উন্নয়ন বনাম পরিবেশ | রচনা / unnayan banam poribesh || rachana
![]() |
রচনা
উন্নয়ন বনাম পরিবেশ
ভূমিকা:- নৃত্য সৃষ্টিশীল জগত তার নতুন নতুন সৃষ্টির উদ্ভাবনাকে জাগ্রত করছে। উন্নয়নের ধারাকে খুব দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তার ফলে পরিবেশের সুরক্ষা বলয় ভেঙে পড়ছে। বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। একদিকে উন্নয়ন অন্যদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সহজ হচ্ছে না। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রকে হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে। সুসংগঠিত পরিকল্পনার দ্বারা উন্নয়নে জয়রথকে চালিত করলে উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশের একটা মেলবন্ধন দেখা যায়। সেটা বাস্তবে সবসময় কার্যকর করা না হওয়ার জন্য পরিবেশের কাঠামো ভেঙে পড়ছে।
উন্নয়নের ধারা : বিবর্তনের পথে মানবসভ্যতা এগিয়ে চলেছে সেই সঙ্গো ঘোষিত তারা চলেছে উন্নয়নের জয়শঙ্খ। জনসংখ্যার বৃদ্ধিতে প্রয়োজন উন্নয়নের এবং সেই উন্নয়নের ফলে বাড়ে পরিবেশের অবনমন। তখনই সৃষ্টি হয় সমস্যার, যে সমস্যা আজ পৃথিবীব্যাপী। তা বলে উন্নয়নের গতিকে তো স্বপ্ন করা যায় না। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা প্রধান। সুসংগঠিত পরিকল্পনার দ্বারা উন্নয়নের এই জারণকে চালিত করতে হবে, কারণ উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশও সম্পৃক্ত। পরিবেশকে কেন্দ্র করেই উন্নয়ন সংঘটিত হয়। ব্যাপক অর্থে পরিবেশ বলতে বোঝায় প্রকৃতি, মানুষ ও জীবজন্তু। বর্তমানে সামাজিক মানসিক পরিবেশকে এক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
কৃষিতে রূপরেখ তৈরি:- কৃষি-শিল্প, বাণিজ্য সমস্ত দিকেই উন্নতির পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয়। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও বৃহত্তর পৃথিবীর সঙ্গে সামজস্য রেখেই তা করতে হয়। কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে যে, এর ফলে দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বিশাল জনসংখ্যার দেশ ভারতবর্ষ। এই দেশে খাদ্যের জোগানের জন্য কৃষির উন্নয়ন অপরিহার্য। বর্তমানে ক্রমবর্ধমান খাদ্যের জোগান রাখতে জমিকে করতে হয় বহুমসলা। ফলে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ব্যবহার, ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন প্রভৃতি দিকে নজর দিতে হবে। বায়ু, জল, মাটি দূষণকারী বস্তু সম্পর্কে সচেতন না হওয়ায় পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলেছে। ফলে সমাজে নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। জলস্তর নেমে যাওয়ায় আশঙ্কা থাকে ভূমিকম্পের।
শিল্পে রুপরেখা তৈরি :- শিল্পের উন্নতি সাথে সাথে কোন রাষ্ট্রের উন্নয়ন সম্ভব হয়। প্রয়োজনীয় শিল্প উন্নয়ন দ্বারা দেশের বেকার সমস্যা সমাধান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশ্ন থাকে। শিল্পের উন্নয়নের উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে বড়ো বড়ো কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ নদীতে পতিত হওয়ার ফলে নদী ও সমুদ্রের জল ক্রমশ দূষিত হয়ে চলেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষ ও জলজ প্রাণীরা। কলকারখানার ধোঁয়া বাতাসকে ক্রমাগত দুষিত করছে। যানবাহনের ব্যাপক ব্যবহার ও সড়ক নির্মাণের জন্য প্রতিদিন অসংখ্য বৃক্ষচ্ছেদন করা হয়। কিন্তু যেই সংখ্যায় বৃক্ষ আর লাগানো সম্ভব নয়
অন্যান্য ক্ষেত্রে রুপরেখা তৈরি ;- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বিশ্ব পরিবেশ আজ ক্ষতিগ্রস্ত। বিদ্যুৎকেন্দ্রের।উৎপাদন, পরমাণু গবেষণা সংক্রান্ত বিষয়, মহাকাশযানের উৎক্ষেপনের জন দূষণ প্রভৃতির কথা বলাই বাহুল্য। মেরু অঞ্চল ও পর্বতশৃঙ্গে নানা অভিযান ও গবেষণার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলেছে সেখানকার পরিবেশ ও জলবায়ু। তাই উন্নত মানুষের কাছে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকৃতি ফিরিয়ে দিচ্ছে সুনামি, ভূমিকম্প, বিশ্ব উয়ায়ন, ওজোনস্তর হ্রাস, অ্যাসিড বৃষ্টি প্রভৃতি ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়। বর্তমানে মানবসভ্যতার অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে গেলে উন্নয়ন অপরিহার্য। এক্ষেত্রে পরিবেশের উন্নয়ন না মানব সভ্যতার অর্থনৈতিক সংকট দূরীকরণ আগে সেই প্রশ্নও আসে।
সচেতনতা :- উন্নয়ন বজায় রেখে পরিবেশের অবনমনকে প্রতিহত করতে প্রয়োজন- ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা প্রতিরোধ, সার্বিক সচেতনতা ও সদিচ্ছার বৃদ্ধি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা।
নতুন ভাবনা:- বিভিন্ন বর্জ্য থেকে কীভাবে নতুন সম্পদ তৈরী করা যায় তার ব্যবস্থা গ্রহণ প্রভৃতি। তাই এখন করণীয় হল পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি তার যথাসম্ভব অল্প ব্যবহার ও অচিরাচরিত শক্তির ব্যবহারের পর সেই শক্তি পুনরায় নবীকরণের মাধ্যমে নতুন শক্তি সৃষ্টি করা। এতে পরিবেশও বাঁচবে আর উন্নয়নও ব্যহত হবে না। এতেই হবে হবে পৃথিবীর মঙ্গল। সেই সঙ্গে পৃথিবীর জীবকুলের অমঙ্গল হবে। তথা মানুষের মঙ্গল হবে।
উপসংহার:- সবকিছু একটি ভালো মন্দ আছে। পরিবেশের উন্নয়ন করতে গেলে যেমন একদিকে ভালো আবার অন্যদিকে খারাপ দিক আমরা দেখতে পাই। মন্দের জট কাটিয়ে যদি উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখা যায় তাহলে পরিবেশ হবে সুস্থ। সমাজ থাকবে সুস্থ। মানুষ থাকবে সুস্থ।