একটি সেতুর আত্মকথা || রচনা / Akti setur amaya katha || Racjana
রচনা
একটি সেতুর আত্মকথা
ভূমিকা : আমি একটি সেতু। চওড়া নদীর উপর আমি দাঁড়িয়ে আছি। তোমাদের মত মানুষকে এপার থেকে ওপার করাই আমার কাজ। মানুষের সেবা ছাড়া আমি অন্য কোন কাজের কথা ভাবতে পারিনা। আমার পাগুলো সারা বছর জলে ডুবে থাকে। আমার পা গুলো ইট বালি সিমেন্টের তৈরি। নিচের জল ধারা চাপ আর ঊপরে গাড়ি ঘোড়া চাপ নিয়ে আমি ঝুলন্ত অবস্থায় দিন কাটাই।। আমার বয়স ৩০ বছর প্রায় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে।
জন্ম : আজ আমাকে যে বড় সেতু রূপে তোমরা দেখছো । আমি জন্ম থেকেই কিন্তু এরকম ছিলাম না। যখন নদীটি শুরু ছিল তখন আমি বাঁশের তৈরি একটি সেতু ছিলাম। একটু জলের স্রোত বেশি হলে দুলতে লাগতাম। তখন শুধু আমার উপর দিয়ে মানুষ যাতায়াত করত। অনেকে আমার উপর দিয়ে যাতায়াত করতে ভয় পেত। বছর দুই ওই ভাবে থাকার পর একবার প্রবল বন্যায় আমি ভেসে গেলাম। আমার কিছু অংশ সেখানে ছিল। আশেপাশে গ্রামের লোকেরা আমাকে কাঠের তৈরি করল। আগের চেয়ে একটু শক্তপোক্ত হলাম। তখন আমার উপর দিয়ে সাইকেল, মানুষ যাতায়াত করতে পারত। বছর সাত ওইভাবে থাকার পর আমাকে সরকারের লোকেরা ভেঙে ফেলল।নদীর তলায় পিলার গেঁথে লোহার রডের উপর ঢালাই দিয়ে আমাকে তৈরি করল । এটা করতে প্রায় ছয় মাস লেগে গিয়েছিল। তারপর একদিন আমাকে ফুলের মালার সাজিয়ে উদ্বোধন করা হলো । আজও সেই উদ্বোধনের দিনটির কথা মনে পড়ে। সেদিন ছিল লোকে লোকারণ্য, ফুল, মালা দিয়ে আমাকে সাজানো হল। জেলাশাসক এলেন, মন্ত্রী এলেন। অনেক শঙ্খ ধনী বাজলো । অনেক মানুষ আমার উপরে খাওয়া-দাওয়া করলো। তারপর আমার উপর দিয়ে একটি ভারী বোঝাই করা গাড়ি পার হলো আস্তে আস্তে। আমার অনেক কষ্ট হয়েছিল ঠিক কথা, কিন্তু অনেকর কাজে লাগব ভেবে মনে আনন্দ হয়েছিল । এখন আমার উপর দিয়ে বাস লরি ছোট গাড়ি যাতায়াত করে আগে আমার উপর দিয়ে ভারী যানবাহন যাতায়াত করতে পারত না। এখন আমার দুই ধার ঘেরা আছে। সবাই আনন্দ করতে করতে উপর দিয়ে চলে যায়।
বর্তমান অবস্থান : দীর্ঘ দিনের অবহেলায় এখন আমার জরাজীর্ণ অবস্থা। যেখানে-সেখানে ছোটো ছোটো গর্ত। দু-এক জায়গায় লোহার খাঁচা বেরিয়ে পড়েছে। জন্মের পর মাত্র বার তিনেক মেরামত করা হয়েছে। আমি বুঝতে পেরেছি যে আমার আয়ু শেষ হয়ে আসছে। এখন কোনো বড়ো গাড়ি গেলে আমার বুকটা কেঁপে ওঠে। ভয় হয় এতো চাপ সহ্য করতে না পেরে হয়তো ভেঙে পড়বে।
দায়িত্ব পালন ;- জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত আমি আমার দায়িত্ব সমানভাবে পালন করে চলেছি। মানুষ ও বিভিন্ন পশু আমার ওপর দিয়ে
যাতায়াত করছে। সাইকেল, রিক্সা, মোটর সাইকেল, ট্যাক্সি, লরি সবই আমার ওপর দিয়ে পার হচ্ছে। ভোরের আলো না দেখা দিতেই মানুষ ও গাড়ি চলাচল শুরু হয়। চলে মাঝরাত্রি পর্যন্ত। তারপর আমি একটু বিশ্রাম পাই। আর সেই দিন খুব বিশ্রাম পাই যেদিন তোমরা বন্ধ পালন করো। লকডাউনের সময় আমি ভাল বিশ্রাম পেয়েছিলাম । এখন আর বিশ্রাম নেই ।। এখন শুধু কাজ আর কাজ। যত দিন যাচ্ছে আমার দায়িত্ব তত বেড়ে যাচ্ছে।
উপসংহার : আমি খুব সুন্দর দেখতে বলে তোমরা অনেকে এসে আমার ছবি তোলো। আগামী দিনে হয়তো আমি ছবির মধ্যে তোমাদের কাছে বেঁচে থাকব। চিরকাল বেঁচে থাকবো। । আমি যে আর বেশি দিন বাঁচব না তা কেউ না বুঝুক আমি বুঝেছি। আমার ভেতরে যে লোহার খাঁচা
আছে তাতে জং ধরতে শুরু করেছে। সেগুলো অল্প দিনের মধ্যেই ভেঙে পড়তে পারে। তখন হয়তো আমায় জীবনের শেষ দিন এসে যাবে। আর নয়তো আরো নতুন ভাবে আমাকে তৈরি করবে।