TOMER DHEKkA AKTI MELA / রচনা তোমার দেখা একটি মেলা
রচনা
তোমার দেখা একটি মেলা
ভূমিকা: সকল মানুষের মিলনস্থল কে বল হয় মেলা।। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষ এক জায়গায় মিলিত হয়। আনন্দ উপভোগ করে। মেলায় অনেক বড় বড় দোকান বসে। অনেক বেচাকেনা হয়। দোকানদারদের আর্থিক অবস্থা উন্নতি ঘটে। গ্রামের দিকে এই মেলা গুলি বেশিরভাগ শীতকালে দেখা যায়। মেলা বিভিন্ন দেবদেবীর পীঠস্থান কেন্দ্র করে গড়ে। আবার কোন মহান পুরুষের স্মৃতিচারণের কথা স্মরণ করে মেলা গড়ে ওঠে। বিশেষ কোনো তিথিতে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। তেমনি আমার দেখা একটি মেলা হল বুড়ি বটের মেলা।
মেলাটির নামকরণ- অনেকদিন একটি পুরনো বটগাছ কে কেন্দ্র করে এই মেলার নাম হয়েছে বুড়ি বটতলার মেলা। শোনা যায় ওই বটতলায় দূর থেকে এক সাধু এসে বসবাস করত। সেখানে অনেক মানুষ তার কাছে যেত। বহু রোগ বালাই তিনি ভালো করতে পারতেন। অনেকদিন হলো তিনি মারা গেছেন সেখানে একটা মন্দির তৈরি হয়েছে। আর তখন থেকেই পৌষ সংক্রান্তির দিন ওখানে একটি মেলা বসে। মেলাটি একদিনের জন্য সেখানে বসে। পাশে একটা নদী আছে। ওই দিন নদী থেকে জল নিয়ে সবাই মন্দিরে একটি স্থানে জল ঢেলে তাদের মনস্কামনা জানায়।
মেলার বর্ণনা:- সকাল হতেই আমি স্নান করে আমার বাবা মার সঙ্গে বের হলাম মুড়ি বটতলায় মেলা দেখতে।। বাড়িতে করে বের হয়ে টোটো গাড়ি করে মেলায় পৌঁছালাম। মেলার সামনে একটা বিরাট গেট তৈরি করা হয়েছে। সেই গেটটিকে সুন্দর সুন্দর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। বহু মানুষের ভিড় তখন হয়ে শুরু হয়ে। গেছে। বাবার মুখে শুনেছিলাম মেলাতে খুব ভিড় হয় । আস্তে আস্তে পায়ে হেঁটে আমরা মেলার মধ্যে প্রবেশ করলাম। রাস্তার দুপাশে বড় বড় দোকান। ইমিটেশনের দোকান, স্টেশনারি দোকান, মিষ্টির দোকান, জিলাপির দোকান, পাপড় ভাজার দোকান চোখে পড়লো।। রাস্তার দুপাশে বেলুন এবং বাসি বিক্রি করছে বিক্রি করছিল অনেকে। চারিদিকে শুধু বাঁশির শব্দ আর নাগরদোলার ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ । মন আমার আনন্দে ভরে গেল। কিছু দূর অগ্রসর হতেই দেখি বড় বড় নাগরদোলায় চেপে অনেক মানুষ আনন্দ করছে। সেখানে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ আনন্দ উপভোগ করলাম। তারপর একটু এগিয়ে যেতে ডান দিকে একটা বিরাট পুকুররের মধ্যে দেখতে পেলাম বোর্ড এর মত কি যেন চলছে। দু চারজন সে বোটের মধ্যে চেপে জলের মধ্যে ঘোরাঘুরি করছে। আমার ভীষণ চাপতে ইচ্ছা করছিল বাবা আমাকে হাত ধরে নিয়ে গিয়ে সেই বোর্ডের মধ্যে চাপিয়ে জলে ঘুরিয়ে দেখালো খুব মজা হচ্ছিল। কখনো কখনো ভয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে ছিলাম। তারপর কিছুক্ষণ পর বোর্ড থেকে নেমে গেলাম নদীর ধারে, সেখান থেকে জল নিয়ে মায়ের সঙ্গে মন্দিরে প্রবেশ করে মূর্তির ওপরে জল ঢাললাম। বাবা আমাকে একটা রসগোল্লা দোকানে নিয়ে গেল। সেখানে বড় বড় রসগোল্লা খেলাম। বাবা মায়ের হাত ধরে নদীর ধার দিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। দেখি সেখানে বহু ছেলে মেয়ে একত্রিত হয়ে আকাশে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। খুব সুন্দর লাগছিল। পাশেই তাদের পিকনিক হচ্ছে। বক্সে গান বাজিয়ে আনন্দে অনেকে নাচানাচি করছে। চারিদিকে শুধু মাইকের শব্দ শোনা যাচ্ছে। আরেকটু এগিয়ে আমরা দেখতে পেলাম সেখানে প্রচুর মানুষ খাওয়া-দাওয়া করছে। খিচুড়ি ভাত এতে বসে পড়লাম বাবা মার সঙ্গে । খুব খুব আনন্দ করে খিচুড়ি খেলাম। বেলা একটু গড়িয়ে পড়তেই আবার মেলার মধ্যে প্রবেশ করলাম। তখন ভিড় ঠেলে যাওয়া আসা করা যাচ্ছে না। মায়ের সঙ্গে ঢুকলাম একটা দোকানে। মা সংসারে কিছু জিনিসপত্র কিনলো। মা আমাকে একটা রঙিন চশমা কিনে দিল। তারপর সন্ধ্যা হতেই চারিদিকে মেলার আলো জ্বলে উঠলো। চারিত্রিক শুধু আলো ঝিকিমিকি করছে। খুব ভালো লাগছিল। একটু রাত হতেই আমরা বাড়ির পথে যাত্রা করলাম । মনটা খারাপ করছিল । আবার আমরা টোটো গাড়ি ধরে বাড়ি বসে রওনা হলাম ।যখন বাড়ি ফিরলাম তখন রাত অনেক হয়ে গেছে। হালকা খাবার বিছানায় শুয়ে পড়লাম ।
উপকারিতা : মেলা একদিনের জন্য হলেও মানুষের মনকে আনন্দ দেয়। অনেক বেচাকেনা হয়।। দোকানদার দিয়ে আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়। মানুষ একদিন বেড়াবার জন্য সময় পায়। সংসারের কিছু জিনিসপত্র হাতের কাছেই কিনতে পাওয়া যায়।
অপকারিতা :-ভালোর পাশাপাশি মেলার খারাপ দিকও আছে। অনেক জুয়া খেলা মেলায় দেখা যায়। অনেক ছেলেরাজুয়া খেলে নিজেদের অর্থ নষ্ট করে। তা নিয়ে বাড়িতে অনেক অশান্তি হয়।। মেলার আশেপাশে অনেক মানুষ মদ নেশা ভান করে।। তাতে বিবাদ তৈরি হয়। মেলার মধ্যে অশান্তি হয়। তা ছাড়া কিছু রাজনৈতিক সমস্যা দেখা যায়।। যা নিয়ে বড় ঝামেলা তৈরি হতে পারে।
উপসংহার: মেলায় ভালো-মন্দ যাই থাকুক না কেন মেলার মানুষের কাছে একটি ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ আশা করে কবে সেই দিনটি আসবে। আমরা আনন্দ করে মেলা দেখবো। মানুষের মেলার প্রতি আকর্ষণ দিন দিন বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন দোকানের সংখ্যা ও দিন দিন বেড়ে চলেছে । মেলাকে বড় করার করার চেষ্টা তুলেছে। সবকিছু মিলিয়ে মেলা আমার কাছে একটি সুন্দর লাগে।