মিষ্টি কবিতা পঞ্চম শ্রেণি বাংলা হাতে-কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর / Misti poem question answer class 5 bangla
পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা
মিষ্টি কবিতা
লেখক:- প্রেমেন্দ্র মিত্র
কবি প্রেমেন্দ্র মিত্রে পরিচিতিঃ
প্রেমেন্দ্র মিত্র ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম জ্ঞানেন্দ্রনাথ মিত্র।শৈশবেই তিনি মাতৃহারা হন । তিনি মাতামহের কাছে মির্জাপুরে তিনি পালিত হন। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ রচনায় কবি সমান
দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। কিশোর সাহিত্যেও তিনি অসাধারণ পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। তাঁর সৃষ্ট ‘ঘনাদা’ চরিত্রটি এর সকলের মন জয় করেছে । ১৯৫৭ সালে ‘সাগর থেকে ফেরা' কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি ‘আকাদেমি’ পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৫৮ সালে 'রবীন্দ্র পুরস্কার' লাভ করেন। সরকারি খেতাব ‘পদ্মশ্রী’ এবং বিশ্বভারতীর সাম্মানিক উপাধি ‘দেশিকোত্তম' তিনি লাভ করেন। কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে ৩ মে কলকাতায় পরল গমন করেন।
সারাংশ:-
সারাবছর ধরে আকাশের বুকে ঝড়, জল, রোদ, বৃষ্টি নিয়েই প্রকৃতিই খেলা চলে। ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে আকাশের বুকে প্রকৃতির এই খেলা যেমন অনেকসময় আমাদের দুর্ভোগের মধ্যে ফেলে দেয় তেমনই প্রকৃতি যদি কোনো কারণে নীরব থাকে তবে আমাদের চলার পথে নানান বাধাবিঘ্ন সৃষ্টি হয়। তবু নানান দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে জীবনে এগিয়ে চলার পথে মানুষ আনন্দ খুঁজে পায়। কেননা আমরা জানি কষ্টের বিনিময়ে পাওয়া যে সুখ তাই হল প্রকৃত সুখ। ঝড়, বৃষ্টি, রোদ ইত্যাদি প্রাকৃতির দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে আমরা যে সুখ লাভ করে থাকি তা হয় আনন্দের। বছরের ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে আকাশ নানান রূপে সেজে ওঠে। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহের পর হঠাৎ মেঘ কালো করে বিদ্যুৎ চমকে বৃষ্টি আসে। পৃথিবী সাময়িক ঠান্ডা হয়। কিন্তু কবি বলছেন ঝড়, বৃষ্টি, মেঘ, রোদ আকাশে যদি কোনো কিছুই না দেখা যায় তবে আমাদের ভালো লাগবে কি? পিছল পথে পড়ে যাওয়া, হোঁচট খাওয়া কিংবা গড়িয়ে পড়ার মধ্যে যেমন দুঃখ আছে তেমন মজাও আছে।
মিষ্টি কবিতার নামকরণ সার্থকতা :-
প্রকৃতির নিয়মে বছরের ছয়টি ঋতু এক-এক রূপে সেজে ওঠে। প্রকৃতির এই নব নব রূপ আমাদের আনন্দ দেয়। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে মানুষ কষ্ট পায়, তারপর বর্ষায় বৃষ্টির জলে
প্রকৃতি শস্যশ্যামল হয়ে ওঠে। আবার বন্যা দেখা দেয়। আবার শীতের প্রচণ্ড ঠান্ডায় মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। আখ ফসলটি বাইরে থেকে কিছুই বোঝা যায় না যে এটি মিষ্টি না তেতো। চিবিয়ে খেয়ে তবেই বোঝা যায় আখ মিষ্টি। কবি বলছেন, কষ্টের মধ্যে আমরা যা কিছু গ্রহণ করি তাই আমাদের প্রকৃত সুখ অর্থাৎ মিষ্টি। সেদিক থেকে কবিতাটির 'মিষ্টি" নামকরণ যথার্থ হয়েছে বলে আমার মনে হয়।
হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর
১. নিজের ভাষায় লেখো :
১.১ কোন্ ঋতুতে সাধারণত আকাশে ঝড় ওঠে না, মেঘ ডাকে না?
উত্তর : শীত ঋতুতে সাধারণত আকাশ ঝড় ওঠে না, মেঘ ডাকে না।
১.২ কোন্ ঋতুতে সাধারণত পথ-ঘাট পিছল হয়ে পড়ে ?
উত্তর ঃ বর্ষা ঋতুতে সাধারণত পথ-ঘাট পিছল হয়ে পড়ে।
১.৩ কোন্ পথে সহজেই গড়িয়ে পড়া যায়?
উত্তর ঃ পিচ্ছিল পথে সহজেই গড়িয়ে পড়া যায়।
১.৪ চড়াই-উৎরাই রাস্তা কোন এলাকায় দেখা যায়।
উত্তর-চড়াই-উৎরাই রাস্তা পাহাড়ি এলাকায় দেখা যায়।
১.৫ ‘রাস্তা’ শব্দটি অন্য কোন্ নামে কবিতায় আছে?
উত্তর : ‘রাস্তা’ শব্দটি ‘পথ' নামে আলোচ্য কবিতায় আছে।
১.৬ আখের প্রসঙ্গ রয়েছে, তোমার পাঠ্যসূচির এমন অন্য একটি রচনার নাম লেখো।
উত্তর ঃ আখের প্রসঙ্গ রয়েছে এমন একটি রচনার নাম ‘বোকা কুমিরের গল্প’।
২. নীচের এই শব্দগুলো মূল কোন্ কোন্ শব্দ থেকে এসেছে ঃ
আখ
রোদ্দুর-
উত্তর-
আখ- ইক্ষু থেকে এসেছে।
রোদ্দুর -রৌদ্র থেকে এসেছে।
৩. ‘চড়াই’ ও ‘পড়ে’—এই দুটি শব্দের দুটি করে অর্থ লেখো, বাক্যে ব্যবহার করো ঃ
চড়াই—(পাখি বিশেষ) চড়াই পাখি সাধারণত ঘরের খড়ের চালে বাসা করে।
চড়াই—(উঁচুনীচু) পাহাড়ে চড়াই-উৎরাই রাস্তা দেখা যায়
পড়ে—(পাঠ করা) পরীক্ষার সময় ছেলেটি অনেক রাত জেগে পড়ে।
পড়ে—(পতিত হওয়া) বাসটি দ্রুতগতিতে যাওয়ার জন্য খালে পড়ে গেছে।
৪. তোমার স্কুলে যাওয়ার, খেলতে যাওয়ার, আর বন্ধুর বাড়ি যাওয়ার রাস্তাগুলো কেমন, তিনটে রাস্তা নিয়ে আলাদা আলাদা দুটো করে বাক্য লেখো। এ প্রসঙ্গে কোন্ রাস্তাটি তোমার কেন ভালো লাগে, তার পক্ষে দুটি যুক্তি দাও।
উত্তর ঃ আমার স্কুলে যাওয়ার রাস্তা— আমার স্কুলে যাও রাস্তাটা ঢালাই রাস্তা। অনেক জায়গায় ভালো। অনেক জায়গায় খারাপ। যেতে আসতে অনেক কষ্ট হয়।
খেলতে যাওয়ার রাস্তা— আমার খেলতে যাওয়ার রাস্তাটি পুকুরপাড় দিয়ে বাঁশঝাড়ের ভেতর দিয়ে যেতে হয় বর্ষাকালে কাদা হয়। তা সত্ত্বেও খেলতে যেতে হয়।
বন্ধুর বাড়ি যাওয়ার রাস্তা— বন্ধুর বাড়ি যাওয়ার রাস্তাটি আমার খুব ভালো। অর্ধেকটা ঢালাই রাস্তা। অর্ধেকটা পাকা রাস্তা । যেতে কোন কষ্ট হয় না।
৫. কষ্টের বিনিময়ে পাওয়া যে সুখ তা-ই প্রকৃত সুখ। কবিতায় এই কথাটি কীভাবে প্রকাশ পেয়েছে লেখো।
উত্তর ঃ জীবনে প্রকৃত সুখ পেতে হলে মানুষকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়। অনেক কষ্ট করতে হয়। কথায় আছি কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে। মনীষীগণ বলেছেন, অর্থ বিনা সুখ লাভ হয় না। এই অর্থকে লাভ করতে হলে নিজেকে জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এর জন্য চাই উদ্যম, প্রচেষ্টা। জীবনে বড় হতে গেলে একটা লক্ষ্য স্থির করা দরকার। তার মধ্যে অনেক বাধা আসবে । সেই বাঁধাকে কেটে এগিয়ে যেতে হবে।।তবে জীবনে সু- প্রতিষ্ঠিত হত পাওয়া যাবে। জীবনে যারা বড় হয়েছেন, তারা অনেক কষ্ট করেছেন।। সেই কষ্ট কখনো অভাবের সঙ্গে ,কখনো প্রকৃতির সঙ্গে, কখনো মনের সঙ্গে লড়াই করতে হবে। কষ্টের মধ্য দিয়ে, বাধাবিপত্তি কাটিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছোনোর যে সুখ সেই সুখই হল প্রকৃত সুখ। ‘মিষ্টি” কবিতায় কবি প্রেমেন্দ্র মিত্র বলেছেন, ‘আখ একটি শক্ত লাঠির মতো রসালে
ফল। কিন্তু এই শক্ত লাঠির মতো আখ থেকে অনেক কষ্ট করে মিষ্টি রস বের করা হয়।
৬.১ ছোটোদের প্রিয় ‘ঘনাদা' চরিত্র কার সৃষ্টি?
উত্তর : প্রেমেন্দ্র মিত্রের সৃষ্টি।
৬.২ প্রেমেন্দ্র মিত্র কোন্ সাহিত্য-পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?
উত্তরঃ‘কল্লোল’সাহিত্য-পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন
৬.৩ তাঁর লেখা দুটি বইয়ের নাম লেখো।
উত্তর : ‘সাগর থেকে ফেরা’, ‘হরিণ-চিতা-চিল'।
৭. কোন্ কোন্ মিষ্টি খাবার তোমার খেতে ভালো লাগে, নীচের মানস মানচিত্রে সেগুলির নাম লেখো :
উত্তর :
দই
রাবড়ি
পায়েস।
সন্দেশ
হালুয়া
পাওয়া
মিষ্টি খাবার
আইসক্রিম
রসগোল্লা
ক্ষীর
আখের রস
মালপোয়া
জিভেগজা
এই মিষ্টিগুলি নিয়ে এক-একটা বাক্য লেখো।
উত্তর ঃ দুধ থেকে দই হয়।
রাবড়ি তৈরি হয়দুধ ফুটিয়ে ।
দুধের তৈরি পায়েস একটি ভালো খাবার।
সন্দেশ শিশুদে প্রিয় খাবার।
ক্ষীর তৈরি করা হয় দুধ মেরে।
পানতুয়া মিষ্টির দোকানে বিক্রি হর।
চালের গুঁড়ো দিয়ে মালপোয়া তৈরি হয়।
হালুয়া তৈরি করা অনেকেই পারে না।
জিভে গজা দেখলে জিভে জল আসে।
একটি ঠান্ডা পানীয়।
২১ নীচের কোন ছবিতে কোন ঋতুর আকাশ কেমন, তা (পাঠ্য বইয়ের ১০১ পৃষ্ঠার) ছবি দেখে নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর : শরৎ : শরৎকালের নীল আকাশে সাদা সাদা তুলোর মতো মেঘ উড়ে বেড়ায়।
বর্ষা : বর্ষাকালে আকাশ কালো মেঘে ঢাকা থাকে। কখনও গুড়িগুড়ি, কখনও প্রবলবেগে বৃষ্টি হয়।
৮। এরকম অন্য কোনো ঋতুর আকাশ সম্পর্কে লেখো।
উত্তর : গ্রীষ্ম -ঋতুর আকাশ সাধারণত পরিস্কার থাকে। সূর্যের কিরণ লম্বভাবে পড়ায় খুবই বেশী হয়।
শীত;- শীত ঋতুর আকাশ সাধারণত পরিস্কার থাকে সন্ধ্যায় চারদিক কুয়াশায় ঢেকে যায়।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর
সংক্ষেপে উত্তর
★ কবির মতে কোন পথে কোনো দুঃখ নেই।
উত্তর : কবির মতে যে পথ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, বৃষ্টির জলে ভিজে থাকা বা পিছিয়ে পড়ার কোনো ভয় নেই, যে পথে।হোঁচট লাগে না, অর্থাৎ কোনো বাধা সৃষ্টি হয় না সেই সেই পথে কোনো দুঃখ নেই।
★ “রাস্তা হোক না চড়াই-ভাঙা/অনেক অনেক দূর।”— চড়াই বলতে কী বোঝো? এই পতি দুটিতে কবি কী বলতে চেয়েছেন?
উত্তর : চড়াই বলতে রাস্তার আরোহণের পথকে বোঝায়। দূরের পথ অসমতল হলেও কষ্টের মধ্য দিয়ে পাওয়া যে সুখ, তাই প্রকৃত সুখ বলেছেন কবি।
★ প্রোমেজ মিত্র রচিত 'মিষ্টি' কবিতার মূলভাব বর্ণনা করো।
উত্তর : মানুষ বহু কষ্ট সহ্য করে যে সুখ লাভ করে তাই প্রকৃত সুখ। যেমন- কৃষক সমাজ বৃষ্টি, রোদ, ঝড়, জল মাথায়।করে কদল উৎপাদন করে। এই ফসল উৎপাদনের মধ্য দিয়েই তারা আনন্দ বা সুখ লাভ করে।
★ মানুষ কীভাবে সুখ লাভ করে?
উত্তর : জীবনে চলার পথ অতি দুর্গম, কষ্টসাধ্য। নানান দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে মানুষ মূল লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যায় এবং লক্ষ্যে উপস্থিত হয়ে মানুষ সুখ লাভ করে।
★সমার্থক শব্দ : মেঘ–বারিদ, জলদ, ঘন, জীমূত। আকাশ—গগন, ব্যোম, নভ, আসমান।
শব্দার্থ : ঝড়—জোরালো বাতাসের ঢেউ।
মেঘ—আকাশে ভেসে বেড়ানো বাষ্পরাশি।
রোদ—সূর্যের কিরণ।
হোঁচট—কোনো কিছুতে পা লেগে হঠাৎ পড়ে যাওয়া।
দুখু—দুঃখ।
মজা—আনন্দ।
পথে—রাস্তায়।
মু—বোকা।
★ বিপরীত শব্দ ঃ আকাশ—পাতাল।
জল-স্থল।
ভালো-মন্দ।
পড়া—ওঠা।
দুখখু—সুখ।
+ বিপরীত শব্দ : চড়াই—উত্রাই।
ভাঙা—গড়া।
অনেক—অল্প।
দূর—কাছে।
মিষ্টি—তেতো।