বনভোজনের ব্যাপার || অষ্টম শ্রেণী || হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর || BANOBHOJANER BAPAR || class 8 || question answer
অষ্টম শ্রেণি বাংলা
বনভোজনের ব্যাপার
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
অধ্যায় ৪
উৎস: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত 'বনভোজনের ব্যাপার' গল্পটি প্রণবকুমার মুখোপাধ্যায় সংকলিত ও সম্পাদিত ‘টেনিদা সমগ্র' গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
নামকরণ: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'বনভোজনের ব্যাপার' গল্পে দেখা যায়, টেনিদা ও তার তিন সঙ্গী বনভোজনের পরিকল্পনা করেছে। প্রথমে যে খাবারের তালিকা স্থির হয়, তা অত্যন্ত খরচসাপেক্ষ হওয়ায় নতুন করে আবার একটা তালিকা বানায় তারা। প্যালা সেই তালিকায় রাজহাঁসের ডিম যোগ করে৷ প্যালার উপরই দায়িত্ব পড়ে সেই ডিম নিয়ে আসার। ডিম আনতে গিয়ে প্যালা রাজহাঁসের কামড় খেয়ে পালিয়ে আসে এবং মাদ্রাজি ডিম নিয়েই বনভোজনে যেতে হয়। যাওয়ার পথেই টেনিদা সব লেডিকেনি সাবাড় করে দেয়। তারপর পিছল রাস্তায় একে একে হাবুল, প্যালা আর টেনিদা পড়ে যায় এবং ডিম, আচার ও রসগোল্লা নষ্ট হয়। শেষপর্যন্ত রান্না শুরু হলে প্যালার ভুলে নষ্ট হয় মাছের কালিয়া। হাবুল ও ক্যাবলা কাঠ আনতে গেলে টেনিদা ঘুমিয়ে পড়ে। বাঁদরের উৎপাতে নষ্ট হয়ে যায় রান্নার অন্যান্য সরঞ্জামও।
শেষপর্যন্ত গাছের পাকা জলপাই খেয়ে পেট ভরাতে হয় তাদের। বনভোজন পরিণত হয় ফলভোজনে । এই গল্পের প্রধান বিষয় বনভোজন হলেও শেষপর্যন্ত কিন্তু তা সফল হয়নি।
গল্পটিতে শুধু বনভোজনের বিষয় নিয়েই কথা হয়েছে। বনভোজনে যাওয়া হলেও বনভোজন পরিণত হয়েছে ফলভোজনে। তবে সেই ফলভোজন বনভোজনের ব্যর্থতাকে তুলে ধরলেও বনভোজনকে কেন্দ্র করেই গল্পটি গড়ে উঠেছে। তাই 'বনভোজন' শব্দটির গুরুত্ব কমেনি। সে কারণেই লেখক গল্পটির নামকরণ 'বনভোজন' না করে 'বনভোজনের ব্যাপার' করায় তা যথার্থ এবং সার্থক হয়ে উঠেছে বলা যায় ৷
লেখক পরিচিতি। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন দিনাজপুরের বালিয়াডাঙ্গির বাসিন্দা। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর আসল নাম তারকনাথ। বাংলাদেশের বরিশাল জেলার বাসুদেব পাড়ায় তাদের আদি নিবাস। ছাত্র অবস্থাতেই তিনি কাব্যরচনার মাধ্যমে সাহিত্যসাধনা শুরু করেন। পরে গল্প, উপন্যাস, নাটক প্রভৃতি রচনা করে আপন প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। সমালোচক ও সাংবাদিক হিসেবেও তিনি খ্যাতিলাভ করেছিলেন। তাঁর তিন খণ্ডের উপন্যাস 'উপনিবেশ' পাঠকসমাজে তাঁকে প্রতিষ্ঠা এনে দেয়। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় 'শনিবারের চিঠি' পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে 'বসুমতী' পত্রিকা তাঁকে সংবাদ-সাহিত্যের সর্বোচ্চ পুরস্কার দান করে। তিনি 'দেশ' পত্রিকায় ‘সুনন্দ” ছদ্মনামে নিবন্ধ লিখতেন। তিনি কয়েকটি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যও রচনা করেছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল— ' 'সূর্যসারথি', 'তিমিরতীর্থ', 'শিলালিপি', 'ইতিহাস', 'বৈতালিক', উপনিবেশ', ‘বীতংস', 'একতলা', 'রামমোহন (নাটক)', 'ছোটোগল্প বিচিত্রা', 'পদসঞ্চার', 'সাহিত্য ও সাহিত্যিক’, ‘বাংলা গল্পবিচিত্রা', 'ছোটোগল্পের সীমারেখা', 'রবীন্দ্রনাথ' প্রভৃতি। তাঁর লেখা 'ভাড়াটে চাই' ও 'আগন্তুক' নাটক দুটি সাহিত্যজগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তাঁর রচিত বহু গান চলচ্চিত্রে ও রেকর্ডে গৃহীত হয়েছে। কিশোরদের জন্য নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের অবিস্মরণীয় সৃষ্টি টেনিদা চরিত্র। শুধু টেনিদাই নয় টেনিদার সঙ্গে ক্যাবলা, হাবুল, প্যালা চরিত্রগুলিও সাহিত্যরসিকদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। বনভোজনের ব্যাপার' সে-রকমই একটা মজার গল্প। তিনি ‘টেনিদা’র গল্প ছাড়াও কিশোরদের জন্য আরও অনেক গল্প রচনা করেছেন। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে পরলোক গমন করেন।
বিষয়সংক্ষেপ: টেনিদা, ক্যাবলা, হাবুল আর প্যালা—এই চার জন মিলে ঠিক করে বনভোজনে যাবে। প্রথমে খাবার তালিকায় আসে বিরিয়ানি, পোলাও, কোর্মা, কোপ্তা, কাবাব ইত্যাদি। এর জন্য বাবুর্চি, চাকর, মোটরগাড়ি এবং দুশো টাকা দরকার। সেই পরিমাণ টাকা চাঁদা না ওঠায় শেষপর্যন্ত ঠিক হয় খিচুড়ি, আলুভাজা, পোনামাছের কালিয়া, আমের আচার, রসগোল্লা, লেডিকেনি দিয়েই বনভোজন সারা হবে। এরই মধ্যে প্যালা রাজহাঁসের ডিমের কথা তোলে এবং তাকেই রাজহাঁসের ডিম জোগাড়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ডিমের জন্য প্যালা পাড়ার ভন্টাকে ধরে। দু-
আনার পাঁঠার ঘুগনি আর ডজনখানেক ফুলুরি খেয়ে ভষ্টা তাদের পোষা রাজহাঁসের ডিম দিতে রাজি হয়। প্যালা নিজের হাতে ডিম নিতে গিয়ে রাজহাঁসের কামড় খেয়ে পালিয়ে আসে। শেষপর্যন্ত পয়সা দিয়ে মাদ্রাজি ডিম নিয়েই সে বনভোজন হবে। ক্যাবলার মামার বাগানবাড়িতে বনভোজন হবে বলে স্থির হয়। শ্যামবাজার থেকে ট্রেনে উঠে বাগুইআটি ছাড়িয়ে আরও চারটে স্টেশন পেরিয়ে সেখানে পৌঁছোতে হয়। এই সময়টা কাটাতে টেনিদা লেডিকেনির হাঁড়ি একাই
সাবাড় করে দেয়। স্টেশনে নেমে কাদামাখা পিছল পথে চলতে গিয়ে পড়ে যায় হাবুল। তার হাতে ডিমের পুঁটলি থাকায় সব ডিম নষ্ট হয়ে যায় । এরপর প্যালাও পড়ে যায় এবং নষ্ট হয় আচার। শেষপর্যন্ত টেনিদা নিজেই পড়ে যায়। ভেঙে যায় রসগোল্লার হাঁড়ি। তখন স্থির হয়, এবার শুধু খিচুড়ি, মাছের কালিয়া আর আলুভাজা দিয়েই বনভোজন সারা হবে। প্যালা রাঁধতে গিয়ে কাঁচা তেলে মাছ দেওয়ায় মাছের কালিয়া ‘মাছের হালুয়া'-য় পরিণত হয়। টেনিদার মারের ভয়ে সে পালিয়ে যায়। টেনিদা নিজেই খিচুড়ি রাঁধবে বলে হাবুল ও ক্যাবলাকে কাঠ আনতে পাঠালে তারাও প্যালার কাছে এসে জোটে। এই সময় বাগানে জলপাই গাছ দেখে ওই তিনজন মনের সুখে জলপাই খেতে থাকে। অনেকক্ষণ টেনিদার সাড়াশব্দ নেই দেখে তারা যখন টেনিদার কাছে ফেরে, তখন দেখে টেনিদা গাছে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। চারদিক থেকে অনেক বাঁদর তাকে ঘিরে আছে। একটা বাঁদর তার পিঠ চুলকে দিচ্ছে আর কয়েকটা বাঁদর রান্নার সরঞ্জাম চাল, ডাল, আলু খাচ্ছে। সঙ্গীদের চিৎকারে টেনিদার ঘুম ভাঙে, বাঁদররাও চিৎকার শুনে গাছে উঠে যায়। শেষপর্যন্ত সেবার জলপাই খেয়েই তাদের পেট ভরাতে হয়। তাদের বনভোজন পরিণত হয় ‘ফলভোজনে’।
'হাতেকলমে' অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর
১.নীচের ঘরগুলির উত্তর দাও ।
১.১ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের কোন্ বিখ্যাত চরিত্রের সৃষ্টিকৰ্তা ?
উত্তর: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত চরিত্র টেনিদার সৃষ্টিকর্তা।
১.২ তাঁর লেখা দুটি উপন্যাসের নাম লেখো।
উত্তর: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা দুটি উপন্যাস হল ‘লালমাটি' ও 'শিলালিপি।
২.নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও।
২.১ বনভোজনের উদ্যোগ কাদের মধ্যে দেখা গিয়েছিল ?
উত্তর: টেনিদা, হাবুল, প্যালারাম আর ক্যাবলার মধ্যে বনভোজনের উদ্যোগ দেখা গিয়েছিল।
২.২ বনভোজনের জায়গা কোথায় ঠিক হয়েছিল ?
উত্তর: শ্যামবাজার থেকে মার্টিনের রেলে বাগুইআটি ছাড়িয়ে আরও চারটে স্টেশন পেরিয়ে ক্যাবলার মামাবাড়ি। তার মামার বাড়ির
বাগানবাড়িতেই বনভোজনের জায়গা ঠিক করা হয়েছিল।
২.৩ বনভোজনের জায়গায় কীভাবে যাওয়া যাবে ?
উত্তর: শ্যামবাজার থেকে মার্টিনের রেলে চেপে বাগুইআটি ছাড়িয়ে আরও চারটে স্টেশন পর নামতে হবে। তারপর পায়ে হেঁটে প্রায় মাইল
খানেক গেলে পৌঁছোনো যাবে ক্যাবলার মামার বাগানবাড়িতে অর্থাৎ বনভোজনের জায়গায়।
২.৪ রাজহাঁসের ডিম আনার দায়িত্ব কে নিয়েছিল?
উত্তর: গল্পের কথক প্যালা রাজহাঁসের ডিম আনার দায়িত্ব নিয়েছিল। তবে প্যালা রাজহাঁসের ডিমের জন্য ভন্টাকে ধরেছিল।
২.৫ বনভোজনের বেশিরভাগ সামগ্রী কারা সাবাড় করেছিল ?
উত্তর: বনভোজনের বেশিরভাগ সামগ্রী সাবাড় করেছিল পাঁচ-ছটা বাঁদরের একটা দল।
২.৬ কোন্ খাবারের কারণে বনভোজন ফলভোজনে পরিণত হল ?
উত্তর: বনভোজনের খাবারগুলি কিছু কাদায় পড়ে ও বাকি বাঁদরের হামলায় নষ্ট হলে বাধ্য হয়ে থাকা জলপাই দিয়ে বনভোজন সারতে
হয়েছিল। তাই বনভোজন ফলভোজনে পরিণত হল।
৩. নীচের শব্দগুলির সন্ধি বিচ্ছেদ করো—মোগলাই, রান্না,বৃষ্টি, পরীক্ষা, আবিষ্কার ।
উত্তর:
মোগলাই = মোগল + আই
রান্না = রাঁধ + না।
পরীক্ষা = পরি + ঈক্ষা
বৃষ্টি = বৃষ্ + তি
আবিষ্কার = আবিঃ + কার
৪. নীচের শব্দগুলির ধ্বনিতাত্ত্বিক বিচার করো—বিচ্ছিরি, প্ল্যান-ট্যান, লিস্টি, ভদ্দর, ইস্টুপিড।
উত্তর: বিচ্ছিরি—সমীভবন বা ব্যঞ্জনসংগতি
বিশ্রী > বিচ্ছিরি
প্ল্যান-ট্যান > পদবিকারমূলক শব্দদ্বৈত
লিস্টি > অন্ত্যস্বরাগম
'ইংরেজি 'List' থেকে 'লিস্টি' শব্দটি এসেছে।
লিস্ট্ > লিস্টি = লিস্ট + ই শব্দের শেষে যুক্তব্যগুনের পর স্বরাগম হওয়ার কারণেই 'লিস্টি' শব্দটি তৈরি হয়েছে।
ভদ্দর > পরাগত সমীভবন
ভদ্র = ভ্ + অ + দ্ + র্ + অ
ভদ্র > ভদ্দর
ভদ্দর = ভ্ + অ + দ + দ + অ + র্ + অ
ইস্টুপিড > আদিস্বরাগম
ইংরেজি Stupid (স্টুপিড) > ইস্টুপিড
শব্দের আদিতে স্বরাগম ঘটেছে।
৫ . নীচের বাক্যগুলির প্রত্যেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যযুক্ত বৈশিষ্ট্যগুলি খুঁজে নিয়ে লেখো।
৫.১ আর সে গাঁট্টা ঠাট্টার জিনিস নয়—জুতসই লাগলে স্রেফ গালপাট্টা উড়ে যাবে।
উত্তর: এই বাক্যের বৈশিষ্ট্যটি হল ‘ট্ট’ ধ্বনিটি তিনবার ব্যবহৃত হওয়ার ফলে ‘ট’-এর অনুপ্রাস শব্দালংকারের সৃষ্টি হয়েছে। পরপর একই ধ্বনি
উচ্চারিত হলে তাকে অনুপ্রাস অলংকার বলে।
৫.২ দ্রাক্ষাফল অতিশয় খাট্টা।
উত্তর: ‘দ্রাক্ষাফল’ ও ‘অতিশয়' শব্দ দুটি তৎসম শব্দ, আবার ‘খাট্টা” শব্দটি বিদেশি (হিন্দি) শব্দ। একটি বাক্যে দুটি তৎসম শব্দের সঙ্গে একটি বিদেশি শব্দের সহাবস্থানে যে বৈচিত্র্যের সৃষ্টি হয়েছে সেটিই এই বাক্যের বৈশিষ্ট্য।
৫.৩ আহা-হা চৈইত্যা যাইত্যাছ কেন?
উত্তর: পূর্ববঙ্গীয় ভাষার নিদর্শনই এর বৈশিষ্ট্য। “চৈইত্যা” ও “যাইত্যাছ’ শব্দের ক্ষেত্রে অপিনিহিতি লক্ষ করা যায়।
৫.৪ এক চড়ে গালের বোম্বা উড়িয়ে দেব।
উত্তর : ‘বোম্বা’শব্দের মতো সম্পূর্ণ অর্থহীন শব্দের ব্যবহার এই বাক্যের বৈশিষ্ট্য। এক্ষেত্রে এরকম অর্থহীন শব্দ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে শ্রোতাকে
হতভম্ব করে দেওয়ার কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। তা ছাড়া অন্যদের ওপর টেনিদার কর্তৃত্ব প্রকাশের জন্য শব্দটি যথাযথভাবে ব্যবহৃত হয়েছে।
৬. শব্দগুলির দল বিশ্লেষণ করে মুক্তদল ও রুদ্ধদল চিহ্নিত করো—বনভোজন, দলপতি, বেরসিক, দ্রাক্ষাফল, রেলগাড়ি।
উত্তর:, বনভোজন - ব (মুক্ত) · ন (মুক্ত)· ভো (মুক্ত) · জন (রুদ্ধ)
দলপতি = দ (মুক্ত) · ল (মুক্ত) · প (মুক্ত) · তি (মুক্ত)
বেরসিক = বে (মুক্ত) · র (মুক্ত) · সিক্ (রুদ্ধ )
দ্রাক্ষাফল = দ্রাখ্ (রুদ্ধ) - খা (মুক্ত) · ফল্ (রুদ্ধ)
রেলগাড়ি = রেল্ (রুদ্ধ) . গা (মুক্ত) · ডি (মুক্ত)
৭. নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করো।
৭.১ লাফিয়ে উঠে টেনিদা বাগানের দিকে ছুটল। (জটিল বাক্যে)
উত্তর: যখন টেনিদা লাফিয়ে উঠল তখন সে বাগানের দিকে ছুটল।
৭.২ চোখের পলকে বানরগুলো গাছের মাথায়।(জটিল বাক্যে)
উত্তর: যখন চোখের পলক পড়ল তখন বানর গুলো গাছের মাথায়।
৭.৩ দুপুরবেলায় আসিস। বাবা-মেজদা অফিসে যাওয়ার পরে। (একটি সরল বাক্যে)
উত্তর: বাবা-মেজদা অফিসে যাওয়ার পরে দুপুরবেলায় আসিস।
৭.৪ ইচ্ছে হয় নিজে বের করে নাও। (জটিল বাক্যে)
উত্তর: যদি ইচ্ছে হয়, তবে নিজে বের করে নাও।
৭.৫ টেনিদা আর বলতে দিলে না। শাঁক পাঁক করে চেঁচিয়ে উঠল। (একটি সরল বাক্যে)
উত্তর: টেনিদা আর বলতে না দিয়ে গাঁক গাঁক করে চেঁচিয়ে উঠল।
৮. নীচের শব্দগুলির সমার্থক প্রবচনগুলি খুঁজে বের করো এবং তা দিয়ে বাক্য রচনা করো – চুরি, নষ্ট হওয়া,পালানো, গোলমাল করে ফেলা, লোভ দেওয়া, চুপ থাকা
উত্তর- চুরি > হাত সাফাই
নষ্ট হওয়া > বারোটা বাজা
পালানো > কেটে পড়া
গোলমাল করে ফেলা > তালগোল পাকিয়ে ফেলা
লোভ দেওয়া > নজর দেওয়া
চুপ থাকা > মুখে কুলুপ আটা
৯ .টীকা লেখো—কলম্বাস, লেডিকেনি, বিরিয়ানি, ইউরেকা ।
উত্তর: কলম্বাস : কলম্বাস (১৪৫১-১৫০৬ খ্রিস্টাব্দ) ইটালির জেনোয়া নগরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত ইউরোপীয় নাবিক। কলম্বাস ভারতবর্ষ ও তার নিকটবর্তী দ্বীপপুঞ্জের বর্ণনা পেয়ে সেই দ্বীপগুলিতে যাওয়ার সংকল্প নেন। প্যালো বন্দর থেকে সমুদ্রযাত্রা করে
ভারতের পথে রওনা দেন। ভারত আবিষ্কারের পথে বেরিয়ে তিনি কিউবা, সেন্ট ডেমেঙ্গো প্রভৃতি দ্বীপে পৌঁছোন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি বোঝেননি যে তিনি আসলে ভারত বা এশিয়ার কোনো দেশ নয়, উত্তর আমেরিকা মহাদেশে পৌঁছেছেন। পরে তাঁর দেখানো পথ ধরেই ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকা ও ত্রিনিদাদ আবিষ্কৃত হয়।
লেডিকেনি: ১৮৫৬ থেকে ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতে বড়োলাট পদে থাকা লর্ড ক্যানিং-এর স্ত্রী লেডি ক্যানিং-এর নামানুসারেই লেডিকেনি
নামক মিষ্টান্নটির নামকরণ করা হয়েছে। ক্ষীরের পুর দেওয়া পানতুয়া জাতীয় এই মিষ্টিটি লেডি ক্যানিং খেতে খুব পছন্দ করতেন বলেই এটির এরুপ নাম প্রচলিত হয়েছিল।
বিরিয়ানি : ফারসি 'বিরিয়ান' শব্দ থেকে বিরিয়ানি শব্দটি বাংলায় এসেছে। এটি একটি সুস্বাদু খাদ্য বিশেষ। এটি এমন এক ধরনের পোলাও, যাকে সাধারণত মাংস সহযোগে রান্না করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশের লখনউ ও হায়দ্রাবাদের বিরিয়ানি জগৎখ্যাত। উপাদেয় খাবার হিসেবে
কলকাতাতেও এর বিপুল জনপ্রিয়তা ও চাহিদা তৈরি হয়েছে।
ইউরেকা: 'Eureka' শব্দটি এসেছে গ্রিক heureka শব্দ থেকে, যার অর্থ হল 'I have found it' অর্থাৎ 'আমি খুঁজে পেয়েছি। প্রচলিত ধারণা অনুসারে 'ইউরেকা' শব্দটিকে জনপ্রিয় করে তোলেন বিশ্ববিখ্যাত গ্রিক গণিতবিদ আর্কিমিডিস। আর্কিমিডিস একদিন প্লবতার সূত্রসন্ধানে গভীর চিন্তায় মগ্ন ছিলেন। সেদিন চৌবাচ্চায় স্নান করতে নেমে তিনি দেখেন যে, পরিপূর্ণ চৌবাচ্চাটির অনেকখানি জল উপচে নীচে পড়ে গেল। তিনি বুঝলেন যে, তাঁর শরীরের আয়তনের সমপরিমাণ জল চৌবাচ্চাটি থেকে অপসারিত হয়েছে। তখনই তিনি 'ইউরেকা' শব্দটি উচ্চারণ করে ওঠেন।
১০. নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত ও যথাযথ উত্তর দাও।
১০.১ বনভোজনের প্রথম তালিকায় কী কী খাদ্যের উল্লেখ ছিল? তা বাতিল হল কেন?
উত্তর: প্রথম তালিকায় উল্লিখিত খাবার : বনভোজনের জন্য প্রথমে যে তালিকাটি তৈরি হয়েছিল তাতে ছিল বিরিয়ানি, পোলাও, কোর্মা,
কোপ্তা, দু-রকমের কাবাব ও মাছের চপ।
বাতিল হওয়ার কারণ: প্রথম তালিকার খাবারগুলি তৈরি করতে গেলে বাবুর্চি, চাকর, একটি মোটর লরি, আর দুশো টাকার প্রয়োজন ছিল।
কিন্তু চার জনে মিলে চাঁদা উঠেছিল মাত্র দশ টাকা ছ-আনা। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রথম তালিকাটি বাদ দেওয়া হয় ।
১০.২ বনভোজনের দ্বিতীয় তালিকায় কী কী খাদ্যের উল্লেখ ছিল এবং কে কী কাজের দায়িত্ব নিয়েছিল ?
উত্তর: দ্বিতীয় তালিকায় উল্লিখিত খাবার : বনভোজনের জন্য প্রস্তাবিত খাবারের দ্বিতীয় তালিকায় ছিল খিচুড়ি, আলুভাজা, পোনা মাছের
কালিয়া, আমের আচার, রসগোল্লা, লেডিকেনি এবং শেষে যুক্ত হয় রাজহাঁসের ডিমের ডালনা।
উদ্দিষ্ট ব্যক্তিসমূহ ও তাদের দায়িত্ব: রাজহাঁসের ডিম জোগাড়ের দায়িত্ব পড়েছিল প্যালার উপর। ক্যাবলাকে আলুভাজার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
পোনামাছের কালিয়া রাঁধার দায়িত্বে ছিল প্যালা। দিদিমার ঘর থেকে হাতসাফাই করে আমের আচার নিয়ে আসার কথা ছিল হাবুলের। আর
রসগোল্লা ও লেডিকেনি ধারে ম্যানেজ করা হবে—এমনটা ঠিক হয়েছিল।
১০.৩ প্যালার রাজহাঁসের ডিম আনার ঘটনাটির বর্ণনা দাও।
উত্তর: প্যালা রাজহাঁসের ডিম আনতে গিয়েছিল ভন্টার বাড়ি। ভন্টার বাড়িতে রাজহাঁস ছিল। কিন্তু সেই রাজহাঁস ডিম পাড়ে কি না তা জানতে
দু-আনার পাঁঠার ঘুগনি আর ডজনখানেক ফুলুরি ঘুষ দিতে হল ভন্টাকে। এরপর দুপুরবেলা ভন্টার বাবা ও মেজদা অফিস চলে গেলে প্যালা গেল ভন্টাদের বাড়ি। ভষ্টা তাকে নিয়ে গেল উঠোনে। উঠোনে একপাশে রাখা ছিল সার সার কাঠের বাক্স, তার ভিতরে ছিল সার সার খুপরি। দুটো রাজহাঁস সেখানে ডিমে তা দিচ্ছিল। প্যালা ডিমের জন্য বাক্সের ভিতরে হাত ঢোকাতেই একটা রাজহাঁস তার হাতে জোরসে কামড়ে দিল। যন্ত্রণায় প্যালা চিৎকার করে উঠলে ডন্টার মা সেখানে চলে আসেন। তখন হাতে রক্তের ধারা নিয়ে প্যালা কোনোরকমে সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচে।
১৭.৪ ট্রেন থেকে নেমে হাঁটতে গিয়ে তাদের কী কী বিপদ ঘটেছিল ?
উত্তর: কথামুখ: বনভোজনের নির্ধারিত স্থানে পৌঁছোনোর জন্য শ্যামবাজার থেকে মার্টিনের রেলে চেপে বাগুইআটি ছাড়িয়ে আরও চারটে স্টেশন পর প্যালাদের ট্রেন থেকে নামতে হয়েছিল। হাবুলের আছাড় খাওয়া: ট্রেন থেকে নেমে প্রায় মাইলখানেক হেঁটে গেলে ক্যাবলার মামার বাড়ি। আগের দিন রাত্রে বৃষ্টি হওয়ায় এবং রাস্তা কাঁচা এঁটেল মাটির হওয়ায় তা খুবই পিচ্ছিল ছিল। সেই পিচ্ছিল রাস্তায় প্রথমেই আছাড় খেল হাবুল। তার হাতে ছিল ডিমের পুঁটলি। ফলে সমস্ত ডিম ফেটে গিয়ে হলদে রস গড়াতে লাগল। প্যালার আছাড় খাওয়া; তারপরেই আমের আচারসমেত প্যালা আছাড় খেল। সারা গায়ে কাদা আর আমের আচার নিয়ে সে উঠে দাঁড়াল। টেনিদার অরস্থা: সবশেষে এল টেনিদার পালা। টেনিদাও পড়ল আর তার সঙ্গে পড়ল রসগোল্লার হাঁড়ি। কাদায় পড়ে থাকা সাদা ধবধবে রসগোল্লার জন্য বুকভাঙা দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে চারজনে চলতে লাগল ৷
১০.৫ “মাছের কালিয়ার তিনটে বেজে গেল”—মাছের কালিয়া সম্পর্কে এরকম বলার কারণ কী ?
উত্তর : টেনিদার আদেশে খিচুড়ি বা অন্যান্য রান্না শুরু হওয়ার আগে প্যালা মাছের কালিয়া রান্না করতে শুরু করল। ক্যাবলার মা আগেই মাছ কেটে নুন মাখিয়ে দিয়েছিলেন। প্যালা কড়াইতে তেল দিয়েই তার মধ্যে মাছ ফেলে দিল। সঙ্গে সঙ্গে কড়াই-ভরতি ফেনা হয়ে মাছগুলো তালগোল পাকিয়ে গেল। কাঁচা তেলে মাছ দেওয়ার ফলে মাছের কালিয়া আর হল না, হয়ে গেল মাছের হালুয়া। মাছের কালিয়ার এই অবস্থা দেখে ক্যাবলা বলে উঠেছিল, “মাছের কালিয়ার তিনটে বেজে গেল।”
১১ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো।
১১.১ এই গল্পটির নাম বনভোজন ’না হয়ে বনভোজনের ব্যাপার 'হল কেন ?
উত্তর: বনভোজনের প্রথমে যে খাবারের তালিকা স্থির হয়, তা অত্যন্ত খরচসাপেক্ষ হওয়ায় নতুন করে আবার একটা তালিকা বানায় তারা। প্যালা সেই তালিকায় রাজহাঁসের ডিম যোগ করে৷ প্যালার উপরই দায়িত্ব পড়ে সেই ডিম নিয়ে আসার। ডিম আনতে গিয়ে প্যালা রাজহাঁসের কামড় খেয়ে পালিয়ে আসে এবং মাদ্রাজি ডিম নিয়েই বনভোজনে যেতে হয়। যাওয়ার পথেই টেনিদা সব লেডিকেনি সাবাড় করে দেয়। তারপর পিছল রাস্তায় একে একে হাবুল, প্যালা আর টেনিদা পড়ে যায়
এবং ডিম, আচার ও রসগোল্লা নষ্ট হয়। শেষপর্যন্ত রান্না শুরু হলে প্যালার ভুলে নষ্ট হয় মাছের কালিয়া। হাবুল ও ক্যাবলা কাঠ আনতে গেলে টেনিদা ঘুমিয়ে পড়ে। বাঁদরের উৎপাতে নষ্ট হয়ে যায় রান্নার অন্যান্য সরঞ্জামও। শেষপর্যন্ত গাছের পাকা জলপাই খেয়ে পেট ভরাতে হয় তাদের। বনভোজন পরিণত হয় ফলভোজনে । এই গল্পের প্রধান বিষয় বনভোজন হলেও শেষপর্যন্ত কিন্তু তা সফল হয়নি। গল্পটিতে শুধু বনভোজনের বিষয় নিয়েই কথা হয়েছে।
১১.২ এই গল্পে কটি চরিত্রের সঙ্গে তোমার দেখা হল? প্রত্যেকটি চরিত্র নিয়ে আলোচনা করো।
উত্তর: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের 'বনভোজনের ব্যাপার' গল্পে মোট পাঁচটি চরিত্রের সঙ্গে দেখা হল। এই পাঁচ জন হল—টেনিদা, প্যালা, হাবুল,
ক্যাবলা আর ভল্টা।
[১] টেনিদা: টেনিদা চরিত্রটি বাংলা সাহিত্যের এক অনবদ্য সৃষ্টি। পটলডাঙার এই ‘চারমূর্তি'র দলে টেনিদা হল দলপতি বা লিডার। সে ভালো খেতে ভালোবাসে। ভালো খাবারের নাম শুনলেই তার জিভে জল আসে, অস্থির হয়ে পড়ে। নিজে কাজে হাত না দিয়ে একটু তফাতে বসে নির্দেশ দিতে এবং মুখ চালাতেই বেশি পছন্দ করে টেনিদা। আনন্দ, রাগ, বিরক্তি, সাহস বা ভয়ের প্রকাশ-সবেতেই তার একটু বাড়াবাড়ি আছে।
[২] প্যালা: প্যালা গল্পের কথক। সে পেট খারাপের রুগি। সেদ্ধ খাবার, গাঁদালপাতা আর শিঙিমাছের ঝোল প্রভৃতি মশলা ছাড়া খাবারই তার প্রধান খাদ্য। টেনিদা এ নিয়ে তাকে খোঁটা দেয় এবং তাতে সে বিব্রত বোধ করে। আড্ডার মধ্যে বোকা বোকা কথা বলতে বা কোনো কিছু ভণ্ডুল
করতে প্যালার জুড়ি নেই।
[৩] হাবুল: হাবুল সেন ঢাকার বাঙাল। তার কথাবার্তায় পূর্ববঙ্গের ভাষার টান। টেনিদাকে নিয়ে সে প্রায়ই ঠাট্টা করে। হাবুল পড়াশোনায়
ভালো ও বুদ্ধিমান।
[৪] ক্যাবলা: ক্যাবলাই টেনিদার দলের সবচেয়ে বুদ্ধিমান সদস্য। যথেষ্ট রসবোধ আছে তার। যখন একটার পর একটা খাবার নষ্ট হয়ে চলেছে, তখন বারোটা, একটা, দুটো, তিনটে বেজে গেল বলে ঘোষণা করেছে সে। একমাত্র ক্যাবলাকেই একটু সমঝে চলে দলপতি টেনিদা ।
[৫] ভন্টা: এ গল্পে ভন্টা কম গুরুত্ব পাওয়া চরিত্র। অত্যন্ত ধড়িবাজ ছেলে সে। রাজহাঁসের ডিমের সন্ধান দেওয়ার জন্য ঘুষ হিসেবে পাঁঠার ঘুগনি আর ফুলুরি খেয়েছিল। তবে কাজের কাজ তো সে করেইনি, বরং প্যালাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছিল।
১১.৩ এ গল্পটিতে হাস্যরস সৃষ্টির জন্য ভাষার দিক থেকে লেখক নানারকম কৌশল অবলম্বন করেছেন। কী কী কৌশল তুমি খেয়াল করেছ লেখো।
উত্তর: নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত টেনিদার গল্প-উপন্যাসগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্যই হল হাস্যরস। টেনিদার মুখে বকাঝকা, উপমা, তিনজনকে খোঁটা দেওয়া—সব কিছুর মধ্যেই রয়েছে মজার উপাদান। হাবুলের বাঙাল ভাষা আর ক্যাবলার মুখে হিন্দি শব্দ গল্পের ভাষাকে আরও বেশি মজাদার করে তুলেছে । এ ছাড়াও গল্পের ভাষার মধ্যে নানারকম ছোটো ছোটো মজা লুকিয়ে আছে। যেমন—টেনিদা হাবুল সেনের ব্যবহার করা ‘পোলাপান’ শব্দটাকে লুফে নিয়ে বলে, “পোলাপান! এই।গাড়লগুলোকে জলপান
করলে তবে রাগ যায়।” এখানে ‘পোলাপান' ও 'জলপান' শব্দ দুটি নিয়ে মজা তৈরি করেছেন লেখক। আবার ক্যাবলা যখন বলে, 'খাট্টা', তখন তার সঙ্গে মিলিয়ে ব্যঙ্গের সুরে টেনিদা বলে, “খাট্টা! বেশি পাঁঠামি করবি তো চাট্টা বসিয়ে দেবো।” এ ছাড়াও পাঞ্জাব মেলের স্পিডে পালানো, আছাড় খাওয়ার বর্ণনা, একটার পর একটা খাবার নষ্ট হয়ে যাওয়া আর সে বিষয়ে ক্যাবলার ঘোষণা—সবমিলিয়ে শুধু ভাষা ব্যবহারের কৌশলেই এক অদ্ভুত হাস্যরস সৃষ্টি করেছেন নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ৷
১১.৪ শীতকালে পিকনিক নিয়ে তোমার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বন্ধুকে চিঠি লেখো/গল্প লেখো।
উত্তর : প্রিয় কাজল,
এবারের শীতকালটা আনন্দেই কাটল। এই শীতকালে আমরা যতবার বেড়াতে বেরিয়েছি, তার মধ্যে সব থেকে সেরা ছিল আমাদের পিকনিক। তোর কথা সেদিন খুব মনে পড়ছিল।
এবারে আমরা গিয়েছিলাম অজয়ের তীরে। সকালে একটু কুয়াশা থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা কেটে গিয়ে রোদ ঝলমলে একটা দিন বেরিয়ে এল। আমরা দশ জন ছিলাম। আগের রাতেই বাজার আর রান্নার বেশ কিছুটা কাজ এগিয়ে রাখা ছিল। সজলের বাড়ির টোটো গাড়িটা নিয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম নদীর ধারে। জলখাবার খাওয়ার পর একটা পাথরের আড়ালে তৈরি করে নিলাম উনুন। শুকনো কাঠ আর কেরোসিন তেল দিয়ে।আগুন ধরালাম। মাছভাজা আর মাংসের ঝোল হয়ে যাওয়ার পর ভাত বসিয়ে দেওয়া হল। .......
অনেক ছবিও তুলেছি এই শীতে। তুই এলে তোকে দেখাব। চিঠির উত্তর দিস। ভালো থাকিস।
ইতি-
তোর সুজন
শুভাশিস পাল
প্রযত্নে, কাজল পাল
মনি বসু রোড
কলকাতা- ২০০০০০৯
১১.৫ টেনিদার মতো আরও কয়েকটি 'দাদা' চরিত্র বাংলা সাহিত্যে দেখতে পাওয়া যায়। এরকম তিনটি চরিত্র নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর: বাংলা সাহিত্যে টেনিদার মতো আরও কয়েকটি 'দাদা' চরিত্র দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের আলোচ্য বিখ্যাত তিনটি দাদাচরিত্র হল
ঘনাদা, ফেলুদা এবং ঋজুদা।
[১] ঘনাদা: ঘনাদা চরিত্রের স্রষ্টা প্রেমেন্দ্র মিত্র। বনমালী নস্কর লেনের একটি মেসবাড়ির ছাদের ঘরে ঘনাদার বাস। বাড়ির নম্বর ৭২। ঘনাদা সেখানে বসেই গল্প বলে যান। সেসব গল্পে ঘনাদাই নায়ক। তাঁর প্রধান শ্রোতা হল শিবু, শিশির, গৌর, সুধীর। এ ছাড়া অন্যরাও অনেক সময় এই গল্পের আসরে যোগ দেয়। পৃথিবীর নানা কোণের নানারকম মানুষদের নিয়ে এসব গল্প বলেন তিনি। কল্পবিজ্ঞান থেকে ইতিহাস সবেরই ছোঁয়া আছে ঘনাদার গল্পে।
(২) ফেলুদা সত্যজিৎ রায়ের গোয়েন্দা গল্পের প্রধান চরিত্র হলেন ফেলুদা। তাঁর সঙ্গী হলেন তোপসে ও জটায়ু ওরফে লালমোহন গাঙ্গুলি।
বাংলা গোয়েন্দা গল্পে ফেলুদা এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। কলকাতা থেকে হিমালয়ের পাহাড়ে কিংবা বিদেশে সর্বত্র ফেলুদার গতিবিধি। খুন, জখম, চুরি, কিংবা গুপ্তধনের ধাঁধা— ফেলুদা সবেতেই দক্ষ। রহস্যসমাধানের ক্ষেত্রে মগজাস্ত্র বা তীক্ষ্ণ বুদ্ধিই ছিল তাঁর প্রধান হাতিয়ার। গভীর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা আর রসবোধ—এই নিয়েই ফেলুদা পুরোদস্বর বাঙালি চরিত্র আর এটাই তাঁর জনপ্রিয়তার কারণ।
[৩] ঋজুদা: ঋজুদার স্রষ্টা বুদ্ধদেব গুহ। ঋজুদাকে তিনি গোয়েন্দ করেননি বা ঘনাদার মতো পৃথিবীর নানা কোণে ঘুরে ঘুরে রহস্যের সমাধান করে বেড়ানো চরিত্রও বানাননি। ঘনাদার মতো ইতিহাস বা বিজ্ঞানের সর্বক্ষেত্রে গতিবিধি নেই তার। ঋজুদার বিষয় হল জঙ্গল। ভারতে তো বটেই, বিশ্বের বিভিন্ন জঙ্গলেও দেখা গেছে তাকে। জঙ্গলে অ্যাডভেঞ্চার ও শিকার ছিল তার প্রিয় বিষয়। ঋজুদা ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির অন্যতম প্রিয় চরিত্র।
