পাড়াগাঁর দু -প্রহর ভালোবাসি অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর অষ্টম শ্রেণি বাংলা। parabar du-phar bhalobasi question answer class 8 bangla - school book solver

Friday, 9 May 2025

পাড়াগাঁর দু -প্রহর ভালোবাসি অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর অষ্টম শ্রেণি বাংলা। parabar du-phar bhalobasi question answer class 8 bangla

 



অষ্টম শ্রেণী বাংলা

কবিতা : পাড়াগাঁর দু-প্রহর ভালোবাসি

      কবি : জীবনানন্দ দাশ

কবি জীবনানন্দ দাশের পরিচিতি: -কবি জীবনানন্দ দাশের জন্ম হয় ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে অধুনা বাংলাদেশের বরিশালে। তাঁর মাযের নাম ছিল কুসুমকুমারী দেবী। কর্মজীবনে বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনা করেছেদ। তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 'ঝরাপালক'। কলকাতার বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তাঁর রচিত কবিতা নিয়মিত ছাপা হতো। এইসব পত্রপত্রিকার মধ্যে কালিকলম, কল্লোল, প্রগতি প্রধান ছিল। তাঁর সবচেয়ে বিতর্কিত কবিতা 'ক্যাম্পে' প্রকাশিত হয় ' পরিচা' পত্রিকায়। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে তাঁর বিখ্যাত কবিতা 'বনলতা সেন' প্রকাশ পায়। তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে 'রূপসী বাংলা' যা তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশ পায়। তাছাড়া 'সাতটি তারার তিমির', 'ধূসর পাণ্ডুলিপি(১) ও (২)', 'বেলা অবেলা কালবেলা' উল্লেখযোগ্য। এছাড়া 'মাল্যবান', 'সুতীর্থ' তাঁর লেখা গদ্য। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে এক ট্রাম দুর্ঘটনায় কবির জীবনাবসান হয়। পাঠ্য কবিতাটি তাঁর 'রূপসী বাংলা' কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।


সারমর্ম : কবি পাড়াগাঁর দ্বিপ্রহরে বেলাকে ভালোবাসেন। কবির মতে, পাড়াগাঁয়ের দুপুরে যেন স্বপ্নের গন্ধ লেগে থাকে। স্বপ্নের সেই গল্পের কী কাহিনি, কী রূপ তা কবি ছাড়া কেউ জানে না। কেবলমাত্র জানে প্রান্তরের শঙ্খচিল। কারণ তাদের কাছেই কবির হৃদয় এই জন্মেই নয়, বহু জন্ম ধরে ভাষা খুঁজে পেয়েছে। খুঁজে পেয়েছে বেদনাময় স্বপ্নের জগৎ। স্বপ্নের সেই বেদনা ছড়িয়ে আছে শুকনো পাতা, শালিকের স্বর এবং ভাঙা মাঠের মধ্যে। সেই বেদনা ছড়িয়ে আছে যে মেয়েটি নক্‌শাপেড়ে শাড়ি পড়ে রৌদ্রের মধ্যে ছুটে যায় তারা কেউ স্থায়ী নয়, তারা হলুদ পাতার মতো সরে সরে যায়। কবির বেদনা ছড়িয়ে আছে তাঁর আশেপাশে থাকা সব জিনিসের ভিতর। কবি দেখেন নিষ্পন্দ বুনো চালতার গাছ, যার শাখাগুলি জলসিড়ি নদীর পাশের ঘাসে নুয়ে রয়েছে। নদীর জলে তার ছায়া পড়ে আছে। কবি সেই বুনো চালতার গাছটিকে দেখেন। কবি আরো দেখেন নদীর জলে একটা ডিঙি নৌকো ভাসছে। নৌকোটিকে কেউ হিজল গাছের ডালে বেঁধে রেখে গেছে। সেই নৌকোর।খোঁজে কোনোদিন তার মালিক আসেনি। সেই নৌকো চিরকাল এমনই যেন বাঁধা হয়ে রয়েছে। জলে পড়ে থাকতে থাকতে নৌকোটার কাঠ ফোঁপরা হয়ে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। তবুও কবির কাছে সেই ডিঙি নৌকো বড়োই আদরের। কবি তাই দুপুরের সেই রৌদ্র ভেজা সময়ে যেন বেদনার গন্ধ পান। কবির কাছে তা বড়োই প্রিয়। সেই বেদনা যা আকাশের তলে কেঁদে কেঁদে ভাসাচ্ছে তা কবির অত্যন্ত আপনার, অত্যন্ত ভালোবাসার এবং একান্ত নিজস্ব বলে মনে হয়।


নামকরণ : প্রসঙ্গত বলা যায়, কবিতার এই নামকরণ কবির দেওয়া নয়। কবিতাটি ‘রূপসী বাংলা' শীর্ষক কাব্যগ্রন্থের একটি কবিতা। যা ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি'র শেষ পর্যায়ের কবিতা। সমগ্র কাব্যগ্রন্থটিতে কবি বাংলাকে নারীরূপে দেখেছেন এবং তাঁর কবিতাগুলি এর আধাররূপেই রচিত। তাই ওই কাব্যগ্রন্থের কোনো কবিতার কোনো নামকরণ নেই। আছে কেবল।কবিতাটি অর্থাৎ নামহীন অবয়ব। কবির কবিতাগুলির মধ্যে সেই অস্পষ্ট অবয়বের ছাপ পাওয়া যায়। এই কবিতাটিও তার ব্যতিক্রম নয় বাংলার প্রতি চিরকালীন ভালোবাসার কথাই তিনি সর্বদা বলতে চেয়েছেন। আলোচ্য কবিতাটিতে তাঁর গ্রামের দুপুরের একটি চিত্র পাঠকের সামনে তিনি তুলে ধরেছেন। তাঁর বলার মধ্যে তাই বেদনার ছোঁয়া রয়েছে, রয়েছে যেন শূন্যতার আভাস। গাছের শুকনো পাতা, শালিখের ডাক কিংবা নকশা পাড় শাড়িপরা কোনো মেয়ে যখন রৌদ্রের ভেতর হলুদ পাতার মতো সরে যায় তখন সেই বেদনার আভাস দিয়ে যায়। সব কিছু শূন্য, নিঃসঙ্গ করে দেবার আভাস পাওয়া যায়। নিঃসঙ্গ দুপুর যেন অসীম আকাশের নীচে কেঁদে কেঁদে ভাসছে। সমগ্র কবিতাটি জুড়ে এই দ্বিপ্রাহরিক

নিঃসঙ্গতা কবিতাটির আলোচ্য বিষয়। কবির চেতনায় জাগ্রত তাঁর পাড়াগাঁর দ্বিপ্রহর। তাই কবিতার নামকরণ যথাযথ হয়েছে বলেই আমার মনে হয়।



হাতে-কলমে

অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর




১.১ জীবনানন্দ দাশের লেখা দুটি কবিতার বইয়ের নাম লেখো।

উঃ। জীবনানন্দ দাশের লেখা দুটি বই হলো—' 'সাতটি তারার তিমির। এবং বনলতা সেন''।


১.২ তাঁর লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী? 

উঃ । জীবনানন্দ দাশের লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম 'ঝরাপালক'।



২. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও :

২.১ দু-পহর' শব্দের অর্থ কী? 

উঃ। দু-পহর' শব্দের অর্থ দ্বি-প্রহর।


২.২ 'কেবল প্রান্তর জানে তাহা'—'প্রান্তর' কী জানে?

উঃ।প্রান্তর' জানে, রৌদ্রমাখা এক দুপুরে কবির হৃদয়ে কোন গল্প কাহিনি ও অচেনা স্বপ্ন ঘর বেঁধেছে ।



২.৩ তাহাদের কাছে যেন এ জনমে নয়—যেন ঢের যুগ ধরে কথা শিখিয়াছে এ হৃদয়'—কাদের কথা এখানে বলা হয়েছে?

উঃ। এখানে কবির পাড়াগাঁয়ের প্রান্তর ও প্রান্তরের শঙ্খচিলের কথা বলা হয়েছে।


২.৪ জলসিড়িটির পাশে ঘাসে..... — কী দেখা যায় ?

উঃ। জলসিড়িটির পাশে ঘাসে দেখা যায় বহুদিনের বুনো চালতার শাখাগুলি ছন্দহীন ভাবে নুয়ে আছে।


২.৫ জ্বলে তার মুখখানা দেখা যায়.... - -জলে কার মুখ দেখা যায় ?

উঃ। জলে বুনো চালতা গাছটিকে দেখা যায়।


২.৬ ডিঙিও ভাসিছে কার জলে.... — ডিঙিটি কেমন?

উঃ। ডিভিটি বহুদিনের একটি ঝাঁঝরা ও ফোঁপরা ডিঙি।


২.৭ ডিডিটি কোথায় বাঁধা রয়েছে?

উঃ ভিভিটি জলসিড়ি নদীর পাশে হিজল গাছে বাঁধা আছে।


৩. নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর দাও :

৩.১ পাড়াগায়ের দ্বিপ্রহরকে কবি ভালোবাসেন কেন ?

উত্তর। কবির বাংলার প্রকৃতির সঙ্গে এক নাড়ির টান খুঁজে পান। পাড়াগাঁয়ের রৌদ্রস্নাত বিগ্রহরটি কবির খুব প্রিয়। তার কারণ পাড়াগাঁয়ের দ্বিপ্রহরে কবি যেন তাঁর মনের গল্প, কাহিনির স্বপ্নের সন্ধান পান। ওই নির্জন দুপুরে করি যেন প্রান্তরের কাছে তার হৃদয়ের কথা শুনতে পান, স্বপ্নের সন্ধান পান। সেই সব স্বপ্ন ও কল্পনা কবির হৃদয়ে বেদনাময় অনুভূতির জন্ম দেয়। তাই বিপ্রহরটিকে কবি ভালোবাসেন।


৩.২ স্বপ্নে যে-বেদনা আছে কবির স্বপ্নে কেন বেদনার অনুভূতি?

উত্তর-। কবির হৃদয়ে জমা থাকা কষ্ট যেন তিনি পাড়াগাঁয়ের দুপুরের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চান।  তিনি যে স্বপ্ন দেখেন তা তাঁর মতে সত্যি হওয়া দুস্কর। সেখানে রয়েছে গল্প ও আহিনি। সেই গল্প বা কাহিনি যা বহু জন্মের সুদূর ও পুরাতন। সেই স্বপ্নের কথা কবির মনে জাগত হয়। কিন্তু তা অস্পষ্ট, কবি তাকে ভালোভাবে দেখতে পান না, বুঝতে পারেন না তাই তিনি বেদনাহত হন। তাঁর সেই বেদনাহত ভাবনা স্বপ্নের মধ্যে পরিস্ফুট হয়। তাই কবির স্বপ্নে বেদনার অনুভূতি।


৩.৩ প্রকৃতির কেমন ছবি কবিতাটিতে ফুটে উঠেছে তা আলোচনা করো

উঃ। জীবনানন্দ দাশ গ্রাম বাংলার দ্বি-প্রহরের এক অপরূপ সৌন্দর্যের কথা তাঁর এই কবিতায় ব্যক্ত করেছেন। গ্রাম বাংলার দুপুরের রৌদ্রে কীসের যেন গন্ধ লেগে থাকে। তিনি যেন বহু জন্মের পুরোনো কোনো কথা বলছেন। তাঁর সেই পুরোনো স্বপ্নের কথা কেউ জানে না, জানে কেবল প্রান্তর আর জানে প্রান্তরের শঙ্খচিল। অর্থাৎ কবির চোখে রৌদ্রের মধ্যেও জমাট হয়ে রয়েছে এক বেদনা। কবি যেন সেই বেদনার ছবি দেখতে পাচ্ছেন শুষ্ক পত্র, শালিকের কণ্ঠস্বর, ভাঙা মঠ আর নকশাপেড়ে শাড়ি

পরা মেয়েটির মধ্যে। বুনো চালতার শাখাগুলি বহুদিন নুয়ে আছে জলসিড়ি নদীর পাশে ঘাসের মধ্যে। জলে ওই গাছের ছায়া পড়ে আছে। একটা ঝাঁঝরা ফোঁপরা ডিঙি নৌকো কেউ হিজল গাছের ডালে বেঁধে রেখেছে। ডিঙি নৌকোটির মালিক নেই। সেটি একাই পড়ে রয়েছে। পাড়াগাঁয়ের দ্বিপ্রাহরিক জীবনের শান্তশিষ্ট এক মায়াময় রূপ কবির চোখে আজ ধরা পড়েছে। সেই চিত্র দেখে কবির মনে হচ্ছে যেন দুপুরের রৌদ্রে অনেকদিনের পুরোনো ভিজে বেদনার গন্ধ আছে। কোনো সুদূর অতীতের এই গন্ধ যেন কবিকে অজানা প্রাচীন কালের কথা বলছে। এইভাবে আলোচ্য কবিতায় দ্বিপ্রহরের ক্লান্ত ও বিষণ্ণ প্রকৃতির এক পরিচয় ফুটে উঠেছে।


৩.৪ কেঁদে কেঁদে ভাসিতেছে আকাশের তলে'—কবির এমন মনে হওয়ার কারণ কী বলে তোমার মনে হয় ?

উঃ। কবি দুপুরের বেদনার ছবি তাঁর কবিতায় ব্যক্ত করতে চেয়েছেন। কবির মনে হয়েছে সমস্ত বিশ্বপ্রকৃতি যেন কেঁদে কেঁদে কবির কাছে আকুতি করছে। কবি এখানে আকাশের তলে দুপুরের রোদকে দেখে তার মধ্যে বেদনার গন্ধ অনুভব

করেছেন। আসলে পাড়াগাঁর দ্বিপ্রহরে এক বিষণ্ণ প্রকৃতিকে কবি দেখেছেন। তিনি দেখেছেন শুকনো ঝরা পাতা, শালিকের স্বর, ভাঙা মঠ, নকশা পাড়ের মেয়েটির হলুদ পাতার মতো সরে যাওয়া আর ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া ডিঙি নৌকো। কবি বোঝাতে চেয়েছেন আসলে প্রতিদিনই প্রকৃতি বিনষ্ট হয়ে চলেছে। এই নষ্ট হয়ে যাওয়া পৃথিবীর কান্নার ছবি সর্বত্র ছড়িয়ে আছে এবং তা চিরন্তন। তাই প্রতি মুহূর্তে ক্ষয় হওয়া প্রকৃতি যেন আকাশের নীচে যেন কেঁদে চলেছে ।



৪. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :

৪.১ ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি ... শীর্ষক কবিতাটি 'রূপসী বাংলা' কাব্যগ্রন্থের কতসংখ্যক কবিতা? ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি' কবিতায় কবি জীবনানন্দের কবি-মানসিকতার পরিচয় কীভাবে ধরা দিয়েছে, তা বুঝিয়ে দাও

উঃ। ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি' শীর্ষক কবিতাটি 'রূপসী বাংলা' কাব্যগ্রন্থের পঁচিশ সংখ্যক কবিতা। কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর এই কবিতায় গ্রাম বাংলার একটি চিত্র সুচারুভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। কবি তাঁর এই কবিতায় পাড়াগাঁয়ের দুপুরবেলার একটি অন্যরকম ছবি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। তিনি দেখিয়েছেন দুপুরবেলা পৃথিবীর সব কিছু শান্ত থাকে, প্রকৃতি যেন একটা অন্য জগতে বিচরণ করে। সেখানে কোনো মানুষ নেই প্রকৃতিই সেখানে বিদ্যমান। সাধারণত জীবনের কোলে আসা দিনগুলোর স্মৃতি নির্জনতার মাঝেই মানুষের মনকে নাড়া দেয়, বেদনার্ত করে তোলে। কবির মনের যে বেদনা তা যেন আমরা প্রকৃতির মধ্যে দেখতে পাই। কবি ভালোবাসেন পাড়াগাঁয়ের দুপুর। তাঁর হৃদয়ে যে স্বপ্ন রয়েছে তার কথা জানে এই দুপুর, দুপুরের প্রান্তর এবং প্রান্তরে উড়ে চলা শঙ্খচিল। তাদের কাছে কবি যেন এই জন্ম নয় বহু দূর থেকে আগত জন্মের কথা জানতে পারেন। কবি যেন শুরু পাতা, শালিখের ডাক আর ভাঙা মঠের মধ্যে তাঁর সেই পুরোনো স্বপ্নকে খুঁজে পান, যে স্বপ্নে বেদনা আছে। কবির সেই নকশাপেড়ে শাড়ি পরা বালিকাটি যে রৌদ্রের ভিতর দৌড়ে পালায় তার কথা মনে পড়ে। তিনি সেই মেয়েটির প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন। মেয়েটি যেন বহু পুরাতন স্মৃতির মধ্যে বেদনার মতো কবির চোখের সামনে থেকে সরে যায়। চোখের সামনে নুয়ে পড়া বুনো চালতার ডাল যার প্রতিবিশ্ব জলে দেখা যায় কিংবা সেই ডিঙি নৌকো যা হিজল গাছে বাঁধা। যার কোনো মাঝি নেই, মালিক নেই, অব্যবহারে সেটি জীর্ণ হয়ে গেছে। এইসব কিছুর মধ্যে কবি বেদনা খুঁজে পান। দুপুরের ঝিমিয়ে পড়া রোদে কবি যেন তাঁর দূরাগত স্বপ্নের সন্ধান পান। এমন স্বপ্ন যাতে রয়েছে বেদনার ছোঁয়া।

এই সব দৃশ্য কবিই শুধুমাত্র হৃদয় দিয়ে অনুভব করেন আর তা লেখনীর মধ্যে দিয়ে পাঠকের মনে কাব্য ও ছন্দের সঞ্চার ঘটায়।

এভাবেই কবিতায় কবি-মানসিকতার বিষণ্ণ এক ভাবনার পরিচয় পাওয়া যায়।




৪.২ কবিতাটির গঠন-প্রকৌশল আলোচনা করো।

উঃ। জীবনানন্দ দাশ আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম দিশারী। রবীন্দ্রনাথের পরবর্তী যুগের এই কবিকে যুগসন্ধিক্ষণের কবিরূপে চিহ্নিত করা হয়।

কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা আলোচ্য কবিতাটি একটি আধুনিক গদ্যধর্মী কবিতা। কবিতায় কবি গ্রামের দ্বিপ্রাহরিক চিত্রটি কোনো রূপকল্প ছাড়াই সহজ ভঙ্গিতে ব্যক্ত করেছেন। তিনি তাঁর কবিতায় প্রতিটি পঙ্ক্তিতে তাঁর মনের বেদনার কথা গদ্যরূপে ব্যক্ত করেছেন। সমগ্র কবিতাটি দুটি স্তবকে বিভক্ত। কিন্তু দুটি স্তবকের আলাদা আলাদা বক্তব্য নেই। দুটি ধ্রুবক এমনভাবে লেখা হয়েছে যেন স্তবকদুটির ভেতরের বক্তব্য মিলেমিশে একই কথা বলেছে। একটি স্তবকের বক্তব্য পরবর্তী স্তবকের মধ্যে সঞ্চারিত হবার ফলে পুরো কবিতাটিই একটি স্তবকের ওপরই লেখা হয়েছে বলে মনে হয়েছে।

কবিতাটিতে কবি প্রচলিত রচনারীতির অনুসরণ করেন নি। সনেটধর্মী কবিতাটির চৌদ্দটি চরণের মধ্যে বারোটি চরণে ২২টি করে বর্ণ ব্যবহার করা হলেও চতুর্থ ও সপ্তম চরণে যথাক্রমে ২১টি ও ২৩টি বর্ণ ব্যবহার করা হয়েছে—যা চতুর্দশপদী

কবিতার ক্ষেত্রে একটি ত্রুটি। কবিতা টিতে কবি ‘ডিঙি’, নুয়ে আছে ইত্যাদি দেশজ শব্দ ব্যবহার করেছেন। এর পাশাপাশি রৌদ্রে, হৃদয়ে, বাঁধিয়াছে ইত্যাদি শব্দের ব্যবহারও দেখা যায়। চলিত গদ্যধর্মী শব্দ যেমন—দু-পহর নকশাপেড়ে ইত্যাদি ব্যবহার আমরা কবিতায় পাই। সমগ্র কবিতাটিতে শব্দ ব্যবহারের এক মিশ্ররীতি লক্ষ্য করা যায়।

৪.৩ ‘গন্ধ লেগে আছে রৌদ্রে যেন ভিজে বেদনার'—কবিতায় কীভাবে এই অপরূপ বিষণ্ণতার স্পর্শ এসে লেগেছে, তা যথাযথ পঙক্তি উদ্ধৃত করে আলোচনা করো

উঃ। পাঠ্য কবিতাটি একটি বিষণ্ণতার কবিতা। সমগ্র কবিতায় কবির বিষণ্ণতা ছড়িয়ে আছে। প্রথমেই কবি বলছেন।“কোন গল্প........কেউ তাহা জানে নাকো।” অর্থাৎ কবিতার শুরুতেই একটা বিষণ্ণতার ছোঁয়া পাওয়া যাচ্ছে। কবিতায় কবি যেন এক দূরাগত স্বপ্নের কথা, বেদনার কথা ব্যক্ত করেছেন। তাঁর সেই স্বপ্ন বেদনা জাগায়। কবিতায় কবি নানা স্থানে তাঁর বিষণ্ণতার কথা তুলে ধরেছেন। যেমন একস্থানে তিনি বলেছেন “স্বপ্নে যে বেদনা আছে.......... ভাঙা মঠ– ” অর্থাৎ কবিতায় কবি যা দেখাতে চেয়েছেন তা হলো স্বপ্নে থাকা বেদনা কেবল তাঁরই নয় এই বেদনা শুকনো পাতা, শালিকের কণ্ঠস্বর, ভাঙা মঠ সব কিছুর মধ্যেই সঞ্চারিত হচ্ছে। আবার যখন কবি বলছেন যে, “ডিঙিও ভাসিছে...... ...হিজলে”- তখন সেখানে কবির নিঃসঙ্গতা পরিস্ফুট হচ্ছে। কবির মন যেন হিজলগাছের ডালে বাঁধা ডিঙি নৌকাটির মতো একাকী। সেই নৌকো যার কেউ মালিক নেই, কেউ কখনো যার খোঁজ করে না। কবি যেন সেই ডিঙি নৌকোটির মতোই একা নিঃসঙ্গ। সেই নিঃসঙ্গতা বারেবারে যেন তাঁকে বেদনাহত করে। সমগ্র কবিতা জুড়েই কবির বিষণ্ণতা ছড়িয়ে পড়েছে।

এই বিষণ্ণতার অপরূপ ছবি টুকরো টুকরোভাবে গোটা কবিতায় চিহ্নিত হয়েছে।



৫. নীচের শব্দগুলির ধ্বনিতাত্ত্বিক বিচার করো ঃ পাড়াগাঁ, দু-পহর, স্বপন, জনম, ভিজে।

উঃ। পাড়াগাঁ = পাড়াগ্রাম > পাড়াগাঁ (নাসিক্যভবন)।

 দু-পহর = দুই প্রহর > দু-পহর (বর্ণলোপ)।

স্বপন = স্বপ্ন > স্বপন (স্বরভক্তি)। 

জনম = জন্ম > জনম (স্বরভক্তি)।

 ভিজে = ভিজা > ভিজিয়া (অভিশ্রুতি)।


৬. নীচের শব্দগুলির ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম লেখো : শঙ্খচিল, নকশাপেড়ে, ছন্দহীন।

উঃ। শঙ্খচিল — শঙ্খ রঙের চিল (মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস)।

নকশাপেড়ে—নকশা পাড় আছে যার (বহুব্রীহি সমাস)।

ছন্দহীন -নাই ছন্দ যার (নঞর্থক বহুব্রীহি সমাস)।


৭. নীচের বাক্যগুলিতে ক্রিয়ার কাল নির্দেশ করো :

৭.১ পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি।

 উঃ। নিত্য বর্তমানকাল।

৭.২ রৌদ্রে যেন গন্ধ লেগে আছে স্বপনের। 

উঃ। বর্তমানকাল।

৭.৩ শাখাগুলো নুয়ে আছে বহুদিন ছন্দহীন বুনো চালতার....।

 উঃ। পুরাঘটিত বর্তমানকাল ।

৭.৪ ডিঙিও ভাসিছে কার জলে। 

উঃ। ঘটমান বর্তমান।

৭.৫ কোনোদিন এইদিকে আসিবে না আর।

 উঃ। সাধারণ ভবিষ্যত।



অতি-সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উতর

পাঠ মূল্যায়নের জন্য অতিরিত্ব প্রশ্নোত্তর

★  ডিঙি নৌকোটি কেমন

উঃ । ডিঙি নৌকোটি ফোঁপরা ঝাঁঝরা হয়ে আছে।

★  ডিঙি নৌকোটি কোথায় বাঁধা আছে? 

উঃ । ডিঙি নৌকোটি হিজলগাছে বাঁধা আছে।

★ কোন্ নদীর উল্লেখ আছে কবিতায়?

 উঃ । কবিতায় জলসিড়ি নদীর উল্লেখ আছে।

★  কবিতায় বর্ণিত মেয়েটি কী পরে আছে?

 উঃ। কবিতায় বর্ণিত মেয়েটি নকশাপেড়ে শাড়ি পরে আছে।

★ দু-পহর কাকে বলে

 উঃ। দু-পহর হলো বিগ্রহ বা দুপুর।


★ প্রান্তর কী জানে

উঃ প্রাপ্তর কবির হৃদয়ের স্বপ্নের কথা জানে।

★ কীসের শাখা, কোথায় নুয়ে আছে? 

উঃ। চালতার শাখা জলসিড়ি নদীর পাশে ঘাসের উপর নুয়ে আছে।


★ কবিতায় কোন্ কোন্ পাখির উল্লেখ আছে?

উঃ। কবিতায় শঙ্খচিল ও শালিখ পাখির উল্লেখ আছে।

★ কবি রৌদ্রে কী লেগে আছে বলেছেন?

 উঃ। কবি বলেছেন রৌদ্রে যেন ভিজে বেদনার গন্ধ লেগে আছে।

★ মেয়েটি কীভাবে সরে যায়?

 উঃ। মেয়েটি হলুদ পাতার মতো সরে যায়।

★  ‘হলুদ পাতার মতো সরে যায়'—এই উক্তিটির মাধ্যমে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন ?

উঃ। আলোচ্য কবিতায় কবি তার ফেলে আসা দিনগুলির কথা স্মরণ করেছেন। তা করতে গিয়ে তিনি দ্বিপ্রহরের রোদের কথা বলেছেন আর তাঁর মাঝেই তাঁর স্মৃতিতে ধরা দিয়েছে নকশাপেড়ে মেয়েটির কথা। কালের গতিতে স্মৃতি ঝরে যায়।

রোদের ভিতর হলুদপাতা যেভাবে সরে যায় তেমনই কবির মনের চিত্র থেকে মেয়েটির স্মৃতিও ক্রমশ দূরে সরে যায়।

এই উদ্ধৃতিটির মাধ্যমে কবি এক বিষণ্ণ স্মৃতির ছবি তুলে ধরেছেন।


★ “কোনদিন এইদিকে আসিবে না আর'-কে আর আসবে না ?

উঃ। কবি বলেছেন ডিঙির মালিক কোথাও নেই, কোনোদিন এই দিকে আর আসবে না।


★  তাহাদের কাছে যেন এ জনমে নয়'—কী প্রসঙ্গে কবি একথা বলেছেন ব্যাখ্যা করো।

উঃ। কবি পাড়াগাঁর দু-পহরকে ভালোবাসেন। তার মনে হয় রৌদ্রে যেন স্বপ্নের গন্ধ লেগে আছে। কবির হৃদয়ে কী গল্প, কী কাহিনি, কী স্বপ্ন যে ঘর বেঁধেছে তা আর কেউ জানে না। জানে শুধু প্রান্তর এবং সেই প্রান্তরের শঙ্খচিল। এদের সঙ্গে কবির সম্বন্ধ শুধু এই জীবনের নয়, তা যেন অনেক জন্মের। এদের কাছ থেকেই কবির হৃদয় অনেক কথা শিখেছে।

গ্রাম বাংলার সঙ্গে কবির আত্মিক সম্পর্ক যে চিরকালীন তা এই চরণগুলিতে প্রকাশ পেয়েছে।



★ সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো :


★ হলুদ পাতার মতো (ঝরে/উড়ে/সরে) যায়। 

উঃ। সরে

★  আহা, কেঁদে কেঁদে (মরিতেছে। পড়িতেছে/ভাসিতেছে) আকাশের তলে।

উঃ।  ভাসিতেছে

★ শাখাগুলো (হেলে/নুয়ে পড়ে) আছে বহুদিন। 

উঃ। নুয়ে

★  কোনোদিন এইদিকে (আসিবে/ফিরিবে/যাইবে) না আর।

উঃ। আসিবে

★  যেন (বহু/কত/ঢের) যুগ ধরে কথা শিখিয়াছে এ হৃদয়। 

উঃ। ঢের


★ পদ পরিবর্তন করো :

মালিক—মালিকানা।

 তলে—তল। 

হলুদ – হলদেটে। 

যুগ-যুগীয়।

বেদনা—বেদনার্ত।

 শুষ্ক শুষ্কতা। 





শব্দার্থ -

দু-গ্রহর বিগ্রহর, দুপুর। 

হিজল – একারনের গাছ।

 ছন্দহীন- উদ্দেশ্যহীন। 

ভিঙি- ছোটো নৌকো।

 নকশাপেড়ে পাড়ে নকশা করা আছে এমন।

বিবর্ণ কাহীন।। 

জলসিড়ি – বাংলাদেশের একটি নদী।

 নুয়ে ঝুঁকে, নীচু হয়ে।

 ঢের- বহু অনেক।

 স্বপন -স্বপ্ন।

প্রান্তর ফাঁকা মাঠ। 

শঙ্খচিল -একধরনের চিল, এদের বুকের

অংশের রং সাদা। 

জনমে – জন্মে। 

শুষ্ক- শুকনো। 

চালতা একপ্রকার টক জাতীয় ফল।

 ঝাঁঝরা কোপরা,

তলে নীচে। 

ফোঁপরা ফাঁপা। 

হৃদয়- মনে।

বিপরীত শব্দ : রৌদ্রে ছায়ায়। শুদ্ধ আর্দ্র। ছন্দহীন – ছন্দযুক্ত। জনমে – মরনে। ভাঙা-গড়া। বেঁধে খুলে।