বাংলার উৎসব / রচনা / bANGLAR UTtSAB RACHANA.
![]() |
বাংলার উৎসব
রচনা
ভূমিকা - বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ অর্থাৎ বাঙ্গালীদের উৎসব লেগেই আছে । বাঙালিরা উৎসব প্রিয়। বাংলার দিকে দিকে ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন উৎসব। গ্রাম বাংলার উৎসবের সংখ্যাটা বেশি। আর শহরে উৎসবের সংখ্যাটা কম। উৎসবের মধ্যে আছে আনন্দ। যা মানুষের জীবনের একঘেয়েমি দূর করে। মানুষের মনের মধ্যে সুখের বাতাবরণ তৈরি করে । উৎসব সকলকে একত্রিত করে সকলের মধ্যে মিলন ঘটায়। উৎসবে অচেনার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ ঘটে।
উৎসবের ধরন- উৎসব বিভিন্ন রকমের হয়। যেমন, কোন দেবদেবী কে আরাধনা করে বড় উৎসব পালিত হয়। যেমন কালীপূজা, দুর্গাপূজা, সরস্বতী পূজা, গনেশ পূজা, মনসা পূজা ইত্যাদি । আবার কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে উৎসব পালিত হয়। যেমন মহরম, ঈদ, শবে বরাত ইত্যাদি। নিজেদের কিছু ব্যক্তিগত উৎসব ও পালিত হয়। যেমন বিয়ে, অন্নপ্রাশন ইত্যাদি। আবার কোন কোন তিথিকে কেন্দ্র করে উৎসব পালিত হয়। যেমন জন্মাষ্টমী ,পৌষ সংক্রান্তি ইত্যাদি ।আবার গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে কিছু কিছু উৎসব পালন করে। যেমন নবান্ন উৎসব। আবার কোন কোন উৎসব এক মাস ধরে পালন করা হয়। যেমন ঋতু পূজা।
বাংলার উৎসবের বর্ণনা :- বৈশাখ মাসে বছরে প্রথম দিন নববর্ষ দিয়ে শুরু হয় বাঙালির উৎসব। এই উৎসবে গনেশ পূজার মাধ্যমে দোকানে দোকানে হালখাতা প্রচলন আছে। তারপর অক্ষয় তৃতীয়া। এটাও শুভ তিথি দেখে অনেক দোকানে দোকানে পূজা হয়। অনেকে মিষ্টিমুখ করেন। আষাঢ়ের রথযাত্রা বাঙালি কাছে একটা বড় উৎসব। ছেলেরা রাস্তায় রাস্তায় রথ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। বড় বড় রথ মন্দিরে পূজা হয়। আষাঢ়- শ্রাবণ মাসে গ্রামে গ্রামে মনসা পূজার ধুম লেগে যায়। দিকে দিকে মাইকের শব্দে কানের তালা লাগায়। আত্মীয়-স্বজনের আসা যাওয়া সব মিলিয়ে জমজমাট একটা উৎসব পালন হয়। ভাদ্র মাসে জন্মাষ্টমী। কৃষ্ণের মন্দিরে মন্দিরে বেজে ওঠে কাঁসরঘন্টা। তালের তৈরি খাবার এই উৎসবের একটা বড় অঙ্গ। তারপর আশ্বিন মাসে বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ পূজা দুর্গা পূজা শুরু হয়। চার দিন ধরে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বাঙালির বড়ো উৎসব পালন হয়। তারপরে লক্ষী পূজা। এই উৎসব বাঙালির ঘরে ঘরে পালিত হয। এরপর কার্তিক মাসে কালীপূজা। এটি এক রাতের পূজা। এটি একটি নির্দিষ্ট অমাবস্যা তিথিকে কেন্দ্র করে হয়ে থাকে। খুব ধুমধামের সহিত এই উৎসব পালিত হয়। এরপর অগ্রহায়ণ মাসে ঘরে ঘরে নবান্ন উৎসব পালিত হয়। খুব ধুমধাম করে বিভিন্ন রকম খাওয়া দাওয়া এই উৎসবে আয়োজন থাকে। পৌষ মাসে পিঠে পুলি ঘরে ঘরে যেন একটা বড় উৎসব হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঘ মাসে স্বরসতী পূজা ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে একটা বড় উৎসব। ফাল্গুন মাসের দোলযাত্রা। গ্রাম বাংলা বুকে একটি বড় উৎসব। এটি রং মাখার উৎসব। চৈত্র মাসে গাজন এবং চড়ক পূজা বাঙালি একটি বড় উৎসব। তারপর আবার শুরু হয় নববর্ষ।
উৎসবে ভালো-মন্দ:- সকল কিছুর একটা ভালো দিকও আছে আবার খারাপ দিকও আছে। উৎসব মানুষের মনকে যেমন একদিকে আনন্দ দেয়। নতুন নতুন খাওয়া দাওয়া হয়। নতুন নতুন পোশাক পড়া। যারা বাইরে কাজ করতে যায়, তারা সকলেই বাড়ি আসে। সকলের সঙ্গে মিলেমিশে কাটানো হয়। সকল দোকানে জিনিসপত্রের বেচাকেনা বেড়ে যায়। তাদের আর্থিক উন্নতি ঘটে। আমার খারাপ দিকও আছে। উৎসবে অনেক অর্থ ব্যয় হয় পড়াশোনার ক্ষতি হয়। পরিবেশের দূষণ ঘটে। উৎসবে ডাক্তারদের ছুটির জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যাঘাত ঘটে। রাস্তাঘাটে যানজট তৈরি হয়। উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে ঝগড়া বিবাদ তৈরি হয়। অনেক যুবক ছেলে নেশাভানে মধ্যে পড়ে যায়। উৎসবকে কেন্দ্র করে অনেক বড় বড় রাজনৈতিক সমস্যা দেখা যায়।
উপসংহার- উৎসবের ভালো-মন্দ যায় থাকুক না কেন এটি বাঙালি একঘেয়েমি জীবনকে অনেকটা মুক্তির স্বাদ এনে দেয়। উৎসবকে বাঙালি ভালোবাসে দিন দিন এই উৎসবকে তারা আরো সৌন্দর্য করার চেষ্টা করছে। হয়তো ভবিষ্যতে আরও সুন্দর হবে। উৎসবের আকার বড় হবে। নতুন নতুন কিছু দেখা যাবে। নতুন ভাবনাও উদিত হবে। উৎসব একটি বাঙালি সংস্কৃতি। সেই সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে তারা অনেক অনেক আগ্রহী, ভবিষ্যতে আরও আগ্রহী হবে।