টিকিটের অ্যালবাম || অষ্টম শ্রেণি বাংলা || হাতে-কলমে প্রশ্নের উত্তর || Tikiter albam || class 8 bangla || hate- kalame question answer
![]() |
টিকিটের অ্যালবাম
লেখক - সুন্দর রামস্বামী
অষ্টম শ্রেণি বাংলা।
হাতে-কলমে প্রশ্নের উত্তর
১.নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
১.১ সুন্দর রামস্বামী কোন্ ভাষার লেখক ?
উত্তর: সুন্দর রামস্বামী তামিল ভাষাসাহিত্যের একজন প্রখ্যাত লেখক ছিলেন।
১.২ তিনি কোন্ ছদ্মনামে লিখতেন ?
উত্তর: সুলেখক সুন্দর রামস্বামী 'পদুবিয়া' ছদ্মনামে লিখতেন।
২.নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও।
২১ ‘টিকিটের অ্যালবাম' গল্পের লেখক কে?
উত্তর: ‘টিকিটের অ্যালবাম' গল্পের লেখক সুন্দর রামস্বামী।
২২ মূল গল্পটি কোন্ ভাষায় রচিত ?
উত্তর: আমাদের পাঠ্য ‘টিকিটের অ্যালবাম’-এর মূল গল্পটি তামিল ভাষায় রচিত, যেটির বাংলা তরজমা করেছেন অর্ঘ্যকুসুম দত্তগুপ্ত।
২.৩ গল্পটিতে মোট কটি চরিত্রের দেখা পাওয়া যায় ?
উত্তর: “টিকিটের অ্যালবাম' গল্পটিতে রাজাপ্পা, নাগরাজন, কামাক্ষী, আপ্পু ও রাজাপ্পার মা, নাগরাজনের বাবা, কাকা এবং পার্বতী নামে
রাজাপ্পার এক সহপাঠিনীর উল্লেখ রয়েছে।
২.৪ মেয়েদের পক্ষ থেকে কে নাগরাজনের থেকে অ্যালবামটি চেয়ে নিয়ে যেত ?
উত্তর: মেয়েদের পক্ষ থেকে ডানপিটে পার্বতী নাগরাজনের কাছ থেকে অ্যালবামটি চেয়ে নিয়ে যেত।
২.৫ রাজাপ্পা কীভাবে তার অমূল্য ডাকটিকিটগুলি সংগ্রহ করত ?
উত্তর: যেভাবে মৌমাছি কষ্ট করে মধু সংগ্রহ করে, সেভাবেই রাজাপ্পা অনেক খোঁজখবর রেখে অনেক কষ্ট স্বীকার করে তার অমূল্য
ডাকটিকিটগুলো সংগ্রহ করত।
২.৬ নাগরাজনের অ্যালবামটি তাকে কে উপহার দিয়েছিলেন ?
উত্তর: নাগরাজনের কাকা সিঙ্গাপুর থেকে অ্যালবামটি তাকে উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিলেন।
২.৭ সেই অ্যালবামের প্রথম পাতায় কী লেখা ছিল ?
উত্তর:-নাগরাজনের অ্যালবামের প্রথম পাতায় লেখা ছিল তার নাম—
"এস নাগরাজন', আর তার নীচে লেখা ছিল— “এই অ্যালবামটা চুরি করতে চেষ্টা করছ যে নির্লজ্জ হতভাগা, তাকে বলছি . . . ওপরে আমার
দেখেছ? এটা আমার অ্যালবাম। এটা আমার এবং যতদিন ঘাসের রং সবুজ আর পদ্মফুল লাল, সূর্য পূর্বে উঠবে আর পশ্চিমে অস্ত যাবে।
৩ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর সংক্ষেপে লেখো ।
নাগরাজনের অ্যালবামের প্রতি সকলে আকৃষ্ট হয়ে পড়ল কেন?
উত্তর: স্কুলের ছেলেমেয়েরা নাগরাজনের অ্যালবামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিল। কারণ নাগরাজন সেই অ্যালবামটি খুশিমনে সবাইকে
দেখতে দিত, একটুও অধৈর্য হত না। এ ছাড়া সিঙ্গাপুর থেকে আনা।অ্যালবামটা ছিল খুব সুন্দর এবং বড়ো, স্থানীয় কোনো দোকানে তা পাওয়া
সম্ভব ছিল না।
৩.২ “কেটে পড় হিংসুটে পোকা।”—বক্তা কে? কাকে সে এমন কথা বলেছে? তুমি কি এই কথার মধ্যে কোনো যুক্তি খুঁজে পাও ?
উত্তর: বক্তার পরিচয় : সুন্দর রামস্বামী রচিত 'টিকিটের অ্যালবাম’ গল্পে আলোচ্য উদ্ধৃতিটির বক্তা হল রাজাপ্পা ও নাগরাজনের এক
সহপাঠী কৃয়ান।
> উদ্দিষ্ট ব্যক্তি : ক্লাসের সবাইকে নাগরাজনের অ্যালবামের প্রতি আকৃষ্ট হতে দেখে রাজাপ্পা রাগ প্রকাশ করলে তাকে উদ্দেশ্য করেই কৃস্নান এমন
কথা বলেছে।
যৌক্তিকতা বিচার : সিঙ্গাপুর থেকে নাগরাজনের কাকার পাঠানো অ্যালবামটি ক্লাসের ছেলেমেয়েদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। রাজাপ্পার তা সহ্য হয়নি। নাগরাজনের অ্যালবামের প্রথম পাতার লেখাটি ক্লাসের সবাই নিজেদের বই-খাতা ও অ্যালবামে লিখে নিলে রাজাপ্পা মনে মনে
নাগরাজনের প্রতি হিংসায় জ্বলে ওঠে। সে তখন রেগে গিয়ে ছেলেমেয়েদের নকলনবিশ বলে ওঠে। রাজাপ্পার এই অভব্য আচরণের জবাবে কৃয়ানের তাকে ‘হিংসুটে পোকা’ বলা তাই আমার যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়।
৩.৩ “এদের সঙ্গে তর্ক করে লাভ নেই।”— উপলব্ধিটি কার? কী বিষয়ে তর্কের প্রসঙ্গ এসেছে? তর্ক করে লাভ নেই কেন?
উত্তর: উদ্দিষ্ট ব্যক্তি : সুন্দর রামস্বামী রচিত ‘টিকিটের অ্যালবাম’ শীর্ষক ছোটোগল্পে এই উপলব্ধিটি ক্লাসের অন্যতম ডাকটিকিট সংগ্রাহক
ছাত্র রাজারার।
তর্কের প্রাসঙ্গিক বিষয় : আলোচ্য অংশে ক্লাসের ছেলেদের মধ্যে কার ডাকটিকিটের অ্যালবামটি ভালো নাগরাজনের না রাজাপ্পার তা নিয়ে তর্কের প্রসঙ্গ এসেছে।
তর্ক করে লাভ না হওয়ার কারণ : একসময় ক্লাসের ছেলেমেয়েদের কাছে রাজাপ্পার অ্যালবামটির খুবই কদর ছিল। তারপর ক্লাসের অন্য এক ছাত্র এস নাগরাজনের কাকা সিঙ্গাপুর থেকে একটি চমৎকার অ্যালবাম তাকে
পাঠান। এরপর থেকে ওই অ্যালবামটি দেখার জন্য ছেলেমেয়েরা প্রায় সবাই তার কাছে ভিড় জমাতে শুরু করে। এই জনপ্রিয়তা হারানোর বিষয়টি রাজাপ্পার একেবারেই পছন্দ হয়নি। হিংসার বশে রাজাপ্পা ক্লাসের ছেলেমেয়েদের সমালোচনা করতে থাকে। নিজের অ্যালবামটিই যে বড়ো আর মূল্যবান তা বারবার ঘোষণার মাধ্যমে বোঝাতে চায়। প্রসঙ্গত, কৃষ্ণান
রাজাপ্পাকে তার অ্যালবামটি ডাস্টবিনে রাখার যোগ্য বললে অন্য ছেলেরাও তার পক্ষ নিয়ে 'বাজে অ্যালবাম, বাজে অ্যালবাম' বলে চিৎকার করতে থাকে। তখন রাজায়ার মনে হয়, দুটি অ্যালবামের মধ্যে পার্থক্য বোঝার কোনো ক্ষমতাই ছেলেদের নেই। আর সেই কারণেই তার মনে হয়েছে, তাদের সঙ্গে সেই বিষয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়া নিতান্তই অর্থহীন।
8. নিচের প্রশ্নগুলি উত্তর নিজের ভাষায় লেখো।
৪.১ “হঠাৎ যেন এর জনপ্রিয়তা কমে গেছে।”—কার এমন মনে।হয়েছে? এই 'জনপ্রিয়তা' হঠাৎ কমে যাওয়ার কারণ কী ?
উত্তর: উদ্দিষ্ট ব্যক্তি । সুন্দর রামস্বামী রচিত 'টিকিটের অ্যালবাম' গল্পে ডাকটিকিট সংগ্রাহক স্কুলছাত্র রাজাপ্পার এমনটি মনে হয়েছে।
হঠাৎ 'জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার কারণ : ক্লাসের অন্য এক ছাত্র এস নাগরাজনের জন্য তার কাকা সিঙ্গাপুর থেকে একটি ডাকটিকিটের।অ্যালবাম পাঠিয়েছিলেন। সেটি দেখতে ছিল খুব সুন্দর। এইরকম অ্যালবাম সেখানকার স্থানীয় কোনো দোকানেই পাওয়া সম্ভব ছিল না। তা ছাড়া সেই
সুন্দর অ্যালবামটিতে রাজাপ্পার মতো অত বেশি কিংবা একই ডাকটিকিট না থাকলেও সেটিই ছিল সেরা। আর নাগরাজনের সুমিষ্ট ব্যবহারও সবাইকে তার অ্যালবামের প্রতি আকৃষ্ট করে তুলেছিল। সে নিজের হাতে অ্যালবামটি রেখে আনন্দিত মনে পাতা উলটে সকলকে দেখাত। মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে ডানপিটে পার্বতী অ্যালবামটি মেয়েদের নাম করে চেয়ে
নিয়ে যেত। এভাবেই ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা হিংসুটে রাজাপ্পার অ্যালবাম তথা রাজাপ্পার কাছ থেকে সরে গিয়ে নাগরাজনের দিকে ভিড় জমাত। তাই
রাজাপ্পার মনে হয়েছে গত দিন-তিনেকের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা যেন হঠাৎ কমে গেছে।
৪.২ “কেউ রাজাপ্পার অ্যালবামের কথা উল্লেখও করত না, বা তাকে পাত্তাও দিত না।”—সকলের এমন আচরণের কারণ গল্প অনুসরণে
আলোচনা করো।
উত্তর: শুরুর কথা : সুন্দর রামস্বামীর লেখা ‘টিকিটের অ্যালবাম’ গল্পে একসময়ে রাজাপ্পার অ্যালবাম ক্লাসের ছেলেমেয়েদের কাছে অত্যন্ত
জনপ্রিয় ও আকর্ষণীয় ছিল।
রাজাপ্পার অহংকারী মনোভাব : কিন্তু তার
অহংকারী মনোভাব, কঠোর কথাবার্তায় সবাই অখুশি হত।নাগরাজনের সুন্দর অ্যালবাম ও মিষ্টি ব্যবহার: ক্লাসের অন্য এক ছাত্র এস নাগরাজনের কাকা সিঙ্গাপুর থেকে তাকে একটি অত্যন্ত সুন্দর
ডাকটিকিটের অ্যালবাম পাঠালেন। তারপর থেকে অ্যালবামটির সৌন্দর্য আর নাগরাজনের মিষ্টি ব্যবহারের কারণে সবাই তার চারপাশেই ভিড়
জমাতে লাগল।নাগরাজনের ধৈর্যশীলতা : নিজের হাতে রেখে সবাইকে অ্যালবামটি দেখানোর সময় বা মেয়েদের সেটি দেখতে দিয়ে নাগরাজন
কখনোই ধৈর্য হারিয়ে ফেলত না। সবাই প্রাণভরে, আশ মিটিয়ে সেই অ্যালবামটি দেখতে পেত। শেষ কথা: এই সমস্ত কারণেই অহংকারী রাজাপ্পার অ্যালবামের কথা কেউ বলত না, বা তাকে পাত্তাও দিত না।
৪.৩ স্কুলের ছেলেমেয়েদের নাগরাজন কীভাবে তার নিজের অ্যালবামটি দেখতে দিত ?
উত্তর: সিঙ্গাপুর থেকে কাকার পাঠানো ডাকটিকিটের সুন্দর অ্যালবামটিৎএস নাগরাজন ক্লাসের অন্যান্য ছেলেমেয়েদের অত্যন্ত যত্নসহকারে দেখতে দিত। প্রতিদিন বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হওয়ার আগে, দুপুরে খাওয়ার ঘণ্টা
বাজলে কিংবা সন্ধ্যাবেলা ওর বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে গিয়ে ছেলেমেয়েরা ওর অ্যালবামটি দেখত। নাগরাজন এতে কখনও অধৈর্য হয়ে পড়ত না। ও শুধু একটি মাত্র শর্ত দিয়েছিল যে কেউ যেন অ্যালবামটি না ধরে। নিজের কোলের উপরে অ্যালবামটি রেখে নিজে পাতা উলটে উলটে সে সকলকে প্রাণভরে দেখার সুযোগ করে দিত। আর মেয়েদের পক্ষ থেকে পার্বতী এসে অ্যালবামটি চেয়ে নিয়ে যেত। দেখা হয়ে গেলে সন্ধ্যাবেলা অ্যালবামটিৎআবার নাগরাজনকে ফিরিয়ে দিত।
৪.৪ ডাকটিকিট সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে রাজাপ্পার তীব্র আকর্ষণের যে পরিচয় গল্পে রয়েছে তা আলোচনা করো।
উত্তর: শুরুর কথা : সুন্দর রামস্বামী রচিত 'টিকিটের অ্যালবাম'
গল্পে রাজাপ্পার ডাকটিকিট সংগ্রহ করার তীব্র আকাঙ্ক্ষার কথা জানা যায়।
মৌমাছির মধুসংগ্রহের সঙ্গে তুলনা : গল্পে রাজাপ্পার ডাকটিকিট সংগ্রহের উৎসাহকে মৌমাছির মধুসংগ্রহের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
এই বিষয়টিই তাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করত।
অন্যান্য ডাকটিকিট সংগ্রাহকের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং টিকিটের বিনিময় :
রাজাপ্পা অন্যান্য ডাকটিকিট সংগ্রাহকদের সঙ্গে দূরদূরান্তে দেখা করতে যেত, তাদের সঙ্গে টিকিটের বিনিময় করত। ডাকটিকিটের
খোঁজ : বিকেলে স্কুল থেকে ফিরে বইপত্র ঘরের এক কোণে কোনোরকমে ফেলে রেখেই সামান্য জলখাবার প্যান্টের পকেটে ভরে নিয়ে সে
বেরিয়ে পড়ত নানা দেশের ডাকটিকিটের সন্ধানে। যেমন—একবার সে প্রায় চার মাইল দূরে থাকা একটি ছেলের কাছে কানাডার ডাকটিকিটের
খোঁজে গিয়েছিল।
৪.৫ “চোরাদৃষ্টিতে অ্যালবামটি দেখত।”—সেই চোরাদৃষ্টিতে দেখা অ্যালবামটির কোন্ বিশেষত্বের কথা গল্পে রয়েছে?
উত্তর: শুরুর কথা: সুন্দর রামস্বামী রচিত 'টিকিটের অ্যালবাম' ছোটোগল্পের আলোচ্য অংশে এস নাগরাজনের অ্যালবামটির প্রতি রাজাপ্পার চোরাদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার কথা বলা হয়েছে। সিঙ্গাপুর থেকে
পাঠানো অ্যালবাম : নাগরাজনের কাকা সিঙ্গাপুর থেকে একটি অ্যালবাম পাঠিয়েছিলেন। গত দিন-তিনেকের মধ্যে সেটির দিকেই
ক্লাসের ছেলেমেয়েরা ঝুঁকে পড়ায় রাজাপ্পার বিপুল জনপ্রিয়তা কপূরের মতো উবে গেছিল। কেউ আর তার অ্যালবামের কথা উল্লেখও করত না,।বা তাকে পাত্তাও দিত না।
রাজাপ্পার প্রতিক্রিয়া : অন্য সব ছেলেমেয়ে
নাগরাজনের অ্যালবাম নিয়ে উৎসাহ আর উদ্দীপনা প্রকাশ করলেও রাজাপ্পা সেটি তাকিয়ে দেখতেও রাজি ছিল না। রাগে আর ঈর্ষায় সে মুখ
ফিরিয়ে নিলেও চোরাদৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে মনে ভাবত যে অ্যালবামটিৎসত্যিই খুবই সুন্দর। দুর্লভতা : কোনো স্থানীয় দোকানে অমন সুন্দর
অ্যালবাম পাওয়া যায় না বলেই রাজাপ্পার অভিজ্ঞ দৃষ্টিতে অ্যালবামটির দুর্লভতা আর সৌন্দর্য ধরা পড়েছিল।
৪.৬ নাগরাজনের প্রতি রাজাপ্পা কীভাবে ক্রমশ ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েছিল ?
উত্তর: সুন্দর রামস্বামীর লেখা “টিকিটের অ্যালবাম' গল্পে রাজাপ্পা ক্রমশ নাগরাজনের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েছিল। নাগরাজনের বিপুল জনপ্রিয়তা দেখে এবং সহপাঠীদের মধ্যে তার ডাকটিকিটের অনেক প্রশংসা শুনে শুনে
রাজাপ্পা ভীষণ ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েছিল। অন্য ছেলেমেয়েরা নাগরাজনের অ্যালবামের প্রশংসা করলে বা তার অ্যালবামের প্রথম পাতার লেখাটি
নিজেদের খাতায় টুকে নিলে রাজাপ্পা রেগে যায়। সে সকলকে 'নকল-নবীশ' বললে কৃস্নান তাকে 'হিংসুটে পোকা' বলে। তার অ্যালবামটি ডাস্টবিনে রাখার যোগ্য—তাও শুনতে হয় তাকে। এভাবেই ভেতরে ভেতরে হিংসায় জ্বলে গিয়ে রাজাপ্পার মনে স্কুল সম্পর্কেও বিতৃয়া জেগে ওঠে। এমনকি যে অ্যালবাম ছিল তার সর্বক্ষণের সঙ্গী, গত দু-দিন বিরক্তি আর অশান্তিতে সে সেটির পাতা পর্যন্ত উলটে দেখে না। নাগরাজনের সূদৃশ্য অ্যালবামটির পাশে নিজের অ্যালবামটিকে তার 'এক আঁটি ছেঁড়া ন্যাকড়া' বলে মনে হতে থাকে।
৪.৭ “সন্ধ্যাবেলা রাজাপ্পা নাগরাজনের বাড়ি গেল।”—কোন উদ্দেশ্য নিয়ে রাজাপ্পা নাগরাজনের বাড়িতে গিয়েয়ছিল ? এর মধ্য দিয়ে তার চরিত্রের কোন্ দিকটি ধরা পড়ে ?
উত্তর: রাজাপ্পার উদ্দেশ্য: রাজাপ্পা একদিন তার ক্লাসেরই আর-এক ডাকটিকিট সংগ্রাহক বন্ধু নাগরাজনের বাড়িতে গিয়েছিল। ক্লাসের
ছেলেমেয়েরা ক্রমশ নাগরাজনের অনুরাগী হয়ে উঠছিল এবং তার অ্যালবামটির প্রতি তীব্র আকর্ষণ বোধ করছিল। এই বিষয়গুলি রাজাপ্পা
একেবারেই ভালোভাবে নেয়নি। সে বন্ধুদের সঙ্গে ঘনঘন তর্কে জড়িয়ে পড়ছিল। নিজের শখের প্রতি অবহেলার পাশাপাশি স্কুলের প্রতিও সে তীব্র
বিয়া অনুভব করছিল। বন্ধুদের কাছে উপেক্ষা আর অবহেলা সে আর সহ্য করবে না, এই সিদ্ধান্ত নিয়েই নাগরাজনের সঙ্গে বোঝাপড়া করার জন্য সে তার বাড়িতে গিয়েছিল।
চারিত্রিক বিশেষত্ব: নাগরাজনের বাড়িতে রাজাপ্পার যাওয়ার মধ্য দিয়ে তার মানসিক অশান্তি, ঈর্ষা, কাতরতা, হিংসা আর রেষারেষির মনোভাবই ফুটে উঠেছে। বন্ধুত্বপূর্ণভাবে পরস্পরের কাছাকাছি আসার কোনো
উদ্যোগই সে নেয়নি। এ ছাড়া ওই ঘটনার মধ্য দিয়ে তার অহংকার এবং জেদি মনোভাবেরও প্রকাশ ঘটেছে।
৪.৮ “রাজাপ্পার চোখ জলে ভরে গেল।”— কোন্ পরিস্থিতিতে রাজাপ্পার চোখ জলে ভরে উঠল ?
উত্তর:: সুন্দর রামস্বামীর লেখা 'টিকিটের অ্যালবাম' গল্পে বন্ধু নাগরাজনের বাড়ি থেকে চুরি করে আনা অ্যালবামটি পুড়িয়ে ফেলার পর রাজাপ্পার চোখ জলে ভরে উঠল।
কাদের ছেলেমেয়েরা নাগরাজনের অ্যালবামটির প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ায় রাজারা তার গুরুত্ব হারায়। ক্রমশ সে নাগরাজনের প্রতি প্রবল
হিসোর জ্বলে ওঠে। বোঝাপড়ার জন্য নাগরাজনের বাড়িতে গেলেও তার না থাকার সুযোগ নিয়ে রাজারা ড্রয়ার থেকে অ্যালবামটি জামার নীচে লুকিয়ে নিয়ে বাড়িতে চলে আসে। এরপর ধরা পড়ে যাওয়ার মারাত্মক ভয় তাকে তাড়া করে বেড়ায়। রাতে সে ঘুমোতে পারে না। তার বাবা মা একটু অবাক হয়ে যান। পরের দিন সকালে পুলিশ আসতে পারে শুনে সে ভয়
পায়। শেষে জ্বলন্ত উনুনের মধ্যে অ্যালবামটি ফেলে দিয়ে সে কিছুক্ষণের জন্য নিশ্চিন্ত হয়। কিন্তু সে প্রকৃতপক্ষে ডাকটিকিটকে নিজের প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসত। অমূল্য সব ডাকটিকিট এবং অপূর্ব সুন্দর সেই অ্যালবামটি এভাবে তার নিজেরই জন্য পুড়ে যাওয়ার কারণে তার চোখ জলে ভরে উঠেছিল।
৪.১ "নাগরাজন হতবুদ্ধি হয়ে গেল।” তার হতবুদ্ধি হয়ে পড়ার কারণ কী ?
উত্তর: সুন্দর রামস্বামী রচিত 'টিকিটের অ্যালবাম' গল্পের শেষে রাজাহার আচরণ দেখে তার সহপাঠী নাগরাজনের হতবুদ্ধি হয়ে পড়ার কথা এখানে
বলা হয়েছে।
শহর থেকে বাড়িতে ফিরে নাগরাজন জানতে পারে যে তার সাধের অ্যালবামটি হারিয়ে গেছে। তার বোনের থেকে সে খবর পায়, যখন নাগরাজন শহরে গিয়েছিল, তখন একমাত্র রাজারাই ওদের
বাড়িতে গিয়েছিল। মুখে চোখে কান্না আর দুঃখের স্পষ্ট ছাপ নিয়ে নাগরাজন রাজাপ্পার
বাড়িতে যায়। তার অ্যালবামটি হারিয়ে যাওয়ার কথা জানায় এবং সে কাঁদতে থাকে। রাজাপ্পা তাকে সান্ত্বনা দিতে চেয়েও ব্যর্থ হয়।
নাগরাজনের অ্যালবাম হারানোর দুঃখ সে বুঝতে পারে। শেষে রাজারা এক আশ্চর্য সিদ্ধান্ত নেয়। নিজের স্বপ্নের অ্যালবামটি সে বিনা শর্তে
নাগরাজনকে দিয়ে দেবে বলে ঠিক করে। নাগরাজন ডাকটিকিটগুলো ছাড়া রাজাপ্পার পক্ষে সুস্থভাবে বেঁচে থাকাটা কত কঠিন!
জানে, রাজাপ্পার এই অদ্ভুত সিদ্ধান্তে নাগরাজন হতবুদ্ধি হয়ে পড়ে। উদ্ধত, কটুভাষী, ডাকটিকিটের জন্য মরিয়া রাজাপ্পার এমন আচরণ লক্ষ করে নাগরাজন হতবাক হয়ে পড়ে।
৪.১০ “কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনার আগুনে দগ্ধ হয়েই ‘টিকিটের অ্যালবাম' গল্পে রাজাপ্পার আত্মশুদ্ধি ঘটেছে।”—গল্পের ঘটনা বিশ্লেষণ করে উদ্ধৃতিটির যথার্থতা প্রতিপন্ন করো।
উত্তর: রাজাপ্পার ঈর্ষাপ্রবণ মন: সুন্দর রামস্বামী রচিত “টিকিটের অ্যালবাম' গল্পে ডাকটিকিট সংগ্রাহক কিশোর ছাত্র হল রাজাপ্পা। তার
ক্লাসেরই নাগরাজনের অ্যালবামটির প্রতি অন্যদের আকর্ষণকে রাজাপ্পা খুবই হিংসার চোখে দেখত। একদিন নাগরাজনের বাড়িতে গিয়ে তার
অনুপস্থিতিতে সে অ্যালবামটি চুরি করে বিষয়টিকে গোপন রাখতে রাজাপ্পা যথেষ্ট চিন্তিত হয়ে ওঠে। কিন্তু তার মনের অস্থিরতা আর ভয়
বাড়তে থাকে। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে বাঁচতে, রাজাপ্পা নাগরাজনের অ্যালবামটি স্নানের ঘরে জল গরম করার উনুনে
ফেলে পুড়িয়ে দেয়।
রাজাপ্পার অপরাধবোধ; এরপর নাগরাজন তার কাছে অ্যালবামটি হারিয়ে যাওয়ার খবর দিতে এলে তার চোখের দিকে তাকিয়ে রাজাপ্পা কথা
বলার সাহস হারিয়ে ফেলে। নাগরাজনকে সান্ত্বনা দিতে গেলে সে নিজেও কেঁদে ওঠে এবং পরিশেষে নিজের সুন্দর করে সাজানো অ্যালবামটিই সে
তাকে দিয়ে যেন অপরাধ থেকে মুক্ত হতে চায়।
রাজাপ্পার আত্মশুদ্দি : অ্যালবাম নিতে নাগরাজন রাজি না হলেও শেষপর্যন্ত রাজাপ্পার কাতর আবেদনে সে রাজি হয়। শুধু সেই রাতের জন্য
অ্যালবামটি রাজাপ্পাকে তার নিজের কাছে রাখতে দিয়ে নাগরাজন বাড়ি ফিরে যায়। নিজের ঘরে ঢুকে দরজায় খিল দিয়ে সবার চোখের আড়ালে অ্যালবামটিকে শক্ত করে জাপটে ধরে রাজাপ্পা শুধু চোখের জলে ভাসতে থাকে। এভাবেই কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনার আগুনে দগ্ধ হয়ে 'টিকিটের।অ্যালবাম ' গল্পে রাজাপ্পার আত্মশুদ্ধি ঘটেছে।