জেলখানার চিঠি || অষ্টম শ্রেণী বাংলা || হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর || jelkhaner chithi || class 8 bangla || question answer
জেলখানার চিঠি
লেখক - সুভাষচন্দ্র বসু
অষ্টম শ্রেণি বাংলা
হাতে-কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর
১. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
১.১ সুভাষচন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন কেন ?
উত্তর: ভারতবিদ্বেষী ইংরেজ অধ্যাপক ওটেনকে প্রহারের অভিযোগে সুভাষচন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন।
১.২ রাসবিহারী বসুর কাছ থেকে তিনি কোন্ দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন?
উত্তর: রাসবিহারী বসুর কাছ থেকে সুভাষচন্দ্র বসু 'আজাদ হিন্দ ফৌজ'- এর দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন।
২. অনধিক তিনটি বাক্যে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
২.১ তোমার পাঠ্য পত্রখানি কে, কোথা থেকে, কাকে লিখেছিলেন ?
উত্তর: আমাদের পাঠ্য পত্রখানির লেখক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। তিনি মান্দালয় জেল থেকে তাঁর বিশেষ অন্তরঙ্গ বন্ধু দিলীপকুমার রায়কে
আলোচ্য পত্রখানি লিখেছিলেন।
২.২ কোন্ ব্যাপারটিকে পত্রলেখক আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে দেখার কথা বলেছেন?
উত্তর:: সুভাষচন্দ্র বসু মান্দালয় জেলে বন্দি থাকার সময় তাঁকে পাঠানো বন্ধু দিলীপকুমার রায়ের চিঠির উত্তরে আলোচ্য চিঠিটি লিখেছেন।
নেতাজির জেলে থাকাটা বন্ধু দিলীপকুমার রায়কে যে খুবই আঘাত করছে এটা নেতাজি বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তাঁর কারাবাসের কষ্টটা বড়ো করে না দেখে এই পরিবেশ কোনো মানুষের আধ্যাত্মিক চেতনা জাগাতেও যে সাহায্য করে, সেই দিকটি দেখার জন্য বন্ধু দিলীপকুমার রায়কে পরামর্শ দিয়েছেন।
২.৩ বন্দিদশায় মানুষের মনে শক্তি সঞ্চারিত হয় কীভাবে ?
উত্তর: মান্দালয় জেল থেকে দিলীপকুমার রায়কে লেখা চিঠিতে সুভাষচন্দ্র জানিয়েছেন যে,
বন্দিদশায় সাধারণত একটা দার্শনিক ভাব মানুষের মনে শক্তির সঞ্চার করে। দর্শনশাস্ত্র পাঠের ফলে এই জ্ঞান ও শক্তি সঞ্চারিত হতে
পারে। তিনি আরও বলেছেন, “মানুষ যদি তার নিজের অন্তরে ভেবে দেখবার যথেষ্ট বিষয় খুঁজে পায়, তাহলে বন্দি হলেও তার কষ্ট নেই।”
২.৪ মান্দালয় জেল কোথায় অবস্থিত ?
উত্তর: মান্দালয় জেল বার্মায় অর্থাৎ বর্তমান মায়ানমারে অবস্থিত। ব্রিটিশ শাসনকালে অনেক ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের এই জেলে বন্দি করে রাখা হত। সুভাষচন্দ্র বসু, বালগঙ্গাধর তিলকের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীরা এখানে দীর্ঘদিন বন্দি ছিলেন।
২.৫ ভারতীয় জেল বিষয়ে একটি পুস্তক সুভাষচন্দ্রের লেখা হয়ে ওঠেনি কেন?
উত্তর: ভারতীয় জেলে বন্দি থাকার অভিজ্ঞতা থেকে যেসমস্ত চিন্তা স্বাভাবিকভাবেই সুভাষচন্দ্রের মনে এসেছিল, সে সম্পর্কে তিনি পাতার পর পাতা অনায়াসে লিখে যেতে পারতেন। কিন্তু এত বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে চিঠিতে লিখে ওঠা সম্ভব নয়। অন্যদিকে, বই লেখার জন্য যে উদ্যম ও শক্তির প্রয়োজন, তা তাঁর তখন ছিল না বলেই ভারতীয় জেল বিষয়ে একটি পুস্তক সুভাষচন্দ্রের লেখা হয়ে ওঠেনি।
২.৬ সুভাষচন্দ্র কেন দিলীপ রায়ের প্রেরিত বইগুলি ফেরত পাঠাতে পারেননি?
উত্তর: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যখন মান্দালয় জেলে বন্দি ছিলেন, সেসময়ে বন্ধু দিলীপকুমার রায় তাঁকে কিছু বই পড়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন। বইগুলির প্রাপ্তি স্বীকার করে নেতাজি তাঁকে জানান যে, মান্দালয় জেলে বইগুলির অনেক পাঠক তৈরি হওয়ায় তিনি সেগুলি তখনই ফেরত পাঠাতে পারছেন না। তিনি এ কথাও বলেন যে, দিলীপকুমারের কাছ থেকে আরও এরকম বই পেলে সেগুলিও সাদরে গৃহীত হবে।
৩ নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর কয়েকটি বাক্যে লেখো।
৩.১ নেতাজি ভবিষ্যতের কোন্ কর্তব্যের কথা এই চিঠিতে বলেছেন? কেন এই কর্তব্য স্থির করেছেন? কারা শাসনপ্রণালী বিষয়ে কাদের পরিবর্তে কাদের প্রণালীকে তিনি অনুসরণযোগ্য বলে মনে করেছেন?
উত্তর: নেতাজি উল্লেখিত ভবিষ্যৎ কর্তব্য: শ্রদ্ধেয় গীতিকার ও সুরকার দিলীপকুমার রায়কে মান্দালয় জেল থেকে ২ মে, ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে
লেখা একটি চিঠিতে নেতাজি ভারতবর্ষের কারা শাসন পদ্ধতির সংস্কার ঘটানোকেই তাঁর ভবিষ্যতের অন্যতম কর্তব্যরূপে চিহ্নিত করেছেন।
> এরূপ কর্তব্য স্থির করার কারণ: স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার কারণে ইংরেজ শাসনাধীন ভারতবর্ষে নেতাজিকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা: সেই অভিজ্ঞতা থেকে নেতাজি দেখেছেন, জ্ঞাত বা অজ্ঞাত কোনো কারণে
কোনো মানুষকে যদি জেলে থাকতে হয়, তবে তার মানসিকতা জেলের পরিবেশের কারণেই বিকৃত হয়ে পড়ে।
অপরাধীর নৈতিক অবনতি: বন্ধুকে সে-কথা লেখার পাশাপাশি তিনি এ-ও লিখেছেন যে, অপরাধীদের অধিকাংশেরই কারাবাসকালে কোনো নৈতিক উন্নতি হয় না, বরং তারা
আরও হীন মানসিকতাসম্পন্ন হয়ে পড়ে। দেশের কারা শাসনপ্রণালীর আমূল সংস্কার ঘটালে তবেই সেই পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব। তাই তিনি
সেই কাজকেই নিজের ভবিষ্যতের কর্তব্য হিসেবে স্থির করেছেন।
অনুকরণীয় কারা শাসনপ্রণালী: ভারতীয় কার শাসন প্রণালী বিষয়ে তিনি কুৎসিত ব্রিটিশ আদর্শের বদলে আমেরিকার ইউনাইটেড স্টেটসের মতো উন্নত দেশগুলির ব্যবস্থা অনুসরণযোগ্য বলে মনে করেছেন।
৩.২ "সেজন্য খুবই খুশি হয়েছি।" বা কে? তিনি কী খুশি হয়েছেন? উদ্ধৃত অংশের বক্তা মন্দালয় কারাগারে বন্দি সুভাষচন্দ্র বসু।
খুশি হওয়ার কারণ:- বন্ধু দলীপকুমার রায়কে সুভাষ চন্দ্র চিঠিতে জানিয়েছেন যে, রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে কারাগারে থাকা মানুষজনের কাছে কোনো চিঠিপত্র পৌঁছোনোর আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ 'double distillation বা দু-বার পরীক্ষা করে নেন। পরীক্ষায় ব্রিটিশের পক্ষে আপত্তিকর কিছু পাওয়া গেলে তা আর চিঠির প্রাপকের হাতে পৌঁছোয় না।
এক্ষেত্রে সুভাযাত্রা খুশি এই কারণেই যে, এবারে তেমন কিছু ঘটেনি। তাকে দিলীপকুমার রায়ের ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মার্চ তারিখের চিঠিটি
বিলাতেই তাঁর হাতে এসে পৌঁছেছে।
৩.৩ আমার পক্ষে এর উত্তর দেওয়া সুকঠিন।”— কে, কাকে এ কথা বলেছেন? কীসের উত্তর দেবার কথা বলা হয়েছে ?
উত্তর: বক্তা এবং উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: মান্দালয় কারাগারে বন্দি সুভাষচন্দ্র তার বন্ধু প্রখ্যাত সুরকার, সংগীতকার দিলীপকুমার রায়কে লেখা চিঠিতে কথাটি বলেছেন।
যে কথার উত্তর: সুভাষচন্দ্র লিখেছেন যে, বন্ধুর লেখা চিঠিটি তাঁর হৃদয় কে এমন কোমলভাবে স্পর্শ করেছে এবং তাঁর চিন্তা ও অনুভূতিকে
এমনভাবে অনুপ্রাণিত করেছে যে, সেই চিঠির উত্তর দেওয়া তাঁর পক্ষে প্রত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া চিঠিটিকে Censor-এর বাধা অতিক্রম করতে হবে বলে তা সুভাষচন্দ্রের মনের গভীর আবেগ ও চিন্তাকে অনেকের সামনে প্রকাশ করে দেবে—এ কথাও তাঁর মনে হয়েছিল। তাই এ ধরনের চিঠির উত্তর লেখা তাঁর পক্ষে কঠিন বলে জানিয়েছেন তিনি।
৩. ৪ "পরের বেদনা সেই বুঝে শুধু যেজন ভুক্তভোগী।”—উদ্ধৃতিটির সমার্থক বাক্য পত্রটি থেকে খুঁজে নিয়ে লেখো। সেই বাক্যটি থেকে লেখকের কোন মানসিকতার পরিচয় পাও?
উত্তর: সমর্থক বাক্য: যে সমার্থক বাক্যটি সুভাষচন্দ্র লিখিত পাঠ্যপত্র কে উপার করা যায়, তা হল – “আমার মনে হয় না, আমি যদি স্বয়ং তান তাহলে একজন কারাবাসী বা অপরাধীকে ঠিক দেখতে পারতাম।”
লেখকের মানসিকতা :-জ্ঞাত বা অজ্ঞাত কোনো কারণে কারাবন্দি মানুষদের প্রতি লেখকের সহানুভূতি প্রশ্ন উদ্ধিত বাক্যটিতে ফুটে উঠেছে।ভবিষ্যতে কারা শাসন প্রণালী সংস্কারে যে দীর্ঘ সংকল্প নেতাজি নিয়েছিলেন এর মধ্যেও অপরাধীদের প্রতি তার বিশেষ সহানুভূতি প্রকাশ পাওয়া যায় ।
৩.৫ আমার মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে, অনেকখানি লাভবান হতে পারব।” – কোন প্রসঙ্গে বক্তার এই উক্তি? জেলজীবনে তিনি আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে কীভাবে লাভবান হবার কথা বলেছে?
উত্তর :- প্রসঙ্গ : জেলে বন্দি থাকার সময় মানুষ নির্জনে অনেক জটিল চিন্তা করার সুযোগ পায়। তখন তার মধ্যে আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক শক্তির সঞ্চার ঘটে। সেই কথা বন্ধু দিলীপ কুমার রায়কে জানাতে গিয়ে সুভাষচন্দ্র আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
আধ্যাত্মিক দিক থেকে লাভবান হওয়া:- সুভাষচন্দ্রের জেলবন্দি জীবনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা দিলীপকুমার রায়কে লেখা এই পত্রটিতে প্রকাশ পেয়েছে। পত্রলেখক সুভাষচন্দ নির্দ্বিধায় এ কথা স্বীকার করেছেন, জেলের
বন্দিজীবনে যে নির্জনতার মধ্যে মানুষকে বাধ্য হয়ে দিন কাটাতে হয়, সেই নির্জনতাই তাকে জীবনের চরম সমস্যাগুলি গভীরভাবে বোঝার সুযোগ দেয়।
→ সুভাষের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা: জেলের নির্জনতায় নিজের সম্পর্কে ভাবতে গিয়ে লেখক দেখেছেন, কীভাবে বছরখানেক আগেকার জটিল
সমস্যাগুলির অনেক সুষ্ঠু সমাধান তিনি নিজেই খুঁজে পাচ্ছেন। ভাবনার
স্বচ্ছতা: তাঁর যেসমস্ত মতামত আগে নেহাতই দুর্বল ও অস্পষ্ট ছিল, সেগুলি এই বন্দিজীবনেই তাঁর মনের মধ্যে স্পষ্ট ও পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। এসব বিষয় বিবেচনা করেই লেখক জানিয়েছেন যে, তাঁর কারাবাসের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে তিনি অনেকখানি লাভবান হতে পারবেন।
৩. ৬ 'Martyrdom' শব্দটির অর্থ কী ? এই শব্দটি উল্লেখ করে বক্তা কী বক্তব্য রেখেছেন?
উত্তর: 'Martyrdom' কথার অর্থ: 'Martyrdom' শব্দটির অর্থ ‘আত্মবলিদান', ‘রাজনৈতিক বিশ্বাসের জন্য বা মহৎ কারণে প্রবল কষ্টভোগ’।
→ প্রসঙ্গ-সহ উল্লিখিত বক্তব্য: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর কারাবাসের বিষয়টিকে তাঁর বন্ধু দিলীপকুমার রায় ‘Martyrdom’বা শহীদত্ব’ (শহিদত্ব) বলে অভিহিত করেছিলেন। সুভাষের দৃষ্টিকোণ: সুভাষচন্দ্র বিষয়টিকে বন্ধুর গভীর অনুভূতি ও মহত্ত্বেরই পরিচায়ক বলে মনে করেছেন। অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে নেতাজি তাঁকে এ-ও জানিয়েছেন যে, তিনি আশা করেন
সামান্য কিছু ‘humour বা রসবোধ ও ''proportion' বা মাত্রা—এ দুটির বোধ তাঁর আছে। বিনয়ী প্রকৃতি: সেই কারণেই নিজেকে Martyr মনে করার মতো স্পর্ধা তাঁর নেই। স্পর্ধা বা আত্ম-অহংকার জিনিসটাকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে যেতে চান বলেই নেতাজি জানিয়েছেন। এই বিষয়ে তিনি সফল হয়েছেন কি না, তা তাঁর বন্ধুরাই বলতে পারবেন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। উদ্দিষ্ট শব্দের ধারণা: তাঁর কথায় Martyrdom জিনিসটা তাঁর কাছে বড়োজোর একটা আদর্শই হতে পারে, এর বেশি কিছু নয়।
৩.৭ “যখন আমাদিগকে জোর করে বন্দি করে রাখা হয় তখনই তাদের মূল্য বুঝতে পারা যায়।”—কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে? ‘তাদের মূল্য’ বিষয়ে লেখকের বক্তব্য আলোচনা করো।
উত্তর: প্রসঙ্গ: বন্ধু দিলীপকুমার রায়কে লেখা ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ২ মে তারিখের পত্রে নেতাজি আলোচ্য উদ্ধৃতিটির উল্লেখ করেছেন। কারাবাসের কুফল প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে নেতাজি বলেছেন যে, দীর্ঘমেয়াদি কারাবাসের ফলে মানুষ দেহ ও মনের দিক দিয়ে ধীরে ধীরে অকালবৃদ্ধ হয়ে পড়ে। কারাগারের খারাপ খাবার, ব্যায়াম বা আনন্দের অভাব, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা প্রভৃতি বিষয় এজন্য দায়ী বলেই তিনি মনে করেছেন।
→ লেখকের বক্তব্য: জীবনের স্বাভাবিক ছন্দের মধ্যে থাকায় আমরা।অনেকেই পিকনিক, বন্ধুদের সঙ্গে কথাবার্তা, সংগীতচর্চা, সাধারণ বক্তৃতা, খেলাধুলা করা, মনোমতো কাব্যসাহিত্যের চর্চাকে আলাদা করে মূল্য দিই না। কিন্তু যখন জীবন থেকে এসব হারিয়ে যায়, জোর করে ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাদের বন্দি করে রাখা হয়, তখন এইসমস্ত সৃজনশীল কাজ ও বিনোদনের প্রকৃত মূল্য বোঝা যায়। জেলের শাসনপদ্ধতির আমূল
সংস্কারের মাধ্যমেই একমাত্র সেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকে সুন্দর করে তোলা সম্ভব বলে লেখক মনে করেন।
৩.৮ “মানুষের পারিপার্শ্বিক অবস্থা কী কঠোর ও নিরানন্দময়।” ঘটনায় লেখকের মনে এই উপলব্ধি ঘটে তার পরিচয় দাও।
উত্তর: শুরুর কথা: ঘনিষ্ঠ বন্ধু দিলীপকুমার রায়কে মান্দালয় জেল থেকে ২ মে, ১৯২৫ তারিখে লেখা পত্রটিতে নেতাজি সুভাষচনা
কারা মানুষের শোচনীয় অবস্থান করেছেন। সেই সূত্রেই আলোচ্য উদ্ধৃতিটির উল্লেখ হয়েছে।
সুভাষের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা:- বিভিন্ন কারাগারে দীঘদিন রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে কাটানোর ফলে ভোজি দেখেছেন, এই দেশের
কারাগারগুলিতে দৈহিক কষ্টের তুলনায় অপরাধীদের মানসিক কষ্টই হয় বেশি। যে বন্দিজীবনে অত্যাচার আর অপমানের আঘাত কম, তা অপেক্ষাকৃত কম যন্ত্রণাদায়ক হয়। সংশোধনের আর পর্ব: আঘাত বা নির্যাতন আঘাতকারীর প্রতি মানুষের মনকে আরও বিরুপ করে দেয়। ফলে আঘাতের যে উদ্দেশ্য হওয়া উচিত সংশোধন, তা তো হয়ই না, বরং নানারকম মানসিক বিকৃতি ঘটে বন্দির। ব্যক্তির নৈতিক উন্নতির বদলে অবনতিই ঘটে। সেদিক থেকে দেখলে এই আঘাতের উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ বে
মনে হতে পারে।
বন্দিজীবনের দার্শনিক দিক: কিন্তু দার্শনিক দিক থেকে ভাবলে এই আঘাতেরও ভালো দিক আছে। কারণ জেলের পরিবেশে কয়েদিরা স্বাভাবিক জীবন থেকে একদম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সেই একাকিত্বের মধ্যে তারা নিজেদের।বিচার বিশ্লেষণের সুযোগ পায়। এর ফলে তাদের নৈতিক উন্নতি ঘটে। এরকম পরিস্থিতিতে জেলের জীবনকে আর অসহা বলে মনে হয় না। প্রচলিত কারা শাসনপ্রণালীর উদ্দেশ্য হল বন্দিকে সবসময় ভাবতে বাধ্য করা যে, তার চারপাশের অবস্থা কঠোর ও আনন্দহীন, তাই এই ধরনের অত্যাচার চালানো হয়।
শেষের কথা: এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সুভাষচন্দ্র জেলবন্দিদের ওপর হওয়া মানসি নির্যাতনের স্বরূপটি তুলে ধরেছেন।
৩.৯ এই চিঠিতে কারাবন্দি অবস্থাতেও দুঃখকাতর, হতাশাগ্রস্ত নয়, বরং আত্মবিশ্বাসী ও আশাবাদী নেতাজির পরিচয়ই ফুটে উঠেছে।—পত্রটি অবলম্বনে নিজের ভাষায় মন্তব্যটির যাথার্থ্য পরিস্ফুট করো।
উত্তর: কথামুখ: সুদূর মান্দালয় জেলে রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে কারাবাস করার সময়কালে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ২ মে তারিখে নেতাজি তাঁর বন্ধু দিলীপকুমার রায়কে একটি পত্র লিখেছিলেন। ওই পত্রে নেতাজি ভারতে ব্রিটিশ কারা শাসনপ্রণালীকে অন্ধভাবে অনুসরণ করার বিষয়টিকে তীব্রভাবে সমালোচনা করেছেন।
নেতাজির ভবিষ্যৎ কর্মসূচি : কারা-
শাসনপ্রণালীর সংস্কারসাধনকেই তিনি তাঁর ভবিষ্যৎ কর্মসূচির মধ্যে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। কারাজীবনের মধ্যেও বন্ধুর পাঠানো বইগুলো তিনি যত্ন নিয়ে পড়েছেন এবং জেলের মধ্যেই আরও অনেক পাঠক তৈরি করেছেন। অপরাধীদের জন্য পদক্ষেপ: অপরাধীদের প্রতি সমাজের মানুষের মধ্যে সহানুভূতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও নেতাজি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে চান বলে জানিয়েছেন। “আমাদের সমস্ত দুঃখকষ্টের অন্তরে একটা মহত্তর উদ্দেশ্য কাজ করছে”–নেতাজির এমন উক্তিতে দার্শনিকতার সঙ্গে গভীর আশাবাদই ধ্বনিত হয়েছে।
গভীর ভাবনার ফসল: জেলের নির্জনতায় তিনি বহু সমস্যার কথা গভীরভাবে ভাবার অবকাশ পেয়ে সমাধানের অনেক পথও খুঁজে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।।সকলের শুভেচ্ছা ও সহানুভূতি থাকলে দুঃখকষ্টের ছোটোখাটো অগভীর ঢেউ পেরিয়েও আনন্দতীর্থে পৌঁছোনো সহজতর হবে। সেক্ষেত্রে দুঃখযন্ত্রণাকেই তিনি উন্নততর কর্ম আর উচ্চতর সফলতার প্রেরণাদায়ী শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। শেষের কথা: তাঁর মতে, বিনা দুঃখকষ্টে যা লাভ করা যায়, তার কোনো মূল্য নেই। এভাবেই দুঃখজয়ের আহ্বান তাঁর লেখা চিঠিটিতে ফুটে উঠেছে।
৩.১০ কারাগারে বসে নেতাজির যে ভাবনা, যে অনুভব, তার অনেকখানি কেন অকথিত রাখতে হবে?
উত্তর: শুরুর কথা: নেতাজি সুভাব্যতা বসু মান্দালয় কারাগারে বন্দি হয়ে যে বিভিন্ন ভাবনায় মগ্ন হয়েছেন, তার অনেকখানিই কোনো এক ভবিষ্যৎ কাল পর্যন্ত অকথিতই রাখতে হবে বলে জানিয়ে বন্ধু দিলীপকুমার রায়কে এই চিঠিটি লিখেছিলেন।
লেখক দিলীপ কুমার রায়ের চিঠি নেতাজীর মনে যে চিন্তা ও অনুভূতির সৃষ্টি করে তাকে ভাষার মাধ্যমে যথাযথ রূপ দেওয়া কঠিন বলে জানিয়েছেন তিনি। এর উপরে আবার রয়েছে 'Censor হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার আশঙ্কা। মনের গভীরে সৃষ্ট কোন অনুভবব চিঠিতে উল্লেখিত হলে আইনরক্ষকদের কবলে পড়ে তা দিনের আলোর মধ্যে প্রকাশিত হয়ে পড়বে, যা লেখক একেবারেই চান না। সেই কারণেই যতদিন তিনি কারাগারে আড়ালে থাকবেন,ততদিন তার মনের অনেক কথাই অপ্রকাশিত থাকবো বলে জানিয়েছেন।
৪। নিচের বাকু গুলি তথ্যগত অশুদ্ধি সংশোধন কর
৪.১ নেতাজি মনে করতেন না যে, আমাদের সমস্ত দুঃখকষ্টের অন্তরে একটা মহত্তর উদ্দেশ্য কাজ করছে।
উত্তর: নেতাজি মনে করতেন যে, আমাদের সমস্ত কষ্টের অন্তরে একটা মহত্তর উদ্দেশ্য কাজ করছে।
৪.২ কারাগারে বন্দি অবস্থায় নেতাজি সুভাষ গীতার আলোচনা লিখেছিলেন।
উত্তর: কারাগারে বন্দি অবস্থায় লোকমান্য তিলক গীতার আলোচনা লিখেছিলেন।
৪.৩ জেলজীবনের কষ্ট মানসিক অপেক্ষা দৈহিক বলে নেতাজি মনে করতেন।
উত্তর: জেলজীবনের কষ্ট দৈহিক অপেক্ষা মানসিক বলে নেতাজি মনে করতেন।
৫. নিচের বাক্যগুলি থেকে সমাস বদ্ধ পদ বেছে নিয়ে ব্যাসবাক্য সমাসের নাম লেখ।
৫.১ তোমার চিঠি হৃদয়তন্ত্রীকে কোমলভাবে স্পর্শ করেছে।
উত্তর: হৃদয়তন্ত্রী = হৃদয় রূপ তন্ত্রী—রূপক কর্মধারয় সমাস।
৫.২ সম্পূর্ণ অজ্ঞাত কারণে জেলে আছি।
উত্তর: অজ্ঞাত = নয় জ্ঞাত-না-তৎপুরুষ সমাস।
৫. তখন আমার নিঃসংশয় ধারণা জন্মে।
উত্তর: নিঃসংশয় = নির (নাই) সংশয় যার / যাতে- না বহু রীহি সমাস।
৫.৪ নূতন দণ্ডবিধির জন্যে পথ ছেড়ে দিতে হবে।
উত্তর: দন্ডবিধি- দন্ডের নির্মিত বিধি নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাস।
৫. লোকমান্য তিলক কারাবাস কালে গীতার আলোচনা লেখেন।
উত্তর: লোকমান্য :-লোক দ্বারা মান্য। করণ তৎপুরুষ সমাস।
৬. শব্দগুলি ব্যুৎপত্তি নির্ণয় কর :- পাঠক ,দর্শন, দৈহিক, আধ্যাত্মিক, ভন্ডামি, শ্রমিক, মহত্ব, অভিজ্ঞতা।
উ: পাঠক:- √পঠ + অকক।
দর্শন:- √দৃশ্ + অন্ ট।
দৈহিক- দেহ + স্লিক।
ভণ্ডামি = ভণ্ড + আমি ।
মহত্ত্ব = মহৎ+ ত্ব
> সমৃय= সম্+ ঋধ্ + ক্ত
অভিজ্ঞতা - অভিজ্ঞ (অভি-জ্ঞা + ক) + তা।
নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য ।
৭.১ আমার পক্ষে এর উত্তর দেওয়া সুকঠিন।
(না সূচক বাক্যে)
উত্তর: আমার পক্ষে এর উত্তর দেওয়া খুব সহজ নয়।
৭.২ সেই জনাই সাধারণের কাছে মুখ দেখাতে সে লজ্জা পায়। (প্রশ্নবোধক বাক্যে)
উত্তর: সেইজনাই সে সাধারণের কাছে মুখ দেখাতে লজ্জা পায় না কি?
৭.৩ লজ্জায় তারা বাড়িতে কোনো সংবাদ দেয়নি। (যৌগিক বাক্যে)
উত্তর: তারা লজ্জা পেয়েছে তাই বাড়িতে কোনো সংবাদ দেয়নি।
৭.৪ কতকগুলি অভাব আছে যা মানুষ ভিতর থেকে পূর্ণ করে তুলতে পারে।
উত্তর: কতকগুলি অভাবকে মানুষ ভিতর থেকে পূর্ণ করে তুলতে পারে। (সরল বাক্যে)
৭.৫. বিনা দুঃখকষ্টে যা লাভ করা যায় তার কোনো মূল্য আছে? (নির্দেশক বাক্যে)
উত্তর: দুঃখকষ্টের বিনিময়ে যা লাভ করা যায়, তারই কেবল মূল্য আছে।
৮. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো।
৮.১ “শুধু শাস্তি দেওয়া নয়, সংশোধনই হওয়া উচিত জেলের প্রকৃত উদ্দেশ্য।”—তুমি কি এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও ।
উত্তর: বক্তব্যের প্রতি মতামত: বন্ধু দিলীপকুমার রায়কে লেখা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পত্র থেকে উদ্ধৃত আলোচ্য বক্তব্যের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত। উদ্দেশ্য অনুযায়ী নামের পরিবর্তন: “সংশোধনই হওয়া উচিত জেলের প্রকৃত উদ্দেশ্য”—এই বক্তব্যের ভাবের সঙ্গে মিল রেখেই আজ দুনিয়াজুড়ে ‘জেলখানা’ বা ‘কারাগার’-কে 'সংশোধনাগার' বলা হয়ে থাকে। পরস্পরের প্রতি হিংসা ও বিদ্বেষভাব ভুলে কয়েদিরা বিভিন্ন সৃজন শীল কাজে অংশ নিচ্ছে যা আজকের দিনে অত্যন্ত পরিচিত ও প্রশংসনীয় একটি বিষয়। সংশোধনের ধাপ: ছবি-আঁকা, গান, নাটক-
অভিনয়, খেলাধুলো, আবৃত্তিতে অংশগ্রহণ ছাড়াও বহু কয়েদিকে শিক্ষাক্ষেত্রেও যথেষ্ট কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে
মাংশোধনাগারের পরিবেশকে অবশ্যই মনের বিকাশের অনুকূল হতে হবে।
কেবলমাত্র গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তরগুলি দেয়া হলো