লোকটা জানলোই না || অষ্টম শ্রেণি বাংলা ||©হাতে-কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর || Loktai janloi na || class 8 bangla || question answer
![]() |
লোকটা জানলোই না
লেখক-সুভাষ মুখোপাধ্যায়
অষ্টম শ্রেণি বাংলা
হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর
১.নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
১.১ কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী ?
উত্তর: সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম 'পদাতিক' ।
১.২ তাঁর লেখা দুটি গদ্যগ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর: সাহিত্যিক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা দুটি গদ্যগ্রন্থের নাম হল ‘কাঁচা-পাকা' এবং ‘ঢোলগোবিন্দের আত্মদর্শন'।
২. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও ।
২.১ “বাঁ দিকের বুক পকেটটা সামলাতে সামলাতে...”—এখানে 'বাঁ দিকের বুকপকেট' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: আলোচ্য পঙ্ক্তিটি কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত 'লোকটা জানলই না' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
টাকাপয়সা যাতে না হারিয়ে যায় সেইজন্য মানুষ তার পকেট সামলায়। একই ভাবে এই কবিতার লোকটিও সঞ্চিত ধন সম্পদ সামলাতে সারা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে মানুষ যখন পকেট সামলায়,
তখন তার মনেই পড়ে না যে বাঁ দিকের বুক পকেটের, নীচেই আছে তার হৃদয় টাকা-পয়সা আছে ঢের বেশি মূল্যবান। এই লোকটি ও টাকা পয়সা সামলাতে গিয়ে নিজের হৃদয় কিসের প্রকৃত সুখী হতে পারে তা কোনদিনই জানতে পারেনি।এখানে কবি বা দিকের বুক পকেট বলতে লোকটির অর্থ সর্বস্ব জীবনের কথা বুঝিয়েছেন।
২.২ ""ইহকাল পরকাল"-- এই শব্দ দয়া এখানে কি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?
উত্তর: শুরুর কথা: সুভা মুখোপাধ্যায়ের লেখা 'লোকটা জানলোই না' কবিতার 'ইহকাল পরকাল' শব্দ দুটি রয়েছে। কবিতার অর্থ অনুসারে শব্দ দুটির যথেষ্ট গুরুত্ব আছে।
ইহকাল ও পরকাল শব্দ দুটির অর্থ: 'ইহ' শব্দের মানে পৃথিবী। তাই 'কাল' মানে মানুষ পৃথিবীতে
যতদিন বাস করে সেই সময়কাল। 'পরকাল' মানে মৃত্যুর পরের সময়। অর্থাৎ যে কাল বা সময় কেমন হবে, তা মানুষের জানার বাইরে
লোকটির জীবনের ব্যর্থতার অর্থবোধক :-যে লোকটা সারাজীন শুধু টাকাপয়সার হিসেব করে চলেন তার চোখ বাইরের পৃথিবী আর তার সৌন্দর্যকে দেখতে পায় না। তাই কবি বলেছেন তাঁর ইহকাল নষ্ট হল। আবার একইসঙ্গে কবি লোকটার পরকাল নষ্ট হওয়ার কথা বলেছেন। কারণ শাস্ত্রে বলে, কেউ ইহকালে ভালো কাজ না করলে, তার পরকালও সুখের হয় না। তাই ইহকাল পরকাল' দুটি বিপরীতার্থক শব্দকে পাশাপাশি বসিয়ে কবি লোকটির জীবনের ব্যর্থতাকেই বোঝাতে চেয়েছেন।
২.৩ কবিতায় লোকটির দু-আঙুলের ফাঁক দিয়ে কী খসে পড়ল?
উত্তর: কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত 'লোকটা জানলই না' কবিতায় বর্ণিত মানুষটির দু-আঙুলের ফাঁক দিয়ে খসে পড়ল তাঁর জীবন। অর্থের
পিছু ছুটে-চলা মানুষটি এমনই লোভের ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছিলেন যে, মৃত্যুর ডাক এসে গেছে সে খেয়ালও তাঁর ছিল না। তাঁর আকস্মিক ও করুণ মৃত্যুকেই কবি দু-আঙুলের ফাঁক দিয়ে জীবন বসে পড়ার সাথে তুলনা করেছেন।
২.৪ 'আলাদিনের আশ্চর্য-প্রদীপ' আসলে কী? তাকে এরকম বলার কারণ বুঝিয়ে দাও ।
উত্তর: আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের আসল পরিচয়: ইসলামের সুবর্ণযুগে আরবি ভাষায় সংকলিত হয়েছিল মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশীয় গল্প ও লোককথা, যার নাম ছিল আরব্য রজনী। আলাদিন নামক এক কিশোরের ঘটনাচক্রে আশ্চর্য প্রদীপ লাভ ও সেই প্রদীপে বসবাসকারী
দৈত্যের সহায়তায় তার ভাগ্য খুলে যাওয়ার গল্পটি পাঠকের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। 'লোকটা জানলই না' কবিতায় কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় মানুষের হৃদয়ের অসাধ্যসাধন করার ক্ষমতা দেখে তাকে 'আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ আখ্যা দিয়েছেন।
এরকম বলার কারণ:, আরবা রজনীর আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ যেমন অসাধ্য সাধন করতে পারত, তেমনি সবরকমের অসম্ভবকে সম্ভব করার ক্ষমতা রাখত, মানুষের হৃদয় ও তেমনই। মানুষ নিজের হৃদয়ের স্পর্শে অন্য মানুষের দুঃখ দূর করতে পারে, সমাজকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে তুলতে পারে, এমনকী নিজের জীবনের একঘেয়েমি কাটিয়ে তাকে সম্পূর্ণতা দান করতে পারে। তাই কবি হৃদয়কে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ' বলে সম্বোধন করেছেন।
৩• নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর কয়েকটি বাকি দাও।
৩.১ “লোকটা জানলই না” পদ্ধতিটি দু-বার কবিতায় আছে। একটি পঙক্তি একাধিকবার ব্যবহারের কারণ কী?
উত্তর: শুরুর কথা: কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত 'লোকটা জানলই না নামক কবিতায় “লোকটা জানলই না” পংক্তিটি দু-বার ব্যবহৃত ।
প্রথমবার ব্যবহারের কারণ: উদ্ধৃতিটি প্রথমবার ব্যবহৃত হয়েছে কবিতায় বর্ণিত মানুষটির হৃদয়ের সন্ধান না পাওয়া প্রসঙ্গে।
দ্বিতীয়বার ব্যবহারের কারণ: দ্বিতীয়বার সেই একই পক্তি ব্যবহারের কারণ নিজের অজান্তেই যে তিনি অমূল্য জীবন হারিয়ে ফেললেন, তা বিশেষভাবে প্রকাশ করা। শেষের কথা: কবিতার নামকরণ হিসেবেও কবি এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করে তাঁর কবিতার মূলভাবটিকে স্পষ্ট করে তুলেছেন।
৩.২ কবি 'হায়-হায়' কোন্ প্রসঙ্গে বলেছেন? কেন বলেছেন?
উত্তর: প্রসঙ্গ: সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের 'লোকটা জানলই না' কবিতার একজন সাবধানী, সঞ্চয়ী এবং অর্থসর্বস্ব মানুষের কথা রয়েছে। তার
সম্বন্ধে খেদ ও আক্ষেপ প্রকাশ করতে গিয়ে কবি 'হায়-হার' শব্দবন্ ব্যবহার করেছেন।
> উত্তির কারণ: জামার বাঁ-দিকের বুক-পকেটের, অর্থাৎ জীবনভর সঞ্চিত অর্থের প্রতি আকর্ষণে মানুষটি জীবনের কোনো মহত্তর উদ্দেশ্যই
পূর্ণ করতে পারেননি। এই অমূল্য জীবনের সৌন্দর্য উপভোগ না করে তিনি টাকাপয়সাকেই শুধু আঁকড়ে ধরেছেন। এইভাবে ইহকাল ও পরকাল দুই ই তিনি নষ্ট করেছেন। প্রচুর অর্থ উপার্জন বা সঞ্চয় করলে তা তাঁর কোনো কাজে আসেনি। এভাবে জীবন কাটালে মৃত্যুর পর কেউ মানুষকে মনে রাখে না। কবিতায় মানুষটির জীবনের অসারতার কথা ভেবে এবং তার
অসহায়তায় কষ্ট পেয়েই কবি হায় হায়' করে উঠেছেন।
৩.৩ কবিতাটির নামকরণ যদি হত ‘হৃদয়' বা ‘আলাদিনের আশ্চর্য- প্রদীপ' তাহলে তা কতটা সার্থক হত?
উত্তর: : সুভাষ মুখোপধ্যায় রচিত 'লোকটা জানলাই না' কবিতার নামকরণটি যথেষ্ট আকর্ষক। নামকরণের মধ্য দিয়ে কবি তাঁর সৃষ্টির বিষয়বস্তুর ব্যঞ্জনা দেন। এই কবিতার মূল বক্তব্য হল সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের কবিতার মূল বক্তব্য হল সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের বৈষয়িক জীবনযাপন, বিষয়চিন্তার বাইরেও যে উপভোগ করার মতো পৃথিবী আছে, তা সে ভুলে যায়। দিনাযাপনের গ্লানি নিয়ে প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকা মানুষ ভুলে যায় তার হৃদয়ের কথা। অর্থ উপার্জন ছাড়াও যে মানুষের জীবনের অন্য অর্থ আছে, তা তার অজানাই থেকে যায়। এই প্রসঙ্গে কবি লোকটির হৃদয়ের কথা বলেছেন। অর্থের পিছনে ব্যয় হয়ে যায় অনেকখানি সময়, অথচ হাতের কাছে ছিল যে হৃদয়বৃত্তি তাকে ভুলে থাকে মানুষ। হৃদয় যে অসাধ্যসাধন করতে পারে, সে-কথা মনে করেই কবি তাকে 'আলাদিনের আশ্চার্য-প্রদীপ' বলে উল্লেখ করেছেন। আরব্য রজনীর আলাদিন তার আশ্চর্য প্রদীপের বলে নানা অসম্ভব কার্য সম্ভব করত। কবিতাতেও কবি বলতে চেয়েছেন, হৃদয়ের স্পর্শে মানবজীবনের বহু অপ্রাপ্তির বেদনা দূর করা সম্ভব হয়। এদিক দিয়ে দেখতে গেলে কবিতাটির নাম 'হৃদয়' বা ‘আলাদিনের আশ্চর্য-প্রদীপ' অনায়াসেই হতে পারত। কিন্তু এই দুটি নামের মধ্য দিয়ে মানুষের হৃদয়বৃত্তির গুরুত্ব বোঝানো সম্ভব হলেও কবিতায় উল্লিখিত মানুষটির জীবনের ব্যর্থতার দিকটি তুলে ধরা সম্ভব হত না। তাই এই কবিতার জন্য 'লোকটা জানলই না' নামকরণটিই সঠিক বলে আমার মনে হয়।
কেবলমাত্র গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তরগুলি এখানে দেয়া হলো