চতুর্থ শ্রেণি বাংলা আমি সাগর পাড়ি দেবো হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর / Ami sagar pari debo class 4 bangla question answer
চতুর্থ শ্রেণি বাংলা সাহিত্য
আমি সাগর পাড়ি দেবো
কাজী নজরুল ইসলাম
কবি কাজী নজরুল ইসলামের পরিচিতি:-
১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে বর্ধমানের আসানসোলের কাছে চুরুলিয়া গ্রামে কবি কাজী নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ। ১০ বছর বয়সে মক্তবের নিম্ন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষা শেষ করে রাজস্কুলে ভরতি হন। সেই স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন। ‘ধুমকেতু’, ‘নবযুগ”, ‘লাঙল' ইত্যাদি পত্রিকার তিনি ছিলেন সম্পাদক। তাঁর লেখা কাব্যগ্রন্থগুলির নাম হল—সর্বহারা’ রিক্তের বেদন’, ‘ব্যথার দান' প্রভৃতি গল্প,অগ্নিবীণা’, ‘সঞ্চিতা’, ‘দোলনচাঁপা', বিষের বাঁশি', ‘মৃত্যুক্ষুধা’, ‘বাঁধনহারা’ প্রভৃতি উপন্যাস রচনা করেন। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার ‘পদ্মভূষণ' উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগস্ট ব ঢাকা শহরে এই বিদ্রোহী কবি পরলোকে করেন।
আমি সাগর পাড়ি দেবো কবিতার নামকরণ সার্থকতা :-
কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘আমি সাগর পাড়ি দেবো' কবিতায় সওদাগর হয়ে সাগরে পাড়ি দিয়ে নির্ভয়ে দেশের উদ্বৃত্ত সম্পদ বিদেশে দিয়ে আসতে চেয়েছেন এবং বিদেশ থেকে এদেশের প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে আসতে চেয়েছেন। কবিতাটিতে কবি কিভাবে বিদেশে যাবে এবং সেখানে কিভাবে ব্যবসা করবে কি কি সংগ্রহ করবে সেসব নিয়ে আলোচনা করা আছে। তাই আমার মতে 'আমি সাগর পাড়ি দেবো' নামকরণটি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ হয়েছে।
আমি সাগর পাড়ি দেবো কবিতার বিষয়বস্তু আলোচনা করো ।
উত্তর-
সওদাগর হয়ে কবি সাগরপাড়ি দিতে তাঁর সপ্ত মধুকর ভাসাবে সাগরের জলে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ঘাটে তাঁর জিনিসপত্র দেওয়া-নেওয়া করবেন। বিশ্বজোড়া হাটে তাঁর জিনিস বেচাকেনা চলবে। তাঁর গুণের জন্য দ্বীপে দ্বীপে মুক্তামালা তাঁকে উপহার দেবে সকলে। কবি মনে করেন, সপ্ত সাগরেই তাঁর বাণিজ্যের প্রসার। নিজেদের দেশের সুধা কবি অপরের দেশে বিতরণ করবেন। আবার অপর দেশের সুধা এনে নিজের দেশে বণ্টন করবেন। দেশজননীকে তিনি সগর্বে বলবেন, দেশের মায়ের ঘরে যা নেই তা তিনি বিদেশ থেকে এনে দেবেন, জগৎজুড়ে দেশমাতার যে দুঃখিনী নাম তা মুছে দিয়ে তিনি মায়ের লজ্জা নিবারণ
করবেন। বিদেশ থেকে বাণিজ্য করে তিনি লাল জহরত পান্নাচুনি মুক্তামালা এনে দেশমাতাকে রাজরানির আসনে বসিয়ে নিজে রাজার কুমার হবেন।
হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর
১। কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা কাব্যজগতে কী অভিধায় অভিহিত?
উঃ কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা কাব্যজগতে ‘বিদ্রোহী কবি' অভিধায় অভিহিত।
২। তাঁর লেখা দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো ।
উঃ নজরুলের লেখা কাব্যগ্রন্থের নাম অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশি।
৩। কবিতায় উল্লিখিত ‘বিভেদ' শব্দটি দেখো। ‘ভেদ' শব্দটির আগে ‘বি’ বসে তৈরি হয়েছে নতুন শব্দ ‘বিভেদ'।
নীচে বেশ কিছু শব্দ দেওয়া হল। নীচের শব্দগুলির আগে ‘বি’ যোগ করে নতুন নতুন শব্দ তৈরি করো : ভাগ, হার, তৃষ্বা, জ্ঞান, চার, ক্রয় ।
উঃ ভাগ—বিভাগ। হার-বিহার। তৃয়া—বিতৃষ্বা। জ্ঞান-অজ্ঞান।চার-বিচার। ক্রয়-বিক্রয়।
৪। নির্দেশ অনুসারে লেখো :
৪.১ ‘তালে তালে' শব্দটিতে একই শব্দ পর পর দু-বার বসেছে। তোমাদের কবিতায় দেখো তো এরকম একই শব্দ পাশাপাশি দু-বার বসে কী কী শব্দ তৈরি হয়েছে।
উঃ দেশে দেশে, দ্বীপে দ্বীপে।
৪.২ ‘তালে তালে' শব্দটিতে যেমন একই বর্ণ ‘ল’ দু-বার বসেছে তেমনি ‘ল' ধ্বনিকে দু-বার ব্যবহার করে আরও একটি শব্দ লেখো।
উঃ লাল।
৪.৩ উপরের প্রশ্ন দুটিতে ব্যবহৃত শব্দটির মতো পাঁচটি শব্দ তুমি নিজে তৈরি করো।
উঃ চলে চলে,ঘাটে ঘাটে, পথে পথে, গাছে গাছে, ফুলে ফুলে ।
৪.৪ ‘র’ ধ্বনিকে দু-বার ব্যবহার করে দেখ তো কোন্ কোন্ শব্দ পাও। একটি করে দেওয়া হল। (যেমন—থরথর।)
উঃ ঘরঘর। ধরধর। গরগর।ঝরঝর। ফরফর।
৫। কোন্ কোন্ শব্দগুলির অন্ত্যমিল আছে তাদের মেলাও :
সওদাগর মাল্লামাঝি
উঃ-
সওদাগর > মধুকর
আজ। > লাজ
বদর-গাজি > মাল্লামাঝি
সিন্ধু > বন্ধু
৬। নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
৬.১ সওদাগর কোথায় পাড়ি দিতে চায় ?
উঃ সওদাগর সাগর পাড়ি দিতে চায়।
৬.২ ময়ূরপঙ্খী বজরা কীসের মতো দুলে দুলে চলবে?
উঃ ময়ূরপঙ্খী বজরা মরাল-এর মতো দুলে দুলে চলবে।
৬.৩ শক্তি সওদাগরকে কী নজরানা দেবে?
উঃ শক্তি সওদাগরকে মুক্তামালা নজরানা দেবে।
৬.৪ কথক সওদাগর হয়ে কাদের ভয় পান না?
উঃ কথক সওদাগর হয়ে হাঙর কুমিরদের ভয় পান না।
৬.৫ কথক সওদাগর কীভাবে বিভেদ ভেঙে সমস্তকে একাকার করতে চান?
উঃ - কথক সওদাগর বন্যা এলে বিভেদের সমস্তকে ভেঙে একাকার করতে চান।
৬.৬ কথক কাদের জলদস্যু বলেছেন? তাদের জন্য তিনি কাদের পাহারায় রেখে যেতে চান ?
উঃ জলপথে যারা ডাকাতি করে কথক তাদের জলদস্যু বলেছেন।
কথক জলদস্যুদের জন্য তিনি সিন্ধু-গাজি, মোল্লামাঝি, নৌসেনা এবং জেলেদের পাহারায় রেখে যেতে চান।
৬.৭ ‘দেশে দেশে দেয়াল গাঁথা'—বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? কীভাবে তিনি এর প্রতিকার করবেন?
উঃ ‘দেশে দেশে দেয়াল গাঁথা'—বলতে কবি বুঝিয়েছেন দেশে দেশে মানুষের মধ্যে যে উচ্চনীচ, ধনী-গরিব, অধম-উত্তম এই ভেদাভেদ।
তিনি ভালোবাসার বন্যা বইয়ে সমস্ত বিভেদের প্রাচীর ভেঙে দিতে চান।
৬.৮ কবিতায় কথক কোন্ কোন্ জিনিসকে ‘সাত সংখ্যা দিয়ে উল্লেখ করেছেন ?
উঃ কবিতায় সাত সংখ্যা দিয়ে কথক সাত সাগর বুঝিয়েছেন। সপ্ত মধুকর ডিঙাকে বুঝিয়েছেন ৷
৬.৯ দুঃখিনী মায়ের দুঃখ ঘোচাতে কবি কী করতে চান?
উঃ কবি নিজের দেশের সুধা নিয়ে অন্য দেশে দেবেন এবং অন্য দেশের সুধা এনে তাঁর দুঃখিনী মায়ের দুঃখ ঘোচাতে চান।
৬.১০ কবিতায় কোন্ কোন্ রত্নের উল্লেখ আছে খুঁজে বার করো।
উঃ কবিতায় মাণিক, মুক্তা, জহরত, পান্না ও চুনি ইত্যাদি রত্ন উল্লেখ আছে।
৬.১১ কবিতায় কোন্ কোন্ জলজ প্রাণীর উল্লেখ আছে?
উঃ কবিতায় হাঙর ও কুমিরের মতো জলজ প্রাণীর উল্লেখ আছে।
৭। কবিতায় ‘বেচাকেনা’ শব্দ দুটি একসঙ্গে বসলেও শব্দ দুটি বিপরীতার্থক। পাশের শব্দঝুড়ির সাহায্যে এরকম কিছু শব্দের শূন্যস্থান পূরণ করো :
..... বাঁচন, ......পাতাল, দেনা......
......…দুঃখ, অগ্র ....., ওঠা....
.......আঁধার,.....…গোড়া।
উঃ মরণ-বাঁচন। আকাশ-পাতাল। দেনা-পাওনা। সুখ-দুঃখ। অগ্র-পশ্চাৎ। ওঠা-নামা। আলো-আঁধার। আগা-গোড়া।
৮। মনে করো, তুমি সওদাগর। বিভিন্ন দেশে জিনিসপত্র বেচাকেনা করতে যাও। জিনিসপত্র ছাড়া আর কী কী তুমি বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দেবে? তাদের দেশ থেকে কী কী তোমার সঙ্গে আনবে ?
উঃ- আমি যদি সওদাগর হয়ে বিভিন্ন দেশে জিনিসপত্র বিছানা করতে যাই, তাহলে আমি আমার দেশে যেগুলো তৈরি হয় সেগুলো নিয়ে জাহাজ ভর্তি করে মাল নিয়ে যাব। সেসব মনের আনন্দে বিক্রি করব। আমাদের সংস্কৃতি দান করব। বন্ধুত্ব করব। আর সেই দেশের বিভিন্ন জিনিস নিয়ে আমার জাহাজ ভর্তি করে নিয়ে এসে এখানে বিক্রি করব। যদি কোন মূল্যবান রত্ন পাই যেমন মানিক, সোনা, হিরে ,তাহলেও সেগুলো কিনে নিয়ে আসব।
ধাঁধার ছড়া
ভাবি আর বলি
১। জল খেলে মরে যায়।
উঃ- আগুন
২। নেই মই নেই ডানা, দেয় তবু আকাশে হানা।
উঃ- ধোঁয়া
৩। কখনও ভুল করে না অথচ সবসময় মার খায়—কে সে?
উঃ- ঢাক
৪। বসে এক কোণে উড়ে যায় বিশ্বভ্রমণে।
উঃ- ডাক টিকিট
৫। জিনিসটা তোমারই অথচ অন্যে ব্যবহার করে তোমার চাইতে বেশি—কী সেটা?
উত্তর: তোমার নাম
৬। ভরা পেটে হেলে রয়, খালি পেটে সোজা হয়।
উঃ- ধান গাছ।
৭। তোমার ডান হাত দিয়ে কোন্ জিনিস তুমি কখনও ধরতে পার না?
উঃ- আমার ডান হাত
৮। ছোট্ট দুটি জানালা। তা দিয়ে পুরো পৃথিবী দেখা যায়।
উঃ- দুটি চোখ
৯। পা ছাড়া আসে যায়, জিভ ছাড়া কথা কয়।
উঃ- চিঠি
১০। জন্মেও জন্মায়নি, না জন্মেও জন্মেছে— কী সেটা?
উঃ- ডিম।
হাতে-কলমে বাইরে কিছু প্রশ্ন উত্তর নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নোত্তর :
■ সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো :
★ কবির বেচাকেনা চলবে—(বিশ্বজোড়া হাটে/গ্রামের হাটে/শহরের হাটে)।
উত্তর : বিশ্বজোড়া হাটে।
★ বঁড়সি/ঝ র্ণা/তির/) — দিয়ে বিধবে তারা রাজ্যে আমার এলে।
উত্তর : ঝর্ণা।
★ ভয় কী গো মা—(বাণিজ্যেতে/ঘুরতে/পড়তে) যাই।
উত্তর : বাণিজ্যেতে।
★ মা হবে—(রাজরানি/চাকরানি/ঠাকুরানি)।
উত্তর : রাজরানি।
★ কবি নিজেকে—(সওদাগর/দোকানদার/ব্যাবসাদার) বলেছেন।
উত্তর : সওদাগর
★সত্য-মিথ্যা নির্ণয় করো :
■ কবি সাগর পাড়ি দিতে চান।
উত্তর : সত্য।
■ তাঁর সাথে থাকবে দুটি মধুকর।
উত্তর : মিথ্যা।
■ তিনি যাবেন ময়ূরপঙ্খী বজরায় করে।
উত্তর : সত্য।
■ গঙ্গা কবির বন্ধু হয়ে কবিকে রত্ন-মানিক দেবে।
উত্তর : মিথ্যা।
■ জেলেরা হবে নৌ-সেনা।
উত্তর : সত্য
■ সপ্তসাগরে কী ভাসবে ?
উত্তর : কবিতায় কথকের সপ্ত মধুকর ভাসাবে।
■ ময়ূরপঙ্খী বজরা কীভাবে চলবে?
উত্তর ঃ ময়ূরপঙ্খী বজরা লাল বাওটা তুলে চলবে।
■ হাজার নদীর নীর কাকে কী জোগায়?
উত্তর : কবিতার কথকের রাজ্যে খাজনা জোগায়।
■ কাদের দুটো দস্ত নখর দেখে কবিতার কথক ভয় পান না?
উত্তর ঃ হাঙর ও কুমিরের দত্ত দেখে ভয় পান না?
★ রাজরানি কে কীভাবে হবেন ?
উত্তর : কবিতার কথকের নিজেই তাঁর মাকে রাজরানি করবেন। তিনি দেশে দেশে বাণিজ্য করে তাদের সুধা এনে মায়ের হাতে দেবেন। বিদেশ থেকে মণি, জহরত, পান্না, চুণি, মুক্তামালা এনে তাঁর মাকে রাজরানি সাজাবেন
■ সিন্ধু কার বন্ধু হয়ে কী দেবে?
উত্তর : কবিতার কথকের বন্ধু হয়ে সিন্ধু তাঁকে রতন মাণিক দেবে।
■ কবিতার কথক কীভাবে বাণিজ্যে যাবেন ?
উত্তর ঃ সপ্তমধুকর সাত সাগরে ভাসিয়ে কবিতার কথক বাণিজ্যে যাবেন। লাল বাওটা তুলে তাঁর ময়ূরপঙ্খী বজরা ঢেউয়ের
দোলায় রাজহংসদের মতো দুলে দুলে চলবে।
■ হাতছানি দিয়ে কে কাকে কোথায় নিয়ে যাবে?
উত্তর ঃ হাতছানি দিয়ে গাঙচিলেরা কবিতার কথককে নতুন দেশের তিরে নিয়ে যাবে।