কি করে বুঝব অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর অষ্টম শ্রেণীর বাংলা
বাংলা সাহিত্য
গল্প : কী করে বুঝব
লেখিকা : আশাপূর্ণা দেবী
লেখিকা-পরিচিতি : আশাপূর্ণা দেবী অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি লেখিকা। তাঁর জন্ম কলকাতায় ১৯০৯ সালে। স্কুল- কলেজে তাঁর পড়ার সুযোগ ঘটেনি। অথচ অসামান্য সুক্ষ্ম দৃষ্টি, সংবেদনশীলতা ও পরিচিত সমাজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তিনি বাঙালি মধ্যবিত্ত জীবনকে আশ্চর্য দক্ষতার সঙ্গে তাঁর গল্প উপন্যাসে তুলে ধরেছিলেন। তিনি দীর্ঘজীবনে অসংখ্য উপন্যাস, গল্প এবং ছোটোদের জন্য অজস্র বই লিখেছেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—'ছোট ঠাকুরদার কাশীযাত্রা', 'প্রথম প্রতিশ্রুতি”, “সুবর্ণলতা', ‘বকুল কথা', 'অগ্নিপরীক্ষা', ‘সাগর শুকায়ে যায়’, শশীবাবুর সংসার', ‘সোনার হরিণ' ইত্যাদি। তাঁর রচিত অন্তত ৬৩টি গ্রন্থ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, লীলা পুরস্কার, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার, একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সরকারি খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। বাংলার এই মহান লেখিকা ১৯৯৫ সালে পরলোকগমন করেন।
সারসংক্ষেপ : বাড়ির রোয়াকে বসে ছ-বছরের ছেলে বুকু খেলা করছিল। এমন সময় রিকশা করে এলেন দুই মোটা সোটা ভদ্রমহিলা, বেনুমাসি, ছেনুমাসি। দীর্ঘদিন পর এসেছেন বোনঝিকে দেখতে সঙ্গে দুরন্ত ডানপিটে ছেলে ডাম্বাল ।
তাদের সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় একজন স্পষ্টবাদী সাহসী সরল ছেলে বুকু। অসময়ে অতিথিরা আসায় মা অন্তত বিরক্ত হয়ে বুকুর সামনে কিছু বেফাঁস মন্তব্য করে বসেন। সময়-সুযোগে বুকু
তা ফাঁস করে দেয়। ডাম্বলও ডানপিটে ছেলে সে আলমারি খুলে বইপত্র ছিঁড়ে ফেলে, শেফের উপর থেকে ল্যাম্প ভেঙে ফেলে, নানা অনিষ্ট করে। বুকু জানায় এগুলো তার রাগী সেজোকাকার বই, তিনি এসব দেখলে মজা দেখিয়ে দেবেন, পিঠের ছাল তুলে দেবেন। বুকুর মা এসে মাসিদের আপ্যায়ন করেন, কতদিন পরে এলেন বলে অনুযোগ করেন। খুব আনন্দ হচ্ছে বলে উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করেন। বুকু অবাক হয়ে যায়, শেষে থাকতে না পেরে বলে ওঠে ও কি মা! এই যে বললে, বাবারে শুনে গা জ্বলে। গেল। অসময়ে বেড়াতে আসা ভালো লাগে না—শুনে বুকুর মায়ের মাথায় যেন বাজ পড়ে। এখন ভালো লাগছে বলছো কেন? কি সর্বনেশে ছেলে! লোকের সামনে এইরকম বলতে হয়। তখন শুরু হয় শাক দিয়ে মাছ ঢাকা দেবার চেষ্টা । ছেনুমাসি গাল ফুলিয়ে বললেন আহা! সত্যিই তো খবর না দিয়ে অসময়ে এসে পড়ায় কাজের ক্ষতি হল। মা বলেন – না না কাজ কীসের? এখন তেমন কাজ থাকে না। আবার বুকু অবাক হয়, মা নির্জলা মিথ্যে বলছেন, মায়ের রান্না না হলে, কাজ সারা না হলে বাবা চটে যাবেন। তাদের সিনেমার টিকিট কাটা আছে। এই সত্য বাইরের লোকের কাছে সে তুলে ধরে, তাতে মা আরও রেগে যান কান মুলে বুকুকে ধমক দেন। মায়ের হাতের বড়ো বড়ো রাজভোগ অন্যান্য মিষ্টি খেয়ে অতিথিরা বিদায় নেন। বুকুর মায়ের সব রাগ গিয়ে পড়ে বুকুর উপর। বাইরের অতিথিদের কাছে ঘরের সব কথা বলার জন্য সমস্ত অপমানের প্রতিশোধ তুলতে প্রচণ্ডভাবে মারতে থাকেন ছেলেকে। তাই দেখে বাবা রেগে যান এবং কেন ছেলেকে মারা হচ্ছে তার কৈফিয়ত চান। তখন মা একে একে বুকুর সমস্ত কথা বাবার কাছে তুলে ধরেন। শুনে বাবাও তাকে প্রহার করতে থাকেন। দুজনের হাতে মার খেয়ে বুকু ডুকরে কেঁদে ওঠে। সে জানতে চায় কোনটা বলব বুঝব কি করে? নিজেই আমাকে শেখালে সদা সত্য বলবে, মিথ্যা বলা পাপ-- অথচ মা সমানে মিথ্যা বলেছেন। বাইরের লোকের সামনে তাই সে সত্য কথাগুলোই তুলে ধরেছে। সত্যই এ এক বিচিত্র সমস্যা। শিশুরা কী করে বুঝবে, আসলে কী করতে হবে?
নামকরণঃ আশাপূর্ণা দেবী বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রতিভাময়ী লেখিকা। তাঁর রচনার মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠেছে অপূর্ব সব শিক্ষা, আলোচ্য গল্পটি নাম 'কি করে বুঝব?' আমরা অভিভাবকরা অনেক সময় কাজ করি কিন্তু তাঁর পরিণাম ভাবি না। ছোটোদের আমরা নানা শিক্ষা দিই। কিন্তু সেই শিক্ষা নিজেরা গ্রহণ করিনা। ছোটোরা সহজ, সরল, কেউ কেউ টুপচাপ, যারা কথা বলে না ভীতু প্রকৃতির তাদের নিয়ে অভিভাবকদের অতটা সমস্যা হয় না। কিন্তু ডাম্বল বা বুকুর মতো ডাকাবুকোদের নিয়ে হয় সমস্যা। ছ-বছরের শিশু বুকু বাইরের অতিথিদের সামনে মা-বাবার আড়ালে বলা নানা কথা ফাঁস করে দিয়ে তাদের চরম অপদস্থ করেছে। মা-বাবা ছেলের এই আচরণ দেখে তাকে মারেন। তখন বুকু জানায় যে তাঁরাই তাকে সর্বদা সত্য কথা বলতে এবং কারো কাছে কোনো কিছু না লুকোতে বলেছেন। এটাই সে করেছে, তবু সে মার খেল। তাই ছোট্টো বুকুর প্রশ্ন বুঝব কী করে? বুকুর এই না বুঝতে পারার অসহায়তাই গল্পের মুখ্য বিষয় হওয়ায় “কী করে বুঝব' নামকরণটি সুপ্রযুক্ত হয়েছে।
হাতে-কলমে
অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর
১.১ আশাপূর্ণা দেবীর লেখা দুটি উপন্যাসের নাম লেখো।
উঃ। ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি', এবং 'সুবর্ণলতা'।
১.২ আশাপূর্ণা দেবী তাঁর সাহিত্যকৃতির জন্য কোন্ কোন্ বিশেষ পুরস্কার পেয়েছেন?
উঃ। আশাপূর্ণা দেবী তাঁর সাহিত্যকৃতির জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার, লীলা পুরস্কার, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার, অকাদেমি পুরস্কার, সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট উপাধি পেয়েছেন।
২. একটি বাক্যে উত্তর দাও :
২.১ বুকু কোথায় বসে খেলা করছিল?
উঃ। বুকু তাদের বাড়ির বাইরের রোয়াকে বসে খেলা করছিল।
২.২ রিকশা থেকে কারা নামলেন ?
উঃ। রিক্সা থেকে নামলেন বুকুর মা'র ছেনুমাসি এবং বেণুমাসি ও বুকুর বয়সি একটি ছেলে ‘ডাম্বল'।
২.৩ ডাম্বল আলমারি ভেঙে কার বই নামিয়েছিল?
উঃ। ডাম্বল আলমারি ভেঙে বুকুর সেজোকাকার বই নামিয়েছিল।
২.৪ বুকুর মার কী কেনা ছিল?
উঃ । বুকুর মা-র সিনেমার টিকিট কেনা ছিল।
২.৫ বুকু আর বুকুর সেজো বুড়িমা অতিথিদের জন্যে কী কী খাবার নিয়ে আসে?
উঃ। বুকু আর বুকুর সেজো খুড়িমা চা, বড়ো বড়ো রাজভোগ, ভালো ভালো সন্দেশ, শিঙাড়া, নিমকি প্রভৃতি খাবার অতিথিদের জন্য নিয়ে এসেছিলেন।
২.৬ বুকু কোন্ স্কুলে ভরতি হয়েছিল?
উঃ। বুকু আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্কুলে ভরতি হয়েছিল।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও :
৩.১ বুকু খেলতে খেলতে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায় কেন?
উঃ। বুকু তাদের বাড়ির বাইরের রোয়াকে বসে খেলছিল। খেলতে খেলতে সে দেখল যে, একটি রিকশা তাদের বাড়ির সামনে এসে থামল আর তা থেকে নেমে এলেন দুজন অত্যন্ত মোটাসোটা ভদ্রমহিলা এবং বুকুর বয়সি একটি মোটা ছেলে। রিকশা গাড়ির অতটুকু খোলের মধ্যে এদের জায়গা হয়েছিল কী করে এই কথা ভেবেই বুকু অবাক হয়েছিল।
৩.২ সিঁড়ি ভেঙে আর উঠতে পারব না বাবা'-- কারা একথা বলেছেন?
তাঁরা সিঁড়ি ভেঙে উঠতে পারবে না কেন?
উঃ। একথা বলেছেন বুকুর মা'র ছেনুমাসি ও বেণুমাসি।
তাঁদের শরীর ছিল স্থূলকায়। তাঁরা উত্তরপাড়ার বাড়ি থেকে বেরিয়ে দুই-তিনবার বাসবদল করে শেষ অবধি রিকশায় চেপে ভবানীপুরের পৌঁছে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন।
তাই তারা যখন শুনলেন বুকুর মা তিনতলায় ছাদের রান্না ঘরে আছে, তখন সিঁড়ি ভেঙে পরিশ্রম করে তাঁরা ওপরে উঠতে চান না বলে জানিয়েছিলেন।
৩.৩ ও কী! কী কাণ্ড করেছ তুমি'–কে কী কাণ্ড করেছে?
উঃ। বেণুমাসির ছেলে ডাম্বল কে একথা বলেছে বুকু। কারণ সে চেয়ারে গুছিয়ে বসার বদলে একখানা চেয়ার কনুইয়ের ধাক্কায় উলটেছে। টেবিল-ঢাকাটা কুঁচকে টেনে খানিকটা ঝুলিয়ে দিয়েছে। টেবিলের ওপরের খাতাপত্তরগুলো এলোমেলো করেছে। দেয়ালে রাখা আলমারিটার একটা পাল্লা ধরে এমন হ্যাঁচকা টান মেরেছে যে, চাবিবন্ধ কলটা বন্ধ অবস্থাতেই পাল্লার সঙ্গে খুলে বেরিয়ে এসেছে। সাজানো গোছানো বইয়ের সারি থেকে কয়েকটা বই নামিয়ে দুর ছাই! ছবি নেই বলে বইগুলো মাটিতে ফেলে, সে জানালার ওপর পা দোলাতে শুরু করেছিল। বুকুর সেজোকাকা রাগী মানুষ। তাঁর বইগুলো মাটিতে ছড়ানো দেখে বুকু ডাম্বলকে এই কথা বলেছিল।
৩.৪ বুকু অবাক হয়ে ফ্যালফেলিয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল কেন?
উঃ। বুকুর মা নির্মলা তাঁর মাসিদের আগমনের সংবাদ পেয়ে নীচে নেমে এসে এসে তাঁদের অভ্যর্থনা শুরু করেছিলেন। মা বলেছিলেন যে মাসিরা বেড়াতে আসায় তিনি খুব খুশি হয়েছেন, মা আরও বলেছিলেন যে তার তো মনে হয়েছিল
মাসিরা বুঝি তাকে ভুলেই গেছেন। অথচ একটু আগে তিনি বিরক্ত হয়ে মন্তব্য করেছিলেন অসময়ে লোক আসা তাঁর ভালো লাগে না। অথচ মা তাঁর মাসিদের দেখে বলছে ভালো লাগছে। অল্প সময়ের মধ্যেই মায়ের মুখে এই দুরকম কথা শুনে বুকু অবাক হয়ে মায়ের মুখের দিকে ফ্যালফেলিয়ে তাকিয়েছিল।
৩.৫ ছেলের কথা শুনেই বুকুর মা-র মাথায় বজ্রাঘাত।'— ছেলের কথা শুনে বুকুর মা-র মাথায় বজ্রাঘাত হলো কেন?
উঃ। বুকু তার মাকে যখন তাঁর মাসিদের আসার খবর জানিয়েছিল তখন তিনি বিরক্ত হয়েছিলেন এবং বুকুর সামনেই বলেছিলেন যে অসময়ে অতিথি আসা তার একেবারেই ভালো লাগে না। অথচ পরে সেই মাসিদের সামনে নিজের
মনোভাব সম্পূর্ণ বদলে সামাজিক ভদ্রতা দেখিয়ে তাদের আসায় খুব আনন্দ পেয়েছেন তা বলেছিলেন। বুকু এতে আশ্চর্য হয়ে অতিধিদের সামনে মায়ের বিরক্ত প্রকাশের কথা জানিয়ে দিয়েছিল। অতিথিদের সামনে ছেলের এই কথায় অপদস্থ হয়ে বুকুর মায়ের মাধার যেন বজ্রাঘাত হয়েছে বলে মনে হয়েছিল।
৩.৬ ডাম্বলকে ইস্কুলে ভরতি করা হয়নি কেন?
উঃ ভাম্বলের কথা অনুযায়ী তার বাবা হাড়কেপ্পন। সাত বছরের ছেলের ইস্কুলের মাইনে সাত টাকা তাঁর কাছে ছিল খুব বেশি, এই টাকা তিনি খরচ করতে পারবেন না। তাই ডাম্বলকে স্কুলে ভরতি করা হয়নি। ডাম্বলের বাবার মতে ছেলের পড়ে দরকার নেই, ছেলে চাষবাস করে খাবে।
৩.৭ কে জানে পাগলা-টাগলা হয়ে যাবে নাকি। কার সম্পর্কে এই মন্তব্য করা হয়েছে? এমন সন্দেহের কারণ কী ?
উঃ। আশাপূর্ণা দেবীর লেখা 'কী করে বুঝব' গল্পে বুকু সম্পর্কে এই মন্তব্য করা হয়েছে।
ডাম্বল আলমারি ভেঙে সেজোকাকার বই মাটিতে ফেলে দিয়েছিল। তাই দেখে বুকু বলেছিল যেমন হাতির মতো দেখতে, তেমনি হাতির মতো বুদ্ধি। সেজো কাকা তোমার ন। এছাড়া সে মায়ের, আড়ালে বলা কথাগুলি অতিথিদের সামনে ফাঁস করে দিয়ে মাকে অপদস্থ করেছিল -এইসব কথা লেগুমাসির মুখে শুনে, পুকুর মা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিলেন এবং পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার জন্য তিনি লজ্জা পেয়ে কাঁদো কাদো ভাবে মাসিদের বলেন যে ছেলেকে নিয়ে তার অনেক জ্বালা। যেভাবে অপ্রিয় সত্য কথাগুলো সবার সামনে বুকু বাবা মায়ের সম্পর্কে বলে চলেছিল তাতে তাঁর সম্মান ধুলোয় মিশে যাচ্ছিল। তাই বুকু সম্বন্ধে তার মায়ের সন্দেহ হতে থাকে। তিনি বুঝতেই পারছিলেন না ছেলে পাগল হয়ে যাবে কি না।
৩.৮ দুজনে মিলে চেঁচান, বল বল কেন ওসব বললি।'—বুকু কেন ওসব বলেছিল ?
উঃ। বুকু অতিথিদের সামনে মা-বাবার চরিত্রগুলো তুলে ধরেছিল খোলা মনে, কারণ দুপুরেই তার মা তাকে একশোবার করে বলেছিল— সবসময় সত্যি কথা বলবি, কারো কাছে কিছু লুকোবি না—সেটা বিশ্বাস করেই ছোটো বুকু সরলমনে মায়ের উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল। সে এই কথাগুলোর ভালোমন্দ কিছুই বুঝতে পারে নি। সে ভেবেছিল সত্য কথাগুলো বলে দিলে মা বোধহয় খুশি হবে। তাই বুকু ওসব কথা মাকে বলেছিল।
৪. নীচের প্রশ্নগুলির নিজের ভাষায় উত্তর দাও :
৪.১ গল্পে বুকুর আচরণ তাঁর মাকে অতিথিদের সামনে অস্বস্তিতে ফেলেছিল।—বুকুর এই আচরণ কি তুমি সমর্থন করো ? বুকু কেন অমন আচরণ অতিথিদের সামনে করেছিল?
উঃ। বড়োদের সামনে এসে ছোটোদের কথা বলা বিশেষ করে বুকুর অতিরিক্ত কথা বলা সমর্থনযোগ্য নয়। কারণ সৌজন্যের সীমা বুকু ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ফলে তার মা-বাবাকে অপদস্ত হতে হয়েছিল।
বুকুর এই আচরণ ও অতিরিক্ত কথা বলায় মনে হতে পারে যে সে বুঝি একটা বেয়াড়া ছেলে। কিন্তু বুকুর তেমন দোষ ছিল না। সবসময় খুব কাছ থেকে সে মা-বাবার আচরণ লক্ষ্য করেছে।
তাছাড়া সেদিনই দুপুরবেলা মায়ের কাছে সে শিখেছিল সবসময় সত্যকথা বলতে হয়, কাউকে কিছু লুকোতে নেই। বুকু তার শিশুসুলভ বুদ্ধির দ্বারা এই কথার উপর বিশ্বাস করে এমন আচরণ করেছিল। সে ছোটো বয়সে কথার ভালোমন্দ বোঝার বয়স তার হয়নি। সে ভেবেছিল মায়ের সামনে সত্যি কথা মা বোধহয় খুশি হবেন। বললে তাই সে এমন আচরণ করেছিল।
৪.২ বাড়িতে অতিথি এলে তাঁদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা উচিত? সে সম্পর্কে বন্ধুকে একটি চিঠি লেখো।
উঃ। প্রিয় বন্ধু, রুপক অনেক দিন তোকে চিঠি লেখা হয়নি। যদিও তোর চিঠি আমি ঠিক সময়েই পেয়েছি। বাৎসরিক পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সময় হয়নি। সেদিন আমি একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলাম। এক পরিচিত লোকের বাড়িতে তাদের ছোটো ছেলেটি মা-বাবার সম্পর্কে আমার সামনে এমন কিছু কথা বলছিল যাতে তাঁরা এবং আমি উভয়েই অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলাম। আমাদের দেশে অতিথিকে দেবতার স্থান দেওয়া হয়। বলা হয় ‘অতিথি দেব ভব;’–তাই বাড়িতে মানুষজন এলে তাঁকে যথাযোগ্য সম্মান করা উচিত, এমন কোনো আচরণ তাদের সামনে করা উচিত নয় যাতে বাড়ির লোকের সম্মানহানি হয়। ছোটোরা এলে তাদের সাথে ভালোমনে ভদ্রভাবে মিশতে হবে। অবশ্যই বাড়িতে ছোটোদের শেখাতে হবে তার আচরণ কেমন হওয়া উচিত। পাশাপাশি বড়োদেরও ছোটোদের সামনে এমন কথা বলা উচিত নয় যাতে সে তার কেমন আচরণ করা উচিত তা বুঝতে অসুবিধা হয়। আজ এখানেই শেষ করছি। আমার চিঠির উত্তর দিবি। বড়োদের আমার প্রণাম জানাবি, ছোটোসের আনার পক্ষ থেকে ভালোবাসা জানাস।
ইতি
কাজল
৪.৩ 'কী করে বুঝব আসলে কী করতে হবে। গল্পে বুকু এই কথা বলেছিল। -আসলে কী করা উচিত বলে তোমার মনে হয়।
উঃ । আশাপূর্ণা দেবীর লেখা 'কী করে বুঝব' গল্পটিতে ছয় বছরের ছেলে বুকু বাড়িতে আসা অতিথিদের সামনে নানা কথা বলে দিয়ে মা-বাবাকে অপ্রস্তুত অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল, অতিথিদের অসম্মান করেছিল। তারপর মার খেয়ে অসহায় বুকু তার এই আচরণের কারণ জানিয়ে বলেছে সে আসলে মায়ের উপদেশই পালন করেছে।
আসলে কী করতে হবে তা সে কি করে বুঝবে। আমার মনে হয় গল্পের বুকু খুবই ছোটো, ভালোমন্দ, সম্মানবোধ- এসব সম্পর্কে তার ধারণা খুবই কম। সে সদা সত্য কথা বলার জন্য চেষ্টা করেছিল। তাই মা বাবার শেখানো কিছু কথা মনে রাখতে গিয়ে নিজের অজান্তেই অতিথিদের সামনে মা-বাবাকে অপদস্থ করে ফেলেছিল। বুকুকে তার আচরণের পরিবর্তন নিশ্চয় ঘটাতে হবে। তবে আসলে কী করতে হবে সেটা আগে বুঝতে হবে বড়োদের। সবকথা ছোটোদের সামনে আলোচনা করবার সময় সতর্ক থাকতে হবে বড়োদের। যে শিক্ষা বা উপদেশ তাঁরা ছোটোদের দেবেন খেয়াল রাখতে হবে তা যেন বাস্তবসম্মত হয়। কারণ ছোটোরা অপরিণত বুদ্ধি দিয়ে অভিভাবকদের কথা শোনে ও তাদের অনুসরণ করে। তাই বড়োদের কথা ও কাজের মধ্যে যেন অসংগতি দেখা না যায়, তা মনে রেখেই ছোটোদের উপদেশ দিতে বা শাসন করতে হবে।
৪.৪ গল্পে দুটি ছোটো ছেলের কথা পড়লে –বুকু আর ডাম্বল। দুজনের প্রকৃতিগত মিল বা অমিল নিজের ভাষায় লেখো।
উঃ। গল্পে ডাম্বল এবং বুকু প্রায় দুজনেই একই বয়সের ছেলে, দুজনের স্বভাবের কিছু মিল ও অমিল রয়েছে। দুজনেই স্পষ্টবাদী এবং বড়োদের কথায় কথা বলে। সুযোগ পেলেই বাবা-মার অন্যায়ের কথাগুলো তারা অন্যদের সামনে তুলে ধরেছে। তবে বুকু শুধু অনর্গল কথায় তার বাবা মাকে অপদস্থ করে ফেলেছে। কিন্তু ডাম্বল একটু বেশি দুরন্ত, সে অপরের বাড়িতে এসে উৎপাত করেছে। আলমারি ভেঙে বইগুলো মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে, ল্যাম্প ভেঙেছে। অন্যের বাড়িতে গিয়ে ভদ্র হয়ে থাকার সহবত সে শেখেনি। বুকু সরল, বেশি কথা বলে, মনে যা আসে বলে দেয়। ডাম্বল ডানপিটে এবং বেশি কথাও বলে। একটি বিষয়ে তাদের দুজনের প্রকৃতিগত মিল দেখা যায় যে শিশুসুলভ বুদ্ধির কারণে উচিত-অনুচিত বা ভালোমন্দের জ্ঞান তাদের হয় নি। তাই তাদের দুজনেরই আচরণ এবং কথাবার্তা তাদের অভিভাবকদের অপ্রস্তুতে ফেলে দিয়েছে।
৪.৫ গল্পটি পড়ে বুকুর প্রতি তোমার সহানুভূতির কথা ব্যক্ত করে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করো।
উঃ। এই গল্পে বুকুর কথা পড়লে সত্যি তার উপর একটা সহানুভূতি জন্মায়।
'কী করে বুঝব' গল্পের শেষে আমরা বুকুকে প্রচণ্ড মার খেতে দেখি। বেশি কথা বলা, বড়োদের সামনে থেকে সব কথা শোনা এটাও আমাদের খারাপ লাগে। আসলে এটা তার একটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। তারপর মায়ের কাছে সদাসত্য কথা বলা এবং কাউকে কিছু না লুকোনোর সহবত শেখার ফলে কোন্টা ভুল বা উচিত নয়, এ বোধও সে হারিয়ে ফেলেছে। ফলে অতিথিদের সামনে বেফাঁস কথাগুলো বুকু উৎসাহের সঙ্গেই বলেছে আর না বুঝেই বাবা মা দুজনের হাত থেকেই ভীষণ মার খেয়েছে। বাবা মা বা অন্য কাউকে অসম্মান করা তার মতো ছয় বছরের ছেলের উদ্দেশ্য কখনোই হতে পারে না। আসলে ছেলেটি পরিস্থিতির শিকার। তাই বুকুর প্রতি আমাদের স্বাভাবিকভাবে সহানুভূতি জাগে।
৫. একই অর্থযুক্ত শব্দ গল্প থেকে খুঁজে নিয়ে লেখো :সংবাদ—খবর।
পুস্তক —বই।
সন্তুষ্ট—খুশি।
কোমল,আপ্যায়ন, সংবাদ, পুস্তক,সন্তুষ্ট, কোমল, আপ্যায়ন।
উঃ। সংবাদ—খবর।
পুস্তক —বই।
সন্তুষ্ট—খুশি।
কোমল—মোলায়েম।
আপ্যায়ন—অভ্যর্থনা।
৬. নীচের শব্দগুলির সন্ধিবিচ্ছেদ করো : ইত্যবসরে, বজ্রাঘাত, ব্যাকুল, নিশ্চয়, রান্না, দুরন্ত, সন্দেশ।
উঃ। ইত্যবসরে = ইতি + অবসরে।
বজ্রাঘাত = বজ্র+ আঘাত।
ব্যাকুল = বি + আকুল।
নিশ্চয় = নিঃ + চয়।
রান্না = রাধ + না।
দূরস্ত = দুঃ + অন্ত।
সন্দেশ = সম্ + দেশ।
৭. নীচের শব্দগুলির কোনটি বিশেষ্য এবং কোনটি বিশেষণ খুঁজে নিয়ে লেখো। এরপর বিশেষ্যগুলির বিশেষণের এবং বিশেষণগুলির বিশেষ্যরূপ লেখো।
উত্তর:-
বিশেষণ > বিশেষা
মানসিক > মন
সর্বনেশে > সর্বনাশ
শিক্ষিত > শিক্ষা
দুরন্ত > দুরন্তপনা
অবস্থাপন্ন > অবস্থা
ঘরোয়া > ঘর
গম্ভীর > গাম্ভীর্য
সৌন্দর্য > সুন্দর
শাসিত > শাসন
মৌখিক > মুখ
লালচে > লাল
কথিত > কথা
শয়তানি > শয়তান
হ্যাংলা > হ্যাংলামি
৮. নীচের প্রতিটি উপসর্গ দিয়ে পাঁচটি করে নতুন শব্দ তৈরি করে লেখো ঃ অ, বি, বে, আ, প্র, অব
উত্তর-
অ > অসীম, অশেষ, অবোধ,অধিকার, অশিক্ষিত।
বি> বিশেষ, বিনয়,বিগত, বিবেক, বিকার।
বে > বেরসিক, বেগতিক, বেহিসেব, বেনজির, বেয়াদপ ।
আ > আরাম, আজীবন, আকার।,আগ্রহ, আঘাত,
প্র >প্রকাশ, প্রহার, প্রবাসী।., প্রচার, প্রবেশ।
অব > অবদান, অবনতি, অবক্ষয়,,অবস্থা।
১. সমোচ্চারিত/প্রায় সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দগুলির অর্থ লিখে আলাদা, আলাদা বাক্য রচনা করো ঃ
আসা—আশা; মার—মাড়; সোনা–শোনা; মাস—মাষ; হাড়—হার; জ্বালা—জালা ।
উঃ । আসা (আগমন) সকালে পড়ার সময় তোমার আসা আমার ভালো লাগছে না
আশা (প্রত্যাশা)— আমি আশা করি এবার পরীক্ষায় ভালো কল করতে পারবো
মার (প্রহার)— পড়ানো পড়ার জন্য মাস্টারমশাই খুব মার দিলেন।
মাড় (কাপড় মাড় দেওয়া)—মাড় দেওয়া কাপড়গুলো ভালো করে ইস্ত্রি হয়।
সোনা (দামি ধাতু)— সোনা মেয়েদের অলংকার।
শোনা (শ্রবণ করা)— জোরে কথা না বললে ভালো শোনা যায় না।
মাস (বছরের একক) বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ।
মাষ (ছাল) গরম জলের ছিটে লাগলে ছাল সব উঠে যাবে।
হাড় (অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরির মূল উপাদান) গাছ থেকে পড়ে কাকুর হাতের হাড় ভেঙে গেছিল।
হার (পরাজয়) যে কোন খেলায় হার-জিত আছেই।
জ্বালা (যন্ত্রণা) তপন পাস করতে পারিনি বলে মনে খুব জ্বালা।
জ্বালা (জল রাখার পাত্র) গরমকালে জ্বালার জল আর জল ঠান্ডা হয়।
১০. এই গল্পে অজস্র শব্দদ্বৈত ব্যবহৃত হয়েছে। শব্দগুলি গল্প থেকে খুঁজে নিয়ে লেখো।
উঃ। বুকপুক, তোড়জোড়, লাটিসোঁটা, শুধুশুধু, গটগট, মেরেমেরে, চুনকালি, চটেমটে, গাউগাঁউ, পাগলাটা গলা, হ্যাঁহ্যাঁ, এলোমেলো, মুছতে-মুছতে, ড্যাবড্যাব, গমগম, হইচই, ফ্যালফ্যাল, চালতা-চালতা,,, গাদাগাদা, তড়বড়, ভূতেটুতে,কাঁদোকাঁদো, ভাজাভাজা, পিটপিট, হাঁপাতে হাঁপাতে, হালকা হালকা, বেছে বেছে, ।
১১. নীচের বাক্যগুলি থেকে সংখ্যাবাচক/পূরণবাচক শব্দ খুঁজে বার করো :
১১.১ মা-তো-সেই তিনতলার ছাদে।
উঃ। তিনতলা।
১১.২ দুই বোনের দুই-দু-গুণে চারটি চোখ কপালে উঠে গেছে।
উঃ। দুই, দু, চারটি।
১১.৩ সাত বছরের ছেলের ইস্কুলের মাইনে সাত টাকা।
উঃ। সাত বছর, সাত টাকা।
১১.৪ নিজেই তো দুপুরবেলা একশোবার করে বললে- সবসময় সত্যিকথা বলবি। । একশো বার।
১২. নির্দেশ অনুযায়ী বাকা পরিবর্তন করো ।
১২.১ বুকু ছুটে ওপরে চলে যায়। (জটিল বাক্যে) উঃ । বুকু যে ওপরে গেল তা ছুটে গেলো।
১২.২ ছেনুমাসি আর অন্যটির নাম রেণুমাসি। (সরল বাক্যে) ঃ ।
১২.৩ যত বড়ো হচ্ছে তত যেন যা-তা হয়ে যাচ্ছে। (যৌগিক বাক্যে)
উঃ। বড়ো হচ্ছে এবং যা-তা হয়ে যাচ্ছে।
মাসির সঙ্গে অন্যজন হলেন বেণুমাসি ।
১২.৪ ছেলের কথা শুনেই বুকুর মা-র মাথায় বজ্রাঘাত। (জটিল বাক্যে)
উঃ। ছেলের যা কথা তা শুনে বুকুর মার মাথায় বজ্রাঘাত হল।
১৩. পাকা মাথা—এই শব্দগুলির প্রত্যেকটিকে দুটি আলাদা অর্থে ব্যবহার করে বাক্য লেখো।
উঃ। পাকা (বেয়াড়া) – ভারী পাকা ছেলে ডাম্বল, বাবাকে বলে হাড়কেশন।
পাকা (শক্ত)— ঝিলের ধারে বাড়ির ভিত খুব পাকা করেই গাঁথতে হয়েছে।
মাথা(বুদ্ধিমান)—এতো দেখছি পাকা মাথার কাজ, খাতাপত্রে কোথায় এতটুকু ভুল নেই।
মাথা (দলের প্রধান) রাহুল নামে ছেলেটি দলের মাথা, ওকে ধরতে পারলেই সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
পাঠ মূল্যায়নের জন্য সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
★ছেনুমাসির গালের সাথে কীসের তুলনা করা হয়েছে? তিনি কী কথা বলেছিলেন ?
উঃ। ছেনুমাসির গালের সাথে চালতার তুলনা করা হয়েছে। সে বলেছিল তা ছেলেকে গাল দিচ্ছ কেন? সত্যি তো অসময়ে এসে ক্ষতি করে দিলাম।
★ ডাম্বল কেমনভাবে খাচ্ছিল ?
উঃ। ডাম্বল গাউগাঁউ করে সবকিছু খেয়ে ফেলে বসে বসে রেকাবির রস চাটছিল।
★ বুকুর মায়ের মতে যে ছেলেরা ছোটোবেলায় দুরন্ত থাকে তারা কেমন হয়?
উঃ। যে ছেলেরা ছোটোবেলায় দুরন্ত থাকে বুকুর মায়ের মতে তারা বড়ো হয়ে মহাপুরুষ হয়।
★ ডাম্বল-এর মা কে?
উঃ। ডাম্বলের মা হলেন রুকুর মায়ের বেণুমাসি ।
★বুকু ডাম্বলকে কী বলেছিল ?
উঃ। বুকু ডাম্বলকে বলেছিল তার যেমন হাতির মতো চেহারা তেমনি হাতির মতো বুদ্ধি ।
★ ডাম্বল বইগুলো ফেলে দিল কেন?
উঃ। বইগুলোতে কোনো ছবি ছিল না তাই ডাম্বল বইগুলি ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল।
★ বুকুর কথার ধরনে তার 'সেজোকাকা সম্পর্কে কী ধারণা পাওয়া যায় ?
উঃ। বুকুর কথার ধরনে বোঝা যায় তার সেজোকাকা লোকটি মোলায়েম অর্থাৎ ঠান্ডা মানুষ নন।
★ বুকুর মায়ের নাম কী ? তিনি কোথায় ছিলেন?
উঃ । বুকুর মায়ের নাম নির্মলা। তিনি তিনতলার রান্নাঘরে ছিলেন।
★ মাসিরা কোথা থেকে এসেছেন?
উঃ। মাসিমারা উত্তরপাড়া থেকে ভবানীপুরে এসেছেন।
★ পল্পে ছেলুনাসিরা এবং বুকুর মা কীরূপ মূর্তি ধরেছেন বলে লেখিকা বলেছেন ?
উঃ। ছেনুমাসিরা ধরেছিলেন বিশ্বস্তর মূর্তি আর কুকুর মা রনচন্ডী মূর্তি ধরে ছেলে ঠ্যাঙাতে শুরু করেছিলেন।
★ সে জন্য চটেমটে লাল হয়ে আছেন। –কে চটে আছেন? তিনি কী বলেছিলেন?
উঃ। বুকুর বাবা চটে আছেন।
তিনি বলেছিলেন, খুব যা হোক, ছেনুমাসিরা বেড়াতে আসার দিন পেলেন না। আমাদের সিনেমার টিকিটগুলো পচাবার জন্য বেছে বেছে আজই আসতে ইচ্ছা হলো।
★ কী করে বুঝব গল্পটিতে লেখিকার অর্ন্তদৃষ্টি ও রসবোধের কী পাওয়া যায় তা বুঝিয়ে লেখো।
উঃ। লেখিকা আশাপূর্ণ দেবী তাঁর ‘কী করে বুঝব' গল্পটিতে এক গভীর অর্ন্তদৃষ্টির পরিচয় দিয়েছেন। মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারে অসময়ে কেউ এসে পড়ায় মনে মনে বিরক্ত হলেও হাসিমুখে সামাজিক ভদ্রতা করার যে রীতি প্রচলন আছে তার অতি বাস্তব চিত্র লেখিকা এই গল্পে ফুটিয়ে তুলেছেন। গল্পের মাঝে ‘ছোটো ছেলেদের সামনে যথেচ্ছ কথা বলার ফল টের পান' এই একটি মন্তব্য দ্বারা লেখিকার গভীর অর্ন্তদৃষ্টির পরিচয় পাওয়া যায়।
গল্পটির আগাগোড়াই কৌতুক রসে পরিপূর্ণ। চরিত্রগুলি বর্ণনা, তাদের সংলাপ এবং ঘরোয়া কার্যকলাপ কৌতুকের সৃষ্টি করে। সর্বোপরি গল্প বলার অসামান্য ভঙ্গীটি লেখিকার অপূর্ব রসবোধের পরিচয় দেয়।
★ আমার বুকু তো কালোই ছিল।'—কোন্ প্রসঙ্গে কাকে একথা বলতে হয়েছিল ?
উঃ। বুকুর মা ডাম্বল সম্বন্ধে প্রশংসা করা শুরু করেছিলেন কারণ বুকু যেভাবে বেয়াড়া কথা বলে অতিথিদের এবং নিজের মা-বাবাকে অপদস্ত করে ফেলেছিল তা ভুলিয়ে দিতেই বেণুমাসিকে ডাম্বল সম্পর্কে ভালো কথা বেশি করে বলতে
হয়। ভাম্বল তেমন সুন্দর বা আহা মরি ফরসাও ছিলনা। তবু বুকুর মা বলেন ডাম্বল কত বড়ো হয়ে গেছে। কী সুন্দর দেখাতে হয়েছে। আর বেনুমাসিকে বলেন— তোমার এই ছেলেটি বোধহয় সবচেয়ে ফরসা। লেখিকা এই বিষয়ে এক মজার
মন্তব্য করেছেন যে আমাদের সমাজকে পরের কালো ছেলেকে ফরসা বলা আর বিচ্ছু ছেলেকে সোনা ছেলে বলা নিয়ম। তবে এতে কাজ হয়, বেনুমাসি প্রসন্ন হন এবং বলেন না ডাম্বল ছোটবেলায় এইরকম ছিল। এখন রোদে ঘুরে কালো হয়ে গেছে। আরো বলেন যে বুকুও নাকি কালো হয়ে গেছে। এতে বুকুর মা নির্মলা বেনুমাসিকে সন্তুষ্ট করতে বলেন
বুকু নাকি বরাবরই কালো ছিল।
★ বুকুর ক্লাসে কখানা বই ছিল ?
উঃ । বুকুর ক্লাসে সব মিলিয়ে আটখানা বই ছিল।
★ দুজনের মধ্যে একজনের মুখ গম্ভীর হয়ে উঠল । গম্ভীর হয়ে ওঠার কারণ কী ? অপরজনের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?
উঃ। একজনের মুখ গম্ভীর হওয়ার কারণ বুকুর বিজ্ঞের মতো মন্তব্য, অতিথিরা জানতে চেয়েছিলেন তাদের চিনতে পারছে কিনা? কারণ, অনেকদিন আগে তারা এসেছিলেন। বুকু উত্তরে বলেছিল তাছাড়া তখন হয়তো এত মোটা ছিলেন না আপনারা । অন্যজন হেসে উঠেছিলেন, খুক খুক করে হাসতে হাসতে বলেছিলেন নির্মলার ছেলেটি তো আচ্ছা মজার কথা বলে।
★ডাম্বল বুকুদের বাড়িতে এসে কী কী করেছিল ?
উঃ। ডাম্বল চেয়ারে গুছিয়ে বসার বদলে কনুইয়ের ধাক্কায় একখানা চেয়ার উলটে দিয়েছিল এবং টেবিলের ঢাকাটা কুঁচকে ঝুলিয়ে দিয়েছিল এবং টেবিলের খাতাপত্রগুলোকে এলোমেলো করে দিয়েছিল। আলমারির একটা পাপ্পা ধরে এমন একটা হ্যাঁচকা টান সে মেরেছিল তাতে চারিবন্ধ কলটা পাল্লার সঙ্গেই খুলে বেরিয়ে এসেছিল। এরপর সাজানো বইয়ের সারি থেকে তিন-চারখানা বই নামিয়ে 'দূর ছাই' ছবি নেই বলে মাটিতে ফেলে দিয়ে সে জানালার ধাপের ওপর উঠে পা দোলানো শুরু করেছিল। এছাড়াও সে শেলফের ওপর থেকে টেবিল ল্যাম্পটিকে ফেলে ভেঙে দিয়েছিল।
★বাঃ নিন্দে করা হবে না?'-কে একথা কাদের সামনে বলেছিল ? নিন্দে করে কী কী বলতে হয় বলে সে বলেছিল? এর উত্তরে কারা কী করেছিলেন ?
উঃ। আশাপূর্ণা দেবীর ‘কী করে বুঝব গল্পে বুকু এই কথা তার মা, ছেনুমাসি ও বেনুমাসিদের সামনে বলেছিল।
বুকু বলেছিল বেড়াতে আসা লোক চলে গেলে তাদের নিন্দে করতে হয়, বলতে হয় ছেলেটা কী অসভ্য, হ্যাংলা। মাসিরা খুব অহংকারী। এসে নাকি তারা মাথা কিনে নিয়েছেন। শুধু শুধু এক গাদা পয়সা খরচ হয়ে গেল।
এর উত্তরে ছেনুমাসি বলেন 'বলো বাবা, প্রাণ ভরে বলো'—এই বলে গট গট করে তিনি চলে যান, আর তার পিছনে চলে যায় বেনুমাসি আর ডাম্বল। আর বুকুর মায়ের মুখ দেখে মনে হয় তিনি বুঝি হার্টফেল করেছেন।
★ তারপর গল্প চলে'—কাদের মধ্যে কী কী গল্প চলে? সেই গল্প কী ভাবে থামে?
উঃ। বুকুর মা ও বেনুমাসি এবং ছেনুমাসির মধ্যে গল্প চলে। তাদের মধ্যে সাধারণ মেয়েলি গল্প চলতে থাকে। সেই সব গল্পের বিষয়বস্তু হলো কবে মেয়ের বিয়ে হলো, কাদের বউয়ের কী কী গয়না হলো, শাড়ি আজকাল কীরকম জলের
দর হয়ে গেছে, এইসব। ছেনুমাসিরা বলেন তারা শাড়ি কিনে আলমারি বোঝাই করে ফেলেছেন। বুকুর মারও এই বেলা কিনে রাখা উচিত। বুকু আর বুকুর সেজো খুড়িমা দুজনে অতিথিদের জন্যে চা আর খাবার নিয়ে আসার পর গল্প থামে।
শব্দার্থ ঃ অপরিমিত, প্রচুর।
প্রহার—মার। অপদস্থ—
অপমানিত, লাঞ্ছিত।
সন্দেহ—অবিশ্বাস।
পিটোচ্ছে—মারধোর করছে।
নিন্দে—অপরের সমালোচনা।
অসভ্য—সভ্যতা জানে না যে।
চুনকালি—অসম্মানসূচক শব্দ।
রণচণ্ডী—অসুরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চণ্ডী দেবী যে মূর্তি ধারণ করেছিলেন সেই মূর্তি, এখানে রেগে যাওয়া অর্থে বোঝানো হয়েছে।
বিজ্ঞ—জ্ঞানী।
যথেচ্ছ—যা খুশি।
ধাতস্থ হয়ে—সামলে নিয়ে।
হার্টফেল—এটি একটি ইংরেজি শব্দ, এর অর্থ হৃৎপিন্ডের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া।
ঝাপটা মেরে- জোর করে চুপ করিয়েদিয়ে।
বেজায়—অতিরিক্ত, খুব।
শেলফ –তাক।
মোলায়েম- নরম ।
বোনঝি -বোনের মেয়ে।
বার দু-তিন-দুই-তিন বার।
ইত্যবসরে—এই সুযোগে।
মোলায়েম-কোমল ও মসৃণ।
ড্যাব ড্যাব করে—চোখ বড়ো বড়ো করে।
গমগম—গম্ভীর শব্দ।
অভ্যর্থনা—সাদর আপ্যায়ন।
ফ্যালফেলিয়ে- অবাক হয়ে, হতবুদ্ধি হয়ে।
মাথায় বজ্রাঘাত —আকস্মিক বিপদে পড়া।
হাটে হাঁড়ি ভাঙা—সবার মাঝে গোপন কথা প্রকাশ।
ফাঁস – এখানে প্রকাশ।
ব্যাকুল—অস্থির।
গাদাগাদি—ঠাসাঠাসি, ঘেঁষাঘেঁষি।
বিচ্ছু—অতি দুরন্ত।
বেয়াড়া–বিশ্রী, বদ।
আহা মরি প্রশংসাসূচক বা বিদ্রুপসূচক
ধ্বনি।
প্রসন্ন—আনন্দিত।
হাড়কেপ্পন—অতি কৃপণ, খুব কিপটে।
যথেষ্ট—প্রয়োজন মতো।
আক্কেল গুড়ুম — হতভম্ব অবস্থা।
খণ্ডায়—নিবারণ করে।
অপ্রতিভ—অপ্রস্তুত, হতবুদ্ধি।
চটেমটে—অত্যন্ত রেগে।
বিশ্বম্ভর মূর্তি—অভিধানিক অর্থে বিশ্বকে যিনি ধারণ করেন,
বিপরীত শব্দ :
জ্বলে নিভে।
প্রসন্ন - অপ্রসন্ন।
অপ্রতিভ— সপ্রতিভ।
শত্রুতা-মিত্রতা।
নিন্দে – প্রশংসা।
বিজ্ঞ—অজ্ঞ।
মোলায়েম-কর্কশ।
অসভ্য-সভ্য।
