একটি রাজপথের আত্মকথা || রচনা / akti rajapathe antakatha || rachana
![]() |
রচনা
একটি রাজপথের আত্মকথা
ভূমিকা : আমি একটি রাজপথ। আমি তোমাদের আমার আত্মকথা বলব । আজ আমাকে একটা বড় চওড়া রাস্তা তোমরা দেখতে পাচ্ছ। তোমরা একটা আমার সুন্দর নামও দিয়েছো। কিন্তু প্রথম থেকে আমি এরকম ছিলাম না। বছর দশেক আগে পর্যন্ত আমার কোন তেমন গুরুত্ব ছিল না। তখন ছিলাম শুধুমাত্র একটি সড়ক পথ। আমি রাজপথের গুরুত্ব পেয়েছি খুব বেশি হলে দশ বছর। আগে আমাকে বিশেষ কেউ চিনত না। খাতার পাতায় আমার কথা তখন কেমন লেখা হতো না।
অতীত স্মৃতি ঃ আজকে আমি রাজপথ নামে পরিচিত হয়েছি ।এক সময় ছিলাম মাটির তৈরি কাঁচা রাস্তা। দুপাশে ছিল হোগলা বন। প্রথম দিকে দু'-একজন মানুষ পায়ে হেঁটে আমার উপর দিয়ে যাতায়াত করত। সাইকেল ছাড়া অন্য কোনো রকমের গাড়ি এ-পথে চলত না। প্রায় চার বছর এভাবে কাটল। এখানকার লোকসংখ্যা বাড়তে থাকল। আস্তে আস্তে জায়গাটা শহরে পরিণত হলো । আমার তখন কদর বাড়লো । ইট-সুড়কি ফেলে আমাকে চওড়া ও উঁচু করা হল। এভাবেও কাটল বেশ কয়েক বছর। একদিন দেখলাম মিউনিসিপ্যালিটির ইঞ্জিনিয়াররা এসে মাপজোক করলেন। তাদের কথাবার্তা থেকে বুঝলাম যে, শহরের অন্যান্য সব রাস্তা আমার থেকে সরু। একমাত্র আমি চওড়া এবং সুদীর্ঘ রাস্তা।। তাই আমাকে এখন রাজপথের মর্যাদা দেওয়া হবে। সে কথা শুনে আমার আনন্দবোধ হল।
বর্তমান অবস্থা : এরপর রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, বালি ফেলা, ইট পাতা, পাথর ফেলা ইত্যাদি চলতে থাকল। শেষ হতে প্রায় দুবছর কাটল। তারপর এগিয়ে এলো উদ্বোধনের দিন। ফুল, মালা প্রভৃতি দিয়ে আমাকে সাজানো হল। মুখ্যমন্ত্রী ফিতে কাটলেন। আমার আনন্দের সীমা রইল না। এতদিন অবহেলায় কাটলেও এখনআমার মর্যাদা বাড়ল। আমার ওপরে প্রায় দু-ইঞ্চি পিচের প্রলেপ। দুপাশে পথচারীদের যাওয়ার জন্য আলাদা পথ। দিনরাত্রি অসংখ্য ছোটো-বড়ো গাড়ি ছুটে চলেছে আমার বুকের ওপর দিয়ে। আমি নাকি এখন এই শহরের গর্ব।
দায়িত্ব পালন : রাজপথের মর্যাদা পাওয়ার আগে থেকেই আমি আমার দায়িত্ব পালন করে চলেছি। সাইকেল, রিক্সা, ট্যাক্সি, বাস, লারি সবরকম যানবাহনই আমার ওপর দিলে ছুটে চলে। শহরের মানুষ শহরের বাইরে গেলে কিংবা বাইরের মানুষ শহরে এলে আমাকে ব্যবহার করে। আমার মাধ্যমে রাজ্যের বাকি অংশের সঙ্গে এই শহরের যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে। আমার কোনো বিশ্রাম নেই। মাঝরাতে মালবোঝাই বড়ো বড়ো লরি আমার বুক কাঁপিয়ে ছুটে চলে। মানুষের সেবায়, সমাজের দেশের সেবায় লাগতে পারায় আমার জীবন সার্থক।
্
উপসংহার : আমার মর্যাদা বেড়েছে। আমার ওপর দিয়ে ছুটে চলা গাড়িগুলির গতিও বেড়েছে। তার ফলে আমার বুকে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। মানুষ মারা যাচ্ছে। কিন্তু এর জন্য তো আমার কোনো দোষ নেই। আমার কী-ই বা করার আছে। আমি মানুষের অনেক সুখ দুঃখকে সাথী হয়ে আছি। হয়তো ভবিষ্যতেও থাকতে হবে।