পথের পাঁচালী ৷৷ অষ্টম শ্রেণী বাংলা,|| হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর || pather panchali ||class 8 bangla || hate- kalame answer - school book solver

Monday, 1 September 2025

পথের পাঁচালী ৷৷ অষ্টম শ্রেণী বাংলা,|| হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর || pather panchali ||class 8 bangla || hate- kalame answer

 



পথের পাঁচালী

অষ্টম শ্রেণি বাংলা
'হাতেকলমে' প্রশ্নের উত্তর


১.অতি সংক্ষেপে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
১.১ কুঠির মাঠ দেখতে যাওয়ার পথে কী দেখে অপু সব থেকে বেশি অবাক হয়েছিল ?
উত্তর: কুঠির মাঠ দেখতে যাওয়ার পথে খরগোশ দেখে অপু সব থেকে বেশি অবাক হয়েছিল।

১.২ আলকুশি কী ?
উত্তর: 'আলকুশি' হল একধরনের শুঁয়োযুক্ত উজ্জ্বল রঙের বিষাক্ত ফল, যাতে হাত দিলেই চুলকোয় এবং পরে ফোসকা পড়ে।

১.৩ “এই দ্যাখো মা, আমার সেই মালাটা”-কে, কখন এই কথা বলেছে?
উত্তর: মুখুজ্যেবাড়ির মেয়ে টুনু যখন দুর্গার খেলনার বাক্স ঘেঁটে তার হারানো পুঁতির মালাটি খুঁজে পেয়েছিল, তখন সে তার মাকে একথা বলেছিল।

১.৪ অপু কার পাঠশালায় পড়তে গিয়েছিল? গুরুমশাই পড়ানোর পাশাপাশি আর কোন্ কাজ করতেন?
উত্তর: অপু গ্রামের প্রসন্ন গুরুমশাইয়ের পাঠশালায় পড়তে গিয়েছিল।
→ গুরুমশাই পড়ানোর পাশাপাশি মুদিখানা চালাতেন।
১.৫ পাঠশালা কখন বসত ? কজন ছাত্রছাত্রী ছিল ?
উত্তর: প্রসন্ন গুরুমশাইয়ের পাঠশালা বসত বিকেলবেলা।
→ পাঠশালায় আট-দশজন ছাত্রছাত্রী ছিল।

১.৬ আতুরি ডাইনি কে? বড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার সম্পর্কে অপুর ধারণা বদলে গেল কীভাবে?
উত্তর: আতুরি ডাইনির পরিচয় : ‘আতুরি ডাইনি' নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের এক অসহায় বৃদ্ধা। সে গ্রামের এক প্রান্তে একা বাস করত। একবার দক্ষিণ মাঠে পাখির ছানা দেখতে গিয়ে ফেরার পথ হারিয়ে ফেলে নীলু আর অপু তার কুটিরে পৌঁছে গিয়েছিল।
'ডাইনি' সম্পর্কে অপুর ধারণার বদল:- ছেলেবেলায় অপু শুনেছিল, জেলেপাড়ার একটি ছেলের প্রাণ কেড়ে নিয়ে কচুর পাতায় ডুবিয়ে
রেখেছিল এই আতুড়ি ডাইনি'। একটু বড়ো হয়ে অপু বুঝতে পারে, 'আতুরি ডাইনি' সত্যিকারের 'ডাইনি' নয়। সে এক গরিব, অসহায় বৃদ্ধা,
যাকে দেখার কেউ ছিল না। এমনকি তার মৃত্যুর পর সৎকারের জন্যও কাউকে পাওয়া যায়নি।

১.৭ লক্ষ্মণ মহাজনের বাড়ি থেকে ফিরে এসে অপু যে আশ্চর্য ভ্রমণকাহিনি শুনিয়েছিল, তা লেখো।
উত্তর: লক্ষ্মণ মহাজনের বাড়ি থেকে ফিরে এসে অপু প্রায় দিন পনেরো ধরে নিজের অদ্ভুত ভ্রমণকাহিনি বলে বেড়িয়েছিল। ক-দিনের মধ্যে তার দেখা আশ্চর্য সব জিনিসের কথা সে শুনিয়েছিল— যেমন রেলের রাস্তা, একেবারে আসলের মতো দেখতে মাটির তৈরি আতা, পেঁপে, শশা। এ ছাড়াও সে শুনিয়েছিল একটা পুতুলের কথা যেটার পেট টিপলে হাত-পা ছুঁড়ে হঠাৎ খঞ্জনি বাজাতে শুরু করে।

১.৮ অপু কড়ি খেলতে কোথায় গিয়েছিল। তার সঙ্গীসাথি কারা ছিল লেখো।
উত্তর: অপু কড়ি খেলতে গিয়েছিল জেলেপাড়ায়।
→ সেখানে তার সঙ্গীসাথি ছিল জেলেপাড়ার ছেলেরা, আর ব্রাহ্মণপাড়ার ছেলে পটু।

১.৯ 'সর্বদর্শনসংগ্রহ' বইটিতে মানুষের ওড়ার ব্যাপারে কী লেখা ছিল?
উত্তর: 'সর্বদর্শনসংগ্রহ' বইটিতে মানুষের ওড়ার ব্যাপারে অনেক কথা লেখা ছিল। সেখানে লেখা ছিল— শকুনির ডিমের মধ্যে পারদ পুরে
কয়েকদিন রোদে রাখতে হয়। পরে সেই ডিম মুখের ভিতর ভরে মানুষ ইচ্ছে করলে আকাশে ওড়ার ক্ষমতা লাভ করতে পারে।

১.১০ “আমি মরবার সময় বইখানা তোমায় দিয়ে যাব দাদু।” – কে, কাকে একথা বলেছিলেন? কোন্ বইখানি দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল ?
উত্তর: গাঙ্গুলি পাড়ার অধিবাসী বৃদ্ধ নরোত্তম দাস বাবাজি অপুকে এ কথা বলেছিলেন।
> এখানে তিনি তাঁর প্রিয় 'প্রেমভক্তি-চন্দ্রিকা' বইটি অপুকে দিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন।

১.১১ অপুর দপ্তরে কী কী বই ছিল? কোন্ মাসিক পত্রিকা হাতে নিয়ে অপুর মন নানা কল্পনায় ভরে উঠত ?
উত্তর: অপুর দপ্তরে ছিল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের লেখা 'চরিতমালা' এবং 'কড়ি কষার আর্যা’ ও ‘তৃতীয় নামতা'। এ ছাড়াও তার দপ্তরে ছিল দুখানা
মোটা ভারী ইংরেজি বই, কবিরাজি ওষুধের তালিকা, পাতা-ছেঁড়া দাশুরায়ের পাঁচালি ও ১৩০৩ বঙ্গাব্দের পুরোনো পাঁজি।
→ 'বঙ্গবাসী' নামক মাসিক পত্রিকা হাতে নিয়ে অপুর মন নানা কল্পনায় ভরে উঠত।

১.১২ “দুর্গা কতবার খুঁজিয়াছে, ও খেলা আর কোনো দিন আসে নাই।”
—কোন্ খেলার কথা বলা হয়েছে, লেখো।

উত্তর: আলোচ্য অংশে এক বৃদ্ধ বাঙাল মুসলমানের একটা বড়ো রং-করা কাচ বসানো টিনের বাক্স নিয়ে খেলা দেখানোর কথা বলা হয়েছে। দুর্গা ও পাড়ার জীবন চৌধুরির উঠোনে সেই বাক্সের গায়ে লাগানো একটা চোঙে চোখ রেখে অনেক সাহেব, মেম, ঘরবাড়ি, যুদ্ধের ছবি দেখেছিল। ভাইকে দেখানোর ইচ্ছে নিয়ে সে পরে বহুবার সেই খেলা খুঁজেছে, কিন্তু পায়নি।

১,৯৩ অপু বসে বসে খাতায় কী লেখে?
উত্তর: অপু বসে বসে খাতায় একটি নাটক লেখে, যার বিষয়বস্তু হল রাজপরিবারের কাহিনি।

১.১৪ অপুর টিনের বাক্সতে কী কী বই ছিল?
উত্তর: অপুর টিনের বাক্সে ছিল একখানা নিত্যকর্ম পদ্ধতি, একটি পুরোনো প্রাকৃতিক ভূগোল, একখানা শুভংকরী, একখানা পাতা ছেঁড়া বীরাঙ্গনা কাব্য আর তার মায়ের কাশীদাসি মহাভারত।

১.১৫ “তোরা নাকি এ গাঁ ছেড়ে চলে যাবি?”-কে, কাকে এ কথা
বলেছে? কোন গাঁয়ের কথা এখানে বলা হয়েছে ?

উত্তর: রানি দিদি অপুকে এ কথা বলেছে।
> এখানে নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের কথা বলা হয়েছে।

১.১৬ “রইল ওইখানে, কেউ জানতে পারবে না কোনো কথা, ওখানে আর কে যাবে?”—কী রইল? এখানে কোন্ জিনিসের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: উদ্দিষ্ট বস্তু: প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে দুর্গার স্মৃতি বিজড়িত একটি সোনার সিঁদুর কৌটো পরে থাকার কথা বলা হয়েছে। নিশ্চিন্দিপুর গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার আগে অপু একদিন দুপুরবেলা জিনিসপত্র গোছাতে গিয়ে সেজোঠাকরুনের বাড়ি থেকে টুনির মায়ের চুরি যাওয়া ছোট্ট সোনার সিঁদুর কৌটো দেখতে পায়। অপু সেটি ছুঁড়ে গভীর বাঁশবনের মধ্যে ফেলে দিয়ে মনে মনে এই কথাগুলো বলেছিল।
> সোনার সিঁদুর কৌটো: এখানে সেজো ঠাকরুনের সেই সোনার সিঁদুর কৌটোটার কথা বলা হয়েছে, যেটি তার দিদি চুরি করে তাকের উপরে রাখা কলশির ভিতরে লুকিয়ে রেখেছিল।

২.নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর সংরক্ষণে লেখো।
২.১ দুর্গা-অপুর খেলাধুলোর সরঞ্জাম বলতে কী ছিল লেখো।
উত্তর: দুর্গা-অপুর খেলাধুলোর সরঞ্জাম বলতে ছিল একটা ডালা-ভাঙা টিনের বাক্সে রাখা একটা রং-ওঠা কাঠের ঘোড়া, চারপয়সা দামের একটা টোল খাওয়া টিনের ভেঁপু, কয়েকটা কড়ি, দু-পয়সা দামের একটা খেলনা পিস্তল আর কয়েকটি শুকনো নাটা ফল।
২.২ অপুর পাঠশালাটি কেমন ছিল?
উত্তর: নিশ্চিন্দিপুর গ্রামে প্রসন্ন গুরুমশায়ের পাঠশালায় অপু পড়তে যেত। পাঠশালা চালানোর পাশাপাশি গুরুমহাশয় একটি মুদির দোকানও চালাতেন। পাঠশালাটি ছিল এই দোকানেরই পাশে। বেত ছাড়া সেই পাঠশালায় শিক্ষাদানের জন্য আর বিশেষ কোনো উপকরণ ছিল না।
পাঠশালাটি বসত বিকেলে। সবসুদ্ধ আট-দশজন ছেলেমেয়ে সেখানে পড়তে যেত। পাঠশালা যে ঘরে বসত, তার কোনোদিকে বেড়া বা দেয়াল
বলে কিছু ছিল না।

২.৩ আশ মিটিয়ে যুদ্ধ জিনিসটা উপভোগ করার জন্য অপু কী করত?
উত্তর: মায়ের মুখে মহাভারতের গল্প শুনে কল্পনাপ্রবণ অপুর মনে হত মহাভারতে যুদ্ধ জিনিসটা বড়ো কম লেখা আছে। তাই আশ মিটিয়ে যুদ্ধ উপভোগ করার জন্য সে একটি নতুন উপায় বের করেছিল। একটা বাখারি কিংবা হালকা কোনো গাছের ডালকে অস্ত্রের মতো হাতে নিয়ে সে বাড়ির পিছনে বাঁশবাগানের পথে কিংবা বাইরের উঠোনে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলত।

২.৪ দুর্গা তো পাঠশালায় যেত না, তার সারাদিন কীভাবে কাটত, লেখো।
উত্তর: ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী' উপন্যাসের দুর্গা পাঠশালায় যেত না।
প্রকৃতির মধ্যে ঘুরে বেড়িয়ে তার দিন কাটত। সারাদিন সে আম-জামবাগানে, ঝোপে ঝাড়ে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসত। গাছ থেকে নোনা পেড়ে, বনজঙ্গল থেকে কুল, জাম, নোনা, আমড়া জোগাড় করে লুকিয়ে খাওয়াতেই ছিল তার আনন্দ। তার পা ভরা ধুলো, চুল তার অগোছালো। পাড়ার সমবয়সি ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খুব একটা খেলাধুলাও সে করত না। বরং তার সজাগ দৃষ্টি থাকত কোন্ ঝোপে বৈঁচি পেকেছে, কাদের বাগানে আমের গুটি বেঁধেছে কিংবা কোন্ বাঁশতলায় শেয়াকুল খেতে মিষ্টি। সে ঘুরে বেড়াত আর খুঁজত কোথাও কাঁচপোকা বসে আছে কি না। আবার যদি কন্টিকারী গাছের পাকা ফল দেখতে পেত তবে সে সেটিকে তুলে আনত খেলাঘরের বেগুন করার জন্য। কখনও আবার সে পথে বসে নানারকম খাপরা ছুড়ে পরীক্ষা করত গঙ্গা যমুনা খেলায় কোন্ খাপরাটি দিয়ে ভালো তাক করা যায়। সে তার পুতুলের বাক্স আর তার খেলাঘরের সরঞ্জাম নিয়েই ব্যস্ত থাকত।
২.৫ বাছুর খুঁজতে বেরিয়ে দুর্গা অপু কীভাবে পথ হারিয়ে ফেলেছিল?
উত্তর: 'ছোটোদের পথের পাঁচালী' উপন্যাস থেকে জানা যায়, দু-তিনদিন ধরে রাঙি গাইয়ের বাছুরটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার খোঁজে
অপু আর দুর্গা পৌষ মাসের একদিন দক্ষিণ মাঠে গিয়েছিল। দুর্গা পাকা রাস্তার ওপারে বহুদূর বিস্তৃত ঝাপসা মাঠের দিকে তাকিয়ে রেলের রাস্তা দেখতে যাওয়ার কথা বলেছিল অপুকে। এরপর তারা পাকা রাস্তায় নেমে মাঠ-বিল- জলা ভেঙে দক্ষিণ দিকে দৌড় লাগিয়েছিল। ছুটতে ছুটতে তারা নবাবগঞ্জের লাল রাস্তা, রোয়ার মাঠ, জলসত্রতলা, ঠাকুরঝি পুকুর ফেলে এগিয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত একটা বড়ো জলা, হোগলা আর শোলা গাছের জঙ্গল, ধানখেত ও বেতঝোপের সামনে উপস্থিত হয়েছিল ওরা। তখন ওরা বুঝতে পেরেছিল যে, পথ হারিয়ে ফেলেছে।

২.৬ রাজকৃয় সান্যালের দেশভ্রমণের গল্পগুলি কেমন ছিল?
উত্তর: ভ্রমণপিয়াসি রাজকৃয় সান্যাল মহাশয় প্রসন্ন গুরুমশাইয়ের পাঠশালায় এসে দ্বারকা, সাবিত্রী পাহাড়, চন্দ্রনাথ—প্রভৃতি স্থানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতার কথা শোনাতেন। সামান্য বিষয়কেও গুছিয়ে বলার অসামান্য ক্ষমতা ছিল তাঁর। কোনো-কোনো দিন তিনি রেলভ্রমণের গল্পও করতেন। কথার সূত্র ধরেই সাবিত্রী পাহাড়ে উঠতে তাঁর স্ত্রীর কেমন কষ্ট হয়েছিল কিংবা নাভিগয়ায় পিণ্ড দিতে গিয়ে পাণ্ডাদের সঙ্গে কীভাবে তাঁর
হাতাহাতি হওয়ার উপক্রম হয়েছিল—সেসব কথাও উঠে আসত। তাঁর কাছেই কোনো একটি জায়গার খুব ভালো খাবার অর্থাৎ প্যাড়ার কথা অপু প্রথম শুনেছিল। এ ছাড়া শুনেছিল সেই অদ্ভুত ফকিরের কথা, যার মন্ত্রে আমগাছে বেদানা ফলত কিংবা পেয়ারা গাছে ঝুলত কলার কাঁদি।

২.৭ “একদিন পাঠশালায় এমন একটি ঘটনা হইয়াছিল, যাহা তাহার জীবনের একটি নতুন অভিজ্ঞতা।” –অপুর জীবনের সেই নতুন অভিজ্ঞতাটি কী?
উত্তর: একদিন প্রসন্ন গুরুমশায়ের পাঠশালায় কোনো অতিথি বা প্রসন্ন গুরুমশায়ের কোনো পরিচিত বন্ধু উপস্থিত ছিলেন না। তাই সেদিন কোনো গল্পগুজবের আসর বসেনি। সেদিন শুধু পড়াশোনা হয়েছিল। অপু বসে বসে শিশুবোধক পড়ছিল। এমন সময় গুরুমশাই সকলকে শ্রুতিলিখন করতে দিলেন। তিনি নিজের কোনো কথা না বলে কিছু একটা মুখস্থ বলতে লাগলেন। তাঁর সেসব কথা শুনে অপুর মনে হল এরকম সুন্দর সুন্দর কথা একসঙ্গে পরপর সে কখনও শোনেনি। সে সব কথার অর্থ বুঝতে পারছিল না। তবু সেইসব শব্দ তার কানে গানের সুরের মতোই অপূর্ব লাগছিল। এ শব্দগুলো যেন তার চোখের সামনে এক অপূর্ব দেশের ছবি তুলে ধরেছিল।

২.৮ দুর্গা-অপু কীভাবে রেলের রাস্তা দেখার চেষ্টা করেছিল?
উত্তর: অপু-দুর্গা একবার তাদের রাঙি গাইয়ের বাছুর খুঁজতে খুঁজতে দক্ষিণের মাঠে পৌঁছে যায়। রেলের রাস্তা দেখার জন্য দুর্গার উৎসাহে তারা দুজনে মিলে পাকা রাস্তায় নেমে মাঠ-বিল-জলা ভেঙে দক্ষিণ দিকে দৌড় লাগিয়েছিল। এরপর তারা নবাবগঞ্জের লাল রাস্তা, রোয়ার মাঠ, ঠাকুর-কি পুকুর ফেলে দৌড়োতে থাকে। একসময় তারা বড়ো জলা, ধানখেত,Bঘন বেতবনের সামনে এসে পৌঁছোয়। ওরা বুঝতে পারে যে, বাড়ি ফেরার পথ হারিয়ে ফেলেছে। শেষপর্যন্ত অনেক জল ভেঙে ধানখেত পার হয়ে বহুকষ্টে আবার অপু আর দুর্গা পাকারাস্তায় এসে পড়ে। রেলের রাস্তা তারা দেখতে পায় না। বরং সেদিন তাদের বাড়ি ফিরে আসতে দুপুর পেরিয়ে যায়।

২.৯ “বাঁকা কঞ্ঝি অপুর জীবনের এক অদ্ভুত জিনিস।” –এ কথা বলার কারণ কী? সামান্য উপকরণ নিয়ে খেলার আনন্দ সম্পর্কে লেখো।
উত্তর: আলোচ্য বক্তব্যের কারণ: নিতান্ত তুচ্ছ, সামান্য একখানা বাঁকা কঞ্চি হাতে পেলে অপু খাওয়া-দাওয়ার কথা ভুলে কোনো নদীর ধারে কিংবা কোনো নির্জন বনের পথে অপূর্ব আনন্দে সারাটা দিন একা একা কাটিয়ে দিতে পারে। একারণেই বাঁকা কণিকে 'অপুর জীবনের এক অদ্ভুত জিনিস' আখ্যা দেওয়া হয়েছে। একটা শুকনো, হালকা, গোড়ার দিক মোটা, আগার দিক সরু, এরকম বাঁকা করি হাতে নিলেই অপুর মন আনন্দে ভরে ওঠে। তার মনে অদ্ভুত সব কল্পনা জাগে। এই কঞ্চি হাতেই যেন সে হয়ে ওঠে কখনও রাজপুত্র, কখনও তামাকের দোকানি, কখনও ভ্রমণকারী, কখনও বা সেনাপতি, কখনও আবার মহাভারতের অর্জুন। নির্জন বাঁশবনের পথে, নদীর ধারে, বাড়ির পিছনের তেঁতুলতলায় সে এই বাঁকা কপি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।

সামান্য জিনিস নিয়ে খেলার আনন্দ: ছেলেবেলায় এমন সামান্য জিনিস নিয়ে খেলার আনন্দই আলাদা। শুকনো গাছের ডাল, কুড়িয়ে পাওয়া রঙিন পাথর, সাইকেলের চাকার রিং, ডাংগুলি, দেশলাইয়ের মার্কা, কাচের গুলি, বাসের টিকিট এসবের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আমার শৈশব। প্রায় কোনো খরচই নেই এসব জিনিস সংগ্রহ করার মধ্যে, অথচ এগুলি নিয়ে খেলে একসময় কতই না আনন্দ পেয়েছি। আজও।যখন ছোটোবেলার কথা ভাবি, তখন মনে হয় রাস্তায় পড়ে থাকা একটা ফাটা বল নিয়ে খেলতে খেলতে কতদূর চলে গেছি একদিন। সেটা থাকলে একা একা অতটা পথ হেঁটে যাওয়ার কথা হয়তো তখন ভাবতেই পারতাম না।

২.১০ শূন্যে ওড়ার ক্ষমতা অর্জনের জন্য অপু কী করেছিল ?
উত্তর: ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী' উপন্যাসে চুপি চুপি বাবার বইয়ের বাক্স ঘেঁটে পাওয়া 'সর্বদর্শন সংগ্রহ' বইটি পড়ে অপু শূন্যে ওড়ার কথা
জেনেছিল। একইসঙ্গে সে জেনেছিল শকুনির ডিমের মধ্যে পারদ ভরে দিয়ে কয়েকদিন রোদে রেখে সেই ডিম মুখে নিয়ে নাকি মানুষ ইচ্ছে করলে উড়তে পারে। এই শূন্যে ওড়ার ক্ষমতা পাওয়ার জন্য অপু তার দিদি, পাড়ার
সতু, নীলু, কানু, পটল, নেড়ার কাছে শকুনির বাসার খোঁজ নেয়। অবশেষে সে তাদের পাড়ার এক রাখালের থেকে চার পয়সা ও তার প্রাণের চেয়েও প্রিয় কিছু কড়ির বিনিময়ে দুটি শকুনির ডিম সংগ্রহ করে। কিন্তু সেইদিনই কি তার পরের দিন, সলতে পাকানোর জন্য ছেঁড়া ন্যাকড়া খোঁজার সময় দুর্গার হাত লেগে তাক থেকে ডিম দুটি পড়ে গিয়ে ভেঙে যায়। তার সঙ্গে ভেঙে যায় অপুর আকাশে ওড়ার স্বপ্ন ।

২.১১ ভুলো কুকুরকে নিয়ে দুর্গা কীভাবে আমোদ উপভোগ করত?
উত্তর: গ্রামের ভুলো নামের কুকুরটিকে নিয়ে দুর্গা সীমাহীন আমোদ উপভোগ করত। একদিন দুপুরে খাওয়ার পর অপুকে সেইসব মজার বিষয় দেখানোর জন্য সে বাড়ির পিছন দিকের বাঁশবাগানে নিয়ে যায়। তার হাতে ছিল একমুঠো ভাত। “আয় ভুলো-তু উ-উ-উ” বলে ডেকে দুর্গা রহস্য প্রকাশের আনন্দ নিয়ে অপুর দিকে এক অপূর্ব হাসি হাসি মুখ নিয়ে চেয়ে থাকে। হঠাৎ জঙ্গলের মধ্য থেকে কুকুরটি এসে উপস্থিত হয়। দুর্গা আনন্দে হি হি করে হেসে ওঠে। দুর্গার গায়ে যেন শিহরন জেগে ওঠে। বিস্ময় ও কৌতুকে তার মুখ-চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এই আনন্দ উপভোগ করার জন্য মায়ের বকুনি সহ্য করেও নিজে কিছু কম খেয়ে দুর্গা অল্প-ভাত পাতের একপাশে জড়ো করে রাখত। সেই ভাত সে ওই শীর্ণ কুকুরটিকে খাওয়াত।

২.১২ বৃদ্ধ নরোত্তম বাবাজির সঙ্গে অপুর কীভাবে ভাব হয়েছিল ?
উত্তর: গাঙ্গুলি পাড়ার গৌরবর্ণ, দিব্যকান্তি, সদানন্দ বুদ্ধ নরোত্তম দাস বাবাজির সঙ্গে অপুর খুব ভাব ছিল। ছোটোবেলা থেকেই পিতা হরিহর
অপুকে নিয়ে তাঁর কাছে যেতেন। তখন থেকেই তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব। দাদু বলে ডেকে অপু তাঁর কাছে গেলেই তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে দাওয়ায়
তালপাতার চাটাই বিছিয়ে তাকে বসতে দিতেন। অনেক সময় সারা বিকেল ধরে অপু তাঁর সঙ্গে বসে গল্পগুজব করত। অপু স্বভাবে লাজুক হলেও নরোত্তম দাস বাবাজির কাছে তার কোনো সংকোচ, লজ্জা, ভয় ছিল না । অপু নরোত্তম দাদুকে তাঁর 'প্রেমভক্তিচন্দ্রিকা' বইটি বের করে ছবি দেখাতে বলত। আর তিনিও বলতেন, মৃত্যুর আগে 'প্রেমভক্তিচন্দ্রিকা' বইটি তিনি অপুকে দিয়ে যাবেন। .

২.১৩ অপু-দুর্গার চড়ুইভাতির আয়োজন সম্পর্কে লেখো। এখনকার পিকনিকের সঙ্গে এরকম চড়ুইভাতির তফাত কোথায় ?
উত্তর: অপু-দুর্গার চড়ুইভাতির আয়োজন: ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী' উপন্যাসে আমরা অপু-দুর্গার চড়ুইভাতির বিবরণ পাই।
নিশ্চিন্দিপুর গ্রামেরই অধিবাসী নীলমণি রায়ের জঙ্গলে ভরা ভিটের কিছুটা অংশ দুর্গা নিজের হাতে দা দিয়ে পরিষ্কার করে চড়ুইভাতির জায়গা তৈরি করে। এরপর মায়ের অজান্তে চাল ও তেল নিয়ে আসে বাড়ি থেকে। ছোটো হাঁড়িতে ভাত বসায়। পুঁটিদের তালতলার ঝোপ থেকে আনা মেটে আলুর ফল ভাতে সেদ্ধ হতে দেয়। দুর্গার ডাকে সাড়া দিয়ে তাদের বনভোজনের সঙ্গী হয় কালীনাথ চক্রবর্তীর মেয়ে বিনি। মহা-
আনন্দে তারা কলাপাতায় ভাত, নুন ছাড়া কষাটে মেটে আলু ভাতে আর বেগুনভাজা খায়। খাওয়া দাওয়া হয়ে গেলে দুর্গা আবার একদিন বনভোজন করার ইচ্ছের কথা জানায়।

পিকনিক ও চড়ুইভাতির তফাত: এখনকার পিকনিকের ধরনের সঙ্গে এরকম চড়ুইভাতির যেন কোনো মিলই নেই। এখন পিকনিকের
জন্য বিভিন্ন ‘স্পট' নির্দিষ্ট করা হয়, গাড়ি করে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, গান-বাজনার আয়োজন হয়, ক্যাটারিং বা রান্নার ঠাকুরের বন্দোবস্ত থাকে সকলে মিলে চাঁদা তুলে সাধারণত পিকনিক হয়ে থাকে। বাড়ি থেকে চাল-তেল-নুন- লঙ্কা নিয়ে বা গাছ থেকে সবজি পেড়ে নিয়ে রান্না করে চড়ুইভাতি বা বনভোজনের কথা এখন আর শোনাই যায় না।

২,১৪ অজয় কে? তার সঙ্গে অপুর বন্ধুত্ব হল কীভাবে ?
উত্তর: অজয়ের পরিচয়: অজয় হল নীলমণি হাজরার যাত্রার দলের একজন শিশু-অভিনেতা। অপু বাবার সঙ্গে যাত্রাপালা দেখতে গিয়েছিল।
সেখানেই সে অজয়কে রাজপুত্রের ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখে।
> অপুর সঙ্গে বন্ধুত্ব:, যাত্রার বিরতিতে পানের দোকানে অজয়ের
সঙ্গে অপুর আলাপ হয়। সে বাবার দেওয়া পয়সা থেকে অজয়কে পান খাওয়ায়। অপুদের বাড়িতে যাত্রাদলের যে লোকটা খেতে আসত তার বদলে অপু অজয়কে খাওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। খাওয়ার সময় অপু এসে অজয়কে ডেকে নিয়ে যায় ওদের বাড়িতে। দুর্গা, সর্বজয়া, অপু—সকলেই অজয়কে ভালোবেসে ফেলে। অপু অজয় পরস্পরকে গান শোনায়। তারা সারাদিন ঘুরে বেড়ায়, গল্প করে। এভাবেই অজয়ের সঙ্গে অপুর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে‌।

২.১৫ অপু তার দিদির সঙ্গে কেন কখনও আড়ি করবে না ?
অথবা, “অপু মুখে বলিল বটে, কিন্তু দিদির সহিত সে আড়ি করিবে না।”—অপু কেন দিদির সাথে আড়ি করবে না ?
উত্তর: একদিন রাতে যখন সর্বজয়া ভাত, তরকারি রান্না করছে, তখন।রাজীদের বাড়িতে যষ্টিমধুর নামে অপুর পোস্তদানা খেয়ে আসার ঘটনাটা সর্বজয়াকে বলার জন্য দুর্গা প্রস্তুত হয়। তখন অপু তাকে সতর্ক করে দিয়ে বলে, ঘটনাটি মাকে জানালে সে দিদির সঙ্গে আড়ি করে দেবে। কিন্তু দিদি যেমন তাকে ভালোবাসে, সেও তেমনই দিদি-অন্ত প্রাণ। তাই মুখে সে বললেও অপু মনে মনে ভাবে সে দিদির সঙ্গে কখনও আড়ি করবে না।

৩ নীচের প্রশ্নগুলি নিজের ভাষায় বিশদে লেখো ।
৩.১ বাবার সঙ্গে অপুর কুঠির মাঠ দেখতে যাবার অভিজ্ঞতাটি লেখো।
'কুঠিবাড়ি' বলতে তুমি কী বোঝো
?

উত্তর: অপুর ‘কুঠির মাঠ' দেখার অভিজ্ঞতা: একবার মাঘ মাসের শেষদিকে সরস্বতী পুজোর দিন বিকেলে নিশ্চিন্দিপুরের কয়েকজন লোক গ্রামের বাইরের মাঠে নীলকণ্ঠ পাখি দেখতে গিয়েছিল। হরিহর এবং তার শিশুপুত্র অপু সেই দলের সঙ্গী হয়েছিল। ছয় বছরের শিশু অপু এই প্রথম গ্রামের বাইরে পা রাখে। বড়ো বড়ো কানওলা খরগোশ দেখে সে ভীষণ অবাক হয়। লোভীর মতো তাকিয়ে থাকে নীচু নীচু কুলগাছে পেকে থাকা অজস্র কুলের দিকে। এমন সময় তার বাবা হঠাৎ সাহেবদের কুঠির দিকে তাকে তাকাতে বলে। সেই কুঠিটি নদীর ধারের অনেকটা অংশ জুড়ে প্রাগৈতিহাসিক যুগের এক বিরাট হিংস্র জন্তুর কঙ্কালের মতো পড়েছিল। অপু এই কুঠির ভাঙা জ্বালঘরটা তাদের পাড়ার স্নানের ঘাট থেকে আবছ আবছা দেখতে পেত। এই জ্বালঘরে বড়ো বড়ো কড়াইতে জ্বাল দিয়ে নীল তৈরি হত। এখন সামনাসামনি সেই কুঠির মাঠ দেখে তার মনে হল মাঠটির পরেই রয়েছে মায়ের মুখে শোনা সেই রূপকথার রাজ্য। সেখানে শ্যাম-লঙ্কার দেশে ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমি বসে থাকা গাছের নীচে নির্বাসিত রাজপুত্র তলোয়ারটি পাশে রেখে একা শুয়ে রাত কাটায় ৷
কুঠির মাঠ থেকে ফেরার পথে অপু একটা নীচু ঝোপ থেকে আলকুশি ছিঁড়ে নিতে চায়। আলকুশিতে বিষ আছে জানিয়ে হরিহর তাকে তা ধরতে বারণ করে।
'কুঠিবাড়ির ধারণা: ‘কুঠিবাড়ি’র অর্থ হল ইউরোপীয় ব্যবসায়ীদের বাসস্থান বা কার্যালয়। ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী'-তে উল্লিখিত
কুঠিবাড়িটি ছিল ব্রিটিশ নীলকর সাহেবদের। এই কুঠিতে থেকেই তারা কাছাকাছি অঞ্চলে নীলচাষ করাত এবং তা থেকে নীল তৈরির তদারকি
করত।

৩.২ ছবি-দেখে-চেনা কোনো কিছু হঠাৎ চোখের সামনে চলে এলে কেমন লাগে ? অপুর খরগোশ দেখার মতো তোমার হঠাৎ অবাক হওয়ার মতো কোনো ঘটনা লেখো।
উত্তর : ছবি দেখেই প্রথমে প্রতিটি শিশুমনে এক নিজস্ব উপলব্ধি হয়। কিন্তু সেই ছবির বিষয় যদি হঠাৎ চোখের সামনে চলে আসে তখন শিশুমন বিস্ময়ে ভরে ওঠে। আনন্দ ও কৌতূহলে নেচে ওঠে তার মন। অপুও বর্ণপরিচয়ে ‘খ’-এ খরগোশের ছবি দেখেছিল। সেই ছবির খরগোশ ছিল তার কল্পনার বিষয়। যখন সে চোখের সামনেই জীবন্ত অবস্থায় কানখাড়া-করা খরগোশকে লাফাতে দেখে, তখন তার যে উত্তেজনা ও আনন্দ হয়েছিল, তা সহজেই উপলব্ধি করা যায়।
■ শহরেই আমার জন্ম এবং পড়াশোনা। তাই গ্রাম বা গ্রামের পরিবেশ আমি শুধু ছবিতে বা টেলিভিশনের পর্দাতেই দেখেছি। গতবছর দুর্গাপূজার আগে আমি বাবা-মার সঙ্গে মায়ের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম।
সেই গ্রামে যেতে হলে শহর ছাড়িয়ে অনেকটা পথ যেতে হয়। দুদিকে সবুজ মাঠের বুক চিরে কাঁচা পাকা রাস্তা দিয়ে আমাদের গাড়িটা যাচ্ছিল। তখন সবে দুপুরের চড়া রোদটা কমেছে। আমি দেখলাম, রাস্তার দু-ধার দুধের মতো সাদা কাশফুলে ভরে উঠেছে। এতদিন আমি জানতাম,
মা দুর্গার আগমনের খবর জানায় কাশফুল। এতদিন আমি ছবি এঁকেছি কাশফুলের। টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছি বাতাসে কাশফুলের দোলা। এই প্রথম আমি নিজের চোখে শরতের বাতাসে নীল আকাশের নীচে কাশফুলের দোলা দেখতে পেলাম। এক অদ্ভুত আনন্দ ও ভালোলাগা
আমাকে ছুঁয়ে গেল। ছবিতে দেখা জগটা বাস্তবে যে এত সুন্দর হতে পারে, সেটা আমার কল্পনাতেও ছিল না। কাশফুলের ওই শুভ্রতা আমায় সত্যিই মুগ্ধ করেছিল। এই বিস্ময়ের স্মৃতি চিরদিন আমার মনে থেকে যাবে।

৩.৩ কালবৈশাখী ঝড়ে দুর্গা-অপুর আম কুড়োনোর ঘটনাটি লেখো।
ঝড়বৃষ্টিতে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে তা উপভোগ করার তোমার কোনো অভিজ্ঞতা থাকলে তা লেখো।
উত্তর: অপু-দুর্গার আম কুড়োনো: 'পথের পাঁচালী' উপন্যাস থেকে জানতে পারি। একদিন বিকেলে হঠাৎ চারিদিক অন্ধকার করে কালবৈশাখীর ভীষণ ঝড় উঠেছিল। আর সেইসঙ্গে দুর্গাও ছুটেছিল আম কুড়োতে। অপু তার দিদির পেছন পেছন দৌড়ে গেছিল। অপুকে সিঁদুরকৌটোতলায় থাকতে বলে দুর্গা চলে গেছিল সোনামুখীতলার দিকে। ধুলোয় তখন চারদিক ভরে গেছিল, বড়ো বড়ো গাছগুলোর ডালপালা সব ঝড়ে বেঁকে গিয়ে গাছগুলোকে নেড়া নেড়া দেখাচ্ছিল। ঝড়ে প্রচুর আম পড়ায় অপু আনন্দে দিদিকে ডাকতে থাকে, কিন্তু চিৎকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সে আম কুড়োতে পারে না। ক্রমশ ঝড়ের তীব্র শব্দে আম পড়ার শব্দও সে আর শুনতে পাচ্ছিল না। দুর্গা আট-নটা আর অপু মাত্র দুটো আম কুড়োনোর পরই ভুবন মুখুজ্যের বাড়ির ছেলেমেয়েরা হই হই করে আম কুড়োতে চলে এলে তাদের আর আম কুড়োনো হয় না। দুর্গা তার ভাইকে নিয়ে রাংচিতার বেড়ার ফাঁক গলে বাগান থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর তারা গড়ের পুকুরের পাশে থাকা বাগানে যায় এবং সেখানেও দুর্গা আট-দশটা আম পায়। এমন সময় মুশলধারে বৃষ্টি নামে। প্রায় সন্ধ্যার সময় ঝড়বৃষ্টি থামলে দুর্গা আর অপু বাড়িতে ফিরে আসে।
এক ঝড়ের অভিজ্ঞতা: আমার জন্ম গ্রামে, মামারবাড়িতে। কিন্তু আমার বেড়ে ওঠা শহর কলকাতায়। এক গরমের ছুটিতে মামারবাড়ি গিয়ে কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডব দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমার। বিকেলবেলা দাদুর সঙ্গে বাজার থেকে ফিরছিলাম একটা বিরাট আমবাগানের মধ্য দিয়ে। এমন সময় শুরু হল প্রবল বৃষ্টি, সঙ্গে ঝড়। প্রথমে ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম কারণ আমার এই অভিজ্ঞতা ছিল না। চোখের সামনে কালো আকাশজুড়ে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল আর বিকট শব্দে বাজ পড়ছিল। আমি ভয় পেয়ে কানে হাত দিয়ে বারবার চোখ বন্ধ করছিলাম। মুহূর্তেই পায়ের পাতা পর্যন্ত জল জমে উঠল। বিদ্যুতের ঝলকানিতে দেখলাম বড়ো বড়ো নারকেল, আম, জাম, পিটুলি গাছগুলো একবার মাটিতে পড়ে আবার যেন উঠে দাঁড়াচ্ছে।
মাঠের পাশের রাস্তায় জল-কাদার মধ্যে দিয়ে এগোনোর চেষ্টা করতেই দাদু বলল পাশের আমবাগানে আম কুড়োতে যাবে। ভয় এবং আনন্দ নিয়েইৎদাদুর সঙ্গে আমবাগানে ঢুকলাম। কয়েকটা আমও পেলাম। এই অভিজ্ঞতাটা আমার সারাজীবন মনে থাকবে।

৩.৪ যেদিন অপু প্রথম পাঠশালা গেল সেদিনের কথা লেখো। তোমারৎপ্রথম স্কুলে যাবার দিনটি মনে পড়ে। সেদিনের কথা তোমার যা মনে আছে লেখো।
উত্তর: অপুর পাঠশালায় প্রথম দিন। পৌষ মাসের এক শীতের সকালে রোদ ওঠার অপেক্ষার অপু যখন লেপমুড়ি দিয়ে বিছানায় শুয়েছিল,
সেই সময় তার মা তাকে পাঠশালায় যাওয়ার কথা জানায়। যেট, বই-সহ তাকে যে পাঠশালায় যেতে হবে, এ কথা শুনেই অপু অবাক হয়ে যায়।
অপুর ধারণা ছিল যারা সুবোধ বালক নয়, তাদেরই বুঝি পাঠশালায় যেতে হয়। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত বাবার ভয়ে এবং মায়ের প্রতি একরাশ অভিমান নিয়ে জলভরা চোখে অপু প্রথম দিন পাঠশালায় যায়। প্রথম দিন সবকিছু অচেনা অজানা ছিল বলে অপুর মনে হয়েছিল সমুদ্রের মতো বিরাট কিছুর সামনে সে এসে পড়েছে। অপু যখন পাঠশালায় পৌঁছোল তখন গুরুমহাশয় দোকানের মাচায় বসে সৈন্ধব লবণ ওজন করছেন। কয়েকটি বড়ো ছেলে চাটাইয়ে বসে দুলে দুলে নীচুস্বরে কিছু পড়ছে। একটি ছোটো ছেলে আপন মনে পাততাড়ির তালপাতা চিবিয়ে যাচ্ছে। দুজন ছেলে স্লেটে ঘর এঁকে ঢ্যারা-গোল্লা খেলায় মগ্ন। অপু নিজের স্লেটে বানান লিখতে লিখতেই গুরুমহাশয়ের গলা শুনতে পায়। মুহূর্তের মধ্যেই গুরুমহাশয়ের কথায় সতে নামক ছেলেটি ফনের
ফ্রেটটা গুরুমহাশয়ের কাছে হাজির করে। গুরুমহাশয়ের কাছে ছেলে দুটির যাওয়ার ভঙ্গি দেখে অপু হাসি চাপতে না পেরে ফিক করে হেসে ফেলে। ব্যাপারটা লক্ষ করে গুরুমশাই অপুকে ধমকে দেন। ঠিক তখনই গুরুমহাশয় থান ইঁট নিয়ে আসার নির্দেশ দিলে অপু ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে যায়। ইঁট আনাৎহলে অপু বুঝতে পারে শাস্তি তার জন্য নয়, ওই ছেলে দুটির জন্য।
সবমিলিয়ে প্রথম দিনে অপু বিস্ময়, ভয় ও কৌতূহলমিশ্রিত এক নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করে।
* আমার স্কুলের প্রথম দিন: এখন আমি কলকাতা শহরের নামকরা একটি স্কুলের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। প্রথম স্কুলে যাওয়ার দিনটি আজও
আমার স্মৃতিতে স্পষ্ট। কিন্তু আমার স্কুলজীবন শুরু হয় গ্রামে। সেটাও ছিল শীতের সকাল। একটা মোটা সোয়েটার গায়ে, ব্যাগে বই নিয়ে মায়ের হাত ধরে আমি প্রথম স্কুলে গিয়েছিলাম। একটা বড়ো বটগাছের তলায় টালির ছাউনি দেওয়া একটা ছোটো ঘর ছিল আমার প্রথম স্কুল। মা সেদিন আমার হাতটা যখন ছেড়ে দিলেন স্কুলের সামনে, তখন আমারও ওই ছোট্ট স্কুলটিকে 'অকুল সমুদ্র' বলে মনে হয়েছিল। সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পরে মাস্টারমশাই একটি বড়ো কপি হাতে ঘুরছিলেন। সবাই চটের ওপর বসে দুলে দুলে নামতা পড়ছিল। গম্ভীর গলায় মাস্টারমশাই যখন আমার দিকে তাকিয়ে নাম জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তখন খুব ভয় পেয়েছিলাম। তারপর দুলে দুলে সবার মতো নামতা পড়তে শুরু করলাম। মাঝে মাঝে পিছনের দিকে চাইছিলাম আর ভাবছিলাম এই বুঝি নামতা পড়ায় ভুল হবে আর পিঠের উপর নেমে আসবে কম্বির আঘাত।

৩.৫ “অচেনার আনন্দকে পাইতে হইলে পৃথিবী ঘুরিয়া বেড়াইতে হইবে, তাহার মানে নাই”— 'পথের পাঁচালী'তে দুর্গা আর অপু নিশ্চিন্দিপুর গ্রামে থেকেই কীভাবে বারে বারে অচেনার আনন্দ
অনুভব করেছে লেখো।

উত্তর: অপু-দুর্গার চোখে অচেনার আনন্দ: অচেনাকে চেনা এবং অজানাকে জানার মধ্য দিয়েই মানুষ মুক্ত জীবনের আনন্দ পায়। তাই মানুষ অচেনার আনন্দ পেতে মহাকাশ থেকে মহাসমুদ্র বিশ্বের সব জায়গায় ঘুরতে চায়। আমাদের ঘরের চারপাশেই যে আনন্দ লুকিয়ে আছে তার খোঁজ পেয়েছিল নিশ্চিন্দিপুরের অপু ও দুর্গা। এরা পৃথিবী ঘুরে বেড়ায়নি কিন্তু এদের ছোট্ট জীবনে ক্ষুদ্র গ্রাম্য পরিবেশে প্রায় প্রতিদিনই এরা নতুন নতুন অচেনা আনন্দের মুখোমুখি হয়েছে। বায়োস্কোপ, যাত্রাপালা, মায়ের মুখে মহাভারত শোনা—এ সবকিছুই তাদের শিশুমনে আনন্দ ও বিশ্বাস সৃষ্টি করত। মাকে না বলে রেললাইন দেখতে যাওয়া, দিদির সঙ্গে চড়ুইভাতি করার অভিজ্ঞতা অপুকে এক নতুন জীবনের মুখোমুখি করে। নুন ছাড়া মেটে আলু খাওয়াও এই অচেনা আনন্দের অংশ। এইভাবেই
নিশ্চিন্দিপুরের ছোটো সীমানার মধ্যেই দুর্গা ও অণু নিজেদের আনন্দের পৃথিবী গড়ে নিয়েছিল।

৩.৬ হরিহরের সঙ্গে মহাজনবাড়িতে গিয়ে অপু কীভাবে প্রথম।নিজেদের দারিদ্রা সম্পর্কে সচেতন হল লেখো।
উত্তর: দারিদ্র্য সম্পর্কে অপুর প্রথম ধারণা: লক্ষ্মণ মহাজন অপুর বাবা হরিহরের শিষ্য ছিলেন। একদিন অপু বাবার সঙ্গে লক্ষ্মণ মহাজনের বাড়ি যায়। সেখানে মহাজনের ছোটোভাইয়ের স্ত্রীর কাছে অপু পশমের পাখি, শোলার মাছ, কড়ির আলনা, কাচের পুতুল প্রভৃতি হরেকরকমের জিনিস দেখে। অপুর মনে হয়, “এরা খুব বড়োলোক তো!” এই বধূটি যখন অপুকে ঘি ও কিশমিশ দিয়ে তৈরি মোহনভোগ খেতে দেয় তখন অপু ভীষণ অবাক হয়ে যায়। তার মা-র তৈরি মোহনভোগ ছিল কেবল জলে সেদ্ধ সুজি। সে বুঝতে পারে, তারা গরিব, তাই তাদের বাড়ির মোহনভোগ এবং লক্ষ্মণ মহাজনের বাড়ির মোহনভোগের মধ্যে এই আকাশ-পাতাল তফাত। লক্ষ্মণ মহাজনের প্রতিবেশী অমলাদের বাড়ি গিয়ে তার খেলার জিনিস দেখে অপু অবাক হয়। সে তার দিদির খেলার জিনিসের সাথে এগুলির তুলনা করে বুঝতে পারে, তাদের পয়সা নেই বলেই তারা এমন খেলনা কিনতে পারে না।
খাদ্যদ্রব্যের পার্থক্য: মহাজন বাড়ির ছোটোভাইয়ের স্ত্রীর ঘরে নিমন্ত্রণ খেতে গিয়ে অপু আরও অবাক হয়ে যায়। আলাদা রেকাবিতে লবণ ও লেবু দেওয়া রয়েছে। প্রত্যেক তরকারির জন্য আলাদা আলাদা বাটি সাজানো আছে। শুধু তারই জন্য একটা গলদাচিংড়ির মাথা দেওয়া হয়েছে। তাদের বাড়িতে নিয়মিত ওলের ডাঁটাচচ্চড়ি ও লাউছেঁচকি খাওয়া হয়। অপুর শিশুমন বুঝতে পারে, সবাই তাদের মতো গরিব নয়। বড়োলোক কারা, তা তার শিশুমনে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

৩.৭ দুর্গা-অপুর যে নানান খেলার কথা উপন্যাসে আছে সেগুলির কথা লেখো। হার-জিত আছে এমন খেলার সঙ্গে এ জাতীয় খেলার
তাত কী? তুমি কী ধরনের খেলা পছন্দ করো এবং কেন তা লেখো।

উত্তর: দুর্গা-অপুর নানান খেলা: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত 'ছোটোদের পথের পাঁচালী' উপন্যাসে আমরা ছেলেবেলার নানা ধরনের
খেলার কথা পাই। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – পুতুল খেলা, যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা, গঙ্গা-যমুনা খেলা, চড়ুইভাতি খেলা, কড়ি খেলা ইত্যাদি।
→ কেবল কড়ি খেলা ও যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা ছাড়া অন্য খেলাগুলিতে হারজিতের প্রশ্ন আসে না। হারজিতের খেলা মানে ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিস ইত্যাদি। হার-জিতের খেলায় যে উত্তেজনা, উল্লাস কিংবা হতাশা এবং পরিশ্রম লুকিয়ে থাকে তা উপন্যাসে বর্ণিত ছেলেবেলার খেলাগুলিতে থাকে না। তবে জয় বা পরাজয় না থাকলেও এই খেলাগুলিতে আনন্দ কিন্তু কোনো
অংশেই কম নেই।
আমার পছন্দের খেলাসমূহ: বড়ো হয়ে গেছি বলে আমি এখন হার-জিতের খেলাতেই বেশি আকৃষ্ট হই। আমার প্রিয় খেলা ফুটবল। ফুটবলের
মধ্যে আছে প্রাণের উত্তেজনা। গোলের লক্ষ্যে দৌড়-দৌড় দৌড়- এই একাগ্রতাই ফুটবল খেলার প্রাণ। মহামনীষী বিবেকানন্দও বলেছেন, গীতা পাঠের থেকে ফুটবল খেলা ভালো। এতে একজন মানুষের মন ও শরীর মজবুত হয়ে ওঠে। তা ছাড়া নিজের দলকে জেতানোর তাগিদ আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে তোলে। খেলায় হার-জিত না থাকলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এই আনন্দ কখনোই পাওয়া যায় না।
৩.৮  মহাভারতের সমস্ত চরিত্রের মধ্যে অপুর কর্ণের চরিত্র বড়ো ভালো লাগে কেন?

উত্তর: কর্ণকে পছন্দ করার কারণ: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁরৎ'পথের পাঁচালী' উপন্যাসে 'অপু' চরিত্রটিকে অত্যন্ত আবেগপ্রবণ ও
অনুভূতিশীল করে গড়ে তুলেছেন। অল্পতেই তার চোখে জল আসে। সে অন্যের দুঃখ সহ্য করতে পারে না। যখন মায়ের মুখে সে মহাভারতের গল্প শোনে, তখন তার চোখে জল চলে আসে। কারণ, কর্ণের দুঃখ তার সহ্য হয় না। যুদ্ধক্ষেত্রে কর্ণের অসহায়তা তাকে খুবই বেদনা দেয়। সে বুঝতে পারে।যে, যুদ্ধে অন্যায়ের সঙ্গে কর্ণকে হত্যা করা হয়েছে। তাই তার মনে কর্ণের প্রতি সহানুভূতি জন্মায়। সে কর্ণের জন্য কেবলই কাঁদে—মনে মনে কর্ণের রথের চাকাকে মাটি থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করে। এইভাবেইৎমহাভারতের কর্ণ চরিত্রটি অপুর মনে প্রিয় হয়ে ওঠে।

৩.৯  মহাভারতে তোমার প্রিয় চরিত্র কোনটি? কেন তাকে তোমার ভালো লাগে, লেখো। ধর্ম স্থাপনের জন্য কৃয়ই ভারত যুদ্ধকে সংগঠিত করেন

উত্তর: মহাভারতের প্রিয় চরিত্র: আমার কাছে মহাভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ চরিত্র হলেন শ্রীকৃয়। ধর্মস্থাপনের জন্য কৃয়ই ভারতযুদ্ধকে সংগঠিত
করেন।

চরিত্রটি প্রিয় হওয়ার কারণ: মথুরারাজ কংসের ভয়ে বাসুদেব ও দেবকীর অষ্টম সন্তান কৃয় নন্দরাজা ও যশোদার কাছে মানুষ হয়েছেন। পরে নিজের মামা অত্যাচারী কংসকে বধ করে কৃয় যদুবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান পুরুষ। তিনিই প্রথম অনুভব করেছিলেন ধর্মরাজ্য গঠনের জন্য কৌরব ও পাণ্ডবের যুদ্ধ অনিবার্য। তিনি চাইতেন পরিবার- সমাজ-দেশ-এর মধ্যে মানুষ একাত্মভাবে, দলগতভাবে, একে অন্যের বন্ধু হয়ে থাকুক। তা না হলে এই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। এই পরম সত্য শেখানোর জন্যই তিনি আমার অত্যন্ত প্রিয় চরিত্র হয়ে উঠেছেন।

৩.১০ “সে জগৎ জানার, মানুষ জানার, মানুষ চেনার দিগ্বিজয়ে যাইবে”—কার কথা বলা হয়েছে? ভবিষ্যতের যে রঙিন স্বপ্নে সে বিভোর, তার কথা লেখো
উত্তর: উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: আলোচ্য উদ্ধৃতিতে ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী'
উপন্যাসের প্রধান চরিত্র অপুর কথা বলা হয়েছে।
→ অপুর স্বপ্ন: অভাব-অনটন ছিল অপুর পরিবারের নিত্যসঙ্গী। তবু সে নতুন দেশের স্বপ্ন দেখে। এই বিশাল বিশ্বকে চেনাজানার জন্য তার মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। সারা পৃথিবীর প্রকৃতি ও তার মানুষের সৌন্দর্যের সাথে নিজেকে মিলিয়ে দেওয়ার স্বপ্নে সে বিভোর থাকে। সে কল্পনা করে
‘বঙ্গবাসী’ কাগজের বিলাতযাত্রীর মতো সেও একদিন না একদিন বিলেত যাত্রা করবে। কলকাতা থেকে একদিন তার জাহাজ ছাড়বে।
বঙ্গোপসাগরের মোহানায় সাগর দ্বীপ পিছনে ফেলে সে নতুন নতুন দেশের উদ্দেশে ভেসে যাবে। সে বিলেত যাবে, জাপান যাবে, বাণিজ্যযাত্রা
করবে, বড়ো সওদাগর হবে। ভবিষ্যৎ জীবনে নানা স্থানে নানান দেশে ঘুরে বেড়িয়ে সে নানান রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবে। এই চেনা জগৎ ছাড়িয়ে বাইরের ডাক তার কানে তাই অনবরত ধ্বনিত হচ্ছে। অপুর বিশ্বাস ছিল একটু বড়ো হলেই তার এই রঙিন কল্পনা বাস্তবে পরিণত হবে।