একটি কলমের আত্মকথা || রচনা || akti islamer amaya katha || rachana - school book solver

Thursday, 19 June 2025

একটি কলমের আত্মকথা || রচনা || akti islamer amaya katha || rachana

 


রচনা

একটি কলমের আত্মকথা


ভূমিকা : আমি একটি কলম। আজ আমি তোমাদের আমার আত্মকথা সম্পর্কে জানাবো। আমার কাজ শুধু সাদা খাতায় লেখা । আর আমি যখন শিশুদের হাতে পড়ি, তখন আমার কাজ শুধু দাগ কাটা। আর হিজিবিজি আঁকা। আমি যখন যার কাছে থাকি সে-ই আমাকে লেখার কাজে লাগায়। তবে কম্পিউটার যুগে আমার কদর একটু কমে গেছে। এখন ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষক ছাড়া অন্য সকলে আমাকে কাছে রাখে না। তারা প্রয়োজনের সময় খুঁজে নিয়ে আমাকে ব্যবহার করে। আমার সাহায্যে শুধু সত্য কথাই নয়, কত মিথ্যা কথা লেখা হয়।


জন্ম কথা :  আমার জন্ম ইতিহাসটা একটু তোমাদের বলি।আমার পূর্বপুরুষরা ছিল অতি সাধারণ। প্রথমে আমি ছিলাম সরকাঠির  তৈরি কলম। দোয়াতে কালি থাকতো। সেই দোয়াতের কালির মধ্যে আমাকে ডুবিয়ে ডুবিয়ে কালি মাখিয়ে খাতার পাতায় লেখা হতো। সরস্বতী পূজার সময় আমার কদর ছিল আলাদা। আমি যত্ন সহকারে স্থান পেতাম সরস্বতী দেবীর পায়ের তলায়। তারপর এল পাখির পালকের কলম। তারপর আসে ঝরনা কলম। তারপর হলাম কালি কলম। যখন আমি কালি কলম ছিলাম তখন আমার ভিতরটা তখন ফাঁপা থাকতো। তার মধ্যে কালি ভরে চেরা জিবের সাহায্যে কালি বার করে লেখা হতো । আমি কখনও কখন ও অনেকের খাতায় কালি ঢেলে দিতাম। কি করব? ছেলেরা বারবার আমার হাতে নিয়ে ঝাঁকার দিত। তারপর আমি হলাম ডট কলম ।এখন প্লাস্টিকের কারখানায় ছাঁচে ঢেলে আমার বিভিন্ন অংশগুলো তৈরি করা হয়। তারপর সেগুলিকে জোড়া হয়। তারপর রিফিল ভরা হয়। তখন আমি সম্পূর্ণ রূপ পাই। তারপর আমাকে প্যাকেট বন্দি করে আমার সঙ্গী সাথীদের সঙ্গে রাখা হয়। অনেক দোকান ঘুরে শেষে মালিকের কাছে যাই।


গুরুত্ব : আমাকে ছাড়া আজকের সভ্যতা একেবারেই অচল। ছোটো-বড়ো, নারী-পুরুষ, পণ্ডিত-মূর্খ সবাই আমাকে সম্মান দেয়। কখনও আমি বুক পকেটে স্থান পাই, কখনও আবার ব্যাগ বা বাক্সের মধ্যে স্থান পাই। কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষক, উকিল সবার কাছে আমি প্রিয়। ছাত্ররা লেখাপড়ার কাজে আমাকে ব্যবহার করে ডিগ্রী লাভ করে। বিচারক আমার সাহায্যে যেমন কাউকে মুক্তির আদেশ দেন, তেমনি কারুর মৃত্যুদণ্ড দেন। আবার অতি সাধারণ কৃষক ও শ্রমিক তাদের দৈনিন্দিন আয়-ব্যায়ের হিসেব রাখার জন্য আমাকে ব্যবহার করে। কত মানুষ তাদের মনের কথা লেখে আমার সাহায্যে ।



স্মৃতিকথা;- আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে শহরে একটি দোকানে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিলাম । একদিন একটি বয়স্ক মানুষ কলমের খোঁজ করছিল। দোকানদার আমাকে দেখালো। আমাকে রেখে বয়স্ক মানুষটির খুব পছন্দ হলো। আমার বন্ধুদের সঙ্গে থেকে আমাকে বার করে নিয়ে ভালো করে পরীক্ষা করল। তারপর কিছু অর্থের বিনিময়ে তার বুক পকেটে স্থান পেলাম। তার সঙ্গে তাদের বাড়ি এলাম। তিনি খাতার মধ্যে কিছু হিসাব পত্র লিখে আমাকে পাশের টেবিলে রেখে দিলেন। একদিন ওই বাড়িরই ছোট  ছেলে আবদার ধরল আমাকে তার কাছে নেওয়ার জন্য। বয়স্ক মানুষটি তাকে দিয়ে দিল। আমি তার ব্যাগের মধ্যে স্থান পেলাম। সে যখন টিউশনি  যেত আমি যেতাম তার সঙ্গে। সে যখন স্কুলে যেত তার সঙ্গে আমি যেতাম । সে যত্ন সহকারে ব্যাগ থেকে বার করে আমাকে নিয়ে লিখতো। অনেকে আমাকে দেখে হিংসা করত। তারপর ছেলেটি বড় হল।। তখন ও আমি তার সঙ্গে ছিলাম । সে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আমাকে সঙ্গে নিয়ে গেল । আমি পরীক্ষার খাতায় অনেক কিছু লিখলাম। তারপর সে অনেক বড় হল। অনেক ডিগ্রি লাভ করে বড় অফিসার হলো। তবুও সে আমাকে সঙ্গে রেখে দিল। তার বুক পকেটে থেকে আমি প্রতিদিন ট্রেনে যাতায়াত করতাম। একদিন ট্রেনে খুব ভিড় ছিল। সেই ভিড়ের মধ্যে  আমি তার পকেট থেকে ছিটকে পড়ে গেলাম। অনেকে ভিড়ের পায়ের  চাপে আমাকে ভেঙে ফেলল। তারপর রাতের দিকে এক ঝাড়ুদার ঝাড় দিতে দিতে আমাকে   একটা জায়গায় ফেলে দিল । আমি রেলের কোন এক ডাস্টবিনে স্থান পেলাম। আমি ওখানে থেকে মালিকের জন্য খুব কষ্ট পেলাম ।ভাবলাম ,জানি না আমাকে ছাড়া সে কেমন আছে। আজ আমি এখানে পড়ে আছি। হয়তো সারা জীবন এখানেই পড়ে থাকতে হবে।



উপসংহার : আমি মানুষের বহু উত্থান-পতনের সুখ-দুঃখের সাক্ষী। কত অখ্যাত লেখক বিশ্ববিখ্যাত হয়ে ওঠেন আমার সাহায্যে। কত প্রিয় বন্ধুর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে আমার সামান্য আঁচড়ে। কত অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারি আমি। তাইতো কেউ কেউ আমাকে সোনা ও রুপার মতো মূল্যবান ধাতু দিয়ে তৈরি করে। কত যত্ন নেয় আমার। আমিও গর্বিত হই।