একটি বইয়ের আত্মকথা || রচনা / rrrAchana akti boier anatakatha
রচনা
একটি বই-এর আত্মকথা
ভূমিকা : আমি একটি বই। আমি তোমাকে একমাত্র বন্ধু। আমাকে পড়ে সবাই আনন্দ পায় ও জ্ঞানলাভ করে। তাই আমাকে সবাই ভালোবাসে ও শ্রদ্ধা করে।তোমরা আমাকে সরস্বতী দেবীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছ এই কথা ভেবে আমি গর্বিত হই । আমার বন্ধুদের নিয়ে তোমরা বড় বড় লাইব্রেরী স্থাপন কর । এটাও আমার গর্বের বিষয়। যখন বহু মানুষ লাইব্রেরীতে এসে আমার খোঁজ করে তখন আমি ভীষণ গর্ববোধ করি। তবে মোবাইল আর কম্পিউটারের যুগে আমার কদর কিছুটা কমে গেছে। অনেকে আমাকে ভুলতে বসেছে।
জন্ম : প্রথমেই আমি বই আকারে ছিলাম না । নানা ধাপ পেরিয়ে আমি বই এর আকার পেয়েছি। প্রথমে লেখক পাণ্ডুলিপি তৈরি করেন। তারপর তা প্রকাশকের কাছে জমা দেন। প্রকাশকের সেই লেখা পছন্দ হলে ছাপানোর জন্য প্রেসে পাঠান। তারপর ছাপানো শুরু হয়। স্বপ্নর পর আমার উপরে সুন্দর নকশা আঁকা রঙিন মলাট দেয়া হয়। তার পর বাঁধার জন্য বাইন্ডিংখানায় পাঠানো হয়। সেখান থেকে আমি বই-এর আকারে বের হয়ে আসি। প্রথমে প্রকাশকের ঘরে তারপর স্থান হয় তারপর আস্তে আস্তে বিভিন্ন বইয়ের দোকানে আমার স্থান হয় । সেখান থেকে বিভিন্ন মানুষের হাতে আমি ছড়িয়ে পড়ি।
আমার জীবনকাল : আমি এক নামী লেখকের লেখা একটি উপন্যাস। এক পাঠক ঝড় জলে মধ্যে বৃষ্টিতে ভিজে আমাকে দোকান থেকে কিনে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি তাঁর বাড়ির আলমারিতে অন্যান্য বই-এর সঙ্গে আমাকে স্থান দিয়েছিলেন।আমাকে কিনে আনার পর মালিক খুব আগ্রহ নিয়ে দুদিনের মধ্যে আমাকে পড়া শেষ করে ফেললেন। পড়ার পর তাঁর মুখে দেখা গেল তৃপ্তির হাসি। তা দেখে আমার খুব ভালো লাগল। পরের দিন আমার মালিকের এক বন্ধু বাড়িতে এলেন। সেই বন্ধুকে জোর করলেন আমাকে পড়ার জন্য। সেই বন্ধু অনিচ্ছা সত্বেও আমাকে নিয়ে গেলেন। তিনি তো যাওয়া-দাওয়া ভুলে, সব কাজ ফেলে রেখে একদিনেই পড়া শেষ করে ফেলল। পরের দিন আমাকে ফেরৎ দিয়ে আমার খুব প্রশংসা করলেন। প্রশংসা শুনতে সবারই ভালো লাগে। তাই গর্বে আমার বুকটা ভরে গেল। ভাবলাম আমার জন্ম সত্যিই সার্থক। আমি মনে মনে ধন্যবাদ জানালাম লেখককে। কারণ প্রশংসা আসলে তাঁরই তো প্রাপ্য। তাঁর চিন্তা-ভাবনা ও। পরিশ্রমের ফসল আমি। তিনি আমার স্রষ্টা। সুযোগ পেলে মাঝে মাঝে আলমারি থেকে বার করে আমাকে পড়তেন। আর আমার মধ্যে কিছু লাইনে দাগ দিয়ে রাখতেন । হঠাৎ একদিন তিনি মারা গেলেন ।তারপর থেকে আমি আলমারিতে একা পড়ে থাকি। কেউ আমার খোঁজ করে না। এইভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর বাড়ির ছোট ছেলে আমাকে আলমারি থেকে বার করে বস্তার মধ্যে ভোরে গুদাম ঘরের মধ্যে রেখে দিল। আমি আজও সেখানে পড়ে আছি। হয়তো চিরকাল পড়ে থাকতে হবে এই ভেবে মনে কষ্ট পেয়ে দিন কাটাই। যদি আমি লাইব্রেরীতে স্থান পেতাম তাহলে হয়তো অন্য কারো জীবনে কাজে আসতাম। এখন দেখি শরীর বিবর্ণ হয়ে গেছে ।উই পোকা আমাকে আস্তে আস্তে গ্রাস করছে। আর কিছু দিনের মত হয় মধ্যে হয়তো উই পোকা আমাকে খেয়ে ফেলবে।
উপসংহার : এই পৃথিবীতে কেউ কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয় । সবাইকে চলে যেতে হবে। কিন্তু আমি বা আমার সঙ্গীরা আজকের ঘটনার কথা যত্নসহকারে ধরে রাখবো। যাতে আগামী প্রজন্মের ছেলেরা পড়ে জানতে পারি তখনকার অবস্থা। আমার সঙ্গী সাথীরা তোমাদের অনেক ঘটনার কথা লিপিবদ্ধ করে রেখেছি। যা থেকে তোমরা অনেক কিছু জানতে পারো তোমরা এক ইতিহাস বলে অভিহিত করেছ হয়তো এরপরও আমরা কিছু লেখা সঞ্জয় করে যাব কারণ তোমার যে লেখা সঞ্চয় করাই আমার দিকে কাজ যাতে তোমরা ভবিষ্যৎ জীবন সুন্দর ভাবে কাটাতে পারো। আমি যেন তোমাদের সারা জীবন বন্ধু হয়ে থাকতে পারি।