চন্দ্রগুপ্ত || অষ্টম শ্রেণী || হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর || CcHANDRAGUPTTA || CLASS 8 || QUESTION ANSWER - school book solver

Saturday, 4 October 2025

চন্দ্রগুপ্ত || অষ্টম শ্রেণী || হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর || CcHANDRAGUPTTA || CLASS 8 || QUESTION ANSWER

 



অষ্টম শ্রেণি বাংলা
চন্দ্রগুপ্ত
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

উৎস: পাঠ্য চন্দ্রগুপ্ত' শীর্ষক নাট্যাংশটি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা 'চন্দ্রগুপ্ত' (১৯১১ খ্রি.) নাটকের প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্য।

নাট্যকার পরিচিত্তি: ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে নদিয়া জেলার কৃক্ষলপরে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্ম হয়। তাঁর পিতা ছিলেন কৃষ্ণনগর রাজবংশের
দেওয়ান কার্তিকেয়চন্দ্র রায়, মাতা প্রসন্নময়ী দেবী। দ্বিজেন্দ্রলাল ছিলেন একাধারে কবি ও নাট্যকার। তাঁর দুই দাদা রাজেন্দ্রলাল এবং হরেন্দ্রলালও সাহিত্যের চর্চা করতেন। তাঁর এক বউদি মোহিনী দেবীও একজন লেখিকা ছিলেন। গায়ক ও গীতিকার পিতার প্রভাবে দ্বিজেন্দ্রলাল
অল্পবয়সেই সুগায়করূপে পরিচিত হন। তিনি হুগলি কলেজ থেকে বিএ এবং প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে এমএ পাস করেন। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'আর্য্য্যগাথা' ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। একটি বিদ্যালয়ে কিছুদিন শিক্ষকতার পর তিনি সরকারি বৃত্তি পেয়ে কৃষিবিদ্যা শিখতে বিলেত যান। বিলেতে দ্বিজেন্দ্রলাল পাশ্চাত্য সংগীত শেখেন ও 'Lyrics of Ind' নামে ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। তিনি ইংল্যান্ডের বিখ্যাত অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের অভিনয় দেখেন এবং রঙ্গমঞ্চের কলাকৌশল সম্বন্ধে নানান অভিজ্ঞতা লাভ করেন। পরবর্তী জীবনে তাঁর এই অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছিল। বিলেতে তিন বছর কাটিয়ে দেশে ফেরেন তিনি। এই সময় বিদেশে থাকার জন্য তাঁকে প্রায়শ্চিত্ত করতে বলা হয়। তিনি তা অস্বীকার করায় তাঁকে নানা সামাজিক অত্যাচার সহ্য করতে হয়। তাঁর এই সময়কার ক্ষোভ তিনি 'একঘরে' পুস্তিকায় প্রকাশ করেন। তিনি
১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে সরকারি কাজে যোগ দেন। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে সুরবালা দেবীর সঙ্গে দ্বিজেন্দ্রলালের বিবাহ হয়। কর্মক্ষেত্রে তিনি কখনও সেটলমেন্ট অফিসার, কখনও ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, কখনও আবগারি বিভাগের প্রথম পরিদর্শক, কখনও বা ল্যান্ড রেকর্ডস অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার বিভাগে সহকারী ডিরেক্টররূপে কাজ করেন। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘পূর্ণিমা সম্মেলন' নামের সাহিত্যচর্চা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তী সময়ে শিক্ষিত ও সংস্কৃতিপ্রেমী বাঙালির খুব প্রিয় হয়ে উঠেছিল।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় অল্প বয়সে কাব্য রচনা শুরু করে ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মূলত কাব্য রচনাই করেছেন। এর মধ্যে প্রহসন, কাব্যনাট্য, ব্যঙ্গ ও
হাস্যরসাত্মক কবিতাও আছে। শেষ দশ বছর তিনি প্রধানত নাটক রচনার দিকে মনোযোগ দিয়েছিলেন। পৌরাণিক, সামাজিক, ঐতিহাসিক ইত্যাদি সবরকম নাটক রচনাতেই তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর রচিত বিখ্যাত সাহিত্য-আলোচনা হল ‘কালিদাস ও ভবভূতি'। সংগীত রচনায় দেশীয় ও পাশ্চাত্য—উভয় ধরনের সুরই ব্যবহার করেছেন তিনি। তাঁর রচিত নাটকগুলির মধ্যে 'হাসির গান', 'চন্দ্রগুপ্ত', 'সাজাহান', ‘মেবার পতন’, প্রতাপসিংহ' অত্যন্ত বিখ্যাত। 'ভারতবর্ষ' পত্রিকা প্রকাশ ছিল তাঁর
জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য কীর্তি। তবে এই পত্রিকার প্রথম সংখ্যা প্রকাশের পূর্বেই ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন।

বিষয়সংক্ষেপ: ভারতবর্ষ অতুলনীয় ঐশ্বর্যের অধিকারী। এর প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যও তুলনাহীন। যুগে যুগে বহু সাম্রাজ্যবাদী শক্তির
আগমন ঘটেছে এই ভারতভূমিতে। বিদেশি শাসকরাও বিস্ময়ের সঙ্গে ভারতের অপার সৌন্দর্য ও প্রাণশক্তির রহস্য উপলব্ধির চেষ্টা করেছেন। গ্রিক সম্রাট সেকেন্দারের চোখে ভারতের দিনের বেলার তীব্র রোদ, রাতের স্নিগ্ধ চাঁদের আলো, বর্ষাকালের ঘন মেঘের গর্জন, বরফে ঢাকা হিমালয়ের শান্ত।  নদীর উদ্যমতা, মরুভূমির রুক্ষতা—এ সবই ধরা পড়েছে।
ভারতবর্ষের রূপের বিভিন্নতায় বিস্মিত ও হতবাক সেকেন্দার তাই “সত্য সেলুকস! কী বিচিত্র এই দেশ!” —উক্তিটি করেছেন। সেকেন্দারের চোখে ভারতের সমস্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের থেকেও সেরা হল এই দেশ শাসনকারী জাতি। সেকেন্দারের মতে, এঁরা শিশুর মতো সরল হয়েও বজ্রের মতো শক্তি ও প্রবল সাহসের অধিকারী। এই প্রসঙ্গে তিনি তাঁর হাতে বন্দি রাজা পুরুর নির্ভীক চিত্তের উদাহরণ দিয়েছেন। পুরুর এই অদম্য সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে সেকেন্দার তাঁকে হারানো রাজ্য ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। সেনাপতি
সেলুকসের সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সময়ে মগধের নির্বাসিত রাজপুত্র চন্দ্রগুপ্তকে গুপ্তচর সন্দেহে সেকেন্দারের সামনে বন্দি করে আনা হয়। কিন্তু চন্দ্রগুপ্ত এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি জানান, সেকেন্দারের বীরত্বের কাহিনি শুনে তিনি এসেছিলেন তাঁর থেকে যুদ্ধের বিভিন্ন কৌশল শিখে নিতে। সেকেন্দারের সেনাপতি সেলুকসও সে-কথা স্বীকার করেন। চন্দ্রগুপ্তের বংশপরিচয় ও জীবনের বৃত্তান্ত শুনে গ্রিক সম্রাট আশ্বস্ত হন। তাঁর অসীম সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে গ্রিক সম্রাট তাঁকে নিঃশর্ত মুক্তি দেন। তিনি চন্দ্রগুপ্তকে তাঁর রাজ্য পুনরুদ্ধার করে দিবিজয়ী বীর হয়ে ওঠার আশীর্বাদ করেন।
নামকরণ: সাহিত্যে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামকরণের মাধ্যমেই পাঠক বিষয়বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং পাঠের শেষে নামকরণের উদ্দেশ্যটি বুঝতে পারে। ‘চন্দ্রগুপ্ত' নামকরণটি চরিত্রকেন্দ্রিক নামকরণের উদাহরণ।
নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ঐতিহাসিক নাটক ‘চন্দ্রগুপ্ত' ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। এই নাটক রচনার ক্ষেত্রে তিনি পুরাণ ও ইতিহাস মিলিয়ে চন্দ্রগুপ্তের জীবনীর যে অংশটুকু পেয়েছেন, তার ওপরেই বিশেষভাবে নির্ভর করেছেন। চন্দ্রগুপ্তের জীবনবৃত্তান্তই যেহেতু এই নাটকের বিষয়বস্তু, সে কারণে নাটকের নামকরণের ক্ষেত্রেও নাট্যকার ‘চন্দ্রগুপ্ত' নামটিই বিবেচনা করেছেন। পাঠ্য নাট্যাংশটি ‘চন্দ্রগুপ্ত'-এর প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্য। এই দৃশ্যে সিন্ধুনদের তীরে বিশ্ববিজয়ী বীর সেকেন্দারের সামনে চন্দ্রগুপ্তের নির্ভীকতা প্রদর্শন, বীরোচিত আচরণ ও সেকেন্দারের ভবিষ্যদ্বাণীই নাট্যাংশে প্রধান বিষয় উঠেছে। এ ছাড়াও এই নাট্যাংশে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে আন্টিগোনস, সেলুকস এবং চন্দ্রগুপ্তকে ঘিরে। নাটকের পরবর্তী ঘটনাগুলির উপরে এই প্রথম দৃশ্যের ঘটনা যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। সর্বোপরি, শিক্ষার্থীরা যাতে মুল নাটক পড়তে আগ্রহী হয়ে ওঠে, সেই কারণেও নাট্যাংশের নাম অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকতে পারে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলেও বলা যায়, নাট্যাংশটির নাম 'চন্দ্রগুপ্ত' রাখা যথার্থ হয়েছে।

হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর

১. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও

১.১ ছিজেন্দ্রলাল রায় কৃষিবিদ্যা শেখার জন্য কোথায় গিয়েছিলেন?
উত্তর: দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কৃষিবিদ্যা শেখার জন্য বিলেত গিয়েছিলেন।

১.২ তাঁর রচিত দুটি নাটকের নাম লেখো।

উত্তর: বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত দুটি নাটক হল 'সাজাহান' ও 'মেবার

২. নীচের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর একটি বাক্যে লেখো।
২.১ নাট্যাংশটির ঘটনাস্থল ও সময় নির্দেশ করো।
উত্তর: নাট্যাংশার সিন্ধুনদের তীর এবং সময় সন্ধ্যাকাল।
২.২ নাট্যাংশে উল্লিখিত 'হেলেন' চরিত্রের পরিচয় দাও।
উত্ত: নাজীশে উল্লিখিত 'হেলেন' হলেন গ্রিক সম্রাট সেকেন্দারের সেনাপতি সেলুকাসের কন্যা।
২.৩ রাজার প্রতি রাজার আচরণ।”—উদ্ধৃতাংশের বক্তা কে ?
উত্তর: উদ্ধৃতাংশটির বক্তা হলেন ভারতীয় রাজা পুরু ।
২.৪ জগতে একটা কীতি রেখে যেতে চাই।”—বক্তা কীভাবে এই কীর্তি রেখে যেতে চান ?
উত্তর: বক্তা গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার দ্বিগবিজয় এর মাধ্যমে জগতে একটা কীর্তি রেখে যেতে চান।

২.৫ সম্রাট, আমায় বহু না করে বন্দি করতে পারবেন না।”—বক্তাকে বন্দি করার প্রসঙ্গ এসেছে কেন?
উত্তর: গ্রিক সম্রাট সেকেন্দারের সামনে চন্দ্রগুপ্তকে নিয়ে আসা হলে, সম্রাট তাঁকে গুপ্তচর মনে করে বন্দি করার নির্দেশ দেওয়ায় এই
প্রসঙ্গটি এসেছে।

৩. নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও।

৩.১ 'কী বিচিত্র এই দেশ'। -বক্তার চোখে এই দেশের বৈচিত্র্য কীভাবে ধরা পড়েছে?
উত্তর: দেশের বৈচিত্র্য: সুদূর গ্রিক দেশ থেকে আসা সেকেন্দার ভারতের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য দেখে বিস্মিত হয়ে যান। তাঁর মনে হয়েছে দিনে সূর্যের প্রচণ্ড তেজ গাঢ় নীল আকাশকে যেন পুড়িয়ে দিয়ে যায়। আবার রাত্রে চাঁদের শুভ্র জ্যোৎস্না যেন আকাশকে স্নান করিয়ে দেয়। বর্ষাকালে ঘন মেঘের গুরুগম্ভীর গর্জন করে আকাশ ছেয়ে রাখে। এই ভূখণ্ডের একদিকে বিরাজ করছে হিমালয়ের আকাশছোঁয়া বরফের চূড়া। অন্যদিকে এদেশের নদনদী প্রাণের আনন্দ জাগিয়ে ছুটে চলেছে।

৩.২ ' ভাবলাম -এ একটা জাতি বটে।”-বক্তা কে? তাঁর এমন ভাবনার কারণ কী ?
উত্তর: বন্ধা: দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের 'চন্দ্রগুপ্ত' নাট্যাংশ থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশটির বক্তা হলেন গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার।
 বক্তার ভাবনার কারণ: সুদূর মাসিডন থেকে অর্ধেক এশিয়া জয় করে এসে দিগ্‌বিজয়ী গ্রিক বীর সেকেন্দার শেষে বাধা পেয়েছিলেন শতদ্রু নদীর তীরে। সেখানে পুরুরাজের সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ বাধে। যুদ্ধে পরাজিত পুরুরাজকে যখন সেকেন্দারের সামনে আনা হয়েছিল, তখন তিনি পুরুকে প্রশ্ন করেছিলেন যে, সেকেন্দারের কাছে পুরুরাজ কেমন আচরণ প্রত্যাশা করেন।
উত্তরে পুরু বলেছিলেন যে, একজন রাজার প্রতি অপর একজন রাজার যেরূপ আচরণ হওয়া উচিত সেরূপ আচরণই তিনি প্রত্যাশা করেন। এই উত্তরের মধ্য দিয়ে পুরুরাজের যে আভিজাত্য, আত্মসম্মান, শৌর্য ও সাহসিকতা প্রকাশিত হয়েছিল, তাতেই গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার বিস্মিত হন এবং প্রশ্নে উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেন।

৩.৩ “এ দিবিজয় অসম্পূর্ণ রেখে যাচ্ছেন কেন সম্রাট?”—এ প্রশ্নের উত্তরে সম্রাট কী জানালেন ?
উত্তর: দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে ভারতে এসে সম্রাট সেকেন্দার তাঁর দিগ্‌ বিজয়-যাত্রা স্থগিত রাখেন। সিন্ধু নদের তীরে দাঁড়িয়ে সেনাপতি সেলুকস সম্রাটকে এইরূপ সিদ্ধান্তের কারণ জিজ্ঞাসা করেন। সেলুকসের জিজ্ঞাসার উত্তরে সেকেন্দার বলেন যে, দিগ্‌বিজয় সম্পূর্ণ করতে হলে আরও গ্রিক সৈন্যের প্রয়োজন। এ ছাড়াও তিনি সুদূর মাসিডন থেকে দুর্ধর্ষ সৈন্যদলের সাহায্যে সমস্ত প্রতিরোধ অতিক্রম করে অর্ধেক এশিয়া জয় করেছেন। কিন্তু সেই অপ্রতিরোধ্য সৈন্যদল শতদ্রু নদীর তীরে পুরুরাজের সঙ্গে যুদ্ধে ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে পড়ে। তখন সেকেন্দার উপলব্ধি করেন যে, ভারতবর্ষের বীর রাজাদের সঙ্গে লড়াই করে দিবিজয় সম্পূর্ণ করতে হলে তাঁর নতুন সৈন্যের প্রয়োজন।

৩.৪ “ভারতবাসী মিথ্যা কথা বলতে এখনও শিখে নাই।”—বক্তা কে? কোন্ সত্য সে উচ্চারণ করেছে?
উত্তর: বক্তা: উদ্ধৃত অংশের বক্তা হলেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ঐতিহাসিক নাটক চন্দ্রগুপ্ত”-এর কেন্দ্রীয় চরিত্র চন্দ্রগুপ্ত ।
উচ্চারিত সত্য: আন্টিগোনস চন্দ্রগুপ্তকে গুপ্তচর ভেবে সেকেন্দারের সামনে নিয়ে আসেন। চন্দ্রগুপ্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি শিবিরের পাশে বসে শুকনো তালপাতায় কিছু লিখছিলেন। চন্দ্রগুপ্ত কী লিখছিলেন, সে বিষয়ে সেকেন্দার সত্য জানতে চাইলে চন্দ্রগুপ্ত প্রশ্নে উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেন।
গ্রিক সেনাপতি সেলুকসের কাছ থেকে একমাসের বেশি সময় ধরে চন্দ্রগুপ্ত গ্রিক সম্রাটের সেনাবাহিনী-পরিচালনা, সৈন্য সাজানোর কায়দা, সামরিক নিয়ম—এইসব শিখছিলেন। কিন্তু গ্রিক সৈন্যবাহিনী পরের দিন চলে যাবে শুনে তিনি এতদিন যা শিখেছিলেন তা-ই শুকনো তালপাতায় লিখে রাখছিলেন। এই সত্যের কথাই তিনি প্রসঙ্গক্রমে উচ্চারণ করেছেন।

৩.৫ “আমার ইচ্ছা হলো যে দেখে আসি...”-বক্তার মনে কোন ইচ্ছা জেগে উঠেছিল ? তার পরিণতিই বা কী হয়েছিল ?
উত্তর: বক্তার ইচ্ছা: চন্দ্রগুপ্ত ছিলেন মগধের রাজপুত্র। তাঁর বৈমাত্রেয় ভাই নন্দ তাঁকে রাজ্য থেকে নির্বাসিত করায় তিনি প্রতিশোধের উপায় খুঁজছিলেন। চন্দ্রগুপ্ত শুনেছিলেন যে, সুদূর মাসিডন থেকে অর্ধেক এশিয়া জয় করার পর সেকেন্দার ভারতের পরম বীর রাজা পুরুকেও পরাজিত করেছেন। এ কথা শুনে তিনি সেকেন্দারের এই বীরত্বের রহস্য, তাঁর যুদ্ধের কৌশল জানার ইচ্ছায় হাজির হয়েছিলেন গ্রিক সম্রাটের শিবিরে।
ইচ্ছার পরিণতি: গ্রিকদের বীরত্ব ও যুদ্ধজয়ের রহস্য জানতে এসে চন্দ্রগুপ্তের পরিচয় হয় সেনাপতি সেলুকসের সঙ্গে। তাঁর থেকে চন্দ্রগুপ্ত
যুদ্ধের যে কৌশল শিখেছিলেন তা তালপাতায় লিখে রাখছিলেন। এমন সময় আন্টিগোনসের হাতে তিনি ধরা পড়েন। ফলে তাঁকে সকলে গুপ্তচর ভাবে। পরে সত্যি প্রকাশিত হলে তিনি গ্রিক সম্রাট সেকেন্দারের আশীর্বাদ লাভ করেন।

৪ . নীচের উদ্ধৃত অংশগুলির প্রসঙ্গ ও তাৎপর্য আলোচনা করো।
৪.১ “এ শৌর্য পরাজয় করে আনন্দ আছে।
উত্তর: প্রসঙ্গ: উদ্ধৃতাংশটি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত পাঠ্য ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাট্যাংশ থেকে গৃহীত। আলোচ্য উদ্ধৃতিটির বক্তা গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার। কোনো-এক সন্ধ্যায় সিন্ধু নদের তীরে দাঁড়িয়ে তিনি তাঁর সেনাপতি সেলুকসকে রাজা পুরুর ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতার বর্ণনা করতে গিয়ে এই উপলব্ধির কথা বলেছেন।
তাৎপর্য : মাসিডন থেকে দিগ্‌বিজয়ে বেরিয়ে অর্ধেক এশিয়া জয় করে সেকেন্দার এসেছেন ভারতভূমিতে। এই জয়ের পথে কোথাও তাঁকে
কোনো প্রবল বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। দুর্বল শত্রুকে পরাজিত করে বীর সেকেন্দারের হৃদয় তাই তৃপ্তি পায়নি। কিন্তু এদেশে এসে সেকেন্দার তাঁর যোগ্য প্রতিপক্ষ রাজা পুরুর সম্মুখীন হন। তাই এমন বীর প্রতিপক্ষকে পরাজিত করে তিনি আনন্দিত হয়েছিলেন।
৪.২ “সম্রাট মহানুভব।”
উত্তর: প্রসঙ্গ: নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাটক থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশের বক্তা গ্রিক সেনাপতি সেলুকস। সেকেন্দার সেলুকসকে জানান যে, তিনি পুরুর সাহসিকতা ও বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে হৃত রাজ্য ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এই কথা শুনে সেলুকস গ্রিক সম্রাট সেকেন্দারের উদ্দেশে এই উক্তিটি করেছিলেন।
তাৎপর্য: এশিয়াবিজয়ে বেরিয়ে সেকেন্দার প্রথম বাধা পান শতদ্রু নদের তীরে পুরুরাজের কাছে। যুদ্ধের পর সেকেন্দার পুরুকে বন্দি করে
জিজ্ঞাসা করেন যে, তিনি তাঁর কাছে কীরূপ আচরণ প্রত্যাশা করেন। পুরুরাজ প্রত্যুত্তরে বলেন, “রাজার প্রতি রাজার আচরণ।” এই নির্ভীক উত্তরে মুগ্ধ হয়ে সেকেন্দার পুরুরাজের সম্মান রক্ষায় তাঁর রাজ্য ফিরিয়ে দেন। সেলুকসের এই ঘটনাটি শুনে মনে হয়েছে, সেকেন্দার মহানুভব বলেই পুরুরাজকে তাঁর রাজ্য ফিরিয়ে দিয়েছেন।

৪.৩ “বাধা পেলাম প্রথম — সেই শতদ্রুতীরে।”
উত্তর: প্রসঙ্গ : দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত ঐতিহাসিক নাটক 'চন্দ্রগুপ্ত' থেকে গৃহীত উদ্ধৃতিটির বক্তা হলেন গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার। তিনি সেনাপতি সেলুকসের কাছে তাঁর বিজয় অভিযানের পথে প্রথম প্রতিরোধের কথা বলতে গিয়ে প্রশ্নে উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন।
তাৎপর্য: সেলুকসের সঙ্গে গ্রিক সম্রাটের আলাপচারিতা থেকে।জানা যায়, সুদূর মাসিডন থেকে এসে প্রায় বিনা বাধাতেই তিনি অর্ধেক
এশিয়া অধিকার করেছেন। কেউ তাঁর মতো শক্তিশালী সম্রাটকে বাধা দেওয়ার সাহস পাননি। কিন্তু এই শক্তিশালী সম্রাট প্রথম বাধা
পেয়েছিলেন ভারতবর্ষে এসে শতদ্রুতীরে রাজা পুরুর কাছে। বীরের যোগ্য সম্মান দিতেই সেকেন্দার উল্লিখিত উত্তির মধ্য দিয়ে পুরুর প্রতি
মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন।

৪.৪ “আমি তারই প্রতিশোধ নিতে বেরিয়েছি।”
উত্তর: প্রসঙ্গ: নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত 'চন্দ্রগুপ্ত' নাট্যাংশ থেকে গৃহীত আলোচ্য উদ্ধৃতিটির বক্তা হলেন চন্দ্রগুপ্ত। তিনি সম্রাট
সেকেন্দারের উদ্দেশে এই কথাটি বলেছেন। চন্দ্রগুপ্ত ছিলেন মগধের রাজপুত্র। মহাপদ্ম তাঁর পিতা। চন্দ্রগুপ্তের বৈমাত্রেয় ভাই নন্দ তাঁকে রাজ্য থেকে নির্বাসিত করে রাজসিংহাসনের দখল নেন। এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে ও নিজের রাজ্য পুনরুদ্ধার করার প্রসঙ্গে চন্দ্রগুপ্ত উপর্যুক্ত উক্তিটি করেন।
তাৎপর্য: হারানো রাজ্য ফিরে পাওয়ার জন্য চন্দ্রগুপ্ত গ্রিক সেনাপতি সেলুকসের কাছ থেকে মাসখানেক ধরে বাহিনী-চালনা, সৈন্য সাজানোর কায়দা, সামরিক নিয়ম এইসব শিখছিলেন। এগুলি একটি শুকনো তালপাতায় লিখে নেওয়ার সময় তিনি আন্টিগোনসের কাছে ধরা পড়ে যান। তাঁকে সম্রাট সেকেন্দারের সামনে আনা হয় এবং পত্রে লিখিত বিষয় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। সেই সময় চন্দ্রগুপ্ত তাঁর পারিবারিক বিরোধ ও রাজ্য ফিরে পাওয়ার জন্য তাঁর প্রচেষ্টার কথা বলেন।

৪.৫ “যাও বীর! মুক্ত তুমি।”
উত্তর: প্রসঙ্গ : আলোচ্য উদ্ধৃতিটির বক্তা হলেন গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার।
মগধের রাজপুত্র চন্দ্রগুপ্তকে উদ্দেশ্য করে তিনি এই কথা বলেছেন। চন্দ্রগুপ্ত যখন নির্ভীকভাবে সেকেন্দারকে জানান যে, হত্যা না করে তাঁকে বন্দি করা যাবে না, তখন সেকেন্দার আনন্দিত হয়ে এই উক্তিটি করেন।
তাৎপর্য: চন্দ্রগুপ্তের গ্রিক শিবিরে প্রবেশ করাকে সেকেন্দার গুপ্তচরের।কাজ হিসেবেই দেখেছেন। তাই তিনি চন্দ্রগুপ্তকে বন্দি করতে চেয়েছেন।
চন্দ্রগুপ্ত তখন তাঁকে বলেন যে, এক নিরাশ্রয় হিন্দু রাজপুত্র সেকেন্দারের কাছে ছাত্র হিসেবে উপস্থিত হওয়াতে তিনি এত ভীত হয়ে পড়বেন, তা
চন্দ্রগুপ্ত ভাবতেই পারেননি। চন্দ্রগুপ্তকে বন্দি করার আদেশকে সেকেন্দারের কাপুরুষতা ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারেন না চন্দ্রগুপ্ত। বধ না করে সেকেন্দার তাঁকে বন্দি করতে পারবেন না—এ কথা বলে চন্দ্রগুপ্ত তরবারি বের করে লড়াইতে নামতে প্রস্তুত হন। চন্দ্রগুপ্তের এই বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে সেকেন্দার তাঁকে মুক্তি দেন।

৫. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো।
৫.১ নাট্যাংশটি অবলম্বনে ঐতিহাসিক নাটকের পরিবেশ সৃষ্টিতে নাট্যকারের দক্ষতার পরিচয় দাও।
উত্তর: : শুরুর কথা: নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত বিখ্যাত।ঐতিহাসিক নাটক ‘চন্দ্রগুপ্ত' ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। নাটকটিতে চন্দ্রগুপ্তের বীরত্ব ও উদ্যমের জয় ঘোষিত হয়েছে। এই নাটকে নানান ঐতিহাসিক ঘটনা ও চরিত্রের সমাবেশ ঘটায় একে ঐতিহাসিক নাটক বলা যায়। পাঠ্য ‘চন্দ্রগুপ্ত' নাট্যাংশটি সেই নাটকেরই একটি অংশ।
ঐতিহাসিক চরিত্রের সমাবেশ: এই নাটকে রয়েছেন গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার, গ্রিক সেনাপতি সেলুকস, তাঁর কন্যা হেলেন, আন্টিগোনস, চন্দ্রগুপ্ত প্রমুখ ঐতিহাসিক চরিত্র। এ ছাড়াও নাটকে মগধের রাজা তথা চন্দ্রগুপ্তের পিতা মহাপদ্মনন্দ, বৈমাত্রেয় ভাই নন্দ, বীর রাজা পুরু প্রমুখ ঐতিহাসিক চরিত্রের প্রসঙ্গ এসেছে। ঐতিহাসিক ঘটনার সমাবেশ: অনেক ঐতিহাসিক
ঘটনার উল্লেখও রয়েছে এই নাটকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সেকেন্দারের ভারত আক্রমণ, সেকেন্দারের সঙ্গে পুরুর যুদ্ধ ও পুরুর আত্মমর্যাদার কথা, নন্দ কেমন করে চন্দ্রগুপ্তকে বঞ্চিত করে৷ মগধের সিংহাসন অধিকার করেছিলেন, সেসব কথা এই নাট্যাংশে উঠে এসেছে।
নাট্যাংশের কোথাও প্রচলিত ইতিহাসের কোনো ঘটনা বা চরিত্রকে বিকৃত করা হয়নি। শেষের কথা : তাই বলা যায় নাট্যকার এই নাট্যাংশে যথায ঐতিহাসিক পরিবেশ সৃষ্টি করে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
৫.২ নাট্যাংশে ‘সেকেন্দার' ও 'সেলুকস'এর পরিচয় দাও।
সেকেন্দারের সংলাপে ভারত-প্রকৃতির বৈচিত্রপূর্ণ রূপ কীভাবে ধরা দিয়েছে, তা বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: সেকেন্দার ও সেলুকসের পরিচয় : নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত “চন্দ্রগুপ্ত' নাট্যাংশে উল্লিখিত ‘সেকেন্দার' হলেন গ্রিক সম্রাট এবং ‘সেলুকস' হলেন গ্রিক সেনাপতি।
বৈচিত্র্যপূর্ণ রূপ : গ্রিক সম্রাট সেকেন্দারের সংলাপে ভারতের বৈচিত্র্যপূর্ণ অতুলনীয় রূপটি সুন্দরভাবে ধরা পড়েছে। সেকেন্দারের কথা থেকে আমরা এ দেশের দিনের বেলার তীব্র রোদ, রাতের স্নিগ্ধ চাঁদের আলো, বর্ষাকালের ঘন মেঘের গর্জন, বরফে ঢাকা হিমালয়ের সৌন্দর্য, নদনদীর উচ্ছ্বলতা, মরুভূমির রুক্ষতার কথা জানতে পারি। এ দেশের কোথাও দেখা যায় সুউচ্চ তালগাছের বন, কোথাও বা বনস্পতির আশ্রয়, কোথাও উন্মত্ত হাতির গতিশীলতা, কোথাও বা আবার বনের মধ্যে হরিণের শূন্যদৃষ্টিতে চেয়ে থাকা ।
সবার উপরে রয়েছে এদেশের শাসক, যারা সৌম্য, গৌর, দীর্ঘদেহী এক জাতি। এই সব কিছুর বর্ণনাই সেকেন্দার মুগ্ধচিত্তে সেলুকস ও তাঁর কন্যা হেলেনকে শুনিয়েছেন।

৫.৩ “চমকিত হলাম।”- কার কথায় বক্তা চমকিত হয়েছিলেন? তাঁর চমকিত হওয়ার কারণ কী ?
উত্তর: উদ্দিষ্ট ব্যক্তি : বক্তা গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার তাঁর বাহিনীর কাছে পরাজিত পুরুরাজের কথায় চমকিত হয়েছিলেন।
চমকিত হওয়ার কারণ : পরাজিত ও বন্দি পুরুরাজের কাছে সেকেন্দার জানতে চেয়েছিলেন যে, তিনি সম্রাটের কাছে কেমন আচরণ
প্রত্যাশা করেন। উত্তরে পুরুরাজা তাঁকে বলেছিলেন, “রাজার প্রতি রাজার আচরণ।” এই উক্তির মধ্য দিয়ে পুরুরাজের চরিত্রের যে শৌর্য, সাহসিকতা, ব্যক্তিত্ব ও আত্মসম্মানের প্রকাশ ঘটে, তা গ্রিক সম্রাট সেকেন্দারকে চমকিত করেছিল। পুরুরাজের এই ছোটো কথাটিই সমগ্র ভারতীয় জাতি সম্পর্কে সেকেন্দারকে শ্রদ্ধাশীল করে তোলে এবং তিনি সঙ্গে সঙ্গে পুরুরাজকে তাঁর রাজ্য ফিরিয়ে দেন।

৫.৪ “সম্রাট মহানুভব।”–বক্তা কে? সম্রাটের 'মহানুভবতা'-র কীরূপ পরিচয় নাট্যাংশে পাওয়া যায় ?

উত্তর: বক্তা: 'চন্দ্রগুপ্ত' নাটকের প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্য থেকে গৃহীত আলোচ্য উদ্ধৃতিটির বক্তা গ্রিক সেনাপতি সেলুকস।
মহানুভবতার পরিচয়: যুদ্ধে বন্দি পুরুরাজের কাছে সেকেন্দার জানতে চান তিনি গ্রিক সম্রাটের কাছে কেমন আচরণ প্রত্যাশা করেন।
গুরুরাজ নির্ভীক ও অবিচলিত কণ্ঠে উত্তর দেন যে, তিনি 'রাজার প্রতি রাজার আচরণ প্রত্যাশা করেন। সেকেন্দার সেলুকসকে এই কথা জানিয়ে বলেন যে, পুরুরাজের বীরত্বে ও সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে তিনি সেই মুহূর্তেই তাঁর রাজ্য ফিরিয়ে দেন। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রকৃত বীরের প্রতি একজন বীর যোদ্ধার শ্রদ্ধাবোধ ফুটে উঠেছে। গ্রিক সম্রাট সেকেন্দারের এই আচরণের মধ্যে সেলুকস তাঁর মহানুভবতা লক্ষ করেছেন।

৫.৫ 'গুপ্তচর।'—কাকে 'গুপ্তচর' আখ্যা দেওয়া হয়েছে? সে কি প্রকৃতই গুপ্তচর ?
উত্তর: গুপ্তচরের পরিচয়। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় রচিত 'চন্দ্রগুপ্ত' নাটকে মগধের রাজপুত্র চন্দ্রগুপ্তকে গ্রিক সৈনিকরা 'গুপ্তচর' আখ্যা দিয়েছে।
'গুপ্তচর'-এর যথার্থতা বিচার: নাটকের ঘটনা লক্ষ করলে স্পষ্টই বোঝা যায়, চন্দ্রগুপ্ত প্রকৃতপক্ষে গুপ্তচর নন। সৌভাগ্যবশত তিনি গ্রিক
সেনাপতি সেলুকসের থেকে যুদ্ধের শিক্ষা লাভ করেছেন। সেলুকস চন্দ্রগুপ্তের আগ্রহে খুশি হয়ে তাঁকে বাহিনী পরিচালনা, সৈন্য সাজানোর
কায়দা, যুদ্ধের নিয়মকানুনের শিক্ষা দেন। গ্রিক শিবিরের মাঝেই এক নির্জন স্থানে বসে চন্দ্রগুপ্ত সেই শিখে নেওয়া বিষয়গুলি একটি শুকনো
তালপাতায় লিখে নিচ্ছিলেন। এমন সময়েই তিনি আন্টিগোনসের কাছে ধরা পড়ে যান। পত্রের অর্থ বুঝতে না পেরেই আন্টিগোনস তাঁকে সম্রাটের কাছে ধরে নিয়ে আসেন এবং ‘গুপ্তচর' আখ্যা দেন। কিন্তু কাহিনির অগ্রগতির সাথে সাথে এ কথা স্পষ্ট হয়েছে যে, গ্রিক বাহিনীর বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির কোনো ইচ্ছা চন্দ্রগুপ্তের ছিল না ।

৫.৬ “সেকেন্দার একবার সেলুকসের প্রতি চাহিলেন...”—তাঁর এই ক্ষণেক দৃষ্টিপাতের কারণ কী ?
উত্তর: ক্ষণেক দৃষ্টিপাতের কারণ : আন্টিগোনস চন্দ্রগুপ্তকে ‘গুপ্তচর' সন্দেহে সম্রাট সেকেন্দারের কাছে ধরে নিয়ে এলে সেকেন্দার চন্দ্রগুপ্তের কাছে প্রকৃত বিষয়টি জানতে চান। সেই কথার উত্তরেই চন্দ্রগুপ্ত তাঁর পারিবারিক। বিরোধের বিষয়টি জানান। তিনি আরও বলেন যে, হৃতরাজ্য পুনরুদ্ধার করাই তাঁর উদ্দেশ্য। সে কারণেই তিনি সেলুকসের কাছে সেনাবাহিনী-পরিচালনা ও সামরিক নিয়মকানুন শিখেছেন। এই কথা শুনে গ্রিক সম্রাট তাঁর অভিযুক্ত সেনাপতি সেলুকসের দিকে ক্ষণেক তাকিয়ে চন্দ্রগুপ্তের বক্তব্যের সত্যতা বুঝে নিতে চেয়েছিলেন।

৫.৭ চন্দ্রগুপ্ত ও সেলুকসের কীরূপ সম্বন্ধের পরিচয় নাট্যাংশে মেলে ?
উত্তর: শুরুর কথা: ‘চন্দ্রগুপ্ত” নাটকের প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে মগধের নির্বাসিত রাজপুত্র চন্দ্রগুপ্ত ও গ্রিক সেনাপতি সেলুকসের প্রসঙ্গ রয়েছে।
সম্বন্ধস্থাপন: গ্রিক সম্রাট সেকেন্দার চন্দ্রগুপ্তের কাছে তাঁর কাজকর্মের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জানতে চান। তখন আত্মপরিচয় দিয়ে চন্দ্রগুপ্ত জানান,
“আমার বৈমাত্র ভাই নন্দ সিংহাসন অধিকার করে আমায় নির্বাসিত করেছে।
আমি তারই প্রতিশোধ নিতে বেরিয়েছি।” এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই তিনি দিগবিজয়ী গ্রিক সেনাবাহিনীর যুদ্ধের কৌশল শেখার জন্য সেলুকসের কাছে এসেছিলেন।
সেলুকসের উদারতা ও সহানুভূতি: প্রবল শক্তিশালী গ্রিক বাহিনীর সেনানায়ক হয়েও বিপর্যস্ত চন্দ্রগুপ্তকে সাহায্য করার মধ্য দিয়ে সেলুকসের উদারতা ও সহানুভূতির পরিচয়ই পাওয়া যায়। চন্দ্রগুপ্তের আচরণ, কথাবার্তা ও চেহারা দেখে কখনও তাঁকে সন্দেহভাজন বা গুপ্তচর হিসেবে সন্দেহ হয়নি সেলুকসের। তাই তিনি এই ভাগ্যহারা কিন্তু উদ্যমী যুবকটির
সঙ্গে গ্রিক সামরিক প্রথার বিষয়ে আলোচনা করতেন।

সাহসী কথা: শেষে সম্রাট সেকেন্দার শত্রুর গুপ্তচর হিসেবে চন্দ্রগুপ্তকে আটক করতে চাইলে চন্দ্রগুপ্ত তীব্র ভাষায় তার প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, গ্রিক সম্রাটকে আগে বীর ভাবলেও মুখোমুখি হওয়ার পর তাঁকে কাপুরুষ মনে হচ্ছে। তিনি এরপর আরও বলেন, “সম্রাট আমায়
বধ না করে বন্দি করতে পারবেন না।”—চন্দ্রগুপ্তের এই সাহসী কথায চমৎকৃত হয়ে গ্রিকসম্রাট তাঁকে জানান যে, তিনি চন্দ্রগুপ্তকে কেবল পরীক্ষা করছিলেন। উদারমনা: চন্দ্রগুপ্তকে নিজ রাজ্যে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে সম্রাট তাঁকে আশীর্বাদ করেন—“তুমি হূত রাজ্য পুনরুদ্ধার করবে। তুমি দুর্জয় দিগ্‌বিজয়ী হবে।” এর মধ্য দিয়ে তাঁর উদার মনেরই পরিচয় মেলে।
৬. নীচের বাক্যগুলি থেকে সন্ধিবদ্ধ পদ খুঁজে নিয়ে সন্ধি বিচ্ছেদ করে।
৬.১ আমি নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে দেখি।
উত্তর: নির্বাক = নিঃ+ বাক
৬.২ বিশাল নদ-নদী ফেনিল উচ্ছ্বাসে উদ্দাম বেগে ছুটেছে।
উত্তর:, উচ্ছ্বাসে = উৎ + শ্বাস-এ উদ্দাম = উৎ + দাম
৬.৩ সে নির্ভীক নিষ্কম্পস্বরে উত্তর দিলো, “রাজার প্রতি রাজার আচরণ।”
উত্তর: নির্ভীক = নিঃ + ভীক → নিষ্কম্প = নিঃ + কম্প
৬.৪ আমি এসেছি শৌখিন দিগ্‌বিজয়ে
উত্তর: দিগ্‌বিজয়ে = দিক্ + বিজয়ে
৬.৫ তুমি হৃতরাজ্য উদ্ধার করবে।
উত্তর: উদ্ধার = উৎ + হার

৭. নিম্ন রেখাঙ্কিত শব্দগুলির কারক বিভক্তি নির্ণয় কর :-

৭.১ কী বিচিত্র এই দেশ !
উত্তর: কর্মকারকে শূন্য বিভক্তি।
৭.২ আমি বিস্মিত আতঙ্কে চেয়ে থাকি ।
উত্তর: অপাদানকারকে (ভীত অর্থে) ‘এ’ বিভক্তি।
৭.৩ মদমত্ত মাতঙ্গ জঙ্গমপর্বতসম মন্থর গতিতে চলেছে।
উত্তর: কর্তৃকারকে শূন্য বিভক্তি।
৭.৪ বাধা পেলাম প্রথম — সেই শতদ্রুতীরে
উত্তর: অধিকরণকারকে 'এ' বিভক্তি।
৭.৫ আমি যা শিখেছি তা এই পত্রে লিখে নিচ্ছিলাম
উত্তর: অধিকরণকারকে 'এ' বিভক্তি।

৮. নীচের শব্দগুলির দল বিশ্লেষণ করো: স্থিরভাবে,
নিষ্কম্পম্বরে, বিজয়বাহিনী, চন্দ্রগুপ্ত, আর্যকুলরবি।

উত্তর: স্থিরভাবে—স্থির্ (রুদ্ধ) . ভা (মুক্ত) বে (মুক্ত)

নিষ্কম্পস্বরে—নি (রুদ্ধ) কম্ (রুদ্ধ) · পো (মুক্ত) · স্ব (মুক্ত) রে (মুক্ত)
বিজয়বাহিনী—বি (মুক্ত) · জয় (রুদ্ধ) · বা (মুক্ত) - হি (মুক্ত). নী (মুক্ত)
চন্দ্রগুপ্ত—চন্ (রুদ্ধ) · দ্রো (মুক্ত) - গুপ (রুদ্ধ) · তো (মুক্ত)
আর্যকুলরবি—আর্ (রুদ্ধ) · যো (মুক্ত) - কু (মুক্ত) · লো (মুক্ত) · রো (মুক্ত) · বি (মুক্ত)

৯.নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করে।।
৯.১ নদতটে শিবির-সম্মুখে সেকেন্দার ও সেলুকস অস্তগামী সূর্যের (দুটি বাক্যে ভেঙে লেখো)
উত্তর: সেকেন্দার ও সেলুকস নদতটে শিবির-সম্মুখে দাঁড়াইয়াছিলেন।
দিকে চাহিয়া ছিলেন। তাঁরা অস্তগামী সূর্যের দিকে চাহিয়া ছিলেন।
৯.২ “আমার কাছে কীরূপ আচরণ প্রত্যাশা করো ?” (পরোক্ষ উক্তিতে)
উত্তর: বক্তা জিজ্ঞাসা করলেন যে শ্রোতা তাঁর কাছে কীরূপ আচরণ প্রত্যাশা করেন।
৯.৩ জগতে একটা কীর্তি রেখে যেতে চাই।
(না-সূচক বাক্যে)
উত্তর: জগতে একটা কীর্তি না রেখে যেতে চাই না।

৯.৪ আমি যা শিখেছি তা এই পত্রে লিখে নিচ্ছিলাম। (সরল বাক্যে)
উত্তর: আমার শেখা বিষয় এই পত্রে লিখে নিচ্ছিলাম ।
৯.৫ তোমার অপরাধ তত নয় ।
উত্তর: তোমার অপরাধ সামান্যই।

(হ্যাঁ-সূচক বাক্যে)
৯.৬ এক গৃহহীন নিরাশ্রয় হিন্দু রাজপুত্র ছাত্র হিসেবে তাঁর কাছে উপস্থিত, তাতেই তিনি ত্রস্ত। (
নিম্নরেখ শব্দের বিশেষ্য রূপ ব্যবহার করে বাক্যটি লেখ)

উত্তর: এক গৃহহীন নিরাশ্রয় হিন্দু রাজপুত্রের ছাত্র হিসেবে তাঁর কাছে উপস্থিতিতেই তিনি ত্রস্ত।
৯.৭ কী বিচিত্র এই দেশ!(নির্দেশক বাক্যে)
উত্তর: এই দেশ হল অতি বিচিত্র ৷
৯.৮ সত্য সম্রাট।(না-সূচক বাক্যে)
উত্তর: মিথ্যা নয় সম্রাট।

 ৯.৯ এ দিগ্‌বিজয় অসম্পূর্ণ রেখে যাচ্ছেন কেন সম্রাট ? (পরোক্ষ উক্তিতে)

উত্তর: বক্তা প্রশ্ন করলেন যে, এ দিগ্‌বিজয় অসম্পূর্ণ রেখে যাওয়ার কারণ কী ।
৯.১০ ভারতবাসী মিথ্যা কথা বলতে এখনও শিখে নাই। (হ্যাঁ-সূচক বাক্যে)
উত্তর: ভারতবাসী এখনও পর্যন্ত শুধু সত্য কথা বলতেই শিখেছে।

৯.১১ আমি এরূপ বুঝি নাই ৷ (হ্যাঁ-সূচক বাক্যে)
উত্তর: আমি অন্যরূপ বুঝিয়াছি।

৯.১২ সেকেন্দার সাহা এত কাপুরুষ তাহা ভাবি নাই ৷ (নিম্নরেখ শব্দের বিশেষ্য রূপ ব্যবহার করে বাক‍্যটি লেখ)

 উত্তর: সেকেন্দার সাহার কাপুরুষত্ব এতখানি, ভাবি নাই ৷
১.১৩ সম্রাট আমায় বধ না করে বন্দি করতে পারবেন না।(যৌগিক বাক্যে)
উত্তর: সম্রাট আগে আমায় বধ করবেন এবং তারপর বন্দি করবেন।
৯.১৪ আমি পরীক্ষা করছিলাম মাত্র। (জটিল বাক্যে)
উত্তর: আমি যা করছিলাম তা নিতান্তই পরীক্ষা।
৯.১৫ নির্ভয়ে তুমি তোমার রাজ্যে ফিরে যাও। (না-সূচক বাক্যে)
উত্তর। তুমি তোমার রাজ্যে নির্ভয়ে ফিরে যেতে বিরত থেকো না।