চিন্তাশীল নাটক || সপ্তম শ্রেণী ||হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর || chinta shil || class 7 || question answer
![]() |
সপ্তম শ্রেণীর
বাংলা সাহিত্য
নাটক : চিন্তাশীল
নাট্যকার : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রচনা পরিচয় ঃ নরহরি চিন্তাশীল লোক। সবকিছু সে দারুণ ভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে তবেই গ্রহণ করে। সারাদিন সে বিচার-বিশ্লেষণ করে। তার বিচারের ঠ্যালায় তার বাড়ির লোক অস্থির। তাই নাটিকাটির নাম “চিন্তাশীল” একেবারে সঠিক। চিন্তাশীল নাটিকাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'হাস্যকৌতুক' গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
সারসংক্ষেপ : নরহরি চিন্তাশীল লোক। সে সারাদিন খালি চিত্তা করে। তাকে তার মা খেতে দিয়েছে। খাওয়ার দিকে তবে কোনো নজর নেই। তার ভাত থালাতেই পড়ে থাকে। তাকে মা, মাসিমা, দিদিমা সবাই বলে বলে খাওয়াতে ব্যর্থ হয়। তার মা তার ভাগ্নেকে তার কোলে এনে দেয় তার চিত্তামগ্নতা ভাঙানোর জন্য। সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। কেবল তার মায়ের কাশী গিয়ে থাকার ব্যাপারে সে একেবারেই রাজি হয়ে যায়। কিন্তু কাশীতে তার মায়ের মাসোহারা দেওয়ার।বারেও সে আবার চিন্তামগ্ন হয়ে পড়ে।
শব্দার্থ : নিমগ্ন—ডুব দেওয়া।
ব্যামো—অসুখ।
ধাতু—ক্রিয়াবাচক প্রকৃতি বা শব্দমূল (এখানে)। রোমাঞ্জিত- শিহরিত।
বন্ধ—বাঁধা।
আমোদ-আহ্লাদ।
দণ্ডবৎ প্রণাম।
নিতান্ত—খুব।
রোসো—অপেক্ষা করো।
চিন্তাশীল—তবুক।
সুশীলা—সংস্বভাবযুক্তা নারী।
অন্তঃকরণ—হৃদয়, মন।
বিপরীত শব্দ : ধাতু—অধাতু।
লক্ষ্মী—অলক্ষ্মী।
পরিবর্তন—অপরিবর্তন।
ভবিষ্যৎ— অতীত।
বৃহৎ—ক্ষুদ্র।
যৌবন—বার্ধক্য।
শিক্ষা—অশিক্ষা।
হাতে-কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর
১. একই অর্থযুক্ত শব্দ নাটক থেকে খুঁজে বের করে লেখো : - মক্ষিকা, হাজির, অস্থির, ব্যবস্থা, ঢাকা বা আবৃত।
উঃ। মক্ষিকা > মাছি।
হাজির > উপস্থিত।
অস্থির > চঞ্চল।
ব্যবস্থা > বন্দোবস্ত।
ঢাকা বা আবৃত > বন্ধ।
২. শূন্যস্থান পূরণ করো :
উত্তর-:
বিশেষ্য > বিশেষণ
আদর > আদুরে
ভাত > ভেতো
শোক > শোকগ্রস্ত
প্রমাণ > প্রামাণ্য
নির্ভর > নির্ভরতা
আমোদ > আমুদে
৩. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
৩.১ কথাটা বড়ো সামান্য নয়'—বক্তা কে? কার কোন্ কথাটা সামান্য নয় ?
উঃ। বক্তা নরহরি।
নরহরি তার মাকে 'বাছা' শব্দের ধাতু কী জিজ্ঞেস করায় তার মা উত্তর দিতে পারলেন না। তখন নরহরি তার উত্তর নিজে দিল 'বাছা' শব্দের ধাতু রূপ 'বস'। দু-হাজার বছর আগে বাছাকে বৎস বলা হত । এই কথাটা বোঝাতে গিয়েই সে মাকে বলেছিল কথাটা বড়ো সামান্য নয়।
৩.২. 'এইসব বাজে ভাবনা নিয়ে থাকা ভালো?' – কে, কাকে এই কথা বলেছে? কোন্ ভাবনাকে বাজে বলা হয়েছে? তা কি সত্যিই 'বাজে ভাবনা' ? তোমার কি মনে হয় ?
উঃ। নরহরির মা নরহরিকে এই কথা বলেছে। এই যে বাছা থেকে বৎস এবং লক্ষ্মী শব্দের ব্যবহার। দু-হাজার বছর আগে বাছাকে বৎস বলা হত। এককালে লক্ষ্মী বলতে দেবী বিশেষকে বোঝাত। পরে লক্ষ্মীর গুণ অনুসারে সুশীলা স্ত্রীলোককে লক্ষ্মী বলা হত। কালক্রমে পুরুষের প্রতিও লক্ষ্মী শব্দের প্রয়োগ হচ্ছে, এই ভাবনাগুলিকে নরহরির মা বাজে ভাবনা বলেছেন।। ন,এই কাজগুলো বাজে ভাবনা নয়। এই যে ভাষার পরিবর্তন তা অবশ্যই ভাববার বিষয়। কিন্তু এই ভাবনা উপস্থিত কাজ ও উপস্থিত ভাবনাকে ছেড়ে কখনোই বাস্তবসম্মত নয়।
৩.৩ 'আমাদের কথা শুনলেই এর শোক উপস্থিত হয় না, এই ভাবনা নয়। এই যে ভাষার পরিবর্তন তা অবশ্যই ভাববার বিষয়। কিন্তু এই ভাবনা -বক্তা কে? তার কোন কথায় নরহরি শোকগ্রস্ত হয়ে পড়েছে?
উঃ। বস্তা নরহরির মাসিমা এই কথা বলেছেন।
নরহরি ভাষার এই পরিবর্তন দেখে চিন্তার ছেঁড়া চাদর ও এক পাতি নিয়ে বসে আছে। তখন তার মাসিনা এসে তাকে দেখে বললেন যে নরহরিকে দেখে সুবলের মা হেসেই কুবৃক্ষের হবেন। তখন তার কথা শুনে নরহরি শোকগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
কারণ নরহরি মনে করেন। কুরুক্ষের আনাসের আর্য গৌরবের শ্মশানক্ষেত্র। কুরুক্ষেত্রের কথা ভাবলে আমাদের মন রোমাঞ্চিত হয়। দুঃখে অধীর হয়ে ওঠে। সেখানে হানি পাওয়া উচিত নয়। তাই হাসার বদলে কেঁদে কুরুক্ষেত্র হলেই ভালো হত
৩.৪ 'রোসো', আমি তোমাকে প্রমাণ করে দিচ্ছি নরহরি কার কাছে কী প্রমাণ করে দিতে চেয়েছে?
উঃ নরহরির দিদিমা বলেন তার ভাত জড়িয়ে গিয়ে তাতে নাহি ভনভন করছে। এতে নরহরি দিদিমার ভুল ধরিয়ে বলে এটা উলটো কথা হল কারণ মাহি নিজে কখনো ভনভন করে না। মাছির ডানা থেকেই এইরকম শব্দ হয়। এই।কথাটি নরহরি দিদিমার কাছে প্রমাণ করে দিতে চেয়েছিল।
৩.৫ আদর করবি, তাতেও ভাবতে হবে নরু?' –এর প্রত্যুত্তরে নরু মাকে কী কী বলেছিল ?
উঃ। নরু মাকে বলেছিল ছেলেবেলাকার আদরের উপরে একটি ছেলের সমস্ত ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। ছেলেবেলাকার এক-একটা ঘটনার ছাত্রা বৃহৎ আকার ধরে আমাদের সমস্ত যৌবনকালকে, আমাদের সমস্ত জীবনকে আচ্ছন্ন করে রাখে। তাই ছেলেকে আদর করাটা সামান্য কাজ নয়, সেখানে অনেক কিছু ভাবনা চিন্তা করতে হয়।
৩.৬ ‘তোমার ইচ্ছে হয়েছে, আমি বাধা দেব না।- কে কাকে বাধা দিতে চায়নি ?
উঃ। নরহরি তার মাকে বাধা দিতে চায়নি।
৩.৭ 'এটাতে বড়ো বেশি ভাবতে হল না' কার স্বগতোক্তি? কাকে বেশি ভাবতে হল না? কেন?
উঃ। নরহরির মার স্বগোক্তি নরহরিকে ভাবতে হল না। নরহরির মা কাশী যেতে চাইলেন। মার ইচ্ছে হয়েছে। নরহরি বাধা দেবে না। মার সকল কথাতেই নরহরি অস্থির হয়ে পড়ে। কিন্তু এই ইচ্ছেটা মার তাই নরহরির বেশি ভাবতে হল না। মার ইচ্ছেই তার ইচ্ছে।
৪. চিন্তাশীল নরহরি সবার সব কথাতেই চিন্তামগ্ন হয়ে পড়ে, অথচ মায়ের কাশীবাসী হওয়ার ইচ্ছা হয়েছে শুনে তখনই সে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু তার মা যেই টাকার বন্দোবস্ত করতে বলেন, সে আবার ভাবতে বসে। এ থেকে নরহরি চরিত্রটি সম্পর্কে তোমার কেমন ধারণা হল?
উঃ। নরহরি একজন চিন্তাশীল মানুষ। সে সারাদিন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তা করে। ভাষার পরিবর্তন, সূর্য স্থির ও পৃথিবী ঘুরছে, মাছি ভনভন করে না, মাছির ডানা আছে তাই ভন ভন শব্দ হয় ইত্যাদি। কিন্তু মায়ের কাশীবাসী।হওয়ার ইচ্ছা হয়েছে শুনে তখনই সে রাজি হয়ে যায়। তার মা যেই টাকার বন্দোবস্ত করতে বলেন, তখন সে আবার ভাবতে বসে। তার ভাবনাই সার,আসল কাজের সময় তাকে পাওয়া যায় না। জীবনে যা প্রয়োজন, যা দরকার তা নিয়ে না ভেবে কতগুলো অদরকারি কথা নিয়ে সে সারাদিন চিন্তাভাবনা করে। এ থেকে নরহরি চরিত্রটি সম্পর্কে মনে হয় যে সে শুধু অদরকারি চিত্তা নিয়েই জীবন কাটিয়ে দেয়। দরকারি জিনিসের বা জীবনে যা দরকার তা নিয়ে তার কোনো ভাবনাচিন্তা নেই।
৫. ঠিক বানানটি বেছে নিয়ে লেখো :
ব্যমো/ব্যামো, পরিবর্তন/পরিবর্তন, ব্যাস্ত/ব্যস্ত, লক্ষ্মী/লক্ষী, প্রমান/প্রমাণ, মুখস্থ / মুখস্ত।
উঃ। ব্যামো, পরিবর্তন, ব্যস্ত, লক্ষ্মী, প্রমাণ, মুখস্থ।
৬. নীচের বাক্যগুলিকে বদলে চলিত রীতিতে লেখো :
৬.১ ভাত শুকাইতেছে, মা মাছি তাড়াইতেছেন।
উঃ। ভাত শুকোচ্ছে, মা মাছি তাড়াচ্ছেন।
৬.২ এ কথা নিতান্ত সহজ নয়।
উঃ। এ কথা খুব সহজ নয়।
৬.৩ নরহরির শিশু ভাগিনেয়কে কোলে করিয়া মাতার প্রবেশ।
উঃ। নরহরির শিশু ভাগ্নেকে কোলে করে মার প্রবেশ।
৬.৪ নরহরি মাথায় হাত দিয়া পুনশ্চ চিন্তায় মগ্ন।
উঃ। নরহরি মাথায় হাত দিয়ে আবার চিন্তায় মগ্ন।
৭. অর্থ লেখো : বৎস, রোসো, দণ্ডবৎ, ভাগিনেয়, বন্দোবস্ত।
উঃ। বৎস — বাছা।
রোসো - অপেক্ষা করো।
দণ্ডবৎ- প্রণাম।
ভাগিনেয়- ভাগ্নে।
বন্দোবস্ত - ব্যবস্থা।
৮. সমার্থক শব্দ লেখো: পৃথিবী, সূর্য, গ্রীলোক, মা।
পৃথিবী- ধরা, ধরিত্রী, বসুন্ধরা।
স্ত্রীলোক - নানী, রমনী, বালা ,
সূর্য- রবি, ভানু, তপন, ভাস্কর।
মা – জননী, গর্ভধারিণী, মাতা, অঙ্গা।
৯. নাটক থেকে পাঁচটি নির্দেশক ও অনির্দেশক শব্দ খুঁজে নিয়ে লেখো।
নির্দেশক শব্দ:-
গোল, যৌবনকাল, সমস্ত জীবন, চিরকাল, ছেলেবেলাকার ।
অনির্দেশক শব্দ:-
সামান্য, এককালে, কালক্রমে, কত, কিছু।
১০. 'বাছা' শব্দটি কোন্ ধাতুনিষ্পন্ন শব্দ? ‘বাছা' শব্দের দুটি প্রতিশব্দ লেখো।
উঃ। বৎস। বৎস, শিশু।
১১. ‘দাড়ি' শব্দের সাধুরূপটি লেখো।
উঃ। শ্মশ্রু।
১২. 'হেসেই কুরুক্ষেত্র'—শব্দবন্ধের মূল ভাবটি কী?
উঃ। শব্দবন্ধটি মূল ভাবটি হল কৌতুক।
১৩. 'গুরু' শব্দটিকে দুটি আলাদা অর্থে ব্যবহার করে বাক্যরচনা করো।
উঃ । গুরুগুরু আমাদের জীবনে সঠিক পথ দেখান।
গুরু—আমার লঘু পাপে গুরু দণ্ড হল।
১৪. সূর্য তো অস্ত যায় না'—এখানে কোন্ বৈজ্ঞানিক সত্যের আভাস দেওয়া হয়েছে?
উঃ। সূর্য স্থির এ কথা আজ সবাই জানে। পৃথিবী তার চারদিকে ঘুরছে। সূর্য উদয় হয় না অস্তও যায় না।
১৫. মাথা শব্দটি কোন্ তৎসম শব্দ থেকে এসেছে?
উঃ। ‘মস্তক'।
১৬. 'ভাত জুড়িয়ে গেল'—এখানে কথাটির অর্থ ভাত ঠান্ডা হয়ে গেল।
'জুড়িয়ে গেল' শব্দকে অন্য অর্থে প্রয়োগ করে একটি বাক্য লেখো।
উঃ। জুড়িয়ে গেল—প্রচণ্ড গরমে ঠান্ডা জল খেয়ে প্রাণটা 'জুড়িয়ে গেল'।
১৭. 'মাছি ভন ভন করছে' -“ভন ভন'-এর মতো আরও পাঁচটি ধ্বন্যাত্মক/অনুকার শব্দদ্বৈত তৈরি করো।
উঃ। ঝনঝন, টনটন, শনশন, কনকন, বনবন।
১৮. কাশী কোন্ রাজ্যে অবস্থিত? ‘কাশীর' প্রসিদ্ধির কারণ কী?
উঃ। কাশী উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে অবস্থিত। কাশী হিন্দুদের একটি পবিত্র তীর্থস্থান। এখানে বিখ্যাত বিশ্বনাথ মন্দির ও অন্নপূর্ণা মন্দির অবস্থিত।
১৯. নাটকটিতে মোট ক-টি 'দৃশ্য' রয়েছে? কোন্ কোন্ দৃশ্যে কাদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় ?
উঃ। নাটকটিতে দুটি দৃশ্য রয়েছে। প্রথম দৃশ্যে রয়েছেন মা, নরহরি, মাসিমা, দিদিমা।
দ্বিতীয় দৃশ্যে শিশু ভাগিনেয়কে কোলে মা, নরহরি।
২০. গুরুতর —এরকম শব্দের পরে 'তর' যোগ করে পাঁচটি নতুন শব্দ লেখো।
উঃ। (১) উচ্চতর। (২) ক্ষুদ্রতর। (৩) অধিকতর। (৪) জটিলতর। (৫) কঠিনতর।
২১. সন্ধিবিচ্ছেদ করো : আশ্চর্য, উপস্থিত, পুনশ্চ
উত্তর;-আঃ + চর্য= আশ্চর্য।
পুনঃ + চ = পুনশ্চ।
উপ্ + স্থিত = উপস্থিত।
২২. উচ্চারণে বিকৃত শব্দগুলির পাশাপাশি মূল শব্দগুলি লেখো : জিজ্ঞেস, ব্যামো, কও, হপ্তা, দিকি, সম্মুখে।
দিকি - দেখি।
সম্মুখে- সম্মুখে
জিজ্ঞেস- জিজ্ঞাসা
ব্যামো- ব্যায়াম (রোগ)।
কও – কওয়া।
হপ্তা-সপ্তাহ
২৩ নরহরির ভাগ্নের ডাকনামটি কী তা পাঠ থেকে খুঁজে নিয়ে লেখো।
উঃ। নরহরির ভাগের ডাকনাম জাদু।
২৪ শব্দযুগলের অর্থ পার্থক্য লেখ:-
বাঁচা- বেঁচে থাকা।
বাছা - কাউকে ডাকা।
পুরুষ- মনুষ্য অথবা লোক
পুরুষ - আত্মা
শকল - মাছের আঁশ
সকল - সবাই
পারা - পারদ
পাড়া - গ্রামের এক একটা অংশ বা পল্লী
ভাষা -কথা।
ভাষা - ভাসা ভেসে চলা।
২৫. 'মাথা' শব্দটিকে পাঁচটি ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করে বাক্যরচনা করো।
উঃ ।
(১) মাথা- তিনি যদি আমাকে কোনো শাস্তি দিতেন আমি তা মাথা পেতে নিতাম।
(২) মাথা- নকুলবাবু আমাদের গ্রামের মাথা।
(৩) মাথা- এমন কিছু করো না, যাতে লোকের কাছে আমার মাথা হেঁট হন।
(৪) মাথা- দেখতে অমন হলে কি হবে, লেখাপড়ায় ছেলেটার খুব মাথা আছে ।
(৫) মাথা- বন্ধুর বুদ্ধিতে চলতে গিয়ে সর্বস্ব খুইয়ে এখন তাঁর মাথায় হাত।
২৬. নাটকটির নামকরণ তোমার যথাযথ মনে হয়েছে কি না তা যুক্তিসহ আলোচনা করো।
উঃ। নাটকটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা। কবি এই নাটকটির নাম 'চিন্তাশীল' দিয়েছেন। 'চিন্তাশীল
চিন্তায় নিমগ্ন থাকে। তার চিন্তার জন্য ভাত শুকিয়ে যায়। তার ওপর মাছি ভনভন করে। বাচ্চা শব্দের উৎপত্তি কোথা থেকে আগে একে কি বলা হত ? এ ছাড়া মা যখন তাকে 'লক্ষ্মী আমার' এই মন্তব্য করলেন, তখন লক্ষ্মী শব্দটির কেমন পরিবা হল। 'কুরুক্ষেত্র' শব্দের সঙ্গে হাসি কথাটি মানানসই হয় না ইত্যাদি আরও অনেক কিছু তার মাথায় ঘুরে বেড়ায়। নিকিন এর বললেন সূর্য যে অস্ত যায় তার উত্তরে নরহরি তাঁকেও বুঝিয়ে দিয়েছে সূর্য স্থির পৃথিবীই উলটে ঘোরে। মাছি ভনভন করে না। মাছির ডানা থেকেই এইরকম শব্দ হয়। ব্যাকরণ অনুসারে দণ্ডবৎ করা হতে পারে না। দণ্ডবৎ হওয়া বলে। তাঁর মাকে তাকে যখন শিশু ভাগ্নেকে আদর করতে বললেন তখন সে এই নিয়েও ভাবতে বসল। কারণ সে মনে করে সে মনে করে ছেলেবেলাকার আদরের উপর ছেলের সমস্ত ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। ছেলেবেলাকার এক-একটা সামান্য পার্টনার ছায়া বৃহৎ আকার ধরে আমাদের সমস্ত যৌবন কালকে, আমাদের সমস্ত জীবনকে আচ্ছন্ন করে রাখে, এইসব বলে মাকে বুঝিয়ে দিল। সে সারাদিন বসে এইসব চিন্তা করে। তার মা যখন কাশী যেতে চাইলেন তখন সে রাজি হয়ে গেল। কিন্তু মা যখন মাসে মাসে কিছু টাকার বন্দোবস্ত করে দেবার কথা বললেন তখন সে এক সপ্তাহ ভেবে পরে বলব বলে দিল। কারণ সে শুধুই চিন্তা করে। চিন্তা যা করে তার পরিণতি কি হবে তা ভাবে না। সারাদিন কাজকর্ম না করে এইভাবে সে চিন্তা করে যায়। যাতে কোনো সঠিক কাজ হয় না। চিন্তা না-করে সেই চিন্তা কীভাবে বাস্তবায়িত করা যায় তা সে করে না। তাই তার সমস্ত চিন্তাই ব্যর্থ। তাই এই নাটকটির নাম 'চিন্তাশীল' উপযুক্ত হয়েছে।
২৭.
মূলশব্দ > আদি অর্থ > প্রচলিত অর্থ
লক্ষ্মী > দেবী বিশেষ > সুশীলা স্ত্রীলোক
অন্ন > প্রধান ভোজন দ্রব্য > ভাত
বৎস > শিশু > ছেলে
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর •
★ সূর্য অস্ত যায় না'—কী হয়?
উঃ । সূর্য অস্ত যায় না। পৃথিবীর উলটে যায় অর্থাৎ ঘুরতে থাকে।
★ দু-হাজার বছর আগে 'বাছা' কে কী বলা হত? উঃ। দু-হাজার বছর আগে বাছাকে 'বস' বলা হত।
★ 'তার চেয়ে বলো না কেন'—কী বলতে বলা হচ্ছে?
উঃ । 'কেঁদেই কুরুক্ষেত্র' কথাটি বলতে বলা হয়েছে।
★ মাছি কি ভনভন করে ? নরহরির মত কী?
উঃ। না, মাছি ভনভন করে না। নরহরির মতে মাছির ডানা থেকেই ভনভন শব্দ হয়।
★ নরহরির মতে ছোটোদের সঙ্গে কেমন কথা বলা উচিত?
উঃ। নরহরির মতে ছোটোদের সঙ্গে এমন কথা বলা উচিত যাতে তাদের আমোদ এবং শিক্ষা দুই-ই হয় করতে বলেছিল।
★ নরহরির মা কোথায় যেতে চেয়েছিলেন।
উ। নরহরির মা কাশী যেতে চেয়েছিলেন।
★ লক্ষ্মী কথাটিতে নরহরি আশ্চর্য লেগেছিল কেন ?
উত্তর : এককালে লক্ষ্মী শব্দটি দেবী বিশেষের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো। পরে লক্ষ্মীর মত গুন ও স্বভাব অনুসারে সুশীলা স্ত্রীর লোককে লক্ষী বলা হতো। এখন দেখা যাচ্ছে পুরুষদের প্রতি ও লক্ষ্মী শব্দে প্রয়োগ করা হচ্ছে। এটাই মাকে দেখিয়েছেন।
নরহরির লক্ষ্মী কথাটিতে আশ্চর্য লেগেছিল কারণ এই কথাটিতে ভাষার নানা রকম পরিবর্তন হয়ে থাকে।
★" মাছি জনজন করছে – নরহরি কীভাবে প্রমাণ করল এই কথাটা উলটো বলা হচ্ছে?
উঃ নরহরির মতে মাছি ভনভন করে না এটি উলটো কথা কারণ মাছির ডানা থেকেই এই ধরণের ভনভন শব্দ হয়।
★. ওমা এযে কাঁদতে বসল! - কে? কেন কাঁদতে বসল।'
উঃ। নরহরি হেসেই কুরুক্ষেত্রের কথা শুনে কাদতে বসল। কারণ তার মতে কুরুক্ষের আমাদের আর্যগৌরবের শ্মশান ক্ষেত্র। এর নাম করালে শরীর রোমান্বিত হয়। সেই অনুযারী হোসেই কুরুক্ষেত্র হয় না। বরং কেঁদেই কুরুক্ষেত্র হওয়া উচিত।
★ 'ওকে ভুল শিখিয়ো না'-কে কী ভুল শেখাচ্ছিলেন? কে কী বলে তা শুধরে দিলেন ?
উঃ নরহরির মা নরহরির ভাগিনের জানুকে শিখিয়েছিলেন যে তার মামাকে দণ্ডবৎ করতে। নরহরি প্রতিবাদ করে বলে এটা ভুল। কারণ ব্যাকরণ অনুসারে দন্ডবৎ করা হতে পারে না দন্ডবৎ হওয়া বলে।
★ 'আমার কাশী গিয়ে কাজ নেই। কে কাকে এই কথা বলেছেন? কেন আর তিনি কাশী যেতে চান না।
উত্তর। মা নরহরিকে এই কথা বলেছেন।
কারণ নরহরির মা কাশী যেতে চাইলে নরহরি প্রথমে এককথায় রাজি হয়ে যায়। কিন্তু যেই তার মা তাকে মাসে মাসে কিছু টাকার বন্দোবস্ত করে দেওয়ার কথা বলে তখন নরহরি বলে এটা তো নিতান্ত সহজ কথা নয়। আর কিছুদিন ভেবে নিয়ে সে এক হপ্তা পরে মাকে এ বিষয়ে জানাবে। আবার ভাবতে হবে শুনে মা ব্যস্ত হয়ে বলেন যে নরহরিকে আর ভাবতে হবে না তিনি কাশী যেতে চান না।
★ 'একটা গোল জিনিস কোথাও নেই।'- কে কাকে কথাটি বলেছিল? সে গোল জিনিস চেয়েছিল কেন? এই চাওয়াতে কে কী বলেছিলেন?
উঃ। নরহরি তার দিদিমাকে এই কথাটি বলেছিল।
নরহরি তার দিদিমাকে বোঝাতে চেয়েছিল যে সূর্য অস্ত যায় না, পৃথিবী উলটে ঘুরে যায়। এটা বোঝাতেই সে পৃথিবীর আকারের মতো একটি গোল জিনিস চেয়ে চারিদিকে খুঁজছিল।
এই গোল জিনিস চাওয়াতে বিরক্ত দিদিমা বলেছিলেন যে তোমার মাথা আর মুণ্ডু আছে তার আকারও গোল। নরহরি বলে যে তার মাথা বন্ধ ঘোরানো যায় না। এ শুনে তার দিদিমা ব্যঙ্গ করে বলেন যে শুধুমাত্র নরহরিরই মাথা যোবে না কিন্তু তার রকম দেখে পাড়াসুদ্ধ লোকের মাথা ঘুরছে।
