শহীদ যতীন্দ্রনাথ দাস || ষষ্ঠ শ্রেণি বাংলা || থাকতে কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর /shahid jnatundra nath dash story question answer
![]() |
ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা
শহিদ যতীন্দ্রনাথ দাশ
আশিসকুমার মুখোপাধ্যায়
সারসংক্ষেপ : শহিদ যতীন্দ্রনাথ দাস ১৯৩৪ সালের ২৭ অক্টোবর উত্তর কলকাতার শিকদার বাগান অঞ্চলে মামার বাড়িতে বিপ্লবী যতীনদাস জন্মগ্রহণ করেন। পিতা বঙ্কিমবিহারী নাম একজন স্বদেশি আন্দোলনের সদস্য ছিলেন।
১৯৯১ ও ১৯২৩ সালে যতীন্দ্রনাথ প্রবেশিকাও আই. এ. পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাস করেন। আজীবন তিনি দুখের সাথে লড়াই করে গেছেন। তিনি দেশপ্রেমের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছিলেন। ১৯১৯-১৯২০ সালে ১৫-১৬ বছর বয়সে একটি বিলাতি কাপড়ের দোকানে পিকেটিং করতে গিয়ে তিনি ধরা পড়েন এবং বিচারে চরমাসের জেল হয়। জেলের খাবার খেয়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ডাক্তারের নির্দেশে তাঁকে মেয়াদের আগে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিপ্লবী দেবেন বসুর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয় এবং বোমা বানাতে পটু হয়ে ওঠেন। ১৯২৪ সালে বিপ্লবীদের একত্রিত করার জন্য শচীন সান্যাল Hindusthan Socialist Republican
Association গড়ে তোলেন। খিদিরপুর ডক অঞ্চলে যতীনের সক্রিয়তার একটি গোপন পিস্তল ও বোমার দোকান দক্ষিণেশ্বরের বাচস্পতি পাড়ায় যতীন বোমা তৈরির উন্নত প্রণালী শেখাতেন। ১৯২৫ সালের ১০ নভেম্বর পুলিশ
এই বাড়িটি ঘিরে ফেলে। ১৯২৫ সালে ২৫ ডিসেম্বর পুলিশ তাঁকে গিরিশ মুখার্জি রোডের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেন। তাকে মেদিনীপুর জেলে, তারপর ময়মনসিংহ জেলে এবং সেখান থেকে পাঞ্চাবের সিয়ানওয়ালি জেলে পাঠানো হয়
১৯২৮ সালে তাঁর মুক্তির তাঁর ভগিনী লাবণ্যপ্রভা দেবীর মৃত্যু হয়। ১৯২২-১৯২৫ এই সময়কালে জাতীয় কংগ্রেসের দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ও নেতাজি সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক হয়ে ওঠে। South Calcutta National School-4 বিনা পয়সায় তিনি ছাত্রদের ড্রিল (Drill) শেখাতেন। যতীন সুভাষ বসুর মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। ১৯২১ সালের ২০ জুলাই অন পাঠান। জোর করে নাকে ঢুকে তুমসে পৌঁছালে তিনি জ্ঞান হারান। ২২ জুলাই তাঁর জ্ঞান ফেরে। সেদিন কি না তাকে দেখাশোনার জন্য সেখানে এসে পৌঁছালেন। ১৯২১ সালের ১১ আগস্ট অনশনকারীদের দাবিদাওয়া মেনে নেওয়ায় ১২ আগস্ট দীনের ১৭ জন সহযোি জামাত তাঁর শরীরকে মাহাজীদের অনশন চলতে লাগল। ৫০ দিনের দিন (৩১ আগস্ট) দেখা গেল তখনই ইংরেজ শাসকেরা তাকে মুক্তি দিতে সম্মত হন। যতীন দাশকে মুক্ত করা হয় পঞ্চম দিনের দিন (৫/৯/২১)। পরের দিন (৫/৯/২১. কাকভোরে ডাক্তার ও জেলসুপার অ্যাম্বুলেন্স ও সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী নিয়ে জেলে প্রবেশ করে দেখেন শাহীনের তার সেলের চারপাশে ব্যারিকেড রচনা করে পথ অবরোধ করে শুয়ে আছে। ১৯২৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে অমর বিপ্লবী যতীন দাশ চিরনিদ্রায় ঢলে পড়লেন। লাহোর থেকে তাঁর মৃতদেহ কলন তিনদিন সময় লেগেছিল। হাওড়া স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন- সুভাষচন্দ্র বসু, বিধানচন্দ্র রায়, শরত মুখোপাধ্যায়, শ্রীমতী বাসন্তী দেবী, শ্রীমতী কমলা নেহেরু প্রমুখেরা। সরকারি হিসাবেই পাঁচলাম মানুষ হাওড়া থেকে কেওড়াতলা পর্যন্ত শবানুগমন করেছিলেন। যতীন দাশের মৃত্যু সংবাদ শুনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গানটি রচনা করেন-
সর্বসর্ব তারে দহে তবে ক্রোধদাহ-
হে ভৈরব, শক্তি দাও, ভক্ত পানে চাহো।
হাতেকলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর
১.১ আশিসকুমার মুখোপাধ্যায় কোন খেলার ধারাভাষ্যকার ছিলেন?
উত্তর। আশিসকুমার মুখোপাধ্যায় ফুটবল খেলার ইংরাজি ধারাভাষ্যকার ছিলেন।
১.২ তার লেখা একটি বইয়ের নাম লেখো।
উত্তর। তাঁর লেখা একটি বইয়ের নাম হল 'স্বাধীনতার রূপকার নেতাজি সুভাষ
২. নীচের গুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও :
২.১ যতীন দাশ কোথায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
উত্তর। ১৯০৪ সালের ২৭ অক্টোবর উত্তর কলকাতার শিক্ষার বাগান অঞ্চলে মামার বাড়িতে
করেছিলেন।
২.৩ যতীন দাসের পিতার নাম की ছিল?
উত্তর- যতীন দাস এর পিতার নাম ছিল বঙ্কিম বিহারী দাস।
২.৩ যতীন দাস এর পিতা কোথায় চাকরি করতেন?
যতীন দাসের পিতা মিউনিসিপিয়াল কর্পোরেশনের চাকরি করতেন।
২.৪ যতীন দাশের ছদ্মনাম কী ছিল?
উত্তর। যতীন দাশের ছদ্মনাম ছিল 'রবীন' ও 'কালীবাবু'।
২.৫ হিন্দ নওজোয়ান সভা কে প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর। বিপ্লবী ভগৎ সিংহ হিন্দ নওজোয়ান সভা প্রতিষ্ঠা করেন।
২.৬ মি. প্যাট্রি কে ছিলেন?
উত্তর। মি. প্যাট্রি তৎকালীন ইংরেজ গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ছিলেন।
২.৭ লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার আসামিদের কোন্ জেলে বদলি করা হয়?
উত্তর। লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার আসামিদের লাহোর সেন্ট্রাল জেলে বদলি করা হয়।
২.৮ কারা যতীনের জামিনের প্রস্তাব ঘৃণাভরে অগ্রাহ্য করেন?
উত্তর। যতীনের পিতা বঙ্কিমবিহারী দাশ ও তাঁর ছোটোভাই কিরণচন্দ্র দাশ জামিনের প্রস্তাব ঘৃণাভরে অগ্রাহ্য করেন।
৩. নীচের বিশেষ্যগুলিকে বিশেষণে এবং বিশেষণগুলিকে বিশেষ্যে রূপান্তরিত করো :
অংশ, উত্তীর্ণ, ঐতিহাসিক, আক্রান্ত, জীবন, ভোজন, পিতা, সন্দেহ, জাতীয়, মেয়াদ।
উত্তর।
বিশেষ্য > বিশেষণ
অংশ > আংশিক
জীবন > জীবিত
জাতি > জাতীয়
উত্তরণ > উত্তীর্ণ
ভোজন > ভোজ্য
মেয়াদ > মেয়াদি
ইতিহাস > ঐতিহাসিক
পিতা > পৈতৃক
আক্রমণ > আক্রান্ত
সন্দেহ > সন্দিগ্ধ
৪. সন্ধিবিচ্ছেদ করো :
পর্যন্ত, কিন্তু, প্রত্যক্ষ, সিদ্ধান্ত, যতীন্দ্র, ব্যগ্র।
উত্তর। পর্যন্ত = পরি + অন্ত।
কিন্তু = কিম্ + তু।
প্রত্যক্ষ = প্রতি + অক্ষ।
সিদ্ধান্ত = সিদ্ধ + অন্ত।
যতীন্দ্র = যতি + ইন্দ্র।
ব্যগ = বি + অগ্র।
৫. নীচে কতকগুলি শব্দ দেওয়া হল। শব্দগুলির সঙ্গে উপসর্গ যুক্ত করে নতুন শব্দ তৈরি করো :
জীবন, শেষ, বেশ, পথ, ঠিক, দারুণ, উপায়, জ্ঞান, করণীয়।
উত্তর। জীবন—আজীবন।
শেষ - পরিশেষ।
বেশ—প্রবেশ।
পথ—বিপথ।
ঠিক-বেঠিক।
দারুণ—নিদারুণ।
উপায়—নিরুপায়।
জ্ঞান-অজ্ঞান।
করণীয় — অনুকরণীয়।
৬. নীচে কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাল তারিখ নীচে দেওয়া হল। ঘটনাগুলি গল্প থেকে খুঁজে লেখো :
উত্তর। ২৭ অক্টোবর ১৯০৪-শহিদ বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ দাশের জন্ম।
৮ এপ্রিল ১৯২৯–দিল্লিতে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার অধিবেশনে সভ্যদের আসনের পাশে ভগৎ সিংহ ও বটুকেশ্বর দত্তের দ্বারা শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ।
২৫ জুন ১৯২৯—যতীন দাশ ও তাঁর ১৫ জন সহযোদ্ধাকে লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার আসামি হিসেবে লাহোর সেন্ট্রাল জেলে বদলি করা হয়।
১১ আগস্ট ১৯২৯ –বড়োলাট লর্ড আরউইন এক বিশেষ জরুরি ঘোষণায় অনশনকারীদের দাবিদাওয়া সব মেনে।নিলেন এবং প্রত্যেক প্রদেশে জেল অনুসন্ধান কমিটি স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিলেন।
১০ সেপ্টেম্বর ১৯২৯ – শনিবার ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯২৯ তারিখে ঠিক ১ টা ১৫ মিনিট অমর বিপ্লবী যতীন দাশ চিরনিদ্রায় ঢলে পড়ালেন।
৭. নীচের বাক্যগুলি থেকে সংখ্যাবাচক ও পুরণবাচক শব্দ বেছে লেখো :
৭.১ তারা সব মিলিয়ে দশ ভাই বোন ছিলেন।
উত্তর। দশ-সংখ্যাবাচক শব্দ
৭.২ যতীন ভবানীপুরের মিত্র ইন্সটিটিউশন থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
উত্তর। প্রথম পূরণবাচক শব্দ।
৭.৩ বিচারে তাঁর ছয়মাসের জেল হয়।
উত্তর। সংখ্যাবাচক শব্দ।
৭.৪ তাঁর দ্বিতীয় ছদ্মনাম কালীবাবু।
উত্তর। দ্বিতীয় পূরণবাচক শব্দ।
৮. নীচের বাক্যগুলির উদ্দেশ্য ও বিধেয় অংশ ভাগ করে দেখাও :
৮.১ কিশোর বিপ্লবী হিসেবেই যতীন্দ্রনাথ দাশের নাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল।
উদ্দেশ্য- কিশোর বিপ্লবী হিসেবেই যতীন্দ্রনাথ দাশের নাম
বিধেয়- সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল।
৮.২ ছেলেবেলা থেকে তিনি একটি স্বপ্ন লালন করে আসছেন মনে মনে।
উদ্দেশ্য- ছেলেবেলা থেকে তিনি
বিধেয়- তিনি একটি স্বপ্ন লালন করে আসছেন মনে মনে।
৮.৩ শুরু হয় অগ্নিযুগের এক অবিস্মরণীয় রক্তে রাঙা অধ্যায়।
উদ্দেশ্য- অগ্নিযুগের এক অবিস্মরণীয় রক্তে রাঙা অধ্যায়।
বিধেয়- শুরু হয়
৮.৪ শেষ পর্যন্ত এল শেষের সেই ভয়ংকর দিনটা।
উত্তর।-
উদ্দেশ্য-শেষের সেই ভয়ংকর দিনটা
বিধেয়- শেষ পর্যন্ত এল
৯. নীচের বাক্যগুলির মধ্যে যেসব বিভক্তিযুক্ত শব্দ এবং অনুসর্গ আছে তা খুঁজে লেখো
৯.১ জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে মত পার্থক্যের জন্য ভগৎ সিংহ, ভগবতী চরণ শুক্লা এবং আরও কয়েকজন কংগ্রেসের প্রতি আনুগত্য প্রত্যাহার করেন।
উত্তর। বিভক্তি - কংগ্রেসের 'এর' মত পার্থক্যের' এর অনুসর্গ-সঙ্গে, জন্য, প্রতি।
৯.২ ছেলেবেলা থেকে তিনি একটি স্বপ্ন লালন করে আসছেন মনে মনে।
উত্তর। বিভক্তি মনে মনে- 'এ'। অনুসর্গ-থেকে।
৯.৩ সাতটি দিন নিরুপদ্রবে কেটে গেল।
উত্তর। বিভক্তি নিরুপদ্রবে - 'এ' বিভক্তি।
৯.৪ শরীর সব দিক থেকেই ভেঙে পড়ছে।
উত্তর। অনুসর্গ' থেকেই'।
১০. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও :
১০.১ যতীন দাশের পিতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের স্থায়ী চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছিলেন কেন? এর জন্য কী হয়েছিল?
উত্তর। ১৯০১ সালের দশহারার দিনে যতীন দাশের বাবা বঙ্কিমবাবু সপরিবারে গঙ্গাস্নান করে একটা ফিটন গাড়িতে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে রেড রোডে কয়েকটি ব্রিটিশ টমি তাদের জোর করে ওই গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে নিজে গাড়িটি চেপে চলে যায়। বঙ্কিমবাবুকে ছেলেমেয়ে নিয়ে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে হয়। এই কারণে তিনি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের স্থায়ী চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছিলেন। এর ফলে তিনি একটা স্টেশনারি দোকান খুলে সংসার চালাতেন। সেজন্য তাকে দুঃখ দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল।
১০.২ ....... তোমার মতো মহান বিপ্লবীর জন্যও একটা কাজ আমায় অবশ্যই করতে হবে-কে. কাকে একথা বলেছিলেন?
উত্তর। অগ্নিযুগের একজন বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ দাশ একথা বলেছিলেন। তিনি বিপ্লবী বীর ভগৎ সিংকে একাথা বলেছিলেন।
১০.৩ কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার অধিবেশনে কী ঘটেছিল?
উত্তর। ১৯২৯ সালের ৮ এপ্রিল দিল্লিতে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপক সভার অধিবেশন চলছিল। সেই অধিবেশন যখন চলছিল তখন সভ্যদের আসনের পাশে বিপ্লবী বীর ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত একটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণ ঘটান।
তাদেরকে ওখানে গ্রেফতার করা হয়।
১০.৪ ১৪ জুন ১৯২৯ যতীন দাশকে কেন গ্রেফতার করা হয়?
উত্তর । তদানীন্তন ব্রিটিশ গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মি. প্যাট্রি (Mr. Pattry) নিজে তদন্ত করে ত্রিশটি নামের একটি তালিকা বার করেন। যার মধ্যে অন্যতম ছিলেন যতীন দাশ। কালবিলম্ব না করে Lahore Conspiracy case এর
অন্যতম অভিযুক্ত আসামি হিসেবে কলকাতার প্রকাশ্য রাজপথ থেকে যতীন দাশকে গ্রেফতার করা হয়।
১০.৫ ১৯২৯ সালের ১৩ জুলাই অনশন শুরু হয় কেন?
উত্তর। ২ জুলাই, ১৯২৯ যতীন দাশ গোপনে বটুকেশ্বর দত্ত ও ভগৎ সিং এর সঙ্গে দেখা করে বলেন যে, সেন্ট্রাল জেলে তাঁদের ওপর যে অমানুষিক পুলিশি নির্যাতন চলছে, তার প্রতিবাদে তাঁরা ১৬ জন সমবেতভাবে অনশন শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই ১৯২৯, ১৩ জুলাই থেকে অনশন শুরু হয়।
১০.৬ অনশন করার আগে যতীন তাঁর সহযোদ্ধাদের কী অঙ্গীকার করান? তিনি অনশন ভঙ্গ করবেন না কেন ?
উত্তর। অনশন আরম্ভ করার ঠিক দুএক দিন আগে যতীন তাঁর সহযোদ্ধাদের অঙ্গীকার করিয়ে নেন যে, তাঁদের দাবিগুলোর যথাযথ মীমাংসা হয়ে গেলে তাঁরা অবশ্যই অনশন ভঙ্গ করবেন।
যতীন দাশ মনে করতেন তাঁর পক্ষে এই অনশনই হবে মাতৃভূমির শৃঙ্খলমোচনের এক অভাবনীয় সুযোগ। এটাই তাঁর ছেলেবেলার স্বপ্ন এবং এ বিষয়ে তাঁর পিতা বঙ্কিমবিহারী দাশের অনুমতি আগেই তিনি পেয়ে গেছেন। তাই তিনি অনশন ভঙ্গ করবেন না।
১০.৭ জেলে অনশনের সময় যতীন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন কেন ?
উত্তর। আট দিনের পর যতীনের অনশন ভঙ্গের জন্য (২০ জুলাই তারিখে) ভোরবেলা জেল সুপার, জেল-ডাক্তার ও আটজন বেশ হৃষ্টপুষ্ট পাঠানকে সঙ্গে নিয়ে যতীনের সেলে প্রবেশ করেন। ডাক্তার একটি সরু নল যতীনের নাকের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দুধ ঢালতে শুরু করে দেন। আর কোনো উপায় না দেখে যতীন ইচ্ছাকৃতভাবে জোরে জোরে কাশতে থাকেন। ফলে ওই নলটির মুখ খাদ্যনালি থেকে সরে গিয়ে শ্বাসনালির মধ্যে ঢুকে যায় এবং কিছুটা দুধও যতীনের ফুসফুসে
ঢুকে যাওয়ায় যতীন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।
১০.৮ জেলে যতীন দাশের পাশে স্লেট পেনসিল রাখা হয়েছিল কেন?
উত্তর। জ্ঞান ফিরে পাবার পর যতীন দাশের গলার আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়। সে জীবনে আর কথা বলতে পারবে না। কণ্ঠ দিয়ে আর আওয়াজ বেরুবে না। তাই তাঁকে ওই স্লেট পেনসিলের ব্যবহার করে পেনসিল দিয়ে স্লেটে লিখে জানাতে হবে। তাই যতীন দাশের পাশে স্লেট-পেনসিল রাখা হয়েছিল।
১০.৯ কিরণ দাশকে লাহোর সেন্ট্রাল জেলে আনা হয়েছিল কেন ?
উত্তর। জেলে যতীন দাশের শারীরিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে থাকে। গলা দিয়ে তাঁর কোনো আওয়াজ বেরুচ্ছে না। যতীনের এই শোচনীয় অবস্থা উপলব্ধি করে বড়োলাট লর্ড আরউইন তাঁর বিশেষ ক্ষমতা বলে যতীনকে দেখাশোনা করার জন্যই যতীনের ভাই কিরণ দাশকে লাহোর সেন্ট্রাল জেলে আনিয়ে নিয়েছিলেন।
১০.১০ যতীন দাশের সহযোদ্ধারা পথ অবরোধ করে শুয়েছিলেন কেন?
উত্তর। এক সর্বজন নিন্দিত গুপ্তচরের জামিনে যতীনকে মুক্ত করা হয় পশ্চান্ন দিনের দিন (৫/৯/১৯২৯)। পরের দিন একেবারে কাকভোরে ডাক্তার ও জেল সুপার অ্যাম্বুলেন্স ও সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী নিয়ে জেলে আসেন। তাঁরা যাতে যতীনের কাছে গিয়ে অসুস্থ অবস্থার যতীনকে তুলে নিয়ে না যেতে পারে, তাই যতীনের সহযোদ্ধারা তাঁর সেলের চারপাশে ব্যারিকেড রচনা করে পথ অবরোধ করে শুয়েছিলেন।
শব্দার্থ :
আমরণ অনশন – মৃত্যু পর্যন্ত অনশন।
গোলামি - দাসত্ব শৃঙ্খলমোচন- স্বাধীনতা লাভ। ফিটনগাড়ি-ঘোড়ায় টানা অভিজাত গাড়ি। পিকেটিং- দাবি আদায়ের জন্য দলবদ্ধ অবস্থান। মেয়াদ -সময় বা কাল। দুর্গম যেখানে অতিকষ্টে যাওয়া যায়।
অবৈতনিক – বিনা বেতন।
Condemned cell - পরিত্যন্ত জেলের কুঠুরি। ভগিনী – বোন। সংকেত ইঙ্গিত।
প্রলুদ্ধ - করা লোভ দেখানো।
প্রত্যাহার- ফিরিয়ে নেওয়া।
ব্যবস্থাপক-নিয়ম বিধান বা আইন গঠনকারী। যাবজ্জীবন - চিরজীবন।
মর্মাহত - দুঃখিত।
নিরুপদ্রব – উৎপাতহীন, নিরাপদ।
শবানুগমন – মৃতদেহের সঙ্গে যাওয়া।
ক্রোধাদাহ — রাগের আগুনের তাপ
শেষ----