = √ বৃৎ+ শানচ্
ভদ্রতা = ভদ্র + তা
সম্ভাষণ = সম্-√ভাষ্ + অনট্
গতি = √গম্ + ক্তি
ভিখিরি (ভিখারি) = ভিখ্ + আরি = ভিখারি > ভিখিরি
ভব্যতা = তব্য + তা
রুষ্ট = √রুষ্ + ত
জিজ্ঞেস (জিজ্ঞাসা) = √জ্ঞা + সন্ + অ + আ
পিছে = পিছ + এ

৬ .নীচের শব্দগুলিতে ধ্বনি পরিবর্তনের কোন্ কোন্ নিয়ম কাজ করছে তা দেখাও : জুতো, বাসিন্দে, ক্ষেত, চোখ, কদ্দুর, ভিখিরি।
উত্তর: জুতো : জুতা > জুতো (স্বরসংগতি)
বাসিন্দে : বাসিন্দা > বাসিন্দে (স্বরসংগতি)
ক্ষেত (আকাদেমি বানান অভিধান অনুযায়ী ‘খেত’) : ক্ষেত্র > ক্ষেত (শব্দের শেষে 'র' ধ্বনি লোপ অর্থাৎ অন্তব্যঞ্জনলোপ)
চোখ : চক্ষু > চখ (সমীভবনের ফলে ক্ষু > খ + উ)
চখৃখু > চোখ [চ্ + অচ্ + ও]
[খখু> খ্, খৃ ও উ ধ্বনি লোপ]
কদ্দুর : কত দূর > কদ্দুর (সমীভবন)
ভিখিরি : ভিখারি > ভিখিরি (স্বরসংগতি)

৭. কোন্ শব্দে কী উপসর্গ আছে আলাদা করে দেখাও:
প্রতিশ্রুতি, বেওয়ারিশ, অনুসরণ, প্রচ্ছন্ন, অভ্যর্থনা, অধিকার।
উত্তর:
মূলশব্দ > উপসর্গ > শব্দ
প্রতিশ্রুতি > প্রতি > শ্রুতি
বেওয়ারিশ >  বে > ওয়ারিশ
প্রচ্ছন্ন > প্র > চ্ছন্ন
অভ্যর্থনা > অভি  > অর্থনা
অনুসরণ > অনু > সরণ
অধিকার > অধি > কার

৮. নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করো।
৮.১ ওই পথ দিয়ে জরুরি দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি করে। কার (জটিল বাক্যে)
উত্তর: ওই যে পথ সেই পথ দিয়ে জরুরি দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি করে।
৮.২ দেখছেন না ছন্নছাড়া কটা বেকার ছোকরা রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর : দেখছেন না ছন্নছাড়া কটা বেকার ছোকরা রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে এবং আড্ডা দিচ্ছে?
৮.৩ কারা ওরা ? (প্রশ্ন পরিহার করো)
উত্তর: ওদের পরিচয় দিন।

৮.৪ ঘেঁষবেন না ওদের কাছে। (ইতিবাচক বাক্যে)
উত্তর: ওদের থেকে দূরে থাকুন।

৮.৫ একটা স্ফুলিঙ্গহীন ভিজে বারুদের স্তূপ (না-সূচক বাক্যে)
উত্তর: একটা ভিজে বারুদের স্তূপ যেখানে কোনো
স্ফুলিঙ্গ নেই।
৮.৬. জিজ্ঞেস করলুম, তোমাদের ট্যাক্সি লাগবে
? (পরোক্ষ উক্তিতে)
উত্তর: তাদের ট্যাক্সি লাগবে কি না জিজ্ঞেস করলুম।
৮.৭ আমরা খালি ট্যাক্সি খুঁজছি। (জটিল বাক্যে)
উত্তর: আমরা এমন একটা ট্যাক্সি খুঁজছি যেটা খালি । (ক্রিয়ার কাল নির্দেশ করো)
৮.৮ দেখতে দেখতে গুচ্ছে গুচ্ছে উথলে উঠেছে ফুল।
উত্তর: পুরাঘটিত বর্তমান কাল ৷