'ঘুমিয়ো নাকো আর' তৃতীয় শ্রেণি বাংলা অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর / Ghumiye Noko ar clas 3 bangla
তৃতীয় শ্রেণীর
বাংলা সাহিত্য
কবিতা ঃ ঘুমিয়ো নাকো আর
কবি : বিমলচন্দ্র ঘোষ
কবি বিমলচন্দ্র ঘোষের পরিচিতি ঃ ১৯১০ সালে বিমলচন্দ্র ঘোষ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বিশিষ্ট কবি ও গীতিকার। তাঁর কবিতার বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘জীবন ও রাত্রি’, ‘সাবিত্রী’, ‘উদাত্ত ভারত”, “উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা’, ‘শোনো বন্ধু শোনো, প্রাণহীন এই শহরের ইতিকথা'র মতো বিখ্যাত গান তিনি রচনা করেছেন। ১৯৮১ সালে তিনি পরলোক গমন করেন।
★ঘুমিয়ো নাকো আর নামকরণের সার্থকতা:-
খোকন ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে। সে রূপকথার জগতে ভেসে বেড়াচ্ছে। সেখানে নানা ধরনের মানুষ আছে। নানা জায়গা। সে সব দেখছে। ঘোড়া এসে তাকে বলছে না-ঘুমিয়ে তার পিঠে চড়ে বসতে। সে তাকে নানা জায়গা দেখাবে। খোকনকে ঘোড়া ঘুমোতে বারণ করছে। তাই কবিতাটির নাম ‘ঘুমিয়ো নাকো আর 'নামকরণের সার্থক হয়েছে
সারাংশ :-খোকন ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে। নানা দেশের লোক সেখানে রয়েছে। কেউ মাটিতে হাঁটে, কেউ বা ফানুস চড়ে, কারও চোখে চশমা আঁটা। কারও মুখে দাড়ি, কেউ বা ফোকলা। স্বপ্নবুড়ি চরকা থামিয়ে সুতোর খেই হারিয়েছে। দিগন্তহীন তেপান্তরের মাঠ। জনমানবহীন বিষণ্ণ পথঘাট, নিঝুম রাতে ঝিঁঝি পোকা ডাকে, অশ্বত্থ গাছে হুতুমপেঁচা চেঁচায়। এমন সময় জানালা দিয়ে রাজপুত্রের ঘোড়া মুখ বাড়ায়। সে খোকনকে না ঘুমিয়ে তার পিঠে চড়ে বসতে বলে। পিঠে বসিয়ে সে তাকে নিয়ে সাগর পার করে, কড়ির পাহাড়, হাড়ের পাহাড় ডিঙিয়ে রুপকুমারীর রাজ্যে নিয়ে যাবে। খোকন তখনও ঘুমের দেশে।
হরেক—নানারকম।
ফোকলা—যার দাঁত নেই, দন্তহীন।
ফানুস—কাগজের তৈরি বেলুন।
চরকা—সুতো কাটার যন্ত্র।
খেই—প্রান্ত, শেষ।
কল্পলোক—কল্পনার পৃথিবী।
মগ্ন—ডুবে আছে যে, তলিয়ে গেছে এমন।
স্বপ্ন—ঘুমন্ত অবস্থায় মনের ভিতরে আসা চিন্তাদৃশ্য।
তেপান্তরের মাঠ—রূপকথায় বর্ণিত বিরাট মাঠ। বিষণ্ণ—বিষাদগ্রস্থ।
ডাগর—বড়ো বড়ো।
কড়ি—একরকম সামদ্রিক প্রাণীর দেহাবশেষ।
অচিন—অচেনা, অজানা।
হঠাৎ—সহসা।
হিরে—এক ধরনের মূল্যবান পাথর।
ঝিল্লি—ঝিঁ ঝি।
নিঝুম—নিঃশব্দ।
অশথ-শাখে—অশ্বত্থ গাছের ডালে।
লাগাম—ঘোড়াকে নিয়ন্ত্রণের জন্য মুখে বাঁধা দড়ি।।
দিগন্ত—আকাশ ও পৃথিবীর মিলনস্থল, দিকচক্রবাল।
দিগন্তহীন—বিস্তীর্ণ, বিশাল।
হাতে-কলমে অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর
১. একটি বাক্যে উত্তর দাও ঃ
১.১ কে বুকে রূপকথা জড়িয়ে ঘুমে মগ্ন?
উঃ। খোকন বুকে রূপকথা জড়িয়ে ঘুমে মগ্ন।
১.২ ‘কল্পলোক’ মানে কী?
উঃ। ‘কল্পলোক’ মানে কল্পনার পৃথিবী।
১.৩ কল্পলোকের মানুষদের বর্ণনা দাও।
উঃ। কেউ মাটিতে হাঁটে, কেউ বা চড়ে ফানুস, কেউ ফোকলা, কারও মুখে দাড়ি, আবার কারও চোখে চশমা আঁটা।
১.৪ কে চরকা কাটে?
উঃ। স্বপ্নবুড়ি চরকা কাটে।
১.৫ দিগন্তহীন মাঠটির নাম কী?
উঃ। দিগন্তহীন মাঠটির নাম তেপান্তরের মাঠ।
১.৭ নিঝুম রাতে অশথ-শাখে কে চেঁচা?
উঃ। নিঝুম রাতে অশথ-শাখে হুতুমপেঁচা চেঁচায়।
১.৮ জানলা দিয়ে কে মুখ বাড়ায়?
উঃ।রাজপুত্রের ঘোড়া জানলা দিয়ে মুখ বাড়ায়।
১.৯ তার সাজ-পোশাক কীরকম?
উঃ। তার মাথায় মুক্তা গাঁথা ঝালর আর হিরের মোড়া লাগাম।
১.১০ কে, কাকে পিঠের উপর বসিয়ে কোথায় নিয়ে যেতে চায়?
উঃ। রাজপুত্রের ঘোড়া, খোকনকে তার পিঠের উপর বসিয়ে অচিন দেশে রূপকুমারীর রাজ্যে নিয়ে যেতে চায়।
১.১১ কড়ির পাহাড়, হাড়ের পাহাড় পেরিয়ে কোন্ দেশ ?
উঃ। কড়ির পাহাড়, হাড়ের পাহাড় পেরিয়ে অচিন (অজানা) দেশ।
১.১২ সেখানে কে থাকে?
উঃ। সেখানে রূপকুমারী থাকে।
২. শব্দঝুড়ি থেকে উপযুক্ত শব্দ নিয়ে শূন্যস্থানে বসাও ঃ[হুতুম, খোকন, চশমা, ঝালর, চরকা]
২.১ কারুর চোখে——আঁটা, কারুর মুখে দাড়ি।
উঃ। চশমা।
২.২ স্বপ্নবুড়ি——থামায় হারায় সুতোর খেই।
উঃ। চরকা।
২.৩ নিঝুম রাতে——চেঁচায় হঠাৎ অশথ-শাখে।
উঃ। হুতুম।
২.৪ মুক্তা গাঁথা ——মাথায় হিরের লাগাম মোড়া।
উঃ। ঝালর।
২.৫ থমথমে রূপকথার দেশে——ঘুমে মগ্ন।
উঃ। খোকন।
৩. 'ক' স্তম্ভের সঙ্গে 'খ' স্তম্ভ মেলাও :
উত্তর:-
ক"স্তম্ভ খ"স্তম্ভ
তেপান্তর > মাঠ
কড়ি > পাহাড়
চোখ > চশমা
অশথ > শাখা
অচিন > দেশ
৪. এই কবিতায় যে সমস্ত শব্দজোড়ে ছন্দের মিল আছে তার মতো অন্তত পাঁচটি জোড়া খুঁজে লেখো। (একটি
করে দেওয়া হলো)
উঃ। মানুষ> ফানুস
মাড়ি > দাড়ি
মাঠ> ঘাট
নেই > খেই
শাখে > ডাকে
আর > পার
৫. তুমি কী রূপকথার গল্প পছন্দ তরো? যদি পছন্দ করো তবে কেন পছন্দ করো, লেখো। কোনো রূপকথা কী তুমি শুনেছ? শুনলে কার কাছ থেকে শুনেছ ?
উঃ। হ্যাঁ, আমি রূপকথার গল্প পছন্দ করি।
রূপকথার গল্পে অনেক দৈত্য দানবের কথা জানা যায়।। করতে ভালো লাগে মনে আনন্দ হয় এগুলি নতুন ধরনের গল্প তাই আমার রূপকথার গল্প খুব পছন্দ হয়। এই গল্পগুলি আমি আমার ঠাকুমার কাছ থেকে শুনতে পাই। ঠাকুমারা এই গল্পগুলি বেশ মজা করে বলেন। পরীদের কথা এই গল্পে শুনতে খুব ভালো লাগে। দৈত্যদের বড় বড় দাঁত থাকে । এরা মারামারিতে খুব দুঃখ এদের সঙ্গে কেউ পেরে ওঠে না। ঠাকুমারা মাঝে মাঝে রাজকন্যা রাজপুত্র দের কাহিনী বলেন। এগুলিও শুনতে ভালো লাগে ।
৬. তুমি কী স্বপ্ন দেখো? তোমার শেষ দেখা স্বপ্নটির কথা লেখো।
উঃ। হ্যাঁ, আমি স্বপ্ন দেখি।
আমি শেষ, স্বপ্ন দেখেছি এক রাজপুত্র- রাজকন্যাকে নিয়ে । রাজপুত্র-রাজকন্যার মধ্যে খুব ভাব। তারা একসাথে বড়ো হয়। একদিন হঠাৎ এক দুষ্টু রাক্ষস এসে রাজকন্যাকে নিয়ে গিয়ে সাত সমুদ্র, তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে এক প্রাসাদে
বন্দি করে রাখে। সেখানে রাজকন্যা মনের দুঃখে দিন কাটায় আর ভাবে রাজপুত্র কবে নিতে আসবে। এদিকে রাজপুত্রও তার পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়ে বেরিয়ে পড়ে রাজকন্যাকে খুঁজতে। অনেক খোঁজার পর সে রাজকন্যার খোঁজ পায়। খোঁজ পেয়ে রাজপুত্র খোলা তলোয়ার হাতে সেখানে যায়। সেখানে রাজপুত্রর সাথে রাক্ষসের খুব লড়াই হয়। তারপর রাজপুত্র রাক্ষসকে হারিয়ে রাজকন্যাকে নিয়ে দেশে ফিরে আসে।
৭. স্বপ্নে যদি তুমি কোনও অচিন দেশে পৌঁছে যাও তবে সেখানে কী কী তুমি দেখতে চাইবে আর কী কী দেখতে চাইবে না লেখো।
উঃ। আমি রাজপুত্র, কাজকন্যা, রাজা-রানি, রাজপ্রাসাদ, ব্যাঙ্গমা-বাঙ্গমি ও চাঁদের বুড়িকে দেখতে চাইব। আর রাক্ষস-রাক্ষসী, ডাইনি বুড়ি, হাড়ের পাহাড়, রাক্ষসপুরী এসব দেখতে চাইব না। দৈত্য দেখতে চাইবো না
৮. নীচের সূত্রগুলি কাজে লাগিয়ে শব্দ ছকটি পূরণ করো ঃ
পাশাপাশি ঃ ১. ঝিঁ ঝিঁ শব্দে কারা ডাকে?
৪. স্বপ্নবুড়ি কী চালায়?
৬. তেপান্তরের মাঠটি কেমন?
৭. হুতুম পেঁচা যখন ডাকে
তখন রাতটি কেমন?
১০. অচিন দেশে কে থাকে?
১২. রাজপুত্রের ঘোড়া কোথায় যাবে?
১৫. টাকা
১৬. সাগরপারের প্রথম পাহাড়টি কীসের?
১৭. যা গেঁথে ফেলা হয়েছে।
১৮. হিরের লাগাম মুক্তোর কী দিয়ে মোড়া?
উপর-নীচ ঃ ১. ঝিঁঝি-র ডাকে কেমন অবস্থা হয়? ২. কবিতায় কোন্ মাঠের কথা বলা হয়েছে? ৩. রূপকুমারীর রাজ্য কোন্ দেশে?
৪. কল্পলোকের কিছু মানুষের চোখে কী থাকে? ৫. অশথ-শাখে কে চেঁচায়? ৮. রাজপুত্র ‘খোকা’ হলে রাজকন্যা কী হবে?
৯. ‘স্বপ্ন’-কে বলি ‘স্বপন’, ‘মগ্ন’-কে বলি, .?
১০. খোকন বুকে কী জড়িয়ে ঘুমায়?
১১. ফোকলা দাঁতের
১৩. কড়ির —। হাড়ের
১৪. রাজপুত্রের ঘোড়ার চোখটি কেমন?
৯. খোকন রাজপুত্র হয়ে রাজকন্যা রুপকুমারীর প্রাসাদে যেতে চায়। পথে আছে তেপান্তরের মাঠ, হাড়ের পাহাড় কড়ির পাহাড়, রাক্ষস-খোক্কস, দত্যি-দানা—কত কী ? খোকন আর তার পক্ষীরাজ ঘোড়াকে নিরাপদ পথে, রূপকুমারীর
কাছে পৌঁছে দিতে পারো কী না, দেখি।
উঃ।
![]() |
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর
★ ঝিম্ ঝিম্ ঝিঁঝির ঝিঁঝির করে কে ডাকে?
উঃ। ঝিম্ ঝিম্ ঝিঁঝির ঝিঁঝির করে ঝিল্লিরা ডাকে।
★ ঘোড়া কোথা দিয়ে মুখ বাড়ায়?
উঃ। ঘোড়া জানলা দিয়ে মুখ বাড়ায়।
★ রাজপুত্রের ঘোড়াটির সাজ কেমন ছিল?
উঃ। রাজপুত্রের ঘোড়াটির মাথায় ছিল মুক্তো গাঁথা ঝালর এবং তার লাগাম ছিল হিরে দিয়ে মোড়া।
★ ঘোড়াটির চোখগুলি কেমন?
উঃ। ঘোড়াটির চোখগুলি ডাগর ডাগর।
★ রূপকুমারী কোথায় থাকে?
উঃ। রূপকুমারী অচিন দেশে থাকে।
★খোকন কী বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে?
উঃ। খোকন রূপকথা বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে।
★ স্বপ্নবুড়ি চরকা কাটা থামায় কেন?
উঃ। কারণ, সে সুতোর খেই হারিয়ে ফেলে।
★ তেপান্তরের মাঠটি, কেমন?
উঃ। তেপান্তরের মাঠটি দিগন্তহীন।
★ ঘোড়াটি কী বলছে?
উঃ। গোড়াটি খোকনকে ঘুমোতে বারণ করছে।
★ তেপান্তরের মাঠ ও সেখানকার পরিবেশের বর্ণনা দাও।
উঃ। চাঁদের আলোয় দিগন্তহীন তেপান্তরের মাঠ দেখা যাচ্ছে। সেখানকার পথঘাট বিষণ্ণ, কোনো জনমানুষ সেখানে দেখা যাচ্ছে না। চারপাশে ঝিমঝিম্ ঝিঁঝির ঝিঁঝির শব্দে ঝিল্লি ডাকছে। সেখানে নিঝুম রাতে অশ্বত্থ শাখে হঠাৎ হুতুমপেঁচা চেঁচিয়ে উঠেছে।
★ কারা আসছে যাচ্ছে?
উঃ। কল্পলোকের হরেক রকম মানুষ আসছে যাচ্ছে।
★ কল্পলোকের হরেক মানুষেরা কেমন অথবা কল্পলোকের মানুষদের বর্ণনা দাও।
উঃ। খোকনের স্বপ্নের মধ্যে কল্পলোকের হরেক মানুষরা আসছে যাচ্ছে। তারা কেউ মাটিতে হেঁটে চলে, কেউ ফানুস চড়ে। তাদের কারুর চোখে চশমা আঁটা আবার কারুর মুখে দাড়ি রয়েছে। কারুর আবার হাসলে ফোকলা দাঁতে মাড়ি বেরিয়ে পড়ে।
★ বিপরীত শব্দ : জানালা-দরজা।
শেষে—শুরুতে।
দেশে-বিদেশে।
মোড়া-খোলা।
★ এলোমেলো অক্ষরগুলি সাজিয়ে সঠিক শব্দ তৈরি করো : লোকেব্লক, বুম্বড়িপ্ন, স্তনগদিহী, যগ্গবি, রগড়া,নচিতা।
উঃ। লোকেল্পক—কল্পলোকে।
বুম্বড়িপ্ন—স্বপ্নবুড়ি।
স্তনগদিহী-দিগন্তহীন।
ষণ্ণবি-বিষণ্ণ।
রগড়া-ডাগর।
নচিঅ-অচিন।