রাজা রামমোহন রায়, || জীবনী ও বিষয়ক রচনা / RAJA RAMMOHAN ROY || RAChANA
জীবনী বিষয়ক
রাজা রামমোহন রায়
ভূমিকা : রাজা রামমোহন রায় ছিলেন প্রথম ভারতীয় ধর্মীয়-সামাজিক পুনর্গঠন আন্দোলন ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা এবং বাঙালি দার্শনিক। তৎকালীন রাজনীতি, জনপ্রশাসন, ধর্মীয় এবং শিক্ষাক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়ের উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখতে পেরেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে ‘ভারতপথিক’ এবং দিলীপ কুমার বিশ্বাস তাকে ‘বিশ্বপথিক’ বলে অভিহিত করেন।আমাদের দেশে যখন ধর্মের নামে নানারকম কুসংস্কার এবং ভুল ধারণা প্রচলিত ছিল, তখন রামমোহনের আবির্ভাব হয়েছিল। তিনি দেশ ও জাতিকে নতুন পথ দেখিয়েছিলেন।
জন্ম ও বংশ-পরিচয় : হুগলি জেলার রাধানগরে ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দের ২২ মে রামমোহনের জন্ম হয়। তাঁর বাবার নাম রামকান্ত রায়। মায়ের নাম তারিণী দেবী ।
শিক্ষা : গ্রামের পাঠশালাতে রামমোহনের শিক্ষা শুরু হয়। কাশী গিয়ে তিনি সংস্কৃত শিক্ষা লাভ করেন। এছাড়া আরবি, ফারসি, ইংরেজি প্রভৃতি ভাষায় যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। তাঁর ছিল অসাধারণ বুদ্ধি।
কর্মজীবন ও কৃতিত্ব : ছোটোবেলা থেকেই রামমোহন রায়ের লেখাপড়ায় প্রবল আগ্রহ ছিল। তিনি ৮ বছর বয়সেই গ্রামের স্কুলে বাংলা এবং আরবি ভাষা শিখতে শুরু করেন। তারপর পাটনায় গিয়ে আরবি ও ফার্সি দুটো ভাষাতেই তিনি দক্ষতা অর্জন করেন। ১২ বছর বয়সে তিনি সংস্কৃত ভাষা শেখার জন্য কাশীধামে চলে যান এবং ৪ বছর সেখানে থেকে পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি বেদান্ত শাস্ত্রের উপরেও গবেষণা করেছিলেন। ছোটোবেলা থেকেই রামমোহন ছিলেন বিদ্রোহী। তিনি প্রথম জীবনে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানিতে চাকরি করেন। পরে তা ছেড়ে দেন। সমাজের অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার, অসত্য এসবের বিরুদ্ধে তিনি সারাজীবন লড়াই করে গেছেন। সতীদাহ প্রথা, জাতিভেদ, অস্পৃশ্যতা, গঙ্গাসাগরে সম্ভান বিসর্জন প্রভৃতি অন্যায় ও কুসংস্কার দূর করার চেষ্টা করেছেন। ইংরেজি শিক্ষা এবং স্ত্রীশিক্ষার প্রবর্তনে তাঁর অবদান অসামান্য।
ধর্ম সংস্কার -; রামমোহন ব্রাম ধর্ম ও ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি হিন্দু ধর্মের সংস্কার ও ছিলেন । হিন্দু ধর্মে একটা মর্মান্তিক প্রথা চালু ছিল সেটা ছিল সতীদাহ প্রথা তিনি লর্ড বেন্টিং এর সাহায্যে আইন করে সতীদাহ প্রথা রদ করেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে তিনি প্রথম তাঁর মত প্রকাশ করেছিলেন। বাংলা সাহিত্যও তাঁর কাছে বিশেষভাবে ঋণী। তিনি বাংলায় বত্রিশখানা এবং ইংরেজিতে আটত্রিশখানা বই লিখেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে 'ভারত পথিক' উপাধি দিয়েছিলেন। ইংরেজ সরকার তাঁকে ‘রজা’ উপাধি দিয়েছিলেন। তিনি ভারতীয় রেনেসাঁস নামে পরিচিত তিনি ব্রাহ্ম সভা প্রতিষ্ঠিত করেন।
উপসংহার :- এই দেশপ্রেমিকের মৃত্যু হয় বিদেশের মাটিতে। ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের বিস্ট্রল শহরে তাঁর মৃত্যু হয়। চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধি, যুক্তি, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদিতে তিনি ছিলেন অসাধারণ। কিডনি আধুনিক শিক্ষা প্রসারের অবদান অনস্বীকার্য।