বর্ষণমুখর বাংলা রচনা / Rachana barshan mukhar bangla - school book solver

Thursday, 31 July 2025

বর্ষণমুখর বাংলা রচনা / Rachana barshan mukhar bangla



 রচনা

 বর্ষণমুখর বাংলা

ভূমিকা, আষাঢ় শ্রাবণ এই দুই মাস নিয়ে হয় বর্ষাকাল। বর্ষা বাংলার দ্বিতীয় ঋতু। প্রচন্ড গ্রীষ্মের দাবদাহ থেকে মুক্তি করতে বর্ষা ঋতুর আগমন ঘটে। গাছপালা নতুনভাবে প্রাণ ফিরে পায় । মজে যাওয়া নদীগুলি নতুন রূপে সেজে ওঠে। মৌসুমী বায়ুর আগমন ঘটার সঙ্গে সঙ্গে বর্ষার আগমন ঘটে। বাংলার নদ নদী, পুকুর, খাল, বিল জলে ভরে যায়। কখনো টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ে। কখনো ঝিমঝিম করে আবার কখনো মুষলধারে বৃষ্টি বাংলার মানুষের মনে আনন্দের রুপরেখা তৈরি করে।


প্রাকৃতিক রূপ :- বর্ষার আকাশ  কালো মেঘে ঢাকা থাকে। আকাশে শুরু হয় মেঘের আনাগোনা‌।  মেঘের সঙ্গে সূর্যের লুকোচুরি খেলা দেখা যায়।  কখনো টানা চার পাঁচ দিন ধরে অবিরাম বর্ষণ চলে‌ । আবার কখনও কখনও ১০-১২ দিন সূর্যের মুখ দেখা যায় না। বাংলার মানুষকে দেখা যায় ছাতা মাথায় অথবা রেনকোট গায়ে রাস্তায় বাহির হতে। নদী-নালা খাল বিল চারদিকে জলে ভরে যায়। বর্ষায় অনেক নদীতে বন্যা দেখা যায়। গ্রীষ্মের শুকিয়ে যাওয়া নদীরর রূপ হয় ভয়ঙ্কর জলময়।



কৃষকের অবস্থা:- বর্ষাকাল ধান চাষের উপযুক্ত সময় । কৃষকরা আশা করে থাকে কবে বর্ষা আসবে। কবে তাদের ধান রোপণ করবে। বর্ষার আগমন ঘটতেই চাষীর মনে আনন্দে ভরে যায়। বীজ তলা তৈরি করা।চাষের জমি তৈরি করা।  তারপর সেই বীজ নিয়ে জমিতে রোপন করা কাজে কৃষকরা ব‍্যস্ত থাকে।  সারাদিন চাষীকে মাঠে পড়ে থাকতে দেখা যায়। মাঠ থেকে শোনা যায়, ট্র্যাক্টারের ঘর্ ঘর্ শব্দ। মাঠে ঘাটে চাষীদের মনে শুধু একটাই জল্পনা কথা শোনা যায়, ওই মাঠে আমাদের এখনো জমি চাষ বাকি আছে। আর আমার মাত্র দুদিন লাগবে ইত্যাদি। অনেক চাষী বৃষ্টি মাথায় নিয়ে নাঙ্গল দিয়ে চাষ করে। ধান রোপন করে । মাঠের মধ্যে চারিদিক থেকে কৃষকেদের কোলাহলে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়। এজন্য বর্ষার একটা অন্যতম রূপ ।


সাধারণ মানুষের অবস্থা;- বৃষ্টির জল বাড়লে অনেক ব্যারেজ থেকে জল ছাড়া হয়। তার ফলে অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়। অনেক শস্য ক্ষেত ফসল নষ্ট হয়ে যায়। অনেক বাড়িঘর ভেঙে যায়। অনেক পশু মানুষ মারা যায়। বানভাসি মানুষরা নিজের ঘর বাড়ি ছেড়ে পথে এসে দাঁড়ায় ‌। বানভাসী মানুষদের কষ্টের জীবন শুরু হয়। বন্যার জলে রাস্তা গুলো প্লাবিত হয়ে যাওয়ার ফলে, অফিস যাত্রীরা ঠিকমতো অফিসে পৌঁছাতে পারে না। শহরগুলো হয়ে যায় জলময় । রাস্তা দেখা যায় না। সেখানকার মানুষদের বাজার হাট করা, সন্তান দেব স্কুলে নিয়ে যাওয়ার অসুবিধা ঘটে। অনেক সময় হাসপাতলে সামনে জলবায় অবস্থা হয়ে যায়। যার ফলে রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা ও ব্যাহত হয়।


গ্রাম বাংলার অবস্থা - গ্রাম বাংলার রাস্তাঘাট কাদায় ভরে যায় । পিচ্ছিল হয়। রাস্তায় চলাচল খুব অসুবিধা হয়। আর যেগুলি পাকা রাস্তা সেগুলি খুবই পিচ্ছিল হয় শ্যাওলা পড়ে। যাতায়াতের জন্য খুব অসুবিধা হয় । আবার রাস্তায় যাতায়াত করতে গেলে কোন রাস্তায় জমা জল গায়ে ছিটকে লেগে যায় । গ্রামের রাস্তাঘাটে মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া বেরোয় না।। গ্রামে বাড়িগুলি আশেপাশে প্রচুর জঞ্জাল আগাছা জন্ম নেয়। সাপের উৎপাত বাড়ে। অনেকের সাপের কামড়ে নিয়ে মৃত্যু ঘটে। সন্ধ্যার পর পুকুর নর্দমা জলাশয় থেকে ব্যাঙের ডাক গ্রামের পরিবেশ কে মুখরিত করে। পথচলদি মানুষকে কখনো কখনো ভিজে জলে ঝাপটা এসে তাদের ভিজিয়ে দেয় । ফুল ফলে ভর্তি বর্ষণমুখর বাংলায় বর্ষায় গ্রামের দিকে দিকে দেখা যায় কদম ফুলের শোভা।  জামতলায় পাকা জাম পড়ে রঙিন সৌন্দর্য তৈরি হয়। হাটে ঘাটে কাঁঠালের গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পরে।তালগাছ থেকে পাকার তাল ধুপ ধপ করে পড়তে থাকে। ভোর বেলায় দেখা যায় তালের খোঁজে অনেকে বেরিয়েছেন। কেউ আবার তাল হাতে করে আনন্দে বাড়ির মুখে ফিরে যাচ্ছে। বাড়িতে বাড়িতে তালের বড়া তালের ফুলুরি তৈরি করতে মা কাকিমারা ব্যস্ত থাকে।


উৎসব - বাংলা বারো মাস উৎসবে ভর্তি থাকে।  বর্ষার উৎসব রথযাত্রা। রথযাত্রায় উৎসবে বাঙালি মেতে ওঠে ।ছোট ছোট ছেলেরা ছোট ছোট রথ করে বাড়ি বাড়ি জগন্নাথ দেবকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়‌ । দিকে দিকে ঝাপান এবং মনসা পূজো অনুষ্ঠিত হয়। পূজার অনুষ্ঠান মাইক বাজিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। চারিদিকে মাইকের শব্দে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়।।


 উপসংহার - বছরের দ্বিতীয় ঋতু নতুন রূপে বর্ষা আমাদের কাছে হাজির হয় । বর্ষায় আমাদের অনেক রোগ বালাই পোকামাকড় মশা মাছির উপদ্রব বাড়িয়ে তোলে।  কলেরা, ডায়রিয়া রোগে মানুষ আক্রান্ত হয়। তা সত্ত্বেও আমরা বর্ষাকে খুব ভালোবাসি। এখন বর্ষা প্রাকৃতিক রূপ আমাদের কাছে খুব সুন্দর । মেঘে ঢাকা আকাশ ,গাছে গাছে কদম ফুল আমাদের মনকে জয় করে । বর্ষা আমাদের প্রিয় ঋতু । আমরা বর্ষণমুখর বাংলা ভালবাসি।