একটি পথের আত্মকাহিনী || রচনা/ AKTI PATHER ANATAKATHA || RACHANARACHANAj - school book solver

Wednesday, 18 June 2025

একটি পথের আত্মকাহিনী || রচনা/ AKTI PATHER ANATAKATHA || RACHANARACHANAj

 




রচনা

একটি পথের আত্মকথা 


ভূমিকা:- আমি একটি পথ অর্থাৎ রাস্তা। পথিক আমার বন্ধু। মানুষের সেবায় আমার কাজ। আমার অনেক নাম আছে। যেমন মেঠো পথ, আল পথ,গ্রাম্য পথ, সড়ক পথ, রাজপথ ইত্যাদি। আমি বেশিরভাগ সময় একটা গ্রামের সাথে অন্য গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করি। আবার কখনও গ্রাম থেকে শহরের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করি। আবার কখনো এক শহর থেকে অন্য শহরের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করি। 



জন্ম সময়-  আমি কবে কার ইচ্ছায় তৈরি হয়েছিলাম আমি জানি না। তবে আমার মনে পড়ে প্রথমে আমি একটি গ্রামের সঙ্গে অন্য একটি গ্রামে শুধুমাত্র আমি যোগাযোগ কেন্দ্র ছিলাম। তখন আমার নাম ছিল আলপথ অর্থাৎ জমির মাঝখানের আল দিয়ে মানুষ যাতায়াত করত। কেউ কেউ আমাকে মেঠো পথ বলত। তখন আমার দেহ সবুজ ঘাসে ঢাকা থাকতো।কিছুদিন পর আমি আরো দুটো গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে ফেললাম। আমার দৈর্ঘ্য বড় হল। আমার দুপাশে মাটি ফেলে আমাকে অনেক চওড়া করা হলো । আমার উপর দিয়ে তখন গরুর গাড়ি চলাচল করতো। চাষিরা গরুর গাড়িতে করে শস্য নিয়ে যেত আমার উপর দিয়ে। আর সেই শস্য কখনো কখনো আমার উপর ছড়িয়ে পড়তো। কত পাখি এসে আমার উপর পড়ে থাকা শস্য খেতে আসতো। তখন আমার খুব ভালো লাগলো। আমার উপর দিয়ে পালকি চলে যেত। কখনো কখনো মানুষ ঘোড়ায় যাতায়াত করত। পথে চলতে চলতে মানুষরা কত গল্প করত। পথ চলতি মানুষরা কখনো কখনো আমার  সুনাম করতো। ছেলেরা আনন্দ করতে করতে আমার ওপর দিয়ে স্কুল যেত।  তারপর আমার ওপর লাল মাটি দিয়ে দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হলো।  দু-ধারে গাছ লাগানো হলো। আমার সৌন্দর্য আরো বেড়ে গেল। তারপর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমি কোন এক শহরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে ফেললাম। আমার পথ অনেক দীর্ঘ হয়ে গেল। আমার একটা নামকরণ হলো। আমার অঙ্গে মোরাম থাকল না। আমার অঙ্গ কালো পাথর কালো পিচ দিয়ে ঢাকা থাকল। আমার মাঝে মাঝে তৈরি হল কালভার্ট, ব্রিজ । আমার উপর দিয়ে মোটরসাইকেল ,  বাস , লরি, ট্রাক্টর বিভিন্ন যানবাহন দ্রুত গতিতে চলতে লাগলো। 


জীবনকাল - ক্রমে ক্রমে আমি বিশ্রাম কি জিনিস ভুলে গেলাম । যখন মাটির রাস্তা ছিলাম তখন আমি অনেক বিশ্রাম পেতাম। এখন রাতের অন্ধকারেও ভারী গাড়ি আমার উপর দিয়ে ছুটে চলে। আমার এখন খুব কষ্ট হয়। কিন্তু আমি তো পথ,,তাই কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারি না। তাছাড়া বলেই বা কি হবে?  মানুষের সেবা করাই আমার ধর্ম । তাই সকল কষ্ট আমি মুখ বুজে সহ্য করে নিই।



স্মৃতি কাহিনী - আমি কত ছিনতাই, লুটপাট দেখেছি।। কত মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে ওই ছিনতাই বাজবে হাতে। কত মানুষ খুন হয়েছে আমার বুকের উপর।। কতবার আমি রক্তাক্ত হয়েছি তা ঠিক নেই। আমি সাধারণ মানুষকে অনেকবার সাবধান করে দিতে চেয়েছি। ছিনতাইকারীদের নিষেধ করেছি এই অন্যায় কাজ যেন তারা না করে। কিন্তু আমার ভাষা কেউ তারা বোঝে নি। আমি বেদনায় চোখের জল ফেলেছি। আমি কিছু করতে পারিনি। কারণ আমার পক্ষে কিছু করা সম্ভব ছিল না। কারণ, আমি তো শুধুমাত্র একটা পথ।



অতীত জীবনের সঙ্গে বর্তমান জীবনে তুলনা-  যখন আমি সরু সংকীর্ণ রাস্তা ছিলাম তখন কত আনন্দ ছিল। সারা গা আমার ধুলো মাখা থাকতো। বর্ষায় আমার গা কাদায় ভর্তি থাকতো।  আমার উপর দিয়ে মানুষ পায়ে হেঁটে যাতায়াত করত। কত সুখ দুঃখের গল্প করত। আমি সেসব গল্প মন দিয়ে শুনতাম । কত চেনা মানুষ থাকতো। আমি তাদের সব গল্প শুনতাম। গ্রামের বধুরা আমার উপর দিয়ে কলসি করে জল নিয়ে যেত । কৃষকরা আমার উপর দিয়ে ফসল তুলে নিয়ে যেত। গ্রামের ছেলে মেয়েরা আমার উপর বৈকালে বসে বসে গল্প করত। এখন সেসব কথা সব অতীত । এখন  ওসব কিছু নেই। এখন শুধু গাড়ির হর্নের শব্দ , ইঞ্জিনের শব্দ, চাকার শব্দ শুনে দিন- রাত কেটে যায় ।এখন রোদ হলে আমার গা তপ্ত হয়ে যায়। কোন মন্ত্রী এলে বা ভোটের সময় আমাকে একটু সুন্দর করে সাজানো হয় এই পর্যন্ত। আমার আমার নাম -  যশ হয়েছে ঠিক কথাই । এখন আমার পরিধি অনেক বড় হয়েছে। আমি চওড়া হয়েছি। তবুও আমার মনে আগেকার মতো সুখ শান্তি নেই। হয়তো আর থাকবেও না। এরপর হয়তো আমি কোন দেশের সঙ্গে যুক্ত হব। আমি হব সুদূরপ্রসারী।। আস্তে আস্তে আমি হয়তো অতীতকে ভুলে যাব। পরিচিতি মুখ কোন দিন হয়তো আর দেখতে পাবো না। আমি শুধু বর্তমানে পরিবর্তনের সাক্ষী হয়ে বেঁচে থাকবো ।


উপসংহার- আমি তোমাদের সাথী হয়ে আছি‌।আর সারা জীবন তোমাদের সাথী হয়ে থাকবো। তোমরা আমার বুকের উপর দিয়ে যত দেখে শুনে চলতে পারবে তত তোমরা ভালো থাকবে। তোমাদের দুর্ঘটনা কমে যাবে। আমার ক্ষত  যত। মেরামত করতে পারবে তোমাদের দুর্ঘটনা মত কমে যাবে। তোমাকে দুর্ঘটনা হলে আমাকে দায়ী করবে না। কারণ  দুর্ঘটনার জন্য আমি কোন দোষ করতে পারিনা।কারণ আমি তো শুধুমাত্র একটি পথ। আমার ভাষা তোমরা কেউ কোনদিন বুঝতে পারোনি।আর বুঝতে পারবেও না।

শেষ।-------