স্বাধীনতা || অষ্টম শ্রেণি বাংলা ||, হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর|| SADHINATA || class 8 bangla || question answer
![]() |
স্বাধীনতা
কবি- ল্যাংস্টন হিউজ
অষ্টম শ্রেণী বাংলা
হাতে-কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর
১. নীচের প্রশ্নগুলি উত্তর দাও দাও।
১.১ ল্যাংস্টন হিউজের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী?
উত্তর: ল্যাংস্টন হিউজের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম The Weary Blues.
১.২. তিনি কোন দেশের রেনেসাঁসের অন্যতম নেতা হিসেবে পরিচিত?
উত্তর: কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার এবং সমাজকর্মী ল্যাংস্টন হিউজ বিশ শতকের কুড়ির দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্লেম রেনেসাঁসের অন্যতম নেতা হিসেবে পরিচিত।
২.নিচে প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো।
২.১ স্বাধীনতা বলতে কী বোঝ? কী কী বিষয়ে মানুষের স্বাধীনতা প্রয়োজন বলে তুমি মনে কর?
উত্তর: স্বাধীনতার অর্থ: 'স্বাধীনতা' শব্দের অর্থ নিজের অধীনে থাকা স্বাতন্ত্র এবং স্বাচ্ছন্দ্যের ভাব বোঝাতেই স্বাধীনতা শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। দেশের স্বাধীনতা বলতে অন্য জাতির অধীনে না থাকা ও নিজের মতো করে কাজ করা এবং বেঁচে থাকাকে বোঝানো হয়ে থাকে। স্বাধীন (বিণ) শব্দ থেকে স্বাধীনতা' (বি) শব্দটি তৈরি হয়েছে।
> বন্ধু বাসস্থান, স্বাধীন মতপ্রকাশ এই সব মৌলিক চাহিদা পুরণে মানুষের স্বাধীনতা থাকা একান্ত প্রয়োজনীয় বলে আমি মনে করি।
২.২. মানুষ পরাধীন হয় কখন ?
উত্তর: মানুষ যখন অন্য কোনো মানুষ বা রাষ্ট্রশক্তির অধীনতা স্বীকারে বাধ্য হয়, অর্থাৎ তাকে অপরের বশ্যতা স্বীকার করতে হয়, তখন পরাধীন হয়ে পড়ে।
২.৩ পরাধীন মানুষের স্বাধীনতা পাওয়ার পথগুলি কী?
উত্তর: পরাধীনতা মানুষ-সহ সমগ্র জীবজগতের কাছেই অভিশাপ। যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন মানবগোষ্ঠী স্বাধীনতা অর্জনের জন্য প্রাণ বাজি রেখে সংগ্রাম করেছে। কাজেই পরাধীনতা মোচনের প্রধান পথই হল সংগঠিত গণসংগ্রাম। তাঁর আন্দোলনের পথ ধরেই আসে বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। আর এই আন্দোলন তখনই বাস্তবায়িত হবে, যখন সমাজের সকল স্তরের জনগণ নিজেদের মধ্যে ঐক্য খুঁজে পাবেন। মানুষের মধ্যে যথার্থ রাজনৈতিক বোধের স্যার ও প্রকৃত জাতীয়তাবোধের বিকাশ তাকে নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করবে। এক বা একাধিক বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অধীনেই এই গণ উত্থান সম্ভব হতে পারে। জাতির মধ্যে সততা ও সৌহার্দাবোধ জাগ্রত করাই স্বাধীনতা অর্জনের প্রথম পদক্ষেপ।
২.৪ ' 'স্বাধীনতা' কবিতাটির মধ্যে দুটি 'পঞ্চ' আছে—'আমি পক্ষ' আর 'তুমি পক্ষ'। এই 'আমি পক্ষ' আর 'তুমি পক্ষ'-এর স্বরূপ বিশ্লেষণ করো। এই ক্ষেত্রে 'সে পক্ষ' নেই কেন?
উত্তর: মার্কিন কবি ল্যাংস্টন হিউজ রচিত 'স্বাধীনতা' কবিতায় দুটি পক্ষ আছে—'আমি পক্ষ' আর 'তুমি-পক্ষ'। এই 'আমি-পক্ষ' কবিতায় পরাধীন মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছে আর 'তুমি পক্ষ' সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রতিনিধিত্ব করেছে। 'তুমি-পক্ষ' হল স্বাধীন এবং স্বার্থপর মানুষের প্রতিনিধি। পরাধীন মানুষ সরাসরি এই কবিতায় অভিযুক্ত করেছে তার স্বাধীনতা হরণকারীকে। এই কারণেই কবিতায় এই দুটি পক্ষের প্রসঙ্গ রয়েছে। স্বাধীনতাকামী মানুষের অভিযোগ সরাসরি সাম্রাজ্যবাদীদের শক্তির বিরুদ্ধে হওয়ায় এখানে অন্য কোনো পক্ষের উল্লেখ প্রয়োজন হয়নি।
২.৫ “সময়ে/সবই হবে, কাল একটা নূতন দিন”—কবিতার মধ্যে উদ্ধৃতিচিহ্নের ভিতরে থাকা কথাটি কার/ কাদের কথা বলে তোমার মনে হয় ? তারা এ ধরনের কথা বলেন কেন ?
উত্তর: কবি ল্যাংস্টন হিউজের 'স্বাধীনতা' কবিতা থেকে উদ্ধৃত ‘ভিতরে থাকা' কথাটি শাসিতের প্রতি শাসকের উচ্চারণ বলে আমার মনে হয় ।
> শাসক দলের পক্ষ অবলম্বনকারী মানুষেরা পরাধীন মানুষকে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ থেকে বিরত রাখার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করে থাকেন। তারাই স্বাধীনতাকামী মানুষকে এ ধরনের কথা বোঝাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু যাঁদের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে, সেইসব সাধারণ মানুষ এমন তত্ত্বকথায় ভুলতে রাজি নয়। এমন কথা বারবার শুনে শুনে তাদের কান পচে গেছে। সব কিছুকেই সময়ের ওপর ছেড়ে না দিয়ে মানুষ আন্দোলন বা বিপ্লবের মাধ্যমে নিজের স্বাধীনতা অর্জন করতে চায়। দেশে দেশে, কালে কালে এমনভাবেই সাধারণ মানুষের মধ্যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে এবং সবরকম সামাজিক বন্ধন ও বিধিনিষেধ থেকে, পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে তাদের মুক্তি ঘটেছে।
২.৬ “আগামীকালের রুটি/দিয়ে কি আজ বাঁচা যায়”—এখানে 'আগামীকাল' আর 'আজ' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: কবি ল্যাংস্টন হিউজ রচিত 'স্বাধীনতা' কবিতা থেকে উদ্ধৃত আলোচা পঙক্তিটিতে 'আগামীকাল' বলতে ভবিষ্যতে যখন দেশ স্বাধীন
হবে সেই সময়কার কথা বোঝানো হয়েছে। 'আগামীকালের রুটি' হল স্বাধীনতা পাওয়া, যা রুটির মতোই প্রতিটি মানুষের জীবনে প্রয়োজনীয়। কিন্তু সময়ের নিয়মেই সব ঠিক হয়ে যাবে এমন তত্ত্বকথায় দীর্ঘদিন বিশ্বাস ও আস্থা রাখতে পারে না স্বাধীনতাকামী মানুষ।
'মা' বলতে কবিতায় বর্তমান সময়ের পরাধীন অবস্থাকে বোঝানো হয়েছে। অত্যাচারী শাসক পরাধীনতার অপমান থেকে মুক্তি চাওয়া
"মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে, তাদের মানবতাকে হরণ করছে। এরকম দুঃসময়ে ভবিষ্যতের জন্য কোনো মিথ্যা জোকাকে। তারা সন্তুষ্ট নয়। কবি বলতে চেয়েছেন, ভবিষ্যতের কোনো অনিশ্চিত সম্ভাবনার আশায় কখনোই বর্তমানের সংগ্রামকে স্থগিত রাখা উচিত নয়।
৩. নিম্নলিখিত পংক্তি গুলির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
৩.১ "মৃত্যুর পরে তো আমার .... প্রয়োজন হবে না।"
উত্তর: মার্কিন কবি ল্যাংস্টন হিউজ রচিত 'স্বাধীনতা' কবিতা থেকে আলোচা উদ্ধৃতিটি গৃহীত হয়েছে। অন্যের পদদলিত হয়ে, দাসত্বের শৃঙ্খল পায়ে পরে বেঁচে থাকা মৃত্যুর সমান। অন্যের অধীনতা স্বীকার করার মধ্যে যে আত্মমর্যাদাহীনতা, গ্লানি এবং কষ্ট রয়েছে পরাধীন ব্যক্তিই একমাত্র তার স্বাদ জানেন। উদ্ধৃতাংশে সেই পরাধীন জীবনেরই যন্ত্রণাময় বাস্তব ছবি ফুটে উঠেছে। রক্তমাংস দিয়ে গড়া যে-কোনো জীবিত মানুষের চেতনায় স্বাধীনতার বোধ থাকাই স্বাভাবিক। তার অস্থিতে-মজ্জায় রয়েছে স্বাধীনতার চেতনা। মৃতের কোনো অনুভূতি, সংবেদন নেই। তাই মৃত্যুর পরে মানুষের কাছে স্বাধীনতা কোনো অর্থই বহন করে আনে না। অথচ পরাধীনতা তার বেঁচে থাকাকে আরও যন্ত্রণাদায়ক করে তোলে। মানুষ জীবিত অবস্থাতেই স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায় এবং এই কারণেই সে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সচেষ্ট হয়।
৩.২ “স্বাধীনতা একটা শক্তিশালী বীজপ্রবাহ।”
উত্তর: প্রখ্যাত মার্কিন কবি ল্যাংস্টন হিউজ রচিত 'স্বাধীনতা' শীর্ষক কবিতা থেকে আলোচ্য উদ্ধৃতিটি গৃহীত হয়েছে।
উক্ত পঙ্ক্তিটিতে স্বাধীনতাকে একটি শক্তিশালী বীজপ্রবাহ বলা হয়েছে। বীজের মধ্যেই থাকে বৃক্ষের বড়ো হওয়ার সম্ভাবনা। বীজটি আলো, জল ও উত্তাপের সংস্পর্শে অঙ্কুরিত হয়ে বৃক্ষশিশুর জন্ম দেয়। ক্রমে তা শাখা- প্রশাখায়, ফুলে-ফলে বিকশিত হয়ে থাকে। তেমনই দেশ ও জাতির উন্নতিতেও স্বাধীনতা অত্যন্ত প্রয়োজন। অন্যের পদানত একটি জাতি কখনোই আত্মমর্যাদায় বলীয়ান হয়ে বিকাশ ও উৎকর্ষ লাভ করতে পারে না। ঐতিহ্যকে বহন করে ভবিষ্যতের দিকে প্রবাহিত করে স্বাধীনতা।
আত্মসম্মান, আত্ম-অধিকার এক প্রজন্ম থেকে অপর এক প্রজন্মে সঞ্চারিত হয় স্বাধীনতার মাধ্যমেই। তাই কবি একে শক্তিশালী বীজপ্রবাহ বলেছেন।
.৩.৩ “আমাদেরও তো অন্য সকলের ... জমির মালিকানার।”
উত্তর: উদ্ধৃতাংশটি মার্কিন কবি ল্যাংস্টন হিউজ রচিত ‘স্বাধীনতা' কবিতা থেকে গৃহীত হয়েছে। আলোচ্য অংশে 'আমাদের' বলতে পরাধীন,
পরাজিত জাতির কথা বলা হয়েছে, যারা বিদেশি শক্তির কাছে নত হয়েছে। বিজয়ী মানুষের মতো পরাধীন মানুষেরও অধিকার রয়েছে নিজের জন্মভূমিতে আত্মসম্মান ও আত্মশক্তি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার এবং নিজের সামান্যতম অধিকারটুকু পাওয়ার। পরাধীন মানুষের লাঞ্ছনার কথা এই পক্তিগুলির মধ্যে ফুটে উঠেছে।
এখানে মানুষের প্রাথমিক চাহিদা ও মৌলিক অধিকারের জন্য দাবি জানানো হয়েছে। অথচ এই দাবির প্রতি শাসকবর্গ চরম উদাসীন। মুক্তিকামী মানুষের দাবির প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এর ফলে ক্ষোভ জমতে জমতে সাধারণ মানুষ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে আর অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে সমাজবিপ্লব।
৩.৪ “স্বাধীনতা আমার প্রয়োজন/ তোমার যেমন।”
উত্তর: উদ্ধৃতাংশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্লেম রেনেসাঁসের অন্যতম নেতা এবং প্রসিদ্ধ কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার এবং সমাজকর্মী ল্যান্ডস্টন হিউজের লেখা 'স্বাধীনতা' কবিতা নেওয়া হয়েছে।
উদ্ধৃতাংশে 'আমার' বলতে পরাধীন, অন্যের পদানত মানুষকে বোঝানো হয়েছে। অন্যদিকে 'তোমার' বলতে শাসক তথা বিজয়ী শক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। কবিতার শেষ স্তবকের শেষাংশে এই দাবি উচ্চারণের মধ্য দিয়ে মুক্তিকামী সাধারণ মানুষ সাম্রাজ্যবাদী অর্থাৎ অন্যের স্বাধীনতা হরণকারী শক্তিকে চ্যালেও জানিয়েছেন। শাসক বা বিজয়ী শক্তির প্রতিনিধিদের উদ্দেশে পরাধীন মানুষের এই চ্যালেঞ্জ মুক্তিযুদ্ধের সূচনা ঘোষণা করছে।
৫. স্বাধীনতা নিয়ে লেখা আরও দুটো কবিতার উল্লেখ করো এবং এই কবিতার সঙ্গে তাদের তুলনামূলক আলোচনা কর।
শেষ-