হরিচরণ বন্দোপাধ্যায় || অষ্টম শ্রেণীর বাংলা || হাতে-কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর || Hari charan bandopadhyay || class 8 bangla || hate karone question answer - school book solver

Thursday, 4 September 2025

হরিচরণ বন্দোপাধ্যায় || অষ্টম শ্রেণীর বাংলা || হাতে-কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর || Hari charan bandopadhyay || class 8 bangla || hate karone question answer

 


হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
লেখক - ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত
অষ্টম শ্রেণী
হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর


১. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
১.১ হীরেন্দ্রনাথ দত্ত রচিত দুটি বইয়ের নাম লেখো
উত্তর: হীরেন্দ্রনাথ দত্ত রচিত দুটি বইয়ের নাম হল 'অচেনা রবীন্দ্রনাথ' এবং শান্তিনিকেতনে একযুগ'।

১.২ কোন্ নামে তিনি সমধিক পরিচিত।
উত্তর: প্রাবন্ধিক হীরেন্দ্রনাথ দত্ত 'ইন্দ্ৰজিৎ' নামে সমধিক পরিচিত।

২. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো
২.১ শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ের প্রথম যুগে যাঁরা রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে বিদ্যালয়ের কাজে এসে যোগ দিয়েছিলেন, এমন কয়েকজনের কথা আলোচনা করো।
উত্তর: শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ের প্রথম যুগে অনেক বিশিষ্ট মানুষ রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে বিদ্যালয়ের কাজে এসে যোগ দিয়েছিলেন। এই
সকল অসাধারণ ব্যক্তিদের মধ্যে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধুশেখর শাস্ত্রী, ক্ষিতিমোহন সেন প্রমুখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় : রবীন্দ্রনাথ ‘সংস্কৃত প্রবেশ’ নামক যে পুস্তক রচনায় নিযুক্ত ছিলেন তা শেষ করেন হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। রবীন্দ্রনাথের
নির্দেশে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বঙ্গীয় শব্দকোষ' রচনা করেন। তিনি ১৩১২-১৩৩০ বঙ্গাব্দের মধ্যে এই বৃহৎ গ্রন্থের রচনাকার্য সমাপ্ত করেন।
১০৫ খণ্ডে সমাপ্ত এই অভিধান ছাপানোর কাজ শেষ হওয়ার আগেই এই গ্রন্থের ‘প্রেরণাদাতা’ রবীন্দ্রনাথ মারা যান। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় এই
'বঙ্গীয় শব্দকোষ' লেখার জন্য জীবনের চল্লিশ বছর কাটিয়েছেন। তাই “হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালিজাতির সম্মুখে এক অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।”
তিনি বিশ্বভারতী থেকে ‘দেশিকোত্তম' উপাধি লাভ করেন।
বিধুশেখর শাস্ত্রী: সংস্কৃত ভাষার একজন প্রখ্যাত পণ্ডিত ও শাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তি শ্রীবিধুশেখর শাস্ত্রী মহাশয় মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামে ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের ১০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। টোলে সংস্কৃত শিক্ষা সমাপ্ত করে মাত্র সতেরো বছর বয়সে তিনি 'কাব্যতীর্থ' উপাধি লাভ করেন। এরপর উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য কাশীতে গিয়ে তিনি সপ্ত মহামহোপাধ্যায়ের সান্নিধ্য লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্রকে সংস্কৃত শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে বিধুশেখর প্রথম শান্তিনিকেতনে আসেন। সেখানে তাঁর পাণ্ডিত্য রবীন্দ্রনাথকে মুগ্ধ করে। রবীন্দ্রনাথের নির্দেশেই তিনি পালি ভাষার প্রথম
ব্যাকরণ গ্রন্থ 'পালি প্রকাশ' রচনা করেন। এরপর রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করলে এর প্রধান রূপকার হন বিধুশেখর। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দের ৪
এপ্রিল তাঁর জীবনাবসান হয়।
ক্ষিতিমোহন সেন: ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দের ২ ডিসেম্বর কাশীতে জন্মগ্রহণ করেন বাংলা ভাষার বিশিষ্ট গবেষক ক্ষিতিমোহন সেন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে
রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে বিশ্বভারতীর রত্নচর্যাশ্রমে যোগ দেন তিনি। বিশ্বভারতী বিদ্যাভবনের অধ্যক্ষরূপেই তাঁর কর্মজীবন শেষ হয়। কিছুদিনের জন্য বিশ্বভারতী অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবেও কর্ম সম্পাদন করেন তিনি।
১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতীর প্রথম দেশিকোত্তম উপাধি প্রাপক তিনিই। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ ক্ষিতিমোহন সেন পরলোক গমন করেন।

২.২ “এর কৃতিত্ব অনেকাংশে শান্তিনিকেতনের প্রাপ্য” – কোন কৃতিত্বের কথা বলা হয়েছে? তার বহুলাংশ শান্তিনিকেতনের প্রাপ্য' বলে লেখক মনে করেছেন কেন ?
উত্তর: কৃতিত্ব: প্রাবন্ধিক হীরেন্দ্রনাথ দত্ত 'হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়' প্রবন্ধে প্রশ্নোদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন। রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে সাড়া দিয়ে
শান্তিনিকেতনে বিদ্যালয় স্থাপনের প্রথম যুগে অনেক মানুষই বিদ্যালয়ের কাজে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে দু একজন অসাধারণ হলেও এমন অনেকেই ছিলেন বিদ্যাবুদ্ধিতে যাঁদের সমকক্ষ লোকের অভাব তখন ছিল না। কিন্তু তাঁদের নিষ্ঠা ও মনঃসংযোগের পুণে তাঁরা অসাধারণ হয়ে উঠেছিলেন। আলোচ্য অংশে তথাকথিত সাধারণ মানুষেরও সাধনার শক্তিতে অসাধারণ হয়ে ওঠার কৃতিত্বের কথাই বলা হয়েছে।
'শান্তিনিকেতনের প্রাপ্য' বলে মনে করার কারণ: আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে শান্তিনিকেতনের দান অপরিসীম। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই প্রথম
আমাদের দেশকে শিখিয়েছে যে বিদ্যালয় বিদ্যাদানের স্থান ছাড়াও বিদ্যাচর্চা, বিদ্যা-বিকিরণের স্থান। বিদ্যার্জনের পথ সহজ করে শিক্ষার্থীর মানসিকতা ও চিন্তাধারার সার্বিক বিকাশ ঘটানোই ছিল শান্তিনিকেতনের একমাত্র উদ্দেশ্য। রবীন্দ্রনাথ নিজেও এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সেবায় তাঁর সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছিলেন। তাই এই প্রতিষ্ঠানের সংস্পর্শে এসে অনেকেই তাঁদের সাধারণত্বের গণ্ডি পেরিয়ে অসাধারণ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন।
শান্তিনিকেতনের জীবনই শান্তিনিকেতনের শিক্ষা। তাই শান্তিনিকেতন নিজ হাতে অনেক অসাধারণ ব্যক্তির জন্ম দিয়েছে। সেক্ষেত্রে তাঁদের কৃতিত্বের
অনেকখানিই শান্তিনিকেতনের প্রাপ্য।

২.৩ “আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে শান্তিনিকেতনের দান অপরিসীম।”
লেখক এ প্রসঙ্গে শান্তিনিকেতনের কোন্ কোন্ গুরুত্বপূর্ণ অবদানের উল্লেখ করেছেন ?

উত্তর: হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কীর্তি নিয়ে প্রবন্ধ রচনা করার সুবাদে প্রাবন্ধিক হীরেন্দ্রনাথ দত্ত অনিবার্যভাবেই শান্তিনিকেতনের প্রসঙ্গ এনেছেন। বিদ্যাচর্চার পীঠস্থান: শিক্ষাক্ষেত্রে শান্তিনিকেতনের অবদান অপরিসীম মনে করার কারণ হল এই যে, শান্তিনিকেতনই দেশকে প্রথম
এই বার্তা দিয়েছে, বিদ্যালয় কেবল বিদ্যাদানের স্থান নয়, সেটি হল বিদ্যাচর্চারও স্থান। বিদ্যার্জনের পথ সুগম যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেবল বিদ্যাচর্চায় নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখে না, তা প্রকৃতপক্ষে বিদ্যা-বিকিরণের স্থান। বিদ্যাকেন্দ্রের অন্যতম প্রধান কর্তব্যই হল বিদ্যার্জনের পথ সহজ
করে দেওয়া। প্রতিভার জন্মদান: সে সময়ের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তো নয়ই, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এই কর্তব্যের কথা সেভাবে ভাবেনি। অথচ শান্তিনিকেতন শুরু থেকেই এই ভাবনাকে কার্যকরী করে সমগ্র বিশ্বের কাছে একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছিল। শান্তিনিকেতনেই সাধারণ মানুষের অসাধারণ হয়ে ওঠার ভিত তৈরি হয়েছিল।
২.৪ “আপাতদৃষ্টিতে যে মানুষ সাধারণ তাঁরও প্রচ্ছন্ন সম্ভাবনা রবীন্দ্রনাথের সর্বদর্শী দৃষ্টিকে এড়াতে পারেনি।”—লেখক এ প্রসঙ্গে কাদের কথা স্মরণ করেছেন? জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় তাঁদের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর: স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব: হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়' প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক হীরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রশ্নোদ্ধৃত মন্তব্যটি করার সময় হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়,
বিধুশেখর শাস্ত্রী, ক্ষিতিমোহন সেন প্রমুখের কথা স্মরণ করেছেন।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় উদ্দিষ্ট ব্যাধিদের অবদান:- রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং শান্তিনিকেতনের সেবায় তাঁর সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন। সেই জোর থেকেই তিনি যাঁদের শান্তিনিকেতন গড়ে তোলার কাজে আহ্বান জানিয়েছিলেন, তাদের কাছেও উৎসাহ ও সততার সঙ্গে কাজ করার দাবি জানাতে পেরেছিলেন। নিধারণ এক জমিদারি সেরেস্তার কর্মচারীকে অর্থাৎ হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও তিনি অধ্যাপনার কাজে নিয়োগ করেন। তাকে রবীন্দ্রনাথ বাংলা ভাষার বৃহত্তম অভিধান সংকলনের ভার দিয়েছিলেন।
বিষুশেখর শাস্ত্রী মহাশয় ছিলেন ইংরেজি ভাষার অনভিজ্ঞ একজন টোলের পন্ডিত। তিনি রবীন্দ্রনাথের সহযোগিতায় বহুভাষাবিদ পণ্ডিত হয়ে উঠেছিলেন। তিনি ভারতীয় পণ্ডিতসনাকে প্রথম সারির মানুষদের মধ্যে অন্যতম। সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত ক্ষিতিমোহন সেনের কথাও প্রাবন্ধিক
প্রসঙ্গে স্মরণ করেছেন কবিগুরুর সংস্পর্শে এসে তাঁর জীবন জিজ্ঞাসার উদ্দেশ্যই বদলে গিয়েছিল। রবীন্দ্রনাথের প্রেরণায় এবং উৎসাহে ন্যযুগীয় সাধুসন্তদের বাণী সংগ্রহ করে তিনি ভারতীয় জীবনসাধনার এ বিস্মৃতপ্রায় অধ্যায়কে নতুনভাবে পরিবেশন করতে পেরেছিলেন।

২.৫ “এঁরা প্রাণপণে সেই দাবি পূরণ করেছেন।”—কাদের কথা বলা হয়েছে? কী-ই বা সেই দাবি? সেই দাবিপূরণে প্রাণপণে তাদের নিয়োজিত হওয়ারই-বা কারণ কী বলে তোমার মনে হয়?
উত্তর: উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠার প্রথম যুগে রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে যাঁরা সেখানে কাজ করতে গিয়েছিলেন, সেই কর্ম অধ্যাপকদের কথাই এখানে বলা হয়েছে।
উল্লিখিত দাবি: আপাতদৃষ্টিতে নগণ্য ও সাধারণ মানুষের ভেতরে লুকিয়ে থাকা সম্ভাবনা প্রকাশের কথাই এখানে উঠে এসেছে। রবীন্দ্রনাথ যেমন তাঁর সর্বস্ব শান্তিনিকেতনকেই দিয়েছিলেন তেমনই তিনি সেখানে এনেছিলেন, তাঁদের কাছেও নিঃসংকোচে সেই দাবিই পেশ করেছিলেন এবং কেউই তাঁকে হতাশ করেননি।
দাবিপূরণে প্রাণপণে নিয়োজিত হওয়ার কারণ: শান্তিনিকেতনে বিদ্যাচর্চা এবং বিদ্যা-বিকিরণের স্বর্গীয় পরিবেশ খুঁজে পেয়ে, বিশেষতঃ রবীন্দ্রনাথের প্রত্যক্ষ সান্নিধ্য, সাহায্য, উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণায় উদ্‌বুদ্ধ হয়েছিলেন। এঁদের প্রত্যেকেই নিজেদের সাহাসীনাকে ছাপিয়ে গিয়ে সারস্বত সাধনায় নিজেদের প্রাণপণে নিয়োজিত করেছিলেন।


২.৬ শান্তিনিকেতনের সঙ্গে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক কীভাবে গড়ে উঠেছিল? প্রবন্ধ অনুসরণে তাঁর সারাজীবনব্যাপী সারস্বত-
সাধনার পরিচয় দাও।

উত্তর: শান্তিনিকেতনের সঙ্গে হরিচরণ বন্দোপাধ্যায়ের সম্পর্ক, রবীন্দ্রনাথ জমিদারি পরিদর্শনে গিয়ে আমিনের সেরেস্তায় নিযুক্ত হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্কৃত জ্ঞানের পরিচয় পান। ১৩০১ বঙ্গাব্দে রবীন্দ্রনাথ অধ্যাপকরূপে তাঁকে শান্তিনিকেতনে নিয়ে আসেন। এভাবেই শান্তিনিকেতনের সঙ্গে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগাযোগ গড়ে ওঠে।
সারস্বত-সাধনার পরিচয়:- হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় শান্তিনিকেতনে কাজে যোগ দিলেই রবীন্দ্রনাথ তাঁকে তাঁর সংস্কৃত প্রবেশ প্রশ্নটি সম্পূর্ণ
করার দায়িত্ব দেন। সেই গ্রন্থ শেষ করার পর ১৩১২ বঙ্গাব্দে হারিচেনা বৃহত্তম বাংলা অভিধান 'বলীর শব্দকোষ' সংকলনের কাজ শুরু করেন। ১৩৫২ বলাকে সেই বই ছাপানোর কাজ সমাপ্ত হয়। সম্পূর্ণ একার চেষ্টা এই রোকন ও সম্পাদনার কাজে তাঁর অসাধারণ নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের পরিচয় পাওয়া যায় আজীবন সাহিত্যসাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সরোজিনী বসু স্বর্ণক, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের 'দেশিকোত্তম' উপাধি (ডিলিট) লাভ করেন।
২.৭  রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যের পরিচয় প্রবন্ধটিতে কীভাবে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে আলোচনা করো।
উত্তর: ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত দত্ত রচিত ' হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়' প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে হরিজন বন্দ্যোপাধ্যায় হরিণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পরিচয় পাওয়া যায়।
সংস্কৃত জ্ঞান:; জমিদারি মহল্লা সংস্কৃতরা পরিদর্শনে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্কৃত জ্ঞান সম্পর্কে জানতে পারেন। কবিগুরু সেদিনই তার মধ্যেকার সুপ্ত সম্ভাবনাটি চিনতে পেরেছিলেন। সে কারণে অতি অল্পদিনের মধ্যেই তিনি তাঁকে শান্তিনিকেতনে ভেঙে নিয়ে এক বিশাল কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। নিজের পরিকল্পিত ও বদ্ধ সমাপ্ত
'সংস্কৃত প্রবেশ' গ্রন্থটি পরিসমাপ্তির দায়িত্ব তিনি তিনি হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় কে দেন।
বর্গীয় শব্দকোষ সংকলন: রবীন্দ্রনাথের নির্দেশে হরিচরণ বাংলা ভাষার বৃহত্তম অভিধান 'বলীয় শব্দকোষ' সংকলনের কাজ শুরু করেন।
এই গ্রন্থ দীর্ঘ চল্লিশ বছরের সাধনায় শেষ হয়। রবীন্দ্রনাথের নির্দেশ 
তাঁর কাছে দেবতার আশীর্বাদের মতো ছিল। তিনি তা মাথা নত ওরে গ্রহণ করেছিলেন। অর্থকষ্টের দরুন হরিচরণের কলকাতায় ফিরে যাওয়া, অভিধান সংকলনের কাজ বন্ধ হয়ে থাকা কবিকেও দুঃখিত করেছিল। মূলত রবীন্দ্রনাথের আবেদনে বিদ্যোৎসাহী মহারাজ মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী অভিধানয রচনায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। মহারাজ মণীন্দ্রচন্দ্র হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য মাসিক পঞ্চাশ টাকা বৃত্তি ধার্য করেছিলেন। সংকলনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ তেরো বছর তিনি এই বৃত্তি পেয়েছিলেন। অভিধান মুদ্রণের কাজ শুরু হওয়ার আগে মণীন্দ্রচন্দ্র এবং ১০৫ খণ্ডে সমাপ্ত সমগ্র অভিধানের মুদ্রণ শেষ হওয়ার আগে রবীন্দ্রনাথ পরলোক গমন করেন।

২.৮ “একক চেষ্টায় এরূপ বিরাট কাজের দৃষ্টান্ত বিরল।”—কোন কাজের কথা বলা হয়েছে? একে 'বিরাট কাজ' বলার কারণ কী?
উত্তর: উল্লিখিত কাজ: প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি হীরেন্দ্রনাথ দত্ত রচিত ‘হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়' শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। উদ্ধৃত অংশে
কাজ বলতে 'বঙ্গীয় শব্দকোষ' সংকলনের মতো 'বিরাট' কাজের কথা বোঝানো হয়েছে।
'বিরাট কাজ' বলার কারণ: বঙ্গীয় শব্দকোষ -টির সংকলক হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় যখন সংকলনের কাজ শুরু করেন তখন তাঁর বহুস
৩৭/৩৮ বছর। ১৩১২ বঙ্গাব্দ থেকে শুরু করে জীবনের চল্লিশটি বছর অর্থাৎ ১৩৫২ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত এই কাজই এককভাবে তাঁর খান, জ্ঞান ছিল। এটিই বাংলা ভাষার বৃহত্তম অভিযান। প্রথমে এই অভিযানটি ১০৫ হতে মুদ্রিত হয়েছিল। ১৩৩০ বঙ্গাব্দে পান্ডুলিপির কাজ সমাপ্ত হলেও তার পরে প্রায় দশ বছর অভিধানটিতে নানান পরিবর্তন-সংশোধনের কাজ চলেছি।
সংকলক সম্পূর্ণ একা হাতে সংকলিত এই অভিধানটিতে বাংলা এবং সংস্কৃত সাহিত্য থেকে গৃহীত প্রত্যেক শব্দের নানারকম প্রয়োগের দৃষ্টত
উল্লেখ করেছেন। বহু বিদ্যানুরাগী বিশিষ্ট মানুষের উদার সহযোগিতায় ১৩৫২ বলাব্দে অভিধানটির ছাপানোর কাজ শেষ হয়। এই সমস্ত দিক বিবেচনা করেই প্রাবন্ধিক প্রচেষ্টাটিকে 'বিরাট' আখ্যা দিয়েছেন।

২.৯  “হরিচরণবাবুকে দেখে তাঁর সম্পর্কিত শ্লোকটি আমার মনে পড়ে যেত”- শ্লোকটি কার লেখা? শ্লোকটি উদ্ধৃত করো।
উত্তর: শ্লোকের রচয়িতা, হীরেন্দ্রনাথ দত্ত রচিত হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে উদ্ধৃত আলোচ্য অংশে রবীন্দ্রনাথের দাদা বিজেন্দ্রনাথ
ঠাকুর রচিত একটি শ্লোকের কথা বলা হয়েছে।
* শ্লোক: শ্লোকটি হল একটি চৌপদী অর্থাৎ চার লাইনে লেখা।
“কোথা গো ডুব মেরে রয়েছ তলে
হরিচরণ। কোন পরতে ?
বুঝেছি। শব্দ-অবধি-জলে
মুঠাচ্ছে খুব অরথে!"

২.১০ হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় সংকলিত অভিধানটির নাম কী? গ্রন্থটির রচনা, মুদ্রণ ও প্রকাশনার ক্ষেত্রে নানাবিধ ঘটনার প্রসঙ্গ প্রাবন্ধিক কীভাবে স্মরণ করেছেন?
উত্তর: সংকলিত অভিধানের নাম: হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় সংকলিত অভিধানটির নাম 'বঙ্গীয় শব্দকোষ।
নানাবিধ ঘটনার প্রসঙ্গ স্মরণ: রবীন্দ্রনাথের আগ্রহে ১৩১২ বঙ্গাব্দে বাংলা ভাষার বৃহত্তম অভিধানটি সংকলনের কাজ শুরু হয়। ১৩৩০ বঙ্গাব্দে পাণ্ডুলিপি নির্মাণের কাজ শেষ হলেও পরবর্তী দশ বছর ধরে তাতে নানা পরিবর্তন-পরিবর্ধন ঘটে। অবশেষে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ছোটো ছোটো খন্ডে গ্রন্থটি প্রকাশের উদ্যোগ নেন। পণ্ডিত নগেন্দ্রনাথ বসু গ্রন্থটির মুদ্রণ বিষয়ে উদ্যোগী হরেছিলেন। শান্তিনিকেতনের অগণিত প্রাক্তন ছাত্র ও অসংখ্য শিক্ষিত অনুরাগী ব্যাক্তি এই অভিধানের নিয়মিত গ্রাহক হয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। সংকলনটির ক্ষেত্রে যাঁর অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, সেই ব্যক্তি অর্থাৎ মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী অভিধানটির মুদ্রণ আরম্ভ হওয়ার আগেই পরলোক গমন করেন। ১০৫ বন্ডে সমাপ্ত এই অভিধানের ছাপানোর কাজ শেষ হওয়ার আগে রবীন্দ্রনাথও মারা যান।

২.১১ প্রাবন্ধিকের সঙ্গে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত স্মৃতির প্রসঙ্গ প্রবন্ধে কীরূপ অনন্যতার স্বাদ এনে দিয়েছে তা আলোচনা করো
উত্তর: প্রবদিত হীরেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়' প্রবন্ধে জানিয়েছেন, তিনি যখন শান্তিনিকেতনে যোগ দেন তখন হরিচরণবাবু অবসর গ্রহণ করেছেন । কিন্তু তবুও গ্রন্থাগারের একটি ছোটো কুঠুরিতে প্রাবন্ধিক তাকে নিবিষ্ট মনে কাজ করতে দেখেছিলেন। কারণ তখনও অভিধান স্বপনের কাজ শেষ হয়নি। হরিচরণবাবুর স্মৃতি প্রসঙ্গে দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্লোকটি যে যথার্থ ছিল তাও স্মরণ করেছেন প্রাবন্ধিক। মনোযোগ সহকারে শব্দের সমুদ্র থেকে মুঠো মুঠো অর্থ কুড়োনোর প্রসঙ্গেই হরিচরণের ধ্যান ও নিষ্ঠা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অভিধান ছাপানোর কাজ শেষ হওয়ার পরও প্রাবন্ধিকের সঙ্গে তার পথে দেখা হতো।
চোখে কম দেখার ফলে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তখন সব সময় লোকজন চিনতে পারতেন না। কখন ও চিনতে পারলেও কুশল বার্তা জিজ্ঞাসা করতেন। যতদিন  বেঁচেছিলেন তাঁর মস্তিষ্কের শক্তি অটুট ছিল। তিনি জীবনের চল্লিশ বছর গভীর নিষ্ঠার সঙ্গে অভিধান রচনার কাজে নিযুক্ত ছিলেন। তাঁর মনোযোগ এবং কাজের প্রতি নিষ্ঠা সকল বাঙালির সামনে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। অভিধান ছাপানোর কাজ শেষ হওয়ার পরেও প্রাবন্ধিকের মনে হত হরিচরণবাবু ক্লান্ড
হননি। বরং তাঁকে খুশি মনের মানুষই মনে হত। ব্যক্তিগতভাবে ওই মহান মানুষটির গভীর সংস্পর্শে না এলেও তাঁর নিষ্ঠা, বিদ্যাচর্চা, নিরলস পরিশ্রম প্রাবন্ধিকের ব্যক্তিজীবনকে গভীরভাবে সমৃদ্ধ ও প্রভাবিত করেছিল।

২.১২ “তিনি অভিধান ছাড়াও কয়েকখানা গ্রন্থ রচনা করে গিয়েছেন।”—হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত অন্যান্য কয়েকটি গ্রন্থের নাম ও বিষয়বস্তুর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তর: বাংলার বৃহত্তম অভিধান 'বঙ্গীয় শব্দকোষ' সংকলন করা ছাড়াও হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথের অসমাপ্ত কাজ ‘সংস্কৃত প্রবেশ' গ্রন্থটি সমাপ্ত করেন। সংস্কৃত শেখার সহজ পদ্ধতি আবিষ্কারই ছিল সেই পুস্তকটির উদ্দেশ্য। গ্রন্থটি তিন খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছিল। তাঁর রচিত
অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘কবির কথা’, ‘রবীন্দ্র প্রসঙ্গ' প্রভৃতি। এ ছাড়াও তিনি ম্যাথু আর্নল্ডের ‘শোরাব রোস্তম’ ‘বশিষ্ট বিশ্বামিত্র’, ‘কবিকথা
মঞ্জুষা' প্রভৃতি গ্রন্থ অমিত্রাক্ষর ছন্দে অনুবাদ করেন। তাঁর লেখা ছাত্রপাঠ্য গ্রন্থগুলির মধ্যে 'সংস্কৃত প্রবেশ’, ‘পালি প্রবেশ’, ‘ব্যাকরণ কৌমুদী’, ‘Hints of Sanskrit Translation and Composition' ব্যাকরণ বিষয়ে আলোচনার
জন্য বিখ্যাত। 'রবীন্দ্রনাথের কথা' বইটি রবীন্দ্রনাথের জীবনের অনেক অজানা তথ্য পাঠকমহলের কাছে তুলে ধরেছে।

২,১৩ হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি প্রাবন্ধিক হীরেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর অনুরাগ কীভাবে ব্যক্ত করেছেন, তা বিশদভাবে আলোচনা করো।
উত্তর: 'বঙ্গীয় শব্দকোষ' অভিধান-সংকলনের জন্য হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় স্মরণীয় হয়ে আছেন। শান্তিনিকেতনে কর্মসূত্রে প্রাবন্ধিক তাঁকে অত্যন্ত কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য লাভ করেন। তাঁর সম্পর্কে জানার আগ্রহই সেই মানুষটির প্রতি প্রবন্ধকের শ্রদ্ধাবোধ জাগিয়ে তুলেছে। তিনি
গ্রন্থাগারের ছোটো একটি কুঠুরিতে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিবিষ্টমনে কাজ করতে দেখেছেন। তখনও 'বঙ্গীয় শব্দকোষ'-এর ছাপানোর কাজ সমাপ্ত হয়নি। কাজ যখন সমাপ্ত হয়েছে, তখন প্রাবন্ধিকের সঙ্গে দেখা হলে এবং চিনতে পারলে তিনি কুশলবার্তা জিজ্ঞাসা করতেন। দীর্ঘ চল্লিশ বছরের সাধনায় তিনি যে মহাগ্রন্থের সংকলন করেছেন, সেই কাজটি শেষ হওয়ার পর তাঁকে দেখে প্রাবন্ধিকের প্রসন্নচিত্তই মনে হয়েছে। প্রাবন্ধিক একজন সাধকের মনের প্রশান্তির প্রতিফলন হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে স্পষ্ট দেখতে পেতেন। সেই মানুষটিকেই প্রাবন্ধিক আলোচ্য প্রবন্ধে পরম শ্রদ্ধার
সঙ্গে স্মরণ করে অন্তরের গভীর অনুরাগ প্রকাশ করেছেন।
শেষ-