বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও পরিবেশ রচনা - school book solver

Tuesday, 12 August 2025

বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও পরিবেশ রচনা

 



প্রবন্ধ রচনা
বিজ্ঞানে অগ্রগতি ও পরিবেশ

ভূমিকা:- বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে  সৃষ্টির আদিলগ্নে পৃথিবী ছিল একটি গ্যাসীয় পিণ্ড। ক্রমশ ধীরে ধীরে তাপ হারিয়ে তরলে পরিণত হয়। তারপরে কঠিন হয়। উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের জন্য  অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পরিবেশের সমস্তপ্রকার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে মোকাবিলা করতে গিয়ে মানুষ তার মনের কৌতূহলবশতই একদিন পাথরে
পাথরে ঘর্ষণের মাধ্যমে আগুনের আবিষ্কার করল। এভাবেই বিজ্ঞানের আত্মপ্রকাশ ঘটল। তখন থেকেই শুরু হল মানুষের হাত ধরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পথচলা। আবার অন্যদিকে নদীতে ভেসে আসা কাঠ দেখে মানুষ কার্ড দিয়ে নৌকা বানিয়ে ফেলে। তারপর অ্যাকশন থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার জন্য চাকা তৈরি করে । প্রথমে কাঠের চাকা তৈরি করে সেটাকে আরো শক্তপক্ত করার জন্য লোহার বেড দেয়া হয়।
পৃথিবীর বক্ষজুড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল নানান বৈজ্ঞানিক সম্ভাবনা। মানুষ প্রকৃতির মধ্যে প্রচ্ছন্ন সেই সমস্ত বৈজ্ঞানিক
সূত্রের যেমন সন্ধান পেয়েছে, তেমনই প্রযুক্তির জগতেও বিচক্ষণতার দ্বারা।অসাধ্যসাধন ঘটিয়েছে। গ্যালিলিও, নিউটন, আইনস্টাইন, জগদীশচন্দ্র বসু, সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রমুখের মতো অসামান্য প্রতিভাধর বৈজ্ঞানিকদের উদ্ভাবনী কৌশল এবং মৌলিকতার জোরে মানুষ মেধা ও মননের জয়ধ্বনি ঘোষণা করেছে। বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি শিক্ষা, চিকিৎসা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
বিজ্ঞানের দৌলতে সমগ্র দুনিয়াটা মানবজগতের হাতের মুঠোয় এসে গিয়েছে। এভাবেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা যেমন নিজেকে বিস্তারিত করেছে; তেমনভাবে কিছু ক্ষমতালোভী, স্বার্থপর মানুষের জন্য বিজ্ঞান পরিবেশ ও প্রকৃতিকে আজ ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

বিপন্ন পরিবেশ ;-
প্রাণীজগৎ প্রকৃতি থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে পৃথিবীর বুকে। মানুষের নানা কার্যকলাপের কারণে পরিবেশ আজ দূষিত। শিল্পবিপ্লবের ফলে অরণ্য ধ্বংস করে প্রতিষ্ঠিত কলকারখানায় তেল, গ্যাসের ব্যবহার, কারখানার ধোঁয়া ও বর্জ্য পদার্থ পরিবেশকে নানাভাবে দূষিত করে চলেছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে ব্যবহৃত যানবাহনে কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইডের মতো ক্ষতিকারক গ্যাসের পরিমাণ বায়ুমণ্ডলে আজ খুব বেশি। এইসমস্ত বিষাক্ত গ্যাস ওজোন গ্যাসের আচ্ছাদনে গর্ত তৈরি করেছে। ফালে পৃথিবীর তাপমাত্র দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। মেরুপ্রদেশের বরফ বেশিমাত্রায় গলে গিয়ে বাড়তি জল সমুদ্রজলের উচ্চতাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। সুন্দরবনের ঘোড়ামারা দ্বীপের বেশকিছু অংশ এই কারণেই জলের নীচে চলে গেছে। পরিবেশদূষণের জন্য ঋতুবৈচিত্র্য ক্রমশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত
না-হওয়া, অত্যধিক গরম, টাইফুন ও সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের একমাত্র কারণ এই পরিবেশদূষণ। এভাবে চলতে থাকলে বিজ্ঞানীরা মনে। করছেন ২০৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পৃথিবীজুড়ে দূষণজনিত মড়ক দেখা দেবে।

পরিত্রাণের পথ :-পরিবেশের ভারসাম্যকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিজ্ঞানীরা প্রযুক্তিকে নতুনভাবে গ্রহণ করার চেষ্টা করছেন। পরিবেশ ও
প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করে ইকো-ফ্রেন্ডলি টেকনোলজি'-র মতো প্রযুক্তি স্থাপন করতে চাইছেন তাঁরা। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে
সূর্যের আলোক শক্তি এবং পরিবেশের বিন্দুমাত্র ক্ষতি করে না এমন বিকল্প শক্তিরও খোঁজ চলছে।

উপসংহার বর্তমানে দেশে দেশে পরিবেশকে বাঁচানোর কঠোর আইনকানুন প্রয়োগ করা শুরু হলেও, সম্পূর্ণ বিপন্মুক্ত আমরা— এমন দাবি করা সম্পূর্ণ অসংগত। এই আক্ষেপ ও হতাশা থেকেই কবি জীবনানন্দ লিখেছিলেন,“আমাদের এই শতকের/বিজ্ঞান তো সংকলিত জিনিসের ভিড় শুধু বেড়ে যায় শুধু।” কখনোই ভুললে চলবে না যে পরিবেশ ও বিজ্ঞান উভয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য স্থাপন করেই উন্নতির চূড়োয় পৌঁছোনো সম্ভব। এ কাজে শুধু বিজ্ঞানীরা নয়, সাধারণ মানুষও যদি হাত বাড়িয়ে দেয় তবেই আগামী দিনে একটি সুন্দর পৃথিবীকে আমরা পাব। একটা সুন্দর পরিবেশ গড়ে তুলতে পারব।