বাঘা যতীন পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় চতুর্থ শ্রেণি বাংলা অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর / Baghajatiin class 4 bangla question answer
চতুর্থ শ্রেণি বাংলা
◆বাঘাযতীন ◆
পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়
লেখক পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় পরিচিতি;-
১৯৩৬ সালে পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন। পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় পন্ডিচেরীর অরবিন্দ আশ্রম থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেন। তিনি দীর্ঘকাল সমাজ ও ইতিহাসের গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন বাঘাযতীনের কন্যার পুত্র ।তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য দুটি বই হলো- আলোর চকোর সমসাময়িকের চোখে শ্রীঅরবিন্দ।
বাঘাযতীন গল্পের নামকরণ সার্থকতা :-
জ্যোতি ছিল খুব দস্যি ও সাহসী ছেলে। বিপদকে তুচ্ছ করতে শিখিয়েছিল তার মা। রাতেরবেলা জ্যোতি মায়ের কোলে
শুয়ে রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণের গল্প, রাজা মহারাজাদের গল্প শুনতো। ইংরেজদের গল্প শুনে যতীনের খুব রাগ হত। জ্যোতি খুব ভালো ঘোড়া সওয়ার করতে পারতো। গ্রামের পাঠ শেষ করে জ্যোতি ভরতি হলেন কৃষ্ণনগরের অ্যাংলো ভার্নাকুলার হাইস্কুলে। পড়াশুনায় জ্যোতি ছিল একদম সাফ। মিথ্যা কথা সে কখনো বলতে শেখেনি। কৃষ্ণনগর স্কুলে পড়াকালীন একদিন সে বেরিয়েছিল কাগজ পেনসিল কিনতে। সেখানে এক শিশুকে সে পাগলা ঘোড়ার হাত থেকে রক্ষা করেছিল। কারোর বাহবা সে কুড়ায়নি। জ্যোতির মামার বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়। সেইসময় জ্যোতির মামারা বাড়িতেই থাকেন। জ্যোতিও পূজার ছুটিতে বাড়োনামার সঙ্গে গ্রামের মামার বাড়িতে চলে এলো। সেখানে পূজোর চারদিনই নানারকম অনুষ্ঠান হত মনোরঞ্জনের জন্য।
জ্যোতি একটু আধটু তাতে অংশগ্রহণ করত। গ্রামের সকল লোকজন পুজোর চারদিন জ্যোতির মামারবাড়িতেই খাওয়া দাওয়া করত। ভদ্রলোকেরা খেত সাদা ভাত আর একটু নীচুস্তরের লোকের জন্য থাকতো ঘরের তৈরি লাল চালের ভাত। তারপর ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে জ্যোতি ও তার ছোটোমামার ব্যবস্থায় জাতি-বর্ণ ভুলে গ্রামের সবাই একসঙ্গে, যেমন— হিন্দু, মুসলামান, বামুন, চাঁড়াল সবাই খেলেন মহাতৃপ্তিতে মায়ের প্রসাদ।
বাঘাযতীন গল্পের বিষয়বস্তু আলোচনা:-
জ্যোতির মা জ্যোতিকে আঁচলের খুটে বেঁধে গঙ্গার জোয়ারের জালে ছুঁড়ে কোলে দিতেন। আপ্রাণ লড়তে লড়তে যখন অবসন্ন তখন তার মা তাকে তুলে নিয়ে যেতেন। এভাবেই সে বেশ সাহসী হয়ে ওঠে। জ্যোতি একজন দস্যি ও সাহসী ছেলে। জ্যোতির মা-ই তাকে এত সাহসী করে তুলেছে। রাতেরবেলায় দিদি বিনোদবালার সঙ্গে মায়ের কাছে শুয়ে শান্ত জ্যোতি রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণের গল্প, রাজরাজাদের গল্প শুনতো। ইংরেজরা খুব অত্যাচার করত শুনে রাগে আর দুঃখে জ্যোতির মন ভরে উঠত। সে বলত বাড়ো হয়ে সবার দুঃখ ঘোচাবে। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে সে যায় মামার সঙ্গে কুস্তির আখড়ায় গাড়িয়া গ্রাম থেকে যাদুমাল ওস্তাদ এসে তালিম দেয়। জ্যোতি তার ন-মামা অনাথের কসরতের সঙ্গী ছিল। ঘোড়ায় চড়া, শিকার, দৌড়ঝাপ ছিল তার মামার দখলে। জ্যোতি ঘোড়ায় চড়তে খুব ভালোবাসত। তাই দেখে তার মামা তাকে একটা টাট্টু ঘোড়া কিনে দিলেন। বড়ো মামার সঙ্গে একদিন এলেন ফেরাজ খাঁ। চাটুজ্যে বাড়ির পাহারাদার হয়ে লাঠি, ছোরা, বন্দুক, তলোয়ার চালাতে অতি দক্ষ সে। গ্রামের পড়া শেষ হতেই বড়োমামা তাকে ভরতি করলেন কৃয়নগরের অ্যাংলো ভার্নাকুলার হাইস্কুলে। পড়াশুনা, বুদ্ধিতে সে ছিল ভীষণ ভালো। একবার বন্ধুরা মিলে ইস্কুলের গাছ থেকে কাঁঠাল পেড়ে খেয়েছিল। হেডমাস্টারমশাইয়ের
কাছে নালিশ গেলে জ্যোতি সে কথা অকপটে স্বীকার করে নেয়। তাতে হেডমাস্টারমশাই খুশি হলেন। জ্যোতি কুজনগর স্কুলে পড়াশুনা চলাকালীন একদিন গেল কাগজ-পেনসিল কিনতে। হঠাৎ তার কানে এলো একটা হৈ-হয়া। সে তাড়াতাড়ি রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখে একটা পাগলা ঘোড়া ছুটে আসছে। আর রাস্তার মাঝখানে একটা শিশু দাঁড়িয়ে কাঁদছে। সে দৌড়ে রাস্তায় নেমে ঘোড়াটার কেশর ধরে ঘোড়াটাকে আটকালো । এমনকি ঘোড়ার পিঠের ওপর উঠে বমলা। ঘোড়ার আসল সহিস এলো এবং জ্যোতির কাছ থেকে ঘোড়াটাকে নিয়ে গেলো। স্থানীয় উকিল বারাণসী রায়ের
আস্তাবল থেকে ঘোড়াটা পালিয়ে এসেছিল। প্রতি বছর দুর্গাপুজোয় জ্যোতি মামার বাড়ি আসে। কারণ জ্যোতির মামার বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়। দুর্গাপুজোর চারদিন জ্যোতির মামার বাড়িতে নানারকম জলসা হয়। তার সঙ্গে হয় খাওয়া দাওয়া। প্রচুর লোক প্রসাদ গ্রহণ করে। জ্যোতি
ফুটবল খেলাতে, অভিনয় করতে, নানারকম খেলা দেখাতে পারতো। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে জ্যোতি ও তার ছোটো মামার ব্যবস্থায় জাতি-বর্ণ ভুলে গ্রামের সবাই বসলেন একসঙ্গে মায়ের প্রসাদ খেতে।√
হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর
১. পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় কার ?
উঃ পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বাঘাযতীনের দৌহিত্র।
২. তাঁর লেখা একটি বইয়ের নাম লেখো।
উঃ তাঁর লেখা একটি বই হল 'সমসাময়িকের চোখে শ্রীঅরবিন্দ। '
৩. শিলাইদা শব্দটি এসেছে 'শিলাইদহ' থেকে।
অর্থাৎ ‘দহ’ পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে ‘দা’। নীচের নামগুলি পরিবর্তিত হয়ে কী হবে লেখো :
উঃ :-
শিয়ালদহ—শিয়ালদা।
বেলদহ – বেলদা।
খড়দহ—খড়দা।
এরকম কয়েকটি শব্দ তুমি জানো লেখো।
মালদহ-মালদা
ভালদহ— ভালদা।
মগদহ — মগদা।
৪. জ্যোতিকে মা যে যে গল্প শোনান-
উঃ ২.১. মহাভারত,, ২.২. রামায়ণ ২.৩. পুরাণের গল্প, ২.৪. প্রতাপাদিত্যের কাহিনি।
৫. নীচের দুটি স্তম্ভের শব্দগুলিকে বিপরীত শব্দ অনুযায়ী মেলাও :-
উত্তর:-
ক "স্তম্ভ' ক "স্তম্ভ'
শেষ > শুরু
দিবস > রাত্রি
অপেক্ষা > অনপেক্ষা
জোয়ার > ভাটা
শান্ত > অশান্ত
পরাধীনতা
দুঃখ > সুখ
স্বাধীনতা > পরাধীনতা
৬. জ্যোতি যে যে চরিত্রে অভিনয় করতে ভালোবাসে সেগুলির নাম লেখো।
উঃ জ্যোতি যে চরিত্রে অভিনয় করতে ভালোবাসে সেগুলির নাম হল ভক্ত হনুমান, লক্ষ্মণ, রাজা হরিশচন্দ্র, বীর প্রতাপাদিত্য।
৭. গল্পটি পড়ে জ্যোতির যে কাজগুলিকে দুঃসাহসিক বলে মনে হয়েছে সেগুলি বর্ণনা করো।
উঃ -জ্যোতির যে কাজগুলিকে দুঃসাহসিক বলে মনে হয়েছে সেগুলি হলো-
১. এক শিশুকে রাস্তার মাঝখানে পাগলা ঘোড়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছিল।
২. জ্যোতি হেডমাস্টারমশাই-এর কাছে সত্যকথা বলতে ভয় পায়নি।
৩. জ্যোতি নারকেল বুকে নিয়ে মাটিতে উপুড় শুয়ে মাটি আকড়ে এক সাহসিকতার খেলা দেখিয়েছিল।
৪. জ্যোতি সাহসিকতার সঙ্গে স্কুলের বাগান থেকে কাঁঠাল চুরি করে বন্ধুদের ভোজ বসিয়েছিল।
৮. স্কুলের বাগানে বড়ো কাঁঠাল পেকেছে। এখানে 'পাকা” ক্রিয়াপদটি যে-অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে সেই অর্থ ছাড়া তোমরা আর কী কী অর্থে ব্যবহার করতে পারো লেখো।
উঃ যেমন—১) পাকা বাড়ি মজবুত হয় ।।
২) ছেলেটি এই এঁচড়ে পেকে গেছে ।
৩) মেয়েটির বিয়ের পাকা কথা হয়ে গেল।
৪) ঝড়ে অনেক পাকা আম পড়েছে
৫) সবসময় পাকা কাজ করতে হয়।
৬) এবার কালবৈশাখী এসে পাকা ধানে মই দিয়ে গেল।
(৭) ছেলেটির খুব পাকা পাকা কথা।
৮) বয়স হলে চুল দাড়ি পেকে যায়
৯. কর্তা, কর্ম, ক্রিয়াগুলিকে তাদের ঘরে বসাও ঃ
৯.১. একটি টাট্টু ঘোড়া কিনে দিলেন মামা।
উঃ এখানে কর্তা মামা। কর্ম—টাট্টু ঘোড়া। ক্রিয়া—কিনে দিলেন।
৯.২. যাদুমাল ওস্তাদ কুস্তি শেখায়।
উঃ এখানে কর্তা—যাদুমাল ওস্তাদ। কর্ম—কুস্তি। ক্রিয়া—শেখায়।
৯.৩. মা সাঁতার শেখাতেন। উঃ এখানে কর্তা—মা। কর্ম—সাঁতার। ক্রিয়া–শেখাতেন।
৯.৪. জ্যোতি বাউল গান শোনে।
উঃ এখানে কর্তা–জ্যোতি। কর্ম—বাউল গান। ক্রিয়া শোনে।
১০. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও :
১০.১. জ্যোতির মায়ের নাম কী?
উঃ জ্যোতির মায়ের নাম শরৎশশী।
১০.২. মা জ্যোতিকে কোন্ নদীতে স্নান করাতে নিয়ে যেতেন?
উঃ মা জ্যোতিকে গড়ুই নদীতে স্নান করতে নিয়ে যেতেন।
১০.৩. রবি ঠাকুরের ভাইপো কে?
উঃ রবি ঠাকুরের ভাইপো সুরেন ।
১০.৪. জ্যোতির ন-মামার নাম কী?
উঃ জ্যোতির ন-মামার নাম অনাথ।
১০.৫. ফেরাজ খাঁ-এর বাড়ি কোথায় ছিল?
উঃ উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে ফেরাজ-এর বাড়ি ছিল।
১০.৬. জ্যোতির বড়োমামার পেশা কী ছিল ?
উঃ জ্যোতির বড়োমামার পেশা ছিল ওকালতি করা।
১০.৭. জ্যোতি কোন্ স্কুলে ভরতি হয়েছিল?
উঃ জ্যোতি কৃষ্ণনগরের অ্যাংলো ভার্নাকুলার হাইস্কুলে ভরতি হয়েছিল।
১০.৮. ১৮৯৩ সালে জ্যোতির বয়স ছিল ১৪ । কত সালে জ্যোতির ৭ বছর বয়স ছিল ?
উঃ ১৮৮৬ সালে জ্যোতির বয়স ছিল ৭ বছর।
১১. নীচের শব্দগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
১১.১. জ্যোতি কীভাবে সাঁতার শিখেছিল ?
উঃ জ্যোতির মা জ্যোতিকে নিয়ে গড়ই নদীতে স্নান করতে যেতেন। কী বর্ষা, কী শীত। শাড়ির একমুড়ো জ্যোতির কোমড়ে বেঁধে অন্য মুড়োটা বজ্রমুষ্টিতে ধরে তিনি একমাত্র ছেলেকে তিনি ছুঁড়ে ফেলে দিতেন জোয়ারের জলে। ঢেউ-এর সঙ্গে আপ্রাণ লড়তে লড়তে জ্যোতি সাঁতার শেখে।
১১.২. কৃয়নগর স্কুলে জ্যোতির কাঁঠাল পাড়ার কাহিনিটি বর্ননা করো।
স্কুলের গাছে বড়ো কাঁঠাল পেকেছে। গন্ধে সবার মন মেতে উঠেছে। যথেষ্ট ইচ্ছে থাকলেও কারো সাহস হচ্ছে না যে কেউ কাঁঠালটি পেড়ে আনবে। জ্যোতি একটা মতলব বের করল। স্কুল ছুটির শেষে সবাইকে বাড়ি যেতে মানা করল। স্কুল
ছুটির শেষে বন্ধুদের কয়েকজনকে নিয়ে সে কাঁঠালটা পাড়ল। তারপর মহানন্দে সহপাঠীদের সঙ্গে ভোজ বসিয়েছিল জ্যোতি।
১১.৩. কৃষ্মনগরে জ্যোতি কীভাবে একটি শিশুকে লেখো।
উঃ জ্যোতি একদিন কৃতনগরের বাজারে নাদিয়া পুঁজি বাচিয়েছিল সেই কাহিনিটি কোণা পেনসিল কিনতে। এমন সময় তার কানে এলো এক হই-হলার আওয়াজ। সে দেখল পথচারীরা সবাই ছুটে পালাচ্ছে। একটা পাগলা ঘোড়া বেরিয়েছে
রাস্তায়। সে আরও দেখল যে, রাস্তার মাঝখানে একটি শিশু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে আর এই পথেই পাগলা ঘোড়া তীব্রগতিতে ছুটে আসছে।
জ্যোতি কোনো দিগ্বদিক চিন্তা না করেই শিশুটিকে বাঁচাতে উদ্যত হল। ঠিক সেই মুহূর্তে ঘোড়াটা শিশুটির সামনে চলে এসেছে। জ্যোতি তিরবেগে ঝাঁপিয়ে পড়ে চেপে ধরল ঘোড়ার কেশর। আচমকা বাধা পেয়ে শিষ-পা হয়ে মোড়াটা জ্যোতিকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করল কয়েকটা ঝটকা দিয়ে। জ্যোতি ততক্ষণে উঠে বসে শান্ত ভঙ্গিতে ঘোড়ার পিঠে গলায় পাবনাতে ছোটো ছোটো চাপড় মেরে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। ঘোড়া শান্ত হয়ে গেল। শিশুটিও বাঁচতে পারল।
১১.৪ জ্যোতির জীবনে তাঁর মা ও দিদির ভূমিকার কথা লেখো।
উঃ জ্যোতির মা ছিলেন শরৎশশী। তিনি যেমন সাহসী ছিলেন তেমনি তার ছেলেকে সাহসী ও বিপদকে তুচ্ছ করতে শিখিয়েছিলেন। তা না হলে ওই একরত্তি ছেলেকে কেউ গঙ্গার জোয়ারের জলে ছুঁড়ে ফেলে দিতে সাহস পেত না। তাঁর মা-ও ছিলেন সুপটু সাঁতারু। জ্যোতির দিদির নাম ছিল বিনোদবালা। সেও ছিল শান্ত, ধীর, স্থীর। রাতেরবেলায় মায়ের কোলে শুয়ে জ্যোতি, দিদি
বিনোদবালার সঙ্গে মায়ের কাছে নানান গল্প শুনতো। ভাইকে যে বড়োই ভালোবাসত সে।
১১.৫. পাঠ্যাংশে জ্যোতির জীবনে তাঁর মামাদের প্রভাব কেমন ছিল ?
উঃ জ্যোতি খুব দস্যি ছেলে হলেও সে মামার বাড়িতেই মানুষ। মামারা জ্যোতিকে খুব ভালোবাসত। জ্যোতি সব কিছুতেই ছিল পারদর্শি। মামারা যেমন ছিলেন উচ্চশিক্ষিত, ভালো বনেদি পরিবার, শিকার করা, অভিনয়, নাটক-থিয়েটার করা, গরিব-দুঃখীদের দেখা সবকিছুতেই তাঁরা ছিলেন সিদ্ধহস্ত। জ্যোতিও হয়েছিল মামাদের মতো। মামারাও জ্যোতির সবকিছুতেই প্রেরণা যুগিয়েছিল। পড়াশুনাতেও জ্যোতি ছিল তুখর। মানুষের দুঃখে দুঃখ পেত সে, জাতপাত বিচার করতো না, মানুষের বিপদে এগিয়ে যেত। মামাদের সবরকম প্রভাব তার ওপর পড়েছিল বলেই সে আমাদের কাছে একজন স্মরণীয় ব্যক্তি।
১১.৬. জ্যোতির মামাবাড়ির সঙ্গে রবিঠাকুরের সম্পর্ক কী ছিল?
উঃ জ্যোতির মামার বাড়ি হল রবিঠাকুরের বন্ধুর বাড়ি। ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে করার চাটুজ্যে বাড়ির তিন-চার পুরুষের সম্পর্ক। বড়োমানা বসন্তকুমারের মক্কেল ও বন্ধু ছিলেন রবিঠাকুর।
১১.৭ ফেরাজের কাছে জ্যোতি খবর পেল,– কে এই ফেরাজ? তাঁর কাছ থেকে জ্যোতি কী খবর পেল?
উঃ সেরাজ গী চাটুজ্যে-বাড়ির পাহারাদার। তাঁর বাড়ি উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে (বর্তমান আফগানিস্তানে)। লাঠি, ছোরা, তরোয়াল, বন্দুক চালাতে অতি দক্ষ সে।
১১.৮, পাঠাংশ থেকে খুঁজে নিয়ে জ্যোতির শিশুসুলভ/কিশোরসুলভ চাপল্যের উদাহরণ দাও।
উঃ কিশোর জ্যোতি মায়ের কোলে শুয়ে গল্প শুনতো। অল্প বয়সে জ্যোতি মায়ের সঙ্গে গঙ্গায় সাঁতার শিখল। সে সে গল্প শুনতো আর বলত বড়ো হয়ে সে সবার দুঃখ ঘুচিয়ে দেবে। একবার সে স্কুলের বাগান থেকে পাকা কাঁঠাল পেড়ে এনে বন্ধুদের
নিয়ে ভোজ বসিয়েছিল। এমনকি পাগলা ঘোড়ার হাত থেকে রাস্তায় থাকা এক শিশুকে বাঁচিয়েছিল সে।
১১.৯. "কিছুই হয়নি এমনভাবে জ্যোতি চলে গেল তার নিজের পথে – কোন্ ঘটনার পর জ্যোতি এমনভাবে চলে গিয়েছিল?
উঃ একটা পাগলা ঘোড়ার হাত থেকে যখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা শিশুটিকে বাঁচালো তখন সকল পথচারীরা ধন্য ধন্য করে উঠল। এমনকি ঘোড়াটাকেও শান্ত করে দিয়েছিল। পথচারীরা তো অবাক। সেই সময় কিছুই হয়নি এমনভাবে জ্যোতি চলে গেল তার নিজের পথে।
১১.১০. জাতপাতের ক্ষুদ্র সংকীর্ণতা ছোটোবয়েসেই কীভাবে জ্যোতি অতিক্রম করতে পেরেছিল?
উঃ জ্যোতির মামার বাড়িতে দুর্গাপুজোর সময় চারদিন তার মামার বাড়িতে নিত্য প্রায় ৪০০ কেজি চালের ভাত রান্না করা হত। বহুলোকের সমাগম হত। তারা মায়ের প্রসাদ খেতো। কিন্তু ভদ্রলোকেদের জন্য রান্না হত সাদা ভাত আর সকলের জন্য ঘরের লাল চালের ভাত পরিবেশিত হত। জ্যোতি দেখল যে, একজন কিন্তু কিন্তু করে একটু ভাত চেখে দেখতে চাইল। তাতে জ্যোতি খুব দুঃখ ও মায়া হল। ছোটোমামার সাঙ্গে দিয়ে সে বসন্তকুমারকে ধরল। পরদিন থেকেই সবার জন্য এলো সাদা ভাত। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে জ্যোতি ও তার ছোটোমামার ব্যবস্থায় জাতি-বর্ণ তুলে আমের সবাই বসলেন
১১.১১ পাঠ্যাংশে জ্যোতির নানা ধরনের কাজের যে পরিচয় ছড়িয়ে রয়েছে, তা নিয়ে তুমি নিজের ভাষায় একটি অনুচ্ছেদ রচনা করো।
টা জ্যোতি ছোটোবেলা থেকেই আপ্রাণ লড়াই করে নদীবক্ষে সাঁতার শেখে। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে জ্যোতি যায় তার মামার সঙ্গে কুত্তির আখড়ায়। তা ছাড়া সে মামাদের সঙ্গে সঙ্গে থেকে ঘোড়ায় চড়া, শিকার করা, দৌড়-বংপ সবকিছুই শেখে। সে ঘোড়ায় সওয়ার করতে খুব ভালোবাসে। যখন-তখন ঘোড়া নিয়ে বেড়িয়ে যেত। লাগাম ছাড়াই কাদামাঠ পার হয়ে সে সাতারার সূর্গে স্বপ্নে বিভোর হয়ে যায়। গ্রামের পড়া শেষ করে সে যখন কয়নগরের অ্যাংলো ভার্নাকুলার হাই স্কুলে ভরতি হল তখন ঘটল এক ঘটনা। সে ওই স্কুলের কাঁঠাল গাছ থেকে কাঁঠাল পেড়ে বন্ধুদের সঙ্গে খেল। আর একদিন সে আগাজ-পেনসিল কিনতে বেরিয়েছে সেই সময় তার কানে এলো এক দারুণ হই-হল্লা। তাকিয়ে দেখে পথচারী সবাই ছুটে পালাচ্ছে। একটা পাগলা ঘোড়া বেরিয়েছে রাস্তায়। মাঝপথে দাঁড়িয়ে কাঁদছে একটি শিশু। জ্যোতি মনস্থির করে ফেলল। একলাফে রাস্তায় নেমে ঘোড়াটির কেশর চেপে ধরল। আচমকা বাধা পেয়ে শিষ-পা হয়ে ঘোড়াটা জ্যোতিকে ফেলে দিতে গেল। জ্যোতি ততক্ষণে ঘোড়ার পিঠে উঠে বসেছে। ঘোড়াটাকে বশ করে সহিসের হাতে তুলে দিল। সবাই ধন্য ধন্য করল তাকে। জ্যোতি ফুটবল খেলত। অভিনয় করত। মামাবাড়িতে দুর্গাপুজোয় সকলের জন্য সানাভাতের আয়োজন করান মামাকে দিয়ে। নবমীর দিন নানারকম বল পরীক্ষার খেলা হয়। এটাও একটা আনন্দ। জ্যোতিও একটা নারকেল বুকে নিয়ে উপুড় হয়ে মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকে, আট-দশটা সাজোয়ান প্রজা মিলেও তার কাছ থেকে এটা কেড়ে নিতে পারে না। এ ছাড়াও জাত-পাত ভুলে গ্রামের হিন্দু-মুসলমান, বামুন, চাড়াল সবাইকে এক পত্তি-ভোজনে বসিয়ে মায়ের প্রসাদ খাওয়ালো। মহাতৃপ্তিতে তারা তা খেলেন।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর
★ জ্যোতি ততক্ষণে উঠে বসেছে—(হাতির/ঘোড়ার/বাঘের) পিঠে।
উত্তর : ঘোড়ার।
(৯) (স্থানীয় উকিল/ডাক্তার/কবিরাজ)—বারাণসী রায়ের আস্তাবল থেকে ঘোড়াটা পালিয়ে এসেছে।
উত্তর : উকিল।
★ সারা দেশে সেদিন ছড়িয়ে পড়ল—(কৃষ্ণনগরের/কলকাতার/নদিয়ার-এই কাহিনি
উত্তর : কৃষ্ণনগরের।
★ রবি ঠাকুর প্রেরণা পেয়েছিলেন তাঁর (বলাই ‘ঘর ও বাহির/কাবুলিওয়ালা গল্পের)।
উত্তর : কাবুলিওয়ালা।
★ উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে- (জ্যোতির/ফেরাজের/যাদুমালের বাড়ি)।
উত্তর : ফেরাজের।
★ ওখানেই--(বড়োমামা/ন-মামা) ওকালতি করেন তখন।
উত্তর : বড়োমামা।
★ ইস্কুলের বাগানে বড়ো (কাঠাল /আম/জাম) পেকেছে।
উত্তর : কাঠাল।
★ পরদিন (রবি ঠাকুরের/হেডমাস্টারের) কাছে নালিশ গেল।
উত্তর : হেডমাস্টারের।
★ (১৮৯৩/১৮৯৪/১৮৯৫) — সালে ঘটল একটা ঘটনা ।
উত্তর : ১৮৯৩ সালে।
★ (নবমীর/দশমীর/অষ্টমীর)—দিনে প্রজারা নানারকম বল-পরীক্ষা খেলা দিয়ে সবাইকে আনন্দ দেয়।
উত্তর ঃ নবমীর।
■ সত্য-মিথ্যা নির্ণয় করো :
★ আফ্রিদি ফেরাজকে দেখেই রবি ঠাকুর প্রেরণা পেয়েছিলেন তাঁর ‘ঘর ও বাহির' গল্পের।
উত্তর : মিথ্যা।
★ ইস্কুলের বাগানে বড়ো কাঁঠাল পেকেছে।
উত্তর : সত্য।
★ হেডমাস্টার মশাই এর কাছে জ্যোতি স্বীকার করেনি, যে সে কাঁঠাল পেড়েছে।
উত্তর : মিথ্যা
★ জ্যোতি সাঁতার শেখে তাঁর মায়ের কাছ থেকে।
উত্তর : সত্য।
★ গট্টিয়া গ্রাম থেকে ফেরাজ খাঁ এসে তালিম দেয়।
উত্তর : মিথ্যা।
★ জ্যোতি প্রায়ই তার মামার সাদা ঘোড়া সুন্দরীর পিঠে সওয়ার হয়ে উধাও হয়ে যেত।
উত্তর : সত্য।
★ একদিন এক জেলে প্রজা একটু সাদা ভাত চেখে দেখতে চাইল।
উত্তর : সত্য।
এক কথায় উত্তর দাও :
★ জ্যোতির দিদির নাম কী ?
উত্তর : জ্যোতির দিদির নাম বিনোদবালা
★ কাদের গল্প শুনে জ্যোতির মনে ভক্তি হয় ?
উত্তর : চৈতন্য, নানক, কবীরদের গল্প শুনে জ্যোতির মনে ভক্তি হয়।
★ গট্টিয়া গ্রাম থেকে কে আসবে?
উত্তর : গট্টিয়া গ্রাম থেকে যাদুমাল ওস্তাদ আসবেন।
★ ন-মামার কী অভ্যাস ছিল ?
উত্তর : ন-মামা অনাথের অভ্যাস ছিল নানারকম কসরত করা।
★ সবার কানে কানে এই কথা সে রটিয়ে দিল।'—সে কে? কী কথা রটিয়ে দিল ?
উত্তর : সে হলো জ্যোতি।
সে রটিয়ে দিল 'অ্যাই, আজ ইস্কুল ভাঙলেই চলে যাস না, মজা করা যাবে সবাই মিলে।'
★ জ্যোতি কী মানতে পারে না? সে কী বলার সাহস রাখে?
উত্তর : যেহেতু ফলগুলো ওদের ইস্কুলের গাছের, তাই ওগুলো পেড়ে খাওয়াকে চুরি করা বলে মানতে পারে না জ্যোতি। সে সত্যকথা বলার সাহস রাখে।
★ জ্যোতি কোথায় যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে ?
উত্তর : জ্যোতি গড়ুই নদীতে স্নান করতে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে।
★ মায়ের কীসে ভ্রুক্ষেপ নেই ?
উত্তর : মায়ের শীত কী, বর্ষা কী কোনো কিছুতেই ভ্রুক্ষেপ নেই।
★★মা জ্যোতিকে কোথায় ছুঁড়ে ফেলতেন?
উত্তর : মা জ্যোতিকে গড়ুই নদীতে ছুঁড়ে ফেলতেন।
★★জ্যোতি কাকে তুচ্ছ করতে শেখে?
উত্তর : জ্যোতি বিপদকে তুচ্ছ করতে শেখে।
★ জ্যোতি কী কী করতে ভালোবাসত?
উত্তর ঃ জ্যোতি ঘোড়ায় চড়া, শিকার করা, দৌড়-ঝাঁপ, অভিনয়, সত্য কথা বলতে ভালোবাসত।
★★ফেরাজ খাঁ-কে?
উত্তর ঃ ফেরাজ খাঁ চাটুজ্যে-বাড়ির পাহারাদার ছিলেন।
★ তিনি কোথায় থাকতে পেলেন?
উত্তর ঃ তিনি চন্ডীমণ্ডপের ওধারে একটা ঘরে থাকতে পেলেন।
★ ইস্কুলের বাগানে কী ফল পেকেছিল।
উত্তর : ইস্কুলের বাগানে কাঁঠাল পেকেছিল।
★ ১৯৯৩ সালে জ্যোতির বয়স কত ছিল?
উত্তর : ১৮৯৩ সালে জ্যোতির বয়স ছিল চোদ্দো।
★ শিলাইদহ থেকে কে আসত? সে কীজন্য আসতো? হাসিমুখে সে কী প্রশ্ন করত?
উত্তর : শিলাইদহ থেকে কবি রবিঠাকুরের ভাইপো সুরেন আসত।
সুরেন মাঝে মধ্যে ঘোড়া ধার নিতে আসত। ঘোড়া না দেখতে পেলে সে হাসিমুখে প্রশ্ন করত 'জ্যোতি বুঝি বেড়াতে গেছে?'
★ জ্যোতি ঘোড়াকে কীভাবে বশে এনেছিল ?
উিত্তর : জ্যোতি প্রথমে ঘোড়াটার কেশর ধরে। তারপর পিঠে চড়ে বসে অত্যন্ত শান্ত ভঙ্গিতে ঘোড়ার পিঠে, গলায়, দাবনায় ছোটো ছোটো চাপড় মেরে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ঘোড়াটাকে শান্ত করে।
★ জ্যোতির কোন্ কোন্ চরিত্রগুলি প্রিয় ছিল ? তাই সে কী করত?
উত্তর : জ্যোতির ভক্ত হনুমান, লক্ষণ, রাজা হরিশচন্দ্র, বীর প্রতাপাদিত্য - এসব চরিত্রগুলি প্রিয় ছিল।
তাই বহুবার সে বড়োমামার পাগড়ি চুরি করে বানিয়েছে হনুমানের লেজ।
★ জ্যোতি কীভাবে জাতিভেদ ভাঙলো?
উত্তর ঃ ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে জ্যোতি ও তার ছোটোমামার ব্যবস্থায় জাতি-বর্ণ ভুলে গ্রামের সবাই বসলেন একসঙ্গে পঙ্ক্তি-ভোজনে। হিন্দু, মুসলমান, বামুন, চাড়াল সবাই খেলেন মহাতৃপ্তিতে মায়ের প্রসাদ। এভাবেই জ্যোতি জাতপাত ভাঙলো ।
★ জ্যোতির মা জ্যোতিকে কীভাবে সাঁতার শেখাতো নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর : জ্যোতির মা জ্যোতিকে দিনের শেষে নিয়ে যেতেন রোজ গড়ুই নদীতে স্নান করতে। শীত, বর্ষা কোনো কিছুই তিনি মানতেন না। শাড়ির একমাথা নিজের কাছে রাখতেন, আর অন্য মাথাটা দিয়ে বেশ ভালোকরে জ্যোতির কোমরে বেঁধে নদীর জোয়ারের জলে ফেলে দিতেন। বেচারা ঢেউ-এর সঙ্গে লড়তে লড়তে হাবুডুবু খেতে খেতে যখন সে অবসন্ন হয়ে পড়ত তখন সুপটু সাঁতারুর মতো তার মা তাকে তিরের বেগে এগিয়ে গিয়ে ছেলেকে তুলে নিয়ে যেতেন।
★ জ্যোতিকে কে গল্প শোনাতো? কী কী গল্প শোনাতো? সেই গল্প শুনে জ্যোতির মন কেমন হত?
উত্তর : জ্যোতিকে তার মা শরৎশশী গল্প শোনাতেন।
তিনি শোনাতেন রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণের গল্প, রানাপ্রতাপ, শিবাজি, সীতারাম রায়, প্রতাপাদিত্যের কাহিনি। বীরত্বের এসব কাহিনি শুনে বুকটা যেন তার টনটন করে উঠত। তা ছাড়াও সে আরও শুনতো প্রহ্লাদের গল্প, চৈতন্য, নানক, কবীরের গল্প। এদের গল্প শুনে তার মন ভক্তিতে ভরে উঠত। এ ছাড়াও ইংরেজদের গল্প শুনে তার মনে রাগ ও দুঃখ হত ইংরেজদের হাতে দেশের লোক কীভাবে কষ্ট পাচ্ছে, সে বৃত্তান্ত শুনে।