রচনা || একটি পর্বতের আত্মকথা / akti paribarer amaya katha || rachana - school book solver

Saturday, 21 June 2025

রচনা || একটি পর্বতের আত্মকথা / akti paribarer amaya katha || rachana

 



রচনা

একটি পর্বতের আত্মকথা

ভূমিকা : আমি একটি পর্বত। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকাই আমার কাজ। দীর্ঘকাল ধরে একই জায়গায় একইভাবে দাঁড়িয়ে আছি। আমি সর্বদা নিরব ও মৌন থাকি । অসংখ্য গাছপালা আমার বুকে জন্ম নেয়। বড় বড় হিমবাহ আমার বুক চিরে ধীরগতিতে নেমে আসে। সূর্যোদয় আমি সকলের আগে দেখতে পাই।বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির দ্ধারা ধীরে ধীরে আমার উচ্চতা হ্রাস পাচ্ছে।


জন্ম ও গঠন : এখন তোমরা আমাকে যে পর্বতরূপে দেখতে পাচ্ছ আমি কিন্তু এরকম ছিলাম না। তোমাদেরই মুখে শুনেছি আমি ছিলাম একটা সাগর। পৃথিবীর ভিতরে প্রচণ্ড উত্তাপ ও আলোড়নের ফলে চাপের সৃষ্টি হয়। সেই চাপের ফলে  আমার উৎপত্তি হয়েছে। আমার বয়স যে কত তা আমার জানা নেই। আমি পৃথিবীর কোন অংশ ভাঁজ পড়ে সৃষ্টি হয়েছে বলে আমার নাম ভঙ্গিল পর্বত। আমার দেহ মাটি পাথর নুড়ি দিয়ে তৈরি। আমার দেহে আছে বড় বড় আগ্নেয়গিরির জ্বালা মুখ। হিমবাহ আমার উপরে বিভিন্ন ভূমিরূপ তৈরি করেছে। যেমন  পিরামিড চূড়া, ঝুলন্ত উপত্যকা ইত্যাদি। আমার বুক চিরে ছুটে চলে ঝর্ণার জলধারা। আমার একটি নির্দিষ্ট উচ্চতা পর্যন্ত বরফ জমে। সেই বরফ গলা জল নিচে গড়িয়ে পড়ে বড় বড় নদী সৃষ্টি হয়। আমার বুকে গরে ওঠে বিভিন্ন উপতাকা। যেমন দুন উপত্যকা। তোমরা যাকে দেরাদুন বলে চেনো। আমার বুক চিরে তৈরি হয়েছে গিরিপথ । সেই পথ দিয়ে অনেক মানুষ যাতায়াত করে। যেমন খাইবার, বোলান, নাথুলা, জেলেপলা ইত্যাদি।



অবদান : আমি তোমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরিয়ে দিয়েছি। তোমাদের জীবন দায়ী ঔষধি গাছের জন্ম আমার বুকে ।  যে গাছের গুণাগুনে তোমাদের অনেক রোগ ভালো হয়।তোমরা সুস্থ থাকতে পারো। আমার বুকে ছোট ছোট ঝর্ণার জলধারা তৈরি করে তোমাদের সমতলকে করেছি সুজলা- সুফলা। তোমাদের গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলি কিন্তু আমার গর্ভ থেকে তৈরি হয়েছে। তোমাদের অনেক দেবদেবীকে আমি আমার বুকে স্থান দিয়েছি।  যেমন কৈলাশ, নীলকন্ঠ, অমরনাথ  । সেগুলি আমার বুকের মধ্যে অবস্থিত । এগুলি কি আমার অবদান নয়?  আমি তোমাদের বৈদেশিক শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করে চলেছি। আবার কখনো প্রচন্ড হিমেল বাতাসকে আটকে তোমাদের তীব্র শীতের হাত থেকে রক্ষা করছি। আমি বিভিন্ন গাছপালা এবং জীবজন্তুর আশ্রয়দাতা হিসেবে বেঁচে আছি । আদিম মানুষকে আমি প্রথম আমার গুহার মধ্যে স্থান দিয়েছিলাম। সে কথা কি তোমরা ভুলে গেছো? অতীতে তোমাদের  মুনি ঋষিগণ আমার এই চরণ তলে আশ্রয় নিয়ে সাধনা করতো। সে কথা নিশ্চয়ই তোমাদের অজানা নয়। আমি তোমাদের চাষবাসের জন্য সমতল জমি দিতে পারিনি ঠিক কথা। কিন্তু আমি তোমাদের খনিজ ভান্ডারে সমৃদ্ধ করে তুলেছি।


আমার জীবনকাল:-  আমি জন্ম থেকেই এই ভাবেই  মৌন নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি ইতিহাসে সাক্ষী রূপে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আমার কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ঠিক কথাই।তবুও আমি তোমাদের সেবার মধ্যে দিয়ে জীবন কাটিয়ে চলেছি। প্রকৃতি আমার মা-বাবা। তারাই আমার সৃষ্টিকর্তা। আর আমার সন্তান হলো আমার বুকে বসবাসকারী জীবজন্তুরা। আমি তাদের খুব ভালোবাসি। আমি পৃথিবীর মধ্যে উচ্চতম জায়গা পেয়ে যতটা না গর্বিত হই, তার চেয়ে অনেক বেশি গর্বিত হই যখন আমার গর্ভ  থেকে সৃষ্টি নদ-নদীকে তোমরা দেব দেবী জ্ঞানী পুজো করো। আমি গর্বিত হই যখন তোমরা আমার বুকে বসবাসকারী দেব-দেবীকে দর্শন করতে আসো। আমি অপেক্ষায় থাকি সেই দিনটার জন্য। তোমরা যখন কোন খনিজ সন্ধানে বেরিয়ে আমার মধ্যে ডিনামাইট চার্জ করো তখন আমার খুব কষ্ট হয়। আবার যখন যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতে খেলতে আমার ওপর বোমা ফেলো তখন আমার খুব কষ্ট হয়। কিন্তু আমি কোন প্রতিবাদ করতে পারি না। কারণ মৌন থাকাই আমার আমার স্বভাব।।


উপসংহার : আমি কয়েক হাজার বছর এইভাবে দাঁড়িয়ে আছি। হয়তো আরও কয়েক হাজার বছর থাকতে হবে। পৃথিবীর সাক্ষী হয়ে বেঁচে থাকতে হবে। ভবিষ্যতে হয়তো আমার বুকেরই আর ও অনেক নদনদী  সৃষ্টি হবে। নতুন নতুন ঝরনার জলধারা সৃষ্টি  হয়ে ছলছল শব্দে বয়ে যাবে। হয়তো দীর্ঘদিন আমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। আর নয়তো,কোন এক প্রবল বিপর্যয় আমি ধ্বংস হয়ে যাব। তখন কেউ মনে রাখবে না আমার কথা। হয়তো নতুন কোন পৃথিবীর জন্ম নেবে। আর বিধাতা হয়তো আমাকে নতুন গ্রুপে সেখানে পাঠাবে।