"নইলে' চতুর্থ শ্রেণি বাংলা হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর
চতুর্থ শ্রেণি বাংলা
■ নইলে ■
●কবি-অজিত দত্ত●
কবি অজিত দত্তের পরিচিতি:-
কবি অজিত দত্তের জন্ম হয় ১৯০৭ সালে।প্রথম কাব্যগ্রন্থ সুমেরঢ়মাস'।তাঁর কবিতার ভাষা ছিল সহজ, সরল, যা শিশুদের কাছে সহজেই বোধগম্য হয় । তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল – নষ্টচাঁদ,কুসুমের মাস, পাতাল কন্যা, ছায়ার আলপনা ইত্যাদি। চতুর্দশপদী কবিতা বা সনেট রচনায় তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি সাময়িক সাহিত্যপত্র 'প্রগতি'র যুগ্মসম্পাদক ছিলেন। তিনি কখনও রূপকথার গল্পে শিশুদের উপযোগী ছড়া রচনা করেছিলেন। ১৯৭৯
সালে অজিত দত্তের মৃত্যু হয়।
নইলে কবিতার নামকরণ সার্থকতা:-
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন এবং তার পরবর্তী সময়ে কবির অভিজ্ঞতা হয় সমাজ যেভাবে আমাদের চালাচ্ছে সেভাবেই চলতে হবে; তা না পারলেই সম্মুখে বিপদের হাতছানি। এবং তার সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন তাই আমার মতে নইলে নামকরণটি যথার্থ হয়েছে বলে মনে হয়।
নইলে কবিতার বিষয়বস্তু আলোচনা:;
কবি নইলে কবিতায় সুন্দরভাবে আলোচনা করেছেন বর্তমান সমাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। তা না পারলেপিছিয়ে পড়তে হবে। ট্রামে চড়তে হলে কুস্তি জানতে হবে কেননা ঠেলে গুতিয়ে ট্রামে উঠতে হবে এবং ঝুলে থাকার অভ্যাসও আয়ত্ত করতে হবে; কারণ অত্যন্ত ভিড়ে এভাবেই যাতয়াত করতে হয়। শুধু তাই নয় দৌড়, লাফ-ঝাপ-এর অভ্যাস না থাকলে বাড়িতে বসে থাকাই ভালো, তানা হলে লড়ি চাপা দিয়ে চলে যাবে। এমনকি ভাত খেতে হলে দাঁতকে শক্ত করতে হবে যেন পাথরও চিবিয়ে খেতে পারে।
কারণ চালে পাথর ও চালের পরিমাণ সমান সমান। জীবনের অন্য প্রয়োজনীয় বস্তু হল বস্ত্র। তাতেও ব্যাঘাত। দোকানে লম্বা লাইন, মন ও পা স্থির করে দোকানের বাইরে ধৈর্য্য ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, সেখানে কাকুতি-মিনতির
কোনো স্থান নেই।
হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর
১. কৰি অজিত দত্ত কোন বিখ্যাত পত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ?
উঃ কবি অজিত দত্ত বিখ্যাত 'প্রগতি' পত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
২. তাঁর লেখা দুটি কবিতার বইয়ের নাম লেখো। উঃ তাঁর লেখা দুটি কবিতার বই হল –(১) ছায়ার 'আলপনা (২) ‘কুসুমের মাস', '
৩. নীচের এলোমেলো বর্ণগুলি সাজিয়ে শব্দ তৈরি করো :
উঃ বর্ণগুলি সাজিয়ে শব্দ তৈরি- ভ্যাবাচাকা, মজবুত, আধাআধি, দোকান।
৪.কথা বলার সময় মূল শব্দ কখনো তার চেহারা বদলে ফেলে। যেমন কবিতায় রয়েছে—
‘নইলে', 'অভোস', 'আধাআধি ইত্যাদি শব্দ। এদের পাশাপাশি শব্দগুলির প্রকৃত রূপটি লেখো। আরও কিছু শব্দ তুমি।খুঁজে নিয়ে লেখো।
উত্তর-নইলে- না হলে।
অভ্যেস – অভ্যাস।
আধাআধি – অর্ধেক অর্ধেক।
রইলে- রয়েগেল।
রত্ন—রতন।
গল্প-গপ্প।
স্টেশন - ইস্টিশন।
৫. কবিতা থেকে বিশেষণ শব্দগুলিকে খুঁজে নিয়ে বাক্যরচনা করো :
উঃ
মজবুত- পাকা ঘর খুব মজবুত হয়
সুস্থির- পাঠশালায় ছেলেরা সুস্থির হয়ে বসে থাকে না
ভ্যাবাচাকা – স্কুল যাওয়ার পথে ছেলেটির সামনে একটি বাস দাঁড়িয়ে পড়ায় ছেলেটি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল।
আধাআধি — বাবা যা কিছু নিয়ে আসে আমরা দুই ভাই আধাআধি ভাগ করে খাই।
৬. শব্দযুগলের অর্থপার্থক্য দেখাও :
চাপা-পিষ্ট হয়ে যাওয়া।
চাঁপা-ফুলবিশেষ।
পড়ে- পতিত হয়ে
পরে-পরবর্তীকালে
চড়ে-হাতের তালু দিয়ে গালে আঘাত করা।
চরে-গুপ্তদূত বিচরণকারী।
বাড়ি- গৃহ।
বারি-জল।
তাড়া- তেড়ে যাওয়া বা ধাবিত হওয়া।
তারা—গ্রহ তারা।
৭. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
৭.১. ভাত খাওয়ার প্রসঙ্গে কবি পাথর চিবানোর অভ্যেস আছে কিনা জানতে চেয়েছেন কেন ?
উঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং তার পরবর্তী সময়ে সাধারণ মানুষকে সরকার থেকে যে চাল দেওয়া হত তাতে চালের তুলনায় কাঁকর থাকত বেশি। তাই ভাত খাওয়ার সময় ভাত অপেক্ষা কাঁকর মুখে পড়ত বেশি। তাই কবি সমাজকে ব্যঙ্গ করে
পাথর চিবোনোর অভ্যাস করতে বলেছেন।
৭.২. 'অপেক্ষা', ‘তাড়াহুড়ো', 'দ্রুতগতি’ ও ‘শারীরিক দক্ষতা’– এই শব্দগুলি তোমার পঠিত কবিতাটির কোন্ কোন্ স্তবকের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কিত তা শিক্ষকের কাছ থেকে জেনে নাও।
উঃ অপেক্ষা—চতুর্থ অর্থাৎ শেষ স্তবকে অপেক্ষার কথা বলা হয়েছে। সরকারি দোকান থেকে ধুতি পেতে হলে লম্বা লাইনে ১২ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হবে।
তাড়াহুড়ো, দ্রুতগতি—শব্দ দুটি দ্বিতীয় স্তবকের সঙ্গে সম্পর্কিত। দৌড়, লাফ, ঝাঁপ, তাড়াতাড়ি করে চলতে না জানলে লরির তলায় চাপা পড়তে হবে। কেননা শহরে সবাই খুব ব্যস্ত। সময় কারোর জন্য থেমে থাকবে না।
শারীরিক দক্ষতা—প্রথম স্তবকে শারীরিক দক্ষতার কথা বলা হয়েছে। কেননা ভিড় ট্রামে চড়তে হলে কুস্তি এবং ঝুলে থাকতে জানতে হবে।
৭.৩. রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে গেলে নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করতে হবে?
উঃ রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে হলে দৌড়ানোর সঙ্গে লাফ-ঝাঁপ জানতে হবে।এমনকি উড়তেও জানতে হবে। কেননা কলকাতা শহরের রাস্তাঘাট পার হতে গেলে এই অভ্যাসগুলি নিজেকে প্রস্তুতি করতে হবে।
৭.৪. বাড়ির বাইরের পৃথিবীতে মানিয়ে চলবার জন্য তুমি নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করবে?
উঃ আমাদের বাড়ির সামনে পরিবেশ যেমন থাকবে তেমন ভাবে মানিয়ে চলতে হবে। বাড়ির সামনে সাইকেল টোটো মোটরসাইকেল যাতায়াত করে তার জন্য আমাকে খুব সাবধানে বের হতে হবে। দুদিক তাকিয়ে ফাঁকা রাস্তা হলে এগিয়ে যেতে হবে। কোথাও কোথাও মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। সামনে কোন গাড়ি এলে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে রাস্তা পার হতে হবে।।কখনোও ছুটি কখনো লাফ দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করলে হবে না ।
৭.৫. এই কবিতাটি পড়ে যে যে ছবিগুলি তোমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে সেই ছবিগুলি খাতায় এঁকে ফেলো।
উঃতোমরা নিজে করো।
প্রতিশব্দ লেখো : মজবুত, ভাত, চাল, পা
উত্তর-
মজবুত—শক্ত।
ভাত — অন্ন।
চাল – তণ্ডুল।
পা—চরণ।
৯. বর্ণবিশ্লেষণ করো :রাস্তা, কুস্তি, মজবুত, কাকুতি
রাস্তা = র + আ + স্ + ত্ + আ
মজবুত = ম+ অ + জ্ + অ + ব্ + উ + ত্ + অ
কুস্তি—ক্ + উ + স্ + ত্ + ই
কাকুতি—ক্ + আ + ক্ + উ + ত্ + ই
১০. অর্থ লেখো ঃ ১০ অর্থ লেখো : প্যাঁচ কুস্তি, প্র্যাকটিস, ভ্যাবাচাকা, সুস্থির
উত্তর-
প্যাঁচ-কৌশল।
কুস্তি — মল্লযুদ্ধ।
প্র্যাকটিস – অনুশীলন।
ভ্যাবাচাকা — হতবুদ্ধি।
সুস্থির-স্থির।।
১১. বিপরীতার্থক শব্দ লেখো :কিছু, সুস্থির, আভ্যোস, আধাআধি, মজবুত।
উত্তর-
কিছু -অনেক।
সুস্থির অস্থির।
অভ্যেস - অনভ্যেস।
আধাআধি - পুরোপুরি।
মজবুত-পলকা।
১২. 'চাল' ও 'বেশ' শব্দদুটিকে আলাদা আলাদা অর্থে ব্যবহার করে বাক্যরচনা করো :
উঃ চাল (চালচলন)- অহংকারী লোকের চাল চলন আলাদা হয়
চাল (দান দেওয়া) - মার্বেল খেলায় মাটিতে মার্বেল দিয়ে চাল দেওয়া হয়।
বেশ (সাবাশ) - তপন মেলায় রাত্রে বেশ ভালো গান করল
বেশ (ডালো)- একা একা বেশ থাকা যায় ।
১৩. কবিতায় তুমি কয়টি প্রশ্নবোধক বাক্য খুঁজে পেলে লেখো।
উঃ ক) দাঁড়াতে পারো তো বারো ঘণ্টা ?
খ) ঝুলে কি থাকতে পারো সুস্থির ?
গ)দাঁত আছে মজবুত সব বেশ?
ঘ) লাগিয়ে বাপিয়ে আর তো উড়ে?
ঙ) প্র্যাকটিস করেছ কি দৌড়?
চ) পাথর চিবিয়ে আছে অভ্যেস?
ঘ) প্যাঁচ কিছু জানা আছে কুস্তির।
১৪. শূন্যস্থান পূরণ করো :
১৪.১. যেখানে কুস্তিগিরেরা অভ্যাস/শরীরচর্চা করেন, সেই জায়গাটিকে বলা হয় ........।
উত্তর- যেখানে কুস্তিগিরেরা অভ্যাস/শরীরচর্চা করেন, সেই জায়গাটিকে বলা হয় মল্লভূমি।
১৪.২. বাংলার একজন বিখ্যাত কুস্তিগির হলেন ....... ।
উত্তর-. বাংলার একজন বিখ্যাত কুস্তিগির হলেন গোবর গুহ ।
১৪.৩. ট্রাম ছাড়া একটি পরিবেশ-বান্ধব যান হল ......।
উত্তর-ট্রাম ছাড়া একটি পরিবেশ-বান্ধব যান হল ট্রেন।
১৪.৪. 'প্র্যাকটিস' শব্দের অর্থ হল .......।
উপর- প্র্যাকটিস' শব্দের অর্থ হল অনুশীলন।
১৪.৫. মন বলতে বোঝানো হয়ে থাকে .....কে।
উত্তর- মন বলতে বোঝানো হয়ে থাকে হৃদয় কে।
১৫. বাক্য সম্পূর্ণ করো :
১৫.১.ট্রামে চড়তে অসুবিধা হবে, যদি .......।
উত্তর- ট্রামে চড়তে অসুবিধা হবে, যদি কুস্তি না জানো।
১৫.২. বাড়ি থেকে বেরোনোই মুশকিল, যদি .........।
উত্তর- বাড়ি থেকে বেরোনোই মুশকিল, যদি সাহসী না হও/দৌড়তে না জানো।
১৫.৩. ভাত খাওয়া দুষ্কর হবে, যদি .......
উত্তর-ভাত খাওয়া দুষ্কর হবে, যদি দাঁত মজবুত না হয়।
১৫.৪. দোকানে গিয়ে দাঁড়িয়েই থাকতে হবে, যদি .....।
উত্তর-দোকানে গিয়ে দাঁড়িয়েই থাকতে হবে, যদি কাকুতিও কর।
১৫.৫. সকলের সঙ্গে মানিয়ে চলা যাবে না, যদি ......।
উত্তর- সকলের সঙ্গে মানিয়ে চলা যাবে না, যদি এই সব অভ্যাস আয়ত্ত না করি।
হাতে কলমে বাইরে অতিরিক্ত প্রশ্ন উত্তর
অক্ষর সাজিয়ে শব্দ গঠন করো :
বুমতজ, ভ্যেঅস, থপার, কুকাতি।,রকুস্তি, স্থিরসু, লেইন, চ্যাভ্যাবাকা, টিপ্প্যাসক, পিঝায়ে, তেরিল, ওড়িবা,
উত্তর বুমতজ > মজবুত,
ভ্যেঅস > অভ্যেস
থপার> পাথর
কুকাতি> কাকুতি।
:রকুস্তি >কুস্তির,
স্থিরসু >সুস্থির
লেইন >©নইলে,
চ্যাভ্যাবাকা >ভ্যাবাচ্যাকা
টিপ্প্যাসক > প্র্যাকটিস
পিঝায়ে >ঝাঁপিয়ে
তেরিল, >লরিতে
ওড়িবা > বাড়িও,
★ এসব সরকারি দোকানগুলিকে কী দোকান বলা হত ?
উত্তরঃ এসব সরকারি দোকানগুলিকে কন্ট্রোলের দোকান বলা হত।
★ কলকাতায় প্রথন কৰে ট্রান চলে?
উত্তর ঃ ১৮৭৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় প্রথম ট্রাম চলে।
★ কবিতায় কোন সময়ের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর : কবিতায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং তার পরবর্তী সময়ের কথা বলা হয়েছে।
★ ধুতির জন্য দোকানে লাইন দিতে হত কেন ?
উত্তর : সরকারি দোকানে নির্দিষ্ট মূল্য শাড়ি ধুতি নেওয়ার জন্য লাইন দিতে হত। এসব দোকানে ক্রেতাদের খুব ভিড় হত।