পল্লী সমাজ || অষ্টম শ্রেণি বাংলা || হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর / PAlLLI SAMAJ class 8 bangla question answer
![]() |
অষ্টম শ্রেণি বাংলা
গল্প : পল্লীসমাজ
লেখক ঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পরিচিতি :- শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে ১৮৭৬ সালের জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ভাগলপুরে মামার বাড়িতে শৈশব কেটেছিল। তাঁর লেখায় বাংলার গ্রাম জীবন এবং মধ্যবিত্ত মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন-সম্ভাবনা, তাঁর গল্প উপন্যাসে বাস্তব ৰূপ পেয়েছে। আর্থিক কারণে তিনি চাকরি নিয়ে রেঙ্গুনে চলে যান। প্রায় ১৪ বছর ব্রহ্মদেশে বিভিন্ন সংস্থার হয়ে কাজ করেন। শেষপর্যন্ত ১৯১৬ সালে
পাকাপাকিভাবে রেঙ্গুন ত্যাগ করে ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে দেশে ফিরে আসেন এবং পুরোপুরি সাহিত্যকর্মে
মনোনিবেশন করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলি হলো, 'বড়দিদি', 'পল্লীসমাজ', ‘দেবদাস', চরিত্রহীন’, ‘গৃহদাহ', 'শ্রীকান্ত', 'শেষ প্রশ্ন',‘বিন্দুর ছেলে’, ‘রামের সুমতি’ প্রভৃতি। তাঁর লেখা ছোটো গল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য 'লালু', 'মহেশ', অভাগীর স্বর্গ' ইত্যাদি গল্প পাঠকের মনকে জয় করেছে। ১৯৩৮ তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
পল্লীসমাজ গল্পের সারসংক্ষেপ : - রমেশ পিতার মৃত্যুরপর একদিন বৃষ্টিস্নাত বিকেলে বেলায় জমিদারির হিসাবপত্র দেখছিলেন। সেই সময় একদল চাষী এসে কেঁদে বলল বাঁধের জল না কাটালে সমস্ত গ্রাম ভেসে যাবে।।আর সমস্ত ফসলও নষ্ট হয়ে যাবে। প্রথমে রমেশ ব্যাপারটা বোঝেনি। পরে গোপাল সরকারের কাছ থেকে সমস্ত কিছু জেনে নিয়ে বাঁধ কেটে দেবার সিদ্ধান্ত নিলেন। রমেশের দাদা বেণীমাধব ঘোষাল-এর তীব্র বিরোধিতা করে বলেন বাঁধ কেটে দিলে ২০০ টাকার মাছ বেরিয়ে যাবে। আর চাষিদের ফসল যত নষ্ট হয় তত ভালো, তবে তারা জমি বাঁধা রাখতে ছুটে আসবে। এরপর তিনি নানাভাবে রামেশকে ব্যঙ্গ করতে শুরু করেন। একথা শুনে রমেশ তাদের অন্য জ্ঞাতি ও জমিদারর শরিক রমার কাছে গিয়েও অনুরোধ করেন। শেষপর্যন্ত রমেশ লাঠিয়াল দিয়ে বাঁধ কেটে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ চাষিদের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও বাঁধের জল কাটার ব্যাপারে ব্যাপারে রমা তাকে সাহায্য করতে প্রস্তুত ছিল না। রমার এই মানসিকতায় রমেশ ব্যাথিত ও ক্ষুন্ন হয়। চণ্ডীমন্ডপের বারান্দায় বসে প্রৌঢ় লাঠিয়াল আকবর রক্তাক্ত অবস্থায় বলল যে বাপের বেটা রমেশবাবু লাঠিয়ালদের সঙ্গে এমন লড়াই করলে যা তারা আগে দেখেনি। অনেকের মাথা ফেটে গিয়েছিল। কিন্তু বেনীবাবু তা দেখে লাঠিয়ালদের বেইমান বলে উল্লেখ করলে লাঠিয়ালদের নেতা আকবর বড়োবাবু অর্থাৎ বেণীমাধবের উদ্দেশ্যে বলেন বেইমান বলবেন না বড়োবাবু। আকবর বেণীমাধবের কথায় থানায় গিয়ে রমেশের নামে মিথ্যে নালিশ করতে রাজি হলো না। তখন নিরুপায় বেণী সব রাস্তা হাত ছাড়া হওয়ায় গালিগালাজ শুরু করল। ওদিকে নিজের অজান্তেই রমার বুকের উপর থেকে একটা পাষাণ নেমে গোল। তার মানে হাতে লাগল সেই সুন্দর দেহের মধ্যে এতো মায়া তেজ কী করে এমন স্বচ্ছন্দে শান্ত হয়ে ছিল। তার সমস্ত মুখ চোখের জলে ভেসে যেতে লাগল।
পল্লী সমাজ গল্পের নামকরণের সার্থকতা :- রমেশ গ্রামে এসেছিল। গ্রামের পরিবেশ, এখানের কূটনীতি, রাজনীতি সম্পর্কে সে অভিজ্ঞ ছিল না। তাই নানাভাবে পর্যদুস্ত হচ্ছিল। চাষিরা একশো বিশ্বের মাঠ ডুবে গেলে কি ক্ষতি হতে পারে তা জানিয়ে ওই বাঁধ কেটে নিতে অনুরোধ করল। বাঁধের গারো একটা জলাশয় আছে তা কেটে দিলে সমস্ত মাছ বেরিয়ে বছরে ২০০ টাকার লোকসান হবে। তাই বেণীমাধব, রমা কেউই রমেশের পাশে এসে দাঁড়াতে চায়নি। রমেশ বেণীবাবুকে অনুরোধ করে ওই বাঁধটা
কেটে ফেলার জন্য। কিন্তু বেশী বলে চাষির যত ক্ষতি হবে জামিদারের লাভ হবে । ফসল নষ্ট হলে, চাষী জমি বাঁধা দেবে । তখন চড়া সুদের হার দেখিয়ে এই সমস্ত জমি জমিদারদের দখলে চলে আসবে। এইভাবে সমস্ত গল্পটি কুটনীতি রাজনীতিকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছিল। তৎকালীন গ্রামের সমাজ জীবনের এক সুস্পষ্ট চালচিত্র সামনে তুলে ধরেছেন। তাই 'পল্লীসমাজ' নামকরণ যথার্থ হয়েছে বলে আমার মনে।
হাতে কলমে
অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর
১.১ চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দুটি উপন্যাসের নাম লেখো।
উঃ। '(২) গৃহদাহ' এবং (২) 'দেবদাস'।
১.২ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দুটি ছোটো গল্পের নাম লেখো।
উঃ।(১) 'মহেশ' এবং (২) 'লালু'।
২. একটি বাক্যে উত্তর লেখো :
২.১ গোপাল সরকারের কাছে বসে রমেশ কী করছিল?
উত্তর- গোপাল সরকারের কাছে বাসে রমেশ জমিদারির হিসাবপত্র দেখছিল।
২.২ গ্রামের একমাত্র ভরসা কি ছিল ?
উত্তর - একশো বিঘার মাঠ গ্রামের সমস্ত চাষের একমাত্র ভরসা ছিল।
২.৩ "বোধ করি এই কথাই হইতেছিল"।- কোন কথার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে?
উত্তর - বেণী মাধব লাঠিয়াল দিয়ে বাঁধ আটকে রেখেছিল আটকে রেখেছিল। চাষিরা সকলে গিয়ে হত্যা দিয়ো পড়েছিল। মনে হয় এই কথাই হচ্ছিল বেণীমাধব আর হালদার মহাশয় এর মধ্যে।
২.৪ রমা আকবরকে কোথায় পাহারা দেবার জন্য পাঠিয়েছিল।
উত্তর- রমা আকবরকে বাঁধ পাহারা দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছিল।
২.৫ 'পারবিনে কেন'—উদ্দিষ্ট ব্যক্তিটি কোন্ কাজ করতে পারবে না?
উঃ। পাঁচটি গ্রামের সর্দার আকবর বেণীবাবুর কথায় ছোটোবার রমেশের নামে থানায় নালিশ করতে পারবে না।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর লেখো
৩.১ কুড়িজন কৃষক রমেশের কাছে এসে কেঁদে পড়ল কেন?
উঃ। দুদিন ধরে অবিশ্রান্ত বৃষ্টি হয়েছে। একশো বিসের মাঠ ডুবে গেছে। জল বার করে না দিলে সমস্ত দান নষ্ট হয়ে যাবে। বড়ো জমিদার বেণীবাবু বাঁধ কেটে জল বের করে দিতে নারাজ। তাই উপায়ান্তর না দেখে কুড়িজন কৃষক রমেশের কাছে এসে কেঁদে পড়েছিল।
৩.২ রমেশ বেণীর কাছে জল বার করে দেবার হুকুম দেওয়ার জন্য অনুরোধ করল কেন?
উ। একশো বিঘার মাঠের ধান বৃষ্টিতে জলে ডুবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। দক্ষিণ দিকের বাঁধ কেটে সেই জল বের করে মাঠের ধান বাঁচানো যেত। জল বার করে না দিলে জমির সমস্ত ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু বেণীবাবু জল বের করতে নারাজ, তাতে তার বিপুল ক্ষতি হবে। বেণী ছিল বড়ো তরফের জমিদার, রমেশের বয়োজ্যেষ্ঠ ও সম্পর্কে দাদা হন। তাই রমেশ ছোটো ভাই হিসেবে চাষিদের বাঁচাতে বেণীকে বাঁধ কেটে দেবার অনুরোধ করেছিল।
৩.৩ বেণী জল বার করতে চায়নি কেন ?
উঃ। বেণী বাবু গ্রামের বড়ো তরফের জমিদার, অত্যন্ত স্বার্থপর, নিজের স্বার্থের ক্ষতি করতে তিনি চাননি। বাঁধ কেটে দিলে চাষিরা উপকৃত হলেও সব মাছ বের হয়ে যাবে তাতে তাঁর প্রায় দু-তিনশো টাকার ক্ষতি হবে। তাই বেণীবাবু বাঁধ কেটে জল বার করতে চাননি।
৩.৪ ঘৃণায়, লজ্জায়, ক্রোধে, ক্ষোভে রমেশের চোখ মুখ উত্তপ্ত হইয়া উঠিল—রমেশের এমন অবস্থা হয়েছিল কেন?
উঃ। অসহায় গ্রামবাসীদের রক্ষা করার জন্য রমেশ বেণীৎঘোষালের কাছে বাঁধ কেটে দেবার অনুরোধ জানায়। বেনীঘোষাল ছিলেন স্বার্থপর। বেণীর কাছে বাঁধ কেটে দেবার ব্যপারে কোনো সাহায্য সে পায়নি। উপরন্তু তিনি নানাভাবে রমেশকে আঘাত করে বলেছিলেন যে জলে সমস্ত ফসল নষ্ট হলে চাষিরা জমিদারদের হাতের মুঠোয় চলে আসবে, এই সময় মাথাটা।একটু ঠান্ডা রাখতে হয়। না হলে জমিদারি বাড়বে কী করে? কর্তারা তো এমনি করেই সম্পত্তি বাড়িয়ে গুছিয়ে রেখে গেছেন। বাকিটুকু নেড়ে চেড়ে আবার ছেলেদের জন্য রেখে দিতে হবে। প্রজারা কীভাবে বাঁচবে এর উত্তরে বেণী বলে ছোটো চাষিরা ধার করে খাবে। বেণী ঘোষালের এই সব কথাবার্তা শুনে ঘৃণায়, 'লজ্জায়', ক্ষোভে ও রাগে রমেশের মুখ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল।
৩.৫ ‘রমেশ বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হইয়া গেল'।— রমেশের বিস্ময়ের কারণ কী ছিল?
উঃ। রমেশ গ্রামে দীর্ঘদিন পর এসেছিল। এখানে তার আপন বলতে কেউ ছিল না। কিন্তু রমা ছিল তার মনের একান্ত কাছের, সে ছিল তার বাল্যসখী। তার উপর মনে মনে রমেশ নির্ভর করত। চাষিদের একশো বিঘা মাঠের ধান যখন বর্ষার জলে নষ্ট হতে বসেছিল তখন সে বাঁধ কেটে জল বের করে দেবার জন্য রমার অনুমতি নিতে এসেছিল। রমা উত্তরে তাকে জানার মাছ বাঁধ থেকে বেরিয়ে গেলে যে দু-তিনশো টাকার ক্ষতি হবে সেই লোকসান সে করতে পারবে না। বাঁধ
কাটায় রমা অরাজি হবে একথা রমেশ স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। তার মনে একটা ধারণা জন্মেছিল যে তার একান্ত অনুরোধ রমা বোধ হয় ফেলতে পারবে না। রমার কাছে এই অমানবিক উত্তর রমেশ প্রত্যাশা করেনি। তাই রমার মুখে এই কথা শুনে রমেশ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিল।
৩.৬ রমা রমেশের অনুরোধে রাজি হয়নি কেন ?
উঃ। চাষিদের সাহায্যের জন্য রমেশ রমাকে অনুরোধ করলেও দুটি কারণে রমা সে অনুরোধ রাখতে পারেনি কারণ মনে মনে রমা জানতো বাঁধ কেটে না দিলে একশো বিঘের মাঠের সমস্ত ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। রমেশের বক্তব্য ঠিক, কিন্তু সেও মনে মনে জানত প্রথমত তাঁর বড়না বেশী ঘোষাল তাতে রাজি নন। দ্বিতীয়ত তার পিতা নাবালক সন্তান স্বতীনকেই জমিদারি নিয়ে গেছেন। নিজের ভাই যতীনের ক্ষতি করার সাহস সে দেখাতে পারেনি। কারণ তাঁর বাবা তাকে সম্পত্তি লিখে দিলেও সে নিজেকে ভাইয়ের অভিভাবক মনে করত। তাই রমেশের অনুরোধে রমা রাজি হয়নি।
৩.৭ মানুষ খাঁটি কিনা চেনা যায় শুধু টাকার সম্পর্কে।–কে, কার সম্পর্কে একথা বলেছিল? সে কেন একথা বলেছিল?
উত্তর-'পল্লীসমাজ' গল্পে রমেশ তার বাল্যসখী রমা সম্পর্কে একথা বলেছিল।
বৃষ্টির জলে ডুবে চাষিদের একশো বিঘে ধান নষ্ট হতে বসেছিল। রমেশ জমিদারির অপর শরিক রমার কাছে সে এই অনুরোধ নিয়ে গিয়েছিল। বাঁধ কেটে জল বার করে দিলে মাছ বেরিয়ে গিয়ে অনেক টাকার ক্ষতি হবে জানিয়ে বাঁধ কেটে দেবার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে। রমার উপর রমেশের ভীষণ ভরসা ছিল। তার কেমন যেন বিশ্বাস জন্মেছিল যে তার একান্ত অনুরোধ রমা কিছুতেই প্রত্যাখ্যান করতে পারবে না। কিন্তু রমা জানায় বিষয় তার ভাই যতীনের,
সে শুরু যতীনের অভিভাবক মাত্র। এই শুনে রমেশ মিনতি করে রমাকে জানায় যে এই কটা টাকা তার কাছে তেমন বড়ো ক্ষতি নয়, কিন্তু তার জন্য এত লোকের অন্নকষ্ট দেবার মতো নিষ্ঠুর কাজ সে যেন না করে। রমা এর উত্তরে মৃদুভাবে বলে নিজের ক্ষতি করতে না পেরে যদি নিষ্ঠুর হই তাহলে তাই হোক। আর রমেশবাবুর যখন চাষিদের জন্য এতই দয় তবে তিনি নিজেও ক্ষতিপূরণ করে দিন। এই কথাটিকে বিদ্রুপ কল্পনা করে রমেশ ওই উক্তিটি করেছিল।
৩.৮ রমা বিহ্বল হতবুদ্ধির ন্যায় ফ্যালফ্যাল করিয়া চাহিয়া রহিল—রমার এমন অবস্থা হয়েছিল কেন?
উঃ। বর্ষার একশো বিঘের মাঠের ধান নষ্ট হতে বসেছে দেখে রমেশ রমাকে চাষিদের হয়ে দক্ষিণের বাঁধ কেটে দেবার অনুরোধ জানায়। রমা বাঁধ কেটে দেবার ব্যাপারে রমেশের পাশে থাকবে না এটা সে স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও সে কোনোভাবেই রাজি হয় নি। তখন দুজনের মধ্যে বেশ কিছু উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। রমা স্পষ্ট জানিয়ে দেয় তার পক্ষে ক্ষতি স্বীকার করা সম্ভব নয়। চাষিদের প্রতি দরদি হলে রমেশ যেন ক্ষতিপূরণ নিজে দিয়ে দেয়। এই কঠিন কথাটি রমেশ আশা করেনি, কারণ তার কাছে রমার স্থান অনেক ওপরে ছিল। তাই নিজেকে সংযত করতে না পেরে রমেশ বলে তুমি অত্যন্ত হীন এবং নীচ, আমি ব্যাকুল হয়েছি বলে তুমি আমার কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করলে। সংসারে যত পাপ আছে মানুষের দয়ার উপর জুলুম করাটা সবচেয়ে বড়ো পাপ। আমার দুর্বলতা জানো বলে টাকা আদায়ের চেষ্টা করলে।
এই মন্তব্য শুনে রমা অপমানিত বোধ করলেও এর কোনো উত্তর সে দিতে পারেনি। এই অশ্রুসজল চোখে বিহ্বল হয়ে রানা রামেশের দিকে চেয়ে থাকে।
৩.৯ রমা আকবরকে ডেকে এনেছিল কেন ?
উত্তর- একশো বিয়ে মাঠের ধান নষ্ট হতে বসেছে দেখে রমেশ চাষিদের হয়ে প্রথমে বেনী ঘোষাল ও পরে রমাকে অনুরোধ জানায়। রমার কাছ থেকে সহয়তা না পেয়ে রমেশ জানায় যে সে গরিব গ্রামবাসীর ক্ষতি হতে দেবে না। সে একাই তাঁর কেটে জল বের করে দেবে। এতে রমা বুঝেছিল একটা অনর্থ হতে পারে। বাঁধকেটে একশো বিঘে মাঠের জল বার করতে কালো যাতে না পারে তাই বাঁধ পাহারা দেবার জন্য রমা পীরপুরের প্রজা লাঠিয়াল আকবরকে ডেকে এনেছিল।
৩.১০ 'মোরা নালিশ করতি পারব না।' –কে একথা বলেছে? সে নালিশ করতে পারবে না কেন?
উত্তর-এ কথা বলেছে পীরপুরের রাজা পাঁচ গ্রামের সর্দার লাঠিয়াল আকবর।
আবার ধর্মপ্রাণ মুসলমান, গ্রামের মানুষ তাকে সর্দার বলে মান্য করে। রমেশের হাতে লাঠি খেয়ে সে আঘাত পেয়েছে। কিন্তু তার চোখে ছোটোবাবুর কোনো অপরাধ নেই, ছোটোবাবু অপূর্ব লাঠি চালিয়েছে আত্মরক্ষার জন্য । কাউকে
খোনো আবাত করেনি। যে আঘাত তারা পেয়েছে তা এলোমেলো লাঠি চালানোর জন্য। গ্রামবাসীদের স্বার্থেই ছোটোবাবু রমেশ একাজ করেছে। তাই কনা বা বেণী ঘোষালের কথামতো সে মিথ্যা নালিশ করতে পারবে না। এতে তার আত্মসম্মানে আবার লাগবে। তাই সে নালিশ করতে চায় নি।
৪. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো
৪.১ নইলে আর ব্যাটাদের ছোটোলোক বলেচে কেন'? বক্তা কে? এই উক্তির মধ্যে দিয়ে বক্তার চরিত্রের কী পরিচয় পাও?
উত্তর- বক্তা পল্লীসমাজ' গল্পের অন্যতম চরিত্র বেণী ঘোষাল।
বেণীমাধব একটি সামন্ততান্ত্রিক জমিদার চরিত্র। জমিদারি চালানোর তত্ত্বটি তিনি পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে ভালোই শিখেছেন। চরিত্রটি অত্যন্ত নীচ ও স্বার্থপর। অপরের ক্ষতি করে তিনি নিজের আখের গুছাতে চান। চাষিরা জমিদারের সম্পদ, কিন্তু বেণীর মতো মানুষেরা তা বুঝতে চান না। নিজের স্বার্থের কানাকড়িও তারা অপরকে দেবেন না। বরণ্য তিনি চান এই দুর্দিনে প্রজারা বিপদে পড়ে তার কাছে জমি বন্ধক দিয়ে ধার করতে ছুটে আসুক। তিনিও তার ফলে সুদ খাটিয়ে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। তাছাড়া তিনি অহংকারী ও শ্রেণিভেদে বিশ্বাসী। তাই নিজেকে উচ্চশ্রেণির মনে করে অপর একটি বিত্তহীন শ্রেণিকে ছোটোলোক বলতে তাঁর বাধে নেই।।
৪.২ বেণী, রমা, রমেশ—চরিত্র তিনটির মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করো। সেই সঙ্গে তিনটি চরিত্রের মধ্যে কোন্ চরিত্রটি তোমার সবথেকে ভালো লেগেছে এবং কেন তা জানাও ।
উঃ। গ্রামের জমিদার বেণীবাবু, তিনি বড়ো তরফ। তিনি একজন অত্যাচারী ও স্বার্থপর শ্রেণির মানুষ। তিনি সুবিধাবাদী, প্রজাদের দুর্দিনে তিনি সাহায্য করার বদলে তাদের আরও বিপদে ফেলতে ইচ্ছুক। তাই তিনি চান প্রজারা বিপদে পড়ে তাঁর কাছে জমি বন্ধক দিয়ে ধার কর্জ করুক ও দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়ুক। তাছাড়া বেণীবাবু যেহেতু সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতায় বিশ্বাসী তাই প্রজাদের তিনি মানুষ মনে করেন না। তাদের সম্বন্ধে চাষা, ছোটোলোক ইত্যাদি বাছাবাছা বিশেষণ প্রয়োগ করেন। এমনকি প্রয়োজনে তাদের জুতো মারা ও দরোয়ান দিয়ে বের করে দেওয়ার মতো নির্দেশ ও দিতে চান।
আবার রমেশবাবুকে প্রজাদরদী বলেও তিনি রসিকতা করেন। লেখক তাঁর চরিত্রটি প্রজাপীড়ক ও এক অহংকারী জমিদারের চরিত্র রূপে চিহ্নিত করেছেন।
রমা গ্রামের মেয়ে, সম্পর্কে বেণীবাবুর বোন হন। তারও বাবার কাছ থেকে পাওয়া অর্ধেক জমিদারীর অংশ রয়েছে, যদিও সে মনে করে তার ভাই যতীনই এর মালিক সে তার অভিভাবক মাত্র। রমা দৃঢ়চেতা মেয়ে কিন্তু শান্ত, মনে দয়ামায়াও আছে। তবে বেনীবাবু তাঁর সম্বন্ধে বলেছেন যে রমা সহজ মেয়ে নয় আর তাঁকে ভোলানোও সহজ নয়। রমা রমেশের মতে সায় দিতে পারেনি তার কারণ সে অংশের মালিক হলেও জমিদারী সত্ত্বার প্রয়োগ সে ঘটাতে চায় না। রমার মধ্যে দুটি সত্ত্বার বিকাশ ঘটেছে। রমেশ কে সে শ্রদ্ধা করে, বাল্যবন্ধু বলে হয়তো একটু বেশিমাত্রায় সে তার প্রতি অনুভবী কিন্তু একজন নারী হিসেবে পারিবারিক সীমারেখার গন্ডি লঙ্ঘন করার মতো দুঃসাহস তিনি দেখাননি।
রমেশ গ্রামের আর এক তরফের জমিদার এবং পাঠ্যাংশের কেন্দ্রীয় চরিত্র। তিনি ভদ্র, শান্ত ও প্রজাদরদী মানুষ। পরের দুঃখে তার প্রাণ কাঁদে। তিনি বোঝেন প্রজাবিহীন জমিদারী হয় না। তাই সুখে দুঃখে প্রজাদের পাশে তিনি দাঁড়াতে চান।
মানুষের ওপর জুলুম করাকে তিনি পাপ বলে মনে করেন। প্রজাদের জন্য রাস্তা বাঁধানো থেকে শুরু করে গ্রামে তিনি অনেক কিছু করেছেন। প্রজারাও তাঁর অনুগামী, ছোটোবাবুর প্রশংসায় গ্রামের সবাই পঞ্চমুখ । রমেশ মনে মনে রমাকে শ্রদ্ধা করেন এবং তার যেন বিশ্বাস জন্মেছিল যে রমা কখনও তার কোনো কথা প্রত্যাখ্যান করতে পারবে না।
এই চরিত্রগুলির মধ্যে রমেশ চরিত্রটি আমার সব থেকে ভালো লেগেছে। তিনি ন্যায়নিষ্ঠ ও প্রজাদরদী। এই ধরনের মানুষ থাকলে সমাজে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ একজন থাকবে। তাঁর এই নীরব, তেজস্বী ও প্রজাদরদী
শান্তরূপটি আমার ভালো লেগেছে।
৪.৩ উপন্যাসের নামে পাঠ্যাংশটি নামকরণ 'পল্লীসমাজ'-ই করা হয়েছে। নামকরণটি সুপ্রযুক্ত হয়েছে কিনা আলোচনা করো।
উঃ। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত 'পল্লীসমাজ' উপন্যাসের নির্বাচিত পাঠ্য অংশটির নামকরণ করা হয়েছে পল্লীসমাজ।
নামকরণটি অবশ্যই সুপ্রযুক্ত হয়েছে। গোটা গল্পটি জুড়ে পল্লীবাংলার নানা সমস্যা, কূটনীতি, রাজনীতি এই সবকিছু বিশ্লেষিত হয়েছে। রনা, রমেশ, বেণী, গোপাল গুড়ো এই চরিত্রগুলি গ্রামীণ সমাজের অঙ্গ। তৎকালীন গ্রাম বাংলায়
জমিদারতান্ত্রিক সমাজে প্রজাপীড়ন কীরূপ ভয়াবহ ছিল ও পাশাপাশি তাদের দুঃখ-কষ্ট কৃষিকাজ এবং সেই সব সহজ সরল ও সত্যবাদী পল্লী বাংলার প্রজাদের জীবনকথা এই কাহিনিতে সজীব হয়ে উঠেছে। কাহিনির প্রতিটি চরিত্র একে
অপরকে চিনতে সাহায্য করেছে। গ্রাম্য সমাজ ব্যবস্থার তৎকালীন পরিস্থিতি বুঝতে পাঠ্যাংশটি অনেকাংশে সহায়ক হয়েছে। তাই সেই পটভূমির ওপর ভিত্তি করে 'পল্লীসমাজ' নামকরণটি সুপ্রযুক্ত হয়েছে বলা যায়।
8.8 পল্লীসমাজ পাঠ্যাংশে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার কোনো নিদর্শন পেয়ে থাকলে সে সম্পর্কে আলোচনা করো।
এই ধরনের ব্যাকথার সুফল-কুফল লেখো।
উঃ। কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার 'পল্লীসমাজ' উপন্যাসে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার কিছু চিত্র তুলে ধরেছেন। সেই সময়ের জমিদাররা দরিদ্র প্রজাদের ওপর নানাভাবে শোষণ চালিয়ে বহু ধন সম্পত্তির অধিকারী হয়েছেন। জমিদার দেশী ঘোষাল ছিলেন সেই ধরনের জমিদার শ্রেণির প্রতিনিধি, যাঁর কাছে মানুষের জীবন ও সুখ-দুঃখের চেয়ে অর্থের মূল্য অনেক বেশি। এখানে প্রজাশোষণের এক চিত্র ধরা পড়েছে। যখন বেনীবাবু জানিয়েছেন ধান নষ্ট হয়ে গেলে প্রজারা আবার তাদের কাছেই সুদে টাকা ধার নিতে আসবে, এতে জমিদারির আয় বাড়বে। সে সময়ে আর এক শ্রেণির জামিদাররা ছিলেন প্রজাহিতৈষী, রমেশ ছিলেন এই শ্রেণির জমিদারদের প্রতিনিধি। তিনি অসহায় গ্রামবাসীদের অবস্থা উপলব্ধি করে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে প্রজাদের বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। শিক্ষিত সচেতন জমিদার রমেশ প্রজাদের পাশে থেকে তাদের নিরাপত্তা দিয়েছেন। এর ফলে জমিদার ও প্রজার মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এই দুইটি নিদর্শন থেকে বলা যেতে পারে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবসায় কুফল হিসেবে বেড়ে উঠেছিল প্রজাশোষণ। যার প্রমাণ আমরা দেখি লাঠিয়াল আকবর কে বাঁধ রক্ষা করাতে নিয়োগ করার মাধ্যমে। সুফল হিসেবে দেখা গেছিল জমিদার ও প্রজার মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক। এই সমাজে জমিদার নিজেই প্রজাদের মঙ্গলের জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। যেমন আমরা রমেশকে নিজেই লাঠি হাতে গরিব চাষিদের জন্য ধান কাটার ব্যাপারে লড়তে দেখি। তবে সামন্ততান্ত্রিক সমাজ পুরোটাই খারাপ ছিল একথা বলা যায় না। জীবন যন্ত্রনার মাঝেও পাপ-পুন্য ন্যায়-অন্যায়ের মূল্যবোধ অনেকের মধ্যেই ছিল। যেমন লাঠিয়াল আকবরের মধ্যে এই মূল্যবোধ ছিল বলেই সে রমেশের নামে সদরে নালিশ করতে চায়নি।
৫. সন্ধি করো :
উঃ। | বৃষ + তি = বৃষ্টি।
অন্ + আত্মীয় = অনাত্মীয়।
সম্ + বরণ = সংবরণ।
এক + অন্ত = একান্ত।
অতি + অন্ত = অত্যন্ত।
কাঁদ+ না = কান্না
৬. নীচের শব্দগুলির সন্ধি বিচ্ছেদ করো : নিরুত্তর, নমস্কার, তারকেশ্বর, যথার্থ, প্রত্যাখান, আশ্চর্য, তথা।
উঃ। নিরুত্তর = নিঃ + উত্তর।
যথার্থ = যথা + অর্থ।
তদবস্থা = তৎ + অবস্থা।
নমস্কার = নমঃ + কার।
তারকেশ্বর = তারক + ঈশ্বর
প্রত্যাখান = প্রতি + আখ্যান।
আশ্চর্য = আঃ + চর্য
৭. নীচের দেওয়া শব্দগুলির দল বিশ্লেষণ করো : অপরাহ্ণ, অকস্মাৎ, আহ্বান, দক্ষিণ, উচ্ছিষ্ট, উত্তপ্ত, দীর্ঘশ্বাস, অশ্রুপ্লাবিত, হিন্দুস্থান, অস্বচ্ছ।
উঃ। অপরাহ্ণ = অ-প-রা-হু = চারিটি মুক্তদল রয়েছে।
অকস্মাৎ = অ-ক-স-ম = দুটি রুদ্ধদল ও একটি মুক্তদল রয়েছে।
আহ্বান = আ-হ-বান = দুটি মুক্ত একটি রুদ্ধদল রয়েছে।
দক্ষিণ = দখ-খিণ = একটি মুক্ত ও একটি রুদ্ধদল রয়েছে।
উচ্ছিষ্ট = উচ্-ছিস্-ট = একটি মুক্ত ও দুটি রুদ্ধদল রয়েছে।
উত্তপ্ত = উৎ-তপ-ত = একটি মুক্ত ও দুটি রুদ্ধদল রয়েছে।
বিস্ফারিত =বিস্-ফা-রি-ত = তিনটি মুক্ত ও একটি রুদ্ধদল রয়েছে।
দীর্ঘশ্বাস = নীর-ঘ-শ্বাস = একটি মুক্তদল ও দুটি রুদ্ধদল রয়েছে।
অশ্রুপ্লাবিত = অশ্-রু-প্লা-বি-ত = চারটি মুক্ত ও একটি রুশ দল রয়েছে।
হিন্দুস্থানি= হিন-দুস-স্থা-নি = দুটি মুক্ত ও দুটি বৃদ্ধ দল রয়েছে।
অস্বচ্ছ = অ-স্বচ্ছ- = দুটি মুক্তদল ও একটি বৃদ্ধদল রয়েছে।
৮. নীচের বাক্যগুলিকে নির্দেশ অনুযায়ী পরিবর্তন করো :
৮.১ কথাটা রমেশ বুঝিতে পারিল না। (যৌগিক বাক্যে)
উঃ। কথাটা রমেশ শুনিল কিন্তু বুঝিতে পারল না।
৮.২; এ বাড়িতে আসিয়া যখন প্রবেশ করিল তখন সন্ধ্যা হয় হয়। (সরল বারে)
উত্তর-প্রায় সন্ধ্যার সময় এ বাড়িতে আসিয়া প্রবেশ করিল।
৮.৩ করা বাবে কি? (নির্দেশক বাক্যে) ।
উত্তর- ওরা যাবে কিনা জানতে চাই।
৮.৪ বেণীর এই অত্যন্ত অপমানকর প্রশ্নের উত্তর দিবারও তাহার প্রবৃত্তি হইল না। (অ্যাঁ-বাচক বাক্যে)
উঃ। বেশীর এই অত্যন্ত অপমানকর প্রশ্নের উত্তরে সে নীরব রহিল।
৮.৫ তুমি নীচ, অতি ছোটো। (যৌগিক বাক্যে) ঃ।
উত্তর- তুমি নীচ এবং অতি ছোটো।
৮.৬ পথে আর এতটুকু কাদা পাবার জো নেই দিদিনা (প্রশ্নবোধক বাক্যে)
উঃ । পথে কি আর এতটুকু কাদা পাবার জো আছে দিদিমা।
৮.৭ মাসি উপরে ঠাকুর ঘরে আবদ্ধ থাকায় এ সকলের কিছুই জানিতে পারেন নাই। (জটিল বাক্যে)
উঃ । মাসি যেহেতু উপরে ঠাকুর ঘরে আনন্দ ছিলেন তাই এ সকলের কিছুই জানিতে পারেন নাই।
৯. নীচের দেওয়া শব্দ দুটিকে দুটি আলাদা আলাদা অর্থে ব্যবহার করে বাক্যরচনা করো।
উঃ। যাত্রা ( রওনা দেওয়া) ঝড় বৃষ্টির মধ্যে কাকু চাকরিতে যোগ দেওয়ার জন্য যাত্রা করলো।
যাত্রা ( অভিনয় অনুষ্ঠান) প্রতিবছর পূজোয় আমাদের গ্রামে ভালো অপেরার যাত্রা হয়।
বাঁধ (নদীর বাঁम) নদীর উপর বাঁধ দিয়ে অনেক জলাধার তৈরি করা হয়।
বাঁধ (আটকে রাখা) গ্রামের ডাক্তার ওষুধ দিয়ে অনেক অসুখের বাঁধ দেয়।
১০. নীচের বাক্যগুলিতে ব্যবহৃত পদগুলির পরিচয় দাও :
১০.২ এরা সারাবছর খাবে কী ?
১০.৩ রমেশ কহিল তুমি অত্যন্ত হীন এবং নীচ
১০.৪ রমা চুপ করিয়া রহিল
উঃ
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর ও
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
★ আকবর কে?
উঃ । আকবর ছিল রমা ও বেণীবাবুর পীরপুরের প্রজা ও পাঁচটি গ্রামের সর্দার।
★ বেণী আকবরকে কী করতে বলেছিল?
উঃ। বেশী আকবরকে বলেছিল রমেশের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা নালিশ করতে। যাতে ওয়ারেন্ট বের করে রমেশকে জেলে পোরা যায়।
★ রমা সম্পর্কে বেশী কী মন্তব্য করেছিলেন?
উঃ। বেণী বলেছিলেন রমা সোজা মেয়ে নয়, তাকে ভোলানো সহজ নয়। তুমি তো ছেলেমানুষ তোমার বাপকেও সে চোখের জলে নাকের জলে করে তবে ছেড়েছিল।
★. 'ওঠরে গহর....' গহর কে?
উঃ। পাঁচ গ্রামের সর্দার আকবরের ছেলে হলো গহর।
★ 'দাসি কহিল...।' দামি কী বলেছিল?
উঃ। দাসি বলেছিল পথে একটুও কাদা পাওয়া যাবে না। ছোটোবাবু এমনভাবে রাস্তা বাঁধিয়ে দিয়েছেন যে পথে সিদুর পড়লেও কুড়িয়ে নেওয়া যাবে।
★ শরৎচন্দ্র কোন সময়ের ঔপন্যাসিক ছিলেন?
উঃ। শরৎচন্দ্র রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক উপন্যাসিক ছিলেন।
★ রমার সাথে রমেশের কতদিন পর দেখা হয়েছিল?
উঃ। রমার সাথে রমেশের প্রায় মাসখানেক পরে দেখা হয়েছিল।
★ বেগী রমেশের কে হন?
উঃ। বেণী সম্পর্কে রমেশের জ্ঞাতি দাদা হন।
★ রমা কে ছিল রনেশের?
উঃ। রমা ছিল রমেশের প্রতিবেশী, ছোটোবেলার স্কুলের সহপাঠিনী।
★ ‘আমরাই বা কেন এত লোকসান করতে যাব সে তো আমি বুঝতে পারিনে ?-কে এই কথা বলেছেন? কীসের লোকসানের কথা বলা হয়েছে? এই কথার কে কী উত্তর দিয়েছিল?
উঃ। জমিদার বেণীবাবু এই কথা বলেছেন।
জলার বাঁধ কেটে দিলে চাষিদের উপকার হবে ঠিকই কিন্তু বেণী ঘোষালের দু-তিনশো টাকার মাছ পাশের জলাশয় থেকে বেরিয়ে যাবে। তাই বেণীবাবু এই ক্ষতি স্বীকার করতে কোনোভাবেই রাজি নয়। এই লোকসানের কথাই এখানে বলা হয়েছে।
বেণীবাবুর এই কথায় রমেশ বলেছিল ভেবে দেখুন বড়দা, তিনটি ঘরের দুশো টাকার লোকসান বাঁচাতে গিয়ে গরিবদের সারা বছরের অন্ন মারা যাবে এবং কম করে তাদের পাঁচ সাত হাজার টাকার ক্ষতি হবে।
★ অসহ্য বিস্ময়ে রমার দুই চক্ষু বিস্ফারিত হয়ে উঠল কেন?
উঃ। রমেশ রমাকে অত্যন্ত হীন এবং নীচ বলায় অসহ্য বিস্ময়ে রমার দুই চক্ষু বিস্ফারিত হয়ে উঠল।
★ রমেশের সঙ্গে কৃষকরা কোথায় গিয়ে দেখা করেছিল?
উঃ। কৃষকরা চন্ডীমণ্ডপে গিয়ে রমেশের সঙ্গে দেখা করেছিল।
★ 'আমি অভিভাবক মাত্র'-বক্তা কে? সে কার অভিভাবক?
উঃ। বক্তা হলেন রমা। সে তার ভাই যতীনের অভিভাবক।
★ ‘খুড়োর মতামতের জন্য রমেশের কৌতূহল ছিল না।'—খুড়ো কে? কেন তাঁর মতামতের জন্যে রমেশের কৌতূহল ছিল না। সে তখন কী করেছিল?
উঃ। খুড়ো বলতে এখানে হালদার মশায়ের কথা বলা হয়েছে।
খুড়োর মতামতের ব্যাপারে রমেশের কোনো কৌতূহল ছিল না। কারণ হালদার মশায় ছিলেন তোষামোদ কারী মানুষ।
তিনি সবসময় বেণী ঘোষালের কথায় সহমত পোষণ করেন।
তখন রমেশ কোনো উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল কারণ বেণীবাবুর অপমানজনক
কথার উত্তর দেওয়ার মতো প্রবৃত্তি তার ছিল না।
★ আকবর ছেলেদের নিয়ে চলে যাওয়ার পর বেনী ও রোমা কি কি করেছিল?
উত্তর আকবর তার ছেলেকে নিয়ে চলে যাওয়ার পর বেনী নিষ্ফল নিরাশায় দুচোখে আগুন ঝরিয়ে মনে মনে আকবরকে অকথ্য গালিগালাজ করতে লাগলো এবং সে বুঝতেই পারল না যে রমা উদ্যোমহীন এবং নীরব হয়ে গেল কেন অন্যদিকে রমার বুক থেকে একটা গভীর দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো এবং দুই চোখ জলে ভরে উঠলো এত বড় অপমান অপরাজের পর তার মনে হতে লাগলো যে তার বুকের উপর থেকে এক পাথর নেমে গেল এবং এর কোন কারনে রমা খুঁজে পেল না বাড়ি ফিরে সারারাত রোমার ঘুম এলো না এবং চোখের জলে তার সমস্ত মুখ ভেসে যেতে লাগলো
★ 'লাঠি ধরলে বটে!' কে কার লাঠি ধরার কথা বলছিল? ঘটনাটি বিবৃত করো।
উঃ। কথাটি বলেছিল বেণীবাবুর পীরপুরের মুসলমান প্রজা আকবর। সে ছোটোবাবু অর্থাৎ রমেশের লাঠি ধরার কথা বলছিল।
আকবরকে রমা ডেকে এনে বাঁধ পাহারা দেবার জন্য পাঠিয়েছিল। রমেশের একজন হিন্দুস্থানী লাঠিয়াল ছিল। রমা দেখতে চেয়েছিল রমেশ সেই হিন্দুস্থানি লাঠিয়ালটির
গায়ের জোরে কেমন ভাবে করে কী করে? আকবরের ছেলে গহরের লাঠিতেই সেই হিন্দুস্থানী বাপ বলে বসে পড়েছিল। তখন ছোটোবাবু রমেশ তার লাঠি তুলে এমনভাবে
বাঁধ আটকে লড়তে লাগল যে আকবররা তিন বাপব্যাটা মিলে তাকে হটাতে পারল না। অন্ধকারে বাঘের মতো রমেশের চোখ জ্বলতে লাগল। তাঁর লাঠির আঘাতে আকবর ও তার ছেলেরা রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছিল।
★ রমেশ আকবরকে কী বলেছিল? তার উত্তরে আকবর কী বলেছিল? এর ফল কী হয়েছিল?
উঃ। রমেশবাবু আকবরের সামনে লাঠি হাতে বাঁধ কেটে দেবার ব্যবস্থা করতে বলেছিল। এছাড়া সে বলেছিল যে আকবর তুই বুড়ো মানুষ সরে যা। বাঁধ কেটে না দিলে সারা গাঁয়ের লোক মারা পড়বে। তোর নিজের গাঁয়ে জমিজমা যখন আছে তখন তুই বুঝে দ্যাখ সব বরবাদ হলে কেমন লাগে। আকবর তাকে বলেছিল যে আল্লার দিব্যি তুমি সরে দাঁড়ালে তোমার আড়ালে থাকা যে লোকেরা মুখে কাপড় বেঁধে কোদাল দিয়ে বাঁধ কাটছে তাদের মুণ্ডু ফাঁক করে দেবো। এর ফলে আকবর ও তার ছেলেদের সঙ্গে রমেশের ভয়ানক লাঠির লড়াই বাঁধে এবং আকবর ও তার ছেলেরা প্রবল ভাবে জখম হয়।
★ শব্দার্থঃ বুড়ো - কাকা।
তদাবস্থায়—সেই অবস্থায়।
বিহ্বল হতভম্ব।
অগোচর- ইন্দ্রিয়ের অতীত।
নিরাশা—আশাহীন হওয়া।
স্তব্ধতা—নিশ্চুপ।
হেতু—কারণ।
পরাজয়- হেরে যাওয়া।
অকারণে - কোনো কারণ ছাড়াই।
তেজ—জোর।
অগ্নিবর্ষণ—দুই চোখ দিয়ে আগুন বেরানো। বিকৃত— খারাপ।
হুকুম—আদেশ।
লাঠিয়াল জমিদারের পোষা লাঠিধারী লোকজন, তারা জমিদারের নির্দেশে প্রজাদের উপর বলপ্রয়োগ করে থাকে।
অবিশ্রান্ত — একনাগাড়ে।
অপরাহ্লবেলা – বিক্লেবেলা।
নিকেশ — খালি,
সংবরণ—সামলে নেওয়া, নিয়ন্ত্রণ।
উচ্ছিষ্ট— এঁটো।
প্রবৃত্তি—ইচ্ছা।
নিরুত্তরে- উত্তর না দিয়ে।
স্মরণ—মনে থাকা
প্রত্যাখ্যান--ফিরিয়ে দেওয়া, ত্যাগ করা।বেধেছে—বাধা পেয়েছে।
জুলুম-অত্যাচার।
অস্বচ্ছ—স্বচ্ছ নয় এমন।
ভীষণাকৃতি - ভয়াকের চেহারা।
অনাহত-আহত না হয়ে।
ক্ষিপ্তপ্রায়-ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়ে।
হাজত— জেল।
নিরুদ্যম — উদ্যমহীন।
সরম—লজ্জা।
পান্ডুর — মলিন। ও
য়ারেন্ট—গ্রেফতারি পরোয়ানা।
সনি-শালের।
কৈরিদি—করিয়ানি বা অভিযোগকারী।
অভিরুচি—মনের ইচ্ছা।
মনস্তত্ব—মানসিক অবস্থা।
বিস্ফারিত-প্ররিত, বড়ো।
হস্তগত— দখলে এসেছে এমন।
বিপরীত শব্দ লেখ
উত্তপ্ত—শীতল।
প্রবৃত্তি — নিবৃত্তি।
স্মরণ – বিস্মরণ।
নিঃশব্দে—সশব্দে।
যান- গ্রহন।
আবশ্যক-অনাবশ্যক।
অস্বচ্ছ — স্বচ্ছ।
বিকৃতি–অবিকৃত।
নিরুদ্যম — উদ্যম।
-