চতুর্থ শ্রেণি বাংলা আমাজনের জঙ্গলে হাতে কলমে অনুশীলন প্রশ্নের উত্তর Amajner ganjgle class 4 bangla
![]() |
চতুর্থ শ্রেণীর বাংলা
আমাজনের জঙ্গলে
অমরেন্দ্র চক্রবর্তী
লেখক অমরেন্দ্র চক্রবর্তী পরিচিতি
অমরেন্দ্র চক্রবর্তী জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে। তিনি অনেকগুলি পত্রিকা সম্পাদনাও করেছেন। তাঁর। সম্পাদিত পত্রপত্রিকাগুলির মধ্যে ‘কালের কষ্টিপাথর’‘ ছেলেবেলা’, ‘ভ্রমণ’,‘ কর্মক্ষেত্র’ইত্যাদি। তাঁর রচনাগুলি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলির নাম হল—টিয়াগ্রামের ফিঙে,শাদা ঘোড়া, আমাজনের জঙ্গলে, হীরু ডাকাত, গৌর যাযাবর, নদী ইত্যাদি।
আমাজনের জঙ্গলে গল্লের নামকরণের সার্থকতা:-
কোনো রচনার নামকরণ একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দক্ষিণ আমেরিকার দীর্ঘতম নদী আমাজনের জলে ভাসছিল অনেকগুলি নৌকা । জঙ্গলে তখন গভীর রাত্রি। আকাশে বিরাট চাঁদ। নৌকাগুলিতে বাজছিল গানের সুরেলা গান-বাজনা ৷অকস্মাৎ সবকটি নৌকার গানবাজনা একে একে বন্ধ হয়ে গেল। সেই স্তব্ধতার মধ্যে একটি নৌকায় থাকা আমাজনের কিশোর উবা তার সঙ্গী কলকাতার কিশোর সঙ্গীকে ফিশফিশ করে বলল নদীর জলে ভেসে ওঠা ‘বোতো' নামে একটি জলজ প্রাণীর কথা । আদিবাসী কিশোরটির কথাবার্তায় বোঝা গেল ‘বোতো’ নামক জলজ প্রাণীটি আমাজনের জলে ভেসে উঠলে বুঝতে হবে নদীতে বেড়ানো মানুষগুলির জীবন নিরাপদ থাকবে। লেখক তখন ছিলেন কলকাতার এক কিশোর। কিশোরটি তার আমাজনের জঙ্গলের ওই উবাকে পেয়ে বেশ মনের আনন্দে ছিল।
সমগ্ৰ গল্পটি দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদী কে কেন্দ্র করে লেখা । তাই আমার মতে 'আমাজনের জঙ্গলে' নামকরণটি যথার্থ হয়েছে বলে মনে হয়।
আমাজনের জঙ্গলে বিষয়বস্তু আলোচনা
দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদীর তীরবর্তী এলাকায় ছড়িয়ে থাকা গভীর জঙ্গল। ‘আমাজনের জঙ্গলে' কাহিনির লেখক তখন এক কিশোর। কিশোরটি কোনোদিন বাড়ি ফিরতে পারবে কিনা সেই ভয়ানক দুশ্চিন্তা নিয়েও ওই জঙ্গলে একা ঢুকে পড়ে ‘উবা’ নামে সেখানকার এক কিশোরকে তার বন্ধু বানিয়ে নিয়েছিল। একদিন তারা দুজন আমাজনের জলে নৌকায় ভেসে গভীর চাঁদনি রাতের জঙ্গলের সৌন্দর্য উপভোগ করছিল। নৌকায় ভাসতে ভাসতে হঠাৎ একে একে।সবগুলি নৌকার ভারি সুরেলা গানবাজনা থেমে গেল। গভীর স্তব্ধতার মধ্যে বিশাল চাঁদের আলোয় নদীর জলে উকি মেরে উবা কিছুক্ষণ দেখল। তারপর জলে আঙুল দিয়ে তার সঙ্গীকে ফিসফিস গলায় বলল-বোতো! বোতো! উবা বোঝাতে চাইল এভাবে আমাজনের জলে বোতো ভেসে থাকতে দেখা সৌভাগ্যের লক্ষণ। অর্থাৎ বোতোই নাকি আমাজনের বিপদে-আপদে মানুষকে রক্ষা করে। তাই নদীর বুকে যে নৌকা প্রথম বোতো দেখেছে তার চারপাশে যতগুলি নৌকা ভাসছিল সেগুলি ধীরে যতটা সম্ভব নিঃশব্দে চারদিক থেকে গোল হয়ে হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। এতে বোতো এতটুকু রেগে গেল না, বিরক্ত হল না। সে যেন তার মনের ভিতরের সুরের তালে ছন্দে লয়ে জলের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে লাগল।
নদীর তিন চার হাত জলের নীচে খুব লম্বা মতো একটা প্রাণী ধীরে ধীরে এঁকে বেঁকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার ঠোট খুব সরু, লম্বায় প্রায় এক দেড় হাত। মস্ত বড়ো মাথা। এর মস্তিষ্ক মানুষের মস্তিষ্কের চেয়ে বড়ো হলে আশ্চর্যের কিছু নেই। এর ল্যাজটা শরীরের শেষপ্রান্ত থেকে দু-দিকে ভাগ হয়ে ভারি সুন্দর দেখাচ্ছে। রংটা ঠিক লাল নয়, যেন গোলাপির দিকেই। কিশোর এই লেখক ভাবছিল, উবা সত্যিকারের কী তা তার কাছে ঠিক স্পষ্ট নয়। তথাপি আমাজনের জলে পূর্ণিমার রাতে ডলফিন দেখাও ভাগ্যের ব্যাপার। তাই মা-বাবা কাকা ও অন্যান্য সঙ্গীদের ছেড়ে থাকা
কিশোর-লেখক মনে মনে বোতো-র কাছে প্রার্থনা করল, বোতো, তুমি কে আমি জানি না। তুমি যদি সত্যিই আমাজনের রক্ষাকর্তা হও, তুমি আমাকে আমার মা-বাবা আর স্কুলের বন্ধুদের কাছে ফিরে যাওয়ার উপায় করে দিয়ো।
উবা ছিল কিশোর-লেখকের সঙ্গী। উবা আমাজন জঙ্গলের এক আদিবাসী সরল কিশোর। সে একেক দিন তার এই লেখক-কিশোর বন্ধুকে নিয়ে হাঁটু গেড়ে মাটিতে মুখোমুখি বসে সঙ্গীর চোখের ওপর চোখ মেলে রেখে অনেক কিছু বুঝে ওঠার চেষ্টা করতে লাগল, কারণ কেউ কারও ভাষা জানে না। বেশ কিছুদিন পর হঠাৎ একদিন সে মাটিতে তার কাঠকুটোর।ছবি তৈরি করে ইঙ্গিতে জানতে চাইল তার এই কিশোর বন্ধুটি কোথা থেকে এসেছে, সে কোন্ পৃথিবীর মানুষ, সে পৃথিবীটা কেমন? কীভাবে তার প্রশ্নের উত্তর দেবে এসব অনেক ভেবে কিশোর-লেখক খানিকটা জায়গা মাটিতে পরিষ্কার।করে ছবি এঁকে যতটা সম্ভব বোঝাতে চেষ্টা করল সে কোথায় থাকে, তার মা-বাবা, বন্ধু, স্কুল, কলকাতা, কলকাতার বাড়ি-গাড়ি-ঘোড়া, দোকানবাজার, লোকজন ইত্যাদির কথা। উবা অনেকক্ষণ ধরে ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সেই ছবি বুঝে গেল। তারপর সে আবার তেমনি কাঠকুটোর ছবি তৈরি করে দুই ঠোঁট গোল করে যেন প্রশ্ন করতে চাইল, কলকাতায় জঙ্গল নেই, পাখি নেই, প্রজাপতি নেই, বড়ো বড়ো নদনদী নেই, সেটা তো বালির দেশ অর্থাৎ একটা মরুভূমি। তুমি সেখানে থাকো কেমন করে?
লেখক-কিশোরের এঁকে দেখানো ছবিতে ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়েরা গাদাগাদি করে বসে স্কুলে যাচ্ছে। টিনের দেয়ালে ছোটো ছোটো জানালার ফাঁক দিয়ে কেউ কেউ তার কচি মুখ তুলে বাইরেটা দেখতে দেখতে চলেছে এই দৃশ্য অনেকক্ষণ মুখ ঝুঁকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল উবা। প্রথমটা ঠিক বুঝল না। কিশোর-লেখক এখন আবার একটা ছবি এঁকে যথাসম্ভব স্কুলের ব্যাপারটা যখন তাকে বোঝাতে পারল তখন সেও আবার কাঠকুটোর একটা ছবি দিয়ে বলল- জঙ্গলের গাছপালা ফুল-ফল-কীটপতঙ্গের সঙ্গে না থেকে গ্রীষ্ম বর্ষা শীত বসন্ত না দেখে তুমি জগৎটাকে জানবে কেমন করে? অবশেষে সে হঠাৎ তার কিশোর সঙ্গীর দুটি হাত ধরে তার চোখে চোখ রেখে যেন আকুল আবদার করল, তুমি আর ওই দেশে ফিরে না গিয়ে এখনি থাকো।
হাতেকলমে প্রশ্নের উত্তর
১। অমরেন্দ্র চক্রবর্তীর লেখা দুটি বইয়ের নাম লেখো।
উঃঅমরেন্দ্র চক্রবর্তীর লেখা দুটি বই (১) শাদাঘোড়া (২) হীরু ডাকাত ।
২। ভ্রমণ পত্রিকা ছাড়াও। আর কোন্ পত্রিকার সম্পাদক?
উঃ - ভ্রমণ পত্রিকা ছাড়াও তিনি ' কালের কষ্টিপাথর' পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।
৩। ঠিক উত্তরের তলায় দাগ দাও :
৩.১ লেখক গল্পটিতে যে জায়গার উল্লেখ করেছেন সেটি হল (ইউক্রেন/আমাজন/ সুন্দরবন)।
উঃ আমাজন।
৩.২ আমাদের একেবারে (পিছনের/সামনের/পাশের) নৌকা থেকে ভারি সুরেলা বাজনা ভেসে আসছিল।
উঃ সামনের।
৩.৩ কোনও একটা নৌকা থেকে বোতোর দেখা পাওয়ার (মিনিট দুয়েকের/মিনিট সাতেকের/মিনিট দশেকের)
উঃ মিনিট দুয়েকের।
।
৩.৪ (উবা/বোতো/টোবো) আমার চোখের দৃষ্টি দেখে বুঝতে চায় আমি কে?
উঃ উবা।
৩.৫ উবা (চকখড়ি/লতাপাতা/কাঠকুটো) দিয়ে ছবি আঁকায় ভারি ওস্তাদ।
উঃ কাঠকুটো ৷
৪। ‘গান-বাজনা’শব্দটির প্রথম অংশ ‘গান’ এবং দ্বিতীয় অংশ ‘বাজনা” পরস্পরের পরিপূরক। নীচের শব্দগুলির পরে তাদের সমার্থক বা প্রায় সমার্থক অন্য শব্দ জুড়ে নতুন শব্দজোড় তৈরি করো।
উত্তর:- লোক > লোকলস্কর
ভাবনা > ভাবনাচিন্তা
রোগ > রোগব্যাধি
ডাক্তার > ডাক্তার বদ্যি
আশা > আশাভরসা
হাঁক > হাঁকডাক
কাঠ > কাঠকুটো
ধন > ধনসম্পদ
৫। নীচে কিছু কর্তা, কর্ম ও ক্রিয়া ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। কর্তার সাথে কর্ম ও ক্রিয়াকে মিলিয়ে ৫টি বাক্য লেখো।
কর্তা : কর্ম :- ক্রিয়া
আমি প্রার্থনা করলাম
উবা ছবি আঁকছিল
বোতো আকাশে দেখো
সে পাখি দেখছে
ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে
উঃ ১। আমি প্রার্থনা করলাম।
২। উবা ছবি আঁকছিল।
৩। বোতো আকাশে দেখো।
৪। সে পাখি দেখছে।
৫। ছেলেমেয়ে স্কুলে যাচ্ছে।
৬। নীচের শব্দগুলি দিয়ে বাক্যরচনা করো ঃ
ধীরে ধীরে— ছেলেটির পায়ে আঘাত থাকার জন্য ধীরে ধীরে হাঁটছিল।
বসে বসে— তপন করতে গিয়ে বসে বসে ঘুমোচ্ছিল।
আগে-আগে— শিক্ষক দিবসে আমাদের আগে আগে শিক্ষক মহাশয় হেঁটে যাচ্ছিলেন।
হেঁটে-হেঁটে— আমার বাবা হেঁটে হেঁটে অনেক দূর যেতে পারেন।
জেগে-জেগে— অনেকে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখেন।
৭। গল্পের ঘটনা অনুযায়ী নীচের বাক্যগুলি পরপর সাজিয়ে লেখো :
উঃ-
৭.৫ সামনের নৌকা থেকে সুরেলা বাজনা ভেসে আসছিল।
৭.১ বোতোকে দেখা গেছে।
৭.২ বোতোকে দেখার জন্য আমি ব্যাকুল হয়ে পড়েছিলাম।
৭.৪ একটা নৌকার গানবাজনা থেমে গেলে বাকিরা যারা যত আগে আগে খেয়াল করবে
তারা তত আগে তাদের নৌকার বাজনা থামাবে।
৭.৩ বোতো মনের ভেতরের ঘুরে তালে ছন্দে নেচে বেড়াচ্ছে।
৮। নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও :
৮.১ লেখক কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন ?
উঃ লেখক আমাজনের জঙ্গলে হারিয়ে গিয়েছিলেন।
৮.২ লেখক কাকে বন্ধু হিসেবে পেয়েছিলেন ?
উঃ লেখক আমাজনের বাসিন্দা উবা নামে এক কিশোরকে বন্ধু হিসেবে পেয়েছিলেন।
৮.৩ জলের দেবতা বলে কাকে আমাজনের বাসিন্দারা মানে ?
উঃ বোতো নামে একটি প্রাণীকে জলের দেবতা মানে।
৮.৪ উবা কোন্ শহরকে বালির দেশ বলে বুঝিয়েছিল?
উঃ উবা কলকাতা শহরকে বালির দেশ বলে বুঝিয়েছিল।
৮.৫ বালির দেশ—কথার অর্থ কী?
উঃ বালির দেশ কথার অর্থ হল মরুভূমি।
৯। নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
৯.১ কাকাদের সঙ্গে না থাকাকে পাঠ্যাংশের আগন্তুক ছেলেটি সৌভাগ্যজনক মনে করেছে কেন ?
উঃ - আগন্তুক কাকাদের সঙ্গে থাকলে আমাজনে জঙ্গলের বর্ণময় রূপ, আমাজনের মতো সুন্দর নদী, সেখানকার আকাশে চাঁদের দৃশ্য, সেখানকার কৃত্রিম সরস মানুষজনের
সঙ্গলাভ করতে পারত না।করতে পারত না। লেখক তাই একে সৌভাগ্যজনক মনে করেছেন।
৯.২ কোন উৎসবের কথা পাঠ্যাংশেরয়েছে । কীভাবেই বা সে প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছে?
উঃ - পাঠ্যাংশে নৌকা উৎসবের কথা রয়েছে।
কিশোর লেখক নৌকা উৎসবের দিনে তার সমবয়সি সেখানকার এক কিশোরের সঙ্গলাভ করে একটি নৌকায় উৎসব দেখতে আমাজনের জলে ভাসছিল। সেই নদীর জলে রাতে চাঁদের আলোয় বোতো নামে একটি বিচিত্র জলজ প্রাণীর দেখা পাওয়ায় এই উৎসবের প্রসঙ্গ এসেছে। এই উৎসবের দিনে বোতোর দেখা পাওয়া সৌভাগ্যের সূচক। ওই জলজ প্রাণীটির হঠাৎ দর্শনলাভেই সেখানকার নৌকা উৎসবের প্রসঙ্গ এসেছে।
৯.৩ অভিযান-আবিষ্কারের কাহিনি আমাদের ভালো লাগে কেন?
উঃ- অভিযান-আবিষ্কারের কাহিনি মনকে আনন্দ দেয়। অজানা কে জানতে পারি।তাই অভিযান-আবিষ্কারের কাহিনি আমাদের ভালো লাগে।
৯.৪. গল্প কথকের চোখে দেখা 'বোতো'-র শারীরিক গঠনের পরিচয় দাও। তাকে দেখে আগন্তুক ছেলেটির কেমন লাগল?
উঃ- গল্প কথকের চোখে দেখা ‘বোতো’-র শারীরিক গঠনের পরিচয় নিম্নরূপ ছিল- খুব লম্বা মতো একটি প্রাণী । লম্বায় প্রায় এক-দেড় হাত। তার নাক বা ঠোঁট খুব সরু, মস্ত বড়ো মাথা, এর মস্তিষ্ক মানুষের চেয়ে বড়ো হলে আশ্চর্যের কিছু নেই। এর ল্যাজটা শরীরের শেষপ্রান্ত থেকে দু-দিকে ভাগ হয়ে ভারি সুন্দর দেখাচ্ছে। রংটা ঠিক লাল নয়, মনে হয় যেন গোলাপি।
৯.৫ যে রাতের ছবি পাঠ্যাংশে রয়েছে, তার বিশেষত্বটি কী, লেখো।
উঃ পাঠ্যাংশে যে রাতের ছবিটি রয়েছে তার বিশেষত্ব হল, সেই রাত ছিল নৌকো উৎসবের রাত। সেই নৌকা উৎসবের রাতে আমাজনের জলে ভাসে অসংখ্য নৌকো। নৌকো ভাসিয়ে সেখানকার আদিবাসীরা সুরেলা বাজনা বাজায় ।
গান-বাজনা চলে। সেই রাতের নদীর বুকে ‘বোতো’ নামক জলজ প্রাণীর দর্শন লাভ করলে মানুষের সৌভাগ্য মনে করা হয়।
৯.৬ ক্রেজ বোতোর কাছে আগন্তুক ছেলেটির নীরব প্রার্থনাটি কী ছিল ?
উঃ বোতোর কাছে আগন্তুক ছেলেটির নীরব প্রার্থনা ছিল, বোতো যদি সত্যিই আমাজনের রক্ষাকর্তা হয় তাহলে আগন্তুককে সে যেন তার মা-বাবার কাছে আর স্কুলের বন্ধুদের কাছে ফিরে যাওয়ার উপায় করে দেয়।
৯.৭ ছবি এঁকে আগন্তুক ছেলেটি ‘উবা’-কে কী বোঝাতে চেয়েছিল?
উঃ ছবি এঁকে আগন্তুক ছেলেটি উবাকে বোঝাতে চেয়েছিল, আগন্তুক কলকাতায় থাকে, তার বাবা-মায়ের কথা, বন্ধুদের কথা, স্কুলের কথা, কলকাতা শহরের কথা, শহর ভরা ঘরবাড়ি, গাড়ি-ঘোরা, দোকানবাজার, লোকজনের কথা বোঝাল।
৯.৮ ‘উবা’-র কলকাতা সম্বন্ধে কী ধারণা হলো?
উঃ কলকাতা সম্পর্কে উবার ধারণা হল, কলকাতায় জঙ্গল নেই, পাখি নেই, প্রজাপতি নেই, বড়ো বড়ো নদী নেই। কলকাতা একটা শুধু বালির দেশ। অর্থাৎ কলকাতা একটা মরুভূমির দেশ।
৯.৯ কলকাতা সম্পর্কে ‘উবা’-র ধারণাকে বদলে দিতে তুমি কী কী করতে চাও, লেখো।
উঃ কলকাতা সম্পর্কে ‘উবা’-র ধারণাকে বদলে দিতে আমি যা যা করতাম তা হল —
কলকাতায় যত রাস্তা বা গলি আছে সেই সব স্থানে নানারকম সুদৃশ্য গাছ লাগিয়ে দিতাম। কলকাতার যত দূর অংশ বিস্তৃত আছে ততদূর অংশে অন্তত একশো মিটার চওড়া এলাকায় ঘন জঙ্গলের উপযোগী গাছপালা লাগানোর ব্যবস্থা করতাম।
কলকাতা জুড়ে এমন এমন ফুলের গাছ লাগাতাম যেসব গাছে প্রচুর ফুল হয়। গঙ্গানদীকে করে তুলতাম স্বচ্ছসলিলা মনোমুগ্ধকর নদী। যার তীরে গড়ে উঠত বিভিন্ন তীর্থস্থান।
৯.১০ কলকাতার আকর্ষণ ছাড়িয়ে দিতে ‘উবা’ যে জগতে আগন্তুক ছেলেটিকে আহ্বান জানিয়েছিল তার বর্ণনা দাও।
উঃ কলকাতার আকর্ষণ ছাড়িয়ে দিতে ‘উবা’ যে জগতে আগন্তুক ছেলেটাকে আহ্বান জানিয়েছিল তা নিম্নরূপ —
আমাজনের জঙ্গল পৃথিবীর বিখ্যাত বনভূমি। এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। তাই আমাজনের বনভূমির সমস্ত গাছপাল চিরসবুজ। এই অরণ্য যত গভীর তত বৈচিত্র্যময়। এখানে আছে বড়ো বড়ো নদী। আছে হাজার হাজার ফুলের গাছ। আছে নিত্যনিয়ত হাজার প্রজাতির প্রজাপতির আনাগোনা। আছে নানারকমের পশু। আছে হাজার প্রজাতির পাখির কলকাকলি।
১০। ঘটনার পাশাপাশি কারণ উল্লেখ করো :
উত্তর-
কারণ:-(১) সেদিন নৌকা উৎসব
(২) বোতোর দর্শন সৌভাগ্যের ব্যাপার
৩) বোতোর দর্শনলাভের প্রয়াস
৪) সঙ্গী কিশোরের পরিচয় জানার কৌতূহল ৪) জঙ্গলে ঘুরতে ঘুরতে উবা একেকদিন হঠাৎই হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়ে।
৫) কলকাতার স্কুলে যাওয়া ছাত্রছাত্রীর পরিচয়
ঘটনা
১) সামনের নৌকো থেকে ভারি সুরেলা বাজনা ভেসে আসছিল।
২) উবার ফিশফিস গলায় শুনতে পেলাম— বোতো! বোতো !
৩) সকলেই গান বাজনা থামিয়ে যতটা সম্ভব নিঃশব্দে চারদিক
থেকে গোল হয়ে প্রথম নৌকোটার কাছে ফিরে আসতে থাকে।
৫) আরও কয়েকটি ছবি এঁকে যতটা সম্ভব স্কুলের বিষয়ে বললাম ।
হাতে কলমের বাইরে কিছু অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর
সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো :
★ আমাদের একেবারে (পিছনের/পাশের/সামনের) নৌকো থেকে ভারী সুরেলা বাজনা ভেসে আসছিল।
উত্তর : সামনের।
★ (এক মিনিটের/দু-মিনিটের/তিনমিনিটের)—মধ্যেই কাছে দুরে সব কটা নৌকোর গান-বাজনা থেমে গেল।
উত্তর ঃ দু-মিনিটের।
★ (বোতোই/টোটোই/উবাই)—নাকি আমাজনের বিপদে-আপদে মানুষকে রক্ষা করে।
উত্তর : বোতোই।
★ বোতো জলের (তিন-চার হাত / দশ-বারো হাত/চোদ্দো-পনেরো হাত)—নীচে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
উত্তর : তিন-চার হাত
★ (উবা মাটির ওপর রংতুলি দিয়ে/কাঠকুটো দিয়ে)—ছবি তৈরি করতে লাগল।
উত্তর ঃ কাঠকুটো দিয়ে ৷
★ উবা কলকাতাকে বলে (বালির দেশ/সবুজের দেশ/জলের দেশ)।
উত্তর : বালির দেশ।
সত্য মিথ্যা নির্ণয় কর
★ লেখকের বন্ধু ছিল বোতো।
উত্তর : মিথ্যা।
★ বোতোর রং ছিল কালো।
উত্তর : মিথ্যা।
★উবা জানিয়েছিল নৌকায় গান-বাজনা থেমে যাওয়া মানে বিপদের আশঙ্কা করা।
উত্তর : মিথ্যা।
★বোতো জলের তিন-চার হাত নীচেই ঘুরে বেড়াচ্ছিল।
উত্তর : সত্য।
★ উবা কাঠকুটো দিয়ে ছবি করতে ওস্তাদ ছিল।
উত্তর ঃ সত্য।
★ উবা চেয়েছিল লেখক যেন ফিরে যান।
উত্তর : মিথ্যা।
★ উবার কাছে কলকাতা ছিল বালির দেশ।
উত্তর -সত্য
★ এলোমেলো শব্দগুলি সাজিয়ে অর্থপূর্ণ শব্দ তৈরি করো ঃ
লশগুম, রাশায়ই, নেজরমাআ, টোঠরকাকু, বাউ, দওস্তা, দিগাদাগা, কভনয়া, তোবো, নলফিড।
উত্তর ঃ
লশগুম > মশগুল
রাশায়ই > ইশারায়
নেজরমাআ > আমাজনের
টোঠরকাকু > কাঠকুটোর
বাউ > উবা
দওস্তা > ওস্তাদ
দিগাদাগা > গাদাগাদি
কভনয়া > ভয়ানক
তোবো > বোতো
নলফিড > ডলফিন
এককথায় উত্তর দাও :
★ বোতোকে দেখে একটা ভারি আশ্চর্যের ব্যাপার লেখক কী বুঝলেন?
উত্তর : লেখক আশ্চর্যের ব্যাপারে দেখলেন চারদিক থেকে অতগুলো নৌকো একেবারে কাছে এসে ঘিরে রয়েছে, বোতোর কোনো রাগ, ভয় বা বিরক্তি নেই। আপন মনে সে আনন্দে মশগুল হয়ে খুব ধীরে ধীরে জলের মাত্র তিন-চার হাত নীচে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কখনো-কখনো বোতো জলের ওপরেও উঠে আসছে। বোতো সবসময়ই আনন্দে বিভোর। মন হয়, সে যেন তার মনের ভিতরের সুরে তালে লয়ে নেচে বেড়াচ্ছে।
★ কোন্ সময় বোতোর দেখা পাওয়া সৌভাগ্যের লক্ষণ ?
উত্তর ঃ নৌকো উৎসবের রাতে দেখা পাওয়া খুবই সৌভাগ্যের লক্ষণ।
★ লেখক কীভাবে বুঝলেন উবা বলতে চাইছে যে বোতোকে দেখা যাচ্ছে?
উত্তর ঃ লেখক উবার বলার ভঙ্গি, চোখমুখের ভার আর জলের দিকে আঙুল দেখানো দেখে বুঝলেন।
★নৌকোয় নৌকায় গান-বাজনা থেমে যাওয়া মানে কী ?
উত্তর : নদীতে ভেসে থাকা সকল নৌকা বোতোর দেখা পাওয়ার খবর জেনে গেছে।