আমাদের গ্রাম|| রচনা - school book solver

Thursday, 5 June 2025

আমাদের গ্রাম|| রচনা

 


আমাদের গ্ৰাম

রচনা

ভূমিকা:- আমাদের ছোট্ট গ্ৰাম মায়ের সমান।আমরা সেই মায়ের কোলে জন্ম গ্ৰহণ করে ছোট থেকে বড়ো হই। আমার বাবা এই গ্ৰামেই জন্ম গ্ৰহণ করেছেন।আমার পিতৃপুরুষরা এই গ্ৰামেই জন্ম গ্ৰহণ করে এখানেই মৃত্যু বরণ করেছেন।তাদের নানা স্মৃতি এই গ্ৰামে ছড়িয়ে আছে।

বর্ণনা- আমাদের গ্ৰামের নাম বৈদ‍্যপুর। সবুজ গাছ দিয়ে ঘেরা আমাদের ছোট্ট গ্ৰাম। গ্রামে মানুষটা বেশিরভাগই কৃষক চাকরি বাগরিচ করে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম ঘরবাড়ি গুলি মাটি তবে দু একটা পাকা বাড়ি আছে। আমাদের গ্রামের লোক সংখ্যা প্রায় 900 জনের মতো। গ্রামের দক্ষিণ দিক দিয়ে বয়ে গেছে ছোট্ট একটি নদী। তার নাম টেংরা‌ । নদীটি বর্ষায়  দুকুল প্লাবিত করে গ্রামটি অনেক ক্ষতি করে। গ্রামের পূর্ব দিকে একটি বড় খেলার মাঠ আছে। বৈকাল বেলায় বড়রা সেই মাঠে খেলতে যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত খেলাধুলা করে। তারই সামনে দিয়ে বয়ে গেছে একটি পাকা রাস্তা। নিয়মিত বাস চলাচল করে সে রাস্তায়।  রাস্তার পাশে অনেক দোকান আছে। সন্ধ্যায় সেখানে আলো ঝলমল করে। লোকজনের ভীড় হয়।  গ্রামের বহু মানুষের সেখানে যায় । গ্রামে পশ্চিম দিকে একটা প্রাথমিক স্কুল আছে।

গ্রামের সংস্কৃতি - আমাদের গ্রামে ভোরে মন্দিরে মন্দিরে বেজে ওঠে শঙ্খধ্বনি। আর মসজিদ থেকে শোনা যায়  আজানের শব্দ। গ্রামের স্কুলে একসাথে হিন্দু-মুসলিম ছেলেরা  যায়। সেখানে তারা এক সুরে পড়াশোনা করে। স্কুল ছুটি হলে তারা একসাথে আনন্দ করতে করতে বাড়ি ফিরে যায়।খেলার মাঠে সকল সম্প্রদায় ছেলেরা একসাথে খেলা করে। খেলার আনন্দকে তারা সবাই একসাথে ভাগ করে নেয়। গ্রামে কোন বিপদ আপদ হলে সবাই একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কেউ মারা গেলে তাকে তার সৎকার্য করার জন্য সকলে এগিয়ে আসে। বৈশাখ মাসের সন্ধ্যায় হরিনামের সংকীর্তন পথে পথে ঘোরে।

উৎসব-আমাদের গ্রামে বারো মাসে তেরো পার্বণ লেগেই আছে। বাঙালির সব উৎসবই এখানে পালন হয়। আমাদের গ্রামে দুর্গা পূজা, কালীপুজো, রথযাত্রা, সরস্বতী পূজা, মহরম, ঈদ খুব আনন্দ করে পালিত হয় । অগ্রহায়ণ মাসে নতুন ধান বাড়ি এলে  একসাথে গ্রামে নবান্ন উৎসব পালিত হয়।

প্রাকৃতিক পরিবেশ - আমাদের গ্রামে মানুষদের এখনো পাখির ডাকে ঘুম ভাঙ্গে। বর্ষাকালে নদী নালা পুকুর থেকে ব্যাঙের ডাক শোনা যায়। বসন্তের কোকিলের ডাক শোনা যায়।  শরৎকালে নদীর ধরে ধরে কাশ ফুলে ভরে যায়। এখন ও দিঘির পারে আকাশে শঙ্খচিল উড়ে যায়। বর্ষাকালে কদম ফুলের শোভা ছড়িয়ে পড়ে গ্রামের দিকে দিকে।  বর্ষাকালে জামতলায় কে যেন নীল রং ছড়িয়ে দেয়। শীতকালের সকালে কে জানো কুয়াশার চাদর জড়িয়ে দেয়  আমাদের গ্রামকে। গ্রামের সবুজ ধান খেতের ওপারে  সূর্যকে লাল হয়ে অস্ত যেতে দেখা যায়।

ভোর বেলায় সৌন্দর্য-  ভোরে জেলেপাড়া থেকে জেলেরা জাল কাঁধে মাছ ধরতে বের হয়। বাগদি পাড়ার খেন্দু পিসি ছোটে তালদিঘির পাড়ে তাল কুড়োবার জন্য। চাষিরা ভোরবেলায় জমি চাষ করার জন্য নাঙ্গল কাঁধে বের হয়। মেয়েরা ফুল তুলতে হাজির হয় ফুল তলায়।

অসুবিধা-  আমাদের এখানে কোন হাসপাতাল না থাকায় কোন রোগ হলে আমরা সহযোগিতা পাই না।অনেক দূরে হাসপাতালে যেতে হয়। যেতে যেতে আমাদের অনেকে মারা যায়। রাস্তাঘাট ভালো নয়। ছেলেদের পড়তে যাওয়া স্কুলে যাওয়া কষ্ট হয়।

উপসংহার:-  এত কিছুর মধ্যেও আমাদের গ্রাম আমার কাছে অতি প্রিয়। আমাদের গ্রামে অনেক কিছুই আমাদের গ্রামে নেই তবু আমরা গ্রামকে ভালোবাসি। কারণ এখানে আমি জন্মেছি আমার পিতৃ পুরুষরা সেজন্য আমরা গর্বিত।